এরই মাঝে পর্ব-৩৯+৪০

0
111

#এরই_মাঝে
#পর্ব-৩৯

সারারাত এপাশ ওপাশ করতে করতে ভোরের দিকে ঘুমিয়েছিল রিদওয়ান। সাতসকালে কাঁচা ঘুম ভাঙলো ফোনের রিংটোনে। বিরক্ত হয়ে ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে মহুয়ার হাউমাউ কান্নার আওয়াজ পেলো। হতবিহ্বল রিদওয়ানের ঘুম কেটে গেলো। ফোন কে করেছে চোখ দুটো ডলে ভালোমতো দেখলো। স্ক্রিনে মহুয়ার নাম ভাসছে। হতচকিত হয়ে রিদওয়ান আবারও ফোন কানে ঠেকালো-“মহু, কি হয়েছে? কি বলছিস বুঝতে পারছি না। কাঁদছিস কেন?”
মহুয়ার কান্নার বেগ বাড়লো। কান্না জড়ানো কন্ঠে হড়বড়িয়ে অনেক কথা বলে গেলো। রিদওয়ান অর্ধেক কথাই বুঝলো না। সে বিরক্ত হয়ে ধমক দিলো-“মহু, তুই আগে কান্না থামা। একটু পানি খেয়ে স্থির হয়ে বল কি বলতে চাইছিস।”
মহুয়া ঢোক গিললো পরপর। তার শরীর কাঁপছে থরথর। চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে। অনেক কষ্টে নিজেকে শান্ত করে রিদওয়ানকে বললো-“তুমি একটু আপুর হলে এসো।”
পাশ থেকে কে যেন বললো, ওকে মেডিকেলে নিচ্ছি। ম্যাম আসছে লোকজন নিয়ে।
রিদওয়ানের মস্তিষ্ক সজাগ হলো যেন। সে সচকিত হয়ে বললো-“তুই কোথায় মহু? কি হয়েছে?”
মহুয়া কান্না গিলে নিলো-“আপু সুইসাইড এটেম্পট করেছে ভাইয়া।”
রিদওয়ান না বুঝে চেচিয়ে উঠলো-“কে? কার কথা বলছিস?”
মহুয়া এবার আর নিজেকে সামলে নিতে পারলো না। কান্নায় ভেঙে পড়ে বললো-“বড়পা সুইসাইড এটেম্পট করেছে ভাইয়া। রক্তে লেপ্টে আছে, আপু মনেহয় মরে গেছে ভাইয়া।”
রিদওয়ান অবিশ্বাস্য কন্ঠে ধমকে উঠলো-“কি বাজে বকছিস? শায়লা কেন এমন করবে?”
মহুয়া ঝরঝর করে কেঁদে দিলো-“মা আমাকে মাঝরাতে ফোন দিয়ে আপুর কাছে আসতে বলেছিস। আমি এখন কি বলবো মাকে?”
রিদওয়ানকে পাগল পাগল লাগলো নিজেকে। শায়লা কেন এমন করবে? শায়লাকে ভালো রাখতেই সে শায়লার থেকে দূরে থাকে তবুও কেন শায়লা এমন কিছু করবে? তাহলে কি সেঁজুতির কথা শুনেই এমন কিছু করলো? রিদওয়ানের শরীর অসার হয়ে এলো। মহুয়া ডাকল-“ভাইয়া, তুমি কি আসবে না? আমি কি করবো বুঝতে পারছি না। বাড়িতে কি বলবো?”
রিদওয়ান কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বললো-“আমি এখনি আসছি।”
ফোন কেটে দিয়ে ঘোরের মধ্যে কাপড় পড়লো রিদওয়ান। ওয়ালেট আর মোবাইল পকেটে পুরে বাইরে এলো। হন্তদন্ত হয়ে বেরুবে এমন সময় জাকিয়া ডাকলো-“রিদু, এতো সকালে কোথায় যাচ্ছিস?”
রিদওয়ান যেন শুনেও শুনলো না। সে দৌড়ে রাস্তায় নামলো।

*****

মেডেকেলের ইমার্জেন্সিতে পৌঁছে রিদওয়ান দেখলো পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে। রিদওয়ানের হাত পা কাঁপছে। শায়লা কি সত্যি সত্যি… মাথা ঘুরে উঠলো রিদওয়ানের। দেয়ালে ঠেস দিয়ে নিজেকে বাঁচালো। মহুয়া তাকে দেখে এগিয়ে এলো। ছলছল নয়নে তাকিয়ে থেকে বললো-“বড়পাকে অপারেশন থিয়েটারে নিয়েছে।”
রিদওয়ান মহুয়ার চোখে চোখ রাখলো-“আমি দেখছি।”
রিদওয়ান সেদিকে পা বাড়াতেই পুলিশ একজন এসআই এগিয়ে এলো-“এক্সকিউজ মি, আপনি ভিকটিমের স্বামী তো? কিছু জিজ্ঞাসা ছিলো আমাদের।”
রিদওয়ান মাথা দুলায়-“আমি একজন বিসিএস ডাক্তার। এই মেডিকেল থেকেই পাশ করেছি। আপাতত আমার ওয়াইফের কন্ডিশন জানতে ইচ্ছুক। দেখে এসে আপনাদের সাথে কথা বলছি।”
রিদওয়ানকে জহুরি নজরে জরিপ করে লোকটা নিঃশব্দে সামনে থেকে সরে গেল।

অপারেশন থিয়েটারের সিনিয়র সার্জন রিদওয়ানের পরিচিত স্যার। তাকে দেখেই অবাক হলো-“তোমার আত্মীয় হয় নাকি রিদওয়ান?”
