#মেঘ_হবি_তুই
[সূচনা পর্ব ]
লেখক – শহীদ উল্লাহ সবুজ
চৌধুরী বাড়ির ছোট ছেলে তন্ময় চৌধুরী বিয়ে করছেন এক গরীব কৃষক পরিবারের মেয়েকে। খবর টা ছড়িয়ে পড়তেই এলাকার মধ্যে অনেকেই অনেক রকম কথা বলছে। শেষে কীনা চৌধুরী বাড়ির ছেলে একটা কৃষকের মেয়ের জামাই হবে?ছিহ,ছি। অনেকেই বলছে মেয়েটা তন্ময়কে কিছু দিয়ে বশ করছে,নাহলে এমন একটা মেয়ে কীভাবে চৌধুরী বাড়ির বউ হতে পারে?
এদিকে মানুষের মুখে এসব কথা শুনে আয়ান চৌধুরী রেগে বাসায় চলে আসেন। বাসায় এসেই নিজের চেয়ারের উপরে বসে সবাইকে ডাক দেয়। কিছুক্ষণের মধ্যেই সবাই এসে উপস্থিত হয়। আয়ান চৌধুরী হলেন চৌধুরী বাড়ির মালিক। তন্ময় চৌধুরীর বাবা।
তন্ময়ের মা রানী চৌধুরী আয়ানের রাগি মুখ দেখে ভয়ে ভয়ে ওনার কাছে এসে বললেন,
— কি হয়েছে আপনার? আপনি এমন রেগে আছেন কেন?
— তোমার ছোট ছেলের জন্য তো আমি কোথাও মুখ দেখাতে পারছিনা। আমার তো আরো একটা ছেলে আছে, কই তার জন্য তো আমাকে কোনো কথা শুনতে হয়নি।
তন্ময়ের বড় ভাই আশরাফ চৌধুরী বলল — বাবা কি হয়েছে আপনি সেটা তো বলুন। তন্ময় কি করছে?
— রাস্তায় বের হয়ে দেখো মানুষ কী বলছে চৌধুরী বাড়ির ছেলে কিনা একটা কৃষকের মেয়েকে বিয়ে কতবে!
তখনই তন্ময় এসে হাজির।
— বাবা কে কি বলল এসব শোনার কি আমাদের দরকার আছে? আমি কাকে বিয়ে করব কার সাথে সংসার করব এটা একান্তই আমার ব্যাক্তিগত ব্যপার। মানুষ কি বলে এগুলো শোনার কোনো ইচ্ছে আমার নেই। আর আমাকে নিয়ে তোমাদের যদি কোনো সমস্যা হয় আমি এ বাড়ি ছেড়ে চলে যাবো।
— তুই এসব কি বলছিস? মানুষের কোথায় তোকে বাড়ি ছেড়ে যেতে হবে কেন? তুই যা আমি বাবাকে বুঝিয়ে বলছি।
আশরাফ চৌধুরীর কথা শুনে তন্ময় চলে গেলো। এবার আশরাফ তার বাবার কাছে গিয়ে বলল,
— বাবা মাথা গরম করে তো কিছু হবে না। আমি বলছিলাম তন্ময় যেহেতু এখানেই বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আমাদের ও একমত হওয়া দরকার। আর আমিও খোঁজ নিয়ে দেখেছি মেয়েটাও খুব ভালো। গরীবের মেয়ে হইছে তো কি হইছে? প্লিজ বাবা তুমি আর অমত করোনা। আমাদের তো কোনো কিছুর অভাব নেই।
আয়ান চৌধুরী চুপচাপ বসে রইলেন।
— বাবা কিছু একটা বলো।
— ঠিক আছে বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে নাও। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব হয়।
আয়ান চৌধুরীর কথা শুনে সবাই অনেক খুশি হলো। সব থেকে বেশি খুশি তন্ময়। তন্ময় বিকেলে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে গেলো। সেখানে তন্ময়ের বন্ধুরা তন্ময়কে প্রশ্ন করল।
— কিরে তন্ময় এটা কি শুনলাম? তুই নাকি নীলাকে বিয়ে করছিস?
— হ্যাঁ।
— তোর কি মাথা ঠিক আছে? তুই কিনা নীলার মতো একটা মেয়েকে বিয়ে করছিস? তোর এই ব্যাপার নিয়ে তো পুরো এলাকায় হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। আমি বুঝলাম না তুই চাইলে তো বড়লোক পরিবারের কোনো মেয়েকে বিয়ে করতে পারিস।
— হ্যাঁ পারতাম।
— তাহলে তুই নীলাকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লাগলি কেন?
