সে আমার অপরাজিতা পর্ব-২৩

0
124

#সে_আমার_অপরাজিতা
#পর্ব_২৩
#সারা মেহেক

” কাবিননামা নিয়ে চলে আয় বাদল।”

বৃত্ত’র এহেন কথায় যেনো আকাশ থেকে পড়লো বাদল। আশ্চর্যান্বিত কণ্ঠে শুধালো,
” কাবিননামা! কাবিননামা কোথ থেকে আনবো ভাই? আর কারই বা কাবিননামা আনবো?”

বৃত্ত শক্ত চোয়ালে বললো,
” কাবিননামা কোথায় পাওয়া যায় জানিস না!”

” সে তো জানি। কিন্তু কাবিননামা দিয়ে কি করবে?”

” বিয়ে করবো। আমি বিন্দুকে বিয়ে করবো। ”

বৃত্ত’র কথায় বাদলের জবান বন্ধ হয়ে এলো। সে আকাশসম বিস্ময় নিয়ে বললো,
” এ কি বলছো ভাই! এ অবস্থায় বিয়ে করবে ওকে? মাথা ঠিক আছে তো তোমার? এ কয়দিনের পরিচয়ে বিয়ে!”

” কয় দিনের পরিচয় না বাদল। পরিচয় আমাদের কয়েক মাস যাবত আছে। এখন যে পরিস্থিতিতে পড়েছি তাতে ওকে বিয়ে না করা ছাড়া উপায় নেই।”

বাদল এবার মহা দুশ্চিন্তায় পড়ে গেলো। বললো,
” কিন্তু ভাই। এভাবে কারোর পরিবারকে না জানিয়ে বিয়ে?”

” পরিবারকে জানানোর মতো সময় নেই এখন। আর এ বিয়ে আসল বিয়ে নয়। ”

বাদল চকিতে বললো,
” হ্যাহ! আসল বিয়ে না মানে? তাহলে কি নকল বিয়ে?”

” হ্যাঁ। নকল বিয়ে। আমি বিন্দুকে নিজের করে নিতে চাই। কিন্তু তাই বলে দু পরিবারের অনুপস্থিতিতে নয়। এখন যেমন সিচুয়েশন তৈরী হয়েছে তাতে বিয়ে ছাড়া বাঁচা সম্ভব নয়। একমাত্র বিয়ে নামক সম্পর্কটাই পারে বিন্দুর সম্মান বাঁচাতে। ”

” ভাই, আমার মাথায় কিচ্ছু ঢুকছে না। পরিস্থিতি খুব বাজে হয়ে যাচ্ছে। বিন্দু জানতে পারলে হয়তো সব দোষ তোমার উপর দিবে। ”

বৃত্ত দীর্ঘশ্বাস ফেললো। বললো,
” এতে কোনো সন্দেহ নেই। ও যেই রাজনীতিকে সহ্য করতে পারে না৷ সেই রাজনীতিই ওর সম্মানে আঘাত দিয়েছে। বিন্দু জানতে পারলে কি হবে জানি না। ”
বলেই সে কণ্ঠ শক্ত ও দৃঢ় করলো। বললো,
” যে লোকাল নিউজ এমন ভিডিও ছেড়েছে সে নিউজ চ্যানেল কোন ফেসবুক আইডি চালায় সেটা খুঁজে বের কর। আর দ্রুত ঐ ভিডিও ডিলিট কর। আমি নিশ্চিত, এই ভিডিওটা বাজেভাবে আশরাফ রটিয়েছে। যদি সত্যিই এমনটা হয়ে থাকে তাহলে এবার আমার হাত থেকে ওকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। ”

” আমি দেখছি ভাই। তুমি চিন্তা করো না। আর বিন্দুকে নিয়ে দ্রুত ফেরার চেষ্টা করো।”

” হ্যাঁ। এখনই রওনা দিচ্ছি। আর তুই দ্রুত কাবিননামা বানিয়ে আন। বেশি সময় নেই হাতে। যেকোনো সময় লাগতে পারে। ”

” আচ্ছা। কিন্তু ভাই, তোমাদের বিয়ের তারিখ দিবো কবে?”

