হৃদয়স্পর্শী মায়াবিনী পর্ব-১২

0
126

#হৃদয়স্পর্শী_মায়াবিনী
#নুসাইবা_ইসলাম_হুর (মিমি)
#পর্বঃ১২

প্রতিটি মেয়ের জীবনে প্রথম শাড়ি পড়াটা হয়তো মায়ের শাড়ি দিয়েই শুরু হয়। জীবনের একটা সময় নিজের অনেক অনেক শাড়ি হয় কিন্তু মায়ের শাড়ি পড়ার যেই আনন্দ সেটা হয়তো পৃথিবীর কোনো শাড়ির মাঝে পাওয়া যায় না। মায়ের শাড়ির মাঝে লুকিয়ে থাকে যেনো মা মা একটা সুঘ্রাণ। যে সুঘ্রাণ হাজারো টাকার দামীও শাড়ি এনে দিতে পারে না এই জন্যই হয়তো মায়ের শাড়ি পড়ার মতো আনন্দ পৃথিবীর অন্য কোনো শাড়ি এনে দিতে পারে না।

ফারজানা বেগম ফারিসতাকে মন দিয়ে শাড়ি পড়াতে ব্যস্ত আর ফারিসতা মায়ের দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে ছোটবেলার স্মৃতিচারণ করতে ব্যস্ত। ওর জীবনের প্রথম শাড়ি পড়া মায়ের শাড়ি দিয়ে। ওর বুজ হওয়ার পর যেদিন প্রথম ফারজানা বেগম ফারিসতাকে শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছিলো সেদিন ফারিসতার খুশি আকাশ ছুই ছুই ছিলো। মায়ের লাল টুকটুকে শাড়ি পড়ে পুরো বাড়ি খুশিতে চক্কর কেটেছিলো। সেই খুশি ছিলো কতটা আনন্দদায়ক ভাবতে ফারিসতার ঠোঁটের কোনে সুপ্ত হাসির রেখা ফুটে উঠলো।
আজ রাতে আদরিবার বার্থডে পার্টি। আদরিবা ফারিসতা আর রাশফিয়ার কাছে বায়না ধরে ও শাড়ি পড়বে। ওর সাথে যেনো ওরাও শাড়ি পড়ে। শাড়ি পড়ার কথা শুনে ফারিসতা নাকমুখ কুঁচকে নাকচ করে দিতে আদরিবার কান্না করে দেওয়ার মতো অবস্থা হয়ে গিয়েছিলো। ভার্সিটিতে পড়ুয়া একটা মেয়ের এমন বাচ্চামিতে ফারিসতার হাসি পেলো খুব। আদরিবা কাঁদো কাঁদো হয়ে বার বার শাড়ি পড়ার রিকোয়েস্ট করতে আদরিবার রিকোয়েস্ট ফেলতে পারলো না ফারিসতা। যদিও ফারিসতা শাড়ি পড়তে তেমন অভস্ত্যতা না তবুও আদরিবার খুশির কথা চিন্তা করে শাড়ি পড়তে রাজি হয়ে গেলো।

নে হয়ে গিয়েছে এবার তুই সেজে নে, শাড়ি পড়ানো শেষ করে বলে উঠলো ফারজানা বেগম।

ফারিসতা সম্মতি দিয়ে হালকা মেকআপ করে নিয়ে আয়নায় নিজেকে দেখতে দেখতে ফারজানা বেগমের উদ্দেশ্যে বলে উঠলো,

আম্মু আমাকে কেমন লাগছে?

ফারজানা বেগম ফারিসতার থুতনিতে হাত রেখে বলল, মা শা আল্লাহ কারো নজর না লাগুক। আমার রাজকন্যা সবসময় সুন্দর।

ফারজানা বেগমের কথায় ফারিসতা খুশিতে গদোগদো হয়ে বলল, চলো এবার আদরিবা বার বার ফোন করছে আর রাশফিয়াও প্রায় এসে পড়েছে এ বলে ফারজানা বেগমকে নিয়ে ছাঁদের চলে গেলো। বিশাল ছাঁদ জুড়ে রঙবেরঙের আলোয় ঝকমকম করছে। ফারিসতা পুরো ছাঁদে চোখ বুলাতে আচমকা ওর ঠিক বা পাশে চোখ যেতে স্তব্ধ হয়ে গেলো। চোখে ভুল দেখছে ভেবে ফারিসতা বার কয়েক চোখের পাতা ঝাপটে সামনে তাকালো। না এবারও একি দেখছে সেটা ক্লিয়ার হতে হতভম্ব হয়ে সেদিকে তাকিয়ে রইলো ফারিসতা। বিষ্ময়ে হতভাগ হয়ে ফারিসতা বাম পাশে ওর থেকে কয়েক কদম দূরে তাজ আর আরফির দিকে তাকিয়ে রইলো।

