তুলির সংসার পর্ব-০১ (আজ শুভ্রর বিয়ে গল্পের দ্বিতীয় খন্ড)

0
44

#তুলির_সংসার
পর্ব-১

(আজ শুভ্রর বিয়ে গল্পের দ্বিতীয় খন্ড)

ভরদুপুরে প্রচন্ড দাবদাহে মানুষ যখন একটু ছায়া একটু বাতাসের জন্যে আকুল হয়ে থাকে আর অমনি এক পশলা বৃষ্টি তাদের সে প্রশান্তি দিয়ে যায় ঠিক তেমনি বন্ধুহীন শুভ্রর জীবনের প্রথম এবং একমাত্র বন্ধু হিসেবে প্রবেশ করলো তুলি। অন্তত শুভ্র সেরকমটাই ভেবেছিলো।

যখন তুলির গৃহপ্রবেশ হলো বাবা বাড়িতে ছিলেন না। তাতে যে শুভ্র বা রেহানা তেমন কষ্ট পেয়েছে তা নয়। ড্রাইভারের কাছে রেহানা জানতে পারলেন মন্ত্রী সাহেব তার এক রক্ষিতার বাড়িতে গিয়েছেন।আগামী কয়েকদিন সেখানেই থাকবেন। আর কোথায় গিয়েছেন, কেনো গিয়েছেন সেটাও স্পষ্ট জানিয়ে দিতে বলেছেন রেহানাকে। আগে লজ্জা পেতেন লুকাতেন এখন সেই লজ্জাও কেটে গেছে। ছেলের বিয়েতে তার মতামত কে প্রাধান্য দেয়া হয়নি সেই ঝালই তুলছেন।

গৃহ প্রবেশের টুকটাক নিয়ম পালনের পর শুভ্র ছাদে চলে গেলো। রেহানার ধারনা ঝোকের মাথায় তাড়াতাড়ি করে বিয়ে করে ফেললেও আজ থেকে নিজের ঘর, বিছানা- বালিশই শুধু নয় পুরো জীবনটা কারো সাথে শেয়ার করতে হবে ভেবেই হয়তো ভয় পাচ্ছে শুভ্র।

ওর মতো চুপচাপ কম কথা বলা অনেকটা অসামাজিক ছেলে পারবেতো তুলির মতো চটপটে মুখরা মেয়ের সাথে সংসার করতে।

রেহানা পানির জগটা নিয়ে সিড়ি দিয়ে উঠার সময় দেখলেন চিলেকোঠার আলোটা জালানো। বাড়ির কাজের লোকেরা সব ঘুমিয়ে পরেছে। কাউকে না ডেকে নিজেই গিয়েছিলেন নিচে খাবার ঘর থেকে পানি আনতে। চিলেকোঠার আলোটা দেখে ধীর পায়ে ছাদে উঠে এলেন।যা ভেবেছিলেন তাই, রাত অনেক গভীর কিন্তু এখোনো শুভ্র ছাদে পায়চারি করছে আর আকাশের দিকে তাকিয়ে কি যেনো বিড়বিড় করছে। এটা শুভ্রর ছোটোবেলার স্বভাব। তারাদের সাথে কথা বলা।
কিন্তু আজ রাতেও…
তুলি মেয়েটা কি ভাববে…

শুভ্র
মাকে দেখে চমকে উঠলো শুভ্র

তুমি এতো রাতে ঘুমাওনি
শরীর খারাপ লাগছে
ডাক্তারকে ফোন দিবো

না বাবা আমি ঠিক আছি

তুমি এখানে বউমা কি ভাববে
যাও ঘরে যেয়ে শুয়ে পরো

জ্বী যাচ্ছি
তুমি যেয়ে শুয়ে পরো আমি একটু পরেই নেমে যাবো
লাভ হলোনা রেহানা দাড়িয়েই রইলেন
শুভ্র জানে যতক্ষন ও নেমে না যাবে উনি এখানেই দাড়িয়ে থাকবেন।
আম্মার হাত থেকে পানির জগটা নিয়ে নিচে নেমে এলো শুভ্র ওনার ঘরের টেবিলে রেখে চলে যাচ্ছিলো

শুভ্র

হুম বলো

আমি জানি হুট করে একটা মানুষকে নিজের জীবনের অংশ বানানো সহজ নয়।কিন্তু আমার কেনো যেনো মনে হচ্ছে তুলি মেয়েটা সাধারন কোনো মেয়ে নয়। যাকে তুমি পছন্দ করেছো সে সাধারন হতেই পারেনা।

