এরই মাঝে পর্ব-৪৫+৪৫

0
235

#এরই_মাঝে
#পর্ব-৪৫

“তোমার কথা কিছু বলো। শুধু আমার কথা শুনলে হবে?”
শায়লা হাসলো মিষ্টি করে হাসলো-“আপনাকে কি নামে ডাকবো?”
মাহিমা শায়লার দিকে তাকালো। কলম হাতে বারকয়েক প্যাডের উপর ঠকঠক করলো। কলম রেখে চায়ে চুমুক দিয়ে বললো-“তোমার কি আমার নাম ধরে ডাকতে ইচ্ছে করছে?”
শায়লা প্রথমে অবাক হলো তারপর মাথা দুলিয়ে লাজুক হাসলো-“আপনি বুঝলেন কি করে?”
মাহিনা রহস্যময় হাসলো-“তুমি আমাকে যে নামে ইচ্ছে ডাকতে পারো। বন্ধু বলে কথা।”
শায়লা এবার প্রান খুলে হাসলো। মাহিমা মুগ্ধ হয়ে ওকে দেখছিলো। এই মেয়েটার হাসি কি দারুণ অথচ সে সবসময় নিজেকে খোলসে আবৃত করে রাখে। শায়লা হাসি থামিয়ে মাহিমার দিকে তাকিয়ে বললো-“ইউ নো, জীবনে প্রথমবার কেউ আমাকে বন্ধু বলে স্বীকার করলো।”
মাহিমা অবাক হলো-“তারমানে কি? তোমার কোন বন্ধু নেই? এটা সম্ভব?”
শায়লার হাসি গায়েব হলো-“ঠিক তা না। সেরকম করে কারো সাথে মেশা হয়ে ওঠেনি। কারো খুব ঘনিষ্ঠ হতে পারি না আমি।”
“কেন? তোমার গোপনীয়তা জেনে ফেলার ভয় কাজ করে?”
শায়লা মাথা দুলায়-“আমার ভয় লাগে কেউ আমার সবটা জেনে গেলে আর আমার সাথে মিশবে না। এই ভয়ে নিজেই নিজেকে গুটিয়ে রেখেছি আজীবন।”
মাহিমা মাথা ঝাকালো-“তোমার ধারনা অমুলক নয় শায়লা। আমাদের স্বভাবই এমন। মানুষের দূর্বলতা জেনে গেলে আমরা সেই দূর্বলতায় আঘাত করে মজা পাই। তবে কি জানো এতে একদিকে ভালোই হয়। এমন স্বভাবের মানুষতো কারো আপন হতে পারে না। যারা এমন করে তাদের সহজে চিনে জীবন থেকে বাদ দেওয়া যায়। আলাদা করে খোঁজার কষ্ট করতে হয় না। আচ্ছা বলো তোমার ছেলেবেলা কেমন কেটেছে?”
শায়লা চোখ বুজে ভাবলো কিছুক্ষণ তারপর বললো-“বাবা বিয়ে করার আগ পর্যন্ত খুব ভালো কেটেছে। প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে বাবা বাড়ি আসতো। সেই উপলক্ষে বাড়িতে একটা ঈদ ঈদ আনন্দ আসতো। মা দাদা দাদী আমরা সবাই বাবার জন্য অপেক্ষা করে থাকতাম। শুক্রবার করে বাবা রোগী দেখতেন ফ্রিতে। আমি তখন বাবার কম্পাউন্ডার বনে যেতাম। বাবা আমাকে বললো, তুই হবি আমার যোগ্য উত্তরসূরী। ডাক্তার হতে হবে তোকে। আমিও স্বপ্ন দেখতে শুরু করেছিলাম।”
মাহিমার চোখ ছোট ছোট হলো-“বাবার উপর রাগ করেই তুমি ডাক্তারি পড়োনি? আইথিংক ডাক্তার হলে তুমি ভালো করতে।”
শায়লা হাসলো-“এখন মনে হচ্ছে আমার দ্বারা ডাক্তারি পড়া সম্ভব হতো না। খুব ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম।”
“কেন এমন মনে হলো?”
“আমার ধৈর্য্য দেখেছেন? কোন বিষয় নিজের মনমতো না হলেই আমি উল্টো পাল্টা কাজ করে ফেলি। সেখানে ডাক্তারির মতো ধৈর্য্যের কাজ আমাকে মানায় না।”
“তারপর কি হলো বলো। তোমার বাবার বিয়ে করার কোন বিশেষ কারণ ছিলো? তোমার মা কেমন ছিলেন? স্বামীর প্রতি উদাসীন?”
