#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৩৭
#Raiha_Zubair_Ripti
-“ জ্বর টা কি কমেছে?
রোহান ঘুমিয়েছিল। নীতির ফোন কল পেয়ে ঘুম টা ভাঙলো। নীতির কথায় রোহান কপালে হাত রাখলো। হাল্কা গরম অনুভব করলো। তারপর বলল-
-“ আছে একটু একটু জ্বর।
-“ খেয়েছেন সকালে?
রোহান পাশে থাকা এলার্ম টার দিকে তাকালো। ৬ টা বেজে ২৫ মিনিট। এতো সকালে কে খায়?
-“ মাত্র ৬ টা ২৫ বাজে নীতি। এতো সকালে কি আমি কখনও খাবার খাই?
-“ আর পাঁচ টা দিনের মতো কি আজকের সকাল?
-“ কেনো আজ কি সূর্য পূর্ব দিকে না উঠে পশ্চিম দিকে উঠেছে নাকি?
-“ না তা উঠে নি। তবে আপনার তো শরীর টা ভালো না। এখনও নিশ্চয়ই শুয়ে আছেন?
-“ হু,,তোর ফোন টা না আসলে দশ টা অব্দি শুয়ে থাকতাম।
-“ উঠুন। খাবার টা একটু গরম করে খেয়ে নিন।
-“ আলসেমি লাগছে রে। এই খাবার গরম করতে হবে দেখে খেতেও ইচ্ছে করছে না।
-“ রান্না তো করতে হবে না। চুলায় না পারলেন। ওভেনে দিয়ে কোনো রকমে গরম করুন। ফ্রিজের খাবার গরম না করে খাওয়া উচিত না।
-“ তাহলে তুই এসে গরম করে দিয়ে যা।
-“ আমি যেতে পারলে গিয়ে গরম করে আপনাকে খাইয়ে আবার রান্নাও করে দিয়ে আসতাম। কিন্তু সম্ভব নয়।
-“ কেনো রে কোন মহাকাজে আছিস যে আসতে পারবি না?
-“ ভার্সিটি তে এডমিট হতে যাব।
-“ ওহ্ আচ্ছা। কখন যাবি?
-“ আট টা বাজলে।
-“ সাথে কে কে যাবে?
-“ আব্বু আর ভাইয়া।
-“ তোর বাপের কি আজ ভার্সিটির ক্লাস নেই?
-“ আছে.. মিস দিবে।
-“ তোর বাপের চাকরি টা খেয়ে নিতে হবে দেখছি।
নীতি ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো-
-“ কেনো?
-“ এই যে তোর বাপ ক্লাস বাদ দিবে তোর জন্য। কত স্টুডেন্ট এর পড়াশোনায় ক্ষতি হবে এই ক্লাস মিস হওয়ায় জানিস?
-“ আশ্চর্য অন্য টিচার নিবে আব্বুর বদলে।
-“ চুপ। তোর বাপ কে ক্লাস নিতে বল গিয়ে। আর নোমানের কি ক্লাস নেই?
-“ আরেহ্ তারা কি সাধে ক্লাস মিস দিবে নাকি। আমার জন্য ই তো দিবে। মাত্র ১ দিনই তো। তেমন আহামরি ক্ষতি কারোরই হবে না।
-“ লাভ ক্ষতি বুঝিস নাকি? যদি বুঝতি তাহলে একজনের যে এতে বিশাল ক্ষতি হচ্ছে সেটা বুঝতি।
নীতি এক গাল হাসলো। তবে শব্দ হলো না৷ পরক্ষণেই ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কার বিশাল ক্ষতি হচ্ছে?
রোহান ঠোঁট কামড়ে কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল-
-“ উমমম বুঝিস নি এখনও কার ক্ষতি হচ্ছে? আমি নিশ্চিত তুই এতক্ষণে বুঝে গেছিস।
-“ সত্যি বুঝি নি।
-“ দুঃখিত আমি তোর বাপের মতো টিচার নই। সেজন্য ভেঙে ভেঙে বুঝাতে পারবো না। ওতো ধৈর্য্য ও নেই আমার। শোন একটা কথা।
-“ হুমম বলুন শুনছি।
-“ দেখেশুনে যাবি। আর নীলয় কি এখনও তোকে বিরক্ত করে?
