#সুখ_অমৃত
#পর্ব_১৯
#লেখিকাঃদিশা_মনি
জাদ আমেরিকাতে পৌঁছেও শান্তিতে এক দণ্ড বসতে পারছে না। তার বারংবার এটাই মনে হচ্ছে যে, কোন খারাপ কিছু হতে চলেছে। কিন্তু জাদ বুঝতে পারছে না এই অনুভূতির কারণ। সে বর্তমানে একটি হোটেল রুমে অবস্থান করলে। ভীষণ অস্থির লাগায় মানতাশার নাম্বার ডায়াল করে কল দেয় সে। কিছু সময় রিং হবার পরও কেউ ফোন রিসিভ করে না। জাদের মনের আশংকাটা বৃদ্ধি পায়৷ তাহলে কি সত্যিই মানতাশার কিছু বিপদ হলো?
জাদ এ সম্পর্কে ভাবতে ব্যস্ত ছিল এমন সময় তার ফোনে কেউ একটা কল দিল। জাদ ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখতে পেল তার বড় ভাই জাইন ফোন দিয়েছে। জাদ ফোনটা রিসিভ করে।
অতঃপর নিজের জীবনের সবথেকে ভয়াবহ কিছু খবর শুনতে পায়।
★★★
নিজের মা এবং ভাবির মৃত্যুর খবর পেয়ে মিটিং পেন্ডিং রেখেই আমেরিকা থেকে দুবাইতে ফিরে আসে জাদ। বাড়িতে পৌঁছায় চূড়ান্ত ভগ্ন হৃদয় নিয়ে। চারিদিকে লোকে লোকারণ্য। সবাই সালমা বেগম এবং উমায়রার জন্য সমবেদনা জানাচ্ছে। জাদ একপলক চারি দিকে তাকালো। জায়িন শক্ত করে তার শিশু পুত্রকে কোলে জড়িয়ে থম মে*রে বসে আছে। তার পাশেই দাঁড়িয়ে হাফসা বেগম। তাকে একটু দুঃখী দুঃখী লাগছে। যদিও বা সে কতটুকু দুঃখী এই ব্যাপারে জাদ সন্দীহান। মোহাম্মদ জাফর সবার সাথে জানাজা নামাজ পড়ছিল। জাদ গিয়ে দাঁড়ালো তার পাশে। জানাজা সম্পূর্ণ হবার পর, সালমা বেগম এবং উমায়রাকে দাফন করতে নিয়ে যাওয়া হলো। জাদ নিজের মা এবং ভাবির এই করুণ পরিণতিতে ভীষণ মর্মাহত। তার চোখ থেকে দু ফোটা অশ্রু গড়িয়ে পড়ল। ভেতর থেকে ভেঙে পড়লেও বাইরে নিজেকে শক্ত রাখল। কারণ বর্তমানে জাইনের অবস্থা তার থেকেও খারাপ। তাই জাদের এই মুহুর্তে নিজের বড় ভাইকে সামলাতে হবে।
দাফনের কাজ শেষে জাদ এসে নিজের ভাইয়ের পানে তাকায়। জাইন নিজের ছেলেকে বুকের সাথে জড়িয়ে শুয়ে আছে। জাদ জাইনের উদ্দ্যেশ্যে বলে,
“যা হবার তা হয়ে গেছে। তুমি এখন নিজেকে সামলাও ভাইয়া।”
অতঃপর সে উঠে দাঁড়ায়। বাড়িতে ফিরেছে থেকে মানতাশার দেখা পায়নি৷ জাইনের এখন যা অবস্থা তাই তাকে কিছু জিজ্ঞেস করল না। কিছুটা দূরে এগিয়ে গিয়ে হাফসা বেগমকে বলল,
“মানতাশা কোথায়? এসেছি থেকে তো ওকে কোথাও দেখছি না?”
