#তুলির_সংসার
পর্ব-৫
আরে কি যে বলেন আমরা কিছুই মনে করিনি।
আপনি কতো ব্যস্ত মানুষ সেটা কি আর আমরা না জানি।
কেমন লাগলো আপনাদের মেয়ের শশুর বাড়ি
খুব ভালো এক কথায় অসাধারন
বুঝলেন মন্ত্রী সাহেব মেয়ের আমার রাজ কপাল। নাহলে হঠাৎ করে এমন বিয়ের সম্বন্ধ আসলো আর হুট করে বিয়েটা হয়েও গেলো।ছেলে দেখতে যেমন সুন্দর তেমন ধনী পরিবার।
বিয়াইন সাহেব আমাদের তুলি মাও কিন্তু অনেক রুপবতী এবং গুনবতী। আর আপনি ওনাকে মন্ত্রী সাহেব বলছেন কেনো।ভাই বা বিয়াই বলতে পারেন।
সমস্যা কি রেহানা যার যে যোগ্যতা তাকে সেই নামে ডাকছে ডাকুক না।
ঠিক বলেছিনা জামান সাহেব?
জ্বী
আপনি যেনো কি চাকরি করেন
রুপালী ব্যাংকে আছি।
বিয়ের সময়তো শুনেছিলাম ম্যানেজার
জ্বী ভুল শুনেছেন আমি এখোনো হেড ক্যাশিয়ার।
আর বলবেন না আজ পাঁচ বছর হতে চললো তুলির বাবার প্রমোশনটা ঝুলে গেছে।
কোনো সমস্যা নেই ভাবী আমি বলে দিবো আপনি একদম চিন্তা করবেন না।
নীলুফারের চেহারা খুশিতে ঝকমক করছে। প্রভাবশালী আত্মীয় থাকার এইতো সুবিধা।
জামান সাহেব তাড়াতাড়ি বাধা দিয়ে বললেন। না ভাই আপনি দয়া করে সেরকম কিছু করবেন না। আমার ভালো লাগবে না।
সংকোচ করে করেই আমাদের বাঙ্গালী মধ্যবিত্ত মরলো। আপনি আমার ছেলের শশুর আপনার জন্যে এতোটুকু করতে পারলে আমি খুশি হবো।
শুভ্র বিরক্ত হয়ে বললো বাবা উনি চাচ্ছেন না শুধু শুধু তুমি ফোর্স করছো কেনো।
আরে এতেতো আমারও লাভ আছে।ব্যাংকের ক্যাশিয়ারের মেয়ের সাথে ছেলে বিয়ে করিয়েছি কাউকে বলতেও বাধে।
জামান সাহেব লজ্জায় মাথা নীচু করে বসে আছেন।
শুভ্র কিছু বলতে নিয়েছিলো রেহানা ইশারায় থামিয়ে দিলেন।
তুলি আর তোয়া রাগে ফুসছে।একমাত্র নিলুফার বেগমই অত্যাধিক আনন্দিত।
কথা যখন তুলেছেনই মন্ত্রী সাহেব আমার আরেকটা আর্জি আছে আমাদের পাড়ার এক ভাই। তুলির ছোটবেলার বান্ধবী মহুয়ার বাবা। আপনি আমার বিয়াই সাহেব শুনে খুব করে ধরেছে, ওনার যেনো রিটায়ারমেন্টের কি ঝামেলা চলছে।
মা মহুয়া আমার বান্ধবী না
ওই হলো এক স্কুলে পড়লে বান্ধবীই হয়।
কোনো সমস্যা নাই ওনাকে রবিবার আমার অফিসে আসতে বলেন। ঠিকানা শুভ্র দিয়ে দিবে। ইনশাল্লাহ কাজ হয়ে যাবে।
নীলুফার বেগম তুলির দিকে তাকিয়ে চোখ নাড়িয়ে ইশারা করলেন।
তুলি লক্ষ্য করলো তোয়া যে খেপে গেছে এখানে আর কিছুক্ষন থাকলে নির্ঘাত শুভ্রর বাবাকে কিছু বলে বসবে।
মা তুমি না বলছিলে বাসায় কেউ নেই উপর তলার আন্টি ইন্ডিয়া গিয়েছেন। এতক্ষন বাসা খালি রাখা কি ঠিক হবে।
সাথে সাথে জামান সাহেব উঠে গেলেন।
জ্বী আমরা তাহলে আসি আজ। তোয়ারও পরীক্ষা পড়তে
হবে আর বাসাও খালি।
জ্বী অবশ্যই।
