এই ভালো এই খারাপ পর্ব-১৬

0
184

#এই_ভালো_এই_খারাপ
#পর্ব_১৬
#প্রিমা_ফারনাজ_চৌধুরী

আয়জাকে পাত্রপক্ষ দেখতে এসেছিলো। পাত্র এনজিওতে চাকরি করে। আফতাব সাহেবের সাথে বেশ কথাবার্তা চলছিলো পাত্রের বাবা চাচা আর মামার সাথে। পাত্রও এসেছে। পাত্রের মায়ের সাথে বসে আছে সে। আজলানকে কয়েকবার ডেকে পাঠিয়েছে আফতাব শেখ। তিথি এসে তাকে বলেছে। কিন্তু সে এমনভাবে সেজেগুজে রেডি হচ্ছে যেন আয়জাকে নয় তাকে দেখতে এসেছে। তিথি মহাবিরক্ত। সে একটা মেরুন রঙের শাড়ি পড়েছে। আজলান তাকে চোরাচোখে দেখে বলল,

” ওদের সামনে যাবে না। ”

তিথি তার কথা শুনে ভুরু কুঁচকালো। বলল,

” কেন? আমাকে পছন্দ করে নেবে বলে?

আজলান ধমকে বলল,

” সবসময় মুখের উপর কথা বলার স্বভাব কমাও নইলে…

তিথি বলল,

” বের করে দেবে। তাই তো? এটা ছাড়া তুমি আর পারোটাই বা কি? ”

আজলান আর কিছু বললো না। তিথি মুখ ঝামটা মেরে চলে গেল।

ডোডো তার দাদাভাইয়ের কোলে বসে আছে। রিমোট নিয়ে খেলা করছে। সবার কথা ফাঁকে ফাঁকে সেও কথা বলে উঠছে। কি বলছে সে নিজেই জানে না।

অনেকক্ষণ পর আজলান এসে বসলো সেখানে। সবাই তাকে দেখে দাঁড়িয়ে হাতে হাত মিলিয়ে কুশলাদি বিনিময়ে করেছে।

আজলান বসতে বসতে দেখলো পাত্রের গায়ের শার্ট কুঁচকানো, বারবার নাকের মাথা চুলকাচ্ছে, যে পারফিউমটা ইউজ করেছে সেটার গন্ধ কড়া, দাঁড়ি নেই, ঠোঁটের উপর একগুচ্ছ গোঁফ রাখা তাও তৎকালীন রাজা বাদশাহদের মতো করে রাখা।

আফতাব শেখ বললেন,

” আমার দুই মেয়ে এক ছেলে। মেয়ে দুইটা ছোট, ছেলেটা বড়। এক মেয়ের বিয়ে দিয়ে দিয়েছি। মেয়ের বর ইনকাম ট্যাক্স অফিসার। আর ও র‍্যাবে জয়ন করেছে দু বছর হলো। আয়জা সবার ছোট। আমার বড়ো আদরের মেয়ে। ”

আজলানকে চুপ থাকতে দেখে আফতাব শেখ বললেন,

” ইনি হচ্ছেন ছেলের বাবা, ইনি মামা, ইনি ছোট চাচা। আর ইনি মা। ”

আজলান ছেলের মায়ের উদ্দেশ্যে বলল,

” আপনি আমার বোনকে একা দেখে আসতে পারেন। ও সবার সামনে আসবে না। ”

পাত্রপক্ষ শুরুতেই বুঝে গিয়েছে ভাইটা গোঁয়ার টাইপের হবে। কথাবার্তায় অহংকার ঝড়ে পড়ায় তারা একেবারে সিঁটিয়ে গেছে। আজলানের কথায় অপমানিত বোধ করলো তারা। আফতাব শেখ হেসে বললেন,

” আয়জাকে একটু ডাকো। দেখা দিয়ে চলে যাক।”

আজলান বলল,

” আমি কি বলেছি তা বোধহয় শুনতে পাননি? ”

আফতাব শেখ ছেলের উপর ক্ষুদ্ধ হলেন কিন্তু তা চেপে রেখে মলিন হেসে পাত্রের মায়ের উদ্দেশ্যে বললেন,

” আপনি দেখে আসতে পারেন। আমরা কথাবার্তা এগোই। ”