হাফসা চাপা আক্রোধ নিয়ে বলে,
“দেখবে কিভাবে? তোমার বউ মানতাশাই তো আমাত শ্বাশুড়িমা আর উমায়রাকে খু**ন করে দামী গহনাগাঁটি আর টাকা নিয়ে পালিয়েছে নিজের নাগরের সাথে।”
হাফসার এই কথা শুনে জাদ ভীষণ রেগে যায়। চরম ক্রোধ নিয়ে বলে ওঠে,
“চুপ করুন! আমার মানতাশার সম্পর্কে আর একটা বাজে কথা বললে আমি ভুলে যাব আপনি সম্পর্কে আমার ভাবি হন।”
“আমাকে চোখ রাঙাবে না। চোরের মায়ের বড় গলা! চোখ নামিয়ে কথা বলো।”
জাদ বুঝল হাফসার সাথে কথা বলে কোন লাভ নেই। তাই সে ভাবল বাড়ির সিসিটিভি ফুটেজ চেক করে দেখবে। তবে সে খোঁজ নিয়ে শুনল, পুলিশ ইতিমধ্যেই সকল সিসিটিভি ফুটেজ চেক করেছে সেই মুহুর্তের কোন সিসিটিভি ফুটেজ পাওয়া যায়নি। জাদ বিষন্ন মন নিয়ে নিজের কক্ষে গেল। বিছানায় বসতেই বালিশের নিচে একটা সাদা কাগজ পেল। আগ্রহ নিয়ে কাগজটা হাতে তুলে নিয়েই দেখল সেখানে মানতাশা লিখে রেখে গেছে,
“আশা করি, এই চিঠিটা তোমার কাছে পৌঁছাবে জাদ। আমাদের সুখী জীবনে আবার আমাবস্যার অন্ধকার নেমে এসেছে। ঐ শয়তান লোকটা আবার আমাকে নিয়ে যেতে চলেছে। জানি না, এই চিঠিটা আপনি অব্দি পৌঁছানো অব্দি আমি কিরকম পরিস্থিতিতে থাকব। তবে আমি আশা রাখব, আপনি যখন এই চিঠিটা পড়বেন, তখনো খুব বেশি দেরি হবে না। আমি ঐ জঘন্য লোকটার কাছে বন্দি থাকতে চাই না। আপনি দয়া করে আমাকে উদ্ধার করুন।”
চিঠিটা পড়ে জাদ হাত মুষ্টিবদ্ধ করে নেয়।
★★★
মানতাশা একটি অন্ধকার অক্ষে চুপ করে বসেছিল। আবু সুফিয়ান তাকে এই কক্ষে বন্দি করে রেখেছে। মানতাশা অপেক্ষার প্রহর গুনছে। হয়তো কেউ আসবে তাকে বাঁচাতে এই অবস্থা থেকে বাঁচাতে এই আশায় দিন গুনছে বেচারি মেয়েটা। এরমধ্যে আবু সুফিয়ান হাসতে হাসতে তার কক্ষে প্রবেশ করে বলে,
“কেমন লাগছে আমার বন্দিনী?”
“তুই এখন যত আনন্দ করার করে নে কিন্তু একটা কথা মনে রাখিস, তোর অন্যায়ের বিনাশ হবেই।”
সুফিয়ান কিছু বলতে যাবে তার আগেই রাশেদ এগিয়ে এসে বলল,
“বস, একটা খারাপ খবর আছে।”
“কি খবর?”
“ব্লু রিডার্স নামের একটা গ্যাং আমাদের উপর হামলা করেছে বস।”
“এটা আবার কোন গ্যাং?”
“দুবাইয়ে অনেক আগে থেকেই এই গ্যাংটা পাওয়ারফুল।”
“কিন্তু ওরা আমাদের উপর হামলা কেন করল? আমাদের সাথে ওদের কি শত্রুতা?”
“ওরা বলছে,আপনি নাকি ওদের খুব দামি কিছু চুরি করেছেন।”
“আমি আবার ওদের কি চুরি করলাম?”
বিস্ময়ের সাথে জানতে চায় আবু সুফিয়ান। এমন সময় শুনতে পায় বাইরে গোলাগুলির শব্দ শুনে দুজনেই অবাক হয়। রাশেদ বলে,
“আপনি এখানেই থাকুন বস। আমি বাইরে গিয়ে দেখি পরিস্থিতি কেমন।”
বলেই রাশেদ বাইরে আসে। এসে যা দেখে তা অবাক করার মতো ব্যাপার। ব্লু রিডার্স গ্যাং তাদের গ্যাং এর অসংখ্য সদস্যকে পর্যুদস্ত করে ফেলেছে।
রাশেদ এগিয়ে গিয়ে ধরে এমন সময় তার মাথায় কেউ বন্দুক তাক করে। রাশেদ সামনে তাকিয়ে যাকে দেখে তাকে দেখে অবাক না হয়ে পারে না। ভয়ে ঢোক গিলে বলে,
“আপনি?!”
