সে আমার অপরাজিতা পর্ব-০৪

0
153

#সে_আমার_অপরাজিতা
#পর্ব_৪
#সারা মেহেক

বিন্দু সজীবকে জিজ্ঞেস করলো,
” কি কারণে ডাকছে?”

সজীব হাঁপাতে হাঁপাতে চেয়ারে বসলো। টেবিলে রাখা গ্লাস নিয়ে ঢকঢক করে পানি খেলো। তারপর লম্বা একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,
” তা আমি জানি না। প্রথমে আমার ডিপার্টমেন্টের নাম জিজ্ঞেস করলো। তারপর তোর নাম নিয়ে জিজ্ঞেস করলো তুই কোন ডিপার্টমেন্টে। এরপরই আমাকে বললো এক্ষুণি তোকে লাইব্রেরির সামনে নিয়ে আসতে। এবার জলদি চল বিন্দু। কোনো ঝামেলায় পড়তে চাচ্ছি না আমি। এক মাসও হয়নি ভার্সিটিতে পা রেখেছি। ”

মারিয়া ভ্রুজোড়া কুঁচকিয়ে খানিক ক্রোধের সহিত বললো,
” হয়েছে হয়েছে। হুদাই এতো প্যানিক করছিস কেনো? শুধু ডেকেছে তাই তো? এমনভাবে রিয়েক্ট করছিস যেনো খু’ ন করতে ডাকছে ওকে। তোর যেতে হবে না। আমিই যাচ্ছি।
বিন্দু চল। তোর সাথে আমিও যাচ্ছি।”

বলেই সে বিন্দুকে নিয়ে উঠে পড়লো। ক্যান্টিন ছেড়ে লাইব্রেরির সামনে এসে দাঁড়ালো। দেখলো তিনটা মেয়ে আর দুটো ছেলে একত্রে দাঁড়িয়ে আছে। তাদেরকে দেখেই বিন্দু ও মারিয়া সন্দেহ করলো, এরাই বুঝি ফাইনাল ইয়ারের সেই সিনিয়র।
বিন্দু ও মারিয়া একত্রে হেঁটে গিয়ে তাদের সামনে দাঁড়ালো। তাদের উদ্দেশ্যে সালাম দিতেই তাদের মধ্য হতে জিন্স, টপস পরিহিতা একটি মেয়ে ঘুরে তাকালো। বিন্দু ও মারিয়াকে মুহূর্তেই একবার আপাদমস্তক দেখে নিলো। অনমনীয় কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” তোমাদের মধ্যে বিন্দু কে?”

বিন্দু এক কদম এগিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
” আমিই বিন্দু। ”

ততক্ষণে বাকি চারজনেও ঘুরে তাকিয়েছে। সকলের দৃষ্টি সামনের দুজনের উপর ঘুরাঘুরি করছে। বিন্দু তাদের এহেন চাহনি দেখে কিঞ্চিৎ নড়েচড়ে দাঁড়ালো। মাথার হিজাব,গায়ের ওড়না ঠিক করলো।

টয়া নামের মেয়েটি যে সর্বপ্রথম বিন্দু ও মারিয়ার দিকে ঘুরে তাকালো, সে জিজ্ঞেস করলো,
” কোন ডিপার্টমেন্ট? ”

বিন্দু ভীত না হয়ে জবাব দিলো,
” আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগ।”

টয়া তৎক্ষনাৎ গলার স্বর পরিবর্তন করে ঠেস দেওয়ার সুরে বললো,
” ওহ, আই সি। এজন্যই তোমার আর বৃত্ত ভাইয়ের কথা পুরো ভার্সিটিতে চলছে। একে তো শাড়ির ছেঁড়া নিয়ে আলোচনা,তার উপর আবার দুজনে একই ডিপার্টমেন্টে! গুড!”

টয়ার কথা শেষ হতে না হতেই নাইমা জিজ্ঞেস করলো,
” বিন্দু রাইট? ”

বিন্দু মাথা দোলালো। নাইমা ফের জিজ্ঞেস করলো,
” ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড কি তোমার?”

