অন্য বসন্ত পর্ব-০৭

0
49

#অন্য_বসন্ত ( সপ্তম পর্ব )
#ঈপ্সিতা_মিত্র
( নতুন শুরুর অধ্যায় )

কৃষ্ণেন্দুর সেদিন একলা হয়ে প্রায় দু মাস কেটে গেছে এরপর | আসে পাশের পৃথিবীটাই এখন কেমন বদলে গেছে ওর ! একা থাকা কাকে বলে , সেটা যেন সময় হঠাৎ এসে বুঝিয়ে দিয়েছে ! সেদিন দীপ্তি পার্টি থেকে ফিরে আর এক মুহূর্তও অপেক্ষা করেনি আসলে | সোজা মায়ের ঘরে গিয়েছিলো | বাইরে ঝড় উঠেছিল খুব সেই সময়ে | বৃষ্টি , মেঘ ডাকার আওয়াজ ভেসে আসছিলো ভীষণ ঘরে | আলো সেই সময়ে এক মন দিয়ে উপন্যাস পড়ছিলো একটা | মেয়ের পায়ের শব্দে স্তম্ভিত ফিরলো হঠাৎ | এলোমেলো , ছন্নছাড়া , বৃষ্টি ভেজা দীপ্তিকে দেখে আলো নিজেও যেন থমকে গেছিলো সেই মুহূর্তে ! বুঝতে পারছিলো না কি হয়েছে ! তবে দীপ্তি যে ঠিক নেই , সেটা নিশ্চিত ছিল | আলো এইসব দেখে দীপ্তিকে কিছু জিজ্ঞেস করতে যাওয়ার আগেই মেয়েটা ওর পায়ের কাছে বসে পড়লো আচমকা | তারপর খুব শক্ত করে ওর হাত দুটো ধরে স্থির চোখে বলে উঠলো , ———- ” এবার ঠিকানাটা বদলাতে হবে আমাদের মা| কৃষ্ণেন্দুর আর আমাদের দরকার নেই | এটাই সত্যি | আর আজ যা হয়েছে এরপর আমার পক্ষেও এই বাড়িতে থাকা সম্ভব না | আমি কোনোদিনও তোমায় কিছু রিকোয়েস্ট করিনি মা | কিন্তু আজ করছি , প্রথমবার | কৃষ্ণেন্দুকে এবার ছেড়ে দাও ওর মতন | অনেক তো করলে ! অনেক থেকেছো | আর না | আজ থেকে শুধু আমার জন্য থাকো মা | ফিরে চলো আমার সঙ্গে | আমাদের বাড়িতে |”
দীপ্তির ভেজা চোখ আর দৃঢ় গলায় কিছু একটা ছিল সেদিন , যার জন্য আলো আর না বলতে পারেনি ওকে | অনেকদিন ধরেই ও দেখেছে কৃষ্ণেন্দুর বদলগুলো | কিন্তু দেখেও চুপ থেকেছে সব সময় | টাকার নেশা আসলে এমনই একটা জিনিস , যেটা একবার শুরু হলে কারোর বারণে শেষ হয় না | সে তখন আরো চায় | আরো ব্যস্ততা , আরো কাজ , আর আরো অনেক টাকা | আলো এই বদলের ভিড়ে জানতো একদিন দীপ্তি ক্লান্ত হয়ে যাবে | পারবে না আর থাকতে কৃষ্ণেন্দুর সঙ্গে | আর ছেলেটা তো কোনোদিনও দীপ্তিকে সময় দেয়নি সেইভাবে | একতরফা আর কতদিনই বা থাকতো মেয়েটা ! কথাগুলো ভেবে আলোও আর কোনো প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করলো না দীপ্তিকে | কিছু সময় কোনো প্রশ্ন ছাড়াই সঙ্গে থাকতে হয় | আর কোনো বড়ো ঘটনা না ঘটলে দীপ্তি যে এতো কঠিন একটা ডিসিশন নিতো না , এটা আলো জানে | তাই সেইদিন নিশ্চুপ ভাবেই নিজের ব্যাগ গুছিয়ে নিয়েছিল | আর সত্যি কথা বলতে কি , এই বাড়িতে ও জোর করেই থেকেছে | ভেবেছে কৃষ্ণেন্দুর মাথার ওপর কারোর একটা থাকা দরকার, তাই | তবে এই এতগুলো দিন এই বাড়িতে আসার পর থেকে কৃষ্ণেন্দু কেমন ধরা ছোঁয়ার বাইরেই হয়েছিল | রাত্রে একই টেবিলে বসে খেত না , কখনো আলাদা করে এসে কথা বলতো না , কেমন যেন নিজের একটা জগতে থাকতো সব সময় | যেখানে কাজ ছাড়া নিজের লোকেদের জন্য আর কোনো জায়গা নেই | তাই প্রয়োজন যখন শেষ , তখন আর থেকে কি লাভ ! পুরোনো ঠিকানায় ফিরে যাওয়াই ভালো |
