প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-০২

0
104

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যা : ২
লেখিকা : #আহিয়া_শিকদার_আহি

” বাবা , আমার মনে হচ্ছে এই মেয়েটা খোকার জন্য ভালো হবে”

” আমার ও তাই মনে হচ্ছে বউ মা। শুধু তোমার ছেলে পছন্দ করলেই হয়।”

” আরে অবশ্যই পছন্দ হবে। কি সুন্দর দেখতে মেয়েটা। এবার না করলে বেঁধে বিয়ে করাবো। খোকা তো বলেছে নির্বাচনে জিতলে বিয়ে করবে, কথা দিয়েছিলো আপনাকে। তাছাড়া বাবা ,আপনার নাতি এক কথার মানুষ। ”

সবেমাত্র বাড়িতে পা রেখেছে আরহাম। নিজের মা আর দাদার কথা কর্ণগোচর হতেই দরজাতেই দাঁড়িয়ে পড়লো সে। পিছনে ছিল ফাহিম। নীলিমা শিকদার আর আজমল শিকদার এর কথা শুনে ফাহিমের যেনো নাচতে ইচ্ছা করছে। আরহামের জন্যই তো তার বিয়ে করা হচ্ছে না।

” আরে খোকা চলে এসেছিস। ওখানে দাঁড়িয়ে কেনো? আয় আয় দেখতো কোন মেয়েকে পছন্দ হয়!”

” মা, কতবার বলেছি তোমাকে, খোকা বলে ডাকবে না আমায়। তোমার ছেলের বয়স ৩১ মা। তার থেকেও বড় কথা তোমার ছেলে মন্ত্রী।”

” এহ আসছে মন্ত্রী। তোকে খোকা বলে ডেকেছি , ডাকবো। তুই তো এখনো আমার কাছে সেই ছোটো আরহাম খোকা আছিস। মায়ের কাছে সন্তান কখনো বড় হয়?”

” তাই নাকি? তাহলে তোমার এই ছোট খোকাকে এখনি কেনো বিয়ে করাতে চাচ্ছো?”

ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞেস করে আরহাম। বোকা বনে যায় নীলিমা শিকদার। বুঝতে পারেন বরাবরের মতো আজকেও তাকে কথার জালে ফাঁসাচ্ছে তার ছেলে। কিন্তু আজকে তিনি হার মানবেন না পণ করেছেন। যে ভাবেই হোক ছেলেকে তিনি বিয়ে করাবেন। বয়স তো কম হয়নি ছেলেটার।

” খোকা, তুই আজকে যাই করিস না কেনো আমাকে তোর কথার জালে ফাঁসাতে পারবি না। তোকে বিয়ে করতে হবে মানে করতেই হবে। তোর থেকে তোর ছোট ছোট কাজিনরা বিয়ে করেছে, অনেকের তো বাচ্চাও আছে। আর তুই কিনা এখনো বিয়েই করিস নি। জীবনে তো কোনোদিন দিন প্রেম করেছিস বলে মনে হয় না। যদি তোর কোনো পছন্দ থাকে বলে দে। নাহলে আমরা যাকে পছন্দ করবো তাকেই বিয়ে করতে হবে তোর।”

“আমার পছন্দের মেয়ে আছে মা ”

ড্রয়িংরুমে মনে হলো ছোটো খাটো একটা বিস্ফোরণ হলো। ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সকলে অবিশ্বাস্য নয়নে তাকালো আরহামের দিকে। তারা বিশ্বাস করতে পারছে না আরহামের কথা।
আরহামের জয়লাভের আনন্দে তার নিকট
আত্মীয় সকলে এসেছে শিকদার বাড়িতে। তাছাড়া নীলিমা শিকদার তাদেরকে জানিয়েছেন আরহামের জন্য মেয়ে দেখবে সকলে যেনো উপস্থিত থাকে।

” নাম কি তার , আরহাম? তার সম্পর্কে সব কিছু বলো। আমরা বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাবো তার বাড়িতে।”

