#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_২৬
#সামসুন_নাহার
তাহমিদ পিছনে ঘুরে দেখল এক সিনিয়র স্যারকে।দেখে বিষ্ময় হলো।কারন এই স্যার প্রয়োজনের বেশি বাড়তি কথা বলে না।হঠাৎ আজ কি প্রয়োজনে তাহমিদ ভার্সিটি আসতেই ডাকার প্রয়োজন পরল।তাহমিদের ভাবনার সুতো ছিড়ে স্যার এগিয়ে এসে বলল,
“আরে ফাইয়াজ সাহেব যে অনেকদিন পর।কোথায় ছিলেন এতদিন।”
তাহমিদ মুখে হাসির রেখে টানল।এখন নিজের বিয়ের কথা কিভাবে বলবে।যেখানে ও যেভাবে বিয়ে করল।তাহমিদ বলল,
“জ্বি স্যার।আসলে…। ”
তাহমিদকে কথার মাঝখানে থামিয়ে স্যার বলল,
“বিয়ে করেছেন তাই তো।তা কেমন কাটল নতুন জীবন। ”
স্যারের কথা শুনে তাহমিদ অবাক হলো।তার জানামতে সে তো কাউকে বিয়ের কথা বলেনি তাহলে স্যার কিভাবে জানল।নিজের ভাবনা থেকে বেড়িয়ে তাহমিদ স্যারের উদ্দেশ্যে বলল,
“আপনি কিভাবে জানলেন স্যার।”
স্যার হাসলেন।হেসে তাহমিদের কাধে নিজের একহাত রেখে বলল,
“বুঝলেন ফাইয়াজ সাহেব সত্য কখনো চাপা থাকে না।তেমনিভাবে আপনার বিয়ের খবর ভার্সিটির সবাই জেনে গেছে।এমনকি আপনি যেভাবে বিয়ে করেছেন সব।আমার তো মনে হয়।আপনার বিয়েকে সবাই আবার তিলকে তাল না বানাক।”
স্যারের কথা শুনে তাহমিদ লজ্জা পেল।এভাবে সিনিয়র স্যারের সামনে নিজের বিয়ের কথা বলতে।তাহমিদ হেসে চুল ঠিক করল।স্যার আবার বলল,
“লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই।আপনি তো বিয়েই করেছেন আর কিছু তো করেননি।বিয়ে করা তো ভালো কাজ।নতুন জীবনের জন্য শুভকামনা।”
“থ্যাঙ্কিউ স্যার।”
“তো ম্যাডাম কি করে।পড়াশোনা না-কি জব।”
“পড়াশোনা। ”
তাহমিদের কথা শুনে স্যার উচ্চস্বরে হেসে উঠল।স্যারের হাসি দেখে তাহমিদ বিব্রত হলো।বিব্রত হয়ে বলল,
“স্যার আপনি হাসছেন কেন।আমি কি কিছু করেছি।”
“আরে না।তোমার বিয়ের কথা শুনে আমার বিয়ের কথা মনে পরল।আমার ওয়াইফ আমার স্টুডেন্ট ছিল।এন্ড আমরাও তোমাদের মত করে বিয়ে করেছিলাম।”
স্যারের কথা শুনে তাহমিদ হাসল।স্যার নিজের হাতের হাতঘড়ি দেখে বলল,
“ক্লাসের সময় হয়ে যাচ্ছে আমি যাই।আর অনেকে অনেক প্রশ্ন করবে।টেনসড না হয়ে ঠান্ডা মাথায় উত্তর দিবেন।আসি তাহলে।”
স্যার নিজের ক্লাসের দিকে রওনা দিল।তাহমিদ আর কিছু না ভেবে নিজের ক্লাসের দিকে হাঁটা শুরু করল।
——————-