অকস্মাৎ এভাবে পারিবারিক বিষয় নিয়ে জিজ্ঞেস করায় থমকে গেলো বিন্দু। এখানে আসার পূর্বে মনের ভেতর যতটা সাহস সঞ্চয় করে এসেছিলো, এখন ঠিক ততোটাই অসহায় বোধ করছে সে। বিন্দু চায় না তার পারিবারিক বিষয় নিয়ে কেউ তাকে প্রশ্ন করুক। এজন্য মারিয়াকে সবটা বলে সে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিলো যেনো সে কাউকে এ বিষয়ে কিছু না বলে। মারিয়াও বিন্দুর কথা ভেবে রাজি হয়েছিলো।
বিন্দুকে এমন প্রশ্ন করায় মারিয়া ভীষণ উদ্বিগ্ন হলো। কেননা সে জানে বিন্দু এ ব্যাপারে প্রশ্ন করা একদম পছন্দ করে না। তাই সে এগিয়ে গেলো বিন্দুর হয়ে জবাব দেওয়ার জন্য। গিয়ে বললো,
” আসলে আপু বিন্দু….. ”

মারিয়াকে মাঝ পথে থামিয়ে নাইমা বললো,
” তুমি জবাব দিচ্ছো কেনো? আমি বিন্দুকে জিজ্ঞেস করেছি। বাই দা ওয়ে, তোমার নাম কি?”

মারিয়া বিস্তৃত হেসে বললো,
” মারিয়া, আপু। ”

” ওহ, মারিয়া।
আচ্ছা বিন্দু, তুমি বলো, যা প্রশ্ন করেছিলাম আরকি। ”

বিন্দু নীরব রইলো। তার চেহারায় ক্ষীণ বিচলিত ভাবের দেখা মিললো। সে যে এ প্রশ্নের জবাব দিতে চাইছে না তা এদের কি করে বুঝাবে?
বিন্দু আমতাআমতা করলো। তার এরূপ অবস্থা দেখে খানিকটা বিরক্ত হলো পাভেল নামের ছেলেটি। সে বিরক্তিতে ‘চ’সূচক শব্দ করে বললো,
” এতো আমতাআমতা পছন্দ না আমার। গান পারো? ”

বিন্দু চট করে মাথা তুলে তাকালো। ক্ষীণ সুরে বললো,
” না। ”

” পারো না! বিশ্বাস হয় না। একটা গান গেয়ে শোনাও। তোমার কণ্ঠটা বেশ মিষ্টি। প্যাঁ-পুঁ করলেই একটা সুন্দর গান হয়ে যাবে। ”

পাভেলের এহেন কথায় উপস্থিত বাকি চারজনে বিরক্তি নিয়ে তাকালো। ততক্ষণে তাদের ছোট্ট সমাবেশে বাদলের আগমন ঘটলো। বাদল আর উপস্থিত ফাইনাল ইয়ারের পাঁচজন একই ডিপার্টমেন্টের স্টুডেন্ট।
বাদলকে দেখেই পাভেল উৎফুল্ল স্বরে বললো,
” আরে মামা! কত্তদিন পর তোর দেখা। তুই তো এক্কেবারে অমবস্যার চাঁদ হয়ে গেছোস। ”

বাদল উচ্চ শব্দে হেসে বললো,
” আর তুই তো ডুমুরের ফুল হয়ে গেছোস।”

দুই বন্ধুর এহেন উপমা শুনে টয়া বললো,
” বাহ বাহ। একজন চাঁদ, একজন ফুল। আর মাঝে আমরা কি? ঘাস?”

বাদল দাঁত কেলিয়ে হেসে বললো,
” তুই নিজেকে ঘাস ভাবলে ঘাসই।
তো এখানে কি করছিস? ”
বলেই সে বিন্দু ও মারিয়ার দিকে চেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” জুনিয়রদের র‍্যাগ দিচ্ছিস? ”

নাইমা বললো,
” আরে কিসের র‍্যাগ! একটু পরিচিত হচ্ছিলাম আরকি।”

