গোধুলির শেষ বিকেলে তুমি আমি পর্ব-১৮

0
204

#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব১৮
#Raiha_Zubair_Ripti

নিস্তব্ধ রাত,চারিপাশ থেকে ঝিঝি পোকার ডাক ভেসে আসছে। রিসোর্টের নিজের রুমে জামাকাপড় ল্যাগেজে ভরছে রুয়াত। শাফায়াত এর হুকুম তাকে এক্ষুণি এ রুম ত্যাগ করে তার রুমে শিফট হতে হবে। যার দরুন এই রাত ১০ টা বাজে তাকে কাপড় গুছাতে হচ্ছে। সুইটি একটু পর পর রুয়াতের দিকে তাকাচ্ছে। কিছু বলতে চায়। রুয়াতের বিষয় টা নজরে আসলো। তাই জামাকাপড় গুছাতে গুছাতেই বলল-
-“ মনে কোনো প্রশ্ন ঘুরপাক খেলে তা আঁটকে না রেখে বলে ফেলো।
সুইটি ভরকে গেলো। আমতা-আমতা করে বলল-
-“ আ..আসলে রুয়াত একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাচ্ছি।
-“ হু বলো।
-“ স্যারের সঙ্গে তোমার বিয়ে হয়েছে অথচ ভার্সিটি তে তো তোমাদের দেখে মনে হয় নি।
-“ আমরা বুঝতে দেই নি। তাই মনে হয় নি।
-“ আচ্ছা সত্যি করে একটা কথা বলো তো।
-“ কী?
-“ তোমাদের বিয়ের কয়দিন হয়েছে?
-“ সপ্তাহখানেক পার হয়েছে।
-“ ওহ্ তারমানে তোমাদের মধ্যে সব হয়ে গেছে?
রুয়াত কাজ থামিয়ে দিলো। সুইটির দিকে তাকাতেই সুইটি রুয়াতের চাহনি দেখে বলে-
-“ সরি বেশী ব্যক্তিগত কথা বলে ফেলেছি বোধহয়।
-“ আমাদের মধ্যে সব হয়ে গেছে এভরিথিং। এখন আবার বলো না এক্সপেরিয়েন্স গুলো শেয়ার করতে।
সুইটি হেঁসে বলে-
-“ এমা না না বলতে হবে না। মাইন্ড করছো?
-“ না। সিঙ্গেল ফ্রেন্ড গুলো এমন আস্ক করেই থাকে বিবাহিত ফ্রেন্ডদের। ইট’স নরমাল।
-“ তুমি চলে গেলে আমাকে একাই থাকতে হবে এই রুমে। মনটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে।
-“ কি আর করার বলো। মহাশয় এর আদেশ মানতেই তো হবে। এখন আসছি। সকালে দেখা হবে।

রুয়াত ল্যাগেজ টা নিয়ে উঠে দাঁড়ালো। তার মতে নিজেদের ভেতরের খবর বাহিরের মানুষ কে না জানানোই শ্রেয়। এই যে তার আর শাফায়াত এর মাঝে যে এখনও কিছু হয় নি। এটা বললে নিশ্চয়ই সুইটির প্রশ্ন করার মাত্রা টা আরো বেড়ে যেত। সব কথা শেয়ার করতে হয় না। এই কথাটা খুব মানে রুয়াত। হোক সে যতই কাছের।

শাফায়াত বিছানায় পা ঝুলে বসে অপেক্ষায় আছে রুয়াতের। ত্রিশ মিনিট হলো এখনও আসছে না মেয়েটা। দরজায় কড়া নাড়ার শব্দ শুনে তড়িঘড়ি করে বিছানা থেকে নেমে দরজার কাছে আসলো। সিটকানি টা খুলে দিতেই রুয়াত কে দেখতে পায়৷ শাফায়াত দরজা থেকে সরে আসে। রুয়াত ভেতরে ঢুকে। শাফায়াত দরজা টা আঁটকে দেয়। দেওয়াল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ পাক্কা ত্রিশ মিনিট অপেক্ষা করিয়েছো।
রুয়াত জামাকাপড় গুলো আলমারিতে রাখা শাফায়াত এর জামাকাপড় এর পাশে খালি জায়গায় রেখে বলে-
-“ গোছগাছ করতে সময় লাগবে না?
-“ তাই বলে ত্রিশ মিনিট? সামান্য একটা ল্যাগেজই তো।
-“ ইচ্ছে করে দেরি করি নি। এতো অধৈর্য্য পানা কেনো করছেন? এটা মানাচ্ছে না আপনার সাথে।
শাফায়াত এগিয়ে আসলো। পেছন থেকে রুয়াতের দু বাহু ধরে নিজের দিকে ঘুরিয়ে বলে-
-“ আমি যে অধৈর্য্য নই তার কি প্রামন পাও নি এখনও তুমি? বিয়ের সপ্তাহ খানেক পার হয়ে গেছে,অথচ কোনো বিবাহিত পুরুষ এমন ধৈর্য্য নিয়ে থাকতে পারে তোমার জানা মতে?
রুয়াত মুখ বেঁকিয়ে অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে বিরবির করে বলে-
-“ কে বলেছে এতো ধৈর্য্য নিয়ে থাকতে। আমি কি বলেছি? নিজের ইচ্ছে তেই তো থাকছে।
শাফায়াত রুয়াত কে কিছু বলতে না দেখে বাহু ঝাঁকিয়ে বলে-
-“ এখন চুপ কেনো? অ্যান্সার মি।
-“ কি অ্যান্সার দিব? মনে হলো আমাকে দেখতে না পেয়ে আপনি অধৈর্য্য হয়ে গিয়েছিলেন সেজন্য বলেছি। তা হন নি অধৈর্য্য?