এই ভাবনার ভিড়ে ওরা এক এক করে নিজের দরকারি , অদরকারি সব জিনিসগুলো গুছিয়ে নিয়ে বাড়ি ছেড়েছিলো চুপচাপ | কৃষ্ণেন্দু সেদিন এতো ড্রিংক করেছিল যে বাড়ি এসে আলাদা করে বোঝেনি কারোর থাকা না থাকার তফাৎটা | নিজের ঘরে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েছিল নেশার ঘোরে | পরেরদিন সকালে যখন উঠেছিল তখন হরি এসে বলেছিলো ওকে সবটা | কথাগুলো শুনে প্রথমে যেন ঠিক বিশ্বাস হয়নি কৃষ্ণেন্দুর সেই মুহূর্তে | প্রায় লাফ দিয়ে খাট থেকে উঠে ও গিয়েছিলো আলো আর দীপ্তির ঘরে | ফাঁকা আলমারি , শূন্য ঘরগুলো দেখে তারপর স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিলো কিছুক্ষন | সত্যি ওরা কিছু না বলে চলে গেলো ! ছেড়ে দিলো এই বাড়িটা ! আলো মা কি করে পারলো এটা ! ঠিক ভুলটা শুধু নিজের মেয়ের মুখ থেকেই শুনলো ! ওকে কিছু জিজ্ঞেস করার চেষ্টাও করলো না ! আর দীপ্তি ; কিসের জন্য করলো এরকম ! একটা সরিই তো বলতে বলেছিলো কৃষ্ণেন্দু মিস্টার ভট্টাচারিয়াকে | একজন অতো বয়স্ক মানুষকে ওই অনিকেত পার্টিতে সবার সামনে ধাক্কা মেরে ফেলে দিলো ! দীপ্তি একটা সাধারণ ঘটনাকে এতটা বড়ো ইস্যু বানিয়ে ফেললো যে কৃষ্ণেন্দুর ব্যবসার হয়তো খুব বড়ো একটা ক্ষতি হয়ে যেতে পারতো ! এই সবের জন্য বাড়ি ছেড়ে চলে যেতে হবে ! কৃষ্ণেন্দু কিরকম দিন রাত পরিশ্রম করে এই বিজনেসটাকে আজ এই জায়গায় নিয়ে এসেছে , সেটা তো দীপ্তি নিজের চোখে দেখেছে | তাহলে কাল নিজের ইগোটা কে সাইডে রেখে একটা সরি কি বলা যেত না ! না কি এইসবটাই আসলে মিথ্যে কারণ | আসল কারণ অনিকেত | এখন তো দীপ্তির কাছে ওই ছেলেটাই সব ব্যাপারে ঠিক | সব থেকে বেশি ইম্পর্টেন্ট | হয়তো দীপ্তি মনে মনে ঠিকই করে রেখেছিলো যে ছেড়ে চলে যাবে ওকে | শেষ করে দেবে রিলেশনটা | শুধু একটা ছোট্ট কারণ খুঁজছিলো এই শেষের | কাল সেই সুযোগটা আসায় স্বদব্যবহার করে ফেললো, ব্যাস | কথাগুলো ভেবে কষ্টে গলাটা বুজে আসছিলো কৃষ্ণেন্দুর | এই প্রথম প্রচন্ড কান্না পাচ্ছিলো ওর | সঙ্গে অদ্ভুত একটা রাগ হচ্ছিলো যেন | চারিদিক অন্ধকার লাগতে শুরু করেছিল এক সেকেন্ডে | কৃষ্ণেন্দু এই ফাঁকা ঘরে , এই অন্ধকারের ভিড়ে কেমন পাগলের মতন বিছানার বালিশ , চাদর , ঘরের তাকে রাখা বইগুলো , টেবিলে পরে থাকা ছোট্ট ঘড়ি , ছোট ছোট শোপিসগুলো , খাটের পাশে সাজানো ল্যাম্পটা , সব আঁছড়ে আঁছড়ে ফেলে দিতে শুরু করলো মেঝেতে | ভাঙতে শুরু করলো সবকিছু | একটা অন্য ছেলের জন্য দীপ্তি কৃষ্ণেন্দুকে ছেড়ে চলে গেছে এটা মেনে নিতে ওর ভেতরটা শেষ হয়ে যাচ্ছিলো বার বার | রাগটা ঘরের জিনিসপত্রের ওপর বার করেও ঠিক মিটলো না যেন | এখন মনে হচ্ছে সব কিছু ভুলে যাওয়াটা খুব দরকার | এতো সত্যির ভিড়ে নিজেকে আড়াল করার জন্য নেশার খুব দরকার | তাই রাগ , কষ্ট , অভিমানের মধ্যে ও প্রায় দৌড়ে নিজের ঘরে গেলো | ফ্রিজটা খুলে নেশার বোতলগুলোকে আঁকড়ে ধরলো তারপর | এখন এই নেশার ঘোরটাই ওকে একটু শান্তি দেবে হয়তো ! ভুলিয়ে দেবে যন্ত্রণাগুলো |
