গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব-০২

0
107

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব২
#Raiha_Zubair_Ripti

দুতলা বাড়ির ছাঁদে দোলনায় বসে আছে রুয়াত। সামনেই রুয়াতের দিকে পূর্ণ দৃষ্টি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে রুয়াতের বড় বোন রজনী।

গ্রীষ্মের প্রচণ্ড রোদ,বাংলা বর্ষপঞ্জি অনুযায়ী প্রথম দুই মাস বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠজুড়ে গ্রীষ্মকাল। এ সময় সূর্যের প্রচণ্ড তাপে উত্তপ্ত হয়ে ওঠে ভূমি। এই প্রচণ্ড রোদে রুয়াত কে ঠাই দোলায় বসে থাকতে দেখে এবার অনেকটাই বিরক্ত নিয়ে রজনী শুধালো-
-“ আর কতক্ষণ এভাবে বসে থাকবি রুয়াত? শরীরের স্কিন টোন তো পাতিলের তলার মতো হয়ে যাবে। সামনেই তো বিয়ে তোর। এভাবে রোদে বসে থাকলে ট্রাস্ট মি বিয়ের দিন তোকে বাজে দেখাবে।

রুয়াত সরু চোখে তাকালো বোনের দিকে। রজনীর চোখ মুখ কুঁচকে আছে রোদের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার কারনে।
-“ তোমার সমস্যা হলে তুমি রুমে চলে যাও আপু। আমি ভাবছি কিছু।
-“ কি এমন ভাবছিস রোদে বসে আমাকেও বল দেখি।
-“ শুনে কি হবে তোমার?তুমি কি পারবে আমাকে হেল্প করতে?
রজনী রুয়াতের পাশে দোলনায় বসে রুয়াত কে এক হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরে বলে-
-“ বলেই দেখ। হেল্প করলেও তো করতে পারি।
রুয়াত সোজা হয়ে বসলো।
-“ বেশ তো তাহলে আমাকে আমার বিয়ে ভাঙার টিপস্ দাও।
রজনী সহসা ছেড়ে দিলো রুয়াত কে। অবাকের ন্যায় বলল-
-“ কিহ্! মাথা ঠিক আছে তর?
-“ আমার মাথা ঠিকই আছে আপু। তোমাদের মাথা ঠিক নেই। তোমরা কি করে উনার সাথে আমার বিয়ে ঠিক করতে পারো!
রজনী ভ্রু কুঁচকালো।
-“ উনার সাথে মানে?
-“ তোমাকে বলেছিলাম না আমার ভার্সিটির একাউন্ট ডিপার্টমেন্টের শাফায়াত ইমতিয়াজ এর কথা?
-“ হ্যাঁ। যে তোকে প্রায় একগাদা হোমওয়ার্ক দিত?
-“ ইয়েস। জানিস ইনি কে।
-“ কেবলই তো বললাম সে কে।
-“ আমার যার সাথে বিয়ে ঠিক হয়েছে চিনিস তাকে,দেখেছিস তাকে?
-“ দেখি নি, চিনিও না। শুধু জানি বাবার কোন বন্ধুর ছেলে সে। নোয়াস না কি যেনো নাম।
-“ শাফায়াত ইমতিয়াজ নোয়াস সে।