শায়লার অবস্থা দেখে ততক্ষণে রিদওয়ানের অবস্থা খারাপ। ফ্যাকাসে মুখের শায়লা অর্ধমৃত অবস্থায় শুয়ে আছে। তার মুখে অক্সিজেন মাস্ক, দুই হাতের একটায় ব্যান্ডেজ চলছে অন্যটা আরেকজন ডাক্তার পরিস্কার করছে গজ দিয়ে। কব্জির কাছটা হা হয়ে আছে। রিদওয়ান ডাক্তার হওয়া সত্বেও দেখে শিউরে উঠলো। সে টলমলো পায়ে এগিয়ে এলো, ফিসফিসিয়ে বললো-“আমার ওয়াইফ হয় স্যার। ওর কন্ডিশন কেমন একটু বলবেন?”
সিনিয়র সার্জন অমিয় বিস্ময়ের চুড়ান্ত অবস্থানে থেকে বললো-“আর ইউ কিডিং?”
“নোপ স্যার। ইটস ট্রু।” রোবটিক গলায় উত্তর দিলো রিদওয়ান। অমিয় ততক্ষণে এক হাতের ব্যান্ডেজ শেষ করে অন্যটার স্টিচিং ধরেছে। রিদওয়ানের অবস্থা বিবেচনা করে একজন নার্সকে ডাকলো-“ওকে একটা চেয়ার দাও। একটু পানিও দিও। হি ইজ ইন শক।”
“আম ওকে স্যার। ও কেমন আছে?”
“ওয়েল, সত্যি বলতে খুব ভালো না আবার একদম খারাপও না। ভাগ্যিস রক্তনালিতে সরাসরি আঘাত পড়েনি। তবে রগ বা টেনডেন যেটাকে বলি আমরা সেটা কেটেছে বেশ অনেকগুলো। মাংসপেশি কতখানি ক্ষতিগ্রস্থ হবে তা ভবিষ্যতে মানে ক্ষত শুকানোর পর বোঝা যাবে। তবে আশার কথা হলো ছয়ঘন্টার কম সময় বলে রিকভারির চান্স বেশি আছে যদি না ইনফেকশন হয়। আর ওর জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে। বেশ ভালো ব্লাডলস হয়েছ। রেসপন্সও কম পাচ্ছি। দেখা যাক কি হয়।”
রিদওয়ান চুপচাপ শুনলো কথাগুলো। এরমধ্যে একবারও শায়লার থেকে নজর সরায়নি। ও ভাবতেও পারছে না শায়লার মতো শক্ত মেয়ে এমন কিছু করতে পারে। ওকে সুইসাইড করার মতো দূর্বল মনে হয়নি কখনো। কাজ শেষ করে হাত ধুয়ে অমিয় রিদওয়ানের কাছে এসে ওর কাঁধে হাত রাখলো-“ডোন্ট ওরি সি উইল বি ফাইন।”
রিদওয়ান তবুও নজর সরালো না। অমিয় শায়লাকে একবার দেখে জানতে চাইলো-“কেন এমন করলো? অভিমান করেছে তোমার উপর?”
রিদওয়ান যেন নিজেকে বলছে এমন ভাবে ফিসফিস করলো-“অভিমানের মতো সম্পর্ক আমাদের মধ্যে ছিলো না স্যার। কেন এমন করলো বুঝতে পারছি না। ও এতো দূর্বল মনের নয়।”
অমিয় কিছুক্ষন রিদওয়ানের দিকে তাকিয়ে থেকে হাসলো-“খুব ভালোবাসো মনেহচ্ছে?”
রিদওয়ান চোখ সরিয়ে নিয়ে স্যারকে দেখলো তবে উত্তর দিলো না। অমিয় হাসলো-“চলো বাইরে যাই। ওকে আইসিইউতে শিফট করতে হবে। আগামী কিছু ঘন্টা ওর জন্য রিস্কি। জ্ঞান ফিরলে চিন্তা কমবে কিছুটা।”
রিদওয়ান বেরিয়ে এলো। পকেটে ফোনটা অনবরত ভাইব্রেট করে চলেছে। বের করে বাবার নাম্বার দেখে ধরলো-“বাবা, তুমি একটু মেডিকেলে আসবে?”
