প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-১২

0
105

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যাঃ ১২
লেখিকাঃ #আহিয়া_শিকদার_আহি

__________

শুভ্রা রাগ নিয়ন্ত্রণের জন্য নিজের ঠোঁট নিজেই কামড়ে ধরে আছে। অসম্ভব পরিমাণে লাল হয়ে আছে ওর চোখ জোড়া।রাইমা আর অদিতি অনেক কষ্টে ওকে ধরে রেখেছে।

ইতোমধ্যে ক্যাম্পাসে অনেকে ভিড় করে ফেলেছে। প্রথম বর্ষের একজন স্টুডেন্ট এভাবে সিনিয়র ছেলেদের কেনো মারছে তাদের বোধগম্য হচ্ছে না।অবশ্য মেয়েদের মধ্যে খুশি দেখা যাচ্ছে। নিচে পড়ে থাকা ছেলে তিনজন ব্যাথায় কাতরাচ্ছে। ছেলেগুলোর এমন অবস্থা দেখে ভার্সিটির মেয়েরা পৈচাশিক আনন্দ অনুভব করছে।

কিছু সময়ের মধ্যে গেটের কাছে একটি গাড়ি দেখা যায়। সকলে আতঙ্কিত নয়নে তাকায় সেদিকে। গাড়ি থেকে নেমে পড়ে একজন সুদর্শন ছেলে। চোখে সানগ্লাস, কালো প্যান্ট – সাদা সার্ট, হাতে ব্র্যান্ডের ঘড়ি। শার্টের হাতা ফোল্ড করতে করতে এগিয়ে আসে ক্যাম্পাসের দিকে।

ছেলে তিনজনকে মাটিতে পরে থাকতে দেখে ভ্রু কুচকে যায় ছেলেটির। জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকায় পাশে থাকা একটি ছেলের দিকে। ছেলেটি বুঝতে পেরে সব কিছু খুলে বলে।

_________

শুভ্রার ভার্সিটিতে আজ আসতে দেরি হওয়ায় অদিতি আর রাইমা ক্যাম্পাসে অপেক্ষা করছিল তার জন্য। এর মধ্যেই একটা ছেলে হঠাৎ রাইমার হাত ধরে ফেলে। আতঙ্কিত হয়ে যায় রাইমা। পাশে থাকা অদিতির মুখেও স্পষ্ট ভয় ফুটে উঠেছে। তারা বুঝতে পেরেছে আজ সিনিয়রদের র্যাগের শিকার হতে চলেছে। অদিতির চোখ চারিদিকে আদিত্য আর শুভ্রাকে খুঁজছে।

“আপনি আমার হাত ধরেছেন কেনো? ছাড়ুন বলছি। এটা কেমন অসভ্যতা?”

” এখানে অসভ্যতার কি দেখলে? ”

বলেই বিশ্রী ভাবে হাসতে লাগলো ছেলেটি।তার পিছনে থাকা বাকি ছেলে দুজন ও যোগ দিলো তার সাথে।

ভার্সিটির ছেলে মেয়েগুলো চেয়ে চেয়ে দেখছে। তারা এগিয়ে আসতে চাইলেও আসতে পারছে না। এই ছেলেগুলোকে ভয় পায় তারা। বিশেষ করে ছেলেগুলোর লিডার কে।

“আপনি জানেন না আমি কে? এর ফল ভালো হবে না কিন্তু।হাত ছাড়ুন।”

“এই তোরা শুনলি, এই মেয়ে সামির কে ভয় দেখাচ্ছে। তা কে তুমি সুন্দরী”

ব্যঙ্গ করে বললো সামির। রাইমার ওড়নার দিকে হাত বাড়াতে শুরু করলো সে। কিছু ছেলেমেয়ে বাদে বাকি সকলে ততক্ষনাৎ চোখ বন্ধ করে ফেলে। তারা জানে এখন রাইমার সাথে কি হতে চলেছে।

