#বড়ো আপা
#পর্ব-২১
#শারমিন আঁচল নিপা
পুরো গ্রামবাসী তেড়ে এসেছে আনহারিকে গ্রাম থেকে বের করার জন্য। তাদের দাবি আনহারি ফেইক। এখানে এসেছে দ/ঙ্গা করার জন্য। আনহারিকে আবার অনেকে ভূত ভেবেও মারতে এসেছে। কেউ কেউ তো বলছে তালাক আমাদের সামনে হয়েছে এখন এই মেয়ের এ বাড়িতে কোনো অধিকার নেই। সবমিলিয়ে পরিস্থিতি বেশ গোলমেলে হয়ে আছে। আমি একটু উঁকি দিয়ে দেখে আনহারির কাছে এসে বললাম
“গ্রামের লোক তো অনেক ক্ষেপেছে। এখন কী করবেন আপনি? আমার জন্য যদি আপনার কোনো বিপদ হয় আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারব না। হুজুগে বাঙ্গালি কিছু হলেই বাছ, বিচার না করেই লাফায়তে থাকে। এরা সবাই আপনাকে মারতে এসেছে। আমার ভীষণ ভয় লাগছে।”
আনহারি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল
“যুদ্ধের ময়দানে কখনও ভীত হতে নেই। আমরা এসেছিই যুদ্ধ করতে। সংগ্রাম যত প্রবল হয় বিজয়ের হাসিও তত সুন্দর হয়। এসব নিয়ে ভেবো না। আমি বাইরে গিয়ে দেখছি কী করা যায়।”
কথাগুলো বলে, আনহারি বাইরে যেতে নিলেই… আমি তার হাতটা চেপে ধরে বললাম
“প্লিজ বাইরে গেলেই সবাই তেড়ে আসবে। আপনি বাইরে যাবেন না। পরিস্থিতি এখন ভীষণ খারাপ। এমন সময় আপনার বাইরে যাওয়াটা রিস্ক। এক আপাকে হারিয়েছি আরেকজনকে হারানো ধৈর্য আমার নেই। আপনাকে আমি আমার বড়ো আপার মতোই ভালোবাসি। দয়াকরে আপনি ঘরেই বসুন। পরিস্থিতি ঠান্ডা হোক এরপর বের হোন।”
আনহারি আমার কথা শুনল না। জোর করে সে তার রুম থেকে বের হয়ে মূল দরজায় গেল। মূল দরজায় যেতেই একটা পাথর ছুড়ে মারল একজন। সেটা একদম আনহারির কপাল বরাবর পড়ল। কপালটা কেটে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। আরও কয়েকজন আনাহারিকে সামনে এগিয়ে মারতে নিলেই আনহারি বেশ জোরে চেঁচিয়ে উঠে বলল
“এক পা যদি কেউ এগিয়ে এসে আমার গায়ে হাত তুলেছেন আপনাদের খবর আছে। পেছনের দিকে তাকান। তারপর চিন্তা করেন কী করবেন। আমি কোনো দাঙ্গাতে যেতে চাচ্ছি না। আপনাদের যদি সন্দেহ থাকে তাহলে সেটা সুষ্ঠুভাবে উপস্থাপন করুন। আমিও ফেইক না সেটার প্রমাণ দিব আমি। আমি যে ভূত ও না সেটারও প্রমাণ দিব।”
