অনুপম ভালোবাসা পর্ব-০৫

0
107

#অনুপম_ভালোবাসা(৫)
#Israt_Bintey_Ishaque(লেখিকা)

নজরাত থতমত খেয়ে দাঁড়িয়ে থাকলে রাদ সৌজন্য মূলক বলে,
__” গাড়িতে এসে বসুন।
নজরাত চুপচাপ এসে বসে। তারপর রাদ গাড়ি চালানো শুরু করে।
এদিকে লিপি বেগম ছেলের কথায় খুশি হন। নজরাত কে জিজ্ঞাসা করেন তার বাসার সবাই কেমন আছেন? নজরাত বলে,
__” আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আন্টি আপনার বাসায় সবাই কেমন আছেন?
__” আলহামদুলিল্লাহ আলা কুল্লি হাল।

গাড়িতে সবাই চুপচাপ থাকলেও জুঁই নজরাত কে জিজ্ঞাসা করে নজরাত এর কি কালার পছন্দ?
নজরাত জানালার পাশে আড়ষ্ট ভাবে বসে আছে। জুঁই এর কথায় পিছনে ফিরে তাকিয়ে বলল,
__” আমার পিঙ্ক কালার পছন্দ।
__” ওহ আচ্ছা। আর ভাইয়ার হোয়াইট কালার পছন্দ। আচ্ছা তুমি সাজতে পছন্দ করো বা নিজে নিজে সাজতে পারো?
জুঁই এর এই প্রশ্নে রাদ আর চুপ করে থাকতে পারলো না। ভ্রুকুটি করে বলল,
__” সে আর বলতে? উনি তো সাজগোজ এ পি এইস ডি করেছেন বোধহয়!
রাদ এর কথায় জুঁই এক্সাইটেড হয়ে বলল,
__” ভাইয়া তুই কি করে জানলি? তোরা কি একে অপরকে আগে থেকে জানিস? উফ এমন হলে তো ব্যাপারটা খুবই উপভোগ্য হবে।
(ওরা ভাই বোন একে অপরকে তুই সম্বোধন করে। জুঁই রাদ কে ভাইয়া বললেও রাদ জান্নাত কে আপু ডাকে না, নাম ধরেই ডাকে।)

রাদ জুঁই কে ধমকের সুরে বলল,
__” তোর মাথা। সেদিন ওনাদের বাসায় গিয়েছিলাম শুনিস নাই? তখন উনি অনেক আঁটা ময়দা মেখেছেন! তাই বললাম।
রাদ এর কথায় নজরাত তেজী চোখে চেয়ে রাদ কে বলল,
__” আমি মোটেও আটা ময়দা মাখি নি। আপনার দেখার ভুল আছে।
প্রতি উত্তরে রাদ একটু বাঁকা হাসে।
এদিকে নজরাত আর ছেলে মেয়েদের আলোচনা গুলো খুবই উপভোগ করছেন লিপি বেগম। মজা করে হলেও রাদ যে নজরাত কে নিয়ে কথা বলছে এটা ভীষণ ভালো লাগছে তার। তিনি নিশ্চিত বিয়েটা হয়ে গেলে ওদের মধ্যে মিল মোহাব্বত হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ।

জুঁই আবারো জিজ্ঞাসা করে নজরাত কোন ড্রেস বেশি পছন্দ করে? শাড়ি, থ্রিপিস নাকি ওয়েস্টান?
নজরাত বলে,
__” থ্রিপিসে বেশি কমফোর্ট ফিল করি। আর তুমি?
এখানেও রাদ চাপা গলায় বলল,
__” ভবিষ্যতে সবসময় শাড়ি পরে থাকতে হবে!
এ কথা শুধু নজরাত শুনলো আর কেউ শুনলো না।
যার ফলে নজরাত বড় বড় চোখ করে রাদ এর দিকে তাকায়। রাদ যেন কিছুই বলেনি এমন করে গাড়ি চালানোতে মনোযোগ দিয়ে রেখেছে।
এদিকে জুঁই বলল,
__” আমার শাড়ি ভালো লাগে কিন্তু নিজে নিজে পড়তে পারি না।
__” আমি তোমাকে পড়িয়ে দিব ইনশা আল্লাহ।
জুঁই খুব উৎফুল্ল হয়ে বলল,
__” আচ্ছা ঠিক আছে।