বৃত্ত কয়েক সেকেন্ড সময় নিলো ভাববার জন্য। অতঃপর বললো,
” এক মাসের সাথে দু চারদিন যোগ করে যে তারিখ হয় তা দিয়ে দিস। আর বিন্দুর সব তথ্য সঠিক রেখে করিস। দরকার হলে মারিয়াকে ফোন দিয়ে সব জেনে নিস। মনে রাখিস, কোনোভাবেই যেনো বুঝা না যায় যে ওটা নকল কাবিননামা। সব দায়িত্ব এখন তোর উপর বাদল। সামলে নিস।”

বাদল বৃত্তকে আশ্বাসবাণী দিলো,
” তুমি চিন্তা করো না ভাই। আমি এদিকে সব সামলে নিবো। তুমি শুধু বিন্দুর খেয়াল রেখো।”
বলেই বাদল কল কেটে দিলো।
বাদল কল কাটতেই বৃত্ত ফোন রাখলো। চোখজোড়া বন্ধ করে লম্বা দম ছাড়লো। প্রচণ্ড ক্রোধে তার শরীরটা কাঁপছে। শিরায় র’ ক্ত যেনো টগবগ করে ফুটছে। কপালের শিরাগুলো দপদপ করছে। চোয়াল শক্ত করে হাতের মুঠো দৃঢ় রেখে বললো,
” আশরাফ, আমি পুরোপুরি নিশ্চিত, এসব কাজ তুই করেছিস। কারণ তোর ছাড়া এতো শত্রুতা কেউ করেনি আমার সাথে। এবার তুই আমার হাত থেকে বাঁচতে পারবি না। ”
বলেই সে দৃষ্টি ঘুরিয়ে বিন্দুর পানে চাইলো। বিন্দুর নিষ্পাপ আনন্দ তার দৃষ্টির সম্মুখে ভেসে বেড়াচ্ছে। অনুভূতিগুলো নাড়া দিয়ে উঠছে। সেই সাথে তাকে আঁকড়ে ধরছে তীব্র অপরাধবোধ। নিজেকে এ মুহূর্তে বড্ড অপরাধী ভাবছে বৃত্ত। আজ তার কারণেই বিন্দু এ পরিস্থিতিতে পড়েছে। আজ হয়তো তার সংস্পর্শে না আসলে বিন্দু সাধারণ জীবন অতিবাহিত করতে পারতো! সম্মান নষ্ট হওয়ার মতো কোনো কিছুর সাথে জড়িত হতো না!
এসব ভাবতে ভাবতে বৃত্ত আপনমনে বিন্দুর উদ্দেশ্যে বললো,
” সরি বিন্দু। আজ আমার কারণেই এসব হচ্ছে। তুমি বারবার আমাকে দূরে ঠেলে দিতে চেয়েছো। কিন্তু আমি যাইনি। ভেবেছিলাম সারাজীবন তোমাকে আগলে রাখবো। কিন্তু তোমার জীবনের সবচেয়ে বড় দাগটাই হয়তো আমার কারণে লাগবে। যে রাজনীতির কারণে তুমি আমার হতে চাওনি। সেই রাজনীতিই তোমার মান সম্মান কেড়ে নেওয়ার কারণ হবে হয়তো। এতকিছুর পর আমি কি করে তোমাকে মুখ দেখাবো? তোমাকে সব ঘটনা বলবো? আদৌ কি আমি পারবো? তাহলে কি তোমার জীবন থেকে চলে যাওয়াই উচিত ছিলো আমার জন্য? তোমার ভালোর জন্য?”

হঠাৎ পিছন হতে সাইকেলের টুংটাং শব্দে ধ্যান ভাঙলো বৃত্ত’র। সটান হয়ে দাঁড়ালো সে। বারকয়েক লম্বা নিঃশ্বাস ছেড়ে নিজেকে শক্ত করলো। অতঃপর স্বাভাবিক ভঙ্গিতে বিন্দুর দিকে হাঁটা ধরলো।
বৃত্ত বকুল গাছের তলায় এসে বিন্দুর পিছনে দাঁড়ালো। তার উপস্থিতি টের পেয়ে বিন্দু তৎক্ষনাৎ এক মুঠো বকুল ফুল নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। নিষ্পাপ হাস্যজ্জ্বোল চেহারা নিয়ে বৃত্তকে জিজ্ঞেস করলো,
” আপনি বকুল ফুল পছন্দ করেন?”