আনহারির কথা শুনে সবাই পেছনের দিকে তাকাল। পুলিশ অফিসার মাহিদের গাড়ি দাঁড়িয়ে আছে। সে গাড়ি থেকে নামছে। পুলিশ অফিসার মাহিদ দেখতে ভীষণ সুন্দর। বয়স ২৮ থেকে ৩০ এর মাঝামাঝি হবে। দেহের গড়ন বেশ বলিষ্ঠ। লম্বায় ৬ ফিট ২ ইঞ্চি। গায়ের রঙ শ্যাম বর্ণের। মনে হচ্ছে সালমান খান গাড়ি থেকে নেমে আসছে। এত করুণ মুহুর্তেও যে কারও মনে প্রেমের ঘন্টা বাজতে পারে এটা আমি নিজেকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না। এই মাহিদকে দেখে আমার শরীরে বেশ অস্থিরতা কাজ করছে। পুরো দুনিয়া একদিকে আর সে যেন আরেকদিকে। আমি কেন এসেছি? কার জন্য এসেছি। সব লক্ষ্যই যেন আমি ভুলে যাচ্ছি।
সবাই মাহিদকে দেখে চুপ হয়ে গেল।।ষোড়গোল থেমে গেল। চারপাশটা নীরব হয়ে গেল মুহুর্তেই। মাহিদ সবার সামনে এসে দাঁড়াল। আর আমার পাশে এসে দাঁড়াল। আমার বুকটা ধুকধুক করছে কেন জানি না। মাহিদ সবাইকে উদ্দেশ্য করে বলল
“এখানে কেউ কোনো অরাজগতা করলে আমি এর কঠিন পদক্ষেপ নিব৷ সবাই নিজেকে সামলান। আপনাদের কোনো অভিযোগ থাকলে বলুন আমি তদন্ত করে সুষ্ঠ পদক্ষেপ নিব। তবে আইন নিজের হাতে নিয়ে কিছু করবেন না।”
তারপর আনাহারির দিকে নির্দেশ করে বলল
“এই মেয়েটা বলছে সে অনন্যা। এবং তার যথেষ্ঠ প্রমাণ আমাকে দিয়েছে। আপনাদের কাছে যদি সলিড প্রমাণ থাকে দিন। আমি পদক্ষেপ নিচ্ছি কী করা যায়।”
আনজুমান পাশ থেকে বলে উঠল
“আমার ভাইয়ের বউ জাম গাছে গলায় দড়ি দিয়ে মারা গেছে বারো বছর আগে। তার ময়না তদন্ত হয়। এমনকি তার দাফনও হয়ে যায়। এ মেয়েটা আমার ভাইকে ফাঁসিয়ে টাকা নেওয়ার জন্য এমন করছে।”
অফিসার মাহিদ ভ্রু টা কুঁচকে বললেন
“অনন্যা যথেষ্ট যোগ্য। তার আশ্রিত মা তাকে যে পরিমাণ জায়গা সম্পত্তি দিয়েছে সেটা আপনার ভাইয়ের তুলনায় দশগুণ। আপনারা অত্যাচার করে এ মেয়েকে বাড়ি থেকে বের করে দিয়েছেন কৌশলে৷ অজানা শহরে তাকে বিক্রি করে দিয়েছিলেন। সেখান থেকে লাবনী জোহা নামক একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর মেয়ে তাকে নিজের মেয়ের মতো উদ্ধার করে লালন পালন করে। বিদেশ থেকে পড়াশোনা করে আসে। তার যোগ্যতাও আছে টাকা ইনকাম করার জন্য। দেখতে শুনতেও সে সুন্দরী। তাহলে শুধু শুধু এরকম ব্লেইম দেওয়া তো উচিত না। এখন আপনারা কেন অনন্যাকে বারো বছর আগে দালালের কাছে বিক্রি করে দিয়েছেন সেটার জবাব দিবেন। জাম গাছে যে অনন্যা ছিল না সেটার প্রমাণ অনন্যা দিবে। অনন্যার নিকট তার বিয়ের কাবিননামা আছে। কাবিননামায় টিপসই আছে তার। সেটা ম্যাচ করালেই হবে। যদি সে অনন্যা হয় তখন তো আপনারা ফেঁসে যাবেন।”
