রঙ বেরঙে প্রণয় পর্ব-০৬

0
73

#রঙ_বেরঙে_প্রণয়
#পর্ব_৬
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

(প্রাপ্তমনস্কদের জন্য উন্মুক্ত।)

” আজকে না ছুটির দিন? আজও কেন পড়তে আসছে ওরা?”
বসার ঘরে সোফায় বসে পায়ের উপর পা রেখে ফাইজার দিকে তাকিয়ে উপরোক্ত প্রশ্নটি করলো তাহমি। ফাইজা ফ্যালফ্যাল দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে বোনের দিকে। পড়তে আসা নিয়েও সমস্যা? ফাইজা একটু নড়েচড়ে বসলো।
” কালকে আর আসবে না সেজন্য শুনলাম আজ এসেছে। ”
” বেশ! তাহলে শায়লা একা এলো কেন? আতিকা সাত মিনিট মেয়েটা কই? ”
ফাইজা ইশারায় তাহমিকে চুপ করতে বললো। ছাত্র/লীগের আতিকাকে কেনো আবার এরমধ্যে ঢুকচ্ছে! কী দরকার এখানে রাজনীতি টেনে আনার! মেয়েটা আসলেই নাইস এন্ড অ্যাট্রাকটিভ…
” আপু তুমি একটু চুপ করে বসো। নয়টা বাজে প্রায়! একটু পর শায়লাও চলে যাবে। তখন আমরা ভাইয়ার সাথে লুডু খেলবো। ”
” রাখ তোর খেলাধূলা। আমার বিষয়টা সুবিধার লাগছে না। তুই থাক আমি একটু আসছি। ”
তাহমি বসা থেকে উঠে আঙুল নেড়ে কথাগুলো বলে সোজা সহনের ঘরের দিকে এগোলো। ফাইজা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। একা একা বসে থাকার থেকে রান্নাঘরে মায়ের সাথে গিয়ে টুকটাক কাজ করা ভালো। সেজন্য ফাইজা বসার ঘর ত্যাগ রান্নাঘরে গেলো।

দরজা ভেতর থেকে ভেজানো দেখে খুব সাবধানে একটু ফাঁক করে নিলো তাহমি। চোখদুটো সেই ফাঁকে রেখে ঘরের মধ্যে নজর বুলাতে লাগলো এবার।
” শায়লা কোনো সমস্যা? বারবার তোমার পা আমার পায়ে কীভাবে লাগছে? ”
সহন থমথমে মুখে শুধালো শায়লাকে। মেয়েটা মুচকি মুচকি হাসছে। সহন বিরক্ত হচ্ছে।
” স্যার আপনি চাইলে আমরা সুন্দর সময় কাটাতে পারি। ”
ঠোঁটের কোণে হাসির রেখা বজায় রেখেই বললো শায়লা। সহন চমকাল কিছুটা। এতটুকু মেয়ে অথচ কী অবস্থা!

” সময় কাটাবি? আয় আজ তোকে জীবনের সবথেকে সুন্দর সময় উপহার দিবো আমি। ”

হঠাৎ তাহমিকে কোমরে হাত দিয়ে দাঁড়াতে থাকতে দেখে দুজনেই চমকাল, থমকাল। সহন তো বসা থেকে উঠে আসন্ন বিপদের আঁচ করতে পেরে তাহমিকে একপ্রকার জড়িয়ে ধরেই দাঁড়িয়েছে। শায়লা অবাক চোখে বসা থেকে উঠে ওদের কান্ডকারখানা দেখছে।

” তাহমি শোন, ও অনেক ছোটো। ওকে বুঝিয়ে বলবো আমরা। তুই প্লিজ শান্ত হ, প্লিজ। ”
” কীসের ছোটো? খোঁজ নিয়ে দেখ কয় ঘাটের জল খেয়েছে। কত্ত বড়ো সাহস! ও তোকে অফার করে? এই মেয়ে…. ”
সহনের বুকে ধরাম করে একটা কামড় বসিয়ে দিয়ে ঘায়েল করে ফেললো তাহমি। সহন ব্যথায় ওকে ছেড়ে দিতেই শায়েলার গালে একনাগাড়ে চারটে থাপ্পড় মেরে বসলো তাহমি। ঘটনার আকস্মিকতায় শায়লা গালে হাত দিয়ে “থ” হয়ে গেছে। সহন এরমধ্যে আবারো পেছন থেকে এসে জড়িয়ে ধরেছে ওকে। চারটে থাপ্পড় খেয়েছে বিষয়টা বুঝতে পারার সাথে সাথে ঠুকরে কেঁদে উঠলো শায়লা। চেঁচামেচি শুনে এরমধ্যে দরজার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে ফাইজা। ওর ভাই তাহমিকে ওরকম জড়িয়ে ধরে থাকায় বিপদের পরিমাণ মোটামুটি আন্দাজ করতে পারছে ফাইজা। ঘরে ঢুকে দ্রুত তাই শায়লার কাছে এগিয়ে গেলো ও।

