প্রিয় মন্ত্রী মশাই পর্ব-৩৫ এবং শেষ পর্ব

0
116

#প্রিয়_মন্ত্রী_মশাই
#অন্তিম_পর্ব
#আহিয়া_শিকদার

মাঝে কেটেছে সাতটি বছর।সবাই নিজ নিজ জীবনে ব্যস্ত হয়ে পরেছে।সবার জীবনেই পরিবর্তন এসেছে।কিন্তু সম্পর্ক গুলোতে কোনো পরিবর্তনের রেস মাত্র দেখা যায়নি।বরং আগের চেয়ে আরো শক্ত হয়েছে।

আজকে মন্ত্রী আরহাম শিকদারের একমাত্র ছেলের জন্মদিন।বাড়ি সেজে উঠেছে আলোকসজ্জায়।এতো এতো ব্যস্ততার মাঝে শুভ্রা খাবার প্লেট হাতে ছুটে চলেছে শুভ্র’র পিছনে। আরহাম আর শুভ্রার একমাত্র ছেলে আব্রাহাম শুভ্র শিকদার।এক পর্যায়ে শুভ্রকে ধরতে না পেরে ধপ করে সোফায় বসে পরলো শুভ্রা।প্রচণ্ড রকমের চঞ্চল হয়েছে শুভ্র।একদম মায়ের মতো।আফসোস হয় শুভ্রার।গর্ভকালীন আরহামের সাথে সবসময় ঝগড়া করতো যে শুভ্র মায়ের মতো চঞ্চল হবে। আরহাম বলতো তার মত শান্ত হবে।এখন শুভ্রা ভাবে কেনো ছেলেটা তার বাবার মতো হলোনা।সারাদিন দৌড়ের উপর রাখে তাকে।

“ছোট মামাই”

ফাহিমের কোলে লাফিয়ে উঠলো শুভ্র।ফাহিম ও ভালোবেসে কোলে নিলো।পাশে রাইমা দাড়িয়ে আছে তার তিন বছরের বাচ্চা ফাহিমাকে নিয়ে।দুই পরিবারের মতেই বিয়ে হয়েছে তাদের।

বাড়ির ভিতর ঢুকলো।পরপরই ফারহাদ,রাহাত আর রিমন ঢুকলো। রাহাত আর রিমনের হাত ধরে রেখেছে তাদের ছেলেরা।একে একে খান পরিবারের সবাই ঢুকলো।

খান পরিবারের সাথে কুশল বিনিময় করলো শিকদার পরিবারের সবাই।খোস গল্পে মেতে উঠল তারা। বাচ্চারা একসাথে খেলতে লাগলো। বাড়ির সবার সাথে কথা বলে দরজার সামনে এসে দাড়ালো শুভ্রা।বার বার বাইরে তাকাচ্ছে।তার পিছনেই এসে দাঁড়ালো তার চার ভাই।

“বোনি চল বাগানে যাই”

শুভ্রাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে ফারহাদ একহাত টেনে নিয়ে যেতে শুরু করল।বাড়ির সবাই তাদের দিকে তাকিয়ে হাসলো।এদের ভাই বোনের সম্পর্কে সবসময় মুগ্ধ হয় সবাই।

বাগানে ঘাসের উপর গোল হয়ে বসলো পাঁচজন।বয়স বেড়েছে ঠিকই কিন্তু তাদের আচরণ এখনো আগের মতই আছে। বেশ কিছুক্ষণ আড্ডা দিলো তারা।

বেলা গড়ায়। চারদিক অন্ধকার হয়ে আসে।একে একে অতিথিরা আসতে শুরু করেছে বাড়িতে।দরজায় দাড়িয়ে শুভ্রা আর আরহাম স্বাগতম জানাচ্ছে তাদের।

কিছুক্ষণ পর দুই জোড়া কপোত কপোতী আসলো সাথে একজন সিঙ্গেল। আরাজের সাথে রিমি আর দুই বছরের একটা বাচ্চা।শুভ আর অদিতির ও বিয়ে হয়েছে। সাত মাসের অন্তঃসত্ত্বা অদিতি। মাহিদ বিয়ে করেনি এখনো।হাসি মুখে তাদের সবাইকে স্বাগত জানায়।