শপিং মলে এসে লিপি বেগম আর জুঁই আগে চলে যায় দুতলায় পিছনে থাকে নজরাত আর রাদ। দুতলায় চলন্ত সিঁড়ি দিয়ে উঠতে হয়। নজরাত বেশ কয়েকবার উঠেছে চলন্ত সিঁড়িতে তাও কেমন ভয় তার। প্রথম সিঁড়িতে পা রেখে কেঁপে উঠল। রাদ পিছন থেকে বলে,
__” সাবধানে।
ব্যপারটা নজরাতের ভালো লাগে, নিকাবের আড়ালে মুচকি হাসে সে।

দুতলায় উঠে রাদ অনেকটা সংকোচ বোধ করে বলল,
__” আপনাকে একটা কথা বলার ছিল।
__” জ্বি বলেন?
__” আমি দুটো টিউশনি করাই। আমি চাই আমি যে টাকা ইনকাম করি তার মধ্যে থেকেই বিয়ের শপিং করব। হয়তো এই টাকার পরিমাণ বেশি নয়। বাবা বিয়ের সম্পূর্ণ খরচের টাকা দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু আমি চাইনা আমার বিয়ের খরচের টাকা বাবা দিক। বাবার কাছ থেকে টাকা নিয়ে বিয়ে করবো এখানে নিজেকে খুব ছোট মনে হচ্ছে। তাই নিজের বিয়ের খরচের টাকা স্বল্প হলেও নিজেই দিতে চাইছি। এতে করে আমি ভীষণ তৃপ্তি পাব। যা বাবার টাকায় পাবনা।
স্বল্পমূল্যে কেনাকাটা করতে আপনার কি খারাপ লাগবে? আমি যখন ভালো ইনকাম করব তখন আপনার সব ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করবো ইনশা আল্লাহ।

রাদের কথায় থম মেরে দাঁড়িয়ে থাকে নজরাত। এই মানুষটাকে আজকে ভীষণ নিজের বলে মনে হচ্ছে। খুব আপন আপন লাগছে। এমন কাউকেই তো সেই জীবনসঙ্গি হিসেবে চেয়েছিল। তাহলে কি আল্লাহ তার মনের ইচ্ছা পূরণ করেছেন? আনন্দে যেন চোখে পানি চলে আসছে। বাবা চলে যাওয়ার পর আর কেউ এমন করে তাকে বলেনি যে আমি তোমার সব ইচ্ছা পূরণ করার চেষ্টা করব।

সাথের মানুষটা ভালো হলে ডাল ভাত দিয়েও অনায়াসে জীবন কাটিয়ে দেওয়া যায়। নজরাত মনে মনে বলে, এই মানুষটাকে সে খুব যত্ন করবে। মনের মনিকোঠায় আগলে রাখবে আমৃত্যু।

নজরাতকে চুপ করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে রাদ ইতস্তত বোধ করে বলল,
__” আপনি কি আমার কথা রে গে গেলেন?
__” না রাগবো কেন?
__” কিছু বলছেন না যে? তাই ভাবলাম বোধহয়
রে গে গেলেন।
__” আপনার সিদ্ধান্তের সাথে আমি একমত। আজকে তাহলে আপনার পছন্দের সবকিছু কেনা হোক।
রাদ অবাক হয়ে বলল,
__” আমার পছন্দে!
__” জ্বি আজকে আপনি আমার জন্য যা ই পছন্দ করবেন তাই আমি আনন্দে গ্রহণ করব ইনশা আল্লাহ।
তারপর রাদ মুচকি হেসে বলল আচ্ছা চলুন তাহলে।
প্রথমে তারা শাড়ির দোকানে যায়। ওখানে লিপি বেগম আর জুঁই অপেক্ষা করছে তাদের জন্য।
দোকানি বিয়ের অনেক শাড়ি বের করলেন। তারা তিনজন মিলে দেখছে। রাদ তখন হাত ভাঁজ করে এক পাশের দেয়ালের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। লিপি বেগম বারবার নজরাত কে জিজ্ঞাসা করে এটা পছন্দ হয়? ওটা পছন্দ হয়? তখন নজরাত রাদের দিকে তাকায়। রাদ মাথা নেড়ে “না” বললে নজরাত ও না বলে। একসময় লিপি বেগম বুঝতে পেরে উঠে গিয়ে ছেলেকে টেনে এনে টুলে বসিয়ে দেন। তারপর বলেন,
__” তোর যখন আমাদের গুলো পছন্দ হয় না তখন নিজেই নিজের ব‌উয়ের জন্য পছন্দ কর।