কিন্তু সেইদিন কৃষ্ণেন্দু বোঝেনি যে নেশা কিছুক্ষনের জন্য মুক্তি দেয় | মরীচিকার শান্তি দেয় | যেটা কয়েক মুহূর্তেই চোখের পলকে মিলিয়ে যায় | নেশা কেটে গেলেই পুরোনো যন্ত্রনা , কষ্টগুলো আঁকড়ে ধরে আবার আগের মতন | বুকের কাছে অদ্ভুত একটা জটলা করে থাকে পুরোনো স্মৃতিরা একসাথে | ঘুমিয়ে , জেগে থেকে , কাজের মধ্যে , একাকিত্বে , কিছুতেই , এই স্মৃতি , এই দুঃখটা ভোলা যায় না | দীপ্তি , আলো মা আসলে ওর কাছে কি , সেটা মনে হয় এই খালি বাড়িতে রোজ না ফিরলে বোঝাই হতো না কখনো ওর ! এই নিঃস্তব্ধ ফার্নিচারগুলোর সঙ্গে দিন না কাটালে মানুষের গুরুত্বটা হয়তো কৃষ্ণেন্দু জানতে পারতো না আজও | যেমন এখন যখন আর কেউ খাবার টেবিলে ওর জন্য অপেক্ষা করে না , দেরি করে বাড়ি ফেরার জন্য কখনো কেউ আর কনসার্ন দেখিয়ে ফোন করে না , কেবিনের উল্টোদিকের দীপ্তির বসার জায়গাটা খালি পরে থাকে রোজ , কেউ আর ওর কাছ থেকে সময় চেয়ে নেয় না নিজের জন্য , তখন যেন ভেতর থেকে ভাঙে কৃষ্ণেন্দু | দিনের পর দিন এই নিঃস্তব্ধতা , কারোর সঙ্গে না থাকার মধ্যে ও একাকিত্বকে চিনছে যেন নতুন করে ! আগে যেই ভুলগুলোকে চোখে দেখেও দেখেনি কখনো নিজের , আজ সেইসব ভুলগুলো যেন মাঝে মাঝেই আয়নায় ওর সামনে পরিষ্কার হয়ে যায় | পুরোনো ঘটনাগুলো বার বার যেন ভাবিয়ে তোলে ওকে , না চাইতেও |

দীপ্তির মনে অনিকেতের জন্য জায়গা তৈরী হওয়াটা কি কিছু হলেও ওর ভুল না ! আলো মার্ শরীর খারাপের দিন যখন দীপ্তি ওকে বার বার করে বাড়ি ফিরতে বলেছিলো , তখন কি ওর কাজের কথা না ভেবে একবার দীপ্তির জন্য থমকে দাঁড়ানো উচিত হয়নি ! কিছু সন্ধ্যে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরে দুজনের জন্য মনে রাখার মতন কিছু মুহূর্ত তৈরী করার কি দরকার ছিল না ! সারাক্ষন কাজের চিন্তা না করে নিজের লোকগুলোর জন্য ভাবাটাও কি একবার উচিত ছিল না ওর ! না কি দীপ্তিকে , আলো মাকে ও নিজের অজান্তেই টেকেন ফর গ্রান্টেড ধরে নিয়েছিল | ওরা তো ছিলই , ওরা তো থাকবেই , এইরকম একটা চিন্তা কৃষ্ণেন্দুর মধ্যে এসে ভিড় করেছিল ! তাই হয়তো মনের দূরত্বটা অনেকদিন আগে থেকেই বাড়তে শুরু করেছিল ! ফাঁক তৈরী হয়ে যাচ্ছিলো খুব ওদের মধ্যে ! আর অনিকেত সহজেই সেই ফাঁকে নিজের জায়গাটা করে নিয়েছিল এতো শক্তভাবে | কথাগুলো ভেবে আরো কষ্টগুলো যেন কৃষ্ণেন্দুর মধ্যে পাক খাচ্ছিলো রোজ কেমন ! সমস্ত রাত নির্ঘুম কাটছিলো ওর | কিন্তু তাও কিছুতেই আর সব ভুলে একটা ফোন করা হয়ে উঠলো না ওর | কৃষ্ণেন্দুকে যখন দীপ্তিরা এক রাতের মধ্যে ছেড়েই দিয়েছে , সেখানে ওর আর বলার মতন কিছু বাকি নেই | আর সেই রাতে অন্তত কৃষ্ণেন্দুর দোষ ছিল না | কৃষ্ণেন্দু এই দু মাসে আজও বিশ্বাস করে যে সেইদিন দীপ্তির ভুল হয়েছিল মিস্টার ভট্টাচারিয়াকে বুঝতে | একটা ডান্স এর জন্য জিজ্ঞেস করাটা কোনো অভদ্রতা না | কিন্তু হয়তো দীপ্তির একটা কারণ দরকার ছিল চলে যাওয়ার | তাই নিজের ভুল বোঝাটাকে স্বীকার না করে ও চলে গেলো ! অনিকেতের জন্য চলে গেলো !

