প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-১৯

0
103

গল্পঃ #প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
পর্বসংখ্যাঃ ১৯
লেখিকাঃ #আহিয়া_শিকদার_আহি

মিডিয়ায় রীতিমতো ঝড় শুরু হয়েছে । সবগুলো নিউজ চ্যানেলে একটাই খবর হেডলাইন হিসেবে দেখা যাচ্ছে,”আগামী শুক্রবার মন্ত্রী আরহাম শিকদার বিবাহিত জীবনে পদার্পণ করতে চলেছেন।”

” শিল্পপতি মিস্টার আজমল শিকদারের নাতি, বর্তমান দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী আরহাম শিকদার আগামী শুক্রবার তার অবিবাহিত জীবনের ইতি টানতে চলেছেন। জানা গেছে শিল্পপতি মিস্টার ইশতিয়াক খানের একমাত্র নাতনী শুভ্রা ইবনাত খানের সাথে তার বিয়ে।দেশের বিশিষ্ট দুই শিল্পপতির নাতি নাতনির বিয়ে হওয়ায় আগামী শুক্রবার বেশ জাঁকজমকের সাথে কাজ সম্পূর্ণ করা হবে। শহরের সব থেকে বড় কমিউনিটি সেন্টার এই বিয়ের জন্য সিলেক্ট করা হয়েছে। দেশের মান্য গণ্য বক্তিবহুল উপস্থিত থাকছেন এই বিয়েতে।বেশ কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা করা হয়েছে। ”

শিকদার বাড়ি সাজানোর কাজ শুরু করা হয়েছে। মন্ত্রী আরহাম শিকদারের বিয়েটা চারটি খানি কথা নয়। বেশ জাঁকজমকের যথে সাজানো হচ্ছে। হাতে তো খুব বেশি সময় নেই। তাই বেশ তাহরাহুড়োয় সব কাজ করা হচ্ছে।

আরহাম নিউজ দেখছিল। ঠোঁটের কোনায় তার এক চিলতে হাসি। বার কয়েক ” শুভ্রা ইবনাত খান”নামটা উচ্চারণ করে।

আসাদ শিকদার এসে বসেন ছেলের পাশে। হাতে বিয়ের কার্ড বিদ্যমান। বেশ বিরক্ত তিনি ছেলের কাজে। এতো তাড়াতাড়ি সব কিছু করতে হচ্ছে। জোড়ে একটা শ্বাস ফেলে ,কয়েকটা কার্ড ছেলের দিকে এগিয়ে দেন।

” এগুলোর মধ্যে কোনটা বাছাই করবো বলো?”

” আমাকে দেখানোর কি আছে। তোমার যেটা ভালো মনে হয় সেটাই করো। তোমার ছেলের বিয়ের কার্ড যেটা পছন্দ করবে সেটাই হবে।কিন্তু একদম সুন্দরটাই চাই। মন্ত্রী আরহাম শিকদারের বিয়ের কার্ড অবশ্যই সুন্দর হতে হবে। আর তোমার যা পছন্দের অবস্থা, আমার মাকে ছাড়াতো ভালো জিনিস জীবনেও পছন্দ করতে পারো নি। যাইহোক তোমার যেটা পছন্দ হয় সেটাই সিলেক্ট করো।”

আসাদ শিকদার ছেলের কথায় তেঁতে উঠেন। এটা তাকে প্রশংসা করা হলো নাকি ঠান্ডা মাথায় অপমান করা হলো। ছেলেটা তার সব কিছুই নিখুঁত ভাবে করে তাই বলে বাবার পছন্দের অপমান। নাহ্ এটা কোনোভাবেই মানা যায় না। এর একটা হেস্তনেস্ত করতেই হবে আজকে। সব সময় তার সাথে এভাবে কথা বলতে পারে না সে। বন্ধু ভাবে নাকি তাকে?

” আরহাম, কি বলতে চাইছো তুমি? আমার পছন্দ খারাপ। ভুলে যেও না আমি তোমার বাবা। আমাকে কি তোমার বন্ধু মনে হচ্ছে। ”

“বাহ্ বাহ্ শিল্পপতি আসাদ শিকদার পাল্টি খাচ্ছে। আপনি নিজেই তো সব সময় বলেন ‘ আরহাম আমি তোমার বন্ধুর মতো, সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করবে ‘।এখন আবার কি হলো?”

