#তোমাতেই_নৈঃশব্দ্য_প্রহরে
#তাহিরাহ্_ইরাজ
#পর্বসংখ্যা_১৬
” উক্তি! কেমন আছিস? ”
ঘরের দোরগোড়ায় উপস্থিত আগন্তুককে দেখে বিহ্বল উক্তি! হারিয়ে মুখের বুলি। চোখেমুখে আশ্চর্যের ছাপ!
.
নব্য দিনের সূচনায় পাখপাখালির মধুরতম কলরবে মাতোয়ারা ভুবন। উক্তি’র হাতে মাঝারি আকৃতির লাল রঙা এক বালতি। বালতি ভর্তি ভেজা কাপড়। তার, স্বামীর এবং শাশুড়ি মায়ের। কিছুক্ষণ পূর্বে এই কাপড়গুলো সে ধুয়েছে। এখন যাচ্ছে বাড়ির বাইরে খোলা আঙ্গিনায়। ভেজা কাপড়গুলো শুকানোর জন্য মেলে দিতে। মেয়েটির পড়নে আজ বাসন্তী রঙা সুতির শাড়ি। শাড়ির কিছু কিছু স্থান ভিজেছে, কাপড় ধোয়ার সময়। চোখেমুখে হালকা ঘামের অস্তিত্ব। চুলের অধিকাংশ আবৃত শাড়ির আঁচলে। উক্তি ঘরের মূল দরজায় প্রায় পৌঁছেছে ঠিক তখনই দরজায় করাঘাত। কেউ এসেছে। এসময় আবার কে এলো? বাড়ির পুরুষ সদস্য দু’জন তো কর্মস্থলে। মানে মুয়ীয কর্মস্থলে। আর মারুফ বেড়িয়েছে অর্থহীন ঘুরতে। তবে এলো কে? উক্তি বালতি হাতেই ধীরপায়ে দরজায় পৌঁছালো। দ্বিতীয়বারের মতো দরজায় কড়া নাড়লো আগন্তুক। উক্তি মেঝেতে বালতি নামিয়ে রাখলো। খুললো দরজা। দরজা খুলতেই বিস্ময়ে অভিভূত হলো উক্তি! হারিয়ে মুখের বুলি। চোখেমুখে আশ্চর্যের ছাপ! আগন্তুক মধুরতম হেসে সালাম দিলো ওকে,
” আসসালামু আ’লাইকুম। উক্তি! কেমন আছিস? ”
দরজায় দাঁড়িয়ে একজন নয়। বরং চারজন মানব অবয়ব দাঁড়িয়ে সেথায়। সম্পূর্ণ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি তারা! কোহিনুর খানম পূর্ণ দৃষ্টি মেলে তাকালেন উক্তি পানে। ওর পরিহিত শাড়ি, স্বল্প ভেজা অবস্থা, পায়ের ধারে দাঁড়িয়ে থাকা বালতি। সবটাই লক্ষ্য করলেন উনি। বিদ্রুপের সহিত নাক ছিটকে উঠলেন,
” এ মা! এসব কি উক্তি? তুমি কি এ বাড়িতে মেইড সার্ভেন্টের কাজও করো? ”
কোহিনুর খানমের কথা শুনে উক্তি ওনার পানে তাকালো। কাতানের মেরুন রঙা এক শাড়ি পড়নে ওনার। মাথার চুলগুলো খোঁপা করে বাঁধা। কানে, গলায়, হাতে শোভা পাচ্ছে দামী অলঙ্কার। চেহারায় প্রসাধনীর ছোঁয়া। পায়ে ব্র্যান্ডেড ফুট ওয়্যার। আপাদমস্তক কেমন আভিজাত্য বিরাজমান। উক্তি ফুফুর এমনতর খোঁচা মা রা বাক্য পাশ কাটিয়ে, সালামের জবাব দিলো ফুফাতো ভাই বিল্লালের। সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের মাধ্যমে সালামের জবাব দিলো। মেয়েটি অতঃপর হাস্যোজ্জ্বল মুখে ওদের ভেতরে আসতে আহ্বান করলো। মুখে তো হাসির রেখা। তবে অন্তরে চিন্তার বলিরেখা। হবে না? গতবার ভাবী ও বান্ধবী এসে যে খাতিরদারি পেলো! না জানি আজ আবার কি হয়! বিল্লাল লম্বা চওড়া হাসি উপহার দিয়ে বললো,