তুলি সাধারন মেয়ে নয় এজন্যেই এতো তাড়াহুড়ো
করে ওকে বিয়ে করতে চেয়েছিলো শুভ্র কিন্তু আজ যখন তুলি ওর বউ হয়ে, ওর ঘরে ওর জন্যেই অপেক্ষা করছে। নিজের স্বভাবজাত দ্বিধা কিছুতেই কাটাতে পারছেনা ও।

মার দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে নিজের ঘরের দিকে পা বাড়ালো শুভ্র…

#
যাক বাঁচা গেলো আমিতো ভেবেছিলাম আপনি বুঝি সিনেমার বড়লোকের ছেলেদের মতো বাসর রাতে বউকে রেখে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিতে চলে গেছেন।

আপনার কি অবস্থা

ভয়াবহ অবস্থা আর কিছুক্ষন এভাবে থাকলে রক্তশুন্যতা হয়ে যেতে পারে। আমার রক্তের গ্রুপ আবার ও নেগেটিভ, যা কিনা সহজে পাওয়া যায়না।

কেনো কি হলো

আমার ধারনা ছিলো মশা শুধু গরীবদের বাড়িতেই থাকে। বড় লোকের বাড়িতে যেয়ে মশা থাকে সেটা প্রথম জানলাম।

তুলির হড়বড় করে বলা কথাগুলোতেই এতক্ষনের সব ভয়,দ্বিধা,সংকোচ কেটে গেলো শুভ্রর। এ মেয়েটাকে এজন্যেই ওর এতো ভালো লাগে।

সরি কাজের লোকেরা মনে হয় সন্ধ্যার আগে জানালা বন্ধ করতে ভুলে গেছে।
আমি মশারি টানিয়ে দিচ্ছি

অনেক খুঁজেও কোথাও মশারি পেলোনা শুভ্র এমনকি কয়েল ও না।

শুভ্র অস্থির হয়ে সব গুলো কাবার্ড ড্রয়ার খুলছে। মশারি খুঁজে না পাওয়াতে সে খুবই বিচলিত বোধ করছে। আর তাদের বাড়ির মশার কার্যকলাপে তাকে খুব লজ্জিতও মনে হচ্ছে।

দৃশ্যাটা বেশ উপভোগ করছে তুলি। শুভ্রকে জ্বালাতে মজাই লাগছে। কিন্তু কেনো যেনো একটু মায়াও লাগলো। আসলে এতো গোবেচারা টাইপের মানুষ গুলোকে বেশি কষ্ট দেওয়াও কঠিন তারা বুঝতেই পারেনা কাজটা তাদের ভোগানোর জন্যে করানো হচ্ছে।

থাক থাক আর খোঁজা লাগবে না
আজকেতো আমাদের বাসর রাত।
রাত তো প্রায় শেষই হয়ে গেলো বাসর ভোর বলতে পারেন। আসেন দুজনে এক সাথে গল্প করি আর মশার কামড় খাই।

তুলি, ছাদে যাবেন?
ছাদে বাতাস আছে, মশা নেই আর সূর্যোদয়ও দেখা যাবে।

তুলিদের বাসা থেকে বেশ দূরে একটা ছাদ দেখা যেতো। অসম্ভব সুন্দর বাগান করা ছাদে। গাজেবো, দোলনা টোলনা দিয়ে এলাহী অবস্থা। ছোটোবেলায় তুলির খুব ইচ্ছা ছিলো ওই বাড়ির কোনো ছেলেকে বিয়ে করবে। তাহলে ওদের ছাদে যেতে পারবে। আজ শুভ্রদের ছাদে এসে মুগ্ধ হয়ে গেলো। কেনো যেনো বেশীরভাগ মানুষই বাড়ি বানানোর পর সবচেয়ে অবহেলা করে ছাদকে, অনেকতো রেলিং ও দেয়না।

আপনাদের ছাদতো অনেক সুন্দর

আম্মা আমার জন্যে করে দিয়েছেন,
আমি ছাদেই বেশিরভাগ সময় থাকিতো তাই

আপনার আম্মা আপনাকে অনেক ভালবাসেন

হুম অনেক

আপনার বাবার থেকেও বেশি

সেটা বলতে পারবোনা।

কেনো

বাবাতো আমার আপন বাবা আর আম্মাতো উনার দ্বিতীয় স্ত্রী মানে আমার স্টেপ মম।
যদিও আম্মার সাথেই আমার বেশী ঘনিষ্টতা

আর আপনার মা…

মারা গেছেন

আই এম রিয়েলি সরি

সরি হওয়ার কিছু নেই মার কথা বা তার কোনো স্মৃতি নেই আমার। আর আম্মা যে আমার স্টেপ মম সেটাতো আমি ছোটোবেলায় জানতামই না এতোখানি ভালবেসে বড় করেছে আমাকে।