ওয়াহেদ উদ্বিগ্ন গলায় জানতে চাইলো-“হাসপাতালে কেন? কার কি হয়েছে রিদওয়ান?”
রিদওয়ান ক্লান্ত গলায় বললো-“তুমি প্লিজ তাড়াতাড়ি এসো। এখানে পুলিশ আছে তাদের হ্যান্ডেল করার একটা ব্যাপার আছে। আমার মাথা কাজ করছে না।”
ওয়াহেদ হতবুদ্ধি হয়ে বললো-“পুলিশ! রিদওয়ান তুমি কি বিপদে পড়েছে তাড়াতাড়ি বলো আমাকে।”
রিদওয়ান অধৈর্য্য গলায় বললো-“প্লিজ বাবা, প্রশ্ন না করে তাড়াতাড়ি এসো এখানে। আমরা মেডিকেলের ইমারজেন্সিতে আছি।”
বাবাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে ফোন কেটে দিলো রিদওয়ান। বাইরে আসতেই মহুয়া ছুটে এলো-“আপু কেমন আছে ভাইয়া? ও বাঁচবে তো?”
এমন অবস্থাতেও রিদওয়ান হেসে দিলো। ওর হাসিটা অদ্ভুত দেখালো। দু’টো উদ্ভ্রান্ত চোখ নিয়ে মহুয়াকে দেখলো-“তুই না ডাক্তারি পড়ছিস মহু? এমন উজবুকের মতো কথা বলছিস কেন? মরে যাওয়া কি এতোই সহজ? আর ও মরতে চাইলে ওকে মরতে দেব কেন? ও কেন এমন করলো এই প্রশ্নের জবাব না দিয়ে ওকে মরতে দেব না আমি। কিছুতেই দেব না। তুই ভাবতে পারিস, এই ওর জন্য আমি নিজেকে দূরে সরিয়ে নিচ্ছিলাম। তবুও ওর শান্তি হলো না। তোর বোন কি চায় আসলে? মহু, বলতো ও কি চায় আমার কাছ থেকে?”
মহুয়া মিনমিন করলো-“তুমি দূরে চলে যাচ্ছ এটা মনেহয় সহ্য হয়নি ওর। জানোই তো অনেক চাপা স্বভাবের। মনে কি চলছে কখনোই মুখ ফুটে কিছু বলবে না।”
রিদওয়ান এই প্রথমবারের মতো কুৎসিত একটা গালি দিলো-“ওর চাপা স্বভাবের নিকুচি করি আমি। আমার জীবনটাকে খেলো বানিয়ে রেখে দিলো। ওর জন্য যা করতে চাই তাতেই ওর প্রবলেম।”
রিদওয়ানের মুখের পেশি বারবার সংকোচন প্রসারণ হচ্ছে। মহুয়া বুঝলো রিদওয়ান নিজের রাগ কন্ট্রোলের চেষ্টা করছে। সে ওকে শান্ত করার চেষ্টা করলো-“রাগ করো না ভাইয়া। তুমি রাগ করলে ও যাবে কোথায়? প্লিজ বোকাটার উপর রাগ রেখো না।”
“রাগ! রাগের ব্যাপারই না মহু। এই যে দেখ পুলিশ এসেছে। কতো প্রশ্ন উত্তর হবে বুঝতে পারছিস? আমাকে সন্দেহ করছে ওরা। আমি বউকে অত্যাচার করি এটাই ভাবছে। অথচ বউয়ের সাথে আমার দেখা নেই দুইবছর ধরে। হা হা হা।”
রিদওয়ানকে অপ্রকৃতস্ত লাগে। হাসতে হাসতেই মাথার চুল টেনে ধরলো সে। পুলিশের লোকটা এগিয়ে এলো রিদওয়ানের কাছে-“এখন কি কথা বলতে পারি আপনার সাথে?”
রিদওয়ান মাথা তুলে দেখলো লোকটাকে। নেমপ্লেটে নামটা পড়লো, নাইম। রিদওয়ান নাইম নামের লোকটার মুখপানে চেয়ে বললো-“নাইম সাহেব এখানেই বসুন। কি জানতে চান বলুন।”
“আপনার ওয়াইফ মানে ভিকটিম কেন এমন কিছু করার চেষ্টা করলো? কোন প্রবলেম ছিলো আপনাদের মধ্যে?”
রিদওয়ানকে অসহায় দেখালো। সে মাথা নেড়ে বললো-“প্রবলেম? ওয়েল ওর সাথে আমার সরাসরি দেখা হয়নি দু’বছরের বেশি। শুনতে অদ্ভুত শোনালেও এটাই সত্যি। দেখা না হলে কথা না হলে প্রবলেম হবে কিভাবে বলুন তো?”
