#এরই_মাঝে
#পর্ব-৫৪ ও শেষ
শায়লা মুখ টিপে হাসলো। বেশ জোরেশোরে চিমটি কাটলো রিদওয়ানের হাতে। রিদওয়ান চেচিয়ে উঠলো-“আহহহ, কি করলে শায়লা? এতো জোরে কেউ চিমটি কাটে?”
শায়লা অসহায়ের মতো মুখ করে বললো-“আপনিই তো বললেন চিমটি কাটতে?”
রিদওয়ান হাতে হাত ঘষতে ঘষতে মিনমিন করলো-“তাই বলে এতো জোরে? ব্যাথায় জ্বর চলে এলো আমার।”
শায়লা চিন্তিত হয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো-“কই দেখি?”
রিদওয়ান এই ফাঁকে মুখ সরিয়ে শায়লার জানুতে মাথা রেখে শুয়ে পড়লো। হাসি হাসি মুখ করে ইশারা করে বললো-“এবার ভালোমতো জ্বর দেখো আর আমি তোমাকে দেখি।”
শায়লার হাত থেমে যায়। বুকের ধড়ফড়ানি বেড়ে গেছে। রিদওয়ান মুগ্ধ নয়নে ওকে দেখতে দেখতে বললো-“কি হলো জ্বর দেখো।”
বলে নিজেই ওর হাতটা কপালে রাখলো। কপাল বেশ গরম। শায়লা চিন্তিত স্বরে বললো-“আপনার কি আবার জ্বর এলো? এবার কিন্তু টেস্ট করাবেন। এভাবে ঘনঘন জ্বর আসা ভালো না মোটেও।”
রিদওয়ান মুচকি হাসলো-“এই জ্বর সেই জ্বর নয় শায়লা। তুমি চাইলে এই জ্বর নেমে যাবে এখনি।”
শায়লা কম্পিত কন্ঠে সুধায়-“মানে? এ আবার কেমন জ্বর রিদওয়ান। অবহেলা না করে একটা ওষুধ খেয়ে নিননা।”
রিদওয়ান চাপা হেসে বললো-“মাথাটা নিচু করো তো।”
শায়লা ঝুঁকে আসতেই রিদওয়ান শব্দ করে ওর ঠোঁটে চুমু আঁকে। শায়লা ভরকে গেলো-“এটা কি হলো?”
দুষ্ট হেসে রিদওয়ান জবাব দিলো-“তুমিই তো ওষুধ খেতে বললে।”
শায়লা লজ্জার লাল। শরীরটা কেঁপে উঠলো অজান্তেই। শরমে আইঢাই করে উঠে বললো-“ভারি দুষ্ট হয়েছেন তো আপনি। চুমুতে জ্বর ভালো হয় কবে?”
রিদওয়ান বেহায়ার মতো ফিসফিস করলো-“কামনার জ্বরের একমাত্র ওষুধ চুমু বোকা মেয়ে। এবার তুমি লজ্জা সরিয়ে একটা গভীর চুমু দাও তো আমার ঠোঁটে।”
রিদওয়ানের বেশরম কথায় শায়লা না পেরে মুখ ঢেকে ফেলে। ছটফটিয়ে উঠে রিদওয়ানকে সরাতে চাইলো জানুর উপর থেকে কিন্তু পারলোনা। রিদওয়ান আরও আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে ওকে।কাত হয়ে শুতেই ওর নজর গেলো শায়লার উদরের দিকে। সরু উন্মুক্ত উদর দেখে রিদওয়ানের ঘোর লেগে গেলো। সে আচমকা মাথা এগিয়ে নিয়ে নিজের অধরের স্পর্শ দিলো উদরে। দু’হাতে কোমড় জড়িয়ে নিয়ে মুখ ঘষলো। শায়লার শরীর কেঁপে উঠলো থরথর করে। সে রিদওয়ানের মাথার চুল খামছে ধরলো অজন্তেই। ওর এহেন কাজে শায়লার শরীরের উরুর অংশটা অবশ হয়ে গেছে মনেহচ্ছে। নড়াচড়ার শক্তি হারিয়ে গেছে। সে কথা বলতে পারে না। অনেক কষ্টে বিরবির করলো-“কি করছেন রিদওয়ান?”
