নীরবে নিভৃতে পর্ব-৩৪

0
179

#নীরবে_নিভৃতে
#পর্ব_৩৪
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( কঠোরভাবে প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)

আমি খেয়েছি। তুমি খাওয়া শেষ করো। আরেকটা জিনিস দেওয়ার আছে। ”
” আবার কী?”
” আগে খাওয়া শেষ করো। ”
” আচ্ছা। ”
মিষ্টি আরো কিছুটা খাবার খেয়ে বাকিটুকু আর খেতে পারছে না। খাবার নষ্ট করলে আহনাফ কী না কী ভাবে সেই ভয়ে চুপচাপ বসে আছে। আহনাফ ফোনে কিছু একটা দেখছে। হুট করে মিষ্টির দিকে দৃষ্টিপাত করতেই দেখে, মিষ্টি ইতস্ততভাবে মাথা নিচু করে খাবারের মধ্যে আঙুল নেড়েচেড়ে যাচ্ছে।
” হাত ধুয়ে এসো যাও। এতো ইতস্তত হওয়ার কী আছে? আমি কি তোমার কাছে নতুন কোনো মানুষ! ”
মিষ্টি মৃদু হেসে মাথা নাড়লো শুধু। বসা থেকে উঠে গিয়ে হাত ধুয়ে আসলো। শাড়ি পরার অভ্যাস নেই মেয়েটার তাই একটু অস্বস্তি লাগছে বটে। মিষ্টিকে বসতে দেখে আহনাফ পকেট হাতড়ে একটা ছোটো বক্স বের করলো। মিষ্টি স্থির হয়ে বসে আহনাফের দিকে তাকিয়ে আছে। বক্সটা খুলে একটা সোনার আংটি বের করে মিষ্টির দিকে এগিয়ে বললো,
” এটা তোমার জন্য। হাত দাও পরিয়ে দিচ্ছি। ”
” এসবের কী দরকার ছিল! ”
” বিয়ের প্রথম রাতে স্ত্রীকে উপহার দিতে হয়, বুঝলে?”
মিষ্টি মুচকি হেসে মাথা নাড়লো। আহনাফ ওর ডান হাতের আঙুলে আংটি পরিয়ে দিলো। মিষ্টি মনে মনে সৃষ্টিকর্তার নিকট শুকরিয়া আদায় করছে। আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্য করেন এবং অবশ্যই অন্ধকারের পরে আলোর মুখ দেখান।
” আপনি মন থেকে আমাকে মেনে নিয়েছেন স্যার? ”
” এটা কেমন প্রশ্ন! তুমি আমার স্ত্রী, মনপ্রাণ সবকিছু দিয়ে যদি না মানতাম তবে তুমি এখন আমার গৃহে থাকতে? ”
মিষ্টি চুপ করে গেলো। বোকা বোকা প্রশ্ন করে ফেলেছে ভেবে নিজেকেই বকাঝকা করছে। আহনাফ বসা থেকে উঠে মিষ্টিকে উদ্দেশ্য করে বলে ওযু করে আসতে। বিয়ের প্রথম রাতে স্বামী-স্ত্রীকে একসাথে নফল নামাজ আদায় করতে হয়। মিষ্টি আহনাফের কথামতো ওযু করে আসে। দু’জনে একসাথে নামাজ আদায় করে। নামাজ শেষে কিছুক্ষণ দু’জনে টুকটাক কথা বলে বিছানায় শুয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছে এখন। আহনাফের আজ কিছুতেই ঘুম আসছে না। যতই অন্যায় করুক সেই মানবী আজ তো তারই থাকার কথা ছিলো এই বাসররাতে! মানুষগুলো কথা দেয় শুধু মুহুর্ত সুন্দর করতে। ওদের কাছে যেগুলো সময় উপভোগ করার কথার কথা মাত্র, বিপরীত দিকে থাকা মানুষটার জন্য তা কতটা মারাত্মক স্মৃতি হিসেবে কাজ করে তা যদি বুঝতো তারা! অস্থিরতায় আর শুয়ে থাকতে পারলোনা আহনাফ। শোয়া থেকে উঠে বসলো। মিষ্টি ঘুমিয়ে গেছে। ডিম লাইটের মৃদু আলোয় কেমন স্নিগ্ধ, নিষ্পাপ লাগছে ওর চেহারাটা। মিষ্টির দিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে আহনাফের মস্তিষ্ক থেকে স্মৃতিগুলো ঝাপসা হতে লাগলো। মেয়েটার আপাদমস্তক নজর