তুমি আমার প্রিয়তমা পর্ব-০৫

0
92

#তুমি_আমার_প্রিয়তমা
[পঞ্চম পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ

হঠাৎ কিছু একটার দিকে চোখ যেতেই আদিবার মুখের হাসি নিমিষেই গায়েব হয়ে গেলো।

— কি হইছে আপনার হঠাৎ করে?

— পিয়াস কে দেখলাম একটা মেয়ের সাথে। হাত ধরে হাঁটছে।

— কই আমি তো কাওকে দেখলাম না। আর সব থেকে বড় কথা পিয়াস তো দেশের বাহিরে। তাহলে সে এখানে কি করে আসবে? আপনি ভুল দেখেছেন।

— না এতো বড় ভুল আমার হয়না তুমি আমার সাথে চলো।

এবার দু’জনে তাড়াতাড়ি করে সেই দিকে চলে গেলো। কিছুদূর যেতেই তারা লক্ষ্য করে আদিবা ঠিক কথাই বলছে। পিয়াস একটা মেয়ের সাথে গাড়িতে উঠে। আদিবা এবার পিয়াস পিয়াস বলে ডাকতে থাকে। কিন্তু পিয়াস গাড়িতে উঠে চলে যায়। আর আদিবা সেখানেই বসে কান্না করতে শুরু করে।

— চলুন বাসায় ফিরে যাই।

— পিয়াসকে আমি এতো কাছে পেয়েও আবার হারিয়ে ফেললাম।

— পিয়াসকে একটা কল দেন।

— আদিবা ফোন বের করে পিয়াস কে কল দিতে গেলে দেখে কল যাচ্ছেনা। পিয়াস অনলাইনে নেই। আদিবা এবার ফোন নাম্বারে কল দেয় কিন্তু নাম্বার অফ। আদিবা কি করবে বুঝতে পারছেনা।

— চিন্তা করবেন না। আমি গাড়ির নাম্বার দেখে নিয়েছি। আমি চেষ্টা করব পিয়াসকে খুজে বের করার।

তারপর দু’জন বাসায় চলে গেলো। বাসায় গিয়ে আদিবা মন খারাপ করে বসে থাকে। আদনান এসে আদিবার পাশে বসে।

— মন খারাপ করে আছেন কেন?

— পিয়াস দেশে এসেছে অথচ আমাকে একবার ও বলেনি।

— হয়তো বলার সুযোগ পায়নি। আপনার আর পিয়াসের দেখা আমি করিয়ে দেবো। খুব তাড়াতাড়ি।

এই কথা বলে আদনান নিজের রুম থেকে বেরিয়ে এসে সে তার একটা বড় ভাইকে ফোন দিয়ে নাম্বার বলে। সে দেখছি বলে ফোন কেটে দেয়। কিছুক্ষণ পরে আবার ফোন দিয়ে ঠিকানা জানিয়ে দেয়। ঠিকানা পেয়ে আদনান খুব খুশি হয়ে যায়।

পরের দিন সকালে আদনান আদিবাকে না বলে বাসা থেকে বের হয়ে যায়। অনেক সময় পরে আদনান বাসায় ফিরে আসে। আর সে সোজা আদিবার কাছে চলে যায়।

— আদিবা বিকালে রেডি থাকবেন আপনাকে নিয়ে এক যায়গায় যাবো।

— কোথায় যাবেন?

— সারপ্রাইজ বলা যাবে না। রেডি থাকবেন।

— কীসের সারপ্রাইজ?

— এতো প্রশ্ন করেন কেন? বলছিনা ওখানে গেলেই বুঝতে পারবেন কেমন সারপ্রাইজ।

— ঠিক আছে।

হঠাৎ করে আদনানের ফোন বেজে ওঠে আর আদনান ফোন রিসিভ করে বেরিয়ে পড়ে।

— কিরে ভার্সিটি আসবি কখন?