কপাল চাপরান আসাদ শিকদার। কখনোই তিনি আরহামের সাথে পেরে উঠেন নি। ছেলেটার সব কথার যুক্তি যেনো ঠোঁটের আগায় লেগে থাকে।
বেশ বড়সড় একটা ধমক দেওয়ার প্রস্তুতি নেন আসাদ শিকদার। আজকে তিনি ছেলেকে হার মানিয়েই ছাড়বে। মুখ খোলার আগেই আজমল শিকদারের কথায় চুপসে যান তিনি। আজমল শিকদার তাকে ধমক দিয়েছে। এই বয়সেও বাবার ধমক শুনতে হয় নিজের ছেলের জন্য। হায় কি কপাল তার।বাবাকে তিনি এখনো প্রচণ্ড ভয় পান। তিনি ভেবে পাননা তার ছেলে তার মতো হলো না কেনো? হতাশ তিনি। বাবার জন্য ছেলেকে কিছুই বলতে পারেন না।

মাঝে মাঝে আসাদ শিকদারের বলতে ইচ্ছে করে ” বাবা, তোমার নাতি তোমার ছেলের মতো হলো না কেনো। এই যেমন আমি তোমাকে বাঘের মতো ভয় পাই কিন্তু তোমার নাতি আমাকে বিড়াল মনে করে। তোমার মতো হতে হলো কেনো। দুইটা বাঘের মাঝে আমি ছোট্ট একটা বিড়ালছানা। কোথায় ভেবেছিলাম আমাকে ভয় দেখিয়ে তোমার কেমন লাগে সেটা ছেলের মাধ্যমে অনুভব করবো। কিন্তু সেগুড়ে বালি।”

মুখটা কাচুমাচু করে বসে থাকেন আসাদ শিকদার। ড্রয়িংরুমে উপস্থিত সকলে ওনার অবস্থা দেখে মুখ চেপে হাসছেন। আজমল শিকদার আরহামের আরেকপাশে বসলেন।

” দাদুভাই, এই মিডিয়াতো দেখি ঠিকই মৌমাছির মতো মধুতে এসে বসলো।”

” দাদু, পুরোটা আর কোথায় বসতে পারলো।এক অংশে বসেছে।”

” অবশ্য ঠিকই বলেছো। পুরো মধু গিলতে পারলে তো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ লাগিয়ে ফেলতো। এদের চোখ কান হচ্ছে বাজ পাখির মতো।তা সামলালে কি করে।

” কি দাদু এটা কোনো প্রশ্ন করলে তুমি। তুমি অবশ্যই সব জানো তাহলে জিজ্ঞেস করার কি হলো?নাকি তোমার ছেলের মতো তোমারও বুদ্ধি লোপ পেয়েছে?”

আসাদ শিকদার কটমট করে তাকান আরহামের দিকে। তাতে কোনো প্রতিক্রিয়া হলো না আরহামের। এখন এখানে থাকলে তার মান ইজ্জত নিয়ে না আবার টানাটানি হয়। তাই রেগে দাঁত কিড়মিড় করতে করতে চলে গেলেন তিনি। আরহামকে শিক্ষা দেওয়ার জন্য তার মাথায় নতুন বুদ্ধি খেলা করছে। বাকা হাসেন তিনি আরহামের দিকে তাকিয়ে। যার অর্থ “আমারও সময় আসবে”। আরহাম মৃদু হাসি। বাবাকে জ্বালাতে তার বেশ ভালো লাগে।

” দাদু, চাচাজানরা কখন আসবে?”

” এইতো বিকেলের মধ্যে বাংলদেশে ল্যান্ড করবে। তোমার বিয়ের খবর জানানোর পর থেকে আসার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছে। নিতুল আর তোমার চাচাজানরা তো বেশ এক্সাইটেড তোমার বিয়ে নিয়ে। কিন্তু নেহা,,”

” শুনতে চাই না দাদু।তুমি বেশ ভালো করেই জানি নেহাকে আমি রাইমার মতই দেখি। ওর ওসব ছেলে মানুষি দেখার সময় আমার নেই। বয়স তো কম হলোনা। বিয়ে দিচ্ছ না কেনো?”