“জ্বর কমাচ্ছি বউ।”
রিদওয়ান নেশারু কন্ঠে উত্তর দিলো। আচমকা শায়লাকে টেনে বিছানায় শুইয়ে দিলো। উঠে এলো শায়লার গায়ের উপর। সেকেন্ডের মধ্যে এমন কাজে শায়লা ভয় পেয়ে চোখ মুখ খিঁচে শুয়ে ছিলো। ওকে ওরকম দেখে রিদওয়ান থমকায়। শায়লার মুখের উপর রিদওয়ানের অস্থির নিশ্বাস পড়ছে। সে হাতের আঁজলার শায়লার মুখ তুললো-“শায়লা, তাকাও তো।”
“উহু।”
“প্লিজ তাকাও না।”
রিদওয়ানের কন্ঠে অনুনয় শুনে শায়লা ভীত চোখে তাকায়। রিদওয়ানের চোখ দুটো ঘোলাটে লাগছে। সে শায়লার চোখে চোখ রেখে বললো-“মে আই? তোমার অনুমতি ছাড়া তোমার ছুঁয়ে দেওয়ার ভুল দ্বিতীয় বার করতে চাই না আমি।”
শায়লার হাসফাস লাগে। এই লোকটা এমন সরাসরি কথা বলে কেন? জানে না শায়লার লজ্জা পায়? ইচ্ছে না থাকলে কি শায়লা ধরা দিতো? বেকুব লোক একটা? মনে মনে আচ্ছা মতো গালি দিলো রিদওয়ানকে। শরমে চোখে চোখ রাখা দুস্কর হলেও কাজটা করতে হচ্ছে শায়লাকে। সে উত্তর দিতে পারলোনা। রিদওয়ান হাস্কি টোনে জানতে চাইলো-“আচ্ছা কিছু বলতে হবে না। একটা কিসি দাও তো ঠোঁটে তাহলে বুঝে যাব তোমার ইচ্ছে।”
শায়লা মুখ এঁটে ছিলো রিদওয়ানের কথা শুনে ঢোক গিললো। এটাও বুঝলো এই পাগল ফিরতি আদর না পেলে এগুবে না। শায়লা লাজুক মুখে রিদওয়ানের অধরে অধর ছুঁইয়ে দিতেই রিদওয়ান হামলে পড়লো ওর উপর। শায়লার সারা গালে ছোট ছোট চুমুতে ভরিয়ে দিলো। ওর দু’হাতের অবাধ্য বিচরণ শায়লার শরীরজুড়ে। তীব্র আশ্লেষে শায়লার ওষ্ঠের দখল নিতে নিতে রিদওয়ান ফিসফিস করলো-“ভালোবাসি বউ। অনেক ভালোবাসি তোমাকে।”
*****
টোনাটুনির সংসারটা দারুণ রোমান্টিক কাটছে। রিদওয়ান সকালে যায় সন্ধ্যায় আসে। তারপর শুরু হয় খুনসুটি আদর সোহাগ। শায়লা সারাদিন মনে মনে রিদওয়ানের ফেরার অপেক্ষায় থাকে। দুষ্ট মিষ্টি সময়টুকু উপভোগ করছে সে মনভরে। মাঝে মাঝে দু’জন মিলে সংসারের কেনাকাটা করতে যায়। কখনো সখনো ঘুরতেও যায়। এভাবেই আরও একমাস কাটলো। রিদওয়ান ইদানীং ঘ্যানঘ্যান করছে শায়লার সাথে পড়ালেখায় আবার মনোযোগ দিতে। আর মাত্র একটা সেমিস্টার আছে ভালোয় ভালোয় শেষ হোক। দুই মাসেই সংসারের প্রতি মায়া এসেছে শায়লার। এই মায়াময় সংসার ফেলে ঢাকায় ফিরতে মন চায় না। রিদওয়ানের নিজেরও একা থাকার কথা ভাবলে ভালো লাগে না তবুও শায়লার ব্যাপারে দায়িত্ব পালনে বদ্ধ পরিকর সে। তাতে তার খানিকটা কষ্ট সে মেনে নেবে না হয়। রিদওয়ান আজ হাসপাতাল থেকে ফিরে শাওয়ার নিয়ে বিছানায় শুয়ে ছিলো চুপচাপ। আজকের দিনটা খুব হার্স কেটেছে। তিনটে অপারেশন হয়েছে সারাদিন তারপর একগাদা রোগীর চাপ। শায়লা ল্যাপটাপে বসে ছিলো দেখে আর ডাকেনি তাকে। কাজ শেষ করে বেডরুমে এসে রিদওয়ানকে দেখে বিস্মিত হলো শায়লা-“আপনি কখন এলেন?”