” তাহমি যথেষ্ট হয়েছে। শোন শোন কালকে আমরা পিকনিক করবো ছাদে। তুই রান্না করবি ঠিক আছে? ”
” আগে এই মেয়েটাকে ভুনা করবো আমি। তুই ছাড় সহনের বাচ্চা! ”

সহন তাহমিকে শান্ত করার চেষ্টা করছে। এই সুযোগে ফাইজা শায়লার বইখাতা গুছিয়ে দিয়ে ওর হাতে ব্যাগ ধরিয়ে দিয়ে বললো,
” শায়লা তুমি এখন যাও এখান থেকে। বাসার বাইরে গিয়ে তোমার ড্রাইভারকে কল দিয়ে আসতে বলো। ভাইয়া বেশিক্ষণ আপুকে সামলে রাখতে পারবে বলে মনে হয় না। ”
শায়লা আপাতত ব্যাথা ভুলে গেছে। ফাইজার কথামতো তাড়াতাড়ি কাঁধে ব্যাগ চাপিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। ফাইজা সহনের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
” ফাইজা তুই যা। ”
সহন ইশারায় ফাইজাকে বোঝাল শায়লার সাথে বাইরে গিয়ে দাঁড়াতে। যতই হোক সহনের কাছে পড়তে এসেছে, ভালোমন্দ সবই এখন ওর উপরে বর্তাবে। ফাইজা ভাইয়ের কথামতো ঘর থেকে দ্রত পা চালিয়ে বের হয়ে গেছে। তাহমিকে এখনো পেছন থেকে কোমরে হাত রেখে ধরে দাঁড়িয়ে আছে সহন। শায়লাকে চলে যেতে দেখে আরো ক্ষ্যেপে গেছে ও। সহন কী করবে বুঝতে পারছে না। হঠাৎ করে কিছু না ভেবে কয়েক সেকেন্ডের মধ্যে তাহমিকে সামনে ঘুরিয়ে শক্ত করে বুকে জড়িয়ে নিলো সহন। শ্বাস-প্রশ্বাস দ্রুতবেগে চলছে মেয়েটার। রাগের জন্য সহনকে ধরেনি পর্যন্ত। সহন মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
” তুই শায়লাকে যেতে দিলি কেন ভাইয়া? ও তোর পায়ে পা ছুঁইয়ে দিয়েছে! আবার সে*ক্স করার জন্য অফার করেছে! এতো অসভ্য এতটুকু মেয়ে। ”

” হুঁশ! ওসব করতে চায়নি। ও হয়তো কোথাও ঘুরতে যেতে চেয়েছিল। তুই সব সময় এমন চটে যাস কেন তাহমি? ওকে সামলাতে আমি হিমসিম খাই। কবে ভালো হবি তুই! ”

” আমি খারাপ? ”
তাহমি সহনকে জাপ্টে ধরে চোখে চোখ রেখে শুধালো। সহন চুপ করে আছে। বললো এককথা আর তাহমি বিপরীত দিকে নিচ্ছে। আবার না রাগারাগি শুরু করে!
” মোটেও না! তুই তো মহারাণী। ”
তাহমি একদৃষ্টিতে সহনের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ করে মনে হচ্ছে সামনে দাঁড়িয়ে থাকা পুরুষটি ভীষণ সুদর্শন, বিয়ে করার যোগ্য। এই লোক ছাড়া আর কে পারবে তাহমিকে সহ্য করতে? ছোটোবেলা থেকে তো সহ্য করে আসছে। না! এসব কী ভাবছে তাহমি? এসব ভেবে তাহমির রাগ গলে জল হয়ে গেল। লজ্জায় গাল দু’টো হঠাৎ লাল হয়ে উঠেছে। তাহমি অবাক হলো। ওর আবার লজ্জাও আছে? ভয়ংকর ব্যাপার তো।
” ঠিক আছে। এখন চল খেতে যাবি। ”
তাহমি সহনকে আলগা করে দিতেই সহনও ওকে বাহুডোর থেকে মুক্ত করে দিলো। এটুকু সময়ের মধ্যে মেয়েটা স্বাভাবিক কীভাবে হলো সেই নিয়ে অবাক হয়েছে সহন। তবে রাগ কমেছে এটাই অনেককক…
” আচ্ছা চল। একসাথে খাবো। ”
” উঁহু। আমি আজ বাসায় গিয়ে খাবো। ”
” কেন? ছোটো আম্মু কী স্পেশাল কিছু রান্নাবান্না করেছে না-কি? ”
” আরে না। আজকে শুধু আলুভর্তা, ডাল আর পুটিমাছ রান্না হয়েছে। ”
” তাহলে?”
” তাহলে তোমার মাথা! ”