আনজুমান মুখের উপর বলে দিল
“ঐটা বানোয়াট কাবিন নামা। আমার ভাইয়ের কাবিননামা তার কাছেই ছিল। অনন্যার মৃ/ত্যুর পর সেটা পুড়িয়ে ফেলা হয়েছে।”
অফিসার মাহিদ এবার বলে উঠলেন
“তাহলে সে কাবিননামায় আপনার ভাইয়ের যে আঙ্গুলের ছাপ আছে সেটাও মিলানো হবে। মিলে গেলে বুঝতে হবে এটাই আসল।”
আমজুমান শক্ত গলায় বলল
“তাই করা হোক। আমি জানি এ মেয়েটা মিথ্যায় প্রমাণিত হবে।”
এদিকে অফিসার মাহিদের কথা শুনে আমি বুঝতে পারলাম আনহারি তাকে এসব বলতে বলেছে। লাবনী জোহাকে নিজের মা বলে পরিচয় দিলে বিষয়টি উল্টো দিকে মোড় নিতে পারে। আর তার ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে লাবনী জোহা পর্যন্ত যাওয়া খুব বেশি কঠিন নয়। তাই এত বড়ো নাটক আনহারিই সাজিয়েছে। কারণ এটা সত্য যে বড়ো আপা মা/রা গেছে সেদিন। বড়ো আপার মুখ অস্পষ্ট ছিল না। অস্পষ্ট থাকলে হয়তো সংশয় থাকত মনে।
এবার অফিসার মাহিদ গ্রামবাসীর দিকে তাকিয়ে বলল
“কেউ কোনো বিশৃঙ্খলা করবেন না। আমার সম্পর্কে আপনাদের ধারণা আছে আমি জানি। অন্যায়ের ব্যাপারে আমি একদম আপোস করি না। আমি বারো বছর আগেই কেইসটা আবার ওপেন করব। সবকিছু নিয়ে আবার ঘাটব। তারপর সত্যতা যাচাই করে এর একটি সমাধান দিব। সে পর্যন্ত অনন্যা বাড়িতেই থাকবে। আর আপনারা যে যার বাড়িতে যান। সে জীন ভূত নয় জলজ্যান্ত একটি মানুষ।”
গ্রামের লোকেরা মাথা নত করে চলে গেল। বাড়িটা একদম নীরব হয়ে গেল। আমি অফিসার মাহিদের দিকে তাকিয়ে দেখছিলাম সব। আমার হাত পা কাঁপছে। উনার প্রতি এত প্রবল অনুভূতি আমার কেন জাগছে আমি জানি না। আমার ভীষণ অস্থির লাগছে। এ অস্থিরতা আমাকে ভীষণভাবে গ্রাস করে নিচ্ছে।
মাহিদ সাহেব আনহারির দিকে তাকিয়ে বলল
“আমার সাথে হাসপাতালে চলুন। আপনার মাথায় ব্যান্ডেজ লাগাতে হবে। রক্ত পড়ছে বেশি।”
আনহারি জবাব দিল
“আমি ঠিক আছি। কাপড় দিয়ে শক্ত করে বেঁধে নিলেই হবে। আমি আপনাকে কোনো সমস্যা হলে কল দিব। ধন্যবাদ এ পরিস্থিতি টা সামাল দেওয়ার জন্য।”
“আপনার কাবিননামা টা আমি নিয়ে গেলাম। ফিংগার প্রিন্ট ম্যাচ করার জন্য।”
তারপর দীপক ভাইয়ার দিকে তাকিয়ে বলল
“দীপক সাহেব একজনকে পাঠাব। সেখানে আপনি নিজেও ফিংগার প্রিন্ট দিবেন?”