আদরিবার বার্থডে কেকের পার্সেল এসে পড়েছে ফোন পেয়ে আরফি তাজের উদ্দেশ্যে বলল, তুই এখানে থাক আমি পার্সেল আনার ব্যবস্থা করছি এ বলে ছাঁদের দরজার কাছে এসে ফারিসতাকে দেখে ভূত দেখার মতো চমকে উঠে অস্ফুট স্বরে আরিফ বলে উঠলো তুৃমি…?

ফারিসতা অবাকতা কাটিয়ে ভাবলো এদের যেই পাওয়ার গুন্ডামী করতে এই জায়গায় ও ছাড়লো না ভাবতে ফারিসতা খ্যাক করে বলে উঠলো তা আপনাকে বলবো কেনো?

ফারিসতার খ্যাক করে ওঠায় আরফি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। আরফি আশপাশের তাকিয়ে দেখলো কেউ দেখেছে কিনা৷ না কেউ দেখেনি ভাবতে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ফারিসতাকে কিছু বলতে যাবে তখন ফোন বেজে ওঠায় আরফি আর কথা না বাড়িয়ে নিচে চলে গেলো।

ফারিসতা আরফির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে মুখ ভেঙচি কেটে সামনে এগোতে যাবে তখন বাম পাশ থেকে কানে ভেসে আসলো….

এই মেয়ে….

ফারিসতা ডাক অনুস্মরণ করে বাম পাশে তাকাতে তাজকে দেখে ভ্রু কুঁচকে গেলো। ওতো আজ কিছু করেনি তাহলে ওকে কেনো ডাকছে? এখানে ওর মা আছে এখন ভুলেও এই লোকের আশেপাশে যাওয়া যাবে না তাহলে দেখা যাবে রাগের মাথায় এর সাথে একটা গন্ডগোল বাজিয়ে ফেলবে তখন মায়ের হাত থেকে কেউ বাঁচাতে পারবে না। জীবনে এতো এতো স্বপ্ন নিয়ে মাকে নিয়ে ফের ঢাকা পারি জমিয়েছে। এই স্বপ্ন ভেঙে ও কিছুতেই চায় না ঢাকা ছেড়ে আবার চলে যেতে তাই ফারিসতা তাজকে ইগনোর করে সামনে পা বাড়াতে যাবে তখন তাজ ধমকে বলে উঠলো,

এই মেয়ে এক পাও নড়বে না যেখানে দাঁড়িয়ে আছো সেখানে থাকো এ বলে তাজ নিজেই ফারিসতার কাছে এগিয়ে আসতে লাগলো।

তাজকে নিজের দিকে আগাতে দেখে ফারিসতা আঁতকে উঠলো। ভয়ার্ত চোখে ফারিসতা ছাঁদে চোখ বুলালো ফারজানা বেগম কোথায় আছে দেখার জন্য তখন দেখলো বেশ অনেকখানি দূরে বসে ওর মা আর আমেনা বেগম গল্প করছে তা দেখে ফারিসতা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেও কোনো রিক্স নিতে চায় না তাই তাজের কথা অমান্য করে তড়িঘড়ি করে ওখান থেকে চলে যেতে নিবে তার আগে তাজ এসে ওর সামনে দাঁড়ালো।

হঠাৎ তাজকে সামনে দাঁড়াতে দেখে ঢোক গিললো ফারিসতা। এই লোকের যেই বাজখাঁই গলা সেই বাজখাঁই গলায় একটা ধমক দিলে ছাঁদে উপস্থিত থাকা সবার চোখ ওদের কাছে এসে পড়বে। এই বজ্জাত লোকের কথা না শুনে চলে যেতে নেওয়ার জন্য যে এখন বাজখাঁই গলায় একটা ধমক খাবে ভাবতে ফারিসতা ঢোক গিলে বার বার আরো চোখে ফারজানা বেগমকে পর্যবেক্ষণ করছে যেনো তার চোখ এদিকে না আসে।

ফারিসতাকে অবাক করে দিয়ে তাজ ধমক না দিয়ে দাঁতে দাঁত চেপে বলে উঠলো, এই মেয়ে তোমার সাহস হলো কি করে আমি দাঁড়াতে বলার পর ও চলে যেতে উদ্যত হতে?