নাইম ছেলেটার চেহারায় কোন ভাবান্তর হলো না। স্বাভাবিক মানুষের মতো জানতে চাইলো-“এটা কিভাবে সম্ভব? সেপারেশনে ছিলেন আপনারা? কাছাকাছি থেকে এই দূরত্ব অসম্ভব।”
“সেপারেশন!”
অবাক হয়ে তাকালো নাইমের দিকে। মৃদুস্বরে বললো-“না ভাই সেপারেশন টেপারেশন কিছু না। আমি ইন্টার্নি, বিসিএস প্রিপারেশন, আইইএলটিএস এসব নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। তাছাড়া ওর নিজেরও একটু সময় দরকার ছিলো। ওর চাওয়া পূরণ করা সাথে আমিও ভেবেছিলাম আরেকটু গুছিয়ে নেই নিজেকে তারপর সংসার শুরু করবো।”
“শুনলাম আপনার ফ্লাইট আজ। দেশের বাইরে যাওয়ার কথা।”
রিদওয়ান তাকাতেই নাইম মাথা নাড়ে-“যাবেন না। আপাতত একটা সাধারণ ডায়েরি করবো আমরা। তদন্ত করে সন্দেহজনক কিছু না পেলে মুচলেকা নিয়ে ডায়েরি ক্লোজ করবো। সেক্ষেত্রে ভিকটিমের বয়ান পাওয়া জরুরি। সে পর্যন্ত আপনি কোথাও যাবেন না।”
রিদওয়ান উচ্চস্বরে হাসলো-“আমাকে কি আসামি মনেহচ্ছে? পালিয়ে যাব ভাবছেন?”
নাইম জবাব দিলো না। রিদওয়ান বললো-“সমস্যা নেই। এমনিতেও যাব না আমি। আমিও জানতে চাই আমার বউটা কেন এই কাজ করলো। ওর জন্য…”
“রিদওয়ান, কি হয়েছে?”
ওয়াহেদকে দেখে রিদওয়ান যেন মনে জোর পেলো৷ ওয়াহেদের সাথে কল্লেলও আছে। রিদওয়ান উঠে দাঁড়ালো, ভঙ্গুর গলায় বললো-“বাবা, শায়লা সুইসাইড এটেম্পট করেছে।”
ওয়াহেদ অস্ফুটে আর্তনাদ করলো-“কি বলছিস? কেন?”
“জানি না। সকালে মহুয়া ফোন দিয়েছিল আমাকে। ছুটে এসে দেখি এই অবস্থা। বুঝতে পারছি না ও কেন এমন করলো।”
ওয়াহেদ আর কল্লেল দৃষ্টি বিনিময় করলো। ওয়াহেদ এগিয়ে এসে ছেলেকে জড়িয়ে ধরলো-“এখন কি অবস্থা ওর? কথা বলেছিস ডাক্তারের সাথে?”
“হুমমম। জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে বলছে। ইনফেকশন না হলে এ যাত্রায় টিকে যাবে।”
“এখন কি করবি? ওদের বাড়িতে খবর দিয়েছিস?”
“নাহ। কোন মুখে খবর দেব? দাদু আর মা শুনলে কি হবে ভেবেছ?”
ওয়াহেদ ছেলেকে ভরসা দিলো-“আচ্ছা তুই ভাবিস না আমি দেখছি। তৈয়ব চাচার সাথে কথা বলি। এমন একটা ঘটনা জানাতে তো হবেই।”
ওয়াহেদ এগিয়ে যেতেই রিদওয়ান ডাকলো-“বাবা, ওনাদের বিশ্ববিদ্যালয় অথরিটি ডেকেছিল। যেহেতু আত্মহত্যার চেষ্টা করেছে শায়লা সেজন্য। তুমি একটু কথা বলে দেখো ওনাদের সাথে।”
ওয়াহেদ আর কল্লেল নাইমকে ডেকে নিলো। রিদওয়ান পায়ের জুতো খুলে হাঁটু ভাজ করে বসলো। মহুয়া চুপচাপ বসে দেখলো রিদওয়ানকে। ছেলেটাকে ভীষণ অসহায় লাগছে। মহুয়ার নিজেকে ভীষণ অপরাধী মনে হলো। রিদওয়ানের জন্য কষ্ট লাগছে তার। এই মানুষটা সম্পূর্ণ বিনা দোষে সাজা ভোগ করছে। দোষ করেছিল তার বাবা, তাদের জীবনকে পাল্টে দিলো তার বাবা আর শাস্তি পাচ্ছে কিনা রিদওয়ান নামক এই সহজ ছেলেটা। বড়পাটা এমন গাধা হলো কবে থেকে?

