কন্ট্রোললেস পর্ব-০৯

0
340

#কন্ট্রোললেস
#অনুপ্রভা_মেহেরিন
[পর্ব ৯]

সকাল নয়টায় বিয়েটা সুষ্ঠভাবে সম্পূর্ণ হলো।উজ্জ্বল আজ বেশ খুশি এতটা খুশি কবে সে হয়েছে তার জানা নেই।পরিস্থিতির চাপে নতুন বউকে রেখে তাকে চলে যেতে হবে নিজ শহরে।রুমুকে না পেয়ে চাচি এবং রাশেদ নিশ্চয়ই তার বাড়িতে ঝামেলা করবে।সবাই সন্দেহ করবে উজ্জ্বল রুমুকে নিয়ে পালিয়েছে।পরিস্থিতি ঠান্ডা হোক আবার বউয়ের কাছে ফেরা যাবে।

উজ্জ্বলের ভাবনাটাই সত্যি হলো বাড়িতে বাইক নিয়ে প্রবেশ করা মাত্র রাশেদ ছুটে এসে উজ্জ্বলের শার্টের কলার চেপে ধরলো,

” রুমু কোথায়?ওঁকে তুই পালাতে সাহায্য করেছিস।”

” রুমু পালিয়েছে মানে?”

অবাক চুইয়ে চুইয়ে পড়ছে উজ্জ্বলের চোখ থেকে।ছেলেটার ভাব ভঙ্গিমা দেখে রাশেদ নিজেও কনফিউশন হয়ে গেল।সৈয়দ শামসুল ছুটে এসে বলেন,

” আমি বলেছিলাম আমার ছেলে এসবের কিচ্ছু জানে না।রাশেদ অযথা আমার বাড়ি এসে বাড়াবাড়ি করবি না”

উজ্জ্বল দ্রুত নেমে গেল বাইক ছেড়ে।উঠনে দাঁড়িয়ে থাকা তার নার্গিসের দিকে তাকিয়ে বলে,

” মা আমার রুমু পালিয়ে গেছে?আমার বউ পালিয়ে গেছে!”

“রুমুকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।এখন ওরা সন্দেহ করছে তুই নাকি রুমুকে নিয়ে পালিয়ে গেছিস।”

” আমি যদি পালিয়ে যেতাম তাহলে এখন ফিরে আসবো কেন?তোমরা এসব কি বলছো আমার মাথায় ঢুকছে না।আমার বউ পালিয়েছে!সমাজ আমি মুখ দেখাবো কি করে?সবার হাসির পাত্র হবো সবাই বলবে উজ্জ্বলের বউ পালিয়েছে।ও আল্লাহ এভাবে তুমি আমার মানসম্মান কেড়ে নিলে…”

উজ্জ্বল মাটিতে বসে পড়লো অনেকক্ষণ যাবৎ গড়াগড়ি করে আহাজারি করলো তার বউ পালিয়েছে।রাশেদ ভেবেছিল উজ্জ্বল হয়তো পালটা ঝাঝ দেখিয়ে বলবে, সে নিয়ে গেছে রুমুকে রাশেদ কি করে পারে রুমুকে খুঁজে বের করুক।
অথচ এই উজ্জ্বল কি না পাগলের মতো আচরণ করছে!রাশেদের সন্দেহ নিভে এলো সে চলে গেল নিজ বাড়িতে।

নার্গিস দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলেন,

” উজ্জ্বল তুই সকাল সকাল কোথায় গিয়েছিলি সত্যি করে বল।”

” উর্মি আপার বাসায়।”

” হঠাৎ তুই সেখানে কেন গেলি তাও অবেলায়!”

” ওরা স্বামী স্ত্রী ঝগড়া করছিল।দুলাভাই বললো উর্মি আপা ব্যাগ গুছিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে তাই আমি গেলাম আপাকে বোঝাতে।বিশ্বাস না হলে উর্মি আপাকে ফোন দাও।”

নার্গিস এবং শামসুল উজ্জ্বলের কথা বিশ্বাস করলেন।কারণ এতো মিথ্যা নয়।মাঝে মাঝে উর্মি ঝগড়া করে বাপের বাড়ি চলে আসে যদিও এসব ঝগড়ার কোন আগামাথা নেই সব অহেতুক বিষয় নিয়েই তাদের ঝগড়া।

রাশেদ চলে যেতে উজ্জ্বল উঠে দাঁড়ালো প্যান্ট থেকে মাটি ঝেরে বলে,

” আমার ব্যাগ গোছাতে হবে দুলাভাই বললো ছুটি নিয়ে কয়েকদিন শহরের বাইরে ঘুর‍তে যাবেন সাথে আমাকেও যেতে হবে।”

” তাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে তুই ঢুকবি কেন?”