তন্ময় ভিলেন মার্কা একটা হাসি দিয়ে বলল,
— তোদের কি মনে হয় আমি নীলাকে ভালোবেসে বিয়ে করছি?
— তাইতো মনে হচ্ছে। নাহলে তুই কেন এই মেয়েকে বিয়ে করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিস?
— হাহাহা, তোরা হয়তো ভুলে গেছিস সব। আমি ভুলিনি। মনে আছে নীলা একবার আমার গায়ে হাত তুলেছে? আমি এই ছোটো লোকের বা*চ্চার সব অহংকার মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার জন্য এতো কিছু করছি। ও এখনো তন্ময়কে চিনেনা। আমি ওর থেকে সব কিছুই কড়ায়গণ্ডায় হিসাব নেবো। আর এই বিয়ে তো একটা নাটক মাত্র।
— ওর থেকে প্রতিশোধ নেয়ার জন্য বিয়ে করার কি দরকার?
— কারণ আমি ওকে বুঝিয়ে দিতে চাই তন্ময় চৌধুরী কি জিনিস। তন্ময় চৌধুরী চাইলে কি না করতে পারে।
— তোর যেটা ভালো মনে হয় তুই সেটাই কর।
— আচ্ছা এসব বাদ দিয়ে বল তোদের কি অবস্থা?
— এইতো ভালোই। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে অনেক দিন হলো তুই কোনো পার্টির আয়োজন করিস না। আজ একটা পার্টি হলে ভালোই হতো।
— ওকে আজকে রাতেই হবে। ব্যবস্থা কর।
এই কথা বলে তন্ময় চলে গেলো।
এই দিকে নীলার বাবা রহিম মেয়া চৌধুরী বাড়ি থেকে নিজের মেয়ের বিয়ের প্রস্তাব পেয়ে এক কথায় রাজি হয়ে গেলেন। কারণ সব বাবা-ই চায় তার মেয়ের ভালো একটা পরিবারে বিয়ে হউক।
নীলা বাবা আর তন্ময়ের বাবা বিয়ের ডেট ঠিক করে ফেলছে তন্ময় আর নীলাকে না জানিয়ে। রাতে রহিম মেয়া বাসায় আসে। এসেই নীলার আম্মুকে ডাকেন।
নীলার আম্মু এসে বলল,
— কি হইছে এভাবে ডাকাডাকি করছেন কেন?
— আরে খুশির খবর আছে একটা।
— কি খুশির খবর?
— আজ আয়ান চৌধুরী নিজে এসে আমার সাথে কথা বলছে। আর নীলার বিয়ের ডেট ঠিক করেছি। আগামী শুক্রবার বিয়ে।
— কি বলছেন সত্যি?
— হ্যাঁ গো সত্যিই।
— আমাদের মেয়েটার ভাগ্য অনেক ভালো, সেই জন্য এতো বড় পরিবারের বউ হতে পারছে।
ইতিমধ্যে নীলা এখানে এসে উপস্থিত হয় গেলো।
— কি নিয়ে কথা হচ্ছে বাবা?
— নীলা মা তোর আর চৌধুরী বাড়ির ছোট ছেলে তন্ময়ের বিয়ের তারিখ ঠিক করে আসলাম। আগামী শুক্রবার তোদের বিয়ে।
— বাবা আমি তোমাকে কতবার বলছি এই ছেলে ভালোনা। তবুও তুমি আবার কথা বললে?