কোনো কিছু পরে যাওয়ার শব্দে চোখ খুলে তাকায় সবাই। মাটিতে পড়ে থাকা সামিরকে দেখতে পায় তারা। অবাক হয়। যারা ঘটনাটা দেখেছে তারা অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে রাইমার পাশে দাঁড়ানো শুভ্রার দিকে।

আকস্মিক আক্রমণে হতবাক হয়ে যার সামির। নাক থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে তার। কিছু বুঝে উঠার আগেই গালে ব্যাথা অনুভব করে। পর পর কয়েকটা থাপ্পড় পড়েছে তার গালে। পাল্টা আক্রমণ করার আগেই আবারো মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। এবার হাত চলে যায় পেটে। লাথি মেরেছে কেউ তার পেটে।

শুভ্রাকে দেখে রাইমার যেনো প্রাণ ফিরে পেলো। কিন্তু সঙ্গে আরো বেশি ভয়ও পেলো, ছেলেগুলোর কি হবে ভেবে?

শুভ্রা ইচ্ছা মতো মারছে সামিরকে। সামির পাল্টা আক্রমণ করার কোনো সুযোগ পাচ্ছে না।

সামির এর পিছনে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেগুলোর যেনো এতক্ষণে হুশ ফিরলো। তারা শুভ্রাকে দেখছিল।যেখানে তাদের দিকে চোখ তুলে তাকাতে সকলের হাঁটু কাপে সেখানে এমন কিছু কল্পনাও করতে পারে নি তারা।

তারা শুভ্রার দিকে এগিয়ে আসতে নিলে শুভ্রা একের পর এক থাপ্পর মারতে শুরু করে তাদের। যেভাবে পারছে সেভাবেই মারছে ছেলেগুলোকে।

ছেলেগুলোকে মারতে মারতে প্রায় অবস্থা খারাপ করে ফেলেছে। তবুও শুভ্রার ভিতর কোনো ক্লান্তি দেখা যাচ্ছে না।
তাকে দেখে মনে হচ্ছে ছেলেগুলোর প্রাণ না নিয়ে আজকে আর থামবে না।
ভার্সিটির কিছু ছেলে মেয়ে ওকে থামাতে আসতে নিলে চিৎকার করে উঠে। চিৎকার এতো জোরেই ছিল যে সকলে কিছুটা কেঁপে উঠে।

” একজনও এগিয়ে আসবেন না। এতক্ষণ যেমন একটা মেয়েকে এভাবে অপদস্ত হতে দেখে মজা নিচ্ছিলেন সেভাবেই এখনো ওদের মারখেতে দেখে মজা নিবে। ওদের মার খেতে দেখে দরদ উতলে উঠছে তাই না। আজ আপনাদের মতো মানুষদের জন্যই মেয়েদের এই অবস্থা। যখন মেয়েটার সাথে ওরা অসভ্যতামি করছিল তখন এগিয়ে আসতে পারেন নি। নিজেদের মানুষ হিসেবে পরিচয় দেন কিসের জন্য যদি আরেকজনের বিপদে পাশে এসে দাড়াতেই না পারেন।”

মাথা নিচু করে ফেলে সবাই। আসলেই তো তারা তখন এগিয়ে গেলে রাইমার সাথে এমন কিছু করার সাহস পেতো না ছেলেগুলো। কিন্তু তারাও বা কি করবে? বড়লোকের বখে যাওয়া ছেলে এরা। অনেক মেয়ে অপদস্ত হয়েছে এদের হাতে। কোনো পদক্ষেপ নিতে পারে না কেউ। যারা চেষ্টা করেছে তাদের সাথে অনেক বাজে ঘটনা ঘটে গেছে।

শুভ্রাকে থামতে না দেখে রাইমা আর অদিতি জড়িয়ে ধরে তাকে। শুভ্রা ছটফট করতে শুরু করে। তারা আরো শক্ত করে জড়িয়ে রাখে তাকে।

