তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব-০৪

0
93

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
[চতুর্থ পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

আদনান ভার্সিটি যাওয়ার জন্য যেইনা দরজা খুলল তখনই সে বাকরুদ্ধ হয়ে যায়। কারণ দরজার সামনে দাঁড়িয়ে আছে আদনানের বেস্ট ফ্রেন্ড প্রিয়া।

— প্রিয়া তুই এখানে? দেশে কবে আসলি? আমাকে তো কিছুই বললি না!

— এসেছিলাম তোকে সারপ্রাইজ দিব বলে এসে তো আমি নিজেই সারপ্রাইজ হয়ে গেলাম। শুনলাম তুই নাকি বিয়ে করে ফেলছিস?

— খালি বিয়ে? ডিভোর্স হতে চলছে এখন।

— মানে?

— কিছুনা দরজার বাহিরেই থাকবি নাকি ভিতরে আসবি?

— অবশ্যই ভিতরে যাবো। তোর বউকে ডাক দে পরিচয় হয়ে নেই। আর দেখি ভাবী কেমন।

— ঠিক আছে আগে রুমের ভিতরে তো আয়। তারপর অন্যসব।

প্রিয়াকে রুমের ভিতরে নিয়ে এসে আদনান তার আম্মুকে ডাকতেই রাবেয়া বেগম চলে আসে। রাবেয়া বেগম প্রিয়াকে দেখে খুব খুশি হয়।

— আরে প্রিয়া মা কেমন আছো? কখন আসলে?

— আলহামদুলিল্লাহ ভালো। কিছুক্ষণ আগেই গেলাম। আপনি কেমন আছেন আন্টি?

— আমিও ভালো আছি মা।

— আন্টি আংকেল কোথায় ওনাকে তো দেখতে পাচ্ছিনা৷

— তোমার আংকেল এখনও ঘুমিয়ে আছে। আচ্ছা তোমরা গল্প করো আমি নাস্তা নিয়ে আসি তোমার জন্য।

— ঠিক আছে আন্টি।

রাবেয়া বেগম চলে গেলো নাস্তা তৈরি করার জন্য। প্রিয়া বলল,

— কিরে তোর বউ কই?

— রুমে হয়তো।

— ডেকে নিয়ে আয়। পরিচয় হবোনা নাকি?

— আচ্ছা তুই বস আমি আসছি এক্ষনি।

আদনান নিজের রুমের দিকে চলে যায়। রুমের ভিতরে যেতেই আদনান লক্ষ্য করে আদিবা ফোনে কথা বলছে কারোর সাথে। আদনান বুঝতে পারে আদিবা পিয়াসের সাথে কথা বলছে। আদিবা আদনানকে দেখে ফোন কেটে দেয়।

— আমার একটা ফ্রেন্ড এসেছে। আপনার সাথে পরিচয় হতে চাইছে।

— ঠিক আছে আমি আসছি আপনি যান।

এবার আদনান চলে আসে প্রিয়ার কাছে।

— কিরে তোর বউ আসেনি?

— আসছে একটু অপেক্ষা কর।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবা নিচে নেমে আসে। তারপর আদনান দুজনের সাথে দু’জনের পরিচয় করিয়ে দেয়৷ তাদের মধ্যে কিছুক্ষণ কথা হয়। আদনান বলল — আচ্ছা প্রিয়া তুই থাক তাহলে আমি ভার্সিটি যাচ্ছি।

— আরে আমিও যাবো।

— ঠিক আছে আয়।

— তুই যা আমি আসছি।

আদনান চলে গেলো। এবার প্রিয়া আদিবার কাছে গিয়ে বলল — ভাবী, আদনান অনেক ভালো একটা ছেলে। আমার খুব ভালো বন্ধু। ওঁকে কখনও কষ্ট দিবেন না প্লিজ।

আদিবা কিছুই বলল না। প্রিয়া বিদায় নিয়ে চলে আসে। এবার দু’জনে ভার্সিটি চলে যায়। এর মাঝে কেটে যায় কয়েকদিন। আদিবা আগের থেকে অনেকটাই পরিবর্তন হয়েছে। সে এখন আদনানের সাথে খারাপ কোনো আচরণ করে না। রাতের খাবার শেষ করে আদনান আদিবা রুমে আসে। তখন আদিবা আদনানকে বলল।

— আদনান আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।

— হুম বলুন।

— আমি বাসায় থাকতে থাকতে বোরিং লাগছে খুব। তুমি কাল বিকেলে ফ্রী থাকলে একটু বাহিরে থেকে ঘুরে আসতাম।

— ঠিক আছে সমস্যা নেই। আমি কাল বের হবো আপনাকে নিয়ে।

— ধন্যবাদ।

— ধন্যবাদ দেওয়ার প্রয়োজন নেই। ঘুমিয়ে পড়ুন রাত হয়েছে।

— আমার একটু লেট হবে। পিয়াস কল দিবে বলছে।

— আচ্ছা গুড নাইট।

এই কথা বলে আদনান ঘুমিয়ে পড়ে। আদিবার মুখে পিয়াসের কথা শুনলে আদনানের কাছে খুব খারাপ লাগে। তবুও সে হাসিমুখে কথা বলে আদিবার সাথে। পরের দিন বিকালে আদনান আদিবাকে রেডি হতে বলে আদনান নিচে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। কিছুক্ষণ পরে আদিবা বের হয়ে আসে। আদনান আদিবার দিকে তাকিয়ে আর নিজের চোখ সরাতে পারছেনা। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে আদিবার দিকে। কখন যে আদিবা আদনানের সামনে চলে আসলো আদনান খেয়ালি করেনি।

— এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?