রমলা চাচী এসে পাত্রের মাকে নিয়ে গেল। সবাই কথা এগুলো। আজলান শুধু চুপচাপ শুনলো।

___

আয়জা কাঁদতে কাঁদতে শাড়ি পড়েছিলো। আম্বিয়া বেগম চড় মেরেছিলেন সকালে। মা মেয়ের মধ্যে তিথি তখন নাক গলায়নি। আম্বিয়া বেগম ওকে কাঁদতে দেখে বললেন,

” বিয়ে কি এখন হয়ে যাচ্ছে? আজব! তোর ভাই যেখানে দাঁড়িয়ে বিয়ে দেবে সেখানে তোর এত কান্না কিসের? ”

আয়জার কান্না তবুও থামার নয়।
তাকে তিথি শাড়ি পড়িয়ে দিয়েছিলো। শাড়ি পড়িয়ে দেয়ার সময় আয়জা বারংবার তার চোখ মুছে যাচ্ছিলো। এখন তাও কান্না একটু থেমেছে। পাত্রের মা এসে তাকে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো। তিথিকে বলল,

” আপনি ওর ভাইয়ের বউ? ”

” জ্বি। ”

পাত্রের মা তাকেও দেখলো ভালো করে। আম্বিয়া বেগম বললেন,

” আমার মেয়ে লাখে একটা। কোনো দোষত্রুটি খুঁজে পাবেন না। আদরে আদরে মানুষ হয়েছে তাই কাজবাজ একটু কম পারে কিন্তু শিখিয়ে দিলে সব শিখে নেবে। ”

পাত্রের মায়ের সাথে আম্বিয়া বেগম অনেক কথাবার্তা বললো। পাত্রের মা বেরিয়ে যেতেই আয়জা শাড়ি খুলে ছুঁড়ে মেরে বলল,

” করবো না বিয়ে আমি। আমাকে কোরবানির বকরি পেয়েছে সবাই মিলে। ”

শাড়িটা বিছানায় ছুঁড়ে মেরে বসে কাঁদতে লাগলো সে। তিথি তার কান্নার পেছনের আসল রহস্য জানে। কিন্তু মুখ খোলার সুযোগ নেই। যদি মুখ খোলে তাহলে তাকে আয়জার রক্ষে নেই সাথে তারও। আয়জা বলল,

” ভাইয়াকে বলো আমি বিয়েশাদি করবো না এখন। ”

তিথি বলল,

” না বাপু পারবো না। আমার বরের সাথে সম্পর্ক একটু ঠিকঠাক হয়েছে। এখন কোনো ঝামেলায় আমি নেই। ”

তা শুনে আয়জা কেঁদে বলল,

” তাহলে বেরিয়ে যাও এখন। ”

তিথিকে বের করে দিল সে। ভেতর থেকে দরজা বন্ধ করে দিয়ে বলল,

” আমি মরব তবুও এই বিয়ে করবো না।”

তিথি দরজায় ঠোকা দিয়ে বলল,

” আরেহ বাবা আমার কি করার আছে? তুমি আমার উপর রাগ দেখাচ্ছ কেন? ডোডোর আব্বা এমনিতেই আমাকে একটু মেনেটেনে নেয়া শুরু করেছে তারমধ্যে আমি ওর বিপক্ষে কাজ করলে ও আমার উপর ক্ষেপে যাবে না? তোমার মদনটার ফোন নাম্বার দাও আমাকে। আমি কথা বলে দেখি। দরজা খোলো। দেখো, দরজা না খুললে আমারও কিছু করার নেই। ”

আয়জা দরজা খুলে বলল,

” তুমি ভাইয়াকে রাজী করাবে তো? ”

তিথি ওর দিকে চুপ করে চেয়ে রইলো। আয়জা বলল,

” না পারলে আমাকে মুখ দেখিওনা। যাও। ”

বলেই দরজা বন্ধ করে দিতে যাচ্ছিলো।
তিথি দরজা আটকে বলল,

” আচ্ছা আচ্ছা কেঁদো না। আমি চেষ্টা করবো। চিন্তা করো না ওই মদন তোমার হবেই। ”

___

পাত্রপক্ষ চলে যাওয়ার পর বাবা ছেলের মধ্যে তুমুল যুদ্ধ শুরু হলো। কথা কাটাকাটি তারপর বাকবিতন্ডায় লিপ্ত হলো। আর এখন জিনিস ছুঁড়ছেন আফতাব শেখ।
শ্বশুর মশাইকে এর আগে এত রাগ করতে দেখেনি তিথি। শ্বাশুড়ির কথা শুনে সব বোগাস মনে হতো তার। কিন্তু ক্ষেপে গিয়ে টিভির রিমোট আছাড় দিতে দেখে তিথিসহ বাড়ির সকলেই ভীত হয়ে গেছে।