দীপক হালকা গলায় জবাব দিল
“ঠিক আছে।”
অফিসার মাহিদ পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে চলে গেলেন। আনাহারি তার রুমে বসে আছেন। মাথাটা সে শক্ত কাপড় দিয়ে বেঁধে নিয়েছে। এতে তার রক্ত পড়াটা অনেকটা কমেছে।
সন্ধ্যা গড়িয়ে রাত নামল। আনহারি ড্রইং রুমে আসলো। আনজুমান আর তার হাসবেন্ড দাঁড়িয়ে আছে। আনহারি আনজুমানের সামনে গিয়ে তার হাসবেন্ডকে বলল
“দুলাভাই আমার জন্য একটু পায়েস করে নিয়ে আসেন। মনে আছে আমাকে বলেছিলেন আপনি বেশ ভালো পায়েস রান্না করেন। শুধু অর্ডার দিলেই হবে। কিন্তু বিনিময়ে আপনি আমার কাছে আমার সম্মান টা চেয়েছিলেন। কতশত অপমান করেছিলেন। সব ভুলে গেছেন নাকি মনে পড়ছে? আজকে আমার সম্মান দিব না, তবে পায়েস না পেলে আপনার সম্মানটা কেড়ে নিব।”
এ কথা শুনে আনজুমান তেড়ে এসে বলতে লাগল
“সাহস কত বড়ো আমার জামাইকে হরমাইশ দাও।”
আনহারি আনজুমানের চুলের মুঠিটা ধরে বলল
“হরমাইশ দিয়েছি জান কেড়ে নেইনি। ভালোয় ভালোয় পায়েস করতে বল। নাহয় তোর মাথায় একটা চুলও থাকবে না। আগের অনন্যা আমি না। এ অনন্যা জ্বলতে জ্বলতে, পুড়তে পুড়তে শক্ত হয়ে গেছে।”
আনজুমান ভয়ে বিদ্ধস্ত হয়ে তার হাসবেন্ডের দিকে তাকিয়ে বলল
“প্লিজ যাও তুমি। নাহয় আমাকে মেরে ফেলতেও দ্বিধা করবে না এ মেয়ে।”
আনজুমানের হাসবেন্ড দৌড় লাগালো রান্না ঘরের দিকে। ঠিক এমন সময় আরও একটা আওয়াজ কানে ধেয়ে আসলো। আর…
কপি করা নিষেধ
#বড়ো আপা
#পর্ব- ২২
#শারমিন আঁচল নিপা
বুঝতে পারলাম কলিংবেল চাপছে কেউ। আনজুমানের চুলগুলো ছেড়ে দিল আনহারি। আনহারি আমাকে ইশারা দিয়ে বলল দরজার খোলার জন্য। আনজুমান মাথায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আমি দৌড়ে গেলাম দরজার দিকে। দরজা খুলতেই আমার চারপাশটায় হিমেল বাতাস বইতে লাগল অফিসার মাহিদকে দেখে। চোখ শীতলকারী মানুষ আমার সামনেই দাঁড়ানো। মনে হচ্ছে হার্টবিটের স্পন্দন দ্রূত হচ্ছে। মনের ভেতর জলোচ্ছাস বয়ে চলছে। সমুদ্রের আঁচড়ে পড়া ঢেউগুলো ভীষণভাবে হানা দিচ্ছে। নড়বার শক্তিও যেন পাচ্ছি না। সারা শরীর হালকা বৈদ্যুতিক শকের মতো কেঁপে উঠল। গায়ের লোমগুলো এ গরমেও দাঁড়িয়ে গেল। জিহ্বাও নড়ছে না। প্রথম দেখায় কী সত্যিই ভালোবাসা হয়? এটা কী আমার ভালোবাসা নাকি আমার নেশা। মাতালের মতো লাগছে কেন এত? বেহায়া দৃষ্টি কেন বারবার তার দিকে তাকিয়ে থাকতে চায়। এ মন কেন তাকে ঘিরেই ভাবতে চাচ্ছে৷ বাংলা সিনেমার মতো গান বেজে উঠছে মনে। মনে হচ্ছে এই বুঝি আমি আর সে সুখের কাব্য রচনা করব। আগে যখন বাংলা সিনেমা দেখতাম তখন ভাবতাম সুখ বা দুঃখের মুহুর্তে গান আনার কী দরকার? এখন মনে হয় এ গানটায় হলো সে সিনগুলোর মূখ্য প্রতিফলন। আমি ঠাই দাঁড়িয়ে আছি। মাহিদ সাহেব আমার দিকে কপাল কুচকে তাকালেন। তারপর জিজ্ঞেস করলেন
“এক্সকিউজ মি! কী দেখছেন এভাবে? কিছু বলবেন?”
