রঙ বেরঙে প্রণয় পর্ব-০৯

0
80

#রঙ_বেরঙে_প্রণয়
#পর্ব_৯
#তাসমিয়া_তাসনিন_প্রিয়া

( মুক্তমনাদের জন্য উন্মুক্ত।)

সহন ঝালে একটু-আধটু হাসফাস করতে শুরু করেছে। ঝালে ভেতর ভেতর শেষ হয়ে যাচ্ছে ও। তাহমির বেশ মজা লাগছে। একটু ঝাল লাগলেও বিষয়টা খুব মজার।

” মামা ঝাল হয়নি তো! আরো ঝাল দাও, আরো। ”

সহন বেচারা চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। আর যে ঝাল খেতে পারবে না সেটা বলতে গেলে তাহমির না আবার মন খারাপ হয়ে যায়! তবে ওর সাথে ঝাল খেয়ে জিততেও হবে। নইলে বাসায় গিয়ে এটা নিয়ে খুব কথা শোনাবে।

” আফা এরচেয়ে ঝাল দিলে কিন্তু অসুস্থ হয়ে যাবেন। ”
ফুচকাওয়ালা মামা আবারো দুই প্লেট ফুচকা এগিয়ে দিলেন ওদের দিকে। সহনের কানের ভেতর থেকে ধোঁয়া বের হচ্ছে এমন অবস্থা। তাহমির চোখে টলমল করছে। আজ যেনো ঝাল খাওয়ার পাল্লা শুরু করেছে দু’জন।
” কিচ্ছু হবে না গো। ”
তাহমি মুখে ফুচকা দিয়ে খেতে খেতে বললো। সহন একটা ফুচকা খেয়ে থেমে গেছে। তাহমির হাত,মুখ চলছে। সবগুলো ফুচকা না খেয়ে যেনো থামা যাবে না। সহন নিজের প্লেটটা ফুচকাওয়ালাকে দিয়ে একটু অন্য দিকে এগোলো। তাহমি ফুচকার দিকে এতটাই মনোযোগী যে সহনের প্রস্থান খেয়াল পর্যন্ত করেনি।
” আফা পানি দিবো? ”
ঝালে হেঁচকি উঠে গেছে তাহমির। দোকানদার পানির বোতল এগিয়ে দিয়েছে। তাহমিও দেরি না করে তাড়াতাড়ি ঢকঢক করে পানি পান করতে শুরু করেছে। আধা লিটার পানিতেও ঝাল কমছে না। ফুচকাওয়ালা মামা গামছা দিয়ে মুখ চেপে মিটিমিটি হাসছে ওর অবস্থা দেখে। এরমধ্যে সহন এলো, হাতে দু’টো আইসক্রিম। একটা আইসক্রিম তাহমির সামনে এগিয়ে দিয়ে বললো,
” এটা খেতে শুরু কর একটু ভালো লাগবে। ”
” তুমি কখন গেলে এসব কিনতে! ”
তাহমি সহনের হাত থেকে আইসক্রিম নিয়ে খেতে শুরু করেছে। সহন ফুচকার বিল পে করে ইশারায় সামনে এগোতে বললো তাহমিকে। হাঁটতে হাঁটতে সহনও আইসক্রিম খেতে শুরু করেছে।
” তুই যখন বিভোর হয়ে ঝাল ওয়ালা ফুচকা খাচ্ছিলিস তখন। ”
আইসক্রিম খাওয়াতে একটু একটু ভালো লাগছে তাহমির। সহনের সাথে কথা বলতে বলতে এগোচ্ছে মেয়েটা। আপাতত তাহমির সমস্ত প্রয়োজনীয়, অপ্রয়োজনীয় কথার মনোযোগী শ্রোতা সহন।

সহন শায়লার মা’কে সবকিছু জানানোর পর শায়লার মা খুব রাগারাগি করেন মেয়ের সাথে। একপর্যায়ে রেগেমেগে লেখাপড়া বাদ দিয়ে বিয়ে দিবে বলে জানায় শায়লাকে। বেচারা শায়লা তো ভয় পেয়ে গেছে। এই বয়সে বিয়ে! অসম্ভব ব্যাপার। যদিও শায়লার মা খুব বুদ্ধিমতী নারী। মেয়েকে সোজা করার জন্যই এতসব নয়ছয় কথাবার্তা বলেছিলেন তিনি। আর এইসবে কাজও হয়েছে। মাথা থেকে সব কুবুদ্ধি বাদ দিয়ে এখন মন দিয়ে পড়ালেখা শুরু করেছে শায়লা।