এই বিশ্বাসটাকে নিয়েই দিনগুলো কাটছিল কৃষ্ণেন্দুর | অন্ধকার কিছু দিন | যেখানে জেগে , ঘুমিয়ে , কাজের ভিড়ে , একান্তে , শুধুই একটা কষ্ট , একটা খারাপ লাগার ভিড় | যেখানে আর কোনো ডিল সাইন করে সেই ফাঁক পূর্ণ হয় না | যেখানে তৃষার দেয়া নতুন নতুন বিজনেস প্রপোজাল , আইডিয়া শুনেও আর কোনো এক্সাইটমেন্ট হয় না | যেখানে অফিসের এতো লোকের ভিড়েও সারাক্ষন মনে হয় আসল যার থাকার কথা , সে ই নেই | দীপ্তি আর কোথাও নেই | হাজার হাজার আলোবর্ষের মাঝে ওদের পুরোনো দিনগুলো হারিয়ে গেছে কোথাও ! কার ভুল , কার দোষ জানে না | তবে সব এলোমেলো হয়ে গেছে | শেষ হয়ে গেছে হঠাৎ |
সেদিন এইসব ভাবনার ভিড়েই কৃষ্ণেন্দু গাড়ি চালাচ্ছিল কলকাতার ভিড় রাস্তায় | আজ খুব বৃষ্টি চারিদিকে | কালো মেঘ ঢেকে আছে পুরো শহরটাকে | তাই হয়তো ওরও পুরোনো কথা এতো বেশি করে মনে পড়ছে আজ | এই বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় ভীষণ অগোছালো , একা লাগছে নিজেকে | এই সবের মধ্যেই একটা রেড সিগন্যাল হঠাৎ থমকে দিলো গাড়িটা | ঝিরঝিরে বৃষ্টিতে তখন আবছা শহর | তার মাঝেই কৃষ্ণেন্দুর চোখ দুটো এদিক ওদিক চলে যাচ্ছিলো | কিন্তু ফুটের ওপারে রেস্টুরেন্টটায় চোখটা গিয়েই ওর অজান্তে থমকে গেলো আচমকা | কাঁচের জানলার ওপারে ওই দুজন কারা ! একজন তো অনিকেত | কিন্তু অনিকেত এটা কার হাত ধরে বসে আছে ! উল্টোদিকের মেয়েটা তো দীপ্তি না ! এই ঝিরঝিরে বৃষ্টিতেও জল ভেজা কাঁচের আড়ালে থাকা দুটো মুখ চিনতে ওর ভুল হলো না একদম | ঠিকই দেখেছে ও | অনিকেত একটা মেয়ের সঙ্গে বসে আছে , টেবিলের ওপর হাতটা আলতো করে ধরে | কিন্তু এই অচেনা মুখের মেয়েটা কে ! দীপ্তির সঙ্গে ওর রিলেশনের কি হলো তাহলে ! না কি ছেলেটার এই ধরণেরই ক্যারেক্টার | দীপ্তির সঙ্গে আরো অনেককে নাচাচ্ছে ! ভেবেই অনিকেতের ওপর রাগটা ফিরে এলো আবার | এদিকে গ্রিন সিগন্যাল হতেই গাড়িটাকে এগিয়ে নিয়ে যেতেই হলো কিছুটা | তবে কৃষ্ণেন্দু একটু দূরে গিয়ে গাড়ি ঘুরিয়ে সাইডে পার্ক করলো এবার | তারপর সোজা হাঁটতে শুরু করলো রেস্টুরেন্টটার দিকে | অনিকেতের ওপর রাগটা এবার বেশ গাঢ় হচ্ছে ওর | আজ ওর এইরকম একা হয়ে যাওয়ার জন্য তো এই ছেলেটাই দ্বায়ী | ওর সব শেষ করে দিয়ে আবার এখন অন্য একটা মেয়ের সঙ্গে প্রেম হচ্ছে ! এই ভেবেই ও রেস্টুরেন্টটাতে ঢুকলো মুখের পেশিগুলোকে শক্ত করে | আজ অনিকেতকে ছাড়বে না ! এই মেয়েটার সামনে মুখোশটা খুলে রেখে দেবে ওর | এই ভেবেই অনিকেতের সামনে গেলো | এই মুহূর্তে অনিকেতও আচমকা ওকে দেখে একটু অবাক হয়ে গেছিলো যেন ! তবে ওকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই কৃষ্ণেন্দু বলে উঠলো নিজে থেকে ,
———– ” এই মেয়েটা আবার কে অনিকেত ! আর কতজনের লাইফ নিয়ে খেলবে তুমি ? দীপ্তিকে তো আমার থেকে দূরে করেই দিলে | এবার অন্তত নিজে ওর সঙ্গে লয়াল থাকো ! না কি তোমার প্রত্যেক মাসে নতুন নতুন মেয়ে লাগে ফূর্তি করার জন্য ? এই মেয়েটাকে কবে তুললে আবার ?”
