অতঃপর প্রণয় পর্ব-০৫

0
80

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ৫
#জেসমিন_জেমি
শব্দসংখ্যা- ১০৩০

ইলমি আবিরা তূর্ণা তূর্ফা নাস্তা করছিলো। আছমা বেগম, হিমি বেগম (ছোট চাচি) অনমনষ্ক হয়ে মেয়েগুলোকে টুকটাক এগিয়ে দিচ্ছিলেন। কেননা তাদের সমস্ত মনোযোগ সোফায় বসা দুজন রোবটের দিকে। ড্রয়িংরুমে পিনপিন নিরবতা। আবরার নিজের মনে ফোন ঘাটছে ইমরুল তালুকদার আয়েশ করে চায়ে চুমুক দিয়ে চায়ের কাপটা ট্রি টেবিলে রাখলেন। কিছু মূহুর্ত পর ইমামুল আর ইমির চলে এলো সেখানে। ওরা দুজন আসতেই ইমরুল তালুকদার নড়ে চড়ে বসলেন। ছেলেটা তার ভীষণ রাগী স্ট্রং পার্সোনালিটির এমনকি তার থেকেও গম্ভির। ইমরুল তালুকদারের মতো মানুষটাও কিনা ছেলেকে ভয় কথাটা শুনলে বাইরের মানুষ ইমরুল তালুকদারকে ভয় না পেয়ে তাকে নিয়ে হেঁসে বেড়াবে। কথাটা বললে ছেলে কি রিয়াকশন দিবে সেটা ভেবেই গলা শুকিয়ে যাচ্ছে তার। ইমামুল তালুকদার নিরবতা ভেঙে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে উঠলেন,,
ভাইজান কি যেনো বলবেন বলছিলেন।

ইমরুল তালুকদারঃ হ্যাঁ।
গম্ভীরস্বরে ছেলের উদ্দেশ্যে বলে উঠলেন,

সৈকত চাচ্ছিলো তোমার আর মিলির এনগেজমেন্ট ডেটটা এগিয়ে দিতে। আমি আর তোমার ছোট চাচা সামনে শুক্রবার ডেট ফিক্সড করে দিয়েছি আবরার।

আছমা বেগম, হিমি বেগম চকিতে একে অপরের মুখ চাওয়া – চাওয়ি করে না জানি এখন কি হয় বাবার ছেলের মাঝে।

ইমরুল তালুকদার কথাটা বলেই থামলেন ছেলের দিকে তাকিয়ে ছেলের মতিগতি বোঝার চেষ্টা করলেন তবে ছেলে তার কোনো কথা শুনেছে বলে মনে হচ্ছে না। যদি শুনতেই পেতো তাহলে এভাবে চুপচাপ বসে থাকার ছেলে আপাদত আবরার নয়। আবরার সেই আগের মতোই ফোন নিয়ে ব্যস্ত। ইমরুল তালুকদার ভ্রু কুচকে ছেলের দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে । আবরার ফোনে চোখ রেখেই শান্ত স্বরে বলে উঠলো,,

বিয়ে করে নিয়েছি আমি আর এখানে কি না এনগেজমেন্টের কথা বলা হচ্ছে?

ইমরুল তালুকদারসহ উপস্থিত সবাই বেশ অবাক চোখে আবরারের দিকে চাইলো।

ইমরুল তালুকদারঃ মানে?

আবরারঃ বিয়ে করে নিয়েছি আমি।

ইমরুল তালুকদারসহ উপস্থিত সবাই চকিতে একে অপরের মুখ চাওয়া-চাওয়ি করে। ইলমি চোখ বড় বড় করে আবরারের দিকে চায় পরপর গলায় খাবার আটকে যেতেই খুকখুক করে কেঁশে উঠে। আছমা বেগম তারাহুরো করে পানির গ্লাস এগিয়ে দিতেই একদমে পানিটুকু শেষ করে ফেলে।