যে শায়লা তাদেরকে সবসময় স্ট্রং হওয়ার পরামর্শ দিতো। জীবনকে যুদ্ধের ময়দান ভেবে মোকাবিলা করার সাহস দিত সে আজ নিজেই নিজের জীবন নিতে চাইলো। কেন করলি আপা? কেন এমন করলি? কতবার তোকে বলেছি, রিদওয়ান ভাইয়াকে ভালোবাসিস তাকে মেনে নে কিন্তু তুই তো তুই। স্বার্থপর একজন। পালিয়ে বাঁচতে চাইলি জীবনের সব ঝড়ঝাপটা থেকে। একবারও ভাবলি না তোর এমন কাজের কথা মা শুনলে কি হবে? নিজের সবচেয়ে ভালোবাসার মানুষের প্রতারনায় মানুষটা সেই কবে হেরে গেছিল জীবনের কাছে। তুই এমন একটা কাজ করে সেই হেরে যাওয়া মানুষটাকে আরও হারিয়ে দিলি, তার অস্তিত্ব মাটির সাথে মিলিয়ে দিলি। একবার ভাবলি না উল্টো আমাদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলা মানুষটাকে সুযোগ করে দিলি? মায়ের লড়াইটাকে এতো হালকা করে দিলি তার সামনে? এতো বড় লজ্জা নিয়ে মা কিভাবে বাঁচবে বড়পা? মানুষটা যখন মায়ের দিকে আঙুল তুলে বলবে, আমার মেয়েদের তুমি মানুষ করতে পারোনি ঠিকঠাক। মা তখন কি জবাব দেবে বড়পা? আমাদের এতোদিনের কষ্টকে তুই প্রশ্নবিদ্ধ করে ফেললি এভাবে? এ তুই কি করলি বড়পা? মহুয়া দু’হাতে মুখ ঢেকে ডুকরে উঠলো।

চলবে—
©Farhana_য়েস্মিন

#এরই_মাঝে
#পর্ব-৪০

রুবিনা আর তৈয়ব মাওলানা হাসপাতালে পৌছালেন রাত দশটা নাগাত। ওয়াহেদ পুলিশি ঝামেলা মিটিয়ে সারাদিন ছেলের সাথেই ছিলো। তৈয়ব মাওলানাকে দেখে এগিয়ে গিয়ে ধরলো ওয়াহেদ। বুড়ো মানুষটা দীর্ঘ জার্নিতে ক্লান্ত হয়ে গেছে। তাকে ধরে ওয়াহেদ বুঝলো মানুষটার শরীর কাঁপছে থরথর। ওয়াহেদ তাকে দু’হাতে ধরলো-“চাচা, আপনার কি শরীর খারাপ লাগছে?”
তৈয়ব মাওলানা নিরব। ওয়াহেদ গলা উঁচিয়ে ডাকলো-“রিদওয়ান এদিকে এসো দেখতো একটু। চাচাজানের শরীর খারাপ মনেহয়।”
রিদওয়ান ক্লান্ত শরীর নিয়ে উঠলো। ওয়াহেদ তৈয়ব মাওলানাকে বসিয়েছে চেয়ারে। মানুষটা মৃদুস্বরে পানি চাইলো। রিদওয়ান বোতল এগিয়ে দিলো। দুই ঢোক পানি খেয়ে চোখ বুজলো তৈয়ব মাওলানা। তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘামের আভাস।
রিদওয়ান হাত বাড়িয়ে পালস চেক করলো। পালস রেট হাই দেখে তার ভ্রু কোঁচকাল। তৈয়ব মাওলানা তখনই চোখ মেলে রিদওয়ানের দিকে তাকালো-“আমার শায়লা কেমন আছে দাদাভাই?”
রিদওয়ান চমকায়, থমকায়। শরমে অধোবদন হলো তার। দুই দাদু কতো আস্থা নিয়ে তার সাথে শায়লার বিয়ে দিয়েছিল অথচ সে সেই আস্থার মান রাখলো না। দায়িত্ব পালনে অক্ষম প্রমান হলো। রিদওয়ানের হৃদয়ের ভেতরটা দুমড়ে মুচড়ে যায়। অনেক কষ্টে নিজেকে সামলে নিয়ে জলদগম্ভীর স্বরে সে বললো-“জ্ঞান ফেরেনি তবে ভালো হয়ে যাবে।”
তৈয়ব মাওলানা নিরব হয়ে আবার চোখ বুজলো। পাশে রুবিনা থমথমে মুখে দাঁড়িয়ে। আশা পর থেকে একটাবারও রিদওয়ানের দিকে তাকায়নি কথা তো দূর। এখন মুখ খুলে বললো-“শায়লাকে দেখবো আমি। কোথায় আছে ও?”