-“ নাম্বার চেঞ্জ করেছি তো। হয়তো এই নম্বরের হদিস এখনও পায় নি দেখে বিরক্ত করতে পারছে না।
-“ বিরক্ত করলে আমাকে জাস্ট জানাবি। নীলয়ের চৌদ্দ গুষ্টির বাত্তি নিভানোর ব্যবস্থা আমি করে আসবো।
-“ আচ্ছা আচ্ছা সে না হয় জানাবো। এখন খাবার টা গরম করে খেয়ে ঔষধ টা খেয়ে নিন তো দেখি।
– “ হুমম। রাখছি এখন।
-“ হুমম আল্লাহ হাফেজ।
নীতি ফোন টা কেটে দিয়ে খাবার টেবিলে গিয়ে বাপ ভাইয়ে সাথে খাবার টা খেয়ে নেয়। তারপর আটটা বাজলে বেরিয়ে পড়ে ভাসিটির উদ্দেশ্যে।
রুয়াত সকাল সকাল ব্রেকফাস্ট বানিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গোসল টা সেরে নিতে। রান্না করার সময় আজ ঘামে পুরো কাহিল হয়ে গিয়েছে। গোসল না করলে টিকা বড় দায় হয়ে পড়বে। গোসল সেরে সুতি একটা কাপড় পড়ে মাথা মুছতে মুছতে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। সর্বপ্রথম চোখ যায় বিছানায় শুয়ে থাকা ঘুমন্ত শাফায়াত এর উপর। দু হাত গালের নিচে দিয়ে গুটিশুটি হয়ে শুয়ে আছে। কি নিষ্পাপ বাচ্চাই না লাগছে দেখতে। রুয়াতের একান্তই ব্যক্তিগত এই পুরুষটি। যখনই রুয়াত ভাবে এ কথা তখনই ভালো লাগার এক শিহরণ বয়ে যায় সারা অঙ্গ জুড়ে। রুয়াত ভেজা কাপড় গুলো বেলকনিতে মেলে দিয়ে শাফায়াত এর কাছে আসে। ভেজা চুল থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে রুয়াত এর। রুয়াত সেই ভেজা চুল শাফায়াত এর মুখের উপর ধরে। টপটপ করে পানি শাফায়াত এর মুখের উপর পড়তে লাগলো। শাফায়াত চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো। ঘুমন্ত অবস্থায় থেকে একবার মুখের পানি মুছে ফেললো। রুয়াত মুখ চেপে হাসলো শাফায়াত এর কাণ্ডে। শাফায়াত ফের মুখ ভেজা অনুভব করতেই এবার চোখ মেলে তাকালো।
রুয়াত কে এক হাতে ভেজা চুল ধরে থাকতে দেখে আর আরেক হাতে মুখ চেপে হাসতে দেখে বুঝতে আর বাকি রইলো না এটা রুয়াতের কাণ্ড। শাফায়াত কে চোখ মেলে তাকাতে দেখে রুয়াত উঠে আসতে চাইলে শাফায়াত হাত টেনে একদম নিজের সাথে মিশিয়ে নেয়। রুয়াত ভরকে যায়। উঠে আসতে চাইলে শাফায়াত আরো চেপে ধরে। রুয়াত মাথা উঁচু করে শাফায়াত এর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে-
-“ আহ্ ছাড়ুন তো.. সাত সকাল বেলা কি শুরু করলেন।
শাফায়াত এক আঙুল দিয়ে রুয়াতের গালে স্লাইড করতে করতে বলে-
-“ সেম কুয়েশ্চন আমার শোনা। সাত সকাল বেলা কি শুরু করলে? আমাকে জ্বালাচ্ছ কেনো?
রুয়াত অবাক হবার ভান করে বলল-
-“ কিহ্! আমি আপনাকে জ্বালাচ্ছি?
-“ তা নয় তো কে?
-“ ভুল। আমি মোটেও আপনাকে জ্বালাই নি। এবার ছাড়ুন তো দেখি। এতো বেলা অব্দি কেউ ঘুমায়? আমি যে একা একা সকালে এতো খেটেখুটে রান্না করলাম। আপনার কি উচিত ছিলো না আমাকে সাহায্য করা?
-“ হ্যাঁ তা বটে উচিত ছিলোই। কিন্তু তুমি আমাকে ডাকলে না কেনো?
-“ এতো ঢাকা লাগবে কেনো? আপনার কি মাথায় ঘিলু নেই নাকি? জানেন না আপনার বউ সকালে উঠে রান্না করে? ফজরের নামাজ পড়ার পর কিসের ঘুম আপনার হুম?
-“ দুঃখিত বউ আর এমন ভুল হবে না। এবার মতো ক্ষমা করে দাও আমায়।
-“ সে না হয় দিলাম। এবার উঠুন। ফ্রেশ হয়ে নিচে আসুন। আমি চললাম। ভার্সিটি যেতে হবে তো নাকি?
-“ হুমম। যাও খাবার বাড়ো আমি আসছি।
রুয়াত নিচে চলে আসলো। খাবার টেবিল সাজাতে গিয়ে দেখে সাদমান এখনও সোফায় আধশোয়া হয়ে শুয়ে ফোনে কথা বলছে। রান্না করতে আসার পরই রুয়াত দেখেছে সাদমান ফোনে কথা বলছে। এখন বাজে পনে নয় টা। দীর্ঘ আড়াই ঘন্টা ধরে কথা বলছে এই ছেলে ভাবা যায়! রুয়াত প্লেটে রুটি বাড়তে বাড়তে সাদমান এর উদ্দেশ্যে বলে উঠে –
-“ ভাইয়া আজ কি ব্রেকফাস্ট করার ইচ্ছে আছে কি নেই বলুন তো?