“হ্যাঁ, আমি। ব্লু রিডার্স গ্যাং এর প্রধান। তোরা কি ভেবেছিলি? আমার স্ত্রীকে তুলে আনবি আর আমি চুপ করে থাকব। এবার তোদের সবাইকে আমি উপযুক্ত শাস্তি দিব।”
বলেই রাশেদকে হোস্টেজ করে সামনে এগিয়ে যায়। আবু সুফিয়ানও ততক্ষণে বাইরে বেরিয়ে আসে। জাদকে দেখে অবাক হয়ে বলে,
“ওহ তাহলে তুই এই গ্যাং এর প্রধান। তাই তো বলি, কার এত বড় বুকের পাটা হবে যে আমার বিরুদ্ধে লড়াই করতে আসে।”
“জানোয়ার। তুই আমার মা-ভাবিকে মেরেছিস। আমার স্ত্রীকে অপহরণ করেছিস। এর ভয়াবহ শাস্তি তোকে পেতেই হবে।”
বলেই গুলি করে রাশেদের খুলি উড়িয়ে দেয়। আবু সুফিয়ানের সামনেই লাশ হয়ে পড়ে যায় তার প্রিয় এসিট্যান্ট। যে তার হয়ে জীবনে অনেক সেক্রিফাইজ করেছে। ব্যাপারটা তাকে বিচলিত করে তোলে না বিন্দুমাত্র। বরং আবু সুফিয়ান বলে,”দে, দেখি তুই আমায় কি শাস্তি দিস। যদি আসল পুরুষ হস তো অস্ত্র ফেলে হাতে হাতে লড়াই কর।”
আবু সুফিয়ান ও জাদের মধ্যে ফাইট শুরু হয়৷ শুরুর দিকে আবু সুফিয়ান অনেক মার খেলেও সুযোগ বুঝে সে জাদের উপর উঠে তাকে মা*রতে থাকে। নিয়ম ভঙ্গ করে জাদের ফেলে দেয়া বন্দুক তার মাথায় তাক করে। জাদ বলে,
“এবার তো তুই কাপুরুষের পরিচয় দিলি!”
“আমি তোর মতো বোকা নেই।”
বলে গুলি চালাতে যাবে এমন সময় পিছন থেকে কেউ তার মাথায় রড দিয়ে আঘাত করে। সুফিয়ান পিছনে তাকিয়ে মানতাশাকে দেখতে পায়। যে চূড়ান্ত ক্রোধ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে। সুফিয়ানের মনযোগ ভঙ্গ হতেই জাদ তার থেকে বন্দুক কেড়ে নিয়ে বলে,
“কাপুরুষ কখনো জিততে পারে না।”
বলেই সুফিয়ানকে বলে,
“আমি জানি তুই একা কিছু করিস নি, তোর সঙ্গ দিয়েছে কেউ। তার নাম বল।”
সুফিয়ান কিছু একটা বলল। তারপর একটা বিকট আওয়াজ শোনা গেল। গুলি সুফিয়ানের মাথার খুলি ভেদ করে গেছে। জাদ উঠে দাঁড়িয়ে বাকা হেসে বলে,
“এবার জাহান্নামে গিয়ে নিজের সকল পাপের হিসাব দে।”
এদিকে মানতাশা ভয়ে দৌড়ে এসে জাদকে জড়িয়ে ধরে। জাদ মানতাশার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
“ভয় পেওনা একদম। আমি আছি তোমার পাশে। যারা যারা তোমার এবং আমার পরিবারের ক্ষতি করেছে তাদের প্রতি পাইটুপাই হিসাব নিয়ে ছাড়ব। আম্মু এবং হুমায়রা ভাবির খুনির প্রতিশোধ না নেয়া অব্দি আমি শান্তি পাবো না।”
চলবে….