তাহমিদ ক্লাসে এসে নিজ মনে ক্লাস করাল।তাহমিদ একটু হাফ ছেড়ে বাঁচল।ক্লাসের কেউ কোনো প্রশ্ন করেনি।আজকাল ছেলেমেয়েরা কোনো প্রশ্ন করতে দ্বিধা করে না।ক্লাস প্রায় শেষের দিকে। নিজের ক্লাসের নিজের পড়া পড়ানো হলে তাহমিদ ক্লাস শেষ করার প্রস্তুতি নিচ্ছে।ক্লাসের সবাই নিজের মধ্যে কথা বলছে।তখন একজন তাহমিদের উদ্দেশ্যে বলে উঠল,
“স্যার এক কথা বলব।”
তাহমি সম্মতি দিল।তাহমিদের সম্মতি পেয়ে বলে উঠল,
“স্যার আমরা সবাই শুনলাম আপনি না-কি বিয়ে করেছেন।সেটা কি সত্যি। ”
তাহমিদ যেটার ভয় পাচ্ছিল সেটাই হলো।যদিও বিয়ে করা খারাপ কাজ না তবুও ছাত্রদের সামনে নিজের বিয়ের কথা বলা অনেক বিব্রতকর। তারপর নিজেকে স্বাভাবিক রেখে বলল,
“হুম।আমি বিয়ে করেছি।তবে তোমরা কতটুকু সত্য জেনেছ আমি জানি না।”
“স্যার ম্যাম কি করে।”
“তোমাদের মত স্টুডেন্ট। তোমাদের ইয়ারের। আই থিংক আর কোনো প্রশ্ন নেই। আমি আসি তাহলে।”
তাহমিদ চলে গেল।ক্লাসের সবাই হেসে উঠ।সবাই নিজেরদের মধ্যে কথা বলতে লাগল।তাদের কথার মধ্যমণি স্যারের বিয়ে।যে যেরকমভাবে পারছে বিষয়টাকে রসালো বানাচ্ছে।ঘটনা এমনভাবে বলছে যেন সব সত্যি।আর তা অনেকে বিশ্বাস করে নিচ্ছে।আবার কেউ মজা নিচ্ছে।হাসাহাসি করছে।কেউ কেউ কষ্ট পাচ্ছে নিজের ক্রাশের বিয়ের কথা শুনে।
ক্লাস থেকে বেড়িয়ে তাহমিদ নিজের ক্লাসের দিকে যাচ্ছে।তখন পিছন থেকে মেয়েলি ডাক শুনে তাহমিদ থেমে গেল।পিছনে ঘুরে দেখল হুমায়রাকে।হুমায়রা মুখে মলিন হাসির রেখা টেনে তাহমিদের উদ্দেশ্যে বলল,
“কংগ্রাচুলেশনস স্যার।নতুন জীবনের জন্য অনেক শুভকামনা। ”
তাহমিদ হেসে বলল,
“ধন্যবাদ।”
“স্যার আপনার জন্য একটা জিনিস এনেছি।”
বলেই হুমায়রা নিজের ব্যাগ থেকে র্যাপিং পেপার দিয়ে মোড়ানো একটা গিফট বক্স বের করে তাহমিদকে দিয়ে বলল,
“স্যার এটা আপনার ও আপনার ওয়াইফ এর জন্য।আমার তরফ থেকে আপনাদের নতুন জীবনের অনেক শুভকামনা।”
তাহমিদ হেসে গিফট বক্সটি নিয়ে বলল,
“তুমি কিভাবে জানলে আমি আজকে আসব।”
হুমায়রা হেসে বলল,
“একদিন না একদিন তো আসতেন।তখন দিয়ে দিতাম।আজ আসি স্যার।”
হুমায়রা চলে গেল নিরষ মুখে।যার চোখে মুখে ছিল কষ্ট। তাহমিদ কিছু বলল না।তবে আন্দাজ করল যে হুমায়রা তাকে পছন্দ করেছিল।প্রিয়শা আগেই বলেছিল হুমায়রার ব্যাপারে। তাহমিদ বুঝল হুমায়রা হয়তো এখন কষ্ট পাচ্ছে।কিন্তু কিছু করার নেই।ভালোবাসা হারানোর কষ্ট তাহমিদ জানে।কিন্তু একপাক্ষিক ভালোবাসা অনেক কষ্টের।