সাদমান রুয়াতের দিকে মাথা ঘুরিয়ে তাকিয়ে বলল-
-“ এই তো রুয়াত আর পাঁচটা মিনিট।
-“ সেই কখন থেকেই তো শুনছি আর পাঁচ টা মিনিট। পাঁচ টা মিনি বলতে বলতে তো আড়াই টা ঘন্টা কাটিয়ে দিলেন। বলছি কি ফোনে আর কত ব্যালেন্স আছে? না মানে সব টাকা শেষ হলেই কি ফোন টা কাটবেন?
সাদমান শোয়া থেকে উঠে বসে ফোন টা রুয়াতের দিকে তাক করে বলল-
-“ আমি তো মেসেঞ্জারে কথা বলছি রুয়াত। আমার টাকা কাটছে না।
রুয়াত তপ্ত শ্বাস ফেললো৷ মেসেঞ্জারেও যে কথা বলা যায় টাকা ছাড়া তা তো ভুলেই গিয়েছিল রুয়াত। খাবার বেড়ে বসে রইলো এক ভাইয়ের আসার আর আরেক ভাইয়ের ফোন কল শেষ হবার। শাফায়াত ফ্রেশ হয়ে আসলো। রুয়াতের পাশের চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল-
-“ ঝটপট খাবার দাও বেরোবো।
রুয়াত খাবারের প্লেট টা এগিয়ে দিতে দিতে বলল-
-“ কোথায় যাবেন?
শাফায়াত খাবার মুখে নিতে নিতে বলল-
-“ ভার্সিটি তে।
-“ কিন্তু আজ তো আপনার অফ ছিলো?
-“ হ্যাঁ। তবে সামনে ভার্সিটি তে অনুষ্ঠান আছে তো তার প্ল্যান করতে হবে সেজন্য সাইফুল স্যার যেতে বলল।
-“ ওহ্ ফিরবেন কখন?
-“ বিকেল হতে পারে। আর তুমি বসে আছ কেনো? খাওয়া শুরু করো।
রুয়াত সাদমান এর দিকে তাকালো। বলল-
-“ ভাইয়া হলো? আর কতক্ষণ?
সাদমান এবার ফোন টা কেটে পকেটে ভরে মাথার চুল গুলো পেছন ঠেলে দিতে দিতে এক গাল হেসে এগিয়ে আসলো। চেয়ার টেনে বসতেই রুয়াত খাবারের প্লেট এগিয়ে দিলো। সাদমান খাওয়া শুরু করলো। শাফায়াত খাবার শেষে এঁটো হাত ধুতেধুতে বলল-
-“ রুয়াত তোমার কি একটা গান মনে আছে?
রুয়াত খেতে খেতে বলল-
-“ কোন গান?
-“ আরে ঐ যে গান টা.. প্রেম যে কাঁঠালের আঠা লাগলে পরে আর ছাড়ে না। গান টা বেশ স্যুট করছে সাদমান এর উপরে।
সাদমান আড়চোখে তাকালো। পানির গ্লাস টা নিয়ে পানি খেয়ে বলল-
-“ তুমি ও করো প্রেম ব্রো। না তো নেই। আমার প্রেম নিয়ে কথা বলবে না। আমি প্রেম করি নি। আমি বুক ফুলিয়ে বিয়ের প্রপোজাল নিয়ে গিয়েছি।
শাফায়াত ট্যিসু দিয়ে হাত মুছতে মুছতে বলল-
-“ আর আমি বুঝি প্রেম করে তারপর বিয়ে করেছি?
-“ না তেমন না বিষয় টা। তুমি তো রাজিই ছিলে না। আমি আর খালামুনিই তো তোমাকে ধরে বেঁধে নিয়ে গেলাম। ভুলে গেলে?
রুয়াত প্লেটে হাত ধুয়ে শাফায়াত কে শুনিয়ে সাদমান কে বলল-
-“ সত্যি ধরে বেঁধে নিয়ে গিয়েছিলেন ভাইয়া?
-“ সে আর বলতে নাকি।
-“ বাজে কথা বলবি না সাদু। মোটেও এটা সত্যি না। আমি যেতে না চাইলে পারতি আমাকে বিয়ে অব্দি নিয়ে যেতে?
-“ ওমা পারতো না বুঝি তারা?
-“ অবশ্যই পারতো না।
-“ ওকে এখন যে ভার্সিটি যাচ্ছেন বাসায় আর ফিরবেন না।
-“ কেনো?
-“ কেনো বুঝেন না? আপনি তো আমাকে বিয়ে করতে চান নি। তো আর বাসায় এসে কি করবেন?
-“ আরেক টা বিয়ে করবো তাহলে?
