অতঃপর প্রণয় পর্ব-০৬

0
88

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ৬
#জেসমিন_জেমি

পুরো রুম জুড়ে পিনপিন নিরবতা। ইলমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। ভয় ভয় চোখে আবরারের দিকে তাকাতেই দেখে আবরার দুহাত বুকে গুজে চোখ পাকিয়ে সটান দাঁড়িয়ে ইলমির দিকেই তাকিয়ে আছে ইলমি ভয়ে ঝটপট চোখ নামিয়ে আমতা আমতা করে বলে উঠে,,

স, সরি আসলে,,

ইলমি কথা শেষ করার আগেই আবরার গম্ভীর-স্বরে ধমকে উঠে বলে উঠলো,,,

আবরারঃ জাস্ট শাট আপ।
ইলমি চমকে উঠলো।

আবরার ইলমির দিকে কয়েক পা এগিয়ে এলো চোখে মুখে তার বেশ গম্ভীরতা।

আবরারঃ কি বলছিলি তুই? আমি রাক্ষস?

ইলমি দু পা পিছিয়ে চিবুক গিলে মাথা নাঁড়িয়ে না বুঝাতেই আবরার ধীরে ধীরে এগিয়ে যেতে যেতে প্রশ্ন করতে থাকে ,,

আমি বজ্জাত?

ইলমি জোড়পূর্বক হাসার চেষ্টা করে মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়।

আবরারঃ আমি খাটাশ?

ইলমিঃ ইয়ে মানে, মানে আসলে আমি সরি।

আবরার পুনরায় দু পা এগিয়ে বলে,,
আমি সয়তানের হাড্ডি? আমি করল্লা?

ইলমি আবরারের সাথে তাল মিলিয়ে পেছাতে থাকে। পিছিয়ে যেতে আবারো মাথা নাড়িয়ে না বোঝায়। ভয়ে তার জান যায় যায় অবস্থা, কি হবে এখন? কি করবে সে এই রাক্ষসের হাত থেকে বাঁচবে কি করে? এ কেমন বিপদে পড়লো সে। কাল থেকে লোকটার ভয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে তার। নাহ এ বাড়ীতে আর থাকা যাবে না যত তারাতারি সম্ভব চলে যেতে হবে। কেনো যে বাজি ধরতে গিয়েছিলো কে জানে? এভাবে চলতে থাকলে না জানি কবে ইলমির এই ছোট্ট দেহখানা থেকে প্রানপাখি বিদায় নেয় আল্লাহ মালুম ।

ইলমির আর পেছানোর জায়গা নেয় পেছাতে পেছাতে দেয়ালের একদম কাছটায় চলে এসেছে। ইলমি পিছনে না তাকিয়ে পেছাতে নিলেই আবরার খপ করে একহাতে হাত টেনে ইলমির মাথার পেছনটায় অন্য হাত রাখে। ইলমির মাথা দেয়ালে না লেগে আবরারের হাতে গিয়ে লাগে। এতে করে মাথায় আঘাত পাওয়া থেকে বেঁচে যায় মেয়েটা। আবরার ধীরে ধীরে ইলমির একদম কাছে চলে যায় । আবরারকে এতোটা কাছে দেখে ভয়ে ইলমি ভয়ে হাঁসফাঁস খাচ্ছে। কালকের কথা মনে পড়তেই ভয়ে চোখ মুখ চুপসে গেছে একদম , গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেছে। এবার ইলমির বেশ কান্না পেলো। মাথা নিচু করে ঠোঁট উল্টিয়ে নিশব্দে কেঁদেও উঠলো ।
আবরারের চোখে মুখে বাহিরে গম্ভীরতা, কঠোরতা দেখালেও সে ইলমির এমন অবস্থা দেখে ইলমির অগোচরে ঠোঁট চেপে হেঁসে উঠে। পরপর চোখে মুখে গাম্ভীর্যতা বজায় রেখে বলে উঠে,,

কি বলছিলি? আমি লুচ্চা?

ইলমিঃ স,সরি,ভূল হয়ে গেছে আর হবে না সত্যি বলছি। সত্যি বলছি। গড প্রমিস।

বলেই মাথা উঁচু করে আবরারের পানে চায়। আবরারকে এতো কাছ থেকে দেখে ইলমি চমকায় পরপর এক অদ্ভুদ অনূভতি খেলে যায় নিজের । আবরারকে এতোটা কাছ থেকে কখনোই দেখে নি ইলমি। এমনকি কালও দেখে নি। এই প্রথম এতোটা, এতোটা কাছ থেকে দেখছে। ইলমি গভীর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে আবরারকে পর্যবেক্ষণ করে।