— আরে বড়লোক বাড়ির ছেলে বিয়ের আগে এগুলো করতেই পারে। দেখবি বিয়ের পরে ঠিক হয়ে যাবে।
— মানুষের স্বভাব কিন্তু পরিবর্তন হয়না।
— তুই অহেতুক চিন্তা করছিস, আর দেখ তোর কপাল কতো ভালো তুই এমন একটা পরিবারের বউ হতে পারছিস। তোর তো আর কোনো কষ্ট থাকবেনা মা। আমরা তো তোকে ভালোমন্দ খাওয়াতেই পারিনা ঠিক ভাবে। তুই ওখানে রাজরানীর মতো থাকবি।
এই কথা বলতেই তিন জনের চোখে পানি চলে আসে। নীলা তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
অন্যদিকে তন্ময় রাতের পার্টি করছে এমন সময় বাসা থেকে ফোন আসে। তন্ময় ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখে বড় ভাই ফোন দিয়েছে। তন্ময় দেরি না করে ফোন রিসিভ করলো।
— তন্ময় তাড়াতাড়ি বাড়িতে আয় তোর সাথে জরুরী কথা আছে।
— আচ্ছা ভাইয়া আমি এক্ষনি আসছি।
তন্ময় ফোন কেটে দিয়ে সবার থেকে বিদায় নিয়ে বেরিয়ে পড়ে বাসার উদ্দেশ্যে। কিছুক্ষণের মধ্যেই তন্ময় বাসায় পৌছে যায়। তন্ময় বাড়ির ভিতরে যেতেই সে লক্ষ্য করে সবাই বসে আছে তার অপেক্ষায়। তন্ময় গিয়ে তার বড় ভাইয়ের পাশে বসে।
— ভাইয়া কি হইছে এতো জরুরী তলব?
— আজকে আমরা রহিম মেয়ার সাথে কথা বলে তোর বিয়ের ডেট ফাইনাল করছি আগামী শুক্রবার। তোর কোনো আপত্তি আছে?
— আমার কোনো আপত্তি নেই।
এই কথা বলে তন্ময় মুচকি মুচকি হাসতে থাকে। সবাই তন্ময়ের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে তন্ময় হাসছে। আর এই মুচকি হাসির আসল কারণ তো কেউ বুঝলোনা।
দেখতে দেখতে বিয়ের দিন চলে এলো। আর তেমন বড় কোনো আয়োজন ছাড়াই বিয়ে হলো। সবার থেকে বিদায় নিয়ে নীলাকে নিয়ে আশা হলো চৌধুরী বাড়িতে।
নীলা দেখতে সুন্দরী, মাথায় লম্বা চুল। বিয়ের সাজে আজ নীলাকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। ঠোঁটে হালকা লাল লিপস্টিক, পড়নে লাল শাড়ী, হাতে লাল চুড়ি, এ যেনো এক লাল পরী।
কিছুক্ষণের মধ্যেই নীলাকে নিয়ে যাওয়া হলো তন্ময়ের রুমে। আর সেই রুম আগেই ফুল দিয়ে সাজিয়ে রাখা হয়েছে। নীলা বাসর ঘরে বসে তার স্বামীর অপেক্ষায় বসে আছে। এদিকে সময় তার নিজ গতিতে এগিয়ে যাচ্ছে কিন্তু তন্ময় এখনও বাসর ঘরে প্রবেশ করিনি। তন্ময় তার বন্ধুদের সাথে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তন্ময়ের ভাবী এসে তন্ময়ের কান চেপে ধরে।
— উফ, কেরে?
— আমি তোমার ভাবী। বাসর ঘরে বউ রেখে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া হচ্ছে তাইনা?
— আসলে ভাবী ওরা আমাকে যেতে দিতে চাইছে না। কখন থেকে বলছি আমার বউটা আমার জন্য অপেক্ষা করছে, কিন্তু কে শুনে কার কথা? আমাকে যেতেই দিচ্ছেনা।
— বুঝেছি। চলো এখন, অনেক রাত হইছে নতুন বউ তোমার জন্য অপেক্ষা করে বসে আছে। আর হ্যাঁ তোমরাও ঘুমাতে যাও অনেক রাত হইছে।
ভাবী এবার তন্ময়কে নিয়ে বাসর ঘরের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। তন্ময়ের মুখে অদ্ভুত এক হাসির রেখা ফুটে আছে। কি হতে চলছে নীলার সাথে?
— তন্ময় আজ তোমার বাসর রাত। আর বিড়াল টা যেনো তুমিই মারো।
— বিড়াল পাবো কোথায় এতো রাতে? কি অদ্ভুত কথা বলো তুমি!
— ইশ, মনে হয় ভাজা মাছ উল্টে খেতে জানেনা। যাও তো আমিও যাই। তোমার ভাইয়া আমার জন্য অপেক্ষা করছে।
এই কথা বলে ভাবী চলে গেলো। তন্ময় এবার রুমের ভিতরে প্রবেশ করে দরজা বন্ধ করে দেয়। নীলা বসা থেকে উঠে এসে যখনই তন্ময়ের পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে যাবে তখনই তন্ময় নিজের পা সরিয়ে নেয়।
চলবে?