কথাগুলো যেন ধাক্কা দিলো আজ অনিকেতকে | রেস্টুরেন্টের সমস্ত লোক এখন কৃষ্ণেন্দুর চিৎকারে ওদের দিকে তাকিয়ে | অনিকেতের মুখটা লজ্জায় লাল হয়ে গেলো কয়েক সেকেন্ডের জন্য হঠাৎ | তবে এই লোকটা আজ সব লিমিট ক্রস করে ফেলেছে নিজের | আর চুপ থাকবে না অনিকেত | অনেক হয়েছে ! কথাটা ভেবেই ও উঠে দাঁড়িয়ে নিজের দৃঢ় গলায় বললো ,
———- ” আপনি আসলে কি জানেন স্যার , একজন অন্ধ মানুষ | যার চোখ আছে ঠিকই | কিন্তু সে দেখতে পায় না | এই মেয়েটা যে এখন আমার সঙ্গে বসে আছে , ওর নাম নিশা | আমার কলেজ লাইফ থেকে গার্লফ্রেন্ড | ঈশ্বরের কৃপায় একটা ব্যাংকে চাকরিও পেয়ে গেছি আমি এই দু মাসে | নেক্সট উইক থেকে জয়েনিং | আর তারপরই বিয়ে করবো আমরা | আর এই সমস্ত কথা দীপ্তি আমাদের আলাপের প্রথম দিন থেকে জানে | ও তো এখন থেকেই ডিসাইড করছে , কিভাবে আমাদের বিয়েতে আমাদের হেল্প করবে সব এরেঞ্জমেন্টস এ | শুরু থেকে আমার আর দীপ্তির ঠিক এরকমই সম্পর্ক ছিল | বন্ধুত্বের সম্পর্ক | কিন্তু আপনি এইসব কোনোদিনই বোঝেননি ! তবে আপনার মতন লোকের কাছ থেকে এর বেশি কিছু আর আমি আশাও করি না ! যে নিজের ভালোবাসার মানুষকে একটা ভিড় পার্টিতে ঠিকভাবে প্রটেক্ট করতে পারে না ! তাকে কেউ মলেস্ট করলেও সেই ঘটনা বিশ্বাস করে না ! উল্টে সবার সামনে তাকে ওই লোকটাকে সরি বলতে বলে ! তার মতন স্পাইনলেস মানুষের কাছ থেকে আর কি ই বা এক্সপেক্ট করা যায় ! আর হ্যাঁ , আমি জানি , এতদিন বাদেও আজ আমার কথা আপনার বিশ্বাস হচ্ছে না আবারও | কিন্তু পারলে একবার সেইদিনের সিসিটিভি ফুটেজটা একটু চেক করে নেবেন | কে ঠিক , কে ভুল পরিষ্কার হয়ে যাবে | ”
কথাগুলো প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলেছিলো সেইদিন অনিকেত কৃষ্ণেন্দুকে | তারপর নিশার হাতটা শক্ত করে ধরে বেরিয়ে যেতে যাচ্ছিলো রেস্টুরেন্টটা থেকে | তবে নিশা শেষবারের মতন ওকে থামিয়ে কৃষ্ণেন্দুকে কিছু কথা বলে উঠলো নিজে থেকেই , যেটা শোনার জন্য কৃষ্ণেন্দু ঠিক তৈরী ছিল না | সেইদিন এই অচেনা মেয়েটা কৃষ্ণেন্দুর চোখে চোখ রেখেই বলেছিলো যাওয়ার আগে ,
————- ” আপনার কথা শুনেছিলাম অনেক অনিকেতের কাছে | দীপ্তির জন্য খারাপ লাগতো তখন খুব আমার এইসব শুনে | একটা ঠিক মানুষ খুঁজে পাওয়া আসলে খুব কঠিন | আর নিজের জীবনের এতগুলো বছর ও যাকে দিলো , খারাপ সময়ে যার পাশে শক্ত করে দাঁড়ালো , সে ভালো সময় আসতেই ভুলে গেলো ! এটা ভেবেই খুব বাজে লাগতো মন থেকে মেয়েটার জন্য | তবে আজ আপনাকে দেখে মনে হচ্ছে , ক্ষতিটা ওর হয়নি | ক্ষতিটা আসলে আপনার | একটা ঠিক মানুষকে পেয়েও নিজের কাছে রাখতে পারলেন না ! অনেক লোকসান করে ফেললেন নিজের স্যার | সারা জীবনেও এই লোকসানটা পূরণ হবে না কখনো | এইটুকু বলে দিতে পারি | যাইহোক , জানি না এতো দামি একজনকে হারিয়েও ভালো থাকা যায় কি না ! তবে চেষ্টা করবেন |”