আমি একটু নড়েচড়ে গেলাম। ভাবনা আর কল্পনার রোমাঞ্চকর মূহুর্ত থেকে বের হয়ে আসলাম। খানিকটা স্বাভাবিক হলাম। নিজের আসন্ন আবেগটাকে দমিয়ে নিয়ে বললাম
“না কিছু না। আমি হুট করে আপনার দিকে তাকিয়ে একটা চিন্তায় ডুবে গিয়েছিলাম। আপনি এ সময় আবার আসলেন? কিছু দরকার?”
“ফিংগার প্রিন্ট নিতে এসেছি দীপক এবং অনন্যার। আচ্ছা আপনি অনন্যার কে হন?”
মাহিদ সাহেবের এ প্রশ্নের উত্তর আমি কী দিব বুঝে উঠার আগেই আনহারি পাশ থেকে বলে উঠল
“আমার পারসোনাল এসিস্ট্যান্ট। কেন কোনো সমস্যা?”
মাহিদ সাহেবর উত্তর
” নো। ওর নাম কী?”
“ওর নাম ফিয়না। ওর বাসা ঢাকায়। আর কিছু জানার আছে এ বিষয়ে? থাকলে সোফায় বসুন বলছি। আর আমাকে কী করতে হবে বলুন। দীপক ঘরেই আছে তাকে ফিয়না ডেকে নিয়ে আসতেছে।”
অফিসার মাহিদ সোফায় বসলেন। আনহারিও সোফায় বসলো। আনাহারি আমার দিকে তাকিয়ে বলল
“দীপককে ডেকে নিয়ে এসো তো।”
আমি মাথা নেড়ে সম্মতি দিলাম শুধু। এ জায়গা থেকে একদম নড়তে মন চাচ্ছে না। চুম্বকের মতো এ জায়গাটা আমাকে আকর্ষণ করছে। এ আকর্ষিত বল ত্যাগ করে দীপকের রুমের দিকে এগিয়ে যাওয়া ভীষণ কঠিন। মনে হচ্ছে মাহিদ ইলেক্ট্রন আমি প্রোটন আর নিশ্চল ভাবে বসে থাকা আনহারি নিউট্রন। তার মধ্যে কোনো আকর্ষণ বিকর্ষণ কোনো কিছুই কাজ করছে না। অপরদিকে ইলেকট্রনের প্রবল আকর্ষণ ভেদ করে প্রোটন যেন এ বলয় ত্যাগ করতে নারাজ। তবে বাইরে থেকে এক বিশেষ বল বাঁধা দেওয়ার দরুণ আমাকে বাধ্য হয়েই দীপকের রুমের দিকে এগুতে হলো।
আমি দীপক ভাইয়ার রুমের সামনে যেতেই বুঝলাম পিয়ালি আর দীপক কথা বলছে। দীপক বেশ রেগে রেগেই পিয়ালিকে বলছে
“এতগুলো বউ খু/ ন করতে পরেছি তোকেও খু/ন করতে আমার সময় লাগবে না। বেশি বাড়াবাড়ি করলে তোর অবস্থাও তৃণার মতো হবে। তোকে যদি দেখেছি এ চৌকাঠ পার হতে তোর খবর আছে। এ রুমের ভেতর তুই বসে থাকবি। ঐ মেয়ের ধারে কাছে যাবি না একদম। জানে মেরে ফেলব। আর ঐ মেয়েকে আবার জানে মারতে কী করা লাগে সেটা আমি দেখতেছি। একবার মা/রার পরও যখন বেঁচে গেছে। দ্বিতীয়বার মা/রার পর যেন বেঁচে না থাকে সে ব্যবস্থায় করব। ”
দীপকের কথা শুনে আমি আরেকটা রহস্যে ডুবে গেলাম। তার ভাষ্য অনুযায়ী বুঝা যাচ্ছে বারো বছর আগে সে অনন্যাকে খু/ন করেছে। তাহলে আমার বোন আত্ম/হ/ত্যা করেনি। তবুও বিনা কারণে সে জানাজা পেল না। এ কথা আমি প্রমাণ ছাড়া সবার সামনে বলতে পারব না। তবে আনহারিকে এ বিশেষ তথ্যটা দিতে হবে। এখন হাতে পাওয়া সকল ক্লু মাথায় রেখে এগুতে হবে। দীপকের কথা শুনে পিয়ালি জড়োসড়ো হয়ে বসে আছে। পিয়ালির বসার ধরণ দেখে আপার কথা মনে পড়ে গেল।