রুয়াত অগ্নি দৃষ্টি নিয়ে তাকালো। শাফায়াত বাঁকা হেসে ফের বলল-
-“ তুমি অনুমতি দিলে ট্রাস্ট মি দ্বিতীয় বউ আনতে আমার অসুবিধা নেই। তুমি তাড়িয়ে দিলে তার কাছে যাব। আর সে তাড়িয়ে দিলে তোমার কাছে আসবো। একদিন তোমার সাথে তো আরেক দিন….
-“ জাস্ট শাট-আপ।
রুয়াত দাঁতে দাঁত চেপে বলল কথাটা। সাদমান সে নিজের মতো করে খাবার খাচ্ছে ঝটপট। কারন খাবার টা শেষ হলেই সে আবার কথা বলতে পারবে রজনীর সাথে।
শাফায়াত বসা থেকে উঠে রুয়াতের কাঁধে হাত রেখে এক গাল হেসে বলল-
-“ আসছি। ওর কথায় কান দিও না। মেন্টালি সিক ও এখন। প্রেম প্রেম ভাব তো।
-“ আমরাও চাইলে পারতাম এভাবে রিলেশন করে তারপর বিয়ে করতে।
-“ তার থেকে এটা বেটার না? বিয়ের পর চেনা ও জানা একে ওপর কে?
-“ হু। জলদি ফিরবেন অপেক্ষায় থাকবো।
শাফায়াত চলে গেলো। সাদমান ও খাবার টা খেয়ে নিজের রুমে চলে গেল। রুয়াত এঁটো থালাবাসন ধুয়ে শ্বাশুড়ি কে কল দিলো।
নীতির সাথে নোমান আর তার বাবা এসেছে। ভর্তির সব কাজ কর্ম কমপ্লিট করিয়ে নোমান ভার্সিটিতে আসলো। নীতি কেও এনেছে সাথে সাইফুল ইসলাম। হল রুমে অপেক্ষায় ছিলো শাফায়াত সহ রোহান ও অনেক টিচার রা। সাইফুল ইসলাম আসতেই তিনি শাফায়াত কে সব বুঝিয়ে দিলো। আর বলল ছেলেপুলেদের কাজ গুলো ভাগ করে দিতে। শাফায়াত সবাই কে যার যার কাজ ভাগ করে দিলো। রোহান কে প্যান্ডেলের দায়িত্ব দিলো। আর নোমান কে খাবারের। নীতি চুপচাপ বসেছিল। রোহান নীতি কে দেখামাত্রই এগিয়ে আসলো। বলল-
-“ কিরে কাজ শেষ?
নীতি রোহানের দিকে তাকালো। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটিয়ে বলল-
-“ জ্বর কি এখনও আছে?
-“ না নেই। বল কাজ কি শেষ?
-“ হুমম।
-“ বাসায় না গিয়ে এখানে কেনো?
-“ আব্বু নিয়ে আসলো। আর শুনলাম আপনিও আছেন। সেজন্য আপনাকে দেখার লোভ সামলাতে না পেরে চলে আসলাম।
-“ লোভী মেয়ে।
-“ উমমম হ্যাঁ তা বলতে পারেন। একদিন এই লোভের সব সীমা অতিক্রম করে আপনাকে নিয়ে হারিয়ে যাব।
-“ তাই বুঝি?
-“ হুমম তাই।
-“ কিছু খাবি?
-“ অসুস্থ আপনি নাকি আমি? কথাটা জিজ্ঞেস করার কথা কার, আমার না আপনার?
-“ কি করবো বল। তুই তো জিজ্ঞেস করতেছিস না।
-“ আচ্ছা বলুন কি খাবেন?
-“ উমম কষা মাংস… সাদা ভাত..ডাল,ভর্তা.. চিংড়ি ভুনা।
-“ এখন! আমি পাবো কোথায়? অর্ডার দিব?
-“ উঁহু। তোর হাতের খাব। বাসায় যাবি এখন। গিয়ে রান্না করবি। আমি সন্ধ্যার দিকে এসে খাব।
-“ আচ্ছা আমি তাহলে বাসায় যাচ্ছি এখন।
-“ হুমম নোমান দিয়ে আসবে যা।
নীতি চলে গেলো। শাফায়াত এসেছিল এদিক টায়। রোহান আর নীতি কে দেখে চলে যেতে নিয়েছিল। রোহান ডেকে উঠলো বলল-
-“ কিছু বলবেন স্যার?
শাফায়াত পিছু ফিরে বলল-
-“ হুমম।
-“ কি বলবেন?
-“ ইনভাইট করার ছিলো তোমাদের।
রোহান ভ্রু কুঁচকে বলল-
-“ কিসের? বাবা হতে যাচ্ছেন নাকি? কংগ্রেস স্যার…
শাফায়াত মুখে বিরক্তিকর ভাব ফুটিয়ে বলল-
-“ শাট-আপ। বাবা হতে গেলে তোমাদের ইনভাইট করবো কেনো?