” ভালো আছিস উক্তি? কেমন লাগলো সারপ্রাইজ? একদম চমকে দিয়েছি না? ”
উক্তি হাসিমুখে মাথা নাড়লো। হাতের ইশারায় বললো,
” খুব চমকে দিয়েছো ভাইয়া। তোমরা কেমন আছো বলো? আলহামদুলিল্লাহ্ আমি ভালো আছি। ”
ফুপা তোফায়েল সাহেব এগিয়ে এলেন। স্নেহের হাত রাখলেন ওর মাথায়। আদুরে গলায় শুধোলেন,
” সত্যিই ভালো আছিস তো মা? ”
আজ আর কোনো দ্বিধাবোধ হলো না। সেরা এক স্বামী তাকে উপহার দিয়েছেন আল্লাহ্। স্বামীর হালাল ভালোবাসা, পবিত্র সুখ দিয়েছেন। দিয়েছেন কারোর একান্ত, একমাত্র নারী হওয়ার সৌভাগ্য। এরপরও কি সুখী নয় সে? ভালো নেই? আলহামদুলিল্লাহ্ অনেক ভালো আছে সে। আলহামদুলিল্লাহি আ’লা কুল্লি হাল! উক্তি লজ্জালু মুখে ইতিবাচক মাথা নাড়লো। হ্যাঁ , আলহামদুলিল্লাহ্ ভালো আছে সে। তোফায়েল সাহেব তৃপ্তির হাসি উপহার দিলেন। ওনার বুক হতে নামলো চিন্তার সুবিশাল এক পাহাড়। বিন্তি ঠোঁট বাঁকিয়ে হাসলো। বললো,
” হাহ্! এমন বস্তি বাড়িতে তুই সত্যিই ভালো আছিস আপু? আ’ম সো সারপ্রাইজড্! ”
বিল্লাল ছোট বোনকে শুধরে দিলো,
” বিন্তি ঠিক করে কথা বল। বস্তি বাড়ি পেলি কোথায়? এটা..”
” ওহ্ ভাইয়া প্লিজ! আমি ছোট বেবি নই যে তুমি আমাকে যা বলবে, তাই বুঝে নেবো। আ’ম অ্যাডাল্ট এনাফ। ”
বিন্তি আশপাশে ঘুরে দেখতে দেখতে অপ্রসন্ন কণ্ঠে বললো,
” এই যে রঙচটা দেয়ালের বাড়ি। মাথার ওপর টিনের ছাদ। আশপাশে সো মাচ নয়েজ। এটা বস্তি নয়তো আর কি? ”
কথাগুলো শুনতে বড় তিক্ত লাগছিল। কানে যেন কিলবিল করে কা’মড়ে দিচ্ছিল বি°ষাক্ত লাল পিঁপড়ার দল। উক্তি তৎক্ষণাৎ সাইন ল্যাঙ্গুয়েজের ভাষায় বলে উঠলো,
” বিন্তি! বাড়ির নাম কখনো ‘বস্তি বাড়ি’ হয় না। হয় ডুপ্লেক্স বাড়ি, নয়তো অ্যাপার্টমেন্ট নয়তোবা নরমাল বিল্ডিং হয়। বস্তি শব্দটা আমাদের হাই স্ট্যান্টার্ড মানুষদের তৈরি। উঁচু দালানে বসে নিচে বসবাস করা মানুষগুলোকে হেয় করতে আমরা এই শব্দ ব্যবহার করি। বস্তি! আদতে এটা নিচু মানের একটা শব্দ। খুব অপমানজনক! ”