বাদল নাইমার কথার ভঙ্গিতেই বাকিটা বুঝে নিলো। আগের কণ্ঠস্বর পরিবর্তন করে রাশভারী গলায় বললো,
” দেখ নাইমা। তোদের মতলব বুঝেছি আমি। তোরা জানিস, এসব আমার একদম পছন্দ না। ভাই যদি জানতে পারে তোরা জুনিয়রদের র‍্যাগ দিচ্ছিস তাহলে আমার অবস্থা বারোটা বাজাবে। ”

টয়া কিঞ্চিৎ ভীত হলো। বললো,
” বৃত্ত ভাইকে এ ব্যাপারে কিছু জানাস না দোস্ত। ওর সাথে বৃত্ত ভাইকে নিয়ে ভার্সিটির অনেকেই বলাবলি করছিলো বলে একটু দেখা করলাম আমরা। ”

বাদল চট করে ভ্রু কুঁচকে বিন্দু ও মারিয়ার দিকে চাইলো। সন্দেহ ও উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” কি বলাবলি হচ্ছিলো? স্ট্রেঞ্জ! আমি কিছুই জানি না। ভাই তো আমাকে এ ব্যাপারে কিছুই বললো না। ”

বহুক্ষণ পর এবার ওসমান মুখ খুললো। বললো,
” কেমনে জানবা তুমি৷ সারাদিন থাকো বাপের রাজনীতি নিয়ে, আর ভার্সিটিতে আসলে থাকো ভার্সিটির রাজনীতি নিয়ে। আমি বলতেছি তোকে।”
বলেই সে বাদলের দিকে এগিয়ে গেলো। বাদলের কানে কানে সম্পূর্ণ ঘটনা বললো। পুরো ঘটনা শোনার পর বাদলের প্রতিক্রিয়া হলো দেখার মতো। ভারী বিস্ময় নিয়ে সে বিন্দুকে পর্যবেক্ষণ করলো। বিন্দুর সামনে গিয়ে আকাশসম বিস্ময় নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” ভাই তোমাকে সরি বলেছে! তাও সামান্য শাড়ি ছেঁড়ার জন্য!”

বাদলের এহেন প্রতিক্রিয়া দেখে অদ্ভুতভাবে ঘাবড়ে গেলো বিন্দু। যেনো পৃথিবীর অতি আশ্চর্যপূর্ণ এক ঘটনা ঘটে গিয়েছে তার সাথে। সে ছোট্ট করে বললো,
” জি, আমাকে সরি বলেছে। ”

বাদল এবার এক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরলো। কিভাবে নিজের বিস্ময়ভাব ঠিকভাবে প্রকাশ করবে তা নিয়ে ক্ষণিকের দ্বিধায় পড়লো সে। এদিকে তার এরূপ আচরণে মারিয়া বিড়বিড় করে বললো,
” পাগল নাকি? এমন আচরণ করে কে!”

বাদলের এই অতি আশ্চর্যজনক পাগলামিপূর্ণ আচরণের মাঝেই বৃত্ত প্রবেশ করলো। তাকে দেখে মুহূর্তেই সকলে তটস্থ হয়ে দাঁড়ালো। বৃত্ত গুরুগম্ভীর কণ্ঠে তাদের উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করলো,
” কি চলছে এখানে?”

বাদল বৃত্তকে আচমকা দেখে চমকে উঠলো। পরক্ষণেই নিজেকে ধাতস্থ করে বললো,
” তোমার সুন্দর অতীত আর উজ্জ্বল ভবিষ্যতের ঘটনা শুনলাম। এ ব্যাপারে আমাকে কিছুই জানাওনি ভাই। সমস্যা নেই, আজ বাড়ি গিয়ে যদি রসিয়ে রসিয়ে প্রতিটা ঘটনা না বলেছি তাহলে আমার নাম বাদল নয়। ”

বাদলের এহেন কথায় ভ্রুজোড়া কুঁচকে তাকালো বৃত্ত। তার কথার সঠিক অর্থ খুঁজতে ব্যর্থ হলো সে। বাদলকে কিছু বলতে যাবে এর পূর্বেই সে বিন্দুকে দেখলো। জিজ্ঞেস করলো,
” এখানে কি করছো তুমি? তোমাদের যে আর কিছুক্ষণ পর ক্লাস শুরু হবে, গ্রুপে নোটিশ পাওনি?”