সেদিন আমি এসেছিলাম আপার বাড়িতে মেহেদী পাতা নিয়ে। মাকে অনেকবার বলেছিলাম একটু পাতা বেটে হাতে দিয়ে দিতে। মা নানান অজুহাতে আর দেয়নি। এদিকে ছোট্ট আমার মধ্যে মেহেদী পরার অস্থিরতা ঝেঁকে বসেছে। আমি ঠিক তখন কাউকে কিছু না বলে আপার বাড়ি চলে আসি। আপার বাসায় আসার পর আপার ঘরে ঢুকার সময় খেয়াল করলাম দুলাভাই আপাকে মারছে। মারার কারণ হলো আপা কেন সময় মতো চা দেয় নি। একে তো চা দিতে দেরি করেছে তার উপর চায়ে চিনি দিয়ে পরিবেশন করেছে। আর এটা নাকি আপার শ্বাশুড়িকে মারার জন্য এমনটা করেছে। আপার শ্বাশুড়ির অভিযোগ এটাই ছিল। কারণ উনার ডায়বেটিস ছিল। আপা সেদিন মাইর খেয়ে ঠিক এভাবে গুটিসুটি মেরে বসে ছিল। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে না। কারণ চোখের পানিও আপার কাঁদতে কাঁদতে শুকিয়ে গিয়েছিল। শরীরও মার খেতে খেতে শক্ত হয়ে গিয়েছিল। তবে বিনা কারণে আপাকে মার খেতে দেখে আমি আর সেখানে বেশিক্ষণ স্থায়ী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে পারিনি। মন খারাপ নিয়ে বাড়ি ফিরে আসি। সেদিন মাকে বাড়ি ফিরে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিলাম
“মা দুলাভাই আপাকে অনেক মেরেছে। তুমি একটু গিয়ে দুলাভাইকে কিছু বলো। আপা তো ইচ্ছা করে এমন করেনি। চায়ে চিনি দেওয়ার জন্য আপাকে মেরেছে। আপার অনেক কষ্ট হচ্ছে মা।”
মায়ের উত্তর ছিল
“শ্বশুড়বাড়িতে গেলে এমন একটু আাধটু সয়ে নিতে হয়। তুই আবার ঐ বাড়িতে কেন গিয়েছিলি? তোকে না নিষেধ করেছি আমি.. ঐ বাড়িতে যখন তখন যাবি না।”
এই বলে মা আমার গালে থাপ্পর কষিয়ে দিল। অথচ মা হয়ে মেয়ের কষ্টটা মাকে স্পর্শ করেনি। সয়ে নেওয়ার নাম করে যে একটা মেয়েকে দিনের পর দিন জীবন্ত লা/শ বানিয়ে ফেলে সেটা পরিবার বুঝে না। কেনই বা মেয়েদেরকেই সব সয়ে নিতে হবে। সমাজের নিতীটা বেশ অদ্ভুত। নীতির বিপরীতে গিয়ে যদি কোনো মেয়ে কিছু করতে চায় তাহলে সে মেয়ে হয়ে যায় নষ্টা বে/শ্যা। এটাই আমাদের সমাজ। আর এটাই সমাজের মানুষের আচরণ।
এসব চোখে ভাসতেই চোখের কোণে এক বিন্দু জল নেমে আসলো। আমি নিজেকে দ্রূত সামলাম। দীপক ভাইয়া সিগারেট টানছে আর ঘরে পায়চারি করছে। আমি তাকে কী বলে সম্বোধন করব বুঝতে পারছি না। এ মুহুর্তে নাম ধরে ডাকাটায় আমার কাছে সবচেয়ে বেশি উত্তম মনে হচ্ছে। তাই নাম ধরে ডেকে বললাম
“মিস্টার দীপক আপনাকে অনন্যা আপু ড্রইং রুমে ডাকছে।”
আমার সম্বোধনটা হয়তো দীপক ভাইয়ার পছন্দ হয়নি। তাই ঘর থেকে তেড়ে এসে বলে উঠল
“কত বড়ো সাহাস আমার বাড়িতে এসে আমাকেই নাম ধরে ডাকা হচ্ছে? তোর আর আমার বয়সের ফারাক জানিস?”