শায়লার চেহারায় খানিকটা কঠোরতা এলো-“সত্যি বলতে বাবা মায়ের সম্পর্কটা অনেকটা মনিব ভৃত্যের মতো ছিলো। মা সংসার অন্তপ্রান মানুষ। পরিবারের সবাইলে নিয়ে মিলেমিশে থেকেছেন। বাবা এলে বাবার মতো করে চলতে চেয়েছেন। কখনো দেখিনি বাবার মতের বাইরে কিছু করেছেন। তাদের এজগ্যাপ, পড়ালেখার গ্যাপটা হয়তো এখানে বিশেষ ভুমিকা রেখেছে। বাবার একটা আলাদা জীবন ছিলো যে জীবনে আমরা একটা ক্ষুদ্র অংশ হিসেবে থেকে গেছিলাম। এখন যখন দেখি স্বামী স্ত্রী একইসাথে থাকছে, মিলেমিশে সংসার সাজাচ্ছে তখন বুঝতে পারি মায়ের সাথে বাবার আসলে কখনো সংসার করা হয়নি। বাবা হয়তো সেভাবে চানওনি সংসার করতে। চাইলে তিনি আমাদের নিজের সাথে নিয়ে রাখতেন।”
মাহিমা কিছু সময়ের জন্য অন্যমনস্ক হলো তারপর বললো-“তাহলে বাবার প্রতি ঘৃনাটা এলো কেন? এখানে তার দোষ কি? আরেকটা বিয়ে?”
শায়লা করুন হাসি দিলো-“শুরুতে বুঝিনি জানেন। আমার মা অনেক দুঃখী মানুষ ছিলেন। ছোট বেলায় মা বাবার আদর ভালোবাসা পাননি। দাদা দাদী আদর করতেন বলে তাদের মাথায় তুলে রাখেন। মানলাম মা বাবার মতো শিক্ষিত না কিন্তু বাবা চাইলে মাকে নিজের সমপর্যায়ের যোগ্য বানাতে পারতেন। মায়ের সেই সামর্থ্য ছিলো কিন্তু বাবা কখনো তেমন চেষ্টা করেননি। উনি বরং সব দায়িত্ব মায়ের উপর চাপিয়ে দিয়ে নিজে একটা নিশ্চিত সুখের জীবন কাটিয়েছেন। আপনি বিশ্বাস করবেন কিনা জানি না আমার তিন ফুফু তাদের বাচ্চা হওয়া সহ সব ঝামেলা আমার মা সামলেছে। দাদা দাদী তো আছেই। কোনদিন মাকে এসব নিয়ে উচ্চ বাচ্য করতে দেখিনি। বাবা মেহমানের মতো আসতেন দু’দিন থাকতেন তারপর আবার চলে যেতেন। এতো কিছু করার পরও সেই মানুষটা যখন আমার মায়ের জায়গা আরেকজনকে দিয়েছে তাকে আর কি ভালোবাসা যায়?”
থেমে দম নিলো শায়লা তারপর বললো-“আমার মাঝে মাঝে মায়ের উপর খুব রাগ লাগে জানেন। বাবা এতোবড় অন্যায় করলো অথচ আজ পর্যন্ত তাকে বাবাকে নিয়ে কোন আক্ষেপ করতে শুনিনি। না বাবার দোষ বলে না গুন।”
মাহিমা ঠোঁটের কোনে হাসি ফুটলো-“তুমি এখনো বোঝনি বোকা মেয়ে। তোমার মা ভীষণ আত্মমর্যাদা সম্পন্ন মহিলা। উনি তোমার বাবাকে নিজের জীবন থেকে এভাবে বাদ দিয়েছে যেভাবে আমরা গা থেকে ময়লা ঝেড়ে ফেলি। সে মুখে বলে না কিছু কিছু অন্তরে ঘৃনা লালন করে। তার প্রতিবাদ করার ভাষাটা একটু আলাদা।”
শায়লা চমকে উঠলো। নিরব থেকে ভাবলো কিছুসময়। ভেবে দেখলো মাহিমা কথা ভুল না। মা আসলেও এরকমই। কোনদিন স্বজ্ঞ্যনে বাবাকে নিয়ে কোন মন্তব্য করে না, বাবা সম্পর্কিত কোন ব্যাপারে কোন মতামত দেয় না।
“তোমার বাবার স্বভাবের মতো মানুষরা আসলে খুব স্বার্থপর টাইপ হয়। এরা সবার কাছ থেকে নিরবে সুবিধা আদায় করে গা বাঁচিয়ে চলা মানুষ। কিন্তু রিদওয়ানকে তোমার অপছন্দ কেন? শুধু ডাক্তার বলে? নাকি ও তোমার বাবার মতো দায়িত্ব এড়িয়ে চলে?”