শাফায়াত রুয়াতের বাহু ছেড়ে দিলো। রুয়াতের নাকের ডগায় তর্জনী আঙুল দিয়ে ছুঁয়ে দিয়ে বলল-
-“ অল্প স্বল্প। বেশি না ওকে।
-“ বেশি হতে না করছে কে?
-“ কেউ না।
-“ তাহলে বেশি করে মিস করুন।
-“ সত্যি?
-“ হুমম।
-“ আচ্ছা ম্যাডাম। রাত তো অনেক হয়েছে এবার চলো ঘুমাতে। সকালে তোমাকে একটা জিনিস দেখাতে নিয়ে যাব।
-“ কি?
-“ সারপ্রাইজ। সকাল সকাল উঠার জন্য আগে তাড়াতাড়ি ঘুম দিতে হবে।
-“ আচ্ছা আপনি বিছানায় যান আমি ওয়াশরুম থেকে আসতেছি।

শাফায়াত বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে অপেক্ষা করলো রুয়াতের ফেরার। রুয়াত দশ মিনিট পর ওয়াশরুম থেকো ফিরে শাফায়াত কে বসে থাকতে দেখো বলে-
-“ শুয়ে পড়েন নি কেনো?
-“ অপেক্ষা করছিলাম। অপেক্ষা জিনিস টা আজকাল করতে ভালোই লাগে।
-“ কেনো আগে ভালো লাগতো না?
-“ না। অপেক্ষা জিনিসটা কে আমি তেঁতোর সাথে তুলনা করতাম আগে। আর এখন মিষ্টির সাথে।
রুয়াত বিছানায় এসে পা তুলে বসে বলে-
-“ হোয়াই?
-“ কারন এই যে অপেক্ষা করাতে আমাদের সম্পর্ক টা কেমন তেঁতো থেকে মিষ্টি তে পরিনত হচ্ছে। তবে সব ক্ষেত্রে অপেক্ষা জিনিস টা খাটবে না। কিছু ক্ষেত্রে আমি প্রচুর ডেস্পারেট হয়ে যাব।
রুয়াত বুঝলো না শেষের কথাটা। তাই বলল-
-“ কোন ক্ষেত্রে?
শাফায়াত রুয়াতের দিকে এগিয়ে এসে কানের ললিতে ঠোঁট ছুঁইয়ে ফিসফিস করে বলে-
-“ তুমি এতো অবুঝ জানা ছিলো না তো রুয়াত! কোন ক্ষেত্রে ছেলেরা ডেস্পারেট হয়ে পড়ে? সেদিনই তো তুমি ডেস্পারেট হয়ে আকার ঈঙ্গিত দিলে।
রুয়াত ভাবলো। দৃশ্য টা মনে পড়তেই চোখ পাকিয়ে তাকালো শাফায়াত এর দিকে। শাফায়াত রুয়াতের গাল টেনে বিছানায় শুয়ে চোখ টিপে বলে-
-“ গুড নাইট। সকালে দেখা হচ্ছে।
রুয়াত শব্দ করে বিছানায় শোয়। শাফায়াত তাকায়,রুয়াত চোখ বন্ধ করে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। শাফায়াত রুয়াতের গা ঘেঁষে বলে-
-“ বলতে না বলতেই ডেস্পারেট হয়ে যাচ্ছ! আমার চেয়েও দেখি তুমি বেশি কন্ট্রোললেস রুয়াত। জাস্ট বলাতেই এই অবস্থা তাহলে ইমাজিন করো যখন প্র্যাকটিক্যালি করবো তখন কি হবে! তুমি তো…
শাফায়াত পুরো কথাটা শেষ করতে পারলো না। তার আগেই রুয়াত কটমট চাহনি নিয়ে তাকিয়ে দাঁত চেপে বলে উঠল-
-“ আপনি এমন ১৮+ কথাবার্তা শুরু করলেন কেনো?
শাফায়াত মুখের উপর থেকে রুয়াতের হাত টা সরিয়ে বলল-
-“ বিকজ আমার বয়স টা ১৮+ এর উপরে ২৯। সেই হিসেবে এটা আমার অধিকার বলার। বলতেই পারি।
-“ না বলতে পারেন না।
-“ তাহলে করতে তো পারি। করবো?
-“ উফ চুপ করবেন?
-“ আচ্ছা করলাম। শোনো পরশু সকালে কিন্তু আমরা এখান থেকে দাদু বাড়ি ফিরবো। সাদমান কে বলে দিয়েছি ও চলে আসবে সানজিদা কে নিয়ে সোজা দাদু বাসায়৷
-“ ওহ্ তাহলে আপু কেও একটু নিয়ে আসতে বলুন না। গ্রামের দিকটা ঘুরলে একটু ভালো লাগবে।
-“ সে বলে দিব। এখন একটা কাজ করতো।
-“ কি কাজ?
-“ তোমার মাথা টা আমার এই বুকটার উপর রাখো তো। দেখি কেমন ফিল হয়।