-“ তাহলে কিসের ইনভাইট? মাথা চুলকে ভাবুক হয়ে বলল রোহান।
শাফায়াত সামনে ফিরে যেতে যেতে বলল-
-“ কাজের ইনভাইট করতে এসেছিলাম। কাজ গুলো চটজলদি করো। হাতে সময় কম।
রোহান ঠাই দাঁড়িয়ে থেকে শাফায়াত এর যাওয়ার পানে তাকিয়ে রইলো। কাজের জন্য এতো ঘটা করে বলতে হয়!
#চলবে?
#গোধুলির_শেষ_বিকেলে_তুমি_আমি
#পর্ব৩৮
#Raiha_Zubair_Ripti
সাঝ সন্ধ্যা,, রুয়াত বসে আছে বেলকনিতে। দৃষ্টি তার সুদূর আকাশে। হাতের মুঠোয় বন্দী মুঠোফোন। একটু আগে শাফায়াত ফোন করে জানাল তার ফিরতে নয় টা কি দশ টা বাজবে। সাদমান বিকেল হতেই বেরিয়ে গেছে বাসা থেকে। বিয়ের শপিং করতে গেছে রজনী কে নিয়ে। রুয়াত কে বলেছিল সাথে যেতে কিন্তু রুয়াত মানা করেছে। শাফায়াত নেই সে যাবে না। আর তা ছাড়া বিয়ে সাদমান রজনীর সেখানে শপিং ওদেরই আগে করা উচিত। বানানোর ও ঝামেলা সময়ের ব্যপার আছে। রুয়াত দের তো আর সেসব নেই। পুরো বাড়িতে একা আছে রুয়াত। বাহিরে মৃদুমন্দ বাতাস বইছে। শরীর টাও কেঁপে কেঁপে উঠছে থেকে থেকে। শরীরে ওড়না টা ভালোভাবে জড়িয়ে রুমে আসলো। কেমন খারাপ খারাপ ভাব লাগছে৷ বালিশ টা ঠিক করে শুতেই কেমন ঘুম চলে আসলো৷
সাদমান রজনী কে তার বাসা থেকে শপিং করার জন্য বসুন্ধরা চলে আসে। রজনী অফ হোয়াইট কালারের একটা বেনারসি ধরলো। সাদমান ভ্রু কুঁচকালো সেটা দেখে। বলল-
-“ বিয়েতে অফ হোয়াইট কালারের শাড়ি পড়বেন?
রজনী সম্মতি জানিয়ে বলল-
-“ হুমম। কেনো?
-“ সিরিয়াসলি! আপনি বিয়েতে বিধবা শাড়ি পড়বেন? আমার সাথে থাকার প্ল্যান আপনার আছে কি নেই সেটা বলুন তো রজনী?
-“ আশ্চর্য! থাকা না থাকার কথা কেনো আসছে?
-“ তো আসবে না? আমাদের বিয়ে। আমার কত দিনের ইচ্ছে আপনি লাল টুকটুকে শাড়িতে বউ সেজে আমার অপেক্ষায় থাকবেন। আর আমি আপনাকে নিতে আসবো৷ বিয়ের মানেই তো লাল।
-“ লাল কিসের প্রতিক জানেন? র’ক্তের প্রতিক৷ বিচ্ছেদ এর প্রতিক। হারানোর প্রতিক। আই হেইট রেড। আর সাদা শুভ্রতার প্রতিক৷ এটায় প্রচণ্ড রকমের স্নিগ্ধতা মিশে থাকে।
-“ লজিক দেখাচ্ছেন? আচ্ছা যান মেনে নিলাম। এখন আপনার সাথে ম্যাচ করে আমিও অফ হোয়াইট শেরওয়ানি নিব?
-“ না পিংক কালার নিবেন। একদম মানাবে।
সাদমান মুখ বাঁকিয়ে শেরওয়ানির কালার দেখতে দেখতে বলে-
-“ আন্টি আমার খালা মনির মতো আপনার মুখে মধু দিতে ভুলে গিয়েছিল নাকি? ব্রো ও আগে এমন কাঠখোট্টা ছিলো। এখন অবশ্য রুয়াতের সংস্পর্শে এসে বেশ ভালোই উন্নত হয়েছে।
-“ আমাকে মধুর বদলে করলার রস খাওয়ানো হয়েছিল। সেজন্য করল্লার মতো এমন তিতে।
-“ সমস্যা নেই ফাস্ট নাইটে মধু খাইয়ে মিঠে করিয়ে নিব মুখ টা।
ঘাড় বেঁকিয়ে চোখ টিপে রজনীর দিকে মুখ করে কথাটা বলে সাদমান। রজনী রাগী চোখে তাকায়। সাদমান রজনী কে আরেক টু রাগানোর জন্য বলল-
-“ মিস রজনী ইউ নোও হোয়াট আই মিন মধু?