বৃত্তের কথায় বিন্দু ও মারিয়া একে অপরের দিকে চাইলো। বৃত্ত বললো,
” এক্ষুণি ডিপার্টমেন্টে যাও।”

বৃত্তের কথায় বিন্দু ও মারিয়া কিছু না বলেই ডিপার্টমেন্টের উদ্দেশ্যে ছুট দিলো। তারা যেতেই বৃত্ত পাভেল ও বাকি সবার উদ্দেশ্যে কটমটে কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” নিশ্চয়ই ওদেরকে র‍্যাগ দিচ্ছেলে তাই না?”

ওসমান তৎক্ষনাৎ ভীত কণ্ঠে বললো,
” না ভাই। আপনি ভুল বুঝছেন। এমন কিছুই হচ্ছিলো না। ”

বৃত্ত ওসমানের কথার তোয়াক্কা করলো না। বললো,
” যাই করো না কেনো। র‍্যাগ নিয়ে যেনো কোনো ঘটনা আমার কান অব্দি না আসে। আর হ্যাঁ, ওদের থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখবে সবাই। ওদের সাথে কোনো প্রকারের র‍্যাগ, টিজ হতে দেখলেই তোমাদের ধরবো আমি। মনে থাকবে তো?”

সকলে তটস্থ হয়ে জবাব দিলো,
” জি ভাই। মনে থাকবে। ”

সকলে বৃত্ত’র কথায় সায় দিতেই সে বাদলের কাঁধে হাত রেখে বললো,
” তুই চল ওদিকে। কথা আছে কিছু।”

—————-

জাহানার মঞ্জিল। আফতাব হোসাইন তাঁর মায়ের নামে তৈরী করেছেন শহরের সবচেয়ে বিলাসবহুল বাড়িটি। এ বাড়িতে কি নেই চোখে পড়ার মতো। তবে শহরের মানুষকে এ বাড়ির কারুকার্য সবচেয়ে বেশি আকর্ষণ করে।

সন্ধ্যায় জাহানার মঞ্জিলে চা নাস্তার আয়োজন করা হলো। সে আয়োজনে আফতাব হোসাইন বাদে সকলেই উপস্থিত হলো। আফতাব হোসাইনের স্ত্রী শাহানা হোসাইন চা বানিয়ে লিভিং রুমে এনে রাখলেন। এসেই দেখলেন বৃত্ত,বাদল,বর্ষার হাতে ফোন। সকলেই নিজের ফোনের স্ক্রিনে সময় দিতে ব্যস্ত। আর জাহানার বেগম! উনি ব্যস্ত নাতনির ফোন দেখতে। বর্ষার সাথে তিনিও ফোনে ভিডিও দেখছেন।
শাহানা হোসাইন শাশুড়ীর সাথে ছেলেমেয়ের এহেন কান্ড দেখে ভীষণ বিরক্ত হলেন। বিনা বাক্যে আচমকা সকলের হাত থেকে ফোন কেড়ে নিয়ে টি টেবিলের উপর রেখে অভিযোগ করে বললেন,
” সারাদিন তো এই একটা জিনিস নিয়েই থাকিস তোরা। সন্ধ্যায় একটু তোদের কাছ থেকে সময় চাইলাম। কিন্তু এখানে এসেও দেখি তোরা ফোনে সময় দিচ্ছিস। কি করবো আমি! উফ!”
বলতে বলতেই মাথায় হাত দিয়ে সোফায় বসলেন শাহান হোসাইন। তাঁর এহেন অবস্থা দেখে বর্ষা, বাদল ও জাহানারা বেগম মুখ টিপে হাসলেন। কিন্তু বৃত্ত একান্ত বাধ্যগত ছেলের ন্যায় শাহানা হোসাইনের পাশে বসে নম্র কণ্ঠে বললো,
” অফিসের কিছু কাজ করছিলাম মা। এত রাগ করো কেনো? চলো, তোমার হাতের অমৃত চা খাই।”

