#সূচনা_পর্ব(১)
#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#সামসুন_নাহার
ভার্সিটির নতুন প্রফেসর হিসেবে নিজের এক্স প্রেমিককে দেখে হতভম্ব হয়ে ভড়কে গেল প্রিয়শা।
প্রিয়শা অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে আছে তার এক্স অর্থাৎ নতুন প্রফেসরের তাহমিদ ফাইয়াজ এর দিকে।প্রিয়শার বিস্ময় যেন কাটছেই না।প্রিয়শার দৃষ্টিভ্রম জানান দিচ্ছে তুই যা দেখছিস সব সত্যি দেখছিস।কিন্তু মন তা মানতে নারাজ।কই প্রিয়শা তো জানতো না সে চাকরি পেয়েছে।অন্যদের মত আজ জানতে পারলো।
নতুন প্রফেসর অর্থাৎ তাহমিদ ফাইয়াজ প্রিয়শার দিকে তাকাতেই দেখলো প্রিয়শা তার দিকে বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে আছে।হয়তো বিশ্বাস করতে পারছে না।তা দেখে ফাইয়াজ মুচকি হাসলো।সবার অগোচরে প্রিয়শাকে চোখ মারলো।
ফাইয়াজ চোখ মারতেই প্রিয়শার বিস্ময়ভ্রম কেটে গেল।বুঝতে পারলো সে যা দেখছে তা সব সত্যি।ফাইয়াজের দৃষ্টি দেখে প্রিয়শা বুঝলো তার কি করা উচিত।প্রিয়শা আবার চিন্তায় মগ্ন হয়ে ভাবলো ফাইয়াজ কি তার প্রেমিক নাকি প্রাক্তন।
প্রিন্সিপাল স্যার ফাইয়াজের সাথে সবার পরিচয় করয়ে দিয়ে চলে গেল।স্যার চলে যেতেই ফাইয়াজ সবার উদ্দেশ্যে হেসে বলল,
“আজ থেকে আমি তোমাদের নতুন স্যার।আমার নাম তাহমিদ ফাইয়াজ। আমাকে অন্য স্যারদের মত ভাবার দরকার নেই।আমাকে নিজের বন্ধুর মত ভাববা।তবে সেটা সীমার মধ্যে।আমি মনে করি নিজের সমস্যা বন্ধুর কাছে খুব সহজেই শেয়ার করা যায়।”
ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা মুখ ভেংচিয়ে মিনমিন করে বলল,
“হু ঢং দেখে বাঁচি না।আমাদের নাকি বন্ধু হবে।আসল কথা হলো এত মেয়েদের দেখছে তাই এভাবে বলছে।”
প্রিয়শার কথা অস্পষ্ট শুনে সুফিয়া আস্তেধীরে বলল,
“কি রে কি বলতেছিস। একা একা কি বলতেছিস।”
প্রিয়শা তাকালো সুফিয়ার দিকে তাকিয়ে তার মুখখানি দেখলো।সুফিয়ার মুখখানিতে খুশির ঝলক লেগে আছে।প্রিয়শা সুফিয়াকে জিজ্ঞেস করলো,
“কি রে এত খুশি দেখাচ্ছে কেন।তোর মুখে যেন হাসি ধরছেই না।”
সুফিয়া লজ্জারাঙা হাসি দিয়ে বলল,
“আমি না নতুন স্যারকে দেখে ক্রাশ খাইছি।দেখ কি সুন্দর করে কথা বলতেছে।কি কথা বলার স্টাইল।উফ!আর দেখতেও তো মাশা-আল্লাহ। উফ!আমি তো পুরো ফিদা হয়ে গেছি।আমি আর কাউকে দেখে ক্রাশ খাবো না।”
সুফিয়ার কথা শুনে প্রিয়শার গা-পিত্তির জ্বলে উঠলো।মুখে তেজ নিয়ে ক্রোধের সাথে বলল,
“ছি! স্যারকে দেখে কেউ ক্রাশ খায়।এই একটা জীবনে আর কত ক্রাশ খাবি।আর যাই হোক নতুন স্যারকে দেখে খাস না।”
প্রিয়শার কথা শুনে সুফিয়া নাক-মুখ কুচকিয়ে বলল,
“কোথাও কে লেখা আছে যে স্যারের উপর ক্রাশ খাওয়া যাবে। ক্রাশ তো ক্রাশ যে কারো উপর খাওয়া যায়।এই ক্রাশ খাওয়া আমার শেষ ক্রাশ।কত সুন্দর আহা!মন চাচ্ছে শুধু দেখতেই থাকি।”
সুফিয়ার কথা শুনে প্রিয়শা সুফিয়ার গায়ে এক ঘা মেরে চাপাস্বরে বলল,
“আর কখনো তোর ক্রাশ খাওয়ার কাহিনী আমাকে বলবি না। বিশেষ করে এই স্যারের কথা।একটু সুন্দর ছেলেকে দেখলেই তোর ক্রাশ খাওয়া লাগে।আর এইসব কথা পুরাতন হয়ে গেছে।পরবর্তীতে নতুন কিছু বলবি।আর এখন চুপ কর ক্লাসে মন দে।”