” কী! তাহমির সাথে বিয়ে? বাবা এটা কীভাবে সম্ভব বলো!”
ড্রইং রুমে পাশাপাশি সোফায় বসে আছে বাবা ছেলে। তারিকুলের প্রস্তাবে রীতিমতো শকড সহন। যাকে ছোটো থেকে বোনের নজরে দেখে এসেছে কীভাবে বিয়ে করে সংসার করবে তার সাথে!
” কেনো তাহমিকে তোর অপছন্দ? না-কি অন্য কাউকে পছন্দ করিস? ”
” বিষয়টা তেমন নয় বাবা। তাহমিকে অপছন্দ করা কিংবা অন্য কাউকে পছন্দ করার কোনো কিছু নেই এখানে। ফাইজা আর তাহমিকে তো কখনো আলাদা করে দেখিনি বলো? ”
তারিকুল সহনের কাঁধে হাত রেখে ধীরেসুস্থে বোঝাতে লাগলেন।
” দেখ সহন আমরা যেটা চাচ্ছি সেটা অমূলক কিছু নয়। সম্ভব বলেই বলছি। ফাইজা আর তাহমি আলাদা। ও তোর কাজিন,ওর সাথে বিয়ে করা জায়েজ। তাছাড়া তাহমির মতামত নিয়ে তবেই তোর সাথে কথা বলতে এসেছি আমি। সকালে তোর মা গিয়েছিল তাহমি ও জাহানারার সাথে কথা বলতে। তাহমির কোনো আপত্তি নেই বিয়েতে। ”

তাহমির মতামতের কথা শুনে কিছুটা অবাক হলো সহন। রুদ্রর প্রতি অনুভূতি এরকম ফিকে হয়ে গেছে? না-কি সবকিছু ভুলে নতুন করে শুরু করতে চাইছে ও? তবে যাইহোক, তাহমি যখন রাজি আর দ্বিমত পোষণ করার কিছু নেই। তবে কিছুটা সময় লাগবে নিজেদের মধ্যে সম্পর্কটা স্বাভাবিক করতে। সহনকে ভাবনায় বিভোর হয়ে থাকতে দেখে তারিকুল খান ফের বলতে লাগলেন,

” নিজের ভালো বুঝতে শিখেছিস এখন। সময় নিয়ে ভেবেচিন্তে বলিস। আশা করি আমাকে আশাহত করবি না তুই। ”

বসা থেকে উঠে দাঁড়ালেন তারিকুল। সন্ধ্যার এই সময়টা নিজের ঘরে বই পড়ে কাটান তিনি।

” দাঁড়াও বাবা, আমি রাজি তাহমিকে বিয়ে করতে। ”

বাবা ছেলে একসাথে মুচকি হাসলো। খান বাড়িতে বিয়ে লাগলো বলে…..

শুক্রবার, খান বাড়িতে আজ বিয়ে। আসরের নামাজ শেষে ঘরোয়াভাবে দুই পরিবারের লোকজন ও কিছু আত্মীয়স্বজনের উপস্থিতিতে তাহমি ও সহনের বিয়ে সম্মান হয়েছে। সন্ধ্যা নেমেছে। তাহমিকে সহনদের বাসায় নিয়ে আসা হয়েছে। লাল টুকটুকে বেনারসির বদলে মেজেন্টা রঙের বেনারসি পরে আছে ও। দস্যি মেয়েটাকে আজ বড্ড সুন্দর লাগছে। সহন তো প্রথমে চিনতেই পারেনি তাহমিকে। মেয়েটাও এ-র আগে কখনো এরকম সুন্দর করে সাজেনি অবশ্য। সহনের বন্ধুরা তো বেশ মজা নিচ্ছিল ওর অবস্থা দেখে। ফাইজার রুমে বসে আছে তাহমি। ভারি সাজগোছ নেই এখন। সিম্পল গয়নাগাটি আর এমনি শাড়ি পরে আছে। আশেপাশের পাড়াপ্রতিবেশিরা এসেছে নতুন বউ দেখতে। মজার বিষয় হলো এক বাড়ির মেয়ে হওয়া স্বত্বেও তাহমিকে যখন সবাই বউ বউ বলছে ওর বেশ অদ্ভুত লাগছে। আইমান তো মাঝে মধ্যে তাহমিকে বলছে,
” মা আজ একটু কম কম কথা বল। আজ তোর বিয়ে হয়েছে। এটা তোর শ্বশুর বাড়ি এখন। ”