— এই তো বের হচ্ছি। একটা যায়গায় গিয়েছিলাম সেই জন্য লেট।

— কোথায় গেলি এতো সকালে?

— আসলে বলব রাখলাম।

আদনান ফোন কেটে দিয়ে আদিবার থেকে বিদায় নিয়ে ভার্সিটির উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে পৌছে যায় ভার্সিটি। আদনানের বন্ধু আদনানকে দেখেই তার কাছে চলে আসে।

— কিরে সকাল সকাল কোথায় গেছিস?

— পিয়াসের বাসায়।

— কোন পিয়াস?

— আদিবার বয়ফ্রেন্ড।

— কি বলিস তার বাসায় কেন?

— বিকেলে তাদের দু’জনের মিট করার ব্যবস্থা করলাম।

— মানে? তোর মাথা খারাপ হইছে?

— না দোস্ত, আদিবা পিয়াসকে ভালোবাসে। আমি চাইনা আদিবা কষ্টে থাকুক।

— আর তুই?

— আমি কি?

— তুই যে আদিবাকে ভালোবাসিস বলছিস?

— না সেটা হয়তো আর কখনও বলা হবেনা। আমি আমাকে নিয়ে চিন্তা করিনা। আমি চাই আদিবা ভালো থাকুক। আর সে পিয়াসের কাছেই ভালো থাকবে। আমি খুব তাড়াতাড়ি তাদের দু’জনকে এক করার ব্যবস্থা করব।

— আমি তোকে দেখে অবাক হচ্ছি।

— বাদ দে। চল ক্লাসে যাই।

— হুম।

এবার দু’জনে ক্লাসে চলে গেলো। সব ক্লাস শেষ করে আদনান বাসায় চলে গেলো। দেখতে দেখতে বিকেল হয়ে যায়। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদিবা রেডি হয়ে আদনানের কাছে আসে।

— আজ আপনাকে অনেক বেশি সুন্দর লাগছে। সে আপনাকে দেখলে আবার নতুন করে প্রেমে পড়বে।

— মানে?

— কিছুনা চলুন দেরি হয়ে যাচ্ছে।

এবার দু’জনে বেরিয়ে পড়ে। কিছুক্ষণের মধ্যেই আদনান আদিবাকে নিয়ে একটা রেস্টুরেন্টে নিয়ে আসে।

— এটা তো একটা রেস্টুরেন্টে! এখানে নিয়ে আসলে কেন?

— এখানেই আছে সারপ্রাইজ।

— ওহ।

আদনান আদিবাকে নিয়ে ভিতরে চলে গেলো। আদিবা রেস্টুরেন্টে পিয়াসকে দেখে হতবাক হয়ে যায়। পিয়াস আদিবাকে দেখা দাঁড়িয়ে যায়। আদিবা এক দৌড়ে পিয়াসের সামনে চলে যায়।

— কেমন আছো আদিবা?

— তুমি দেশে আসলে অথচ আমাকে বললেও না? পিয়াস তুমি তো আগে এমন ছিলেনা।

— বসো আগে পরে তোমাকে সব বলছি।

আদনান এসে বলল — আপনারা তাহলে কথা বলা শেষ করুন। আমি বাহিরে অপেক্ষা করছি।

আচমকা আদিবা আদনানকে জড়িয়ে ধরে। আদনান পুরো স্তব্ধ হয়ে যায়। তারপর ছেড়ে দিয়ে বলল — আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে এতো বড় একটা সারপ্রাইজ উপহার দেওয়ার জন্য।

— ওয়েলকাম। আচ্ছা আপনারা কথা বলা শেষ করুন।

আদনান মন খারাপ করে বেরিয়ে চলে আসে। আর সে বাহিরে এসে আদিবার জন্য অপেক্ষা করে। এদিকে আদিবা আর পিয়াস কথা বলছে।

— আদিবা আসলে আমার একটা ঝামেলা হয় সেই জন্য চলে এলাম। আর সব এত তাড়াতাড়ি হয়ে গেলো যে তোমাকে বলার সময় ও পাইনি।

— ওহ। তোমার সাথে মেয়েটা কে ছিলো?