নাম টা সম্পূর্ণ মস্তিষ্কে না ঢুকিয়েই রজনী বলে উঠে-ওহ্। পরক্ষনেই বিস্ময় নিয়ে বলে- শাফায়াত ইমতিয়াজ ই নোয়াস!
রুয়াত উপর নিচ মাথা ঝাকায়।
-“ তো এখন কি করতে চাইছিস?
রুয়াত বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো।
-“ বিয়েটা ভাঙতে।
-“ মনে হয় না পারবি বিয়ে টা ভাঙতে রুয়াত।
-“ এমন টা মনে হলো কেনো?
-“ কারন অলরেডি নোয়াস কে পছন্দ আব্বুর। সেখানে তুই গিয়ে কি বলবি বিয়ে ভাঙার জন্য? যাথার্থ্য কারণ আছে তোর কাছে বিয়ে ভাঙার জন্য?
-“ অবশ্যই কারন আছে আমার কাছে বিয়ে ভাঙার।
-“ কি কারন আছে তোর কাছে?
-“ এই যে আমরা টিচার স্টুডেন্ট এটাই কি যথেষ্ট নয় বিয়ে ভাঙার জন্য?
রজনী ঠোঁট টিপে বলল- হ্যাঁ যথেষ্ট এর থেকেও বেশি। যা বাবা কে বলে গিয়ে।
-“ হ্যাঁ এখুনি যাচ্ছি।
কথারা বলে রুয়াত ছাঁদ থেকে নেমে গেলো। সিঁড়ি দিয়ে নামতে নামতে মনে মনে সব কথার লাইন গুলো সাজিয়ে নিলো। বাবা কে ঠান্ডা মস্তিষ্কে বুঝাতে হবে।
কথাগুলো সাজাতে সাজাতেই কবির শিকদার এর রুমের সামনে এসে দাঁড়ায় রুয়াত। লম্বা করে আগে শ্বাস ফেলে নেয়। তারপর একটু দরজার সামনেই পায়চারি করে রুমের দরজায় কড়া নেড়ে বলে-
-“ আব্বু আছো? ভেতরে আসবো?
কবির শিকদার রেডি হচ্ছিল রুমে। ছোট মেয়ের কন্ঠ স্বর শুনে বলে-
-“ হ্যাঁ আছি। ভেতরে আসো।
রুয়াত রুমের ভেতরে ঢুকলো। কবির শিকদার এর থেকে কিছুটা দূরে বিছানায় বসে রুয়াত।
-“ কিছু বলবে? মেয়ের দিকে শান্ত চাহনি নিয়ে বলল কবির শিকদার। রুয়াত উপর নিচ মাথা ঝাকালো।
-“ বলো তাহলে কি বলতে চাও।
রুয়াত তার শুকনো ঠোঁট জিহ্বা দিয়ে ভিজিয়ে নেয়। তার কণ্ঠনালী কেঁপে উঠছে।
-“ আ….আসলে আব্বু আ..আমি এই বিয়ে……..
-“ এই নাও তোমার চা।

চায়ের কাপ নিয়ে রুমে প্রবেশ করতে করতে কথাটা বলে উঠে সামিরা শিকদার। মেয়ে কে নিজেদের রুমে দেখে সামিরা শিকদার চায়ের কাপ স্বামীর হাতে দিয়ে মেয়ের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ তুই এখানে কোনো দরকার?
রুয়াত আশাহত হলো। তার মা আর একটু পরে চা টা নিয়ে আসলে কি হতো?
-“ আমি একটা কথা বলতে চাই মা বাবা কে।
-“ কি কথা?
-“ আসলে তোমরা আমার বিয়েটা যার সাথে ঠিক করেছো সে হচ্ছে আমার ভার্সিটির শিক্ষক শাফায়াত ইমতিয়াজ নোয়াস।
কবির শিকদার ত্বরিত গতিতে মেয়ের পানে তাকালো। অবাকের সুরে বলল-
-“ নোয়াস তোমার ভার্সিটির শিক্ষক?
-“ হ্যাঁ।
মুখে হাসি ফুটে উঠলো কবির শিকদার এর।
-“ তোমার ক্লাস নেয় নোয়াস্
-“ হ্যাঁ।
-“ একাউন্ট ডিপার্টমেন্টের?
-“ হুমম
-“ যাক তাহলে তো ভালোই। পড়াশোনায় অনেক টাই হেল্প হবে তোমার।
রুয়াত ভরকে গেলো বাবার কথা শুনে। সে তো বিয়ে টা ভাঙার জন্য বলেছে। আর তার বাবা আরো উৎসাহিত দিচ্ছে।
-“ আমি তার স্টুডেন্ট বাবা।
-“ সেটা তো আরো ভালো। তোমাকে আর একাউন্ট আলাদা টিচারের কাছে পড়তে হবে না। নোয়াসই পড়াতে পারবে।
-“ কিন্তু বাবা আমি..
কবির শিকদার শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো। বলিশের নিচ থেকে ফোন টা নিয়ে মেয়েকে মাঝ পথে থামিয়ে দিয়ে বলে-
-“ আমি একটু নিচ থেকে আসছি। ফিরতে রাত হবে।