” তুমি বেশ ভালো করেই জানি নেহা কেনো বিয়ে করছে না। মেয়েটা পাগলামি শুরু করেছে তোমার বিয়ের কথা শুনে। নিতুল নাকি সামলিয়েছে।”

বলতে বলতেই চুপ হয়ে যান আজমল শিকদার। নীলিমা শিকদারের রাগ হচ্ছে নেহার কথা শুনে। তবুও চুপ করে আছেন তিনি। আরহাম আর কোনো কথা বলল না। ধীরে ধীরে হাত মুষ্ঠিবদ্ধ হচ্ছে তার।

” এতো সকালে কোথায় যাচ্ছিস রাইমা?”

” মামীমা, সপিং এ যাবো।”

” এতো সকালে! এখনো তো সপিং মল খোলে নি মনে হচ্ছে।”

” মামিমা,ভার্সিটি তো যাচ্ছি না তাই একটু ফ্রেন্ডের সাথে ঘোরাঘুরি করে সপিং এ যাবো।”

” আচ্ছা শোন আজকে সপিং এ যাওয়ার দরকার নেই। বিয়ের সপিং তো করতে হবে। আর তোর ছোটো মামাইরা বিকেলের মধ্যেই চলে আসবে। নেহা আর নিতুল কে সাথে করে একসাথেই যাওয়া যাবে। শুভ্রাদের ও আসতে বলতে হবে।”

মাথা নাড়ায় রাইমা। সপিং তো অজুহাত সেতো ফাহিমের সাথে দেখা করতে বের হচ্ছে। মন খারাপ করে সোফায় বসে পড়ে। শুভ্রার নাম শুনতেই আরহাম তার মাকে উদ্দেশ্য করে বলে,

” মা তোমরা যেও। তোমার বৌমাকে যেতে হবে না। ”

” কি বলছিস এসব। বিয়ের কনে সপিং করবে না?”

” আমিতো না বললাম। আরকোনো প্রশ্ন শুনতে চাচ্ছি না এ বিষয়ে। আসছি আমি।”

বেরিয়ে গেলো আরহাম। নীলিমা শিকদার কিছুই বলতে পারলেন না। কোনোভাবেই তিনি ছেলের এই কথার সাথে তাল মিলাতে পারলেন না। বিয়ের কনে নাকি সপিং করবে না। কি আজব সব চিন্তাধারা তার ছেলের। রাইমা জানে আরহাম এটা কেনো বললো। কালকে সে আরহামের হাতে সপিং ব্যাগ দেখেছিল। হয়তোবা বউয়ের জন্য সপিং করেছে। ভাবতেই মিটমিটিয়ে হেসে ফেলে। যাইহোক তার নিরামিষ ভাইয়া আমিষ হচ্ছে।

______________

ভার্সিটিতে যাওয়া হবে না শুনে ফুরফুরা মেজাজের বারোটা বেজে গেছে শুভ্রার। আজকে ভার্সিটিতে যাওয়া দরকার ছিল তার। কিন্তু বিয়ের জন্যে নাকি এই কয়েকদিন ভার্সিটি যেতে পারবে না। বিয়েতো হয়েই গেছে তাহলে এতো কাহিনীর কি আছে। মন্ত্রী মশাইকে ডাকবে উনি এসে টুপ করে গাড়িতে তুলে নিয়ে চলে যাবে শুভ্রার একমাত্র শশুর বাড়ি। কিন্তু নাহ্ এখন নাকি আমার পুরো বাংলাদেশ কে জানিয়ে বিয়ে করতে হবে। তার উপর আবার এই বিয়ের খবর মিডিয়ায় যাওয়ার পর থেকে বিভিন্ন সোশ্যাল সাইটে নানান রকমের কথা হচ্ছে।
শুভ্রা বসে বসে সেগুলোই দেখছে। হঠাৎ ফেসবুকে একটা ভিডিও দেখে মেজাজ ৪৪০ বেড়ে গেলো শুভ্রার। পাশেই তার চার ভাই চা খেতে বসেছে। বাকিরা টেবিলে।