বুলাতেই আহনাফ কিছুটা বেসামাল হয়ে গেছে। শাড়ির আঁচল সরে যাওয়ার ফলে ক্রমাগত শ্বাস-প্রশ্বাসে মিষ্টির উন্মুক্ত বুকের উঠানামা দেখে আহনাফ ঘোরের মধ্যে আঁটকে যাচ্ছে যেনো। নিজের দৃষ্টিত সংযত করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষণ। কিন্তু ঠিক সামলাতে পারলোনা নিজেকে। আবারো মিষ্টির দিকে তাকাল। উন্মুক্ত কোমরের ভাঁজে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিতেই নড়েচড়ে উঠলো মিষ্টি। আকস্মিক ঘটনায় আহনাফও বোকা বনে গেলো। নিজেকে কড়া শাষণ করে বালিশে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে ফেললো সে। কিন্তু না! শরীরের উন্মাদনা কিছুতেই আজ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হচ্ছে না যেনো। মিষ্টির দিকে ফিরে শুয়ে দেখলো মেয়েটা এবার তার দিকে ফিরে বেঘোরে ঘুমোচ্ছে। আহনাফ আলতো করে কপালে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিলো। ক্রমেই চুম্বনের পরিমাণ বৃদ্ধি পাওয়ায় মিষ্টির ঘুম ভেঙে এরমধ্যেই ভেঙে গেছে। কিন্তু কিছু বলছে না। চুপচাপ আহনাফের স্পর্শ উপভোগ করছে সে। আহনাফ ধীরে ধীরে মিষ্টিকে নিজের করে নিচ্ছে। মিষ্টি প্রথম প্রথম সবকিছু উপভোগ করলেও শেষ মুহুর্তে এসে কেমন অস্থির হয়ে উঠেছে। আহনাফের গভীর স্পর্শে মেয়েটা ভিন্ন ভিন্ন পুরুষের ঘৃণ্য আচরণের স্মৃতি হাতড়ে যাচ্ছে।
” নাহ! দূরে সরে যান। দূরে, দূরে। না আআ..…”
আচমকা মিষ্টির মৃদু চিৎকারে হতচকিত হয়ে গেছে আহনাফ।
” কী হয়েছে মিষ্টি? ঠিক আছো তুমি? ”
মিষ্টিকে ছেড়ে কিছুটা দূরে সরে বসে পোশাক ঠিক করতে করতে আহনাফ জিজ্ঞেস করলো। মিষ্টি জোরে জোরে নিঃশ্বাস ফেলছে। আশেপাশে উদভ্রান্তের মতো তাকাচ্ছে। বিছানার চাদর দিয়ে নিজেকে ঢেকে নিয়ে জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। আহনাফের একটু সময় লাগলো বিষয়টা বুঝতে। নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হচ্ছে ওর। কেনো আজকেই কাছাকাছি যেতে গেলো? কয়েকদিন অপেক্ষা করলে কী এমন হতো! মেয়েটা উপর উপর যতই স্বাভাবিক থাকুক মানসিকভাবে এখনো স্বাভাবিক হতে পারেনি। মিষ্টি কথা না বলে হুট করে ফুপিয়ে কেঁদে উঠতেই আহনাফ তড়িৎ গতিতে ওকে জড়িয়ে ধরে শান্ত করতে চেষ্টা করছে।
” সরি মিষ্টি। আই এম এক্সট্রিমলি সরি। এমন ভুল আর কখনো হবে না। প্লিজ স্বাভাবিক হও মিষ্টি। আশেপাশে তাকিয়ে দেখো! এটা আমি, আহনাফ। অন্য কেউ না। ”
মিষ্টি বিষয়টা বুঝতে পেরে আহনাফকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কেঁদে উঠে। আহনাফ মিষ্টির মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে আস্তে করে শুইয়ে দিলো ওকে।
” ঘুমাও মিষ্টি। কিছু হয়নি, সব ঠিক আছে। ঘুমাও এবার। ”
মিষ্টি ফোঁপাতে ফোপাঁতে বাচ্চাদের মতোই কিছুক্ষণের জন্য ঘুমিয়ে যায়। আহনাফ দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে ডিম লাইটটা অফ করে।