প্রিয়শা সুফিয়ার সাথে কথা শেষ করে দেখলো ফাইয়াজ সবার নাম পরিচয় শুনছে।প্রিয়শা চারপাশ তাকিয়ে দেখলো ক্লাসের প্রায় সব মেয়ে ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে আছে। যা দেখে বিরক্তিতে প্রিয়শার সারা শরীর জ্বলে উঠলো।
কিছুক্ষণ পর ফাইয়াজ প্রিয়শাদের সিটে এসে দাঁড়ালো। সুফিয়া দাঁড়িয়ে নিজের পরিচয় দিল।সুফিয়া বসতেই প্রিয়শা দাঁড়িয়ে বলল,
“আমার নাম প্রিয়শা।”
প্রিয়শার কথা শুনে ফাইয়াজ বাকা হেসে বলল,
“শুধুই প্রিয়শা। পুরো নাম কি।”
ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা দাঁত কিড়মিড়ালো।ফাইয়াজ জানে প্রিয়াশার পুরো নাম তারপরও জিজ্ঞেস করতে হবে।প্রিয়শা রাগ নিয়ন্ত্রণ করে দাঁত কিড়মিড়িয়ে বলল,
“সাদিয়া জান্নাত প্রিয়শা।”
ফাইয়াজ হেসে বলল,
“ওহ!সুন্দর নাম তো সাদিয়া।অনেকজনের ভালোবাসা সাদিয়া।কত কতজনের ক্রাশ।তা কতজনের ভালোবাসা তুমি।”
ফাইয়াজের ক্লাসের সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠলো।
ফাইয়াজের কথা শুনে প্রিয়শা সেইটুকু রাগ নিয়ন্ত্রণ করেছিল সেইটুকুই আর নিয়ন্ত্রণ করতে পারলো না।তবে প্রিয়শা রেগে হঠকারিতার বসে কোনো কাজ করার মেয়ে না।ঠান্ডা মাথায় কাজ করায় বিশ্বাসী। প্রিয়শা হেসে বলল,
“স্যার আপনি ভুল বললেন।অনেকজনের হবে না হবে এককজনের।জানেন স্যার একজনকে ভালোবেসে ছিলাম।তবে সে একজন বেয়াদব, ছ্যাচড়া, মিথ্যবাদি ছিল।”
ফাইয়াজ প্রিয়শার কথা শুনে থতমত খেল।প্রিয়শাকে নাজেহাল করতে এসেছিল কিন্তু এভাবে যে নিজের বদনাম হবে ভাবতে পারেনি।ফাইয়াজের আকাশসম ভাবনার মাঝে প্রিয়শা দুষ্টু হেসে বলল,
“আরো আছে স্যার শুনবেন।”
ফাইয়াজ তড়িৎ গতিতে মাথা নাড়িয়ে বলল,
“না থাক আর শোনার ইচ্ছে নাই।বসো।”
প্রিয়শা ফাইয়াজের দিকে তাকিয়ে হেসে মনে মনে বলল,
“আসছিল আমার সাথে পাঙ্গা নিতে।কেমন লাগলো নিজের বদনাম শুনে।”
তখন প্রিয়শাদের পিছন থেকে উঠে একজন বলল,
“স্যার আমার হুমায়রা।নামের অর্থ যেমন সুন্দর তেমন আমিও।তবে সবাই আমাকে মায়রা বলে ডাকে।আপনিও মায়রা বলে ডাকতে পারেন।”
হুমায়রার কথা শুনে ফাইয়াজ হুমায়রার দিকে তাকিয়ে দেখলো।হুমায়রা একটা শর্ট টপস ও জিন্স পড়েছে।ফাইয়াজ মুখ গম্ভীর করে বলল,
“তোমাকে বলতে বলেছি তোমার নাম।যখন জিজ্ঞেস করবো তখন বলবে।”
হুমায়রা মুখ চুপছে বসে গেল।যা দেখে প্রিয়শা হেসে সুফিয়াকে বলল,
“বেশ হয়েছে।সবসময় আমার সাথে লাগে।বিরক্তিকর একটা। এত সাবজেক্ট থাকতে আমার সাবজেক্ট পেতে হয়েছে তাকে।”
ফাইয়াজ সবার সাথে পরিচিতি পর্ব শেষ করে সামনে গিয়ে সোজা করে দাঁড়িয়ে বলল,
“আজ তাহলে সবার সাথে পরিচয় হলো।সবার সাথে পরিচিত হয়ে ভালো লাগলো।কাল থেকে আমরা ক্লাস শুরু করে দিব।আমি কিন্তু পড়াশোনায় ফাঁকিবাজি পছন্দ করি না।কোনো প্রশ্ন থাকলে বলতে পারো।”
তখন একজন বলে উঠলো,
“স্যার আপনি কি ম্যারিড।”
“না।”
ফাইয়াজের না কথায় যেন একটা হুল্লোড় পরলো।ফাইয়াজ আবার বলল,
“তবে আমি…..।”
হঠাৎ করে বেল বেজে উঠায় ফাইয়াজ আর কোনো কথা না বলে চলে গেল।ফাইয়াজ চলে যেতেই সবার মুখে ফাইয়াজের কথা।মেয়েদের মুখে তো আছেই।বিশেষ করে হুমায়রা সে যেন ফাইয়াজের জন্য সব করতে পারে এমন ভাব।এমনভাবে কথা বলতেছে মনে হয় ফাইয়াজ তার কতদিনের চেনা।এসব কিছু দেখে প্রিয়শার বিরক্তিবোধ করলো।সাথে বুকে কিছুটা চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো।
~চলবে ইনশাআল্লাহ…………..