রিদওয়ান চোখের উপর হাত দিয়ে শুয়ে ছিলো। চোখ থেকে হাত সরিয়ে শায়লাকে দেখলো-“আধাঘন্টা হবে। তুমি ব্যস্ত ছিলে বলে ডাকিনি। কাজ শেষ?”
“হুমম। আপনার কি মাথা ব্যাথা?”
রিদওয়ানের মাথার কাছে বসে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে শায়লা। রিদওয়ান শায়লার উরুতে মাথা রেখে জড়িয়ে ধরলো ওকে। কিছুক্ষণ দু’জনই চুপ করে রইলো। নিরবতা ভেঙে রিদওয়ান জানতে চাইলো-“ম্যাডামের সাথে কথা বলেছ? এক্সাম দিতে পারবে?”
“পারবো। আবেদন করতে হবে একটা।”
“চলো কাল ঢাকায় যাই। আমারও একটু কাজ আছে। সপ্তাহ খানেক থাকতে হবে।”
“আপনার কি কাজ?”
“নতুন কোর্সে ভর্তি হবো। এখানে পাঁচদিন অফিস করে দুই দিন ঢাকায় গিয়ে ক্লাস করবো।”
শায়লা কিছুটা মন খারাপ করে বললো-“আমার জন্য আপনার অনেক ক্ষতি হয়ে গেছে তাই না? আপনি আবার বাইরে যাওয়ার চেষ্টা করছেন না কেন? এবার আমি কিছু বলবো না বিশ্বাস করুন। দরকার হলে আমিও যাবো আপনার সাথে।”
রিদওয়ান মুখ তুলে শায়লাকে দেখলো। ওকে কিছুটা চিন্তিত দেখাল। উঠে বসে গম্ভীর হয়ে জবাব দিলো-“দেশের বাইরে যাওয়ার কোন ইচ্ছে আমার ছিলো না শায়লা। তোমাকে সময় দিতে যেতে চাচ্ছিলাম। এখন তুমি সাথে আছো কেন যাব দেশের বাইরে? আপাতত আমার প্ল্যান হলো দেশে যত ডিগ্রি আছে নেব। দাদাজানের দেওয়া জায়গার উপর একটা হাসপাতাল বানাবো। তারপর গ্রামে চিকিৎসক হিসেবে থেকে যাব। দাদাজানের জন্য এইটুকু করতেই হবে আমাকে। শায়লা, আমার স্ত্রী হিসেবে কি তুমি আমার সাথ দেবে?”
শায়লা অবাক হয়ে রিদওয়ানকে দেখলো। কিছুটা সময় শান্ত গলায় বললো-“আপনি যেভাবে চান সেভাবেই সবসময় আপনার পাশে থাকবো। তবে একটা ব্যাপারে একটু সাজেশন দেবো। হাসপাতালের জন্য হলেও আপনাকে একটা বিদেশি ডিগ্রি নিতে হবে। আমিও দরকার হলে যাব আপনার সাথে কিন্তু নিতেই হবে। কত জটিল অসুখ হয় মানুষের। সেসব না জানলে ট্রিটমেন্ট করবেন কি করে? তাই এ ব্যপারে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।”
রিদওয়ানের মুখে হাসি ফুটলো। শায়লাকে জড়িয়ে ধরে ললাটে চুমো আঁকলো-“দ্যাটস মাই গার্ল। তোমার এক্সাম শেষ হলে দাদুর কাছে যাব শায়লা। বুড়োটাকে খুব মনে পড়ছে।”
“আচ্ছা। আমারও মাকে দেখতে মন চাইছে খুব। কতদিন দাদুকে দেখি না। মা বলছিল দাদুর শরীর খারাপ।”
“হুমমম। দাদু আসলে একা বোধ করছে। তার একজন সঙ্গীর ব্যাবস্থা করতে হবে বুঝলে।”
শায়লা অবাক হলো-“ওমা, দাদু একা হবে কেন? দাদি আছে মা আছে ছোট আছে।”
“আরে বাবা ওরা তো আছে কিন্তু ওদের কথা বলছি না। নতুন কেউ দরকার দাদুর।”
“কার কথা বলছেন?”