শায়লা জবাব খুঁজে পেলো না। রিদওয়ান দায়িত্ব এড়িয়ে চলে এটা বললে মিথ্যে বলা হবে। শায়লা মৃদুস্বরে বললো-“আসলে আমার ইচ্ছে ছিল জীবনে কিছু একটা করার। বিয়ে নিয়ে ভাবার আগেই বিয়ে দিয়ে দিলো দাদাজান। তারউপর সে আবার ডাক্তার। মন থেকে সারা পাচ্ছিলাম না কোন। নারী পুরুষের সম্পর্ক, ভালোবাসা, রোমান্টিকতা এসব নিয়ে ভাবার আগ্রহ ছিলো না। পুরুষ মানুষের প্রতি একটা ঘৃনা জন্মে গেছিলো। তাই রিদওয়ানের প্রতি কোন আকর্ষন তৈরি হচ্ছিল না। ধীরে ধীরে তারই প্রচেষ্টায় যেটুকু হলো সেটাও কর্পুরের মতো উবে যেতে সময় লাগেনি ওনার কিছু আচরণে।”
শায়লার গালে লালচে আভা দেখে মাহিমা মুচকি হাসলো-“সে তোমাকে ফিজিক্যালি এবিউজ করেছে তাই?”
বিস্ময় আর লাজে শায়লা আধমরা হওয়ার জোগার। ফিসফিসিয়ে সুধায়-“আপনি জানলেন কি করে?”
“তোমাকে একটা চমকে ওঠার মতো নিউজ দেই। রিদওয়ান অনেকদিন আমার কাছে থেরাপি নিয়েছে। সেই মেডিকেলে পড়ার শুরুর থেকে। সে শুধু ভালো ছাত্রই না একজন ভালো মানুষও বটে। অনেকদিন ধরে চিনি ওকে। প্রচন্ড দায়িত্বশীল একজন মানুষ রিদওয়ান। আমি বলতে বাধ্য হচ্ছি ইউ আর লাকি শায়লা। পৃথিবীর অন্যতম ভালো একজন পুরুষকে জীবনসঙ্গী হিসেবে পেয়েছ তুমি।”
শায়লা বিস্ময়ে বিমুঢ় হয়ে বললো-“ও আপনার কাছে আসে?”
মাহিমা মাথা নাড়ে, কোমল গলায় বললো-“একটা ব্যাপার কি জানো, কাউকে প্রচন্ড রকম ভালোবেসে ফেললে তাকে শারীরিক ভাবে কাছে চাওয়াটাই স্বাভাবিক। সেখানে তুমি রিদওয়ানের বউ, তোমাকে কাছে টানায় আমি কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছি না। এক দেড় বছর পরে ওর প্রতি তোমার আগ্রহ আসেনি এটা শুনতেও একটু উইয়ার্ড লাগে বুঝলে। তাছাড়া একজন পুরুষের পক্ষে সারাজীবন বউয়ের থেকে দূরে থাকা সম্ভব না বোকা মেয়ে। আরেকটা ব্যাপার কি জানো, তোমার সাথে জোরাজোরি করে সে খুব বেশি মর্মাহত ছিলো। নিজেকে নিয়ে গিল্টি ফিলিংটা ওকে শেষ করে দিচ্ছিল তিলেতিলে। অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে ওকে ঠিক রাস্তায় এনেছি।”
শায়লা চোখ গোল করে বললো-“ও আপনাকে বলেছিল এসব?”
মাহিমা হেসে দিলো-“বলতে চায়নি মন থেকে কথা টেনে বের করতে হয়েছে। তুমি কি জানো এই যে তোমার এডুকেশনাল পেজটা তরতর করে বেড়েছে এতে ওর কতটুকু অবদান? ও সবসময় বলে, তুমি নিজের পায়ে যত দ্রুত দাঁড়াবে তত দ্রুত ওর জীবনে ফিরবে। আমার লাইফ পার্টনারের পরে রিদওয়ানকে দ্বিতীয় পুরুষ হিসেবে পেলাম যে নিজের পার্টনারের ব্যাপারে যত্নশীল। ও একটা হীরকখণ্ড শায়লা। ওকে হেলায় হারিয়ে ফেলো না। সময় থাকতে আগলে নাও বন্ধু। আমি হলফ করে বলতে পারি, তুমি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুখী মানুষ হবে।”