তোবারক হোসেনের সাথে হাত মেলাতে মেলাতে তুলির বাবা বললেন ভাই খুব খুশি হবো যদি আপনারাও সপরিবারে আমার গরীবখানায় দুটা ডাল ভাত খেতে আসেন।
আহা কি যে বলেন না জামান সাহেব ডাল ভাত তো আমার প্রিয় খাবার কিন্তু সমস্যা হলো আপনাদের গলি যে সরু আমার প্রটোকলের গাড়ি ঢুকলে জ্যাম লেগে যাবে। এলাকার লোকের কষ্ট হবে। জনসাধারনের প্রতিনিধি হয়ে জনসাধারণের ভোগান্তি কি করে বাড়াই বলেন। তবে সমস্যা নেই শুভ্র আর ওর মা চলে যাবে।
তোয়া প্রায় খেকিয়ে বলে উঠলো বাবা আমার অনেক পড়া আছে চলো তাড়াতাড়ি
সবাই শুভ্রর সাদা গাড়িতে যেয়ে বসেছে। ড্রাইভার সাহেব আপনি কি এক মিনিট ওয়েট করতে পারবেন বলেই তোয়া নেমে গেলো।
তুলি আর শুভ্র বিদায় দেয়ার জন্যে দাঁড়িয়েছিলো।
শুভ্র ভাই আপনি কিছু মনে না করলে আমি আপার সাথে একটা গোপন কথা বলতে চাই।
শিওর
আপা তুমি যেটা বলেছিলে আমার আর জহির মামার ব্যাপারটা সেটা সত্যি।
মানে
আমি উনাকে ভালবাসি
সেটাতো আমি আগেই জানতাম
তুমি জানতে আমি জানতাম না, উনি চলে যাবার পর আমি রিয়েলাইজ করি
এসব কথা আমাকে বলছিস কেনো
কারণ আমার আগে থেকে তুমি উনাকে ভালবাসো।
আমার থেকে তোমার উনার উপর বেশি অধিকার, এমনকি ফ্লোরেন্স নাইটেঙ্গেলের মতো সেবা করে তুমি ওনার জান বাঁচিয়েছো।
তুমি কি ওনাকে এখোনো ভালবাসো?
না একদম না, আমি ওনাকে এখন চরম ঘৃনা করি
তুমি সত্যি বলছো
১০০ ভাগ সত্যি
দেখো আবার, আমি যদি ওনাকে বিয়ে করি তুমি কষ্ট পাবেনাতো?
একদম না, তবে আমার মনে হয়না উনি তোকে বিয়ে করতে রাজী হবে। উনি অত্যান্ত আদর্শবান মানুষ
তুমিতো বোকা তাই উনি তোমার থেকে পিছু ছাড়িয়েছে,
আমার ক্ষেত্রে এতো সহজে পার পাবেনা। আমি পুরো প্ল্যান সাজিয়ে রেখেছি। আমার ট্র্যাপ থেকে মুক্তি পাওয়া অসম্ভব।
তোয়ার কথায় হেসে ফেললো তুলি। জোড় করে কি ভালবাসা আদায় করা যায় বল।
কেনো আপা তুমি জানোনা এভরিথিং ইজ ফেয়ার ইন লাভ এন্ড ওয়ার
তোর যা খুশি কর। আমার কোনো আপত্তি নেই।
থ্যান্কইউ। আমি জানতাম তুমি এই কথাই বলবে। আমার জন্যে তুমি জীবন বিসর্জন দিতে পারবে আর ভালবাসা তো কোনো ব্যাপারই না। তবে আপা তোমার লস নেই। জহির মামার থেকে কোটি গুন বেশি ভালো একটা ছেলে তোমাকে কঠিন ভাবে ভালবেসে ফেলেছে।
এরকম দেবদূতের মতো কোনো ছেলে আমাকে ভালবাসলে আমি কবে জহির মামাকে ভুলে যেতাম।
কি তোয়া তোমাদের পাঁচমিনিট কি আর শেষ হয়না।তোমার বাবা ডাকছেন।
শেষ হয়ে গিয়েছে ভাইয়া।
কি এমন কথা হচ্ছিলো দুই বোনের।
আপা বলছিলো, প্রথমে না বললেও, এখন ও আপনার প্রেমে পরে গেছে। কিন্তু কোনো ভাবেই আপনাকে বলতে পারছেনা।
আপা সরি রাগ করিস না আমি জানি তুই জীবনেও বলতে পারবিনা তাই আমি ই বলে দিলাম।
শুভ্র আর তুলিকে হতবাক করে হাসতে হাসতে গাড়িতে যেয়ে বসলো তোয়া।
চলবে…