তাজের চিবানো কথায় ফারিসতা ঢোক গিলো আমতা আমতা করে বলল,

দ..দেখুন এখানে অনেক মানুষ আছে সিনক্রিয়েট করবেন না।

কোনো কিছু পরোয়া না করা মেয়েটার আজ এমন ঘাবড়ানো মুখশ্রী দেখে অবাক হলো তাজ কিন্তু সেটা বুঝতে না দিয়ে ভ্রু বাকিয়ে বলল,

মানুষের ভয় দেখাচ্ছো তাজ চৌধুরীকে?

কথার পৃষ্ঠে কথায় তর্ক বাড়ে তাই ফারিসতা আপাতত এখানেই তর্কের সমাপ্তি টানতে হঠাৎ চোখ তুলে কোমরে হাত দিয়ে তাজের দিকে তাকিয়ে বলল দাঁড়াতে বলেছেন কেনো?

তাজ ফারিসতার চোখের দিকে তাকিয়ে শান্ত কণ্ঠে বলল,

চোখ নিচে নামাও বলছি।

তাজের এহেন কথায় ফারিসতার এবার রাগ লাগলো। সেই কখন থেকে লোকটা ওকে জ্বালাতন করছে ভাবতে ফারিসতা নাকের পাটা ফুলিয়ে বলে উঠলো,

কি বলতে চান সেটা সরাসরি বলবেন নাকি চলে যাবো?

ফারিসতার কথায় তাজ ফিচলে হেঁসে ফারিসতার চোখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো, পিঠের কাছে কালো বেল্টের কিছু একটা বেরিয়ে আছে।

তাজের কথা শ্রবণ হতে ফারিসতা চোখজোড়া বড় বড় হয়ে গেলো। মুহূর্তে মাঝে মুখের ভাবভঙ্গি বদলে গেলো। সামনে থাকা ব্যাক্তির দিকে নাকের পাটা ফুলিয়ে চোখে চোখ রেখে তাকিয়ে থাকা মেয়েটার চোখজোড়া পলকের মাঝে নিচু হয়ে গেলো। হঠাৎ এক পশলা লজ্জরা আকরে ধরে ফর্সা গাল লাল আভা ধারণ করতে লাগলো। এই জন্যই এই লোক চোখ নিচু করতে বলেছে আর ও ভেবেছে এই লোকের দিকে চোখ তুলে তাকানোর সাহস দেখিয়েছে দেখে ওকে চোখ নামাতে বলেছে তাই ও ইচ্ছে করে তাকিয়ে ছিলো ভাবতে লজ্জায় কান কোন দিয়ে গরম ধোয়া বের হতে লাগলো ফারিসতার। একটা ছেলের মুখে দ্বিধাহীন এমন কথা শুনতে ফারিসতা জমে বরফ হয়ে গেলো। ফারিসতা অনেক কষ্টে নিজেকে একটু সামলে চট করে আঁচল টেনে কাঁধ জড়িয়ে দিক বেদিক ভুলে এক ছুটে সামনে চলে যেতে আচমকা কারো সাথে ধাক্কা খেয়ে পড়ে যেতে নিতে কেউ হাত ধরে ফেলাতে ফারিসতা চোখ তুলে তাকাতে অচেনা একটা মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠলো।

এদিকে সাফওয়ান একটু তাড়া নিয়ে কোথাও যাচ্ছিলো তখন আচমকা কেউ এসে হুট করে বুকের সাথে ধাক্কা খেতে হকচকিয়ে গেলো। যে ধাক্কা খেয়েছে সে পড়ে যাওয়ার আগে হাত আঁকড়ে ধরে সামনে তাকাতে হার্টবিট থমকে গেলো। হাত ধরে রাখা অধিকারী ব্যক্তিকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে পর্যবেক্ষণ করতে হঠাৎ বুকের ভিতর ধুকপুকিয়ে উঠলো। নীল শাড়ি পরিহিত ফর্সা গোলগাল গড়নের মেয়েটাকে দেখে আচমকা সাফওয়ান অন্য কিছু অনুভব করলো। মনে হলো কানের কাছে কেউ ফিসফিস করে বলছে প্রেমে পড়েছিস তুই এই নীল পরীর প্রেমে। কথাটা শ্রবণ হতে চমকে উঠলো সাফওয়ান। বাবা চাচাদের বাধ্য ছেলে হওয়ায় কখনো উড়ে বেড়ানোর সুযোগ হয়ে ওঠেনি। সবসময় পড়ালেখার মাঝে ডুবে থাকতো। কখনো প্রেম করাতো দূরের কথা মেয়েদের পাশ ও ঘেসেনি। পড়ালেখা কমপ্লিট করে জব করার ইচ্ছে থাকলেও বাবা আর চাচার কথায় বাবার বিজনেসে জয়েন হয়েছে। তাইতো পরিবারের সব চেয়ে ভদ্র সন্তানের উপাধিটা এক বাক্যে সবাই ওঁকেই দিয়ে দেয়। কথাগুলো ভেবে সাফওয়ান মনে মনে নিজেকে শাঁসালো, না এমন কিছু করা যাবে না যেটার জন্য পরে পরিবারে সমস্যা হবে এই ভেবে সাফওয়ান নিজেকে নিজে বোঝালো ও এই মেয়ের প্রেমে পড়েনি কিন্তু বেহায়া মন বার বার এই নীল পরীতে আঁটকে যাচ্ছে।