শাহান হোসাইন বৃত্ত’র দিকে স্নেহময় চাহনিতে চেয়ে বললেন,
” আমার বড় ছেলেটাই আমাকে সম্মান দেয়। বাকি দুইটা ব’ দ’ মা’ শ তো আমাকে গোনায় ধরে না।”
বলতে বলতে তিনি পাঁচটা কাপে চা ঢাললেন। সবাইকে চা দিয়ে নিজেও চা খেতে আরম্ভ করলেন।

চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে বাদল বললো,
” জানো মা? আজ ভাইকে নিয়ে কি কাহিনি শুনলাম? ”

বাদলের এহেন কথা শোনামাত্র তিনজোড়া উৎসুক দৃষ্টি তার উপর স্থাপন হলো। বর্ষা উৎসুক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” কি শুনলে বৃত্ত ভাইকে নিয়ে?”

বাদল কালবিলম্ব না করে গড়গড় করে সব বলে দিলো। পরিশেষে বললো,
” তারপর আজকে আবার সবাইকে থ্রেটও দিয়ে এসেছে যেনো ওদের কাছে কেউ না যায়। এখানে ওদের বলতে যে বিন্দুকে বুঝিয়েছে তা আর বুঝতে বাকি নেই আমার।”

সম্পূর্ণ ঘটনা শোনামাত্রই তিনজোড়া দৃষ্টি বাদলের উপর হতে হটে গিয়ে বৃত্ত’র উপর স্থাপন হলো। জাহানারা বেগম এক ধাপ এগিয়ে অতি উৎসাহিত কণ্ঠে বললেন,
” মনে হচ্ছে ভবিষ্যতের নাতবৌ পেতে চলছি আমি। ”

বৃত্ত চায়ের কাপে শেষ চুমুকটা দিচ্ছিলো। দাদির এহেন কথায় তৎক্ষনাৎ বিষম খেলো সে। অবাক কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
” এসব কি বলছো দাদি! যাস্ট জুনিয়রদের ভালোর জন্য ঐ কথা বলে এসেছি, যেনো কেউ র‍্যাগ না দেয়। এতো ওভারথিংকিং ভালো না দাদি।”
বলেই সে উঠে দাঁড়ালো। বাদলের উদ্দেশ্যে বললো,
” বাবা আমাদের এক্ষুণি অফিসে যেতে বলেছে। অনেক আড্ডা হয়েছে। এবার অফিসে চল। ”

আফতাব হোসাইনের কথা শুনতেই বাদল তড়িঘড়ি করে চা শেষ করে বৃত্ত’র সাথে বেরিয়ে পড়লো।

————–

অফিসে আফতাব হোসাইনের সেক্রেটারি গফুর সাহেব মিটিংয়ের সার্বিক বিষয়বস্তু আলোচনা করলেন। অতঃপর আফতাব হোসাইন বৃত্ত ও বাদলের উদ্দেশ্যে বললেন,
” বৃত্ত ও বাদল, কালকে তোমরা দুজনে আমাদের লোকেদের নিয়ে ওখানে যাবে। সবকিছু মিটমাট করে তবেই বাড়ি ফিরবে।
খালেদ মোল্লার লোকেরা যে নিজেদের স্বার্থের জন্য ব্রিজ নির্মাণের কাজে বাঁধা দিয়ে আছে,আর তাতে যে এলাকার জনগণের কত ক্ষতি হচ্ছে তাতে ওদের কোনো মাথাব্যাথা নেই। কিন্তু আমি চাচ্ছি খালেদ মোল্লার কারণে এ শহরের একটা মানুষও যেনো ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। এজন্য এ কাজটা আমি তোমাদের দুজনের উপর সঁপে দিলাম। আশা করি আমার মান রাখতে পারবে দুজনে। ”

বৃত্ত দৃঢ় কণ্ঠে বললো,
” আপনি চিন্তা করবেন না বাবা। কালকে আপনার কাজ সম্পূর্ণ শেষ করেই আমরা দুজনে বাড়ি ফিরবো।”

বৃত্ত’র আশ্বাসবাণী শুনে আফতাব হোসাইনের চেহারায় প্রসন্নতার দেখা মিললো। দু ছেলেকে এভাবেই তো মানুষ করতে চেয়েছিলেন তিনি!