ইশ কি সুন্দর আব্দার শাফায়াত এর। রুয়াতের হাসি পেলো। নিরামিষ আমিষ হতে চাইছে। বাট পেরেও পারছে না৷ রুয়াত মাথাটা উচু করে শাফায়াত এর বুকের উপর রাখলো। শাফায়াত রুয়াতের চুলের ভাজে আলতো করে ঠোঁট ছুঁইয়ে দিয়ে বলে-
-“ শুনেছি বিয়ের পর স্বামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমায় স্ত্রী রা। বাট তুমি তো রাখতে পারতে। রাখো নি কেনো? কেমন সুন্দর একটা ফিল পাচ্ছি।

রুয়াত শাফায়াতের এই ফিল টাকে আরো রোমাঞ্চকর করার জন্য শাফায়াত এর শার্টের উপরের দুটো বোতাম খুলে উন্মুক্ত ধবধবে ফর্সা লোম বিহীন বুকে চুমু খেয়ে বলল-
-“ আপনার ফিল টাকে আরো বাড়িয়ে দিলাম। আমাকে আবার লু’চি মেয়ে ভাববেন না একদম।

রুয়াতের চুমু খাওয়ার সাথে সাথে শাফায়াতের পুরো শরীর জুড়ে অদ্ভুত এক শিহরণ বয়ে গেলো। বুকের উপর থেকে রুয়াত কে সরিয়ে রুয়াতের দিকে উঠে ঝুকলো। রুয়াতের ঠোঁটে লেগে আছে হাসি। শাফায়াত রুয়াতের মুখের কাছে নিজের মুখ খানা নিয়ে বলে-
-“ ফিল টা বাড়িয়ে দিতে গিয়ে যে নিজের বিপদ নিজে ডেকে আনলে। এখন একটা অঘটন ঘটে গেলে এর দায়ভার কে নিবে। তুমি?

রুয়াত শাফায়াত এর গলা জড়িয়ে ধরলো। ফিসফিস করে বলল-
-“ সামান্য দায়ভার নিতে জানে রুয়াত।
শাফায়াত ঠোঁট কামড়ে কিছু ভেবে বাঁকা হাসলো। সময় ব্যয় না করে রুয়াতের গোলাপি ঠোঁট জোড়ায় নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দিলো।