সাফওয়ানের ভাবনার মাঝে ফারিসতা ঝট করে সাফওয়ানের হাতের মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে রাগী চোখে সাফওয়ানের দিকে তাকিয়ে ঝাঁজালো কণ্ঠে বলে উঠলো, কখন থেকে হাত ছাড়তে বলছি শুনেন না? মেয়ে দেখলেই ছোয়ার জন্য জ্বিভ ল্যাক ল্যাক করে? যতসব ফাউল ছেলে এ বলে হনহনিয়ে ফারিসতা সেখান থেকে চলে গেলো।

ফারিসতার যাওয়ার দিকে হা করে তাকিয়ে রইলো সাফওয়ান। ও ফাউল ছেলে? মেয়েদের দেখলে ছোয়ার জন্য ওর জ্বিভ ল্যাক ল্যাক করে? কথাগুলো ভাবতে সাফওয়ান যেনো আকাশ থেকে পড়লো। কখনো কোনো মেয়ের পাশ ঘেঁসেনি আর এই মেয়ে ওকে এইসব উপাধি দিয়ে গেলো যেনো বিশ্বাস হচ্ছে না সাফওয়ানের।

****
আরফি তড়িঘড়ি করে লিফট থেকে বের হতে সজোরে কারো সাথে ধাক্কা খেলো। ধাক্কা খাওয়া ব্যক্তি আকস্মিক ধাক্কা সামলাতে না পেড়ে ঠাস করে নিচে পড়ে গিয়ে অস্ফুট স্বরে মুখ থেকে বেরিয়ে আসলো ও মাগো আমার কোমড়টা গেলো।

আকস্মিক স্বরে আরফি নিচে তাকাতে দ্বিতীয় বারের মতো ভূত দেখার মতো চমকে উঠলো। ফারিসতার সাথে দেখা সেই মেয়েটাকে শাড়ি পড়ে এখানে দেখে সত্যি চমকে গেলো। আসলে হচ্ছে কি কিছুই মাথায় ঢুকছে না আরফির। প্রথমে ফারিসতাকে দেখলো এরপর এই মেয়ে। এই দুজন ওদের বাসায় কি করে আসলো ভেবে পেলো না আরফি। আরফি আর কিছু ভেবে না পেয়ে তড়িঘড়ি করে রাশফিয়ার উদ্দেশ্যে বলে উঠলো, সরি সরি আমি আসলে খেয়াল করিনি।

হঠাৎ কেমন পরিচিত পরিচিত একটা কণ্ঠস্বর শুনে রাশফিয়া চট করে চোখ তুলে তাকাতে এক ঝটকা খেলো। ব্যথা ভুলে একরাশ বিস্ময় দিয়ে আরফির দিকে তাকিয়ে বলে উঠলো আপনি….?

এ প্রশ্নের উত্তরে আরফি কি বলবে ভেবে পেলো না। আরফি অপ্রস্তুত হেঁসে শুধালো জি আমি। উঠতে পাড়বে নাকি সাহায্য করবো?

রাশফিয়া কয়েক পলক বিস্মিত হয়ে আরফির দিকে তাকিয়ে থেকে বিস্ময় কাটিয়ে ছোট করে বলল, লাগবে না উঠতে পারবো এ বলে উঠতে নিতে অনুভব করলো কোমড়ে বেশ ভালোই লেগেছে। কয়েকবার চেষ্টা করেও উঠতে সক্ষম হলো না তখন খেয়াল করলো আরফি এক হাত ওর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল, হাত ধরো।

হাত ধরো কথাটা কর্ণগোচর হতে বুকের ভিতর ধক করে উঠলো রাশফিয়ার। রাশফিয়া কাঁপা কাঁপা চোখের কয়েক পলক ফেলে কিছু বলতে যাবে তার আগে আরফি তাড়া দিয়ে ইশারায় হাত ধরতে বলল।