“বলেছিলাম না মিস্টার চৌধুরী।আপনার জীবনেও সঠিক কেউ আসবে যে আপনাকে আগলে রাখবে।”

হাসলো আরাজ।সেদিন শুভ্রার কথায় ধীরে ধীরে নিজেকে পরিবর্তন করেছে।নিজের আসল ভালোবাসার মানুষকে বেছে নিয়েছে। সবাই আসলেও এখনো দাড়িয়ে আছে শুভ্রা। আরহাম জানে কেনো।তাই আর কিছু বললোনা।শুভ্রার অপেক্ষার অবসান ঘটলো।কাঙ্ক্ষিত মানুষটি এসেছে। সাথে স্বামী সন্তান।

“নেহা আপু,এতক্ষন লাগে আসতে।তোমার না সকালে আসার কথা ছিল।”

“বাবুর জন্য দেরি হয়ে গেলো ভাবি। তো আমাদের শুভ্র বাবু কোথায়?”

“কেকের কাছে।চলো”

যথা সময়ে কেক কাটা হলো।সবাই অনুষ্ঠানে মনোযোগ দিলো। আজ পরিবারের সবাই মেতে উঠেছে হাসি মজায়।তাদের জীবন থেকে মুছে গিয়েছে কালো অধ্যায়গুলো।

__________

“বাবা,তোমার চুল এতো ছোটো ছোটো কেনো?দেখো ছবিতে তোমার চুল কতো বড়”

শুভ্রর কথায় পাশ ফিরে তার দিকে।

“তোমার জন্মের আগে তোমার মায়ের নখ কেটে দিয়েছিলাম একবার তার প্রতিশোধ নেওয়ার জন্যই আমি ঘুমিয়ে পরার পর আমার চুল কেটে দিয়েছিল।তারপর আর চুল বড় করতে দেয়নি।”

“বাবা, তুমি না মন্ত্রী তাহলে মাকে ভয় পাও কেনো?”

“বিয়ে করলে বুঝতি বাপ।”

“তাহলে বিয়ে দিয়ে দেও আমার।”

চোখ বড় বড় করে তাকায় আরহাম।কোটর থেকে বেরিয়ে আসার উপক্রম।পাঁচ বছরের ছেলে বলে কি এসব।

“তোমার বউ কোথায় পাবো?”

বাবার প্রশ্ন শুনে উৎফুল্ল হয়ে উঠল শুভ্র। এটারই অপেক্ষা করছিল যেনো।

“আছে তো”

একপ্রকার বিছানা থেকে লাফিয়ে উঠলো আরহাম।বিস্ফোরিত চোখে পর্যবেক্ষণ করলো ছেলেকে। এ যেনো শুভ্রার প্রতিচ্ছবি।একই রকম ঠোঁটের কোণে হাসি। নির্লজ্জতায় ভরা। আমতা আমতা করে প্রশ্ন করলো আরহাম,

“কে?”

“ফাহিমা ”

নাহ্ এবার মনে হচ্ছে মাথা ঘুরে পরে যাবে আরহাম।ছেলে এখনি নিজের ভবিষ্যৎ বউ খুঁজে রেখেছে।মেয়ে কিনা তারই মামাতো বোন।আবার বাবার সামনে কি সুন্দর হেসে হেসে বলছে।দরজার কাছ থেকে উচ্চ স্বরে হাসির আওয়াজ শোনা গেলো। শুভ্রা এসেছে ঘরে।হাসতে হাসতে আরহামের পাশে এসে বসলো।ঢলে পরছে আরহামের গায়ে।হাসি যেনো থামছেই না।

“এভাবে পাগলের মতো হাসছো কেনো?”