সিল্কি চুল, কালো দুটি চোখ, শক্ত চোয়ালদ্বয়ে খোঁচা খোঁচা দাড়ি আর শ্যাম গায়ের রঙের পুরুষটি কি অপরুপ সৌন্দর্যের অধিকারী। ইলমি নিজ মনে কয়েকবার আওড়ালো ,,

আমার শ্যামপুরুষ, সে আমার স্বামী।

ইলমির হঠাৎ কি হলো মনের ভিতর এক অদ্ভুত ইচ্ছা জাগলো সামনে দাঁড়ানো মানুষটার নরম গালটায় চুম্বন করার । পরপর নিজের ভাবনায় নিজে খুবই অবাক হলো কি বাজে চিন্তা তার, এমন বেহায়া তার মন। ছিহ কি নির্লজ্জ, কি নির্লজ্জ। নিজের ভাবনায় নিজেরই পঁচা ডোবায় ডুবে মরে যেতে ইচ্ছে করছে তার।

ইলমির ভাবনার মাঝেই আবরার কন্ঠে একরাশ নেশা নিয়ে বলে উঠে,,
ভূল যখন করেছো শাস্তি তো পেতেই হবে চড়ুই।

ইলমি চকিতে আবরারের পানে চায় লোকটা তাকে কি নামে ডাকলো? চড়ুই? সে কি ভুল শুনলো।

ইলমি মিহিকন্ঠে বলে,
ইলমিঃ কি বললেন?

আবরার যেনো শুনতেই পেলো না। আবরার নেশা ভরা চোখে ইলমির ফর্সা গালের কোণে ছোট্ট তিলটা দেখতে ব্যস্ত। কি আছে তোমার মাঝে চড়ুই.? কি আছে এই বাচ্চা মেয়েটার মাঝে? যার সামনে আবরারের মতো এমন স্ট্রং পার্সোনালিটির মানুষটার মাঝে পার্সোনালিটির ‘প’ ও থাকে না। এমন কঠোর মানুষটাও কি না নিজ কন্ট্রোল হারিয়ে বসে থাকে। যাকে একপলক না দেখলে নিজেকে পাগল পাগল লাগে। উহু তুমি ভূল করেছে চড়ুই এই কঠোর, শক্তপোক্ত গোছানো মানুষটাকে তুমি অগোছালো করে দিয়েছো,ভেঙে দিয়েছো এর শাস্তি তো তোমাকে পেতেই হবে চড়ুই।

ইলমি কিছু বুঝে উঠার আগেই আবরার শক্ত হাতে ইলমির কোমড় জরিয়ে নিলো পরপর ইলমির গোলাপি অধরযোগলে গাঢ় চুম্বন করতে লাগলো । অনাকাঙ্ক্ষিত স্পর্শে কেঁপে উঠলো ইলমি চোখ খিচে বন্ধ করে শক্ত হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। এমনকি ইলমির অবচেতন মনটাও যেনো খুব করে আবরারের স্পর্শ চাইছিলো। ইলমি ও শক্ত হাতে আবরারের শার্টের কলার জড়িয়ে নিলো। মূলত তার সরে যাওয়ার ইচ্ছেও হলো না। কেনো হলো না? আবরার তার স্বামী বলে? তাদের মাঝে বিয়ে নামক পবিত্র – বন্ধন রয়েছে বলে? এ কেমন পবিত্র বন্ধন? যা দুটো মানুষকে মুহূর্তেই উন্মাদ করে তুললো। দুজনের মাঝে প্রলয়কারী ঝড় তুলে দিলো যা এই মূহুর্তে দুজন মানব মানবীর মাঝে তান্ডব চালাচ্ছে। আবরার ইলমির নেশায় ভীষণ-ভাবে আসক্ত হয়ে পড়েছে। এই মুহূর্তে নিজেকে কন্ট্রোল করা তার পক্ষে সম্ভব নয়। আবরার ইলমিকে কোলে করে বিছানায় শুইয়ে দিলো। জানালার পর্দা টানতেই রুমটাতে আলো কমে এলো।

তারপর, তারপর একে অপরের ভালোবাসায় গভীর ভাবে ডুবে রইলো। যত সময় অতিবাহিত হচ্ছে দুজন দুজনকে ততটায় ভালোবাসায় ভরিয়ে দিচ্ছে ক্রমাগত। দিনের আলো আর এই রুমটা সাক্ষী রইলো তাদের ভালোবাসার। তাদের পবিত্র বন্ধনের পূর্ণতার। নিরবতায় ঘেরা পুরো রুমটা জুড়ে দুজন মানুষের ভারী শ্বাস প্রশ্বাসের শব্দ বিরাজ করছে।

চলবে,,,,,

( ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখিও। )