ইমরুল তালুকদার মনে মনে ভাবেন তার ছেলে কোনো কারন ছাড়া কখনোই কিছু বলবে না নিশ্চয়। ফাজলামি করার মতো ছেলে আবরার নয় সে যখন বলেছে বিয়ে করে নিয়েছে তাহলে নিশ্চয় বিয়ে করেছে। কিন্তু কাকে বিয়ে করেছে আর যদি সত্যিই বিয়ে করে থাকে তাহলে, তাহলে সে বন্ধু সৈকতকে কি বলবে আর মিলি মেয়েটাকেই বা কি বলবে ? সে তো কথা দিয়েছিলো আসলে তারই ভূল হয়েছিলো তার বোঝা উচিত ছিলো। সে যদি ইমরুল তালুকদার হোন তাহলে তার ছেলে আবরার তালুকদার তার থেকে এক কাঠি উপরে।
ছেলের এমন হেয়ালিপনায় রেগে ধমকে বলে উঠলেন তিনি বসা থেকে দাঁড়িয়ে রাগীস্বরে বলে উঠে,,

ফাজলামি করছো? বিয়ে করেছো মানে? কাকে বিয়ে করেছো তুমি?

আবরার এবার ফোনটা পকেটে পুরে স্বাভাবিক-স্বরে বলে উঠে,,
তুমি ভালো করেই জানো আবরার ফাজলামি করার মতো ছেলে নয়। হ্যাঁ বিয়ে করেছি। (আবরারের সহজ স্বীকারোক্তি।)

ইমরুল তালুকদারঃ কাকে বিয়ে করেছো? তোমার বউ কোথায়?

আবরার আড়চোখে ইলমির দিকে চায়, সবার চোখের আড়ালে ইলমিকে চোখ টিপে বাকা হেঁসে বলে উঠে,,

আমার বউ তো আমার চোখের সামনেই বাবা ।
সারাদিন তালুকদার বাড়ীর আনাচে-কানাচে ঘুরে বেড়াচ্ছে আমার বউ আর তোমরা দেখতে পাচ্ছো না? চোখে সমস্যা হয়েছে তোমাদের? ডাক্তার দেখাতে হবে নিশ্চয়।

ইলমির চোখজোড়া কোটর হতে বের হওয়ার উপক্রম, চোখ বড় বড় করে আবরারের দিকে চায় খাওয়া রেখে খট করে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ায় পরপর দ্রুত পায়ে সেখান থেকে চলে যায়। না জানি বজ্জাত লোকটা কি বলে বসে। এ লোকের স্বভাব তো এমন ছিলো না দিন দিন এমন নির্লজ্জ কেনো হচ্ছে লোকটা? ঠোঁট কাটা পুরুষ মানুষ। উনি কি আসলেই আবরার ভাই নাকি উনার মতো দেখতে অন্য কেউ?

ইমরুল তালুকদার রাগে গটগট পায়ে ড্রয়িংরুম ত্যাগ করলেন। আছমা বেগম খুশিতে গদগদ হয়ে ছেলের কাছে চলে যায়। তূর্ণা তূর্ফা আবিরা এই মূহুর্তে অবাক চোখে ইলমির অ-স্বাভাবিক আচরণ দেখতে ব্যস্ত।

তূর্ফাঃ ইলমির হঠাৎ কি হলো এমন থতমত খেয়ে এমন পাগলের মতো উঠে গেলো কেনো?

আবিরাঃ আমিও তাই ভাবছি।

তূর্ণাঃ কোথাও আবার ইলমিই আমাদের সেই গোপন ভাবি না তো?
শোন কি হয়েছে কাল আবরার ভাইকে ইলমির হাত ধরে ইলমির পাঁশে বসে থাকতে দেখেছি জানিস?

আবিরাঃ এ্যাঁ।

তূর্ফাঃ এ্যাঁ নয় হ্যাঁ।
তোরাই বল আবরার ভাই কেনো ইলমিকে চু’মু খাবে ?