————

রাতে কফি নিয়ে ল্যাপটপে বসে কাজ করছিলো বৃত্ত। রোজকার মতো হঠাৎ রুমে আগমন ঘটলো বাদলের। বাদলকে দেখে ল্যাপটপের স্ক্রিনে চেয়ে থেকেই সে জিজ্ঞেস করলো,
” আবার কোন ডিপ্রেশনে পড়ে গেলি?”

বাদল হতাশার সুরে বললো,
” বিয়ে নিয়ে ভাই। আজকাল বড়ই বউয়ের অভাব অনুভব করছি। ভার্সিটিতে গেলে মনে হয় একটা মেয়েকে তুলে নিয়ে বিয়ে করি ফেলি। এ সিঙ্গেল লাইফ আর ভালো লাগে না৷ মনটা শুধু ‘মিঙ্গেল মিঙ্গেল’ করে।”

বৃত্ত বাদলের এহেন কথায় হাসলে। টিপ্পনী কেটে বললো,
” ব্যাপার কি বল তো? কোনো মেয়ে পছন্দ হয়েছে তোর? রোজ রাত আসলেই যে বিয়ের কথা মনে পড়ে?”

” পছন্দ তো কতশত মেয়েকেই হয়। কিন্তু বিয়ে হলে একটা ফিক্সড পছন্দ হতো। ”
বলেই সে তৎক্ষনাৎ কপট রাগ নিয়ে বললো,
” ভাই, তুমি বিয়ে করছো না দেখে মা আমাকেও বিয়ে করতে দিচ্ছে না। শুধুমাত্র তোমার কারণে আমি এ বাড়ির জন্য একটা বউ আনতে পারছি না। ”

বৃত্ত আড়চোখে তাকালো বাদলের দিকে। কফির মগে চুমুক দিয়ে বেশ আয়েশি স্বরে বললো,
” ক্ষমতা তো আছে শুধু আমার সামনে ঘ্যানঘ্যান করা। পারলে বাবার সামনে গিয়ে এটা বলে দেখ। বা বিয়ে করে এনে বাবার সামনে গিয়ে বল যে এটা তোর বউ। সে ক্ষমতা আছে?”

বাদল ভেজা বেড়ালের ন্যায় চুপসে গেলো। মিনমিনে স্বরে বললো,
” সে ক্ষমতা থাকলে কবেই তো বিয়ে করে বউ এনে তোমাকে চাচা বানিয়ে দিতাম। ”

বাদলের এহেন কথায় অকস্মাৎ বিস্ময়ে বিষম খেলো বৃত্ত। থতমত খেয়ে বললো,
” ওরে বে’ য়া’ দ’ ব রে। আমাকে চাচা বানানোর এত তাড়াহুড়ো। আজই বাবাকে বলবো, দাঁড়া।”
বলেই সে বাদলকে মা’ র’ তে উঠলো। কিন্তু বাদল বৃত্ত’র কাছে নিজেকে ধরা দিলো না। বরং এক দৌড়ে পালিয়ে গেলো রুম থেকে। সে চলে যেতেই সাকিবের ম্যাসেজ এলো ফোনে। সেখানে লেখা,
” এই নে, ভাবীর নাম্বার কালেক্ট করেছি। কষ্ট তো কম করছি না। এর জন্য বড়সড় একটা ট্রিট চাই আমি।”

বৃত্ত সে ম্যাসেজের জবাব দিলো,
” কিসের ভাবী! যাস্ট ওর সাথে একটু কথা বলবো, ব্যস।”

” হ্যাঁ তা তো জানিই। তুই কথা বল। আমি এখন ঘুমাই।”

বৃত্ত সাকিবের দেওয়া নাম্বারে কল দিলো। ওপাশ থেকে কল রিসিভ করলো বিন্দু। মিষ্টি কণ্ঠে বললো,
” আসসালামু আলাইকুম। কে বলছেন?”

বিন্দুর কণ্ঠ শোনা মাত্রই বৃত্ত নিজের অজান্তেই কয়েকটা হৃৎস্পন্দন মিস করলো বোধহয়।

®সারা মেহেক

#চলবে