_________

সব ঘটনা শুনে ছেলেটি তাকায় শুভ্রার দিকে। পায়ের পাতা থেকে মাথার চুল অব্দি অদ্ভুতভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
ছেলেটির এমন চাহনি মোটেও ভালো লাগছে না শুভ্রার।

রাইমা আর অদিতির কাছ থেকে নিজেকে কোনোভাবে ছড়িয়ে নিয়ে ঠাস করে ছেলেটির গালে চর বসালো শুভ্রা। আহাম্মকে বনে গেলো সকলে।

” শুভ্রা পাগল হয়ে গেছিস? জানিস কাকে চর মারলি তুই?”

ভয়ে গলা শুকিয়ে যাচ্ছে অদিতির। সে খুব ভালো করেই চেনে এই ছেলেকে।
অদিতির কথা শুনে শুভ্রা প্রতিক্রিয়াহীন ভাবে তাকায় তার দিকে।

” জানিতো, এই ভার্সিটির সকলে যাকে নাকি বাঘের মতো ভয় পায় ‘মিস্টার মাহিদ মীরজাফর থুক্কু মিস্টার মাহিদ মির্জা’ ওনাকে না চেনার কি আছে? ভার্সিটির সব অসভ্য ছেলেদের লিডার। আরে আরে অসভ্য কেনো বলছি ,অসভ্য ডাকটা সকলকে মানায় না। এটার জন্য ও যোগ্যতা থাকা লাগে কিন্তু ওনার মধ্যে তো সেটুকুও নেই। বাপের হোটেলে খাবে আর সারাদিন গুন্ডামি করে বেড়াবে।”

মাহিদ এতক্ষণ গালে হাত দিয়ে দাড়িয়ে ছিল।তার বিশ্বাস হচ্ছিল না তাকে কেউ চর মেরেছে। কিন্তু এখন শুভ্রার এমন ব্যঙ্গ করা কথা শুনে মেজাজ খারাপ হয়ে গেলো তার। কোনো কিছু না ভেবেই শুভ্রাকে থাপ্পর মারার জন্য হাত উঠায়। শুভ্রা জানতো এমন কিছু হবে তাই সেও হাত তুলে মাহিদের হাত ধরার জন্য কিন্তু তার আগেই কেউ মাহিদের হাত ধরে ফেলে।

” কি করছিলে এটা? মেয়েদের গায়ে হাত তোলার সাহস হলো কি করে তোমার?”

হঠাৎ এমন একজন অচেনা লোককে দেখে সকলে কিছুটা অবাক হয়। শুভ্রা ভালো ভাবে তাকায় লোকটির দিকে। মনে পড়ে কালকে তাকে যে লোকটা ঠিকানা জিজ্ঞেস করেছিল এটা সেই লোক। কিন্তু এখানে কি করছে?

” ওই কেরে তুই? তোর সাহস হয় কি করে এই মাহিদ মির্জার হাত ধরার।”

কথাটা শেষ হওয়ার আগেই মাহিদের গালে আবারও একটা থাপ্পড় পরে। কিন্তু এবারের থাপ্পড়কারী লোকটি নিজেই।

” বেয়াদব ছেলে। আমি তোমাদের নতুন ম্যাথ টিচার।”

থ হয়ে যায় সকলে। লোকটিকে দেখে কেউ কি বুঝবে তিনি একজন শিক্ষক। বয়স কতই বা হবে। দেখতে সুদর্শন। শুভ্রারাও কিছুটা অবাক হয়েছে।

কিছু সময়ের মধ্যেই সেখানে উপস্থিত হয় প্রিন্সিপাল। সকলকে নিজেদের ক্লাসে যেতে বলেন তিনি। শুভ্রা আর সামিরদের নিজের সাথে নিয়ে যান।