রজনী তর্জনী তুলে দাঁতে দাঁত চেপে বলল-
-“ চুপচাপ কেনাকাটা শেষ করুন। মধু? জন্মের মধু খাইয়ে দিব।
সাদমান উৎসুক চাহনি নিয়ে বলল-
-“ রিয়েলি হানি খাওয়াবেন? আই লাভ হানি।
রজনী দীর্ঘ লম্বা একটা শ্বাস নিলো। লোকটার উপর ভীষণ রাগ লাগছে তার। নিজের রাগ টা কন্ট্রোল করলো কোনো মতে। তারপর শান্ত স্বরে বলল-
-“ একটু তাড়াতাড়ি কেনাকাটা শেষ করুন সাদমান। বাসায় তো ফিরতে হবে। রুয়াত একা বাসায়। শাফায়াত ফিরে নি।
সাদমান শেরওয়ানি শাড়ি দোকানদার কে প্যাকেট করতে বলে বলল-
-“ ব্রো বাসায় ফিরে নি?
-“ নাহ্।
-“ কেনাকাটা তো শেষ। চলো যাওয়া যাক। তোমাকে বাসায় পৌঁছে আমি যাব।
সাদমান রজনীর হাত ধরে বেরিয়ে আসলো শপিং মল থেকে। গাড়ি চালিয়ে রজনী কে বাসায় বাসায় পৌঁছে তৎক্ষনাৎ ই দ্রুতগতিতে গাড়ি চালিয়ে বাসার সামনে আসে। তারপর গাড়িটা সাইডে রেখে সদর দরজার সামনে আসতেই দেখে দরজা টা ভেতর থেকে বন্ধ করা। সাদমান কয়েক বার দরজা ধাক্কিয়ে রুয়াতের নাম ধরে ডাক দিলো। কিন্তু কোনো সাড়াশব্দ পাওয়া গেলো না। সাদমান রুয়াতের ফোনে ফোনকল লাগালো। ফোন ও রিসিভ হচ্ছে না। বেশ অনেক বারই ট্রাই করলো। কেমন চিন্তা ও হচ্ছে। রুয়াত তো এমন না। ফোন তো সব সময় তার নিজের সাথেই থাকে। যখনই ফোন দেয় রিসিভ হয়।
সাদমান শাফায়াত কে ফোন করলো। শাফায়াত ভার্সিটির মাঠে চেয়ারে বসে লিস্ট দেখে দেখে সব চেক করছিলো। পাশেই নেহাল শাফায়াত এর মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। রোহান প্যান্ডেলের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। নিয়ে আসা লোক গুলো প্যান্ডেল তৈরি করছে৷ আকস্মিক শাফায়াত এর ফোন বেজে উঠায় শাফায়াত আড়চোখে ফোনের দিকে তাকিয়ে লিস্ট টা নেহালের হাতে দিয়ে বলল-
-“ চেক করো আমি আসছি।
নেহাল লিস্ট টা হাতে নিয়ে চেক করতে লাগলো। শাফায়াত ফোন টা নিয়ে সাইডে এসে রিসিভ করে বলল-
-“ হ্যাঁ সাদমান বল।
সাদমান ওপাশ থেকে অস্থির কন্ঠে বলল-
-“ ব্রো আমি ব.. বাসায় এসেছি।
-“ হুমম তো?
-“ ভেতরে ঢুকতে পারছি না।
-“ কেনো?
-“ রুয়াত তো দরজা খুলছে না। কতবার ডাকলাম। ফোন ও করলাম রিসিভ হচ্ছে না। তোমার কাছে তো এক্সট্রা চাবি আছে। বাসায় আসো তাড়াতাড়ি।
চমকে উঠলো সাদমান এর এমন কথা শুনে শাফায়াত। ফোন কাটার আগে বলল-
-“ পাঁচ মিনিট অপেক্ষা কর আমি আসছি।
শাফায়াত ফোন টা কেটে নেহালের সামনে এসে অস্থির কন্ঠে বলল-
-“ নেহাল!
নেহাল মাথা উঁচু করে বলল-
-“ হ্যাঁ স্যার বলুন।
-“ আমাকে আর্জেন্ট বাসায় যেতে হবে। তোমরা সব টা সামলে নিতে পারবে?
-“ হ্যাঁ স্যার পারবো৷ আপনি নিশ্চিন্তে যেতে পারেন।
-“ তাহলে আমি আসছি।
শাফায়াত হন্তদন্ত হয়ে চলে গেলো। রোহান এগিয়ে এসে বলল-
-“ স্যার চলে গেলো কেনো?
-“ মনে হলো বাসায় কিছু হয়েছে।
-“ কি হয়েছে? রুয়াত ঠিক আছে?
মুখ ফস্কে বলে ফেললো রোহান রুয়াতের কথাটা৷ নেহাল তাকালো রোহানের মুখ পানে। রোহান কেও তো পুরোপুরি দোষ দেওয়া যায় না। ভালোবাসা জিনিস টাই তো এমন। ভুলা কি এতই সহজ?