*****

কাল থেকে শায়লা ভীষণ গম্ভীর হয়ে আছে। গতকাল শায়লার তিন নাম্বার সেশন ছিলো। মাহিমা ম্যাডামের সাথে কি এমন কথা হলো যে শায়লা চুপ হয়ে গেলো? কাল থেকে বিষয়টা ভাবাচ্ছে রিদওয়ানকে। আজ নিজের কর্মস্থল টাঙ্গাইলে জয়েন করবে রিদওয়ান। বিদায় নিতে মায়ের কাছে এলো সে-“মা যাচ্ছি আমি। সময় পেলেই চলে আসবো।”
“যা খুশি কর। কি যে পেয়েছিস ওই মেয়ের মধ্যে কিছুই বুঝি না। জেনেবুঝে নিজের ক্যারিয়ার নষ্ট করছিস।”
রিদওয়ান রেগে গেলো-“মা প্লিজ। বারবার শায়লাকে নিয়ে এমন কথা কেন বলো? তুমি ওকে মেনে নাও। যত তাড়াতাড়ি মেনে নেবে তত ভালো। ভেবে নাও এটা তোমার ভুল শুধরে নেওয়ার একটা উপায়।”
ওয়াহেদ তখন শায়লাকে নিয়ে ঘরে ঢুকলো-“কোন ভুলের কথা বলছিস রিদওয়ান?”
রিদওয়ান চমকে উঠলো-“এই যে দেশের বাইরে এমডি করতে যাওয়া। ভাবছি দেশের পোস্ট গ্রাজুয়েশন করবো।”
“এটাই ভালো হবে। কি শায়লা মামনী ঠিক কিনা বলো।”
শায়লা চুপ করে রইলো। ওয়াহেদ বললো-“আমি ঠিক করেছি শায়লার ইয়ার ফাইনাল হওয়ার পর তোমাদের জন্য একটা রিসিপশন পার্টি এরেন্জ করবো। ছোট বউমাকে আনুষ্ঠানিকভাবে সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দেব।”
রিদওয়ান কিছু না বলে শায়লার দিকে তাকালো। ও মাথা নিচু করে আছে। রিদওয়ান উঠলো-“আমরা আসি বাবা। এখন বের না হলে যেতে যেতে সন্ধ্যা হবে।”
“হুমমম, যাও। শায়লার খেয়াল রেখো।”
রিদওয়ান রুম থেকে বেরুবে তখন শায়লা জাকিয়াকে মৃদুস্বরে বললো-“আন্টি আসছি।”
জাকিয়া চুপ করে রইলো। ওয়াহেদ তার হয়ে জবাব দিলো।

ওরা টাঙ্গাইল এলো বিকেলে। সরকারি হাসপাতালের কাছাকাছি একটা ফ্লাট ভাড়া নিয়েছে রিদওয়ান। দোতলায় বেশ খোলামেলা দুই বেডরুমের ফ্লাই। বাড়ির দুইপাশ দিয়ে রাস্তা আরেক পাশে পুকুর। শায়লার বেশ পছন্দ হলো বাড়িটা। অনেকটা তাদের নওগার আদল আছে।শায়লা ঘুরে ঘুরে দেখছে বাড়িটা। পুরো বাড়ি প্রায় ফাঁকা বলা যায়। এক রুমে শুধু একটা বড় সাইজের খাট, ড্রেসিং টেবিল আর আলমারি আছে। রিদওয়ান ওকে দেখে বললো-“আপাতত এইটুকু এ্যারেন্জ করতে পেরেছি। বাকীটা আস্তে আস্তে কিনে নেব দু’জন মিলে। আমাদের সংসার আমরা ধীরে ধীরে সাজাব। সমস্যা হবে তোমার?”
‘আমাদের সংসার’ কথাটা কানে লাগলো শায়লার। কেন যেন ভীষণ ভালো লাগছে ওর। ওরও একটা সংসার হবে এমনটা কি ভেবেছিল কখনো? অজান্তে একটা ভালোলাগার অনুভূতি হৃদয়ে নাড়া দিয়ে গেলো। তবুও রিদওয়ানের কথার উত্তরে কথা বললো না। রিদওয়ান এবার বিরক্ত হলো-“তোমার কি হয়েছে বলো তো? কাল থেকে দেখছি কথা বলছো না আমার সাথে। আবার কি করলাম সেটা তো বলবে।”
“কিছু না করেও অনেক কিছু করে ফেলেন আপনি। যাইহোক, আপাতত পেটে ছুঁচো দৌড়াচ্ছে তাই কথা পড়ে বলবো আগে খেয়ে নেই চলুন।”
রিদওয়ান কিছু বলতে যেয়ে সামলে নিলো নিজেকে-“কিন্তু ডাইনিং তো নেই আপাতত খাবার বিছানায় আনো। কাল বা পরশুর মধ্যে একটা ডাইনিং টেবিল কিনে ফেলবো।”
শায়লা মাথা নেড়ে চলে যাচ্ছিল রিদওয়ান পিছু ডাকলো-“তোমার একা একা এতো কিছু করার দরকার নেই। আমি হেল্প করছি চলো।”
“আমি পারবো। রান্না তো আর করতে হবে না শুধু ভাবির দেওয়া খাবারগুলো সাজানো।”
রিদওয়ান মেনে নিলো। নিজে এই ফাঁকে গোসল সেরে নিলো। এসে দেখে শায়লা খাবার লাগিয়ে ফেলেছে। শায়লা ফ্রেশ হয়ে বসে ছিলো। ওকে দেখে খাবার বেড়ে দিলো। খেতে খেতে রিদওয়ান বললো-“এখানে সন্ধ্যার পরপরই রাত নেমে যায়। আর কারেন্ট এর সমস্যা আছে। তোমার একটু সমস্যা হতে পারে।”
“আমি এখানে থাকবোই বা কয়দিন? আমাকে তো ঢাকাতেই ফিরতে হবে। পড়ালেখা শেষ হলে ভিন্ন কথা।”
খেতে খেতে থেমে গেলো রিদওয়ান। শায়লাকে দেখলো মন দিয়ে। মেয়েটা বেশ স্বাভাবিক ভাবেই কথাগুলো বলেছে। রিদওয়ান বললো-“যদি যেতে না দেই? তোমাকে তো একা ছাড়তে পারবো না এখন। কি না কি করবে।”
“এতো চিন্তা থাকলে আমার দেখা করতে আসার কথা শুনে একটা ফোন দিতে পারতেন।”
“সেজন্য সরি বলেছি তো? আর কতবার বলবে একই কথা?”
“যতদিন বেঁচে থাকবো। এই সুযোগ আমি ছাড়বো কেন? আপনাকে জব্দ করার মোক্ষম হাতিয়ার পেয়েছি।”
শায়লার কথায় হা করে তাকালো রিদওয়ান। কি নির্বিকার ভাবে বলছে মেয়েটা। এই মেয়েকে যতটা সহজ মনে হতো ততটা নয়। ভীষণ দুষ্ট বুদ্ধি রাখে মাথায়। রিদওয়ান রাগে দাঁত কিড়মিড় করে বিরবির করলো-“দাদু আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়ে গেছে এক চন্ডালনীর সাথে। একে ঝালহীন কাঁচালঙ্কা ভেবে ভুল করেছিলাম এখন দেখছি একেবারে ধানিলঙ্কা।”