বাবার দিকে তাকালো আরহাম। একবার সকলকে ভালোভাবে দেখে নিলো সে।

” নাম জানি না তার বাবা। কোথায় থাকে , কি করে, দেখতে কেমন কিছু জানি না। শুধু তার মায়াবী চোখ দুটো দেখেছি। হরিণীর ন্যায় ডাগর ডাগর চোখ তার।সেই চোখের চাহনি ভয়ংকর। অদ্ভুত সুন্দর চোখ জোড়া। যার বর্ণনা দিয়ে শেষ করা যাবে না। বলে দিলাম তার সম্পর্কে। এখন যাও তার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে। যাচ্ছি আমি নিজের রুমে। আশা করছি আমাকে কেউ বিরক্ত করবে না।”

বলেই গট গট পায়ে নিজ ঘরের দিকে চলে গেলো আরহাম।
উপস্থিত সকলে বিস্ফোরিত নয়নে তাকিয়ে আছে তার দিকে। যে ছেলে আজপর্যন্ত কোনো মেয়ের দিকে ভালোভাবে তাকিয়েছে কিনা সন্দেহ সেই ছেলে এভাবে একটা মেয়ের বর্ণনা দিচ্ছে।
মিস্টার আসাদ শিকদার ভাবছেন তার ছেলের দেওয়া বর্ণনা সম্পর্কে। এভাবে বুঝি মেয়ে খোজা যায়।

ফাহিমের মনে হচ্ছে মাথায় বাজ পড়েছে। সে ভাবছে সে কি ভুল শুনলো। মন্ত্রী আরহাম শিকদার কাউকে পছন্দ করেছে। এটা যেনো পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্যের থেকে কম কিছু না তার কাছে। বোনের কথা মাথায় আসতেই খারাপ লাগা শুরু হলো তার। শুভ্রা যে তার নেতা মশাইকে খুব করে চায়, ভালোবাসে নেতা মশাইকে। নিজের কোনো বোন না থাকায় সে শুভ্রাকে নিজের আপন বোনের মতোই ভালোবাসে। সেই বোন কষ্ট পাবে ভেবে বুকের মধ্যে হালকা চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে সে।
এতক্ষণ দর্শকের ভূমিকা পালন করা আজমল শিকদার বলে উঠলেন,

“মেয়েটা কে খোজ নেও আসাদ। তোমার ছেলে কোনো মেয়েকে পছন্দ করেছে , নিশ্চই মেয়েটার ভিতরে এমন কিছু দেখেছে যা ওর ভালো লেগেছে। না হলে তোমার যে ছেলে ৩১ বছরে এসেও বিয়ে করতে নারাজ। এটা তোমার ছেলেতো নাকি হাসপাতালে বদলিয়ে এনেছো।বিয়ে পাগলা বাপের বিয়ে নারাজ ছেলে।”

আসাদ শিকদার তাকান তার বাবার দিকে তো আরেকবার নীলিমা শিকদারের দিকে। নীলিমা শিকদার তার ননদ আরিফা তালুকদার কে নিয়ে চলে গেলেন রান্না ঘরের দিকে। পিছনে তার নিজের বোন আর ভাবীও গেলো। এখানে থাকলে নির্ঘাত লজ্জায় পড়তে হবে।

” নানু, মামাইকে বিয়ে পাগলা কেনো বললে?”

জিজ্ঞেস করলো রাইমা।সকলে আগ্রহ নিয়ে তাকালো আজমল শিকদারের দিকে। আসাদ শিকদার বার বার বারণ করছে আজমল শিকদার কে। কিন্তু নাহ্ শুনলো না ওনার কথা।

” তোমার মামাইএর যখন ২৩ বছর তখন আমাকে এসে বলেছিলো সে একটা মেয়েকে ভালবাসে তাকে বিয়ে করতে চায়। আমি প্রথমে বারণ করি। কারণ ওর তখনও প্রাপ্ত বয়স হয়নি। কিন্তু শুনলে তো আমার কথা। ধন্যায় বসে যায় তোমার মামাই। না খেয়ে দেয়ে পাগলামি শুরু করে। মেয়েটা কে ছিল জানো? তোমাদের মামি মা।অবশেষে উপায় না পেয়ে দিয়ে দিলাম বিয়ে।”