বৃত্ত সামান্যতম হাসিটুকুও হাসতে পারছে না। বুকটা ভীষণ ভারী বোধ হচ্ছে। কি হবে যখন বিন্দু পুরো ঘটনাটা জানবে? এসব ভাবনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠতেই বৃত্ত তা মুহূর্তেই ঝেড়ে ফেললো। অধর কোনে কৃত্রিম হাসি ফুটিয়ে বললো,
” হ্যাঁ। পছন্দ করি তো। ঘ্রাণটা ভীষণ পছন্দ। ”

বিন্দু এক স্নিগ্ধকাড়া হাসি হাসলো। দু মুঠো ভর্তি বকুল ফুল বৃত্তর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
” এই নিন। মন ভরে ঘ্রাণ নিন। একদম সতেজ একটা অনুভূতি পাবেন।”

বৃত্ত’র হৃদয়খানায় বিন্দুর সে হাসি আবদ্ধ হয়ে রইলো। অবুঝ মন বললো এ মুহূর্তটাকে থমকে দিতে। কেননা এর পরবর্তী সময়গুলো ভীষণ প্রতিকূল হতে চলেছে। সে জানে না এরপর বিন্দুর সাথে আদৌ কোনো যোগাযোগ রাখতে পারবে কি না। হয়তো বিন্দু তাকে মনেপ্রাণে ঘৃণা করবে! সে কি পারবে সারাজীবন বিন্দুর ঘৃণা নিয়ে বেঁচে থাকতে!
বৃত্ত নীরব রইলো। নিঃশব্দ অনুভূতি নিয়ে সে বিন্দুর হাতের মুঠোয় নাক ডুবালো। মন ভরে বকুল ফুলের সুভাস নিলো। সেই সাথে অনুভব করলো বিন্দুর সঙ্গসুখ।

বিন্দু হাত সরিয়ে নিলো। হাতের মুঠো দুটো ভাগ করে এক মুঠো বকুল ফুল বৃত্তর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো,
” নিন নিন, এই ফুলগুলো আপনার পাঞ্জাবির পকেটে ভরে রাখুন। বাড়িতে গিয়ে পুরোনো ডায়েরির ভাঁজে লুকিয়ে রাখবেন। অনেকদিন পর্যন্ত ঘ্রাণ থাকবে। চাইলে মালা হিসেবেও বানিয়ে রাখতে পারেন। ”

বৃত্ত মৃদু হাসলো। বিন্দুর নিকট হতে বকুল ফুল নিয়ে পাঞ্জাবির পকেটে রাখতে রাখতে বললো,
” তুমি ফুল পছন্দ করো, তাই না? ফুলপ্রেমী?”

” হ্যাঁ। ফুল আমার অনেক পছন্দ। বিশেষ করে যেসব ফুল ঘ্রাণ ছড়ায় সেগুলো বিশেষ পছন্দের তালিকায় আছে।”

” আচ্ছা! বকুল ফুল নিয়ে যাবে না কিছু?”

” তা আর বলতে হয়! আমার ব্যাগে অলরেডি ঢুকিয়ে ফেলেছি কিছু। এগুলো আমার হাতে থাকবে। ”

” ওহ আচ্ছা। এখন চলো বিন্দু। অনেকক্ষণ এসেছি আমরা। সন্ধ্যা হয়েছে আরোও অনেকক্ষণ আগে। ”

” হ্যাঁ চলুন।”

বিন্দু গিয়ে গাড়িতে বসলো। বৃত্ত’ও বসলো। কালবিলম্ব না করে দ্রুত গাড়ি স্টার্ট দিলো। পথিমধ্যে বৃত্ত বাদলকে একবার কল দিলো,
” বাদল, রেডি করেছিস?”

” আরেকটু সময় লাগবে ভাই। ”

বৃত্ত সামান্য ক্রোধান্বিত স্বরে বললো,
” সামান্য এই কাজটুকু করতে এত দেরি হয়! জলদি কর। আর কেউ জানে এ ব্যাপারে?”

” এখনও বুঝতে পারছি না ভাই। পরিবেশ পরিস্থিতি আপাতত ঠাণ্ডা আছে।”

” ঠাণ্ডা থাকলেই ভালো। ”

” হ্যাঁ। তোমরা কোথায় ভাই?”

” আমরা বাজারের এদিক দিয়ে আসছি। ”

” আচ্ছা, আসো। আমিও ওদিকে রওনা দিচ্ছি। এ মুহূর্তে তোমাদের সাথে থাকা উচিত আমার।”

” আচ্ছা আয় তুই।”

বৃত্ত কল কেটে দিলো। আড়চোখে একবার বিন্দুর দিকে তাকালো। বিন্দুর চেহারাখানা একেবারে দুশ্চিন্তামুক্ত। থেকে থেকে হাত বাড়িয়ে বকুল ফুলের ঘ্রাণ নিচ্ছে। বৃত্তর ভীষণ মায়া হলো বিন্দুকে দেখে। সে বেশ কিছুক্ষণ যাবত ভাবছে, বিন্দুকে এ ঘটনা সম্পর্কে আগাম বার্তা দিতে। কিন্তু তার সাহসে কুলাচ্ছে না। সে চাইছিলো সবার মুখোমুখি হওয়ার পূর্বেই বিন্দুকে সবটা বলে দিতে। এজন্য বেশ সময় নিয়ে সাহস জুগিয়ে সে বিন্দুকে ডাকলো,
” বিন্দু!”