চলবে—
©Farhana_Yesmin

#এরই_মাঝে
#পর্ব-৪৬

রাতে শুতে শুতে এগারো বাজলেও মনে হচ্ছিল নিশুতি রাত। ঝিঁঝি পোকার ডাক শোনা যাচ্ছিল। এতো সকালে দু’জনের কারোরই ঘুমের অভ্যাস নেই। রিদওয়ান শায়লার পাশে শুয়ে মোবাইল ক্রল করছিলো। দু’জনার মাঝে দুই হাত দূরত্ব। শায়লার দুই হাতের কব্জিতে চাপ লাগলে ব্যাথা করে বলে দীর্ঘ সময় মোবাইল দেখার অবস্থা নেই। বিরক্ত শায়লা শুয়ে থেকে কেবল এপাশ ওপাশ করছে। রিদওয়ানকে আঁড়চোখে দেখলো কয়েকবার। রিদওয়ান একসময় ফোন বন্ধ করে শায়লার দিকে ফিরে বললো-“কিছু বলবে? এরকম নড়াচড়া করছো কেন? সমস্যা হচ্ছে কোন?”
আঁধারে দেখা গেলো না বলে রক্ষা। শায়লা থতমত খেয়ে চুপসে গিয়ে মিনমিন করলো-“কিছু না। ঘুম আসছে না তাই।”
রিদওয়ান কিছুক্ষণ চুপ থেকে কৌতুকপূর্ন গলায় বললো-“এখন কি ঘুম পাড়ানি গান গাইতে হবে?”
শায়লার রাগ লাগলো। এই ছেলে তার সঙ্গীন অবস্থায় মজা নিচ্ছে। সে দাঁতে দাঁত চেপে বললো-“তাহলে তো ভালোই হয়। কিন্তু আপনার ওই বেসুরে গলা থেকে গান আসবে কি?”
রিদওয়ান হাসলো। অন্ধকারে তার হাসির আওয়াজে শায়লার গা অকারণে শিরশিরিয়ে উঠলো। রিদওয়ান হাসি থামিয়ে চুপ করে আছে। জবাব না পেয়ে মেজাজ আরও খানিকটা তিরিক্ষি হলো তার। ভাবছে আরও কিছু কড়া কথা শোনাবে রিদওয়ানকে। হুট করে রিদওয়ান গেয়ে উঠলো-“দিন গেল তোমার পথ চাহিয়া
মন পড়ে সখি গো কার লাগিয়া

সহে না যাতনা তোমারো আশায় বসিয়া
মানে না কিছুতে মন আমার যায় যে কাঁদিয়া
পুড়ি আমি আগুনে
ওহ, ওহ, ওহ

দিন গেল তোমার পথ চাহিয়া”