রিদওয়ান মানা করতে যেয়ে থেমে গেলো। সে ডাকলো-“আসুন আমার সাথে।”
আইসিইউ এর সামনে গিয়ে ডিউটি ডাক্তারের সাথে কথা বলে রুবিনাকে ভেতরে ঢুকিয়ে দিলো। নিজে আবার এসে বসলো চেয়ারে। অস্থির নজর ঘুরে বেড়াচ্ছে চারপাশে। উপরে উপরে রিদওয়ানকে শান্ত দেখালেও ওর ভেতরটা ভাঙচুর হচ্ছে প্রতি সেকেন্ডে। মুখে কিছু না বললেও মনে মনে সারাক্ষণ নিজের ভুলটা ভেবে চলেছে। এবার কোথায় ভুল হলো তার? তার ইউকে যাওয়ার খবরটা নিজ মুখে শায়লা জানানো উচিত ছিলো মনেহয়। একবার ভালোভাবে বিদায় নেওয়া দরকার ছিলো। মেয়েটা হয়তো তার অপেক্ষায় ছিলো। সেজন্য না পারতে শায়লা নিজেই হুট করে কাল তার সাথে দেখা করতে গেছিল। তবে কি শায়লা তাকে চাইতে শুরু করেছিল? দুই বছরের বিরহ কি শায়লাকে তার প্রতি আকৃষ্ট করেছিল? তবে ফিরে গেলো কেন? নাকি সেঁজুতির কথা শুনে অভিমান হয়েছে? রিদওয়ানকে এতোদিন দেখেও কি একফোঁটা বিশ্বাস জন্মেনি মনে? আর সেঁজুতিকে নিয়ে কিছু জানার হলে কেন রিদওয়ানকে সরাসরি প্রশ্ন করলো না? ওর রাগটা কোথায়? ভেবে ভেবে মাথা নষ্ট হওয়ার জোগার হয়েছে।

এতোকিছুর মাঝে আরেকটা প্রশ্ন রিদওয়ানের মনে এসেছে সেটা হলো সেঁজুতির কথাটা শায়লাকে বলেছে কে? শায়লা কি আগেই জেনেছে না গতকাল? জানলেও কিভাবে জেনেছে? এতো পুরনো কেচ্ছা কে বলেছে আর কি উদ্দেশ্যে বলেছে? যেখানে সেঁজুতি একটা ঘৃণ্য অতীত এবং যে অতীত রিদওয়ান শায়লাকে বিয়ের পর পরই নিজের জীবন থেকে ঝেড়ে ফেলেছে সেখানে এই অতীত কেন টেনে আনবে কেউ? রিদওয়ান বেশ বুঝতে পারছে যে বলেছে তার উদ্দেশ্য খুব একটা ভালো না। সে হয়তো তাদের সম্পর্ককে প্রশ্নবিদ্ধ করতেই এমন কাজ করেছে। আকাশ পাতাল ভাবনায় মন আরও বেশি চঞ্চল হলো তার। উঠে দাঁড়িয়ে দেখলো রুবিনা বের হয়েছে কিনা।

পাঁচ মিনিট পরে রুবিনা বেরুলো। তার চোখ দুটো ভেজা ভেজা। নিশ্চয়ই কান্না করেছে শায়লাকে দেখে। আইসিইউ থেকে বেরিয়ে রিদওয়ানকে দেখেও দেখলো না রুবিনা। সোজা হেঁটে চলে গেল উল্টো দিকে। মহুয়া কেবলই এসেছে আবার। মাকে উল্টো দিকে যেতে দেখে ডাকলো-“মা, কখন আসছো? ওইদিকে যাও কেন?
রুবিনা মেয়েকে দেখে ঝাঁজিয়ে উঠলো-“তুই কই গেছিলি শায়লাকে একা ফালায়ে?”
মহুয়া থমকায়, আড়চোখে রিদওয়ানকে দেখলো। রিদওয়ানকে বিচলিত দেখালো। মহুয়া নজর ফিরিয়ে পায়ে পায়ে মায়ের দিকে এগিয়ে গেলো-“সারাদিন ময়লা কাপড় নিয়ে বসে ছিলাম বলে বিকালে হলে গেছিলাম। গোসল করে ফিরে এলাম।”
রুবিনা মুখ খিচিয়ে বললো-“তুই ফোন দেস নাই কেন আমাকে? বলছিলাম না সকালে শায়লার কাছে যায়ে আমাকে ফোন দিবি। মানুষের থেকে খবর পাওয়া লাগে। সকালে ফোন দিলে দুপুরে চলে আসতাম আমার মেয়ের কাছে।”
মহুয়া থতমত খেলো। মা আসলে কি বলতে চাইছে বুঝতে পারছে না। মানুষ বলতে কাকে বোঝাল? ওয়াহেদ আঙ্কেলকে? মহুয়া অবাক হলো মায়ের আচরণে। সে মিনমিন করলো-“ওইসময় আপার যে অবস্থা ছিলো মা তোমাকে ফোন দিলে কি করতা? আপাকে বাঁচানো বেশি জরুরি ছিলো মা তাই রিদওয়ান ভাইকে ফোন দিয়েছি। তাছাড়া পুলিশ আসলো, এটা সেটা জিজ্ঞেস করলো। তুমি কি এসব বুঝতা?”
