অতঃপর প্রণয় পর্ব-১২

0
78

#অতঃপর_প্রণয়
#পর্বঃ ১২
#জেসমিন_জেমি

জ্বরের ঘোরে ডুবে আছে ইলমি। তার আঁশ-পাঁশটায় কি হচ্ছে কিছু জানে না সে।
১০২° জ্বর। সবাই আতঙ্কিত হয়ে ইলমির বেডের পাঁশে দাড়িয়ে আছে। হঠাৎ করে এই কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে জ্বর কিভাবে সেই চিন্তায় সবাই অথচ কেউ জানলোই না ইলমির দুপুর থেকেই জ্বর জ্বর ভাব তার মাঝে বৃষ্টিতে ভিজে মুহর্তেই তার এমন করুন দশা। ডক্টর কিছু করা ডোজ এর মেডিসিন লিখে দিয়ে উঠে দাড়ালেন।

ভয় পাবেন না মেডিসিন গুলো খাওয়ান। জ্বর নেমে যাবে ইন শা আল্লাহ। আল্লাহর উপর ভরসা রাখুন। আসছি।

আবরার ইমির ডক্টরকে এগিয়ে দিতে গেলো৷ আমেনা বেগম ছুট লাগালেন রান্না ঘরে কিছু খাইয়ে তারপর মেডিসিন খাওয়াতে হবে।

ইলমি জ্বরে বোধ হয়ে বেডে পরে আছে চোখ মেলে তাকানোর শক্তিটাও নেই হয়তো তাকানোর ইচ্ছেটাও নেই । বেডের পাশেই জহির মির্জা করুন চোখে মেয়ের মুখ পানে চেয়ে আছে। মেয়েটার গায়ে একটা ফুলের টোকা সে সহ্য করতে পারে না, অথচ সেই মেয়ে কিনা ১০২° জ্বরে কাতর হয়ে বিছানায় পরে আছে। মেয়ের শুকনো মুখ পানে চেয়ে বাবার বুকের মাঝ খানটায় হাহাকার করে উঠলো। এক হাত মেয়ের মাথার উপর রেখে নিঃশব্দে দু-চোখের জল ঝড়ালেন। মেয়ের চুল পরিমান আঘাতের কষ্টাও যেনো সে পায়। বড্ড আদরের মেয়ে কি না। আসলে পৃথিবীতে সকল বাবার কাছেই তার মেয়েটা ভীষন আদরের,ভীষণ স্নেহের। মেয়েদের মাঝে বাবারা যে তার আরেক মাকে দেখতে পায়। এর জন্যই হয়তো মেয়েরা বাবাদের কলিজা হয়। বাবারা মেয়েদেরকে এতোটা ভালোবাসেন। আমেনা বেগম দরজায় দাঁড়িয়ে সবটাই দেখলেন। মেয়েটা তার বড্ড অবুঝ। কারো কথাই শুনতে চায় না। আজ বৃষ্টির একটা ফোঁটা গায়ে পড়লে যে মেয়ের কাল মৃত্যুর দরগড়া দিয়ে ঘুরে আসতে হয় সেই মেয়েটাই কি না বৃষ্টিতে এক আকাশ পরিমাণ খুশি নিয়ে ভিজতে চলে যায়। হাসতে হাসতে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে । আমেনা বেগম কত করে নিষেধ করে, কত কত শাসন অথচ মেয়েটা দেখো একটা কথা যদি শুনতো সবার চোখে ফাঁকি দিয়ে সে ড্যাং ড্যাং করে ভিজতে চলে যায় আর প্রতিবার বাবা মা ভাইকে চিন্তায় ফেলে দেয়। আমেনা বেগম জহির মির্জার কাঁধে হাত রাখতেই জহির মির্জা মেয়ের মাথা থেকে হাত সরিয়ে উঠে দাঁড়ায়।

আমেনাঃ রাত জাগলে আপনার শরীর খারাপ করবে আপনি বরং গিয়ে শুয়ে পড়ুন আমি তো আছি ।
আবিরা তূর্ফা তোমরাও যাও পাঁশের রুমটাই গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ো তূর্ফা মাথা নেড়ে পাশের রুমে চলে গেলো। আবিরা কিছুক্ষণ ইলমির পাঁশে বসে সে ও চলপ গেলো।

জহির মির্জা যেতে চাইলেন না শেষ-মেশ স্ত্রীর জোড়া-জুড়িতে বাধ্য হলেন। আমেনা বেগম মেয়েকে বুকের সাথে শক্ত করে জড়িয়ে কপালে চু*মু খেলেন । এই যে তিনি তার আদরের মেয়েটাকে সব সময় বকাঝকা করেন মেয়েটার ভালোর জন্যই অথচ মেয়েটাকে দেখো একটা কথা যদি শুনতো।

রাতে ছাদের দোলনায় বসে নিজের উপর রাগে জেদে প্রায় আধ ঘন্টা বৃষ্টিতে ভিঁজেছে তারপর রাগ, জেদ কমাতে ১০২° জ্বরের আগমন।