” এর কতো বড় সাহস। আমাকে নিয়ে ট্রোল করছে। এই শুভ্রাকে নিয়ে ট্রোল করছে। পাঠ কাঠি কোথাকার। ফু দিলে উড়ে যাবে সেনাকি শুভ্রা ইবনাত খানকে ট্রোল করছে।”

চিৎকার করে বলছে শুভ্রা। সবেমাত্র চা মুখে দিয়েছিল ফারহাদরা। বোনের এমন চিৎকারে চা মুখ থেকে ছিটকে পরে যায়। গোল হয়ে বসার কারণে এক অপরের গায়ের উপর পড়ে। নাক সিটকায় শুভ্রা। ভাগ্য ভালো তার শরীরে পড়েনি। সেতো ফারহাদ আর রাহাতের মাঝে ছিলো।

” ঠিকঠাক চা ‘ও খেতে পারো না?”

” তুই ঠিকমতো খেতে দিলেতো খাবো। কাকে এমন করে কথা শোনাচ্ছিস? কে তোকে ট্রোল করলো? কার এতবড় সাহস আমাদের বোনিকে ট্রোল করেছে?”

শুভ্রা ফোনটা এগিয়ে ধীরে তাদের দিকে। ভিডিওটা কয়েকমিনিটের। কিন্তু কয়েক সেকেন্ড দেখার পরই চারজন হাহা করে হেসে উঠে। হাসতে হাসতে একেওপরের শরীরে পরে যাচ্ছে। রিমন তো মেঝেতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।

ডাইনিং এরিয়া থেকে খান বাড়ির বাকি সদস্য ওদের দিকে ভূত দেখার মতো চেয়ে আছে। তারা কিছুটা ভয় পেয়ে গিয়েছিল শুভ্রার চিৎকারে কিন্তু হঠাৎ আবার ছেলেদের এভাবে হাসতে দেখে অবাক হয়েছে।

শুভ্রা রেগে অগ্নিশর্মা হয়ে গেছে। ফোনটা সোফার উপর ফেলে চারজনকে ধাওয়া করতে শুরু করে। চারজন ই সামনের দিকে দৌড়াচ্ছে আর শুভ্রা পিছনে বাঘিনীর মতো দৌড়াচ্ছে। হাতে পেলে আজকে এদের ভোজন বানাবে। দৌড়াতে দৌড়াতে বাড়ির বাইরে চলে গেলো পাঁচজন।

এতক্ষনে ফারজানা খান শোফার কাছে এসে পড়েছিলেন। সোফায় পড়ে থাকা ফোন ভিডিও ক্লিপটি তার নজরে পড়তেই তিনিও হেসে উঠলেন। ফোনটা হাতে নিয়ে ডানিংয়ে সবাইকে দেখালেন। সবাই হেসে ফেললো।

আরহামের বিজয়ের দিন শুভ্রা তাকে প্রপোজ করেছিল সেই ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় রীতিমতো ভাইরাল হয়েছিল। কিন্তু শুভ্রার মুখে মাস্ক থাকায় কেউ তাকে আইডেন্টিফাই করতে পারে নি। কিছুদিনের মধ্যে বিষয়টা চাপা পড়ে যায়। কিন্তু মন্ত্রী আরহাম শিকদারের বিয়ে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ায় কিছু সংখ্যক মানুষ সেই ভিডিও নিয়ে আবারো পড়েছে। কি বলছে মেয়েটা মন্ত্রী মশাইকে ভালোবেসেছিলো কিন্তু ভাগ্য খারাপ থাকায় পেলো না। কেউ আবার সেই ভিডিওর সাথে স্যাড গান লাগিয়ে ছেড়েছে। কিন্তু এরই মধ্যে বেশ কয়েকজন ট্রোল করছে ভিডিও টাকে নিয়ে। তার মধ্যে একটা ছিল ফানি একটা গানের সাথে ভিডিও টা সেট করে বিভিন্ন মন্তব্য করা শুরু করেছে।

যেমন, ” জাতি দেখতে চায়, মেয়েটি এখন কি খেয়ে শোক পালন করছে। ছেলেমানুষ হলে একটা কথা ছিল। কিন্তু সে মেয়েমানুষ সে এখন কি করছে। সেকি আমাদের সাথে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করবে ” আরো নানা কথা।

চলবে,,,