উপস্থিত সকলে উচ্চস্বরে হেসে উঠে। আসাদ শিকদার না পারছেন মাটির ফাঁক করে ঢুকে যেতে। ছোটো বাচ্চাদের সামনে দিলো তো তার মান সম্মানের খিচুড়ি বানিয়ে।

ফাহিম এতক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে ছিলো। কিন্তু আর চুপচাপ থাকতে পারলো না। হেসে উঠলো সে।

” আরে ফাহিম , আসো এখানে আসো।”

” না দাদু। এখানেই ঠিক আছি। বস কিছুক্ষনের মধ্যে ডাকবে।”

ফাহিমের কথা শেষ হতে না হতে আরহামের ডাক পড়ল। তড়িঘড়ি করে আরহামের রুমের দিকে যেতে লাগলো ফাহিম। দেখে মনে হচ্ছে কোনো পারেনি তাড়া করছে তাকে।
তার কাণ্ড দেখে সকলে আরেকদফা হেসে উঠলো। এই আরহামকে বাড়ির সকলে জমের মতো ভয় পায়।
সকলের মাথায় এখন একটা মাত্র চিন্তা , মন্ত্রী আরহাম শিকদার কোনো মেয়েকে পছন্দ করেছে,মেয়েটি কেমন হবে ।

_________

শাওয়ার নিয়ে বের হলো আরহাম। কিছুক্ষন আগেই ফাহিম কে বাসা পাঠিয়েছে সে। বেলকনিতে থাকা ইজি চেয়ারে বসে আরহাম। তার মস্তিষ্কে বার বার হানা দিচ্ছে সকালের ঘটনা।
সকালের ঘটনা যেনো তার চোখের সামনে বার বার ভেসে উঠছে। মেয়েটাকে তার চেনা চেনা লাগছিল। মনে হচ্ছিলো এর আগেও দেখেছে সে মেয়েটাকে। তার ভাবনার ছেদ ঘটে মায়ের কথায়।

” খোকা, হেয়ালি না করে মেয়েটার সকল তথ্য দে।”

” কোন মেয়ে?”

ভ্রু কুচকে জিজ্ঞেস করে আরহাম।অবাক হয়ে যান নীলিমা শিকদার। তার ছেলের আবার কোন দিন থেকে ভুলে যাওয়া রোগ হলো?

” তোকে বললাম না হেয়ালি করবি না।যা তোকে কিছু করতে হবে না , শুধু আমার বউমার একটা ছবি আর নাম্বার দে।”

কুঁচকানো ভ্রু জোড়া যেনো কুচকে যায় আরহামের। ভালোভাবে তাকায় সে মায়ের দিকে। নাহ্, দেখেতো মনে হচ্ছে না তার মা তার সাথে মজা করছে।

” আমি কবে বিয়ে করলাম মা? তুমি আমার বউ কোথায় পেলে?”

ছেলের কথায় আবার যেনো অগ্নিমূর্তি ধারণ করলেন নীলিমা শিকদার। হালকা চেঁচিয়ে উঠলেন তিনি।

” খোকা, আমাকে কি দেখে মনে হচ্ছে আমি তোর সাথে মজা করছি? ড্রয়িং রুমে যে বলে এলি কাকে নাকি তুই পছন্দ করিস। তার বাসায় বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।”

কুচকানো ভ্রূজোড়া আপনা-আপনি সমান হয়ে গেলো আরহামের। মস্তিষ্কে একটু চাপ প্রয়োগ করতেই মনে পড়ে গেলো ড্রয়িং রুমে বলা কথাগুলো। নিজে-নিজেই চমকে উঠে আরহাম। তখন যা বলেছিলো একপ্রকার আনমনেই বলেছিল সে। কার বর্ণনা দিয়েছিলো সে সকলের সামনে?
চোখের সামনে ভেসে উঠল সকালের মেয়েটির চোখ জোড়া। হ্যাঁ সে সেই চোখের বর্ণনাই দিয়েছিল। কিন্তু কেনো? নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলো আরহাম।

_________

চলবে……