অদ্ভুত এক ভালো লাগা কাজ করছে রুয়াতের ভেতর। কে না চাইবে বিয়ের পর স্বামীর এই ভালোবাসা? রুয়াতের ও চাই। তাই তো একটু উস্কে দিলো শাফায়াত কে। শাফায়াত প্রায় দশ মিনিট রুয়াতের ঠোঁটে ডুবে রইলো। রুয়াত শাফায়াতের চুলের ভাজে হাত দিয়ে যেই না সঙ্গ দিতে যাবে। আর তখনই শাফায়াত ছেড়ে দিলো। রুয়াতের থেকে সরে এসে বা হাতের বুড়ো আঙুল দিয়ে ঠোঁট মুছে বলে-
-“ টেস্ট অনুভূতি দুটোই দারুন ছিলো।
এদিকে রুয়াতের ইচ্ছে করছে শাফায়াত এর মাথার ঘন চুল গুলো টেনে ছিঁড়ে ফেলতে। অনুভূতি জোয়ারে ভাসিয়ে দিয়ে এখন দূরে সরে যাওয়া?
রুয়াত শোয়া থেকে উঠলো। শাফায়াত এর বোঝার আগেই রুয়াত শাফায়াত এর বুকে কামড় বসিয়ে দিলো। শাফায়াত ব্যথায় চোখ মুখ খিঁচে ধরলো। রুয়াত শাফায়াত কে ছেড়ে তারপর অন্য দিকে ঘুরে শুয়ে বলল-
-“ টেস্ট অনুভূতি দুটোকেই তিক্ত করার জন্য এই শাস্তি। অসভ্য পুরুষ।

শাফায়াত কামড়ে দেওয়া জায়গায় হাত দিয়ে ডলতে লাগলো। শাফায়াত ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে দেখে, ব্যাথাটা গাঢ ভাবেই দিয়েছে। দাঁত বিঁধে রক্ত জমাট হয়ে গেছে।
-“ রাক্ষসী মেয়ে একটা। এভাবে কেউ কামড়ে দেয়?
-“ বেশ করেছি। আরো মাঝ রাস্তায় ছেড়ে চলে যাবেন?
শাফায়াত রুয়াত কে নিজের দিকে ঘুরালো। এক ভ্রু উঁচু করে বলে-
-“ বাই এনি চান্স তুমি কি চাইছিলে ওসব?
রুয়াত ঝটকা মেরে শাফায়াত এর থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে ঘুরলো অন্য দিকে। মনে মনপ বলল-

-“ অসভ্য পুরুষ বুঝেছে তবুও মুখে জিজ্ঞেস করছে। রুয়াত নিজেকে কন্ট্রোল কর। উনি পুরুষ হয়ে এমন কন্ট্রোলে থাকতে পারলে তোর আরো বেশি থাকার কথা। আর একদম বুঝতে দিবি না এই অসভ্য পুরুষ কে।

শাফায়াত ফের টেনে কাছে আনলো রুয়াত কে। রুয়াত জোর করে সরে আসতে চাইলে শাফায়াত আসতে দিলো না। শক্ত করে চেপে ধরে রুয়াতের গলায় মুখ গুঁজে বলল-
-“ রাগ টা পুষিয়ে রাখো পরে কাজে লাগবে। এখন ঘুমাও।

————

ভোর পাঁচ টা,,রোয়াত এখনও ঘুমে বিভোর। শাফায়াত ফর্মাল ড্রেসআপ পড়ে রেডি হয়ে আছে। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘুমন্ত রুয়াত কে দেখছে। ঘুমন্ত রুয়াত কে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। পৃথিবীর সকল মায়া যেনো এই তেলতেলে মুখটার উপর এসে পড়েছে। শাফায়াত হাত ঘড়িটায় সময় দেখলো। নাহ্ একন রোয়াত কে ডাক না দিলে দেরি হয়ে যাবে। তাই আলতো করে হাত টা রুয়াতের গালে রেখে বলল-
-“ এই রুয়াত উঠো। দেরি হয়ে যাচ্ছে তো।
রুয়াত নড়েচড়ে আড়মোড়া ভেঙে শোয়া থেকে উঠে বসলো। চোখ ডলতে ডলতে বলল-
-“ কিসের দেরি হয়ে যাচ্ছে?
-“ রাতে যে বললাম কিছু দেখাবো তোমায়। চটপট উঠে রেডি হও মিস করতে না চাইলে।

রুয়াত ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসলো। ঘুম এখনও লেগে আছে চোখে। শাফায়াত রুয়াতের হাত ধরে রিসোর্ট থেকে বের হলো।

রোহান বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলো। সারাটা রাত জেগে কাটিয়েছে। ঘুম রা ধরা দেয় নি। চোখ দুটো অসম্ভব লাল। হাতে জলন্ত সিগারেট। আর পাশেই নেহাল দাঁড়িয়ে আছে। একটু আগেই ঘুম থেকে উঠে পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। রোহানের দৃষ্টি নিচেই ছিলো। শাফায়াত যখন রুয়াতের ধরে বের হলো তখনই নজরে এসেছে। সহসা বুকটা দুমড়ে মুচড়ে উঠলো৷ উফ কি অসহ্য সেই ব্যথা। রোহানের ইচ্ছে করলো বুক টা কে’টে দেখতে। ইচ্ছে করলো ব্যথা যুক্ত অংশ টুকু কে’টে শরীর থেকে আলাদা করতে। অনুভূতি টা ভেতরেই দাফন করার জন্য রোহান জলন্ত সিগারেট মুখে নিয়ে টান দিতেই আকস্মিক নেহালের ফোন থেকে গান বেজে উঠল-