অন্ধকারে মিহি আওয়াজে গেয়ে চলেছে রিদওয়ান। রিদওয়ান খালি গলায় সুরের ঝঙ্কার ঘরের পরিবেশ বদলে দিলো যেন। কিযে মোহময় লাগছে রিদওয়ানের কন্ঠ। রিদওয়ানের আকুল গলায় গাওয়া গান শুনে শায়লার শরীরের সমস্ত লোমকূপ দাঁড়িয়ে গেছে। বুকের মধ্যে উথাল পাথাল সাগরের ঢেউ যেন আছড়ে পড়ছে। অজানা অস্থিরতায় শায়লার মন চঞ্চল হলো। তন্ময় হয়ে চোখ বুঁজে গান শুনছিল সে। কিন্তু হুট করে শুরু হওয়া গান গুট করে থেমে গেলে মনে হলো কি যেন নাই হয়ে গেলো। শায়লা ভীষণ বিরক্ত হয়ে বললো-“থামলেন কেন? শুনতে বেশ লাগছিল তো।”
রিদওয়ান জবাব দিলো না। কিছুক্ষণ চুপ থেকে শায়লা বললো-“গানের গলা ভীষণ সুন্দর আপনার। গান শিখেছিলেন বুঝি?”
“থ্যাংকস ফর দা কমপ্লিমেন্ট।” কাঠ গলায় জবাব দিলো রিদওয়ান। রিদওয়ান আর কোন কথা বলছে না দেখে অভিমান হলো শায়লার। আগে তো নানারকম প্রশ্ন করে ওর মাথা নষ্ট করে ফেলতো অথচ এখন কথা বলে গুনে গুনে। দাঁতে দাঁত চেপে নিজেকে সামলে নেওয়ার চেষ্টা করে শায়লা। চুুপ থেকে রিদওয়ানের কোন সাড়াশব্দ না পেয়ে অভিমান ভেসে গেলো তার। অন্ধকারে বেহায়ার মতো উঁকি দিলো। রিদওয়ান বলে উঠলো-“কি চাই?”
“ঘুমিয়ে গেছেন কিনা জানতে চাইছি। খুব গরম এখানে। ঘুম আসছে না।”
রিদওয়ান ফোঁস করে শ্বাস ফেলে-“কিছুদিন অপেক্ষা করো এসি কিনে ফেলবো।”
“তখন আপনাকে প্রশ্ন করলাম উত্তর দিলেন না।”
রিদওয়ান এবার জড়ানো কন্ঠে বললো-“আমার ঘুম পাচ্ছে। আমি ঘুমাই প্লিজ! কাল আবার সকাল সকাল হাসপাতালে যেতে হবে।”
“ঠিক আছে।”
হতাশ কন্ঠে জবাব দিয়ে পাশ ফিরে শোয় শায়লা। ঘুমানোর চেষ্টায় উল্টো গগনা শুরু করলো। তবুও কিছু হলো না। আবার পাশ ফিরে শুতে গিয়ে টের পেলো সে রিদওয়ানের খুব কাছে চলে এসেছে। অসস্তি বোধ করে খানিকটা দূরত্ব আনতে সরে যেতে চাইলো কিন্তু পারলো না। তার আগেই রিদওয়ান ওকে ধরে নিজের বুকে নিয়ে এলো। দু হাতে জড়িয়ে ধরে কানের কাছে মুখ ঠেকিয়ে ফিসফিস করলো-“চুপ করে শুয়ে থাকো। আমি মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছি তুমি ঘুমাও।”
শায়লার শরীর জুড়ে শিরশিরে অনুভূতি। রিদওয়ানের এতোটা কাছে স্বইচ্ছায় আসা হয়নি কখনো। দুইবার খুব কাছে এসে নিজের অধিকার বুঝে নিয়েছে রিদওয়ান কিন্তু তখন শায়লার সাড়া ছিলো না তাতে। এখন কেন যেন এই মুহূর্তটা ভালো লাগছে ওর। শায়লা চুপ করে শুয়ে রইলো রিদওয়ানের বুকে। কান পেতে শুনতে থাকলো রিদওয়ানের হার্টের ধকধক। শুনতে শুনতে একসময় ঘুমিয়ে গেলো।

*****

সকালে ঘুম ভাঙলো দেরিতে। রিদওয়ান ততক্ষণে হাসপাতালে চলে গেছে। শায়লা সাবধানে উঠে বসলো। কাল রাতে চুলগুলো ভেজা ছিলো বলে বাঁধা হয়নি। এখন লম্বা চুলগুলো ঝামেলা করছে। শায়লা সাবধানে হাত উঁচিয়ে চুলগুলো খোঁপা করে ওয়াশরুমে ঢুকলো। হাতমুখ ধুয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ালে ঠান্ডা বাতাস এসে গায়ে লাগতেই ওর মন ভালো হয়ে গেলো। বামদিকে পুকুর দেখে শায়লার মন খুশিতে আনচান করে উঠলো। ভাবলো চা বানিয়ে এনে বারান্দায় বসে বসে খাবে। পরক্ষণেই মনে পড়লো চুলো লাগানো হয়নি। আজ হাসপাতাল থেকে ফেরার পথে মিস্ত্রি আর চুলো কিনে আনার কথা। শায়লা মন খারাপ করে ঘরে ঢুকলো। খিদে লেগেছে কিন্তু খাবে কি? শুকনো বিস্কিট আছে চা দিয়ে খাওয়া যেত। কি মনে করে একবার রান্নাঘরে ঢু দিলো শায়লা। সিল্কের উপর ঢাকা দেওয়া প্লেট আর ফ্লাক্স দেখে কৌতূহলি হয়ে ঢাকনা তুলতেই দেখলো নাস্তা রাখা। দুটো পরোটা, ডাল ভাজি, একটা ডিম পোঁচ আর একটা চিঠি। শায়লা চিঠি হাতে নিয়ে খুললো-