তিনি এমনিতেও খুব হাইপার অবস্থায় ছিলেন আর আমার মুখে নাম শুনে আরও হাইপার হয়ে গেলেন। হাইপার হয়ে আমার গায়ে হাত তুলতে নিলে আনহারি দৌড়ে এসে আটকায়। সে দীপকের হাতটা ধরে দীপকের গালেই কষিয়ে থাপ্পর মেরে বলে উঠল
“এর পর এ হাতটাও ভেঙ্গে দিব। একটা হাত তো নড়াতে পারছেন না। এটাও আর নড়াতে পারবেন না।”
রাগের মাথায় মানুষের হিতাহিত জ্ঞান টাও থাকে না। তাই সে আনহারীর গায়ে হাত তুলতে নেয়। সেক্ষেত্রে মাহিদ এসে বাঁধা দেয় এবং দীপক ভাইয়াকে জোর গলায় বলে
“এ মুহুর্তে যদি অনন্যা আপনার নামে নারী নির্যাতনের মামলা করে আপনার ঠাঁই কোথায় হবে আপনি বুঝতে পারছেন?”
এর মধ্যেই আপার শ্বাশুড়ি এসে বলে উঠল
“দীপু রে মাথা গরম করিস না। মাথা গরম করলে এ মেয়ের থাবায় আমরা সবাই মারা পড়ব। শয়তান মেয়ে তো আমাদের জ্বালাতে এসেছে। এখন সয়ে নে পুত। সময় হলে সবকিছুর জবাব দিস। মাথা ঠান্ডা কর পুত ”
দীপক ভাইয়া থেমে গেল। রাগটা নিবারণ করে অফিসার মাহিদকে বলল
“কেন এসেছেন?”
“আঙ্গুলের ছাপ নিতে। এ মেশিনে আঙ্গুলের ছাপ দিন তাহলে বুঝতে পারব এটা আসল কাবিননামা কি’না। আর অনন্যাও এখানে আঙ্গুলের ছাপ দিলে বুঝা যাবে সে আসল অনন্যা কি’না। এটার জন্যই এসেছি আমি ”
পুরো সময়টায় আনজুমান নিশ্চুপ ছিল। এখন একটু গলা খুলে বলল
“ভাই ছাপ দে। এখনই প্রমাণ হবে সে মিথ্যা। মিথ্যা প্রমাণ হলে তাকে চৌদ্দ শিকের ভাত খাওয়াব আমি। আর আমার গায়ে হাত তুলার প্রতিশোধ নিব আমি।”
দীপক এবার তার হাতের বুড়ো আঙ্গুলের ছাপটা দিল৷ আর আনহারিও দিল।
অফিসার মাহিদ ছাপ দুটো ভালো করে পর্যবেক্ষণ করছে। এদিকে আমার ভেতরটায় ভয় গ্রাস করে নিচ্ছে আমাকে। কারণ দুজন মানুষ এক হলেও তাদের হাতের ছাপ কখনও এক হতে পারে না। এটা কোনোভাবেই সম্ভব নয়। হেরে যাওয়ার বার্তা যেন আমার কানে আসছে। এ বিষয়টি কীভাবে আনহারি পার করবে সেটা বুঝতে পারছি না। মাহিদ আনহারির দিকে তাকাল। তার তাকানোর ধরণ বলে দিচ্ছে আনহারির সত্যতা সামনে আসতে চলল।।।।
গল্প সবার আগে পতে নীল লেখায় চাপ দিয়ে ফলো দিন শারমিন আঁচল নিপা । Sharmin Achol Nipa
কপি করা নিষেধ