বিন্তি হাতের তালু দেখিয়ে থামতে ইশারা করলো,
” উফ্ আপু। এত জ্ঞান দিস না তো। ফ°কিন্নি বাড়ির বউ হিসেবে তোর মুখে এসব জ্ঞান একদমই মানাচ্ছে না। জাস্ট ফালতু শোনাচ্ছে। ”
বিল্লাল শাসনের স্বরে ধমকে দিলো বোনকে,
” চাপকে তোর পিঠের চামড়া তুলে নেবো বিন্তি। আপুর সঙ্গে কিভাবে কথা বলছিস? ও তোর বড় হয় না ছোট? হা? গিভ হার রেসপেক্ট। ”
বিন্তি মুখ বাঁকিয়ে দৃষ্টি সরিয়ে নিলো। অহেতুক জ্ঞান শুনতে নারাজ সে। মেয়েটা সবে আঠারোতে পা দিয়েছে। এইচএসসি পরীক্ষার্থী। অথচ এখনই সরাকে ধরা জ্ঞান করে না। ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে থাকে। যা বড় ভাই এবং বাবার মোটেও পছন্দ নয়। মা কোহিনুর খানম অবশ্য সাপোর্টে আছেন। মেয়েকে আরো আদর দিয়ে বাঁদর করে তুলছেন।
কোহিনুর খানম ছেলের কথায় দ্বিমত পোষণ করে বলে উঠলেন,
” বিল্লাল! বোনের সঙ্গে কোন টোনে কথা বলছো? ঠিকমতো কথা বলো। ”
” মা তুমি কি দেখছো না, বিন্তি উক্তির সঙ্গে কিভাবে কথা বলছে?”
” কিভাবে বলছে? ঠিক ভাবেই তো বলছে। ভুল কিছু বলেনি। ”
তোফায়েল সাহেব চাপা স্বরে স্ত্রীকে বললেন,
” ভাতিজির শ্বশুরবাড়ি এসেছো প্রথমবার। এখানে অন্তত নিজের স্বরূপ দেখিয়ো না। ”
কোহিনুর খানম রোষপূর্ণ কণ্ঠে বললেন,
” স্বরূপ দেখাচ্ছি মানে কি? আমি কি ডা°ইনির মতো আচরণ করছি? ”
বিল্লাল ও তোফায়েল সাহেব কথাটি শোনামাত্র একে অপরের পানে তাকালেন। অর্থবহ হাসলেন পিতা ও পুত্র। তোফায়েল সাহেব মৃদু কণ্ঠে বললেন,
” সত্যিটা তো নিজেই বলে দিলে। আমি আর কি বলবো বলো? ”
” বুড়ো ভীম একটা। যেখানে সেখানে আমাকে অপদস্থ করার সুযোগ খোঁজে শুধু। ” বিড়বিড়িয়ে উঠলেন কোহিনুর খানম।
বিন্তি আশপাশে নজর বুলিয়ে বললো,
” কি রে আপু? তুই বাড়িতে একা নাকি? বস্তি বাড়ির বাকি লোকগুলো কই? ”
কথায় কথায় ইচ্ছাকৃতভাবে ‘ বস্তি ‘ শব্দটা উচ্চারণ করে অপমান করে চলেছে বিন্তি। উক্তি পাল্টা জবাব দিতে যাচ্ছিল ঠিক সে মুহূর্তে গমগমে স্বরে শোনা গেল ঘরময়,
” বস্তির মাইনষেরা বাড়িতেই আছে। পলাই যায় নাই। ”