——————-
সম্পর্কে উন্নতি করার জন্য প্রথমে একজনকে এগিয়ে আসতে হয়।দুইজন যদি চুপ হয়ে থাকে তাহলে সম্পর্কে উন্নতি হবে না।সম্পর্কের উন্নতির জন্য আগাতেই হবে।তাই প্রিয়শা প্রথমে এক হাত এগিয়ে গেল।নিজের শ্বাশুড়ি আম্মুর মন জয় করার জন্য সে আজ প্রয়োজনে শ্বাশুড়ি আম্মুর পিছনে পিছনে ঘুরবে।তরী নিজের রুমে আছে।শ্বাশুড়ি আম্মু রান্না করছে।আপাতত এখন রান্নাঘরে কেউ নাই।প্রিয়শা রান্নাঘরে গিয়ে ফাতেমা বেগমের পাশে দাঁড়াল।ফাতেমা বেগম একবার প্রিয়শাকে দেখে আবার রান্নায় মনোযোগ দিল।প্রিয়শা কি বলে কথা শুরু করবে ভেবে পাচ্ছে না।হেসে বলল,
“কি করছো আম্মু।”
প্রিয়শার কথা শুনে ফাতেমা বেগম প্রিয়শার দিকে তাকিয়ে আবার নিজের কাজ করতে লাগল।প্রিয়শা নিজের করা বোকা প্রশ্নে নিজে বিরক্ত হলো।সে তো দেখতেই পাচ্ছে তিনি রান্না করছেন।তারপরও এই প্রশ্ন করা বোকামি ছাড়া কিছু না।প্রিয়শা হেসে আবার বলল,
“আম্মু আমি হেল্প করি।”
ফাতেমা বেগম আবার কোনো কথা বললেন না।প্রিয়শা আবার বলল,
“আম্মু।আম্মু আমি তোমাকে সাহায্য করতে চাই।”
ফাতেমা বেগম নীরব থাকলেন আবার।প্রিয়শা এবার শ্বাশুড়ি আম্মুর হাত ধরে বলল,
“আম্মু কিছু বলো।আমি কিছু করতে চাই।এভাবে কি আর বসে থাকা যায়।আম্মু।”
ফাতেমা বেগম বিরক্ত হলেন প্রিয়শার কথায়।এই বাড়ির বউ অথচ ব্যবহার করছে ছোট বাচ্চাদের মত।তিনি প্রিয়শার দিকে তাকিয়ে দেখলেন প্রিয়শাও তার দিকে তাকিয়ে আছে।তিনি বিরক্ত লুকিয়ে বললেন,
“তরকারিতে পানি দাও।”
প্রিয়শা হাসল কিন্তু পরল মহা মুসিবতে।সে তো রান্নার র জানে না।এমনিতেই সাহায্য করতে এসেছিল এখন কি করবে।সব পানি কি তরকারিতে দিবে।ব্রেন থেকে কোনো উত্তর না আসায় প্রিয়শা আবার শ্বাশুড়ি আম্মুকে বলল,
“আম্মু সব পানি কি দিব।”
প্রিয়শার এমন কথায় ফাতেমা বেগম বিরক্ত হলেন।এই মেয়ে না-কি সাহায্য করতে আসছে কিন্তু রান্নার কিছুই জানে না।তিনি মুখ বিরষ করে বললেন,
“তুমি জানো না।পরিমান মত দাও।”
প্রিয়শা বোকা বোকা চাহনিতে তাকিয়ে আছে ফাতেমা বেগমের দিকে।প্রিয়শা কি রান্না জানে যে পরিমান মত দিবে।তার মতে সব পানি দিলে পরিমান মত হবে।কিছুক্ষণ পর ফাতেমা বেগম খেয়াল করলেন প্রিয়শা পানির জগ নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছে।তিনি নিজের কপাল চাপরে পানির জগ নিয়ে নিজে তরকারিতে পানি দিয়ে প্রিয়শার উদ্দেশ্য করে বললেন,
