শুধু তুই পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0
67

#শুধু_তুই
#অন্তিম_পর্ব
#লেখনীতে_উদন্তিকা_নাথ_বর্ষা

আদ্রিকের বলা কথাটা আদিবা ভাবছে। সত্যি কি তার স্বামী আবার এ বাড়িতে আসবে। সে যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। কত বছর থেকে তার স্বামীকে দেখেনি। স্বামীর বুকে মাথা রেখে ঘুমায়নি। স্বামীকে ছাড়া থাকাটা যে কতটা কষ্ট, যে থাকে শুধু সেই বোঝে।

ডাইনিং টেবিলে বসে আছে আদ্রিক। তাকে খাবার বেরে দেয় আদিবা। তরুকেও সাথে নিয়ে বসেছে আদ্রিক। দূর থেকে জাফর মির্জা দেখছে তাঁদের। মুহুর্তেই চোখে জল চলে আসলো। আদ্রিক যখন গতকালকে তার রুমে গিয়ে তার বাবার আর মায়ের সম্পর্কে কথা গুলো বলেছিলো তখন জাফর মির্জা তার ভুল বুঝতে পেরেছিলো। আসলেই তিনি কখনই এসব নিয়ে সেভাবে ভাবেননি। আদিবাকেও তিনি বোঝার চেষ্টা করেননি। মেয়েটা চুপচাপ নিজের কষ্ট গুলো লুকিয়ে গেছে, মুখ ফুটে কিছুই বলেনি। বলবে কি ভাবে সে খুন চাপা সভাবের। কথা গুলো ভেবে দীর্ঘ এক শ্বাস ফেললেন।

খাবার শেষ করে আদিবা তরুকে নিজের রুমে যেতে বলেন। তারপর আলমারি থেকে কিছু গহনা আর ব্যাগ বের করে তরুর রুমে নিয়ে যান। সাথে রিয়া আর টিয়াকেও নিয়ে যান। তারা তরুকে সাজাবে সিম্পল ভাবে। বেডে বসে আছে আয়না।
একটুপর তাদের সাজানো শেষ হলে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। আদিবা তরুকে দেখে মাশাল্লাহ বলে উঠলেন। গোল্ডেন কালার লেহেঙ্গা তরুকে একটু বেশি মানিয়েছে। তবে এতো ভারি লেহেঙ্গা সামলাতে খুব হিমশিম খাচ্ছে।

একটু পরেই বর চলে এসেছে। কথা টা শুনতেই টিয়া সিরি দিয়ে নামার সময় লেহেঙ্গায় পা আটকে পরে যেতে ধরে তখনি সিয়াম এসে ধরে নেয়। টিয়া তারাতাড়ি নিজেকে ছাড়িয়ে নেয়। সিয়াম বলে, যেটা সামলাতে পারো না সেটা কেনো পরেছো।”
” দেখুন এটা কোনো ব্যাপার না।”
” এখুনি যদি কিছু হয়ে যেতো, বিয়ে বন্ধ রেখে তোমাকে নিয়ে হসপিটাল দৌড়াতে হতো।”
” যেতো তাতে আপনার কি? ”
” ভালোবাসি।”
সিয়ামের কথা শুনে টিয়া আর কিছু বললো না। স্মিথ হেসে চলে গেলো। সিয়াম টিয়ার চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। রিয়াদ এসে বলে, এভাবে কি দেখছিস? ” এই মেয়েকে তো পটিয়েই ছাড়বো, অলরেডি পটে গেছে।”
” কিভাবে বুঝলি? ”
” দেখলি না, ভালোবাসার কথা শুনে কিভাবে লজ্জায় লাল হয়ে গেছিলো।

আদিবা অনেক সুন্দর করে সেজেছে। আজকে তার মনটা ভিষণ খুশি তার স্বামী আসছে। সব বিষাদ গুলো যেনো হাওয়া বিলীন হয়ে গেছে। মনে শুধু রংবেরঙের প্রজাপতি উড়ছে। আদিবা রুমের বাইরে বেরিয়ে আসে। আয়েশা একবার আদিবার দিকে চোখ যায়। আজ খুব খুশি খুশি লাগছে তাকে। অনেক দিনপর অনেক খুশি দেখছে। আয়েশা এগিয়ে বলে, আদিবা, ছেলের বিয়ে নিয়ে অনেক খুশি দেখছি।”
আদিবার খুব করে বলতে ইচ্ছে করছিলো, আমি আমার স্বামীর জন্য সেজেছি। তিনি আজ এই বাড়িতে আসছে। কিন্তু মুখ দিয়ে এই সব কথা বের হচ্ছে না। কোথাও গিয়ে আটকে যাচ্ছে কথা গুলো।
” সেরকম না। আসলে ওদের কথাটা রাখতে পেরে খুব ভালো লাগছে। তাঁরা দু’জনে সুখে থাক, ওদের ভালোবাসা আরো সুন্দর হোক এটাই চাই।”
” হুম আমিও চাই তরু আর আদ্রিক সুখে থাক।”
” তোমাকেও খুব সুন্দর লাগছে আপা ।”
আয়েশা আলতো হাসলো।