আবিরাঃ কিইইই চুওওওওও মু।
চেঁচিয়ে বলার আগেই তূর্ণা আবিরার মুখ চেঁপে বলে উঠে,,
তূর্ণাঃ আরে কি করছিস আস্তে ভাই, ভাইজানরা শুনে ফেলবে তো। শোন কাল আবরার ভাইজানকে দেখেছি ইলমিকে চু’মু খেতে। আমার মনে হয়েছিলো আমি জেগে জেগে স্বপ্ন দেখছি বোধহয়, পরে দেখলাম না এটা স্বপ্ন না এটা বাস্তব ছিলো আবিরা । এখন আমার তো মনে হচ্ছে ইলমিই বোধহয় সেই ভাবি বুঝলি।

আবিরাঃ আবরার ভাইজান আর চু’মুওওও ?
কি সব বলছিস তূর্ণা মাথা ঘুরে যাচ্ছে আমার। পাগল পাগল লাগছে নিজেকে।

তূর্ফাঃ নিজেদের মাঝে গবেষণা বাদ রেখে ইলমির বাচ্চা কলমিকে গিয়ে চেঁপে ধরি চল সব জানতে পারবো।

আবিরাঃ চল চল।
তিনজন আধঘাট বেঁধে রুমের দিকে ছুঁট লাগায় হিমি বেগম পিছন থেকে ডাকে খাবার শেষ করার জন্য কে শুনে কার কথা।

—————-
তূর্ণাঃ এভাবে খাওয়া রেখে রুমে চলে এলি কেনো ইলমি ?

ইলমি থতমত খেয়ে যায় অসহায় চোখে তিনজনের দিকে চায় তিনজনের চাউনীতে জিজ্ঞাসা। ইলমিকে ঘিরে দাড়িয়েছে তিনজন যেনো তারা তিনজন ঘোয়েন্দা আর ইলমি অপরাধী ইলমিকে জিজ্ঞাসা বাদ করা হচ্ছে। ইলমি আমতা আমতা করে বলে,,
খা, খা, খাওয়া শেষ তাই।

তূর্ফাঃ শুধুই তাই নাকি অন্য কিছু কলমি?

ইলমিঃ মানে অন্য কিছু কি হতে যাবে আজব?

তূর্ণাঃ কোথাও তুই ই সেই গোপন ভাবি না তো ইলমি? কি চলে তোর আর আবরার ভাইজানের মাঝে ?

ইলমিঃ কি চলে মানে? তোদের ওই রাক্ষস, বজ্জাত, খাঁটাশ, সয়তানের হাড্ডি, লুচ্চা, করল্লা ভাইজানের সাথে আমার কি চলবে?

আর কিছু বলার আগেই কেউ দরজায় করা নাড়ে হকচকিয়ে উঠে চারজন পরপর দড়জায় তাকাতেই আবরারকে দেখতে পায় এমন সময় আবরারকে এখানে কেউ আশা করেনি। চারজন হতভম্বিত চকিত হয়ে একে অপরের মুখে চাওয়া চাওয়ি করে মেঁকি হাসে। আবরার হাত ইশারায় রুম থেকে বের হয়ে যেতে বলতেই তিনবোন তড়িঘড়ি করে রুম থেকে বের হয়ে যায়। ইলমির হয়েছে যত জ্বালা যখনি একটু আকটু কিছু বলে তখনই রাক্ষস বান্দা এসে হাজির। এবার ইলমির কি হবে কে বাঁচাবে এই রাক্ষস-রাজার হাত থেকে। আবিরাদের সাথে ইলমিসহ বের হতে নিলেই আবরার পান্জাবির হাতা ফোল্ট করতে করতে গম্ভীরস্বরে ধমকে বলে উঠে,,,
তোকে যেতে বলেছি আমি?

চারজনই কেঁপে উঠে, ইলমি থেমে যায়। অসহায় চোখে আবিরাদের যাওয়ার পানে চায় চিবুক গলায় নিয়ে আড়চোখে আবরারের মুখ পানে চাইতেই দেখতে পায় আবরার রাগী-চোখে তার দিকেই তাকিয়ে ভয়ে ইলমির প্রান পাখিটা খাঁচা ছেড়ে যায় যায় অবস্থা। রুম থেকে পালানোর ধান্ধা আটতেই আবরার শব্দ করে রুমের দড়জাটা বন্ধ করে দেয়।

চলবে,,,,,,,

(ভুলত্রুটি ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন আশা করি। )