তিনি চিৎকার করে বললেন,

” কতবড় বেয়াদব হয়েছ তুমি। বাড়িতে গাদ্দারের মতো কথা বলো তা ঠিক আছে তাই বলে কুটুমদের সামনেও। মেয়ে আমার, সিদ্ধান্তও আমার। তুমি কে নাক গলানোর? ”

আজলানও উনার মুখের উপর সাফ সাফ জানিয়ে দিল।

” আপনার সিদ্ধান্ত আমি মানবো না। ও যেমন আপনার মেয়ে তেমন আমার বোন। একজনকে তো দিয়েছেন বিয়ে। শ্বশুর শ্বাশুড়ি তাকে আলাদা করে রেখেছে। ”

” তুমি ভুলে যেওনা তোমার বউও আমিই পছন্দ করে এনেছি। ও এখন তোমার বাচ্চার মা। দিনশেষে ওর সাথেই তুমি সংসার করছো। ”

আজলান বলল,

” উদ্ধার করে ফেলেছেন ওরকম বউ পছন্দ করে। আপনি আমার সাথে আর আতিফার সাথে যেটা করেছেন সেটা আমি আয়জার সাথে করতে দেব না। ”

বাবা ছেলে দুজনেই হিংস্র শ্বাপদের ন্যায় ফোঁসফোঁস করছিলো মুখোমুখি দাঁড়িয়ে। তিথি আর আম্বিয়া বেগম এসে দু’জনকে শান্ত হতে বললেও তারা শান্ত হলো না। আফতাব শেখ বললেন,

” তোমার গালে ঠাস ঠাস করে চড় বসাবো আমি। আমার ছেলে তুমি। আমার বড় হয়ে যাওনি এখনো। তোমার আগে দুনিয়াতে এসেছি। তোমার চাইতে বেশি মানুষ চিনি আমি। ”

আজলান বলল,

” চেনেন না কে বলেছে? বেশ মানুষ চেনেন আপনি। বোকা হাঁদা, নোংরা বস্তির লোকজন ধরে আনেন যেখান থেকে পারেন সেখান থেকে। আমি আমার সিদ্ধান্তে অটল থাকবো মানে থাকবো। কথার কোনো হেরফের হবে না। ওই বস্তির ঘরে আমি আয়জাকে দেব না মানে দেব না। ”

” তোমাকে শান্ত হতে বলছি। বাপ ছেলে কি শুরু করছো? ” আফতাব শেখকে ধরে বসিয়ে গ্লাসে পানি ঢেলে বাড়িয়ে দিয়েছিলেন আম্বিয়া বেগম।

আফতাব শেখ গ্লাসটা সরিয়ে দিতেই সেটি ভেঙে খানখান হয়ে গেল। তিনি এক ঝটকায় আম্বিয়া বেগমকে সরিয়ে দিয়ে বললেন,

” তুই সর। তোর ছেলেকে মহা বেয়াদব বানিয়েছিস। এই বাড়িতে আমার কথার দু’পয়সার দাম নেই। কতবড় বেয়াদব সে। যার সাথে সংসার করছে তাকে পর্যন্ত বাজে কথা বলা ছাড়ছেনা। ”

আজলান বলল,

” আপনি জিনিস ভাঙছেন কেন? সবসময় নিজের সিদ্ধান্ত সবার উপর চাপিয়ে দেয়া বন্ধ করুন। আপনার কথায় সব হবে না। এসব রাগের ধার ধারিনা আমি। আপনার কথায় শেষ কথা হবে না। হবে না মানে হবে না। ”

আফতান শেখ রাগে ফুঁসছেন। আম্বিয়া বেগম চিৎকার দিলেন।

” আজলান!! তুই বেয়াদবি করছিস এবার। মানুষটা হাঁপাচ্ছে দেখতে পারছিস না তুই? ”

তিথি এসে আজলানকে বলল,

” তুমি যেতে পারছো না এখান থেকে। এত তর্ক করছো কেন? উনি অসুস্থ হয়ে পড়লে তখন কি হবে? ”

আজলান বলল,

” এই চুপ। একদম চুপ। একদম শ্বশুরের সাফাই গাইবে না আমার সামনে। সবকটা পঁচা গাঁও-গ্রাম থেকে উঠে আসা পাবলিক। পঁচিয়ে ফেলবে ঘরদোর সবকিছু। ”

তিথি বলল,

” আমিও পঁচা গাঁও-গ্রামের মানুষ। তো কি হয়েছে?”