“তুমি কি রান্না জানো।না-কি এমনি এখানে আসছ।”
প্রিয়শা মন খারাপ করল।মন খারাপ করে বলল,
“আমি রান্না পারি না।তবে আমি শিখতে চাই।তুমি শেখাবে আম্মু।”
ফাতেমা বেগম প্রিয়শার মুখের দিকে তাকিয়ে হাসলেন।প্রিয়শার মাথা নিচু করে আছে।হয়তো মন খারাপ। তাই ফাতেমা বেগম নিরবে হাসলেন।হেসে প্রিয়শার উদ্দেশ্যে বললেন,
“চাল ধুতে পারো।পারলে ধুয়ে দাও।”
প্রিয়শা খুশি হয়ে গেল।মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,
“হুম।পারব।এখনই করছি।”
প্রিয়শার কথা শুনে ফাতেমা বেগম নিরবে হাসলেন।কিন্তু সেটা প্রিয়শার আড়ালে।তিনি প্রিয়শাকে একটু পরীক্ষা করবেন।প্রিয়শা ও ফাতেমা বেগমের কাজের মধ্যেই তরী রান্নাঘরে আসল।এসে বলল,
“বাহ বাহ! আমাকে ছাড়া তোমরা দুইজন রান্না করতেছ।আমাকে ডাকলে না কেন।”
তরীর কথা শুনে ফাতেমা বেগম বললেন,
“দুইজন কই।একজন তো রান্নার ‘র’ জানে না।সে না-কি আবার আমাকে সাহায্য করতে আসছে।”
ফাতেমা বেগমের কথায় প্রিয়শা হাসল শব্দকরে।ফাতেমা বেগম ও তরী দেখল সেই হাসি মুগ্ধ নয়নে।তখন তরী ফাতেমা বেগম ও প্রিয়শার উদ্দেশ্যে এমন কথা বলল যা শুনে ফাতেমা বেগম ও প্রিয়শা অনেক খুশি হলো।
#চলবে………………..
#স্বপ্ন_জুড়ে_তুমি
#পর্ব_২৭
#সামসুন_নাহার
তরী ফাতেমা বেগম ও প্রিয়শার দিকে তাকিয়ে মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,
“একটা সুখবর আছে।যেটা শুনলে তোমরা খুশি হয়ে যাবে।বলব এখন।”
ফাতেমা বেগম ও প্রিয়শার মুখ খুশিতে চিকচিক করে উঠল।নিশ্চয় তরী মা হতে চলেছে তাই এত খুশি হয়ে সুখবর দিতে যাচ্ছে।প্রিয়শা খুশি হয়ে উৎসুক হয়ে বলল,
“আমি অনুমান করি আপু।”
“পারবা করতে।আচ্ছা করো দেখি কেমন পারো।”
প্রিয়শা নিজের মুখে হাসির রেখা টেনে বলল,
“তুমি মা হতে যাচ্ছ।তাই তো।”
প্রিয়শার কথা শুনে তরীর মুখ চুপছে গেল।নিজের কপালে নিজে চাপর মেরে বলল,
“আরে না।আব্বু আর তাহসিন আজ যেই মিটিংএ গেয়েছিল।সেই প্রজেক্ট এর কাজ আমরা পেয়ে গেছি অনেক বড় অর্ডার। এটাই খুশির খবর। এটাই তাহসিন বলতে বলল।”
তরীর কথা শুনে ফাতেমা বেগম ও প্রিয়শার মুখ ফাটা বেলুনের মত চুপসে গেল।তারা ভাবল কি আর হলো কি।প্রিয়শা হিহি করে হেসে বলল,