বরকে স্টেজে বসানো হয়েছে। সবাই বরকে নিয়ে ব্যস্ত হয়ে পরেছে। জাফর বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলো, তাঁদের নতুন আত্নীয় স্বজনদের যেনো কোনো ভাবে অসম্মান না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছেন তিনি। হুট করেই পিছন থেকে কেউ একজন বলে উঠে, বাবা।”
জাফরের কন্ঠ টা খুব চেনা চেনা লাগছে। তাই দ্রুত সেদিক পানে তাকায়। রফিকুল দাঁড়িয়ে আছে তার সামনে। দেখেই চোখ দু’টো ছলছল করে উঠলো। রফিকুল বাবাকে সালাম দিয়ে বাবাকে জড়িয়ে ধরলো।
” কেমন আছো বাবা? ”
” সন্তানকে ছাড়া বাবা কি ভালো থাকতে পারে? ”
” তাহলে ছেলের থেকে মুখ কেনো ফিরিয়ে নিয়েছিলে।”
” এটা আমার বড্ড বড় ভুল ছিলো। নিজের ভুলটা বুঝতে পেরেছি আমি।”
” খেয়েছো তুমি।”
” হুম, তুই ভিতরে যা। বউমা অপেক্ষা করছে।”
রফিকুল ভিতরে চলে যায়। আদিবা কর্নারে দাঁড়িয়ে আছে। সেদিকে চলে যায় রফিকুল। আদিবা রফিকুলকে দেখে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। রফিকুল পাশে দাঁড়িয়ে বলে,
কেমন আছো আদিবা? ”
” যেমনটা রেখেছো।”
” জানি বড্ড কষ্ট দিয়েছি, আমারও কিছু করার ছিলো না। তবে এখন আর আমায় ছেড়ে থাকতে হবে না। নিয়ে যাবো তোমায়।
রফিকুলের কথা শুনে আদিবার ঠোঁটে হাসি ফুটে এলো।

আয়না আর তরুকেও স্টেজে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে। কাজী বিয়ে পরানো শুরু করেছে। একটু পর বিয়ে পরানো শেষ হলে তরুকে আদ্রিকের রুমে নিয়ে যাওয়া হয়। আর আয়নার বিদায়ের সময়ও হয়ে যায়। মির্জার বাড়ি প্রত্যেকটা লোকের মন খারাপ।
আয়না মির্জা বাড়ির বড় মেয়ে। তার প্রতি একটু বেশি টান সবার। আয়না সবাইকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। সবার কাছে বিদায় নিয়ে চলে যায়। সবাই গাড়ি গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
আসতে আসতে লোকজন কমে গেলো। যারা আত্মী এসেছিলো তারাও বেশিভাগ চলে যায়।
বাড়ি এখন অনেকটাই শান্ত। তবে সবার মনে কোথাও একটা কষ্ট রয়েই যায়।
সবাই রুমে চলে যায় ফ্রেশ হতে। এদিকে আদ্রিককে ধরে রেখেছে সিয়াম আর রিয়াদ। সে তাদেরকে বলেনি বিয়ে করছে সে। তারা রুমে যেতেই দিবে না। আদ্রিক কোনো রকম পালিয়ে এসেছে।

____

তরু জানালার কাছে দাঁড়িয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে। আজকে বড্ড মন খারাপ তার। খুব করে নিজের মায়ের কথা মনে পড়ছে। নিজের মাকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছে করছে। বলতে ইচ্ছে করছে, মা দেখো তোমার তরু আজকে বউ সেজেছে। তোমার তরুর বিয়ে হয়েছে। আদ্রিক ভাইয়া আমাকে আগলে রেখেছে। সে আমায় তার নিজের করে নিয়েছে। তুমি থাকলে কতটা খুশি হতে বলোতো। তরু কথা গুলো ভাবতে ভাবতে চোখ দিয়ে পানি পরছে। ভিতরটা চিনচিন ব্যাথা করছে। এবাড়ির প্রত্যেকটা লোক তার খুব যত্ন নিয়েছে ভালোবেসেছে। এই বাড়িটা তার নিজের বাড়ি।”

কথা গুলো ভাবনার মাঝে কেউ একজন পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে। তরু কেঁপে উঠে। তার বুঝতে বাকি নেই এটা আদ্রিক। আদ্রিক তরুকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। তারপর আলতো করে গালে হাত দিয়ে বলে,
কাঁদছিস কেনো পাগলি? ”
” মায়ের কথা মনে পড়ছে।”
” তোর মা সব সময় তোর সাথে আছে। তিনি সব কিছু দেখছেন। তুই এভাবে কাঁদলে কষ্ট পাবে।”
আদ্রিক চোখের জল গুলো মুছে দেয়।”
যা এগুলো খুলে ফ্রেশ হয়ে নে। আদ্রিক আলমারি থেকে কাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। তরু গহনা গুলো খুলতে থাকে। এর মাঝে রিয়া এসে তরুকে একটা থ্রি-পিস দিয়ে যায় এটাই পরবে সে। শাড়ি পরতে পারে না। সামলাতেও পারবে না সে। আদ্রিক বের হলে তরু ওয়াশরুমে চলে যায়। আধঘন্টা পর যখন তরু ওয়াশরুম থেকে বের হলো তখন দেখলো, রুম অন্ধকার।
তরু বলে উঠলো, আদ্রিক ভাইয়া।”
আদ্রিকের কোনো সারা শব্দ নেই। হুট করেই মোমবাতির আলো জ্বলে উঠলো।
তরু সেদিকে আসতে আসতে গিয়ে দাঁড়িয়ে পড়লো। আদ্রিক তরুকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে গলায় মুখ ডুবালো। তরু শিউরে উঠলো। তরু কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে, কি করছেন আদ্রিক ভাই?
আদ্রিক নেশালো কন্ঠে বলে,
“হুশ, কথা বলবি না। আমার কাজ আমায় করতে দে।
তরুর ললাটে আদ্রিক নিজের ঠোঁট ডুবিয়ে দেয়। দু’জনে এক অপরের ছোঁয়া পেয়ে মাতাল হয়ে উঠে। তারা নিজেদের কার্যে ডুবে যায়।

__সমাপ্ত__