কবির শিকদার চলে গেলো। রুয়াত বাবার যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। সামিরা শিকদার বিছানায় আয়েশ করে বসে বলে-
-“ যাওয়ার সময় কাপ টা নিয়ে যাস তো।
রুয়াত তাকালো মায়ের দিকে। কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল-
-“ মা।
-“ হু।
-“ আমি স্যার কে বিয়ে টা করতে চাই না।
সামিরা শিকদার ভ্রু কুঁচকালো।
-“ কেনো?
-“ উনি আমার স্যার।
-“ তাতে কি?
-“ তাতে কি মানে? আমি স্যার কে বিয়ে করতে চাই না।
-“ তাহলে কি রিকশাওয়ালা খুঁজে বিয়ে দিব?
-“ রিকশাওয়ালা কে টানছো কেনো তুমি। বিয়ে টা কি ভাঙা যায় না?
-“ বিয়ে ভাঙার মতো তো তেমন কিছু দেখছি না আমি।
-“ বাট আমি তো রাজি না।
-“ কোন মেয়েই বা বিয়ের সময় রাজি থাকে? আমিও রাজি ছিলাম না তোর বাবা কে বিয়ে করার সময়। তাও দেখ আটাশ বছর পার করে দিলাম। তুই ও পার করে দিতে পারবি।
-“ তারমানে বিয়েটা আমার তার সাথেই হচ্ছে?
-“ হ্যাঁ।
রুয়াত কিছু বললো না। রেগে হন্তদন্ত হয়ে রুমে থেকে বেরিয়ে গেলো। সামিরা শিকদার পেছম থেকে রুয়াত কে চায়ের কাপ টা নিয়ে যেতে বলল। কিন্তু রুয়াত কানেই নিলো না কথাটা।

রুয়াত কে রেগে রুমে ঢুকতে দেখে রজনী হাই তুলতে তুলতে বলে-
-“ পারলি বিয়ে ভাঙতে?
রুয়াত জবাব দিলো না। রজনী রুয়াতের পাশে বসলো। তার বোন টা মিছে রাগ করছে। রজনী রুয়াত কে নিজের দিকে ঘুরালো। গালে আলতো করে হাত রেখে বলল-
-“ আব্বু বেশ বিচক্ষণ মানুষ। নোয়াসের মধ্যে ভালো কিছু আছে বলেই আব্বু তোর বিয়ে টা নোয়াসের সাথে ঠিক করেছে। বাবা মা রা ছেলেমেয়েদের অসুখী রাখবে এমন জায়গায় নিশ্চয়ই বিয়ে দেয় না। আর আব্বুর বিরুদ্ধে গিয়ে কিছু করলে তার ফলাফল কি হয় তা নিশ্চয়ই আমাকে দেখে ববুঝতে পারছিস। আমি চাই না রুয়াত তুই আব্বুর অমতে কোনো কাজ করিস। ছোট থেকেই মানুষ টা বেস্ট জিনিস গুলোই আমাদের দিয়েছে। জীবনসঙ্গী হিসেবে বেস্ট টাই তোকে দিচ্ছে। এখন বুঝছিস না কিন্তু পরে ঠিকই বুঝবি। আর আব্বুর কিন্তু তোকে নিয়ে বেশ আশাবাদী সে অলওয়েজ। সো সে অসন্তুষ্ট হবে এমন কাজ করিস না বোন।

রুয়াত রেগে থাকলেও বোনের কথাগুলো কানে আসতেই শান্ত চোখে তাকালো বোনের দিকে। কেমন বুকটা দুমড়ে মুচড়ে উঠছে রুয়াতের। তার বোন টা কি এখনও অতীত টা ভুলতে পারে নি? এখনও কি মাঝরাতে উঠে কান্না করে? আলাদা রুম হওয়ায় এখন আর বোনের কান্নায় সঙ্গী হতে পারে না রুয়াত।

রজনীর গালে আলতো করে হাত রাখে রুয়াত। রজনীর চোখ কেমন ছলছল করছে। রুয়াত জড়িয়ে ধরলো বোন কে।
-“ আমি বিয়ে টা করবো আপু। হ্যাঁ বিয়েটা করবো। বাবার অমতে যাব না। তোমার সব কথা শুনবো।
রজনীর চোখ দিয়ে টুপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়লো। রুয়াত দেখার আগেই সেটা সন্তপর্ণে মুছে ফেললো। মেয়েটা বড্ড ভালোবাসে রজনী কে। চোখের জল টুকু দেখলে তার চোখ দিয়েও গড়াবে অশ্রু।
রজনী রুয়াতের থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে হাসার চেষ্টা করে বলে-
-“ গোসল করে ফ্রেশ হয়ে আয়। দুপুরের খাবার খেতে হবে তো নাকি।
রুয়াত বোনের দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে আলমারি থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়।