“ওহ ভালো খবর তো।আর আমি তো মনে করেছিলাম তুমি।”
তরী চোখ রাঙ্গিয়ে প্রিয়শার উদ্দেশ্যে বলল,
“হয়েছে তোমাদের আর কিছু বলতে হবে না।কোনো মেয়ের বিয়ের পর যদি মেয়েটা বলে সুখবর আছে কিংবা যদি বলে শরীর ভালো নেই।তাহলে সবাই মনে করে প্রেগন্যান্ট। আচ্ছা বিয়ের পর এটা ছাড়া কি আর কোনো ভালো খবর দেওয়া যায় না।আজব।”
তরীর কথা শুনে প্রিয়শা বোকা বোকা হাসল।ওইরকম হেসেই বলল,
“তুমি রাগ করছো কেনো আওউ।আমরা তো মজা করছিলাম।”
“হু!এখন এসব বলে লাভ নাই।আমি বুঝি হ্যাঁ কে কি বলছে বা ভাবছে।”
প্রিয়শা হেসে তরীকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমি অনেক মিষ্টি আপু।তোমাকে অনেক ভালো লাগে।”
তরীও প্রিয়শাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
“তুমিও অনেক মিষ্টি।”
ফাতেমা বেগম গলা খাকড়ি দিয়ে দুইজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলল,
“এভাবে থাকলে কাজ হবে।কখনো হবে না।কাজ করলে করো নাহলে এখান থেকে চলে যাও।”
ফাতেমা বেগমের কথা শুনে প্রিয়শার ক্ষানিকটা মন খারাপ হলো।কিন্তু সেটা প্রকাশ না করে কাজ করতে লাগল।
——————-
বাড়ির সবাই একে একে খাওয়া করে আড্ডা দিতে বসেছে।তার উপর আজ বিশেষ দিন।সবার মুখে লেগে আছে হাসি।সবাই মিলেমিশে থাকার এই এক সুবিধা। সুখ দুঃখ একসাথে ভাগ করে নেওয়া যায়। যেমন আজ একটা খুশির খবর পেল তাই সবাই মিলে আনন্দ করছে।এই আনন্দের ভাগ করার মত আনন্দ আর নেই।
সবার হাসাহাসির মাঝখানে তাহমিদ তাহসিনের উদ্দেশ্যে বলল,
“কংগ্রাচুলেশনস ভাইয়া।এই প্রজেক্টটার জন্য তুমি অনেক পরিশ্রম করেছ।যার ফল আজ তুমি পেলে।”
তাহসিন হাসল তাহমিদের কথা শুনে।তখন ফিরোজ ইসলাম তাহমিদের উদ্দেশ্যে বলল,
“শুধু ভাইকে শুভেচ্ছা জানালে হবে না।তোমাকেও দায়িত্ব নিতে হবে।সময় সুযোগ করে অফিসের কাজ করতে হবে।”
“হুম করতে তো হবেই।ভাইয়ের পরিশ্রমকে তো আর বৃথা যেতে দেওয়া যাবে না।আমি কালকে থেকে সময় বের করে যাব।”
এদের কথার মাঝখানেই ফিজা জোরে বলে উঠল,
“আজ কি আমরা এখানে একসাথে হয়েছি তোমাদের অফিসের কথা শোনার জন্য।অবশ্যই না।কিন্তু তোমরা একের পর এক অফিসের কথা বলেই যাচ্ছ।আমরা এখানে আড্ডা দিতে আসছি অফিসের কথা শুনতে নয়।”
ফিজার কথা শুনে সবাই উচ্চস্বরে হেসে উঠল।তরী নিজের হাসি থামিয়ে ফিজার উদ্দেশ্যে বলল,