জবাবে তাহমি কিছু বলে না। মুখ টিপে হাসে ফাইজার সাথে। বিষয়টা খুব এনজয় করছে ওরা দু’জন। সহন নিজের ঘরে শুয়ে আছে। ভাবছে ওই পাগলাটে মেয়েটাকে আজীবন কীভাবে সামলাবে! মাঝে মধ্যে মনে হচ্ছে কোনো ব্যাপার না, ছোটো তো এমনিতেই সামলে আসছে। এখনও সামলাচ্ছে তাহলে ভবিষ্যতেও পারবে নিশ্চিত।

” ভাইয়া ভাত খাবে না? ভালোই রাত হয়েছে। মা আর আমি সবাই ক্লান্ত গো। ”

ফাইজার কথায় নড়েচড়ে উঠলো সহন। শোয়া থেকে উঠে বসলো।
” তাহলে ভাত রেখে ঘুমিয়ে যাসনি কেন? ”
” ধুর বোকা! আপু তো আমার ঘরে। তুমি বের হও ঘর থেকে এখন। তোমার ঘরটা সাজানো হবে। বাইরে লোকজন দাঁড়িয়ে আছে। ঘর সাজিয়ে, খাওয়াদাওয়া শেষ করে ঘুমাবো। ”
সহন বিছানা থেকে নেমে ঘর দাঁড়িয়েছে। ফাইজা ডাক দিতেই ঘর সাজানোর জন্য লোকজন ভেতরে এসেছে।
” এসবের দরকার নেই। আমি গেলাম খেতে। ”
” হু যাওও।”
সহন ঘর থেকে বেরিয়ে যেতেই ওরা হাতে হাতে ঘর সাজানো শুরু করলো। রজনীগন্ধার সাথে লাল গোলাপ দিয়ে সাজাবে ঘর। পাশাপাশি কিছু বেলুন আর রঙিন মোমবাতি থাকবে।

ডাইনিং টেবিলে এসে অলরাউন্ডার তাহমিকে খেতে বসতে দেখে ঠোঁট টিপে হাসছে সহন। তারিকুল খানঔ খেতে ব্যস্ত। আত্মীয়স্বজনরা আগেই খাওয়াদাওয়া সেড়ে নিজেদের জন্য বরাদ্দকৃত ঘরে চলে গেছে।
” ওভাবে তাকিয়ে না দেখে তুমিও খেতে বসো। ”

তাহমির কথায় সহন চেয়ার টেনে বসেছে। আইমান এরমধ্যে সহনকে খাবার রেডি করে দিলো। পোলাও, কোর্মা, মাংস, রোস্ট সবকিছুই আছে আজকের মেনুতে। সহন অবশ্য ভাত প্রেমী। গরুর মাংস দিয়ে শুধু ভাতই খাবে ও। তাহমি আরামসে বসে বসে রোস্ট চিবুচ্ছে।
” তুই যে এখন শ্বশুর বাড়িতে আছিস তা জানিস তাহমি? শ্বশুরের সামনে কেউ এভাবে খায়! ”
তাহমিকে একটু খোঁচাতে বললো সহন। কিন্তু তারিকুল খান সে গুড়ে বালি পড়লো।
” চুপ! খাবার সময় মেয়েটাকে কেনো জ্বালাচ্ছিস সহন? ”
” হ্যাঁ বড়ো আব্বু তুমি একটু বকে দাও তো। সব সময় এমন করে ভাই….”
তাহমি কথা শেষ না করে জিহ্বা কামড়ে থতমত খেয়ে তাকিয়ে আছে। বিয়ের পর বরকে ভাইয়া বলা! কী লজ্জা….

” চুপচাপ খেয়েদেয়ে ঘুমোতে যা। আর খবরদার দু’জনে আগের মতো ঝামেলা করিস না আবার। ”

আইমান সহনের পাশের চেয়ার টেনে বসলেন। ফাইজাও এরমধ্যে চলে এসেছে। মায়ের পাশে বসলো সে-ও। সহনের খাওয়া এরমধ্যে প্রায় শেষ। তাহমি এখনো যেখানে ছিলো সেখানেই আছে।

” ঠিক আছে মা। ”

” তবে মা ভাইয়া কিন্তু মোটামুটি নির্দোষ। তাহমি আপু একাই যথেষ্ট ঝামেলা করার জন্য। ”

ফাইজার কথা শেষ হতেই তাহমি কটমট চোখে তাকাল ওর দিকে। আইমান আর তারিকুল মুচকি হাসছেন৷ সহন ফাইজার সাথে তালে তাল মিলিয়ে বললো,
” একদম, একদম। ”
” ভালো হয়েছে। তোরা দুই ভাইবোন একেবারে সাধু। আর যত দোষ তাহমি ঘোষ, ওকে? ”

চলবে,