” কি হয়েছে দেখতে পাচ্ছ না? ”

আম্বিয়া বেগম বললেন,

” খোকারে তোর পায়ে পড়ি। আবার বউয়ের সাথে ঝগড়া শুরু করিস না। ”

আজলান গটগট পায়ে হেঁটে চলে গেল। চিৎকার চেঁচামেচি শুনে ডোডো কান্না করছিলো খুব। তিথি তাকে কোলে না নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে দেখে রমলা চাচী এসে বলল,

” বউ তুমি এমনভাবে খাড়াইয়া আছে ক্যান? বাবুরে কোলে নেও। ”

ডোডো হামাগুড়ি দিয়ে তার পায়ের কাছে এসে বসলো। তার শাড়ি টান দিয়ে ডাকলো,

” আমমাম্মাহ। ”

________

আয়জা বলল, ” আমার বিয়ে নিয়ে কাউকে ভাবতে হবে না। ওদের কে বলেছে আমার বিয়ে নিয়ে ঝগড়াঝাটি করতে? ”

তিথি বলল,

” এখন কিছু বলো না প্লিজ। আগুন হয়ে আছে সবাই। ও যদি তোমাকে বিয়ে করতে চায় তাহলে বলো ওর পরিবারকে পাঠাতে। ”

” কিন্তু ও একটা কোচিং সেন্টারে পড়ায়। আর মাঝেমধ্যে ড্রাইভিং করে। মা বাবা নিয়ে ভাড়া বাসায় থাকে। ঘরবাড়ি করেনি এখনো। চাকরি বাকরি পায়নি। ”

তিথি বলল,

” তোমার ওই ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ানোর আগে তোমার পরিবারের কথা ভাবা উচিত ছিল। এমন ছেলের সাথে সম্পর্কে জড়ানো উচিত হয়নি। এখন আমি কি করব? আমার কিছু করার নেই। আজকের পর তোমার ভাইয়ের সাথে আমি কোনো তর্কেও জড়াতে চাই না। পরে বলবে, আমি নিজে বস্তি, কথাও বলছি বস্তির হয়ে। ”

আয়জা বিছানায় দু’হাতের ভর দিয়ে বসে ঘনঘন গাল মুছতে মুছতে লাগলো। তিথি বলল,

” আমি মাকে বলব? ”

আয়জা বলল,

” ওই মহিলা মারতে মারতে মেরে ফেলবে আমাকে। তুমি কিছু করো নইলে আমি…

তিথি বলল, ” দেখো ভুলভাল কিছু ভেবো না। সবাই যা চায় তা পায় না। আমিও যা চেয়ে এসেছি তা পাইনি। যা পেয়েছি সেটাকেই আঁকড়ে ধরে আছি এখনো। ”

আয়জা বলল,

” উনার চাকরি হলে সব ঠিকঠাক হয়ে যাবে। গ্রামের বাড়িতে ওদের পুরোনো বাড়ি আছে। টাকাপয়সা হলে নতুন ঘর তুলবে। ”

তিথি বলল,

” আচ্ছা ওর নাম্বারটা দাও। ”

আয়জা বলল,

” উল্টাপাল্টা কথা বলবে না তো? তুমি তোমার বরের হয়ে কথা বললে আমি ফোন নাম্বার দেব না।”

তিথি বলল,

” আমাকে বিশ্বাস না করলে কিছু করার নেই। ”

আয়জা ভয়ে ভয়ে নাম্বারটা দিল ওর হাতে। আয়জা বলল,

” এখন কোচিং-এ থাকবে। বিকেলে ফোন দিও। উনি কিন্তু তোমাকে চেনে। আমার মান রেখো। ”

বিকেলের দিকে তিথি ফোন দিয়েছিলো ছাদে গিয়ে। ডোডো ছাদে খেলছে। আবোলতাবেল কথা বলছে। কিছুক্ষণ পরপর আকাশে উড়ে যাওয়া পাখি দেখে চেঁচাচ্ছে। তিথির ফোন রিসিভ করেনি ছেলেটা কিন্তু পনের মিনিট পর নিজ থেকে ফোন দিয়ে সালাম দিয়ে বলল,

” আসসালামু আলাইকুম। যারিফ মঈনুল বলছি। আপনি কে বলছেন? ”