“বেশি বকবক করিস না। কি শিখিয়েছি তোদের সেটাই ভেবে পাচ্ছি না। তোরা কেউ আমাকে শান্তি দিলি না।”
রুবিনা খেঁকিয়ে উঠলো। মহুয়া অসহায় চোখে মাকে দেখছে। সে বুঝতে পারছে রুবিনা যে কোন সময় ভেঙে পড়বে। মায়ের ভেতরের ভাঙচুর বেশ বুঝতে পারছে সে। মাকে জড়িয়ে ধরলো-“আপা ঠিক হয়ে যাবে মা। তুমি ভেবো না একটুও। একটু শান্ত হও মা।”
“কি ঠিক হয়ে যাবে? আমার শায়লার কষ্ট ঠিক হবে? ওর হাতের দাগগুলো মুছে যাবে? মেয়েটা যে ধাক্কা খেয়েছে সেটা ভুলে যাবে? কতোটা কষ্ট পেলে আমার শায়লা নিজের জীবন নিজে নিতে চায় এটা বুঝতে পারছিস তুই?”
রুবিনা কেঁদে দিলো ঝরঝর করে। কাঁদতে কাঁদতে বকছে-“আমার মেয়েটা একা একা কষ্ট পাচ্ছিল আর আমি তাকে একবারও বুঝিনি। কেন বুঝিনি? আমি না মা? মায়েরা না সব বোঝে? তবে আমি কেন বুঝলাম না?”
রুবিনা মুখে কাপড় চেপে ধরে কান্না নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করলো। বিরবির করলো-“আমার কারণে শায়লা এমন কাজ করলো। আমার মেয়ের কষ্টের জন্য আমি দায়ী, আমি দায়ী।”
মহুয়ার চোখ ভিজে উঠলো। মায়ের কথা শুনে এখন তার নিজেকেও দোষী মনেহচ্ছে। তারা সত্যিই হয়তো শায়লার খেয়াল রাখতে পারেনি। নয়তো শায়লা এমন কিছু করতে পারে সেটা বুঝলোনা কেন? রুবিনা আবারও বিরবির করলো-“নিজের মেয়ের চাইতে পরের ছেলেকে আপন ভাবলাম। তার উপর মেয়ের দায়িত্ব দিয়ে নিশ্চিত হতে চাইলাম কিন্তু সে আমাদের বিশ্বাসের মান রাখতে পারলোনা। শায়লারে, মাকে তুই ক্ষমা করিস।”
রুবিনার কান্না দেখে রিদওয়ান পায়ে পায়ে এগিয়ে এসেছে। সাহস হচ্ছে না কিছু বলার তাই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু এখন যেন নিজেকে সামলে রাখতে পারলোনা-“মা, এমন করে বলবেন না প্লিজ। আমি সত্যিই কখনো শায়লার খারাপ চাইনি। আপনি জানেন সে কথা। প্লিজ আমাকে ভুল বুঝবেন না।”
রুবিনা গর্জে উঠলো-“তুমি আমাকে মা বলে ডেক না রিদওয়ান। তোমার মুখে এই ডাক মানায় না। আমিও আর শুনতে চাই না।”
“এ আপনি কি বললেন মা? আমি কি করেছি? আমার ভুলটা অন্তত বলে দিন?”
রিদওয়ান আর্তনাদ করে উঠলো। রুবিনা লাল চোখে চেয়ে থেকে বললো-“এতোটা আলাভোলা সেজো না রিদওয়ান। তুমি জানো না তোমার দোষ কি?”
রিদওয়ান মাথা নাড়ে-“আমি সত্যিই জানি না মা। প্লিজ বলুন।”
“আমি তোমাকে আমার শায়লার চাইতে বেশি বিশ্বাস করেছিলাম। তাই তো তুমি যা বলেছ তাই বিশ্বাস করেছি মেয়েকে সেভাবেই বলেছি। অথচ সেই তুমি দেশের বাইরে যাবে শায়লাকে না বলে? এটা কোন ধরনের আচার তোমার?”
রিদওয়ান ছটফট করে উঠলো অন্তর্দহনে-“কিন্তু সেকথাও আপনাদের জানিয়েছিলাম মা। আপনারা তখন মেনেছিলেন।”
“কারণ তখনও জানতাম না শায়লা কি চায়। ও নিজে যেচে পড়ে তোমার সাথে দেখা করতে গেছিল। তারপর কোন কারণে দেখা না করে ফিরে এলো। তোমার কি উচিত ছিলো না ওকে একটাবার ফোন দেওয়া? একটাবার বলা যে তুমি চলে যাচ্ছ। ফিরে আসবে দু’বছর পর?”