❝হাতে আমার নেশার বোতল চক্ষু দুইটা লাল
কার ঠোঁটের আজ পরশ পাইয়া হয় প্রিয়ার সকাল
হাতে আমার নেশার বোতল চক্ষু দুইটা লাল
কার ঠোঁটের আজ পরশ পাইয়া হয় প্রিয়ার সকাল
ঘরটা আমার ধোঁয়ায় ভরা বিষাক্ত এক ঘ্রাণ
ধোয়ার সাথে হয়নি আড়ি হয়না অভিমান
আইজ আবেগ দিয়া নেশার নৌকায় পাঙ্খা লাগাইছি
মাতাল হইয়া প্রিয়ার খোঁজে পাড়ি জমাইছি।❞

রোহান কটমট চাহনি নিয়ে তাকালো নেহালের দিকে। বুঝতে বাকি নেই গান টা কার উদ্দেশ্যে। নেহালের মুখ জুড়ে দাঁত কেলানো হাসি। রোহান মুখে থাকা সিগারেট টা ছুঁড়ে ফেলে দিলো । তারপর ঘটঘট পায়ে রুমে এসে বলল-
-“ হালার পু* গান ডা তোর জায়গা মতো ভরে দিব আর একবার কাটা গায়ে নুনের ছিটা দিবি তো। এই দুই তালা থিকা লাত্থি দিয়ে ফেলায় দিব।

নেহাল রুমে ঢুকতে ঢুকতে ভয় পাওয়ার মতো মুক নিয়ে বলে-
-“ এমন হুমকি আমাকে দিতে পারলি রোহু? আমি না তর ল্যাদা কালের ফ্রেন্ড? তোর কষ্ট টা কমানোর জন্য ই তো নেশার নৌকার গান টা ছাড়লাম।
-“ তুই আমার হে*** কমায় দিছস। রুম থিকা বের হ। নইলে তরে যে কি করমু নিজেও জানি না।
নেহাল মুক বেঁকিয়ে রুম থেকে বের হতে হতে বলে-
-“ হা’লা ছ্যাকা খোর খা বেশি বেশি ছ্যাকা। আমার কথা না শুনলে এমনই তো হবে। ফ্রেন্ডের থিকা ভালোবাসা রে বড় কইরা দেখছো তাই না? এহন খাও উম্মা উম্মা চুম্মার বাঁশ।

ভোরের স্নিগ্ধ আবহাওয়া বরাবরই রুয়াতের ভীষণ পছন্দের। আর সেটা যদি হয় সমুদ্র সৈকতের তীরে তাহলে তো কথাই নেই। শাফায়াত রুয়াত কে নিয়ে এসেছে সমুদ্র সৈকতে সূর্যোদয় দেখার জন্য।
তবে এখনও সূর্য উঠে নি। সূর্যোদয় টা ভালোমতো দেখার জন্য শাফায়াত রুয়াত কে নিয়ে ঝাউবনে গেলো। এখান থেকেই সূর্যাস্ত ভালো দেখা যায়,

মিনিট কয়েকের ভেতর সমুদ্রের পেট চিড়ে সূর্য উঠতেছে। মুহূর্ত টায় রুয়াত জাস্ট হা হয়ে গিয়েছে। এই প্রথম সে দেখছে সুর্যোদয়। শাফায়াত এর হাত চেপে ধরে ঝাঁকিয়ে খুশি হয়ে বলল-
-“ থ্যাংকু থ্যাংকু এত্তো গুলো থ্যাংকু আমাকে এটা দেখার সুযোগ করে দিয়ে। কি সুন্দর এই মুহূর্ত। আমাকে রাতেও নিয়ে আসবেন? আমি এই শেষ রাত টা সৈকতের তীরে বসে একাকী থাকতে চাই আপনার সাথে৷ নিয়ে আসবেন?
শাফায়াত হাসলো। রুয়াতের হাতের পিঠে চুমু খেয়ে বলল-
-“ অবশ্যই নিয়ে আসবো তোমায়। তোমার সকল ইচ্ছে পূরণ করবো আমি আমার সাধ্যমতো।

#চলবে?