মিষ্টির বিয়ের পাট চুকে যাওয়ায় বাবার বাড়ি থেকে আজ চলে যাবে মেহেক। এমনিতেই এখানে থাকা রোশনের জন্য সব সময় বিপদজনক। একবার গুলি খেয়ে শরীরের অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে। দ্বিতীয় বার এমনকিছু হোক কিছুতেই চায় না মেহেক। তাই বাবা-মাকে বিদায় জানিয়ে বিকেলের ম্লান আলোতে রোশনকে নিয়ে জঙ্গলের দিকে এগোচ্ছে মেহেক। নদীর পাড় পর্যন্ত অটোরিকশায় এসেছিল। তারপর তো হেঁটেই যেতে হয়। আনজুম বেগম একেবারে একা হয়ে গেছেন এখন। মেয়েকে বিয়ে দিয়ে ঘরটা কেমন খালি হয়ে গেছে। কিন্তু কী আর করার! মেয়ে হয়ে যখন জন্মেছে আজ হোক কিংবা কাল শ্বশুর বাড়ি তো যেতেই হতো।

” আমাকে কেনো মারছেন না? এভাবে বেঁচে থাকার থেকে মৃত্যু হাজার গুন বেশি ভালো। ”
রোজীর রাগান্বিত স্বরে বলা কথাগুলো সবুর শান্তভাবে দাঁড়িয়ে শুনলো। মেয়েটা এখানে আছে প্রায় মাসখানেক হবে। তবুও মাথা নত করতে রাজি না। সবুর চায় রোজীকে বিয়ে করে সংসার করতে। কিংবা রোজী? সে তো চায় মুক্তি!
” রোজী আমি তোমাকে ভালোবাসি। দয়া করে একবার সুযোগ দাও আমাকে। আমি তোমার মনমতো সবকিছু করবো। ”
সবুরের এক কথায় বিরক্ত রোজী। কিন্তু কিছু তো করারও নেই। এই জঙ্গলে বসে কী বা করার আছে তার? বন্ধুদের তো আগেই মেরে ফেলেছে ডাকাত গুলো।
” ভালোবাসি! ভালোবাসি! এই এক কথা শুনতে শুনতে ক্লান্ত আমি। আমি তো আপনাকে ভালোবাসি না। জোর করে কি ভালোবাসা হয়?”

রোজী শহুরে মেয়ে। তার পক্ষে কখনো এই জঙ্গলে বসবাস করা একজন ডাকাতকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। তাই সে বরাবর এমন কথা বলে। সবুরও ছাড়ার পাত্র নয়। এভাবে টানা ছয় মাস জঙ্গলে একসাথে থাকতে থাকতে একসময় সবুর ও রোজীর সম্পর্কে উন্নতি আসে। একটা সময় বিয়ে করে দু’জন। জঙ্গলের বাকি ডাকাতদের মধ্যে কয়েকজন রোজীকে চাইতো। কিন্তু ভয়ে কিছু বলতে সাহস পেতো না। যতই হোক সুন্দরী মেয়ে দেখলে ডাকাতদের তো হুঁশ থাকে না। কিন্তু ডাকাতদের অবশ্য পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায় না। রোজী নিজেই প্রায়শই নিজের আবেদনময়ী অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে তাদেরকে বেসামাল করে দিতো। ফলশ্রুতিতে একদিন একজন ডাকাত রোজীর সাথে অন্তরঙ্গ হতে গেলে সবুর তা দেখে ফেলে। শুরু হয় নিজেদের মধ্যে লড়াই। আর রোজী সেই লড়াইয়ের সুযোগ নিয়ে পালিয়ে যায় জঙ্গল থেকে। সবুর বিষয়টা টেরও পায় না। কারণ তখন সবার মধ্যে কথা কাটাকাটি, মারামারি চলছিল। তবে পরে সবুর নিজের ভুল বুঝতে পারে। রোজী গত দুইটি বছর তার সাথে শুধু অভিনয় করে গেছে। হ্যাঁ ভালোবাসার অভিনয়। আর সুযোগ বুঝে নিজেদের মধ্যে ঝামেলা বাঁধিয়ে দিয়ে পালিয়ে গেছে সে। ভাবতেই সবুর বারবার অবাক হতো। অথচ এতগুলো দিন কী নিখুঁত অভিনয় করেছিল মেয়েটা!

চলবে,