“বলো কি বলবে।এখন সবাই তোমার কথা শুনবে। আর কোনো অফিসের কথা চলবে না।”
“হুম আমি যেটা বলছি।তাহমিদ ভাইয়া বিয়ে করল আমরা কোনো অনুষ্ঠান করতে পারলাম না। না ভালো করে খেতে পারলাম।”
তাহসিন ফিজার কথার মধ্যখানে থামিয়ে বলল,
“তো তুই কি বলতে চাচ্ছিস।ভালো করে বল।”
“আমি বলতে চাচ্ছি যে।ভাইয়ার বিয়ে খাওয়া হয়নি।আজ আবার অফিসের খুশির দিন।আমরা গত বছর পিকনিক করিনি।তাই সব মিলিয়ে আমাদের সব আনন্দকে বাড়াতে আমরা পিকনিক করব। কেমন লাগল আমার আইডিয়া।”
ফিজার কিথা শুনে তরী চট করে বলে উঠল,
“দারুণ বলেছ।সুন্দর হবে।গত বছর তো পিকনিক করতেই পারিনি।এবার অনেক মজা করব।”
তাহসিন হেসে ফিজার মাথায় মেরে বলল,
“তোর এই গোবর মাথায় এসব বুদ্ধি আসল কই থেকে।”
ফিজা নিজের মাথায় হাত বোলাতে বোলাতে তাহসিনের উদ্দেশ্যে খেপে গিয়ে বলল,
“উফ!ভাইয়া তুমি আমার মাথায় আর মারবে না।তোমার মাথায় গোবর ভরা তাই তুমি এসব ভাবতে পারোনি।”
ফাতেমা বেগম হেসে বললেন,
“আর ঝগড়া করতে হবে না।শুধু বয়সে বড় হয়েছে কিন্তু কাজ করতেছ বাচ্চাদের মত।এখন ঝগড়া বাদ দিয়ে এটা বলো কই যাওয়া যায় এবার।কোথায় গেলে ভালো হয়।”
ফিজা উচ্ছাসিত হয়ে বলল,
“এর আগের বার যখন করেছিলাম গ্রামের বাড়িতে তখন ভালো লাগেনি।তাই এবার এমন জায়গায় করব যেন ঘুরতে পারি আর মজাও করতে পারি।”
“খুব মজা হয় বুঝি পিকনিকে।”
উপরক্ত কথাটি বলে প্রিয়শা নিজের জিহবায় নিজের কামড় দিল।কখনো কখনো পরিস্থিতিতে এমন হয়ে যায় যে নিজের লুকানো কথা বের হয়ে যায়।যেটা বলা উচিত না।প্রিয়শা কথা বলার বুঝতে পারে। এটা আসলে তার বলা উচিত হয়নি।তেমনিভাবে প্রিয়শার ক্ষেত্রে এমন হলো।মুখ দিয়ে কথা হুট করে বের হয়ে গেছে।
প্রিয়শার কথা শুনে সবাই অবাক নয়নে প্রিয়শার দিকে তাকিয়ে আছে।সবার চাহনি দেখে মনে হচ্ছে যেন আশ্চর্য কিছু দেখেছে বা শুনেছে।প্রিয়শা সবার এমন চাহনি দেখে মাথা নিচু করল।নিজেকে শখানেক গালি দিল।আগ বাড়িয়ে কথা বলার জন্য।সবার বিষ্ময়ের মাঝেই ফিজা প্রিয়শার উদ্দেশ্যে বলল,
“আপু তুমি এমনভাবে বলছ যেন তুমি কোনোদিন পিকনিক করোই নি।আজ প্রথম পিকনিকে যাওয়ার কথা শুনছ।তুমি নিশ্চয় মজা করছ তাই না।”
প্রিয়শা মাথা নিচু করে আছে।তা দেখে তাহমিদ বলল,
“হুম।প্রিয়শা কখনো পিকনিকে যায়নি।”
তাহমিদের কথা শুনে সবাই আরো অবাক হলো।তাহসিন অবাক হয়ে বলল,