” তোমার মেয়ে যদি সেখানে গিয়েও ঝগড়া করে তখন কি হবে?দুলভাই রিস্ক নিতে চাননা তাই আমাকে যেতে বলেছে বিশ্বাস না হলে ফোন করে জিজ্ঞেস করো।”

উজ্জ্বলের কথা শামসুল এতক্ষণ চুপচাপ শুনছিলেন কিন্তু এই পর্যায়ে এসে তিনি প্রশ্ন না করে থাকতে পারলেন না।

” রুমু যে নিখোঁজ মেয়েটাকে খুঁজে দেওয়ার ব্যবস্থা কর। কোথায় আছে আমারো তো চিন্তা হচ্ছে।”

” চিন্তা করে লাভ নাই।রুমু ওর বান্ধবীর বাড়িতে আছে এই কথা আবার কাউকে জানানো দরকার নাই।মেয়েটা যেখানে আছে সেখানেই তার জন্য বেশি নিরাপদ।”
.
উজ্জ্বল বোনের বাসায় ফিরলো সন্ধ্যায়।রুমু তখন ঘুমে কাবু।টানা একটা দিন মেয়েটার জাহান্নাম কেটেছে ঘুম খাওয়া মানসিক শান্তি কিছুই ছিল না তার।উজ্জ্বল রুমুর জন্য বেশ কিছু জামাকাপড় এনেছে রুমুকে ঘুমাতে দেখে বাইক নিয়ে পুনরায় বেরিয়ে পড়ে সে।রাতের শহর‍টা ঘুরা শেষে বাসায় ফিরে আসে রাত এগারোটায়।নিয়ম অনুসারে আজ তার বাসর সেই অনুযায়ী রুমুর জন্য একটা রিং কেনা হয়েছে কিন্তু সবচেয়ে বড় ব্যপার হঠাৎ একটা মেয়ের সাথে কি করে এক ঘরে থাকবে সে?
ভাবতেই হাঁশফাঁস লাগছে।কেউ শুনলে নিশ্চয়ই হাসবে,হাসারি কথা।

মনের ভেতরে চেপে থাকা প্রলয় কাউকে বোঝাতে পারবে না উজ্জ্বল।
রুমুকে প্রথম বার কাছে পেয়ে কী করবে সে?জড়িয়ে ধরবে?নাকি চুমু খাবে?নাকি… উফ ভাবতে পারছে না উজ্জ্বল।মনে মনে নিজেকে গালি দিল বেশ কয়েকবার।
জীবনে এত এত রোমান্টিক সিনেমা দেখে লাভ কী হলো যদি সুযোগ মতো কাজে লাগাতে না পারে।
উজ্জ্বল যে এত এত রোমান্টিক সিনেমা দেখলো সব কি বিফলে যাবে!

সবাই একসাথে খাবার খেয়ে যে যার কাজে ব্যস্ত।উজ্জ্বল গেস্ট রুমে এসে শুয়ে পড়লো।এই ফ্লাটে তিনটা বেডরুম।যতবার এখানে এসেছে উজ্জ্বলের এই গেস্ট রুমেই থাকা হয়েছে সবার হাভ ভাবে মনে হচ্ছে রুমু আজ পাশের রুমটাতে থাকবে তবে কি তার বাসর হবে না!এক সমুদ্র আফসোস নিয়ে কপালে হাত ঠেকালো উজ্জ্বল তখনি তামিম এসে তাকে হেঁচকা টানলো।

” উঠে এসো।”

” কোথায় যাব?”

“নাসার সাথে কথা বলতে।পৃথিবীতে থাকা এই উল্কা পিন্ডটা বিয়ে করে ফেলেছে সেই খোঁজ নাসাকে জানাতে হবে।”

” দূর কেন ফাইজামি করছেন দুলাভাই।”

” আরেহ সারপ্রাইজ রেডি চলো তো।”

উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করার আগে তাকে ধাক্কা দিয়ে অন্য রুমে ঢোকালো তামিম।হঠাৎ এক ঝটকা আলো তার চোখে লাগতে বেশ অবাক হয়।সাদা চাদরে অসংখ্য লাল গোলাপ সেই গোলাপের মাঝে তার গোলাপ এক কোনে পা গুটিয়ে বসে আছে।মেয়েটার গায়ে বিয়ের শাড়ি।উজ্জ্বল মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়ায় অবাক হয়ে তামিমের দিকে তাকাতে তামিম বলে,

” এবার অন্তত কঞ্জুস ডেকো না।তোমার বাসরের ব্যবস্থা করে দিয়েছি।”

উজ্জ্বল প্রত্যুত্তর করার আগে তামিম বাইরে থেকে দরজা বন্ধ করে।একেরপর এক সবকিছুই হঠাৎ হঠাৎ হচ্ছে উজ্জ্বল নিজেই সব কিছুর তালগোল পাকিয়ে ফেলছে।রুমু উঠে এলো উজ্জ্বলের সামমে দাঁড়িয়ে বলে,

” উজ্জ্বল ভাই আমার ঘুম পাচ্ছে।আমি ঘুমাবো।”

” সারাটা দিন মটকা মেরে ঘুমিয়ে ছিলি এখন আবার কিসের ঘুম!”