প্রিয় ধানিলংকা,
আমি জানি বারান্দা থেকে পুকুর দেখে তোমার চা খেতে ইচ্ছে করেছে। তাই ফ্লাক্স ভরে চা এনে রেখেছি তোমার জন্য। তবে নাস্তা স্কিপ করবে না। ভরপেট নাস্তা করে ওষুধ নেবে তারপরই চা খাওয়ার অনুমতি আছে তার আগে নয়। আমি আসার সময় দুপুরের খাবার চুলা মিস্ত্রি নিয়ে আসবো। আর শোন, রেগে কাঁচামরিচের মতো সবুজ হওয়া বন্ধ করো। চাইলে শুঁকনো মরিচের মতো লাল হতে পারো আমি রাগ করবোনা।

পুনশ্চঃ রেগেমেগে আমাকে উল্টো পাল্টা গালি দেওয়ার কোন দরকার নাই। আমি জানি আমি ‘বদমায়েশ’। আর কোন কাজ করতে হবে না। হাতের উপর বেশি চাপ দিয় না।

শায়লা মুখ ভেটকি দিয়ে নাস্তার প্লেট তুলে বিছানায় নিয়ে এলো। ঘরের বড় জানালার পর্দাটা সরিয়ে দিলো। আলোয় ঘর ভরে গেলো। সে আয়েশ করে বিছানায় বসে নাস্তা খেতে খেতে মাকে ফোন দিলো।
“মা কি করো?”
অন্য সময় হলে রুবিনা বিরক্ত হতো। সকালের এই সময় তার অনেক কাজ থাকে। কিন্তু এখন বিরক্ত হওয়ার বদলে বরং হাসি ফুটলো মুখে-“কাজ ছাড়া কি আর করবো। তুই কি করিস?”
“নাস্তা করি। মা, আমরা কালকে টাঙ্গাইল আসছি।”
শায়লার কথায় রুবিনা খুশি হলেন-“সত্যি? কেমন লাগে? বাসা নিছে রিদওয়ান?”
“হুমমম, বাসা নিয়েছে। কালকেই কেবল আসলাম। কিছু দেখা হয় নাই তবে ভালো লাগতেছে। খোলামেলা আছে।”
“রিদওয়ান কই?”
“হাসপাতালে গেছে।”
হুট করে দুইজনই চুপ করে গেলো। শায়লা ছোট ছোট লোকমা তুলে মুখে পুড়ছে। তার অসস্তি লাগছে। মাকে কেন ফোন দিলো তাই বুঝতে পারছে না। রুবিনা নিরবতা ভাঙলো-“শায়লা মা, একটা কথা বলি?”
শায়লার খাওয়া বন্ধ হয়। সে ক্ষীনকন্ঠে বললো-“বলো।”
“যা হইছে হইছে, সব ভুলে রিদওয়ানের সাথে সংসার কর মন দিয়ে। ছেলেটা আসলেও ভালো। ওকে আর কষ্ট দিস না মা।”
শায়লার গলায় খাবার আঁটকে যায়। অনেক কষ্টে খাবার গিলে নিয়ে তাড়াহুড়ো করে বললো-“আমি রাখছি মা। কে যেন এসেছে।”
রুবিনা বাঁধা দিলো-“শোন, একা একা থাকার সুযোগ হয়েছে। এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে রিদওয়ানের সাথে একটা চড়ুই পাখির সংসার গুছিয়ে নে। নিজের অভিমান অভিযোগ পাশে রেখে কেবল রিদওয়ানের সাথে শুরু থেকে শুরু কর। অন্তত মন থেকে একবার চেষ্টা করে দেখ মা।”
শায়লা আস্তে করে ফোন কেটে দিলো। কিছুক্ষণ থম ধরে বসে রইলো। নিজের হাতের দিকে তাকালো। দুই হাতের কব্জি বাজে ভাবে কালচে হয়ে আছে। সারাজীবন এটার দাগ স্মৃতি হিসেবে থেকে যাবে। শায়লা ধীর পায়ে উঠে দাঁড়ালো। ফ্লাক্স থেকে এককাপ চা ঢেলে নিয়ে বারান্দায় এসে বসলো।