যেদিন জানতে পারলাম খুব কষ্ট পেয়েছিলাম। এরপর থেকে একই রকম ভালবাসা যত্ন পেয়েছি আম্মার কাছ থেকে কিন্তু কেনো জানি আর আগের মতো তাকে ভালবাসতে পারিনি। এজন্যে না যে উনি আমার মা নন বরং এজন্যে যে উনি সত্যি লুকিয়েছিলেন।

যে করেই হোক আজই তুলির শুভ্রকে বলতে হবে জহির মামার কথা। কিন্তু বুঝতে পারছে না কি করে বলবে…

শুভ্র সাহেব…
আমার খুব জরুরি একটা কথা বলার ছিলো আপনাকে

আমি জানি আপনি কি বলবেন

না আপনি জানেন না
এটা খুবই গুরুত্বপূর্ন কথা আমার আজ রাতেই আপনাকে বলা লাগবে।

তুলির ব্যস্ত সমস্ত ভাব দেখে হেসে ফেললো শুভ্র।
শুভ্রর হাসি এতো সুন্দর এই প্রথম খেয়াল করলো তুলি। ছেলে মানুষের হাসিও এতো সুন্দর হয়..!

শুভ্র সাহেব আপনি চোখ নামিয়ে রেখেছেন কেনো..?আমার দিকে তাকান, মন দিয়ে আমার কথা শুনুন।

জহির মামার ব্যাপারটাতো..?
আপনি তাকে অনেক ভালবাসেন। কিন্তু উনি আপনাকে না আপনার ছোটবোনকে ভালবাসেন। উনি আপনার জীবনের প্রথম প্রেম যাকে আপনি কিছুতেই ভুলতে পারবেন না।ইত্যাদি…..তাইতো..?

এগুলোতো আমি আপনাকে আগেই বলেছি কিন্তু আপনার ধারনা অন্য কথা গুলোর মতো এটাও মিথ্যা ছিলো। কিন্তু তা নয়…

জানি…
আপনার জহির মামার সাথে আমার কথা হয়েছে। কি করে আপনাদের পরিচয়। কিভাবে উনি অসুস্থ হবার পর আপনি অচানা অজানা একটা মানুষকে দিন রাত জেগে সেবা করেছেন।সব কিছু…
আর এভাবেই আপনারা একে অপরের প্রেমে পরেন।

আমরা প্রেমে পরি মানে..? বলেন আমি প্রেমে পরি,
পুরো ব্যাপারটাই তো এক তরফা

আসলে কি জানেন অনেক বুদ্ধিমতি মেয়েরাও প্রেমের ক্ষেত্রে বোকা হয়ে যায়।

আপনি কি বলতে চাচ্ছেন।

উনিও আপনাকে ভালবাসে আর আপনার থেকে অনেক বেশি ভালবাসে।

উনি বলেছেন আপনাকে…

এটা বলা লাগেনা

আপনি সেটা বুঝতে পারলে আমাকে বিয়ে করলেন কেনো।

করতাম না যদি উনার সাথে আগে দেখা হতো। কারেন্ট ছিলোনা অন্ধকারে দম বন্ধ হয়ে আসছিলো আপনার বোনকে জিজ্ঞেস করে ছাদে গিয়েছিলাম সেখানেই উনার সাথে দেখা হয়।

জহির মামা সত্যি আমাকে ভালবাসে..?

তুলির ব্যাকুলতা শুভ্রর হৃদয় ছুঁয়ে দিলো।

তাহলে যে উনি সব সময় তোয়ার সাথে কথা বলতেন।
তোয়াকে তো আম্মাজান ও বলতেন না।
তোয়ার সাথে কতো মজা করতেন। এমনকি তোয়ার মতো এমন রুপবতী মেয়ে উনি জীবনেও দেখেন নি সেটাও বলেছিলেন একদিন।

আপনি আপনার নিজের ভালবাসায় এতোই অন্ধ হয়ে গিয়েছিলেন যে সামনের মানুষটার এ সকল প্রচেষ্টা যে আপনার প্রতি তার ভালবাসা লুকানোর জন্য করছেন সেটা আপনি বুঝতেই পারেন নি।

কিন্তু এখন…

তুলি, ছোটবেলা থেকেই আমি একা একা বড় হওয়া একটা মানুষ, বন্ধুত্ব ভালাবাসা এগুলো আমি দূর থেকেই দেখেছি। নিজের জীবনে কখনো পাইনি। আর সে জন্যেই বোধহয় এই সম্পর্কগুলোর প্রতি আমার শ্রদ্ধাও বেশি। আপনি ভয় পাবেন না।
তীব্র ভাবে ভালবাসা দুজন মানুষের মাঝে আমি কখনোই থাকবোনা।

চলবে…