রিদওয়ান শায়লাকে বুকে জড়িয়ে নিয়ে কানে কানে ফিসফিস করলো-“একটা ছোট রিদু কিংবা শায়লাকে দরকার বুদ্ধু। এসো আমরা দাদুকে নতুন সঙ্গী দেওয়ার ব্যাবস্থা করি।”
শায়লা লজ্জায় হাসফাস করে উঠে নিজেকে ছাড়িয়ে নিতে চাইলো-“অসভ্য লোক। খবরদার যদি উল্টো পাল্টা ভেবেছেন। আমার পড়ালেখা শেষ হওয়া অব্দি এসব ভাবা যাবে না।”
রিদওয়ান মানলো না-“সে তো ক’দিনের মধ্যে শেষ হবে। এখন থেকেই কাজ শুরু না করলে দেরি না হবে না বলো?”
“মোটেও দেরি হবে না। যখন সময় হবে তখন ভেবে দেখবো।”
“বুঝেছি তুমি আমাকে বুড়ো না বানিয়ে বাপ হতে দেবে না। হায় কপাল আমার। কতো স্বপ্ন ছিলো একটা গোলগাপ্পা মেয়ে কোলে নিয়ে ঘুরবো। মেয়ে আমাকে বাবা বাবা বলে ডাকবে।”
শায়লা খিলখিল করে হাসে। রিদওয়ান অভিযোগ ভুলে বউয়ের মনকাড়া হাসি দেখে মুগ্ধ নয়নে। এইরকম সুখী সুখী দাম্পত্যের স্বপ্নই তো দেখেছে সে। এই আত্মাভিমানী মেয়েটার মুখে হাসি দেখার জন্যই তো এতো আয়োজন। অবশেষে মেয়েটা প্রান খুলে হাসছে এটাই কি কম পাওয়া? বাকী জীবন এই অতি রাগী মেয়েটার সাথেই কাটিয়ে দিতে চায় সে। রিদওয়ানের মনে হলো দাদাজান এসে দাঁড়িয়েছে শায়লার পাশে। চোখ নাচিয়ে বলছে-“কি, খুব তো বলেছিলে বিয়ে করতে চাও না। এখন কেমন লাগছে দাদাজানের পছন্দের মেয়েকে বউ হিসেবে মেনে নিতে?”
“তোমার পছন্দের মেয়ে চারবছর কষ্ট দিয়েছে আমাকে। তার কি হবে বুড়ো? এতোদিনে দুই বাচ্চার বাপ হয়ে যেতাম।”
দাদাজান হাসলো-“আরেকটু ধৈর্য্য ধর রিদু। আমিই আবার ফিরবো তোদের মাঝে। ভীষণ জ্বালাবো তোদের। তখন দেখবো কতো ভালোবাসিস আমাকে।”
রিদওয়ান বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে থেকে বললো-“সত্যি? তাড়াতাড়ি এসো না দাদু। আমি ভীষণ ভাবে তোমার অপেক্ষায় থাকবো।”
রিদওয়ানকে একা একা কথা বলতে দেখে শায়লা এগিয়ে এসে রিদওয়ানের মুখে হাত দিয়ে বললো-“এই কি হয়েছে আপনার? কার আসার অপেক্ষায় থাকবেন?”
রিদওয়ান শায়লাকে জড়িয়ে ধরে বুকের সাথে মিশিয়ে বললো-“বিশেষ একজনের। কবে যে আসবে সে।”
শায়লা স্বান্তনা দিলো-“দেখবেন সময় হলেই আসবে।”
রিদওয়ান ওকে বুকের মাঝে আরেকটু মিশিয়ে বললো-“তাই যেন হয়।”
সমাপ্ত।
©Farhana_Yesmin