_____________

ভিডিও কলে এতসময়ের ঘটে যাওয়া সকল ঘটনা দেখছিল আরহাম।খুব মনোযোগ সহকারে দেখছিল শুভ্রার প্রতিটা আঘাত করার কৌশল। দেখে মনে হচ্ছে এই কাজে পারদর্শী।প্রতিপক্ষকে সুযোগ’ই দিলো না তার উপর আঘাত করার।

ফাহিম মিটমিটিয়ে হাসছে। সে ভাবছে শুভ্রা কিভাবে ছেড়ে দিলো ছেলেগুলোকে?এতক্ষণে ছেলেগুলোর হার হাড্ডি গুড়ো করে ফেলার কথা।

” মেয়েটা এমন পারদর্শীদের মতো কিভাবে মারামারি করলো?”

” ভাই, ওকে নিজের আত্মরক্ষার জন্য সব রকমের কৌশল শেখানো হয়েছে। ছেলে গুলোর ভাগ্য ভালো ভাই।”

প্রথম কথাটা শুনে আরহাম কিছুটা সন্তুষ্ট হলেও শেষের কথাটা শুনে ভ্রু কুচকে তাকায় ফাহিমের দিকে।

” ভাগ্য ভালো কিভাবে?”

” ছেলেগুলোর এতক্ষণে হার হাড্ডি গুড়ো করে ফেলার কথা ছিলো। কিন্তু কেনো থেমে গেলো বুঝতে পারছি না।”

” রাইমা আর সাথে মেয়েটা ওকে আটকালো তো”

” ভাই ও নিজে থেকে না থামলে ওনারাও ওকে আটকাতে পারতো না।”

” যাইহোক মেয়েটা নির্লজ্জতা ছাড়াও দেখি ভালো কাজও করতে জানে। আমি তো ভেবেছিলাম সারাদিন অসভ্যতামি করে বেড়ায়। তোর বোন তাহলে কিছু পারে ফাহিম”

“জুতো মেরে গরু দান করলেন ভাই”

__________

ক্লাসরুমে বসে আছে রাইমা আর অদিতি। শুভ্রা এখনো আসে নি।

” তুই তো ওখানে বলতেই পারতি তুই মন্ত্রী আরহাম শিকদারের বোন। তাহলে এতো ঝামেলা হতো না।”

” তাতো ঠিক। কিন্তু আমি চাচ্ছিলাম না কেউ জানুক। জানলে দেখতি সকলে আমাকে আলাদা আচরণ করা শুরু করতো। আর জানিস মনের মধ্যে একটা বিশ্বাস ছিল শুভ্রা আসবে”

তাদের কথপোকথনের মাঝেই ক্লাসরুমে প্রবেশ করেন প্রিন্সিপাল। সাথে শুভ্রারও আসে। ও গিয়ে সোজা রাইমা আর অদিতির মাঝে বসে। ওরা ওকে কিছু জিজ্ঞেস করতে নিলে ইশারায় চুপ করিয়ে দেয় শুভ্রা। ক্লাসের ছেলেমেয়েরা অদ্ভুত ভাবে দেখছে ওকে।

” স্টুডেন্টস, ইনি তোমাদের নতুন ম্যাথ টিচার মিস্টার আরাজ চৌধুরী”

প্রিন্সিপাল বেশ কিছুসময় সকলের সাথে কথা বলে চলে যান। ক্লাসরুমের মেয়েরা হা করে দেখছে আরাজকে। চোখে চশমা না থাকলে হয়তো আরো বেশি সুন্দর লাগতো ।

” তো আমার প্রিয় শিক্ষার্থীগণ আমার পরিচয়তো পেয়েই গেলেন এখন আপনাদের পরিচয়গুলো দিন।”

আরাজের কথা বলার ধরন দেখে মুগ্ধ হয় সকলে।

একে একে সকলের সাথে পরিচয় হয়ে নেয় আরাজ। ক্লাসরুমে শুভ্রার সাথে বাড়তি একটা কথাও বলে না।এমন ভাব করলো যেন তারা একে অপরকে আগে কখনও দেখেইনি।

_________

চলবে,,,,,