কথাগুলো শেষ করেই আর নিশা অপেক্ষা করলো না এক মুহূর্তও |অনিকেতের হাতটা খুব শক্ত করে ধরে বেরিয়ে গেলো রেস্টুরেন্টটা থেকে | আর বৃষ্টি ভেজা আবছা কাঁচের আড়ালে কৃষ্ণেন্দু কেমন একা হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো আজ | বাইরে বৃষ্টিটা এখন মনে হয় খুব বেড়েছে ! ঝিরঝিরে বৃষ্টিটা মুষলধারায় ঝরে পড়ছে শহরে | আর কৃষ্ণেন্দু এই আকাশ ভাঙা বৃষ্টির মাঝে ভীষণ একা হয়ে দাঁড়িয়ে রয়েছে, নির্বাকভাবে | নিজের ভুলগুলো আজ ভীষণভাবে পরিষ্কার ওর কাছে | বুঝতে পারছে না এতো ভুল বুঝে রইলো কি করে ও এই দু মাস ! কিভাবে একবারও ফোন করলো না দীপ্তিদের ! কিভাবে নিজের সব থেকে কাছের মানুষগুলোকে এতটা দূরে সরিয়ে দিলো নিজের থেকে ! আর তাহলে অনিকেতকে নিয়ে যেইভাবে দীপ্তিকে ভুল বুঝেছিলো ও দিনের পর দিন , সেইরকম সেইদিন পার্টিতেও কি কৃষ্ণেন্দুরই বুঝতে ভুল হয়েছিল ! অনিকেত আজ কি বলে গেলো ওকে ! ওর কেন মনে হলো না এতদিনে সিসিটিভি ফুটেজটা একবার চেক করা দরকার ! একবার চেষ্টা করা দরকার সত্যিটা জানার ! কথাটা ভেবেই নিজের ওপরই নিজের রাগ হচ্ছিলো ভীষণ | এই মুহূর্তে ও গাড়ির স্পিডটা তাই বাড়ালো আরো | আর তারপর ভেজা শহর পেরিয়ে হাজির হলো সেইদিনের হোটেলটায় |

ম্যানেজার ওর চেনাই ছিল প্রথম থেকে | তাই কথা বলে সেই রাতের সিসিটিভি ফুটেজটা সহজেই পেয়ে গেলো নিজের কাছে , একটা মেমোরি চিপে | গাড়ির মধ্যেই ল্যাপটপ ছিল | কথাটা মনে হতেই চিপটা নিয়ে ও আর একটুও অপেক্ষা করলো না ! সঙ্গে সঙ্গেই গাড়ির ভেতরে এসে ল্যাপটপটা খুলে বসলো সেই মুহূর্তে | তবে সিসিটিভি ফুটেজ দেখতে দেখতে হঠাৎ থমকে গেলো কেমন ! মিস্টার ভট্টাচারিয়ার টলতে টলতে দীপ্তির কাছে এগিয়ে আসা , ওর ওপর এলিয়ে পড়া , ওকে জাপ্টে ধরে ওর শরীরটাকে ভোগ করার আপ্রাণ চেষ্টা , দীপ্তির নিজেকে ছাড়ানোর জন্য হাঁসফাঁস করে ওঠা ! সব এক এক করে চোখের সামনে ভেসে উঠলো ওর | কৃষ্ণেন্দুর এই মুহূর্তে মিস্টার ভট্টাচারিয়ার সঙ্গে নিজেকেও কেমন নোংরা লাগতে শুরু করলো হঠাৎ ! এতটা লোভ ! এতটা হিসাব চলে এসেছিলো ওর মনে ! সেই রাতে দীপ্তির সঙ্গে এই রকম একটা ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও কৃষ্ণেন্দু সেটা খেয়াল করলো না ! ওর এলোমেলো চেহারার ক্লান্ত মুখটাকে লক্ষ্য করলো না ! শুধুমাত্র নিজের ব্যবসার কথা ভেবে গেলো ! মিস্টার ভট্টাচারিয়ার ওপর অন্ধ বিশ্বাস দেখিয়ে গেলো ! একবারও দীপ্তির কথাগুলো শুনলো না ! এমন কি ওকে সবার সামনে সরি বলতে বললো এই জঘন্য লোকটাকে ! আর যেই ছেলেটা দীপ্তিকে এই রকম পরিস্থিতি থেকে বাঁচালো , তাকেও ঐভাবে সবার সামনে অপমান করলো কৃষ্ণেন্দু ! ওর চাকরি অব্দি কেড়ে নিলো ! নিজেকে চড় মারতে ইচ্ছে করছে এখন ঠিক ওর | এতটা নিচে কবে নেমে গেলো কৃষ্ণেন্দু ! সত্যি, অনিকেত ওকে আজ যা বলেছে , একদম ঠিক বলেছে | কৃষ্ণেন্দু সত্যি অন্ধ | এই সাকসেস , ব্যবসা , ওপরে ওঠার লোভ এইসবের ভিড়ে ও অন্ধ হয়ে গেছিলো কখন, নিজেও বোঝেনি ! আর আজ হঠাৎ এইভাবে নিজেকে দেখে , নিজের এই স্বার্থপর , হিসাবি মুখটা দেখে লজ্জা লাগছে ভীষণ | মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছা করছে ওর | বুঝতে পারছে না ঠিক কিভাবে এতো বড়ো ভুল করলো ! আর কিভাবেই বা এই ভুলটাকে ঠিক করবে নিজের ! কি করে দীপ্তির সামনে গিয়ে দাঁড়াবে আবার ! কি করে ফেস করবে ওকে ! কোন মুখে ক্ষমা চাইবে !