ওপাশ থেকে গাড়ির হর্নের শব্দ শোনা যাচ্ছে।
গলাটাও কি কঠিন শোনালো! আরেকটা ফাটাকেষ্ঠ আয়জার কপালে জুটে গেল নাকি? কিন্তু কন্ঠস্বরটা খুব চেনা। তিথি বলল,

” মঈন ভাইয়া? ”

ওপাশ থেকে কন্ঠস্বরটা বলে উঠলো,

” আরেহ তিথি ভাবি! আপনি? ”

তিথির গলা থেকে আর কোনো শব্দ আসছিলো না। সে অবিশ্বাসের সুরে জিজ্ঞেস করলো,

” আপনিই কি আয়জার সিনিয়র যারিফ ভাই? ”

ওপাশ থেকে উত্তর এল।

” জ্বি। কিন্তু..

তিথি ফোনটা কেটে দিল সাথে সাথে। আয়জার কাছে ছুটে এসে বলল,

” আমি কিছুতেই এই সম্বন্ধ করতে পারবো না। আমি নেই এসবে। এই তাহলে যারিফ মঈনুল! ”

আয়জা বলল,

” এভাবে বলো না। তুমি তো চেনো তাকে। ”

তিথি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলল,

” তোমার ভাইও চেনে। তাকে গিয়ে বলো। আমি নেই এসবে। শেষমেশ বাড়ির ড্রাইভারকে…

আয়জা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলল,

” ও গাড়ি চালানো শিখেছে। এটা কি খুব ছোট কাজ? তুমিও তোমার বরের সাথে থাকতে থাকতে অহংকারী হয়ে যাচ্ছ। ”

তিথি বলল,

” আমি ছোট করে বলিনি। তোমার ভাই যেটা বলতো সেটা বলছি। তুমি এটা ভালো কাজ করোনি। ”

আয়জা বলল,

” এমন করো না প্লিজ। ”

তিথি বলল,

” সরি আমার কিছু করার নেই। ”

আফতাব শেখ আপাতত চুপ করে আছেন। ছেলের কাণ্ডকারখানা চুপচাপ দেখছেন তিনি। তবে বাবা ছেলের কথাবার্তা বোধহয় এবার পাকাপোক্ত ভাবে বন্ধ হয়ে গেছে।

আজলান বাড়িতে ফিরে আধঘন্টা ধরে শাওয়ার নিল। তিথির সাথে কথা সেই বন্ধ হয়েছে আর কোনো কথা হয়নি।

কলের উপর কল আসছিলো তার ফোনে। তিথি তাকে ব্যস্ত হয়ে কথা বলতে দেখে যেটা আন্দাজ করেছিলো সেটাই হলো। রাতের খাবার টেবিলে জানালো, তার সহকর্মীর ফুপুর ছেলে র‍্যাবে সদ্য জয়ন করেছে। তার পরিবার আয়জাকে কালবাদে পরশু দেখতে আসবে। ওই ছেলের হাতেই আয়জাকে তুলে দেবে সে। ডিসিশন ফাইনাল। বাড়ি-গাড়ি, ছেলে কোনোকিছুতে খুঁত নেই।

তিথি তখন আয়জাকে দেখছিলো। তার ভেতরটা যেন দেখতে পাচ্ছিলো সে। কিন্তু তারপরও না দেখার ভান ধরে রইলো। তার কিছু করার নেই।

___

বিছানায় বসে ডোডোকে খাওয়ানোর সময় আজলান এসে একটা ছবি দেখালো ফোনের স্ক্রীনে। তিথিকে বলল,

” এটা আয়জা আর আয়জার বাবাকে গিয়ে দেখিয়ে এসো। ”

তিথি কথা শুনতে পায়নি এমন ভাব করে ডোডোকে দোল দিতে লাগলো। মাথা নীচু করে আদর করতে লাগলো। ডোডো বাবার গলা শুনে খাওয়ার ফাঁকে চোখ গোলগোল করে চাইলো। বাবার বাড়িয়ে দেয়া ফোন কেড়ে নিয়ে মেঝেতে ফেলে দিয়ে মায়ের বুকে গুঁজে গিয়ে বলল,

” আম্মান তুত্তু। ”

তিথি বিড়বিড় করলো, ” খাওয়ার সময় ডিস্টার্ব করলে এরকমই করবি। ”

আজলান মা ছেলের দিকে ক্ষেপাটে দৃষ্টিতে চেয়ে রইলো।

চলমান…