উক্তি সহ উপস্থিত প্রতিটি জীব ঘুরে তাকালো শব্দ উৎসের খোঁজে। তাদের দৃষ্টিতে ধরা দিলো এক নারী মূর্তি। পান চিবোতে চিবোতে শাক বাছতে থাকা এক নারী। মোমেনা বেগম এক নিচু পিঁড়িতে বসে ঘরের একাংশে। পান চিবোতে চিবোতে পাট শাক বেছে চলেছেন উনি। দৃষ্টি ও মনোযোগ নিবদ্ধ শাকে। শাশুড়ি মা’কে লক্ষ্য করে উক্তির অন্তঃস্থল শুকিয়ে গেল। মা! উনি এখানে কখন এসেছেন? কখন থেকে এখানে অবস্থান করছেন?! সবটা নিশ্চয়ই শুনে নিয়েছেন! এবার? কি হবে এবার? উক্তি বিলম্ব না করে পরিবারের সদস্যদের পানে এক ঝলক তাকিয়ে এগিয়ে গেল শাশুড়ি মায়ের পানে। হাতের ইশারায় কিছু বলতে উদ্যত হলো তখনই মোমেনা বেগম ওকে বললেন,
” বউ! শাকগুলা বাইছা হ্যালাইছি। তুমি কাপড়চুপুড় লাইড়া এডি ধুইয়া হালাও। রানমু। মোর মুয়ীয বাপ খাইতে চাইছে। ”
উক্তি আশ্চর্যজনক দৃষ্টিতে তাকিয়ে। মা এসব কি বলছেন! উনি এতটা স্বাভাবিক আচরণ কি করে করছেন? তবে কি উনি কিছু শুনতে পাননি…? নাকি শুনেও !! মনে মনে মহান আল্লাহ্’কে স্মরণ করতে লাগলো মেয়েটা। অস্বস্তি, আশঙ্কায় গণ্ডস্থল যে শুকিয়ে বালুকাময় বিস্তীর্ণ ভূমি।
•
রাত্রি প্রহর তখন। ঘড়ির কাঁটা নির্দেশ করছে সময় তখন রাত নয়টা বেজে বিশ মিনিট। স্বল্প ব্যস্ত সড়ক দিয়ে ছুটে চলেছে বাইক। বাইকে বসে দু’জন আরোহী। চালক হিসেবে জনাব মুয়ীয হাসান। সঙ্গী হিসেবে বন্ধু চয়ন। মুয়ীযের সতর্ক দৃষ্টি নিবদ্ধ চলতি সড়কে। পেছন হতে বন্ধু বলে উঠলো,
” দোস্ত, দেখতে দেখতে রমজান মাস তো আইয়া পড়লো। ”
” হুম। ”
” বাজার সওদা কবে থে করবি? ”
” দেহি আল্লাহ্ কবে করায়। ”
হতাশা মিশ্রিত দীর্ঘশ্বাস ফেলে চয়ন বলে গেল,
” হ। তবে একখান কথা দোস্ত। এবার রোজায় ভালোমন্দ কি খামু না খামু আল্লাহ্ ভালো জানে। সব জিনিসের দাম ছরছর কইরা বাড়তাছে। কি যে কিনমু বুঝতাছি না। আমাগো আয় তো একই জায়গায় ঠ্যাস মাইরা পইড়া আছে। মাঝখান দিয়া ব্যয় বাড়তেই আছে। অহন উপায়ডা কি? গা*/*জাবাসীর লাহান না খাইয়া মরমু? ”
” আরে ব্যাডা! রাহে আল্লাহ্ তো মারে কেডা? মরতাম না। হয়তো কম খামু। বেশি হিসাবনিকাশ কইরা চলমু। মাগার হায়াত থাকতে মরমু না। ইনশাআল্লাহ্। ”
অতি আত্মবিশ্বাসী কণ্ঠে ভেতরকার অবস্থা প্রকাশ করলো মুয়ীয। চয়ন শুনলো। বললো,
” কি করমু ক? তরমুজ, আপেল, মাংস, মাছ কিয়ের দাম বাড়ে নাই? রুহ আফজা খাওয়া তো হেই কবেই ভুইলাই গেছি। শেষ কবে খাইছি মনে নাই। ”
” কি কইরা খাবি? আগে যার দাম আছিল তিনশো, সাড়ে তিনশো। অহন পাঁচশো ছাড়াইছে। রুহ আফজা মোগো লাহান লোকেগো লেইগা না। এইয়া বড়লোকী শরবত। ”