এই বৃষ্টি ভেজা দিন কৃষ্ণেন্দুকে একটা আয়না দেখিয়ে দিয়েছে যেন | আর এতদিন বাদে হঠাৎ এই আয়নায় নিজেকে দেখে কিরকম অচেনা লাগছে ওর ! বুঝতে পারছে না ওই পুরোনো , দৃঢ় ছেলেটা যে কখন কবে কোথায় ওর কাছ থেকে হারিয়ে গেলো ! আর তার বদলে একটা ভুল , লোভী , অহংকারী ছেলে এসে ভর করলো ওর মধ্যে ! ঠিক মেলাতে পারছে না এই সত্যিটা | সব এলোমেলো লাগছে আজ | চারিদিকের অন্ধকারটা যেন আরো গাঢ় মনে হচ্ছে হঠাৎ | মনে হচ্ছে কৃষ্ণেন্দু হারিয়ে যাচ্ছে এই অন্ধকারের মধ্যে , এই কালো রংটার মধ্যে | আর আসে পাশে কেউ আর নেই | ওর হাতটাকে শক্ত করে ধরে রাখার জন্য ! ওকে এই অন্ধকার থেকে টেনে বের করে আনার জন্য ! এইভাবে নিজের মধ্যে শেষ হয়ে যাওয়ার থেকে বাঁচানোর জন্য |
সেদিন এই অন্ধকারের আড়ালে কৃষ্ণেন্দুর হঠাৎ একটা কথা মনে হলো ল্যাপটপটা বন্ধ করে | ওই লোকটা , মিস্টার ভট্টাচারিয়ার আজ একটা মিটিং আছে না তৃষার সাথে ! কাল অফিসে তৃষা কথায় কথায় বলছিলো | তৃষাদের গল্ফগ্রিনের বাড়িতেই তো হবে মিটিংটা | কৃষ্ণেন্দুর কথাটা মনে হতেই গাড়িটা স্টার্ট করলো | রাগে ওর মুখটা এখন লাল হয়ে গেছে | সিসিটিভির দৃশ্যগুলো যেন ভাসছে চোখের সামনে | আজ এই লোকটাকে ও শেষ করে দেবে | লোকটার এগেনস্টে যদি পুলিশ কেস না করেছে তো ওর নাম কৃষ্ণেন্দু না ! ওই শয়তানটাকে মলেস্টেশনের কেসে জেলের হাওয়া খাওয়ালেই শান্তি হবে | আর সমস্ত প্রমাণ তো আছেই হাতের কাছে | এইসব ভেবেই কৃষ্ণেন্দু গাড়ির স্পিডটা বাড়িয়ে সোজা হাজির হলো তৃষাদের বাড়িতে | তারপর প্রায় কিছুই না ভেবে কলিংবেলটা বাজালো | ভেতরে ভেতরে রাগটা আরো বাড়ছে এখন | জানে না মিস্টার ভট্টাচারিয়াকে হাতের কাছের পেলে ঠিক কি করবে ও ! হাতের মুঠোটা রাগে বন্ধ হয়ে আসছে এই মুহূর্তে | পেশিগুলো ফুলছে ওর | এই সময়েই বাড়ির একজন কাজের লোক দরজাটা খুলে দিলো | মিস্টার ভট্টাচারিয়া তৃষার সঙ্গে ওপরের ঘরে আছে | কাজের লোকের মুখে কথাটা শুনে কৃষ্ণেন্দু প্রায় দৌড়ে পা চালিয়ে ওপরের ঘরটার কাছে এসে হাজির হলো | তবে ঘরটায় ঢোকার মুখেই পা-টা হঠাৎ থমকে গেলো , ভেতরের কথাবার্তা শুনে | তৃষার গলার আওয়াজ স্পষ্ট কানে এলো ওর | তৃষা বেশ খুশি খুশি হয়েই এখন মিস্টার ভট্টাচারিয়াকে একটা ড্রিংক বানিয়ে দিয়ে বলছে , ——– ” ইউ আর একচুয়ালি আ জিনিয়াস .. আই মিন ইট .. আমি ঠিক যেইরকম চেয়েছিলাম . আংকেল তুমি সেইরকমই করলে সেদিন পার্টিতে | মানে জাস্ট তোমার জন্য দীপ্তি এক রাতের মধ্যে অফিস , কৃষ্ণেন্দুর বাড়ি , কৃষ্ণেন্দুর লাইফ , সব কিছুর থেকে হাওয়া ! ”