______________

ডক্টরকে এগিয়ে দিয়ে ইমির আবরার রাত ১২টায় বাসায় ফিরলো রুমে ফিরেই দেখলো আমেনা বেগম মেয়েকে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে আর ইলমি মাথা নেড়ে নেড়ে না বুঝাচ্ছে যার মানে সে খাবে না। আবরার ক্লান্ত চোখে আমেনা বেগমের দিকে তাকিয়ে বললো,,
আপনি রাখুন আমি দেখছি। বলেই ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো।

আমেনা বেগম বললেন,,
না না বাবা তুমি অনেক ক্লান্ত তুমি বরং বিশ্রাম নাও আমি দেখছি।

আবরারঃ সমস্যা নেই আমি দেখছি আপনারা যান।

আমেনা বেগম আবরারের মুখের উপর আর কিছু বলার সাহস করলেন না। ছেলেটা সেই কতদূর থেকে ছুটে এসেছে।

(আবিরা ওই রাতেই কল করে ভাইজানকে ইলমির খবর জানাতেই আবরার নিজের বাইকটা নিয়ে ১ঘন্টার পথ আধ-ঘন্টার মাঝে জার্নি করে মির্জা বাড়ীর সামনে এসে দাঁড়ায়। )

আমেনা বেগম রুম থেকে বের হয়ে গেলেন ইমির বোনের মাথা চু*মু এঁকে নিশ্চিন্তে রুম থেকে বের হয়ে গেলো সারাদিনের ক্লান্তি এবার ঝেকে বসেছে। চোখে মুখে ক্লান্তির ছাপ স্পষ্ট। যেখানে আবরার আছে সেখানে চিন্তা করার প্রশ্নই উঠে না। আবরার হাত মুখ ধুয়ে এসে ইলমিকে খাটে হেলান দিয়ে বসাতেই ইলমি পিটপিট করে চায় কিন্তু কিছু বলে না। আবরার ভাতের লোকমা মুখের সামনে ধরতেই ইলমি মুখ ঘুরিয়ে মাথা নেড়ে না বুঝাতেই আবরার গম্ভির স্বরে ধমকে বলে,,

চুপচাপ খা ।

জোড় পূর্বক কয়েক লোকমা মুখে তুলে দিতেই ইলমি মাথা হালকা ঝুঁকিয়ে হরহর করে বমি করে ফ্লোর ভাঁসিয়ে দেয়।

আবরারঃ ওহ শীট।
আবরার তারাহুরো করে প্লেটটা বিছানায় রেখে ইলমির এমন অবস্থা দেখে এক হাতে ইলমিকে ঝাঁপটে নেয়। ইলমি ক্লান্ত হয়ে আবরারের বুকে ঢলে পড়ে। আবরার মেডিসিন গুলো খাইয়ে দিয়ে ইলমিকে শুইয়ে নিজ হাতে ফ্লোর পরিষ্কার করে পড়নের সাদা পান্জাবিটা ওয়াশরুমে রেখে হাত মুখ ধুয়ে ইলমির পাঁশে শুয়ে পড়ে পাঁশের জ্বরে উত্তপ্ত ছোটো দেহখানা টেনে নিজের বুকে জড়িয়ে নেই কপালে পরম যত্নে নিজের ঠোঁট জোঁড়া ছোঁয়ায়।

এই মেয়েটা তাকে নিশ্চিত পাগল বানিয়ে ছাড়বে। চোখের আড়াল হলে নিজেকে কেনো পাগল পাগল মনে হয় তার?
এই মেয়েটার জন্য এতো ব্যস্ততাই বা কেনো? মেয়েটার অসুস্থতা মুহূর্তেই শক্ত পোক্ত এমপি ফাহাদ আবরারকে কাবু করে তুলে। যার অসুস্থতার খবরে গুরুত্বপূর্ণ সমাবেশ থেকে ছুটে চলে এসেছে মির্জা বাড়ীতে।

আবরার শক্ত পোক্ত সুঠাম বুকের মাঝ খানটায় ইলমিকে জড়িয়ে নেই, ইলমিও গুটি শুটি মেরে আবরারের বুকের মাঝ খানটায় পড়ে থাকে। সারারাত ঘুমাতে পারে না ইলমি। শক্ত পোক্ত সুঠাম পুরুষালী বুকের মাঝ খানটায় ছটফট করতে থাকে। আবরার একহাতে ইলমিকে শক্ত করে নিজের সাথে জড়িয়ে অন্য হাতে রাত জেগে জলপট্টি দিয়ে যায়। ভোরের দিকে ইলমির জ্বর কিছুটা নেমে যায় ইলমি তখন আবরারের বুকে গুটি শুটি মেরে গভীর ঘুমে বিভর। এদিকে কেউ একজন নির্ঘুম রাত কাটিয়ে পরম যত্নে তার সেবা করে গেলো আর এখন গভীর মনোযোগ দিয়ে জ্বরে শুকিয়ে যাওয়া ছোট গোলগাল মুখ, সাদা হয়ে যাওয়া শুষ্ক ঠোঁট, উশখো-খোঁশখো চুল গুলো দেখতে ব্যস্ত।

চলবে,,,,,,,

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)