এমন তরল সম্বোধন শুনে লজ্জায় মরমে মরে যায় নজরাত। মাথা নিচু করে বসে থাকে সে। এদিকে রাদ অনেকগুলো শাড়ি ঘাটাঘাটি করার পর একটা লাল জামদানি শাড়ি যার মধ্যে সোনালী জরির কাজ করা এটা তার পছন্দ হয় এবং গায়ের মূল্য দেখে সে তার বাজেটের সাথে মিলিয়ে এটাই পছন্দ করে নেয়। এটার সাথে মিলিয়ে দোপাট্টা নিয়ে
তারপর সবাইকে বলে দোকানিকে এটা প্যাকেট করতে বলে। তারপর মা আর দুই বোনের জন্য তিনটা শাড়ি পছন্দ করে এগুলো ও প্যাকেট করতে বলে দোকানিকে।

তারপর থ্রিপিসের দোকানে আসে তারা। এখানেও রাদ পছন্দ করে তিনটা থ্রি পিস নজরাতের জন্য।
তারপর কসমেটিকস নেয় শুধু পিংক কালার একটা লিপস্টিক আরেকটা কাজল। আর কোন মেকআপ আইটেম নেয় না। রাদ মেকআপ একদম পছন্দ করেনা। সেটা খুব ভালোভাবেই নজরাত বুঝতে পারে আজকে তাই কিছু বলে না। অবশ্য তারও মেকআপ তেমন পছন্দ নয়। সেদিন বিপদে পড়ে অতটা ইউজ করেছিল।

তারপর মেয়েলি আইটেম যেমন, চিরুনি, সাবান, শ্যাম্পু ইত্যাদি জিনিসপত্র নিয়েই তাদের কেনাকাটার সমাপ্তি ঘটলো।
সবশেষে লিপি বেগম সবাইকে নিয়ে একটা রেস্তোরাঁয়ে যেতে চান। রেস্তোরাঁর কথা শুনে নজরাত ভয় পেয়ে যায়। রেস্তোরায় খেতে গেলে অবশ্যই তাকে নিকাব উন্মুক্ত করতে হবে। আজকের এই সুন্দর দিনটাতে কিছুতেই সে রাদ এর মুখোমুখি হতে চাইছে না। যদি রাদ কোন সিনক্রিয়েট করে তাই ভয় পাচ্ছে সে। লিপি বেগমকে বুঝিয়ে বলে, অনেক রাত হয়ে গেছে আন্টি আজকে বাসায় যাওয়া উচিৎ। সবাই দুশ্চিন্তা করবে। আমাকে মাফ করুন আন্টি।
তারপর রাদ বলল,
__” তাহলে খাবার পার্সেল করে দিতে বলবো।
লিপি বেগম সায় দিয়ে বললেন হ্যাঁ তাই ভালো হবে। তারপর একটা রেস্তোরাঁয় গিয়ে দুই বাড়ির জন্য কাচ্চি বিরিয়ানী পার্সেল করে দিতে বলে রাদ।
নজরাত তখন জানতো না যে তার বাসার জন্য ও খাবার পার্সেল করা হয়েছে। যখন নজরাত এর বাসার কাছে আসে তখন নজরাত সবাইকে বলে তাদের বাসায় যাওয়ার কথা কিন্তু লিপি বেগম বলেন,
__” আজ নয়। অনেক রাত হয়ে যাচ্ছে।
তারপর নজরাত রাদ কে ছোট্ট করে বলে,
__” আসছি।
রাদ গাড়ি থেকে নেমে খাবারের পার্সেল নজরাতকে নিতে বললে নজরাত অবাক হয়ে বলল,
__” এসব কেন?
__” আপনি তো কিছু খেলেন না সে জন্য পার্সেল করে দিতে বলেছি। নিন ধরুন।
নজরাত আর না করতে পারলো না পার্সেল গুলো হাতে নিল। তারপর সালাম দিয়ে বাসায় চলে যায়।
.
.
আজকে শুক্রবার একটা ভালো দিন। নজরাত আর রাদ এর শুভ বিবাহ। গতকাল হুমাইশা নজরাত এর দুই হাত ভর্তি করে মেহেদী দিয়ে দিয়েছে। মেয়েটা খুব সুন্দর ডিজাইন করতে পারে…..

#চলবে…. ইনশা আল্লাহ।