রোহান মুখ টা কাচুমাচু করে বলল-
-“ সরি আ…আসলে..
-“ বুঝি আমি তোকে রোহান। ভালোবাসার মানুষ কে ভোলা খুবই কঠিন। স্যারের বাসায় কি হয়েছে জানি না। আই থিংক রুয়াতের কিছু হয় নি। শুনেছি রুয়াতের বড় বোনের বিয়ে স্যারের ভাইয়ের সাথে৷ হয়তো সেসব নিয়ে।
রোহান স্মিত হাসলো। নেহাল কে জড়িয়ে ধরলো। নেহাল ও জড়িয়ে ধরলো রোহান কে। তাদের ফ্রেন্ডশিপ টা বেশ স্ট্রং। রোহান নেহালের বেশ গর্ব হয় তাদের ফ্রেন্ডশিপ নিয়ে। ফ্রেন্ডশিপ তো এমনই হওয়া উচিত! ভার্সিটিতে তো সবাই নেহাল রোহানের ফ্রেন্ডশিপ নিয়ে কথা বলে। রোহান নেহাল কে ছেড়ে পাশের চেয়ারে বসলো। ভার্সিটির মাঠ টা রঙিন আলোয় কেমন আলোকিত হয়ে আছে।
রোহান কি একটা মনে করে পকেট থেকে ফোন টা বের করলো। স্ক্রিন টা অন করতেই ভেসে আসলো নয়টা মিসড কল। নীতি করেছে ফোন। রোহানের তো যাবার কথা ছিল নীতি দের বাসায়। নীতি কে বলেছিল রান্না করতে। বেচারি হয়তো রান্না করে অপেক্ষা করছে৷ রোহান নীতির নম্বর টা বের করে ফোন করার জন্য উদ্যত হলে সামনে কারো উপস্থিতি টের পেয়ে মাথা উচু করে তাকায়৷ নীতির বাবা দাঁড়িয়ে আছে হাতে ব্যাগ নিয়ে।
রোহান ফোন টা পকেটে ঢুকিয়ে এক গাল হেসে বলল-
-“ আরে স্যার আপনি?
সাইফুল ইসলাম চেয়ার টেনে বসে বলল-
-“ হুমম আমি। তুই কি ভালো হবি না? নীতি কে রান্না করতে বলেছিস কেনো? আমার পুতুলের মতো মেয়ে টা সেই বিকেল থেকে রান্না করে তোদের আসার অপেক্ষায় বসেছিল৷ না পেরে আমায় খাবার দিয়ে পাঠিয়ে দিলো।
-“ আশ্চর্য আমার উছিলায় আপনার মেয়ের হাতের রান্না পাকাপোক্ত হচ্ছে। কোথায় আমায় থ্যাংকস দিবেন। তা না বলছেন ভালো হতে! সে যাই হোক খাবার গুলো বেড়ে দিন। অনেক ক্ষুধা পেয়েছে।
সাইফুল ইসলাম চোখ বড় বড় করে তাকালো। রাগী কন্ঠে বলে উঠল-
-“ হতচ্ছাড়া খাবার যে বয়ে এই অব্দি নিয়ে এসেছি। এটাই তোদের কপাল। এখন যার যার মতো নিয়ে যা। এই আমি রাখলাম ব্যাগ টা। প্লেট পানির বোতল সব আছে।
নেহাল বাবার থেকে ব্যাগ টা নিয়ে প্লেট বের করে তিনজনের জন্য খাবার বাড়তে নিলো। সাইফুল ইসলাম বারন করে বলে-
-“ আমার জন্য বাড়িস না। আমি বাসায় গিয়ে খাব। নীতি অপেক্ষা করছে।
নেহাল নিজের আর রোহান এর জন্য বাড়লো। রোহান দিনদুনিয়া ভুলে খাবারে মনোযোগ দিলো। নীতির হাতের রান্না রোহানের পছন্দের তালিকায় চলে গিয়েছে। রোহান খাবার খেয়ে একটা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুললো৷ আঙুল চেটে বলল-
-“ স্যার আপনার মেয়েকে ভাবছি আমার বাসায় রান্নার জন্য রাখবো৷ আপনার কোনো আপত্তি নেই তো?
সাইফুল ইসলাম রাগী চোখে তাকিয়ে বলল-
-“ ঝা’টা চিনিস রে রোহু? তোর মামার টাকা কম নেই বিদেশ থেকে লোক হায়ার করে রাখ। আমার মেয়ের ঠেকা পড়ে নি।
-“ আশ্চর্য স্যার ঝা’টা কেনো চিনতে বলছেন।
-“ সামনে একটা সুখবর আসতে চলছে তোদের জন্য।
নেহাল উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
-“ কিসের সুখবর বাবা?