বিন্দু চট করে তাকালো। বললো,
” হ্যাঁ, বলুন। ”

” তোমাকে কিছু কথা বলার ছিলো। ”

” কি কথা?”

বৃত্ত আমতাআমতা করছে,
” ইয়ে মানে জরুরি কিছু কথা। কিন্তু কিভাবে বলবো বুঝতে পারছি না। ”

বিন্দু ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
” কি জরুরি কথা বলতে পারছেন না?”

বৃত্ত একটা শুকনো ঢোক গিলে বললো,
” আসলে একটা ভিডিও নিয়ে…… ”

বৃত্ত কথা সম্পূর্ণ শেষ করতে পারলো না। এর পূর্বেই অকস্মাৎ তার গাড়িতে ব্রেক কষতে হলো। কেননা গাড়ির ঠিক সামনেই কিছু লোক লাঠি হাতে দাঁড়িয়ে আছে। প্রত্যেকের পরনে লুঙ্গি আর গেঞ্জি বা শার্ট। দেখে মনে হচ্ছে, এখানাকার গ্রামের মানুষ। আট দশজন লোকের সাথে দাঁড়িয়ে আছে তিনটে মহিলাও। তাদের দুজনের হাতেও লাঠি। শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজা। প্রত্যেকের চাহনিতে তীব্র ক্রোধ ও হিংস্রতা।
অকস্মাৎ এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়ে বিন্দু ও বৃত্ত কয়েক মুহূর্তের জন্য হতভম্ব হয়ে বসে রইলো। বিন্দু ঈষৎ ভয়ার্ত কণ্ঠে শুধালো,
” এরা কারা? আর গাড়ির সামনে এভাবে লাঠিসোটা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে কেনো?”

বৃত্ত বললো,
” বুঝতে পারছি না। কিন্তু এদের ভাবভঙ্গি দেখে আমার পছন্দ হচ্ছে না। ”
বলেই বৃত্ত ডোরের জানালা খুলে মাথা বের করে বললো,
” গাড়ির সামনে ওভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেনো? সরুন গাড়ির সামনে থেকে।”

বৃত্ত’র কথা শোনা মাত্র তন্মধ্যের এক লোক গলা উঁচিয়ে বললো,
” তোদের জন্যিই দাঁড়ায়ে আছি। বের হো গাড়িত থেইক্কা।”

বৃত্ত কঠিন স্বরে বললো,
” এমনভাবে কথা বলছেন কেনো? ভদ্র ভাবে কথা বলুন। ”

” ভদ্র ভাবে কথা বলার জায়গা রাখলি তো! ফষ্টিনষ্টি কইরা আইসা আবার বড় গলায় কথা কয়!”

বৃত্ত বিস্মিত হলো এমন কথায়। সাথে আশ্চর্যান্বিত চাহনিতে লোকগুলোর দিকে চেয়ে রইলো বিন্দুও। সে বুঝে উঠতে পারছে না এরা কি বলছে। সে জিজ্ঞাসু চাহনিতে বৃত্তর দিকে চাইলো। বৃত্ত নীরবে বিন্দুকে আশ্বস্ত করলো। বললো,
” তুমি গাড়িতেই বসো বিন্দু। বেড়িও না। আমি দেখছি।”
বলেই বৃত্ত বেড়িয়ে গেলো। লোকগুলো সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,
” আপনারা কারা হ্যাঁ? আর এভাবে কথা বলছেন কেনো? চিনেন আমাদের দুজনকে? চিনেন কি আমরা কে?”