*****

দুপুরে খাওয়ার পর রিদওয়ান মিস্ত্রি দিয়ে টুকটাক কাজ সারছিল। একা একা বেড রুমে বসে থেকে শায়লার চোখ লেগে এসেছিল। নিজের অজান্তেই কখন গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে টের পায়নি। ঘুম ভাঙলো সন্ধ্যার আগে আগে। ফাঁকি রুমে ভয় পেলো শায়লা। ভীত গলায় কয়েকবার করে রিদওয়ানকে ডাকলো। কিছুক্ষণ পরেই রিদওয়ানকে দেখা গেলো ব্যাগি গেন্জি আর হাফ প্যান্ট পরিহিত ঘামার্ত শরীরে। ঘামে ভেজা ফর্সা মুখটা চকচক করছে। তার সুগঠিত বাইসেপ আর চওড়া বুক দেখে হা করে তাকিয়ে রইলো শায়লা। এরকম রিদওয়ানে সে কখনো দেখেছে কিনা মনে করতে পারলোনা। অসুস্থ হওয়ার পরে রিদওয়ানকে সেভাবে দেখা হয়নি কিংবা বলা যায় সুযোগ হয়নি। আর আগের রিদওয়ান এতোটা ফিট ছিলো কি? শায়লা লজ্জা শরম ভুলে রিদওয়ানকে দেখতে থাকে বেহায়ার মতো। রিদওয়ান ভ্রু কুঁচকে চোখ নাঁচায়-“কি সমস্যা? ডাকছো কেন?”
শায়লা বহু কষ্টে নিজের নজর সরালো-“কোথায় ছিলেন আপনি? ঘুম ভেঙে দেখতে পাইনি তাই ভয় পেয়েছিলাম।”
রিদওয়ানকে কিছুটা অসন্তুষ্ট দেখায়-“এতো ভয় পেলে কি করে চলবে? আমার তো মাঝে মাঝেই রাতে হাসপাতালে যেতে হবে তখন একা একা কি করে থাকবে?”
শায়লা বিস্ময় নিয়ে জানতে চাইলো-“রাতে কেন হাসপাতালে যাবেন? আমি একা থাকতে পারবোনা বলে দিচ্ছি। দরকার হলে আমাকেও সাথে নেবেন তবুও না।”
রিদওয়ান দরজায় হেলান দিয়ে সুক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকালো-“আমার অপারেশন থাকলে তুমি আমার সাথে যাবে? তা কি করবে হাসপাতালে যেয়ে?”
শায়লা তো তো করলো-“কি করবো আবার? আপনাকে হেল্প করবো।”
রিদওয়ান যেন মজা পাচ্ছে। সে ঠোঁটের কোনে হাসি লুকিয়ে রেখে বললো-“আচ্ছা! তা কি হেল্প করবে?”
“আপনার ছুঁড়ি কাঁচি এগিয়ে দেব। অপারেশন করতে করতে ঘেমে গেলে ঘাম মুছিয়ে দেব।”
রিদওয়ানের ঠোঁটের কোনের হাসি দুষ্ট হাসিতে পরিনত হলো। সে এগিয়ে এলো শায়লার কাছে-“সত্যি! ঘাম মুছে দেবে? তাহলে এখন থেকেই প্র্যাকটিস হোক। আমি প্রচন্ড ঘেমে আছি এখন। আমার ঘামটা মুছে দাও তো।”
রিদওয়ানের পেশীবহুল শরীর দেখে শায়লা ঢোক গিললো। কিছুটা পিছিয়ে গিয়ে তোতলায়-“ককককি বলছেন এসব? আমি কেন মুছে দেব আপনাকে?”
রিদওয়ানের চোখে কৌতুক, কিছুটা অবাক হওয়ার ভান করে বললো-“এখনই তো বললে ঘাম মুছিয়ে দেবে এখনই আবার বলছো কেন মুছে দেব? একই মুখে দুইরকম কথা বললে হবে? নাও মুছে দাও ডাক্তারের ঘাম।”
শায়লা হচকে গেলেও দ্রুত নিজেকে সামলে নিলো। রিদওয়ান যে ওকে জব্দ করার ফন্দি এঁটেছে তা বুঝতে পেরে বিরবির করলো-“এটা তো আপনার হাসপাতাল না আর আপনিও অপারেশন করছেন না। কাজেই ঘাম মুছে দেওয়ার প্রশ্নই ওঠে না।”
রিদওয়ান শায়লার আরেকটু কাছে এলো। চোখে চোখ রেখে পুরুষালী কন্ঠে বললো-“কে বললো অপারেশন করছি না? এখানে খুব জটিল অপারেশন করছি আমি।”
শায়লা হতবাক কন্ঠে সুধায়-“অপারেশন! এখানে!”
রিদওয়ান মাথা নাড়ে-“হুমম। কারো হৃদয়ের দগদগে ক্ষত সরিয়ে দিয়ে নতুন সুখস্মৃতি বুনে দেওয়ার অপারেশন চলছে। কেন তুমি বুঝতে পারছো না?”

চলবে—
©Farhana_Yesmin