“দেখেছেন মন্ত্রী মশাই আপনার ছেলে আপনার মতোই নির্লজ্জ হয়েছে”

তেতে উঠলো আরহাম।শুভ্রার কথার সম্পূর্ণ বিরোধিতা করলো।

“ছেলে মোটেও আমার মত হয়নি।আমিতো ওর মধ্যে সম্পূর্ণ তোমার প্রতিচ্ছবি দেখতে পাই।তোমার মতই নির্লজ্জ তোমার ছেলে”

শুভ্র বুঝে গেলো এবার বাবা মেয়ে মধ্যে টর্নেডো বয়ে যাবে।সব সময় দেখেছে।একটুতেই দুজনের মধ্যে কি পরিমান ঝগড়া হয়।

“চুপ,চুপ।আগে বলো আমাকে বিয়ে করাবে কিনা ফাহিমার সাথে?”

তৎক্ষণাৎ চুপ হয়ে যায় আরহাম আর শুভ্রা। দুজনই গম্ভীর মুখ করে ফেলে।সামান্য ভয় পায় শুভ্র। শুভ্রা গম্ভীর কণ্ঠে বলে,

“ফাহিমা তোমার বোন হয় শুভ্র”

আতকে উঠলো যেনো শুভ্র।দাড়িয়ে পরলো বিছানায়।মায়ের দিকে তাকিয়ে বলল,

“আম্মু,আমি তোমার পেট থেকে বের হয়েছি ও হয়নি।তার মানে ও আমার বোন নয়। ও তো ফুফির পেট থেকে বের হয়েছে।মামাই বলেছে আমাকে ফাহিমার সাথে আমার বিয়ে দিবে।আমার বউ হবে ফাহিমা।না না বউ তো হয়ে গিয়েছে।”

প্রথম কথাগুলো শুনে আরহাম আর শুভ্রা মুখ টিপে হাসলেও শেষের কথা শুনে থ হয়ে যায়।

“বিয়ে হয়ে গিয়েছে মানে?”

“হ্যাঁ,আমাদের পুতুলের সাথে আমরাও কবুল বলে বিয়ে করেছি।”

মাথা চক্কর দিয়ে উঠলো শুভ্রার।ছেলেটা বয়সের তুলনায় অতিরিক্ত পাঁকনা।তাই বলে এই বয়সে তাকে শাশুড়ি বানিয়ে দিবে।

“নির্লজ্জ ছেলে একদম চুপ। বাপের মতো দিন দিন হয়ে যাচ্ছ।”

মায়ের মিষ্টি ধমকে চুপ হয়ে যায় শুভ্র।কিন্তু ক্ষেপে যায় আরহাম। শুভ্রর দিকে তাকিয়ে বলে,

“বাবা,তোমাকে ফাহিমার সাথেই বিয়ে দিবো।যদি আজকে দাদুনের ঘরে ঘুমাতে যাও”

“সত্যি”

“হ্যা,তিন সত্যি।যাও এখন।”

খুশিতে গদগদ হয়ে চলে গেলো শুভ্র।শুভ্রাকে একদম নিজের কাছে টেনে নিল আরহাম।হকচকিয়ে গেল শুভ্রা।নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করলো।

“তোমাকে কত বার বলেছি বউ, পাঠকাঠির শরীর নিয়ে শক্তি দেখাবে না।এখন একটু অসভ্যতামি দেখাই ”

বাধা দেয়না শুভ্রা।আরো মিশে যায় ব্যক্তিগত পুরুষটার মধ্যে।ছোট্ট একটা আবদার করে বসে।

“চলুন না মন্ত্রী মশাই বারান্দায়।দেখুন আজকে কতো সুন্দর চাঁদ উঠেছে।”

না করতে পরলো না আরহাম।স্ত্রীকে নিয়ে গিয়ে বসলো বারান্দায়।একজন আকাশের চাঁদ দেখতে ব্যস্ত হয়ে পরলো আরেকজন নিজের ব্যক্তিগত চাঁদ দেখতে।

“ভালোবাসি প্রিয় মন্ত্রী মশাই”

সমাপ্ত