” আমার ঘুম নিয়ে খোটা দিও না।দেখি পা দাও সালাম করে আমি ঘুমিয়ে যাব।”

রুমু নিজেকে বাঁচাতে ঘুমের তাড়া দিল।মেয়েটার চালবাজি উজ্জ্বল বেশ ভালো করেই বুঝতে পারলো।রুমুকে পাঠিয়ে দিল ওজু করতে তাদের এখন নামায পড়তে হবে।রুমু অবশ্য পালটা প্রতিক্রিয়া জানায়নি মেয়েটা উজ্জ্বলের কথা মতো দুজন মিলে নামায আদায় করলো।

নামায শেষে উজ্জ্বল ঠিক কি করবে বুঝতে পারলো না।রুমু শপিং ব্যাগ থেকে থ্রিপিস নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে উজ্জ্বল বলে,

” কোথায় যাচ্ছিস?”

” শাড়ি পরে ঘুমাতে পারবো না।খুলে থ্রিপিস পড়বো।”

” আজ কি তোর শাড়ি খোলার কথা ছিল?নাকি আমার?”

” মা..মানে?”

“Ye raaten ye mausam nadi
Ka kinaara ye chanchal hawa”

উজ্জ্বল সুর টেনে গান ধরলো।রুমু ভয় পেয়ে গুটিয়ে যেতে উজ্জ্বল যেন দ্বিগুণ সাহস পেল।রুমুর ডান হাত টেনে মেয়েটাকে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে নাচালো। আট তলায় খোলা জানলা মৃদু হাওয়া সুরেলা কণ্ঠের গান উজ্জ্বল ঘোরে পড়লো।এতটা দিনের অপেক্ষা,মনের মানুষটাকে কাছে পাওয়া সবকিছু মিলিয়ে উজ্জ্বল আবেগপ্রবণ হয়ে পড়লো।দ্রুত পাঁজাকোলে তুলে নিলো রুমুকে।অপরদিকে আতঙ্কে মুখটা নীল হয়ে উঠলো রুমুর শরীরের কাঁপুনি বাড়লো প্রবল ভাবে।স্বামী-স্ত্রীর মানসিক সম্পর্ক যেখানে গড়ে উঠেনি সেখানে দৈহিক সম্পর্ক কঠিন তার কাছে।একটা আতঙ্ক থেকে বেরিয়ে না আসতে আরেকটা আতঙ্ক ভর করেছে রুমুর মাথায় উজ্জ্বলের ঘোর চাহনি তার কণ্ঠরোধ করছে।এবার উজ্জ্বল করে বসলো আরেক কান্ড,সে রুমের লাইট অফ করলো জ্বালিয়ে দিল ড্রিম লাইট।আবছা আলোতে রুমুকে নিয়ে বিছানায় গেল।রুমু ভয়ে উজ্জ্বলের কলার চেপে ধরলো নেতিবাচক ইশারায় মাথা নাড়লো।উজ্জ্বল সেসবে পরোয়া করলো না।ছেলেটা ঘোরে পড়েছে গভীর ঘোরে। নতুন বউয়ের কায়ায় মেখে থাকা মিষ্টি সুভাস তাকে আরো কাবু করলো।এই সুভাসে মত্ত হতে চায় সে যতটা মত্ত হলে একে অপরের মাঝে কোন বাঁধা থাকবে না।উজ্জ্বল তার কন্ট্রোল হারালো রুমুকে বিছানায় শুইয়ে তার দানবীয় শরীরটা ছেড়ে দিল মেয়েটার ছোট্ট দেহে।আচমকা ভরে রুমু চোখ বড় বড় করে তাকালো।এসব কি হচ্ছে তার সাথে!
মুখ ফুটে কিছু বলার আগে উজ্জ্বল তার গাল চেপে ধরলো, লিপস্টিকের টকটকে লাল ঠোঁট দু’টো গোল হতে উজ্জ্বল তার শুষ্ক ঠোঁট মিলিয়ে দিল।উজ্জ্বল উন্মাদ হলো তার উন্মাদনা ক্রমশ বাড়লো।ডান হাতের সাহায্যে ছুয়ে দিল রুমুর গাল গলা সর্বত্র পিঠ।
উজ্জ্বল যখন কন্ট্রোল হারিয়ে বেপরোয়া তখনি অনুভব করলো রুমুর নিস্তেজ শরীর।ছেলেটা মুখ তুলে তাকাল রুমু জ্ঞান হারিয়েছে।এমন পরিস্থিতির জন্য উজ্জ্বল প্রস্তুত ছিল না দ্রুত উঠে রুমুর শাড়ি ঠিক করে বসলো সে।রুমুর চেতনা হারানো দেহ দেখে তার কাঁপুনি বাড়লো আপন মনে বিড় বিড় করে বলে, আমি কিছু করিনি।আমি কিছু করিনি।

উজ্জ্বল রুমুর গালে হাত রেখে বলে,

” রুমু এই রুমু।কলিজা বউ উঠ কি হয়েছে?উঠ না।”

রুমু উঠলো না।উজ্জ্বল প্রচন্ড ভয় পেল।ভয়ে দরদর করে ঘামতে থাকলো।পুনরায় রুমুর বাহু ঝাঁকিয়ে বলে,

” আমি কিছু করিনি,উঠ না আমি তো কিছু করিনি।”

চলবে…