আরফির ইশারায় রাশফিয়া কাঁপা কাঁপা হাতে আরফির হাতের মুঠোয় হাত রাখতে পুরো শরীর মৃদু কেঁপে উঠলো। সেই কম্পন অনুভব করলো আরফিও। সামান্য হাত ধরায় রাশফিয়ার এমন কেঁপে ওঠায় মনে মনে হাসলো আরফি।

আরফির সাহায্যে রাশফিয়া সোজা হয়ে দাঁড়াতে তড়িঘড়ি করে আরফির হাতের মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে আমতা আমতা করে বলল, ধন্যবাদ।

রাশফিয়ার দেওয়া ধন্যবাদে আরফির মুখ হা হয়ে গেলো৷ যেখানে ওর জন্য এই মেয়ে পড়ে গিয়েছে সেখানে একটু উঠতে সাহায্য করাতে এই মেয়ে ধন্যবাদ দিচ্ছে। এই মেয়ের জায়গায় ফারিসতা থাকলে ইতিমধ্যে ছোটখাটো এটা যুদ্ধ বেজে যেতো ভাবতে আরফি ঢোক গিলে রাশফিয়ার দিকে তাকিয়ে বলল,

আমার জন্য পড়ে গেলে আর আমাকেই ধন্যবাদ দিচ্ছো? তোমার জায়গায় ফারিসতা থাকলে এতক্ষণ তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধে লাগিয়ে দিতো।

আরফির কথায় রাশফিয়া স্মিত হেঁসে বলল, ও একটু রাগী হুটহাট মাথা গরম হয়ে যায়।

তাতো এই কয়দিন দেখেই বুঝতে পেরেছি। তা তোমরা কি আদরিবার ফ্রেন্ড? ফারিসতা আর রাশফিয়ার শাড়ি পড়া লুক দেখে বুঝতে পারলো ওদের অনুষ্ঠানে ওরা এসেছে। বার্থডে পার্টিতে আত্মীয়স্বজন আপনজন ছাড়া অন্য কাউকে ইনভাইট করা হয়নি। ফারিসতা আর রাশফিয়াকে ওদের কোনো আত্নীয় হিসেবে দেখেছে কিনা বলে মনে হলো না আরফির তাই বুঝে নিলো হয়তোবা আদরিবার ফ্রেন্ড হবে।

আরফির প্রশ্ন রাশফিয়া সম্মতি দিয়ে অবাক হয়ে বলল, আপনি আদরিবাকে চিনেন?

রাশফিয়ার বোকা প্রশ্নে আরফি কিছুটা শব্দ করে হেঁসে বলে উঠলো সি ইজ মাই সিস্টার।

আরফির এবারের কথা শুনে রাশফিয়া চোখ গোল গোল করে কিছুটা জোরে বলে উঠলো তার মানে ফারিসতারা আপনাদের বাসায় উঠেছে?

রাশফিয়ার কথার মানে না বুঝে আরফি ভ্রু কুঁচকে বলল, মানে?

রাশফিয়া অবাক হয়ে শুধালো ফারিসতার আপনাদের বাসায় সেকেন্ড ফ্লোরে উঠেছে জানেন না?

রাশফিয়ার এবারের কথায় আকাশ ভেঙে পড়লো যেনো আরফির মাথায়। ওই ডেঞ্জারাস মেয়ে ওদের বাসায় উঠেছে ভাবতে আরফি ঢোক গিললো।

যাই তাহলে…

রাশফিয়ার কথায় আরফি ভাবনা থেকে বেরিয়ে আচ্ছা বলে পিছু ঘুরে চলে যেতে নিবে তখন কিছু একটা মনে বলে উঠলো এক মিনিট।

রাশফিয়া লিফটে উঠতে উদ্যত হতে আরফির কথায় পা থামিয়ে দিয়ে পিছু ঘুরতে আরফি স্মিত হেঁসে বলল,

নাম কি তোমার?

হঠাৎ আরফির ছোড়া প্রশ্ন কিছুটা অপ্রস্তুত হয়ে পড়লেও নিজেকে সামলে ছোট করে বলল, রাশফিয়া… আপনার?

আরফি তালুকদার…. ওঁকে তাহলে উপরে যাও আদরিবারা উপরে আছে এ বলে আরফি গেট পেরিয়ে বাহিরে চলে গেলো।

রাশফিয়া আরফির যাওয়া দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বলল,
কোনো গুন্ডা, মাস্তানের ব্যবহার এতো ভালোও হয়?

#চলবে?

ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।
হ্যাপি রিডিং….🥰