-“ সারপ্রাইজ।
-“ সারপ্রাইজ ই যখন দিবেন তাহলে বললেন কেনো? সারাদিন রাত এখন যে চিন্তা হবে।
রোহান বিরক্ত হয়ে বলল। তারপর উঠে চলে গেলো। নেহাল কাজে মনোযোগ দিলো।
শাফায়াত বাসায় এসে এক্সট্রা চাবি দিয়ে দরজা টা খুলে ভেতরে ঢুকে। তড়িঘড়ি করে দৌড়ে নিজের রুমে ঢুকে দেখে রুয়াত শুয়ে আছে। সাদমান ও পেছন পেছন আসে। শাফায়াত রুয়াতের দিকে এগিয়ে এসে বাহুতে ধাক্কা দিয়ে বলে-
-“ রুয়াত!
শাফায়াত চমকে উঠে। রুয়াত শরীর আগুনের মতো গরম হয়ে আছে। শাফায়াত তড়িঘড়ি করে কপালে হাত রাখে। জ্বরে শরীর পু’ড়ে যাচ্ছে। শাফায়াত রুয়াতে গালে আলতো করে থা’প্পড় দিয়ে রুয়াত কে ডাকতে থাকে-
-“ রুয়াত এই রুয়াত শুনতে পারতেছো? সাদমান ডক্টর কে ফোন করে বাসায় আসতে বল।
শাফায়াত কথাটা বলে ড্রয়িং রুমে আসে। ছোট্ট বাটিতে জল আর কাপড়ের পট্টি নিয়ে রুমে ফিরে। একটু জল শাফায়াত রুয়াতের চোখ মুখে ছিটিয়ে দেয়। নাহ্ রুয়াত সাড়াশব্দ করছে না। সেন্সলেস হয়ে গেছে। শাফক্বাত ভেজা পট্টি চেপে রুয়াতের কপালে রাখলো। বিশ মিনিট যেতেই ডক্টর আসলো।
রুয়াত কে দেখে একটা ইনজেকশন পুশ করলো। কিছু মেডিসিন ও লিখে দিলো। সাদমান চলে গেলো মেডিসিন আনতে৷ শাফায়াত ডক্টরের দিকে তাকিয়ে বলল-
-“ আঙ্কেল রুয়াত উঠছে না কেনো?
-“ জ্বরের তীব্রতা অনেক শাফায়াত। হঠাৎ এমন জ্বর আসলো কি করে? আর ইনজেকশন দেওয়ায় রুয়াতের জ্ঞান হয়তো মধ্য রাতে বা সকালে ফিরতে পারে৷ সকালে আমায় ফোন করে বলবে রুয়াতের অবস্থা টা। তবে চিন্তে করো না তেমন ভয়াবহ কিছু হবে না। জ্ঞান ফিরলে কিছু খাইয়ে ঔষধ খাইয়ে দিও। এখন আসছি।
ডক্টর চলে গেলো। শাফায়াত রুয়াতের মাথের কাছে রুয়াতের ডান হাত মুঠোয় নিয়ে রুয়াতের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো। বুকের বাঁপাশ টায় কেমন অসহ্য ব্যথা করতেছে প্রিয়তমার এমন অবস্থা দেখে। হাসিখুশি মেয়েটা কেমন নিস্তব্ধ হয়ে পড়ে আছে বিছানায়! শাফায়াত এর চোখ লাল হয়ে আসছে। শাফায়াত রুয়াতের হাতে পরপর কয়েকবার চুমু খেলো। বিরবির করে বলল-
-“ তাড়াতাড়ি চোখ মেলে তাকাও রুয়াত। এই রুয়াত কে আমার ভালো লাগছে না। দম বন্ধ হয়ে আসছে। শুনতে পারছো আমার কথা? তোমার শাফু তোমাকে বলতেছে তার কষ্ট হচ্ছে আর তুমি এখনও চোখ বন্ধ করে আছো জান! উঠো না তাড়াতাড়ি। তোমার কন্ঠ স্বর শুনতে চাই৷
হঠাৎ কাঁধে কারো স্পর্শ পেয়ে শাফায়াত পাশে তাকালো। সাদমান এসেছে৷ ঔষধ গুলো টেবিলে রেখে বলল-
-“ একটু সময় লাগবে ব্রো রুয়াতের জ্ঞান ফিরতে। খাবার নিয়ে এসেছি। খেয়ে নাও।
শাফায়াত রুয়াতের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল-
-“ গলা দিয়ে খাবার নামবে না আমার সাদমান। রেখে দে। রুয়াতের জ্ঞান ফিরুক আগে। আর তুই নিজের রুমে চলে যা।
-“ আমার ঘুম আসবে না ব্রো। আমিও না হয় বেলকনিতে থাকি। রুয়াতের জ্ঞান না ফেরা অব্দি। জ্ঞান ফিরলেই চলে যাব।
শাফায়াত কিছু বললো না। সে রুয়াতের হাত গালে চেপে ধরে নির্নিমেষ তাকিয়ে রইলো রুয়াতের মুখের দিকে। অপেক্ষা রুয়াতের জ্ঞান ফেরার।
#চলবে?