কথাটার উত্তরে মিস্টার ভট্টাচারিয়া বেশ হাসি মুখেই বললো এবার , ———– ” আরে , তোকে আমি সেই ছোটবেলা থেকে চিনি | তোর জন্য এই টুকু করতে পারবো না ! আর কৃষ্ণেন্দুর মতন ছেলের পাশে তোকেই শুধু মানায় | ওই দীপ্তির মতন একটা পাতি মেয়ে ! কোনো ফ্যামিলি ব্যাকগ্রাউন্ড নেই ! কোনো ক্লাস নেই | আমি সেদিন কিছু না করলেও আর কদিন বাদে কৃষ্ণেন্দু এমনিই ওই মিডলক্লাস, বিলো স্ট্যান্ডার্ড মেয়েটাকে নিজের লাইফ থেকে সরিয়ে দিতো | আমি তো জাস্ট কাজটা একটু তাড়াতাড়ি করে দিলাম | ”
লোকটার কথাটা শেষ হতেই কৃষ্ণেন্দু আর নিজেকে আটকাতে পারলো না যেন | দরজার আড়াল থেকে আচমকে বেরিয়ে এসে ঝাঁপিয়ে পড়লো মিস্টার ভট্টাচারিয়ার ওপর | কলার ধরে ওকে সোফা থেকে তুলে গালে একটা থাপ্পড় মারলো জোরে | দীপ্তি আচমকা এরকম কৃষ্ণেন্দু দর্শনে আজ অবাক | তার ওপরে এইভাবে মিস্টার ভট্টাচারিয়ার ওপর হাত তুলে দেয়ায় তো আরোই যেন আকাশ থেকে পড়েছে ! ও খুব উত্তেজিত হয়েই তাই বলে উঠলো , ———– ” কি করছো তুমি কৃষ্ণেন্দু ! মাথার ঠিক আছে তো ? ইউ নো , মিস্টার ভট্টাচারিয়া আমাদে কত ইম্পর্টেন্ট ক্লাইন্ট .. তুমি ওনার গায়ে হাত তুললে কিভাবে !”
কথাগুলো প্রায় এক নিঃশ্বাসে বলে গেলো তৃষা | কিন্তু কৃষ্ণেন্দু ওর কথাটাকে আর এগোতে না দিয়েই এবার বললো ———- ” জাস্ট শাট আপ .. একদম চুপ | আর একটাও কথা না | যা বলার এতক্ষন ধরে বলে দিয়েছো | আর আমি দরজার বাইরে থেকে সব শুনে নিয়েছি | আই কান্ট্ বিলিভ তুমি এতো নোংরা একটা মেয়ে ! একটা মেয়ে হয়ে তুমি আর একটা মেয়ের ওপর ফিজিক্যাল এসল্ট করাও , তাও প্ল্যান করে ! আমি কি লেভেল এর অন্ধ ছিলাম এতদিন ! যে তোমার মতন মেয়েকে চিনতে পারিনি | এনিওয়েজ , আজ থেকে আমাদের কোম্পানির কোনো ফিন্যান্স এর দরকার নেই তোমার বাবার কাছ থেকে | লিগ্যাল ডকুমেন্টস আমার লইয়ার কিছুদিনের মধ্যেই পাঠিয়ে দেবে | আর এরপর আমার অফিসে আর একবারও আসার কথা ভুলেও ভাববে না ! আর রইলো মিস্টার ভট্টাচারিয়ার কথা | তোমার প্রিয় আংকেল ! ওনাকে তো আমি জেল অব্দি পাঠিয়েই ছাড়বো | সেদিন রাতের সমস্ত এভিডেন্স আছে আমার কাছে | এন্ড হি উইল পে ফর হিস্ এভরি সিঙ্গেল একশন অন দ্যাট ডে .. আই প্রমিজ ইউ দিজ… ”
কথাগুলো বলেই কৃষ্ণেন্দু আর এক সেকেন্ডও ওই ঘরটাতে দাঁড়ালো না | ঝড়ের গতিতে বেরিয়ে গেলো তৃষাদের সামনে থেকে | রাগে এখন ওর পুরো শরীরটা জ্বলে যাচ্ছে | জোরে জোরে শ্বাস পড়ছে নিজের অজান্তেই | ভেতরটা যেন শেষ হয়ে যাচ্ছে হঠাৎ | এতো বড়ো ভুল করলো ! তৃষার মতন মেয়েকে দিনের পর দিন বিশ্বাস করে দীপ্তিকে অদেখা করে রেখে দিলো ! এই নোংরা মেয়েটাকে সুযোগের পর সুযোগ দিয়ে গেলো দীপ্তির সঙ্গে ওর ডিস্টেন্স তৈরী করার ! দীপ্তিকে একটু একটু করে ওর লাইফ থেকে সরিয়ে দেয়ার ! শুধুমাত্র বিজনেসে হেল্প করেছে বলে কৃষ্ণেন্দু শেষে মানুষ চিনতে ভুলে গেলো !
চলবে।