— কই কিছুনা তো। আপনাকে অনেক সুন্দর লাগছে।

— ধন্যবাদ।

— আপনার কথায় কথায় ধন্যবাদ দেওয়ার এই অভ্যাস টা কি যাবেনা?

দু’জনেই খিলখিল করে হাসতে শুরু করে। আদনা আর আদিবা বাসা থেকে বের হয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করে। একটা রিকশা দাড় করায় আদনান।

— আপনি এই রিকশায় করে চলে যান আমি অন্য একটা রিকশা নিচ্ছি।

— অন্য রিকশার কি দরকার? এটাই করে দু’জন যেতে পারবো সমস্যা হবে না।

এবার দু’জন এক সাথে রিকশার মধ্যে উঠে বসে।

আদনান আদিবাকে উদ্দেশ্য করে বলল,

— যাবেন কোথায়?

— আজব এই শহর আপনাদের আপনি যেখানে নিয়ে যাবেন সেখানেই যাবো।

— বাহ এতো বিশ্বাস? যদি কিছু করে বসি তখন?

আদিবা একটা হাসি দিয়ে বলল — আপনার উপরে আমার ভরসা অনেক আগেই হয়ে গেছে।

— ওহ তাই?

— হুম। এবার কোথায় নিয়ে যাবেন আপনার খুশি।

তারপর দু’জন আবার চুপচাপ হয়ে গেলো। কিছুক্ষণের মধ্যেই তারা পৌছে যায় একটা পার্কের সামনে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পার্কের ভিতরে চলে যায় দু’জনে।

— বাহ এই যায়গা টা তো অনেক সুন্দর।

— হুম এটা আমাদের এখানে সব থেকে বেশি সুন্দর যায়গা। ফুচকা খাবেন? এখানে কিন্তু খুব ভালো ফুচকা পাওয়া যায়।

— আমি ফুচকা বেশি একটা পছন্দ করিনা।

— কিহ?

— এতো অবাক হওয়ার কি আছে?

— না মানে আমি আজ প্রথম কোনো মেয়েকে দেখলাম যে ফুচকা পছন্দ করে না।

— মেয়েদের নিয়ে কি গবেষণা করেন নাকি?

— আরে নাহ কি বলছেন এসব? মানে আমি শুনেছি সব মেয়ে নাকি ফুচকা পছন্দ করে তাই বলছি।

— ঠিক আছে চলুন দেখি কেমন ফুচকা।

কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনান আদিবাকে নিয়ে ফুচকা দোকানে যায়, আর দুই প্লেট ফুচকা অর্ডার করে। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফুচকা চলে আসে। দু’জন খাওয়া শেষ করে।

— আসলেই এখানকার ফুচকা গুলো খুব ভালো হয়েছে।

এবার দু’জনে হাটতে শুরু করে। কিছুক্ষণ ঘুরাঘুরি করে আদিবা বলল — অনেক তো হেঁটেছি এবার একটু বসা দরকার।

আদনান চারদিকে তাকিয়ে দেখে কোনো সিট খালি নেই। সব কাপল রা দখল করে রেখেছে।

আদিবা বলল — সিট তো খালি নেই কি করা যায়?

আদনান একটা হাসি দিয়ে বলল — এক মিনিট সময় দেন দেখবেন এই যায়গা খালি হয়ে গিয়েছে।

আদিবা একটু অবাক হয়ে বলল — কীভাবে?

— দেখুন।

আদনান এবার পকেট থেকে নিজের মোবাইল বের করে কানে তুলে একটু জোরেই বলল – আংকেল আপনার মেয়ে একটা ছেলের সাথে বসে আছে আপনি তাড়াতাড়ি এখানে আসুন।

এই কথা বলতেই সবা কাপল আদনানের দিকে তাকিয়ে ভয়ে সবাই উঠে দৌড় দেয়। সবার মাঝে একটা আতংক তৈরি হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই যায়গা পুরো খালি হয়ে যায়। এটা দেখে আদিবা হাসতে হাসতে মাটিতে গোড়াগুড়ি খাওয়ার অবস্থা। আদনান ফোন পকেটে রেখে আদিবার কাছে এসে বলল — কি বলছিলাম? ক্লিয়ার হয়ে গেছে না?

আদিবা এখনও হেসেই যাচ্ছে। আদিবার মুখে হাসি দেখে আদনান তাকিয়ে আছে। হাসলে মেয়েটাকে অসম্ভব সুন্দর দেখায়।

— এতো হাসলে আবার সিট বুকিং হয়ে যাবে। চলুন বসে পড়ি।

এবার দু’জনে একটা সিটের উপরে এসে বসল। আদিবা আদনানকে বলল — ধন্যবাদ আপনাকে।

— আবার ধন্যবাদ?

— আচ্ছা ঠিক আছে আর ধন্যবাদ বলব না।

হঠাৎ করে আদিবার চোখ আঁটকে যায় এক যায়গায়। নিমিষেই আদিবার মুখের হাসি বিলীন হয়ে যায়। আদিবা যেনো নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা। আদিবা উঠে দাঁড়িয়ে যায়। ব্যাপারটা আদনান লক্ষ্য করল।

— কি হইছে আপনার হঠাৎ করে?

চলবে?