— ওহ ওটা আমার কাজিন। বলছে ঘুরবে তাই নিয়ে বের হইছি।

— ভালো।

— এখনও তোমার মুড অফ? কতোদিন পরে আমাদের দেখা হলো।

— তুমি জানো আমার উপর দিয়ে কতো কিছু গিয়েছে? আমি সব সহ্য করেও তোমার জন্য অপেক্ষা করছি।

— আমি সব কিছুই শুনেছি আদনানের কাছে।

— তাহলে এখন বলো আমাকে তুমি বিয়ে কবে করবে?

— আরে আমি মাত্র দেশে আসলাম কিছু দিন যাক তারপর। আর তোমার তো এখনও ডিভোর্স ও হয়নি।

— সেটা নিয়ে তুমি চিন্তা করোনা। আমাদের বিয়ের ৬ মাস শেষ হয়ে গিয়েছে। আমি আজকের মধ্যেই ডিভোর্স এর ব্যাবস্থা করব।

— ঠিক আছে তুমি ব্যবস্থা করো। আজ তাহলে উঠি পরে আবার কথা হবে।

— ঠিক আছে।

— কিছু খাবেনা?

— নাহ খিদে নাই। বায়।

এই কথা বলে আদিবা রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে আদনানের কাছে চলে গেলো। এবার দু’জনে বাড়ি ফিরে আসে। কেউ কোনো কথা বললনা। দুজনেই নিশ্চুপ। রুমে এসে আদনান বলল।

— কি হইছে আপনার? আপনার মন খারাপ কেন?

— আরে মন খারাপ না। আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।

— হুম, বলুন!

— আপনি আজকের মধ্যেই আমাদের ডিভোর্স এর ব্যাবস্থা করুন।

ডিভোর্স কথাটা শুনে আদনানের বুকের ভিতর কেঁপে উঠল। তবুও মুখে হাসি রেখেই বলল,

— ঠিক আছে আমি ব্যবস্থা করছি।

এই কথা বলে আদনান বাহিরে গিয়ে কারোর সাথে ফোনে কথা বলা শেষ করে আদিবার কাছে এসে বলল — ব্যবস্থা হয়ে গেছে। কাল আমি ডিভোর্স লেটার নিয়ে আসব।

আসলে আদিবার কাছেও কেমন জানি খারাপ লাগছে। কিন্তু কেন খারাপ লাগছে আদিবা বুঝতে পারছেনা। এদিকে আদনান ছাদের উপরে গিয়ে অঝোরে কান্না করছে। নিজের ভালোবাসার মানুষ কাল অন্যের হয়ে যাবে। আদনান নিজেকে শান্ত করে রুমে ফিরে আসে। আদনান রুমে এসে দেখে আদিবা এখনও সজাগ।

— আপনি ঘুমাননি যে? অনেক রাত হইছে।

— আদনান আপনি অনেক ভালো একটা ছেলে। আপনি আমার জন্য অনেক কিছু করছেন। ধন্যবাদ দিয়ে আপনাকে ছোট করতে চাইনা।

— আরে এগুলো কোনো ব্যাপার না। অনেক রাত হইছে ঘুমিয়ে পড়ুন। শুভ রাত্রি।

এই কথা বলে আদনান সোফায় চলে যায়। সকালে আদনান ঘুম থেকে উঠে উকিলের কাছে চলে যায়। কিছুক্ষণ পরে ডিভোর্স প্যাপার নিয়ে ফিরে আসে আদনান। কিন্তু অদ্ভুত ব্যাপার হলো আদিবাকে কোথাও পাওয়া যাচ্ছেনা। হঠাৎ করে এই মেয়ে কোথায় চলে গেলো?

চলবে?