“কি বলছিস তুই।ভালো করে বল।এসব বিষয়ে মজা ভালো লাগে না।”
“আমি মজা করছি না। এটা সত্য।প্রিয়শার আব্বু এসব পছন্দ করত না।তাই তিনি প্রিয়শা ও আদিলকে এসবের অনুমতি দিতেন না।”
আজ বাড়ির সবাই অবাকের পর অবাক হচ্ছেন।এইরকম মানুষ হয়।নিজের ভালো লাগত না দেখে ছেলে-মেয়েদের সেটা করতে দিতেন না।ফিরোজ ইসলামের মনে মায়া লাগল প্রিয়শার প্রতি।তিনি যেখানে তার সন্তানদের সাথে খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ সেখানে প্রিয়শার বাবা। তিনি ফিজার দিকে একবার তাকিয়ে প্রিয়শার দিকে তাকালেন।ভাবলেন আজ যদি প্রিয়শার জায়গায় ফিজা থাকত তবে কি তিনি মেয়ের কষ্ট সহ্য করতে পারতেন।ভেতর থেকে উত্তর আসল, না পারতেন না।
প্রিয়শা আর বসে থাকতে পারল না।সব পুরনো কথা মনে পরল।বিশেষ করে সাইদুর রহমানের কথা।তিনি যতই যা করেননা কেন একজন বাবা তার মেয়ের কাছে অনেক মুল্যবান হয়ে থাকেন।প্রিয়শা কিছু না বলে দৌড়ে ওখান থেকে উঠে গেল।
——————–
প্রিয়শা আসার কিছুক্ষণ পর তাহমিদ রুমে আসল।এসে দেখল প্রিয়শা দুইহাত মুখে দিয়ে কান্না করছে।তাহমিদের বুক ছ্যাত করে উঠল।প্রিয়শার কান্না, কষ্ট দেখলে যে তারও কষ্ট হয়।তাহমিদ প্রিয়শার কাছে গিয়ে আদুরে কন্ঠে বলল,
“এই প্রিয় কি হয়েছে হ্যাঁ। কান্না করতেছ কেন।তুমি জানো না তোমার কান্না দেখলে আমার কষ্ট হয়।না-কি তুমি আমাকে কষ্ট দেওয়ার জন্য কান্না করতেছ।”
তাহমিদের মুখে এমন কথা শুনে প্রিয়শা তাহমিদকে জড়িয়ে ধরল।তাহমিদও আগলে নিল প্রিয়শাকে।তাহমিদ প্রিয়শার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল,
“কান্না করিও না। সব ঠিক হয়ে যাবে।”
প্রিয়শা কান্না করতে করতে বলল,
“আচ্ছা তাহমিদ আব্বু কি কোনোদিন আমাদের মেনে নিবে না।আমাদের আব্বু এমন কেন।আমার তো খুব মনে পরে আব্বুকে।জানো স্বপ্নেও দেখেছি আব্বুকে।আচ্ছা আব্বু কি আমার কথা ভাবতেছে।একবারও কি চিন্তা করতেছে তার মেয়েটা কি করছে।”
প্রিয়শার কথা শুনে তাহমিদ মুচকি হেসে বলল,
“পাগলি।এসব নিয়ে কেউ কান্না করে।সব বাবা তার মেয়েকে ভালোবাসে।কেউ প্রকাশ করতে পারে আর কেউ পারেনা।তোমার আব্বুও তোমার কথা মনে পরছে।তিনিও তোমাকে অনেক ভালোবাসে।দেখবে খুব শীঘ্রই তোমার আব্বু তোমার কাছে আসবে।মিলিয়ে নিও আমার কথা।”
#চলবে……………………..