রজনী লম্বা শ্বাস ফেলে, চাইলেও কিছু অতীত একেবারে নিঃশেষ করে মুছে ফেলা যায় না স্মৃতি থেকে। অতঃপর বসা থেকে উঠে খাবার আনতে চলে যায়।

—————————-

বিকেলে ভার্সিটি থেকে বাসায় ফিরে শাফায়াত। বসার ঘরে বসে গলা ছেড়ে এক গ্লাস ঠান্ডা পানি চায়। শাফায়াতের ছোট বোন সানজিদা ঠান্ডা পানি এনে ভাইয়ের হাতে ধরিয়ে দেয়। শাফায়াত ভ্রু কুঁচকালো বোন কে পানি দিতে দেখে। নিত্যদিন তার মা দিয়ে থাকে। যেদিন সে বাসায় থাকে না সেদিন ছোট বোন দেয়। তারমানে তার মা বাসায় নেই?
-“ মা বাসায় নেই?
সানজিদা সোফায় বসতে বসতে বলে-
-“ না। আম্মু বের হইছে।
-“ কোথায় গেছে?
-“ স্বর্ণের দোকানে গয়না আনতে।
-“ কিসের গয়না?
-“ ও মা ভুলে গেলে? তোমার না সামনে বিয়ে ভাইয়া। ভাবির জন্য গয়না আনতে গেছে।
শাফায়াত অর্ধেক পানি খেয়ে আর খেতে পারলো না। বিয়ের ডেটই ফিক্সড হলো না আর তার মা এমন একটা তোড়জোড় শুরু করেছে মনে হচ্ছে বিয়ে কালই হতে যাচ্ছে।
-“ সাদমান কোথায়?
-“ সাদমান ভাইয়াই তো আম্মুকে নিয়ে গেছে।
-“ হতচ্ছাড়া টা নিশ্চয়ই উসকিয়েছে আম্মুকে।
-“ তা আর বলতে! মনে হচ্ছে বিয়ে টা তোমার না ওর।
-“ আসুক আজ বাসায় ঝেঁ’টিয়ে আমেরিকায় ফেরত পাঠাবো।
-“ সে চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও ভাইয়া। সাদমান ভাই এক বছরের আগে আর যাচ্ছে না আমেরিকা। খালা কে ফোন দিয়ে এটাই বলেছে।

শাফায়াত কিছু বললো না। কলিং বেল বাজতেই দরজার দিকে তাকালো। সানজিদা বসা থেকে উঠে দরজা খুলে দিলো। শাফায়াতের মা আর সাদমান এসেছে। হাতে তাদের শপিং ব্যাগ। শারমিন বেগম ভেতরে ঢুকে সোফায় গা এলিয়ে দেয়। যা গরম পরেছে বাহিরে ঘেমে-নেয়ে একাকার। সাদমান শপিং ব্যাগ টি-টেবিলে রেখে শাফায়াত এর দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ব্রো তোমার বিয়ে অথচ খাটছি আমি। দেখো খালামনি কে নিয়ে ভাবির জন্য গয়না কিনে এনেছি। চোখ ফেরাতে পারবে না এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের গহনা গুলো দেখে।
শাফায়াত বসা থেকে উঠে রুমের দিকে যেতে যেতে দাঁতে দাঁত চেপে বলে-
-“ রুমে আয় তুই। তোর এক্সক্লুসিভ ডিজাইনের গহনা তোকে পড়িয়ে দেখবো চোখ ফেরানো দুষ্কর হয় কি না।