এবার অন্য এক লোক এগিয়ে এসে তাচ্ছিল্যের সুরে বললো,
” চিনবো না ক্যাঁ। মেয়রের বড় পোলা তুই। বাপের সম্মানের উপর কালি পুইতা আইসোস শা’ লা। তোরে আমরা ভালো মনে করতাম। কিন্তু তুই যে এমন হেইডা বুঝি নাই। ”

আরেকজন বললো,
” তোরে আমার ছেলেরা কত মানে জানোস? এহন তো তোর এই কুকর্ম দেইখা তোর পথে চলতে চেষ্টা করবো ওরা। আমরা চাই না আমাদের পোলা মাইয়া তোর লেইগ্গা খারাপ হোক।”

বৃত্ত এতক্ষণে বুঝতে পারলো এরা কেনো এভাবে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু সে ভেবে পেলো না এত দ্রুত এ ঘটনা এখান অব্দি ছড়ালো কি করে?
বৃত্ত শান্ত তবে শক্ত কণ্ঠে বললো,
” যা নিয়ে জানেন না তা নিয়ে বাড়াবাড়ি করতে যাবেন না। আপনারা কি জানেন আসল ঘটনা?”

” আসল ঘটনা জানবার কি দরকার? যা দেখছি হেতেই হইবো।
আজ তোর বাপে মেয়র। কাল তুই মেয়র হইবি। না জানি শহরডারে কি করবি। আমাদের দরকার নাই এমন চরিত্রহীন মেয়র। ঐ তোরা কি দেখতাছোস রে? লাঠি কি উঠে না তোগো?”
বলেই লোকটা মহিলাগুলোর উদ্দেশ্যে বললো,
” তোগোরে কি দাঁড়ায় থাহার জন্য আনছি। গাড়িত থেইক্কা নিয়ে আয় ঐ মা* রে।”

বৃত্ত এতক্ষণ যাবত নিজের ক্রোধকে দমিয়ে রেখেছিলো। মুখ বুজে লোকগুলোর প্রতিটি কথা শুনেছিলো। কিন্তু এখন আর পারলো না। বিন্দুকে নিয়ে খারাপভাবে ডাকায় তার ক্রোধের সীমা ভেঙে গেলো। সে মুহূর্তেই ঐ লোকটাকে ঘুষি দিয়ে ক্রোধ কাঁপতে কাঁপতে বললো,
” সাহস কি করে হয় এসব বলার? আর খবরদার বিন্দুর দিকে হাতটাও বাড়াবি না। নাহলে সবার হাত কেটে টুকরো টুকরো করে দিবো আমি।”

বৃত্ত’র এ কাজে লোকগুলো না ঘাবড়ালেও মহিলাগুলো ঠিকই ঘাবড়ে গেলো। কয়েক কদম পিছিয়ে এলো তারা। তাদের দেখে তন্মধ্যে একটি লোক ধমকে উঠে বললো,
” কি দেখতাছোস তোরা? বললাম ঐডারে গাড়ি থেইক্কা নামায় আনতে।”
মহিলাগুলো কোনো কথা বললো না। শক্তপোক্ত গোছের একটি মহিলা এগিয়ে গেলো গাড়ির দিকে।

এদিকে চোখের সামনে এসব ঘটনা ঘটতে দেখে ভয়ে সংকুচিত হয়ে এলো বিন্দু। বৃত্তকে এভাবে আচমকা গায়ে হাত উঠাতে দেখে সে গাড়ি থেকে দ্রুত বেরিয়ে এলো। গাড়ি থেকে বেরুতে না বেরুতেই মহিলাগুলো তার দিকে এগিয়ে এলো। এক মহিলা অশ্রাব্য ভাষায় বিন্দুকে গালি দিয়ে বললো,
” লজ্জা করে না বাপের মুখের উপর কালি পুইতা আসতে? কতজনে লগে শুইছোস রে তুই? ”

মহিলাগুলোর কথা শুনে বিন্দুর কানে তালা লেগে গেলো যেনো। সে কল্পনাও করতে পারেনি। এমন অশ্রাব্য ভাষার সম্বোধন শুনবে সে। সে বিস্মিত হয়ে ভাষাশূন্য হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।
এদিকে মহিলাগুলোকে এগিয়ে আসতে দেখে বৃত্ত ক্রোধান্বিত স্বরে গলা উঁচিয়ে বললো,
” খবরদার বিন্দুর দিকে হাত বাড়াবি না কেউ। ও কিছু করেনি।”
বলতে বলতে বৃত্ত বিন্দুর কাছপ আসতে চাইলো। কিন্তু এর পূর্বেই লোকগুলো তাকে জাপটে ধরে রাখলো। একজন বললো,
” কুকর্ম কইরা আইসা আবার গলার জোর দেখায়। সাহস কত? ঐ মা’ র ওরে।”

#চলবে