” হাছা কইছোছ দোস্ত। সামান্য তরমুজের দামও তো আকাশ ছোঁয়া অবস্থা। এরম চলতে থাকলে সাধারণ মাইনষে খাইবে কি ক? বউ হেইদিন মুরগির মাংস নিতে কইলো। আব্বায় নাকি খাইতে চাইছে। গেলাম মুরগি কিনতে। দাম হুইনাই পেট ভইরা গেছে। ”
মুয়ীয অসন্তোষের স্বরে বললো,
” হা°লার পো হা°লারা তরমুজ ধইরা ধইরা হালাই দিতাছে। নষ্ট করতাছে। হ্যারপরও কম দামে বেচবো না। ওরা ভুইলা গেছে কুরআন শরীফে মহান আল্লাহ্ আকাম কুকাম করতে মানা করছে। ওজনে ত্রুটি করতে মানা করা হইছে। ”
পবিত্র কুরআন শরীফে আল্লাহ্ তা’য়ালা বলেছেন,
﴿وَإِلَىٰ مَدۡيَنَ أَخَاهُمۡ شُعَيۡبٗاۚ قَالَ يَٰقَوۡمِ ٱعۡبُدُواْ ٱللَّهَ مَا لَكُم مِّنۡ إِلَٰهٍ غَيۡرُهُۥۖ وَلَا تَنقُصُواْ ٱلۡمِكۡيَالَ وَٱلۡمِيزَانَۖ ٨٤﴾ [هود: ٨٤]
“হে আমার কাওম! আল্লাহ্’র ইবাদাত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের কোনো মা‘বুদ নাই। আর পরিমাপে ও ওজনে কম দিও না”। [সূরা সূরা হূদ, আয়াত: ৮৪]
﴿وَيَٰقَوۡمِ أَوۡفُواْ ٱلۡمِكۡيَالَ وَٱلۡمِيزَانَ بِٱلۡقِسۡطِۖ وَلَا تَبۡخَسُواْ ٱلنَّاسَ أَشۡيَآءَهُمۡ وَلَا تَعۡثَوۡاْ فِي ٱلۡأَرۡضِ مُفۡسِدِينَ ٨٥﴾ [هود: ٨٥]
“আর হে আমার জাতি! ন্যায় নিষ্ঠার সাথে ঠিকভাবে পরিমাপ কর ও ওজন দাও এবং লোকদের জিনিসপত্রে কোনোরূপ ক্ষতি করো না”। [সূরা হূদ, আয়াত: ৮৫]
বর্তমান সময়ে ব্যবসায় সততা খুঁজে পাওয়া বেশ দুষ্কর। অথচ আমাদের ধর্ম, শ্রেষ্ঠ ধর্ম ইসলামে ব্যবসাকে হালাল ও সুদকে হারাম ঘোষণা করা হয়েছে। ব্যবসায় প্রতারণা করতে নিষেধ করা হয়েছে। ক্রেতাদের ধোঁকা দিতে নিষেধ করা হয়েছে। অথচ এটাই এখন হরমামেশা হয়ে থাকে। পবিত্র মাহে রমজানে ব্যবসায়ীদের কুকর্মে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সাধারণ জনগণ। তাদের জীবনযাত্রার মান ক্ষুণ্ন হয়। ভালোমন্দ খেতে পায় না তারা। কিনতে পারে না।
আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
«أَنَّ رَسُولَ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مَرَّ عَلَى صُبْرَةِ طَعَامٍ فَأَدْخَلَ يَدَهُ فِيهَا، فَنَالَتْ أَصَابِعُهُ بَلَلًا فَقَالَ: «مَا هَذَا يَا صَاحِبَ الطَّعَامِ؟» قَالَ أَصَابَتْهُ السَّمَاءُ يَا رَسُولَ اللهِ، قَالَ: «أَفَلَا جَعَلْتَهُ فَوْقَ الطَّعَامِ كَيْ يَرَاهُ النَّاسُ، مَنْ غَشَّ فَلَيْسَ مِنِّي».