রিদওয়ান দেওয়ার মতো জবাব পেলো না। আত্মপক্ষ সমর্থনে মিনমিন করলো-“আমি ভেবেছিলাম দেশে ফিরে একবারে সব মিটমাট করে নেব।”
রুবিনা হতাশ কন্ঠে বললো-“তুমি ভেবেছিলে। তুমি কেন সব নিজের মতো ভেবে নেবে রিদওয়ান? জানো, শায়লা তোমার ফোনের অপেক্ষায় ছিলো? আমার কাছে ফোন দিয়ে আফসোস করলো, তোমার ভালোবাসা লোকদেখানো সেটাও বললো। তা নয়তো ভালোবাসি ভালোবাসি বলে মুখে ফেনা তুলে ফেলা তুমি কেন দেশ ছাড়বে ওকে না জানিয়ে?”
রিদওয়ান নিজেকে ডিফেন্ড করলো সর্বাত্বকভাবে-“আপনিও এ কথা বললেন মা? সব জানার পরও কিভাবে আমাকেই দোষী বানালেন? আমি কি চেষ্টা করিনি শায়লাকে সুখের জীবন দিতে? যদি বলি ওর জন্য আমি সাফারার তাহলে কেমন হয় বলুন তো? ওর ছোট বেলায় পাওয়া বাবার আঘাতের দায় আমাকেই চুকাতে হলো কেন মা? এই যে অবিশ্বাস ওর মধ্যে এটা তো আমার তৈরি না তবুও আমি ওর সব অন্যায় কথা আর ব্যবহার সয়েছি। আমার কি এসব পাওনা? আমিও তো অন্য কিছু চাইতে পারতাম?”
রুবিনার মুখের পেশীগুলো কঠোর হলো-“এসব বললে সত্য মিথ্যা হয়ে যাবে না রিদওয়ান। ও তোমার সাথে দেখা করতে গেছিল তা জানার ওরও তুমি ওকে ফোন দাওনি দেখা করা দূর। এটা কি তোমার দোষ নয়?”
রিদওয়ানের চোখ দুটো লাল হলো-“ফোন দেইনি কারণ আমি ভয় পেতাম যে আমার ফোনে ও কষ্ট না পায়। একটাবার যদি টের পেতাম ও এমন কিছু করবে তাহলে আমি ছুটে চলে আসতাম ওর কাছে। কিন্তু ওর তো আমার নৈকট্য পছন্দ ছিলো না।”
“উহু, আরও ভুল আছে রিদওয়ান। তুমি সেঁজুতির কথা লুকিয়েছ ওর কাছে। কেন?”
“কষ্টের স্মৃতি কেউ মনে করতে চায় মা? আপনি চাইবেন? কেন এভাবে দায় দেখিয়ে আমাকে কষ্ট দিচ্ছেন যেখানে আমার প্রতিটা কাজ আপনাদের জানিয়ে করা?”
রিদওয়ানের চোখে তীব্র বেদনার ছাপ। রুবিনা যেন তা দেখেও দেখলো না। সে অটল গলায় বললো-“আমার মেয়েটা তোমার বাড়ি থেকে কাঁদতে কাঁদতে ফিরেছে। তুমি জেনেও চুপ করে ছিলো ওর সাথে যোগাযোগ করোনি। এখানে তাহলে কার দোষ রিদওয়ান? নিজের ভুল মানতে শেখো। তোমার ছোট একটা ভুল শায়লাকে মৃত্যু দুয়ারে ঠেলে দিয়েছে। আজ মনেহচ্ছে ওকে জোর করে তোমার সাথে বিয়ে দিয়ে সত্যি ভুল করেছি আমরা।”
“এটা কি বললেন মা!” রিদওয়ানের আহত কন্ঠে হৃদয় বিদীর্ণ হওয়ায় আঁচ পাওয়া গেলো। সে ভাঙাচোরা মানুষের মতো হেলে পড়লো-“আজ ভীষণ কষ্ট পেলাম মা। আপনাকে আমি নিজের মায়ের মতোই সন্মানের আসন দিয়েছি। হয়তো আমিই ব্যর্থ, আমারই কোন ভুল আছে যে এতোদিনেও আপনাদের আপন করতে পারিনি। আপনাদের ছেলে হয়ে উঠতে পারিনি। আমাকে মাফ করে দিন মা। আমি আমার দায় মেনে নিলাম। সব ভুল আমারই।”
বলে আর দাঁড়ালো না সে। ধীর পায়ে বেড়িয়ে এলো হাসপাতাল থেকে। রাস্তার মৃদু আলোয় ব্যর্থ মানুষের মতো হেলেদুলে হেঁটে যেতে দেখা গেলো তাকে।

চলবে—
©Farhana_Yesmin