তাহমির মেজাজ যখন অতিরিক্ত ফুরফুরে থাকে তখন সহনকে তুমি বলে ডাকে। তাহমি সহনকে অবাক করে দিয়ে মুচকি হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলো। সহন বেচারা বোকার মতো দাঁড়িয়ে আছে। মেয়েটার এই অদ্ভুত পরিবর্তন দেখে পুরাই হতভম্ব সে।

সারারাত তুমুল বৃষ্টির পরে একটি রৌদ্রজ্জ্বল দিনের শুরু হয়েছে। দীর্ঘদিন বৃষ্টির পর আজকে রোদের দেখা পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছে সাধারণ লোকজন। বৃষ্টি হলে মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপন কিছুটা হলেও ব্যহত হয়। সকাল সকাল এত্তগুলা বাজার নিয়ে বাসায় ফিরেছেন তারিকুল খান। ফাইজা বাজারের ব্যাগগুলো নিয়ে রান্নাঘরে রেখে এসেছে। আইমান স্বামীর জন্য চা নিয়ে এসেছে। সকালে হাঁটতে বের হয়েছিলেন তারিকুল। তারপর কী মনে করে বাজার করে নিয়ে এলেন এখন।
” চায়ে আরেকটু চিনি দিলে কী হতো সহনের মা? ”
আইমান মুচকি হেসে স্বামীর প্রশ্নের জবাবে বললেন,
” চিনি খেতে হবে না তোমাকে। ডায়াবেটিস বাঁধিয়ে বসে আছো তারমধ্য আবার চিনি চিনি করো! ”
ফাইজা বাবামায়ের কথা শুনে রান্নাঘরে বসেই হাসছে। ও বাজারগুলো ব্যাগ থেকে বের করে রাখছে।

” আহ আইমান! আচ্ছা বাদ দাও এসব শোনো, সহনের তো বিয়ে-শাদি করাতে হবে এবার। সবাই বলছে ছেলের বয়স হয়েছে। ”
” কেনো তুমি কি বুঝতে পারছ না যে ছেলের বয়স হয়েছে? ”
আইমান সোফাতে বসলেন। তারিকুল চা শেষ করে কাপটা টি-টেবিলে রাখলেন।
” আহা তা বলিনি তো। ”
” নিজে তো চব্বিশ বছরে বিয়ে করেছিলে, ছেলের বেলায় বুঝতে এতো সময় কেন লাগলো কে জানে!”

” আহ আইমান! ফাইজা শুনে হাসবে তো। ”
তারিকুল কিছুটা চাপা স্বরে বললেন। আইমান বসা থেকে উঠে হেসে বললেন,
” সেসব সবাই জানে। থাকো তুমি, নাস্তা তৈরি করতে যাচ্ছি। রাতে কথা বলবো সহনের বিষয়। ”
” আচ্ছা যাও। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি ততক্ষণে। ”

আইমান ও তারিকুল যে যার মতো কাজে গেলেন।

লাইব্রেরিতে বসে আছে সহন খান। গতকালের ঘটনার পর থেকে একটু চিন্তিত সহন। আজকে শায়লা স্কুলে আসেনি। আতিকা তো গতকালও অনুপস্থিত ছিলো। শায়লা বাসায় গিয়ে কীভাবে বিষয়টা বলে সেই নিয়ে। মেয়েটার গালে তাহমির পাঁচটা আঙুলের দাগ স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল। একটু আস্তেও তো মা*রতে পারতো?

চলবে,