“একদিন রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বাজারে গিয়ে একজন খাদ্য বিক্রেতার পাশ দিয়ে অতিক্রম করছিলেন, তিনি খাদ্যের ভিতরে হাত প্রবেশ করে দেখলেন ভিতরের খাদ্যগুলো ভিজা বা নিম্নমান। এ অবস্থা দেখে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, হে খাবারের পন্যের মালিক এটা কী? লোকটি বলল, হে আল্লাহ্’র রাসূল, এতে বৃষ্টি পড়েছিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, তুমি সেটাকে খাবারের উপরে রাখলে না কেন; যাতে লোকেরা দেখতে পেত? “যে ধোঁকা দেয় সে আমার উম্মত নয়”। [ সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১০২ ]
বন্ধুর কথায় চয়ন বললো,
” হা°লারা মানুষ না। মানুষ রূপী আস্ত শ*য়তান। প্রতি রমজানেই অগো ভিতর শ*য়তানি লড়া দিয়া ওঠে। কোনো শিক্ষা হয় না অগো। ”
মুয়ীয মাথা নাড়লো আলতো করে। মিনিট দুই বাদেই পৌঁছে গেল গন্তব্যে। চয়ন বাইক হতে নেমে গেল। বন্ধুকে বললো,
” আচ্ছা দোস্ত সাবধানে যাইস তাইলে। আল্লাহ্ হাফিজ। ”
” আল্লাহ্ হাফিজ। আসসালামু আ’লাইকুম। ”
” ওয়া আলাইকুমুস সালাম। ”
মুচকি হেসে বিদায় জানালো চয়ন। পা বাড়ালো গলির অন্ধকারে। মিনিট দুই হাঁটলেই তাদের টিনশেড বাড়ি। মুয়ীযের বাড়ি আরো দশ মিনিটের দূরত্বে অবস্থিত। কিছুটা পথ এখনো বাকি। চয়ন অন্ধকার গলিতে মোবাইলের আলো জ্বালিয়ে প্রবেশ করলো। সে দৃশ্য অবলোকন করে বাইক চালু করলো মুয়ীয। এবার রওনা হলো নিজ বাড়ির উদ্দেশ্যে।
•
আঁধারিয়া রজনী। নৈশভোজ সম্পন্ন হয়েছে কিছুক্ষণ পূর্বে। সোফায় বসে কায়সার সাহেব। হাতে ইংরেজি ভাষায় রচিত এক বিজনেস ম্যাগাজিন। পাশেই বসে বোন জামাই তোফায়েল সাহেব। সে মানুষটি দেশ-বিদেশের মুদ্রাস্ফীতি, সাম্প্রতিক অবস্থা নিয়ে কথা বলছে। কায়সার সাহেব চুপচাপ শুনছেন। আস্তে ধীরে ম্যাগাজিনের পাতা উল্টে যাচ্ছেন। সে মুহূর্তে সেথায় উপস্থিত হলেন কোহিনুর খানম। কায়সার সাহেবের ছোট বোন। এসেই বড় ভাইয়ের উদ্দেশ্যে প্রশ্ন ছুঁড়ে দিলেন,
” অপয়া মেয়েটাকে নিয়ে এত আদিখ্যেতার কোনো দরকার ছিল কি ভাইয়া? ”
•
” ভাইয়া! তোমার বউ নিজেরে কি মনে করে? লেডি হাতেম তাঈ? এইয়া কি শুরু করছে হা? ”
প্রশ্নবিদ্ধ চোখে তাকিয়ে মুন্নি। মুয়ীযের কপালে সৃষ্টি হলো সরু ভাঁজ। পাশেই চুপটি করে দাঁড়িয়ে উক্তি।
চলবে।