সাদমান বুঝলো না তার ভাইয়ের কথার মানে। সানজিদার দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ ব্রো এভাবে বললো কেনো?
-“ আরে বাদ দাও ভাই এর কথা। আগে বক্স খুলে দেখাও ভাবির জন্য কেমন গহনা নিয়ে আসলা।
-“ দেখবি তুই?
-“ হ্যাঁ।
সাদমান বক্স গুলে এক এক করে খুলে দেখালো সানজিদা কে। সানজিদা গহনা গুলো দেখলো। সত্যি অসম্ভব সুন্দর গহনার কারুকাজ।
শারমিন বেগম বসা থেকে উঠে নিজের রুমে গেলো। ওয়াশরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে ছেলের রুমে ঢুকে। শাফায়াত নিজের রুমে ল্যাপটপে বসে কাজ করছিলো। শারমিন বেগম কে সামনে দাঁড়াতে দেখে ল্যাপটপে মুখ রেখেই বলে-
-“ যা বলতে এসেছো বলে ফেলো।
শারমিন বেগম ছেলের পাশে বসলো।
-“ কাল যাচ্ছি রুয়াত দের বাসায় ডেট ফিক্সড করতে। ভার্সিটি থেকে তাড়াতাড়ি দুপুরে ফিরিস।
-“ ক্লাস শেষ হলেই ফিরে আসবো।
-“ বললাম আগে ফিরতে। আর বলছিস ক্লাস শেষ হলেই ফিরবি!
-“ আচ্ছা চেষ্টা করবো।
-“ রুয়াত কি আজ ভার্সিটি এসেছিল? কথা হয়েছে তোদের?
শাফায়াত ল্যাটপট টা বন্ধ করলো। তপ্ত শ্বাস ফেলে বলল-
-“ রুয়াত ভার্সিটি এসেছিল কি না জানি না। আজ ওদের ক্লাস ছিলো না আমার।
-“ ফোন দিয়ে কথা বল একটু।
-“ ফোন দিয়ে কি কথা বলবো?
-“ আশ্চর্য বিয়ে তোদের। আগে থেকেই কথা বলে কম্ফোর্ট হয়ে নিবি না?
-“ নম্বার নেই।
-“ আশ্চর্য আমার কাছে চা নম্বর।
শাফায়াত ফোন এগিয়ে দিলো। শারমিন বেগম শাফায়াতের ফোনে রুয়াতের নম্বর সেভ করে দিলো। তারপর ফোন টা শাফায়াত এর হাতে ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো।

ঠিক সন্ধ্যা বেলা। আশেপাশে আঁধার নেমে এসেছে। রাস্তার পাশে থাকা কৃত্রিম আলো গুলো জ্বলে উঠেছে। রাস্তার ল্যামপোস্টের আলোর দিকে নির্নিমেষ চেয়ে আছে দু জোড়া চোখ। বেলকনির চেয়ারে বসে আছে রজনী, রুয়াত। সামনেই টেবিলে আছে স্ন্যাকস। রুয়াত স্ন্যাকস নিচ্ছে আর খাচ্ছে। দুজনের মুখে কোনো কথা নেই। নীরবতা ছেয়ে আছে পুরো বেলকনি জুড়ে। নীরবতার ছেদ হলো ফোনের আওয়াজে। রুয়াতের ফোন বেজে উঠেছে। রুয়াত ভ্রু কুঁচকালো। ফোনের স্কিনে তাকিয়ে দেখলো অচেনা নম্বর। রুয়াত কেটে দিলো। রুয়াতের ফোন কেটে দেওয়া দেখে রজনী বলে উঠে –
-“ কেটে দিলি কেনো ফোন?
রুয়াত স্ন্যাকস মুখে নিতে নিতে বলে-
-“ অচেনা নম্বর সেজন্য।
-“ দরকারী ও তো হতে পারে।
-“ দরকারী হলে আবার ফোন দিবে।

এদিকে সাদমান কান থেকে ফোন টা নামালো। ভ্রু কুঁচকে শাফায়াতের দিকে তাকিয়ে আশ্চর্য হয়ে বলল-
-“ ব্রো ফোন কে’টে দিলো ভাবি!
-“ তাতে আমি কি করবো?
সাদমান শাফায়ত এর দিকে এগিয়ে এসে বিছানায় বসে বলে-
-“ তুমি কি করবে মানে। তোমার ফোন ধরে নি বুঝতে পারছো?
-“ আমি কি প্রাইম মিনিস্টার যে আমার ফোন তার ধরতে হবে।
-“ প্রাইম মিনিস্টার না ঠিকই তবে লাইফ মিনিস্টার তো তুমি তার। আমার মনে হয় কি জানো?
-“ কি?
-“ ভাবি মনে হয় বুঝে ফেলছে ফোন টা তুমি না তার দেবর করছে সেজন্য কে’টে দিয়েছে।
-“ তাহলে আর প্লিজ বেলেহাজের মতো ফোন দিস না অন্যের বউকে।
সাদমান সহসা বসা থেকে উঠে দাঁড়ালো। অসহায় এর সহিতে বলল-
-“ আজ একটা বউ নেই বলে এভাবে অপমান করলে ব্রো! একদিন আমার ও বউ হবে দেখে নিও।
-“ আচ্ছা এখন যা নিজের রুমে। আর আমাকে ঘুমাতে দে।
-“ ভাবি কে ফোন দাও।
-“ দিব নি।
-“ আমার সামনেই দাও। দেখি ধরে কি না তোমার ফোন।
শাফায়াত কিছু একটা মনে করে ফোন দিলো রুয়াতের নম্বরে। রুয়াত ফের একই নম্বর থেকে ফোন আসায় কিয়ৎ ক্ষন তাকিয়ে রইলো ফোনের দিকে। রজনী রুয়াতের বাহুতে ধাক্কা দিয়ে বলল-
-“ রিসিভ কর।
রুয়াত ফোন টা রিসিভ করে হ্যালো বললো। সাদমান হতবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো শাফায়াতের দিকে। ফিসফিস করে বলে উঠল-
-“ দিলে টান আছে দেখছি তোমাদের ব্রো। তুমি ফোন দিলে আর ওমনি রিসিভ হলো! কথা বলো আমি তাহলে আসছি।

সাদমান রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। শাফায়াত ফোন টা নিয়ে বেলকনিতে চলে আসলো। বেলকনির রেলিং এ বা হাত দিয়ে বলে-
-“ হ্যালো।
ওপাশ থেকে রুয়াত বলল-
-“ কে আপনি ভাই? নম্বর টা তো চেনা লাগছে না আমার।
শাফায়াত ভ্রু কুঁচকালো ভাই বলাতে।
-“ আমি তোমার ভাই নই ইডিয়ট।
-“ তাহলে কে?
-“ হবু স্বামী।
রুয়াত কান থেকে ফোন টা নামালো। মুখের সামনে ধরে নম্বর টা আরেক বার দেখে নিলো।
-“ আমার নম্বর কই পেলেন?
-“ খুব কঠিন কাজ নয় নিশ্চয়ই তোমার ফোন নম্বর পাওয়া টা।
-“ তা অবশ্য ঠিক। তা কোনো দরকারে ফোন দিয়েছেন?
-“ হ্যাঁ। তুমি তোমার বাবা কে বলেছো যে তুমি আমাকে বিয়ে করতে রাজি না সেটা?
-“ বলতে পারলে নিশ্চয়ই এতোক্ষণে জেনে ফেলতেন বিয়ে টা ভেঙে গেছে।
-“ বলতে পারো নি কেনো ইডিয়ট?
-“ আশ্চর্য ইডিয়ট বলছেন কেনো আমাকে? আর আমার ঠেকা নাকি বলার। আপনি নিজেও বিয়ে তে রাজি না আপনি গিয়ে বলেন বিয়ে ভাঙার কথা। আপনার তো আবার স্টুডেন্ট বিয়ে করলে রেপুটেশন খারাপ হবে।
-“ তুমি নিজে রাজি না।
-“ তাতে কি। সব মেয়েই তো বিয়ের আগে রাজি থাকে না। বিয়ের পর ঠিকই রাজি হয়ে যায়। আমার ব্যাপার টাও ধরে নিন সেম। আপত্তি নেই আমার বিয়েতে। আপনার থেকে থাকলে প্লিজ বিয়ে টা ভেঙে দিয়েন। এখন রাখি।

রুয়াত শাফায়াতের মুখের উপর ফোন টা কেটে দিলো। রজনী হতবিহ্বল হয়ে তাকালো রুয়াতের দিকে।
-“ এভাবে মুখের উপর কেউ ফোন কে’টে দেয়?
-“ আমি দেই৷
-“ এতো সাহস পেলি কি করে? তুই না তাকে যমের মতো ভয় পাস?
রুয়াত চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে বত্রিশ পাটি দাঁত বের করে হেঁসে বলে-
-“ ওটা সামনা-সামনি আর ক্লাসেই। এমনি ফোনের ভেতরে আমি তার চৌদ্দ গুষ্ঠি ও উদ্ধার করে দিতে পারবো। আমি ফোনের ভেতরে বেশ অনেক টাই সাহসী ব্রেভ গার্ল।

এদিকে শাফায়াত ফোনের দিকে শক্ত মুখ করে তাকিয়ে আছে। কত বড় সাহস তার মুখের উপর ফোন কে’টে দেয়। তার সাথে কি সে প্রেমের আলাপ করার জন্য ফোন দিয়েছিল? নাহ্ শাফায়াত ইমতিয়াজ নোয়াস এই মেয়েকে দেখে নিবে। ভার্সিটি, বাসা, রুমে, বাহিরে সব জায়গায় অতিষ্ট করে ছাড়বে।

#চলবে?