প্রেমে পরা বারণ পর্ব-০১

0
60

#প্রেমে_পরা_বারণ
সূচনা পর্ব
#Nosrat_Monisha

লাল টুকটুকে বেনারসির সাথে গা ভর্তি হীরের গয়না পরে বধূবেশে খাটের উপর বসে আছে নির্জনা।
হন্তদন্ত হয়ে সেই ঘরে এলো তার ফুপু রৌশনারা বেগম।
–এইজন্য কয়, পিঠের ছাল পেটে লাগে না। পাপিয়া কার লগে তর বিয়া দিতাছে জানোছ? ছেলের তো মাথা খারাপ, বাইরে পাগলামি করতাছে । সৎ মাইয়া বইলা একটা পাগলের লগে বিয়া দিবো? আজকে তোর জায়গায় যদি নিজের পেটের মাইয়্যা হইতো তবে কি এই বজ্জাত মহিলা এমনটা করতে পারতো?কিন্তু তুই কেন বোকার মতো একটা পাগলকে বিয়ে করছিস ? এখনও সময় আছে পালিয়ে যা।
ফুপু রৌশনারা বেগমের কথার প্রতিত্তোরে কোন কিছুই বলছে না নির্জনা। বরং প্রাণহীনভাবে শূন্য দৃষ্টিতে চুপচাপ খাটের উপর বসে আছে। যেন সে কিছুই শুনতে পাচ্ছে না।
তার এরূপ আচারণ দেখে রৌশনারা বেগম আবার বলেন,
–অতীত নিয়া পইরা থাকলে কুনো লাভ নাই। আগের কতা সব ভুইলা যা। পলাইয়া যা।
ঠিক তখনই নির্জনার সৎমা পাপিয়া আক্তার ঘরে প্রবেশ করে বলে,
–আপা আপনার কথা শেষ হলে একটু বাইরে যান। নির্জনাকে কিছু গয়না পরাবো।
– গয়না পইরা কি অইবো? ইস্ত্রীলোকের আসল গয়না অইলো তার স্বামী আর সেখানেই তো তুমি আমার ভাইজির কপাল পুইড়া দিতাছো। আমার ভাইটা মরার ভালই ফায়দা লুটছো পাপিয়া। নিজের সুবিধার লাইগ্যা মাইয়াডারে বেইচা দিতাছো। নওশাদ বাইচ্যা থাকলে এমন একটা পাপ তুমি করতে পারতা?
–যে মানুষটা নেই তার কথা তুলে কি লাভ আপা?
–সেই তো আমার ভাই থাকলে কি আর তার মেয়েকে একটা পাগলের লগে বিয়া দিতে পারতা?এতে বড় অন্যায় করতে তোমার বুকটা কাঁপলো না?
পাপিয়া আক্তার একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে নিজের মাথা ঠান্ডা করে বলেন,
–আপা কথায় কথা বাড়ে। বিয়েতে এসেছেন শান্তিতে খেয়ে-দেয়ে চলে যান।
–এখন তো যাইতেই কইবা। আমার ভাই আর ভাইপো মরেছে এখনো এক বৎসর হয় নাই আর তুমি সব আত্মসাৎ করতে উইঠা পইরে লাগছো। তোমার কোনদিন ভালা অইবো না।
তাচ্ছিল্যের সাথে পাপিয়া বলে,
–আমার আর খারাপের কি বাকি আছে আপা? স্বামী মারা গেছে, ছোট্ট ছেলেটা দিনের পর দিন মৃত্যু যন্ত্রণা ভোগ করে মারা গেছে । আর আত্মসাৎ এর কথা বলছেন? ছোট চাকরির জমানো দু-এক টাকা ছিলো যার সবটাই হাসপাতালেই খরচা হয়ে গেছে। এখন এই ভিটেমাটা ছাড়া আপনার ভাইয়ের আর কি আছে, বলুন? এটাও যে আপনার অন্য ভাইয়েরা খুব তাড়াতাড়ি দখল করে নিবে তা আমি জানি।

– এইসব তোমারই কর্মের ফল। সারা জীবন সৎ দেইখ্যা মাইয়্যাডারে অবহেলা করছো। তাই আল্লাহ তোমার বুক খালি কইরা দিছে।
–বিশ্বাস করেন আপা আপনার সাথে তর্ক করার বিন্দুমাত্র ইচ্ছা আমার নেই। আমি নির্জনাকে অবহেলা করেছি কি-না তা আমি আর আমার আল্লাহ ভালো করেই জানেন। এখন দয়া করে আপনি একটু বাইরে যান।

–যাচ্ছি তয় আমি বাঁইচ্যা থাকতে তোমাকে এই অন্যায় আমি করতে দিতাম না। নির্জনার মা-বাপ নাই তো কি অইছে? আমি আছি, তাছাড়া নির্জনার মামা-চাচারা এখনও আছে। তুমি একটা পাগলের লগে বিয়া দিয়া তার জীবন নষ্ট করে দিবে এটা আমি অইতে দিবো না।

তাচ্ছিল্যের সাথে মিথ্যা হাসি দিয়ে পাপিয়া বলে,
– আপনাদের আমার অনেক দেখা হয়েছে আপা। ঠিকই বলেছেন এখনো বছর ঘুরে নি যে সব ভুলে যাবো।বিপদের সময় তো আপনাদের কাউকে পাশে পাইনি। নিজের ভাইকে রক্ত দেওয়ার জন্যও আপনারা কেউ আসেন নি। বরং এটা বলে ফোন রেখে দিতেন যে, আমাদের সাহায্য করে আপনারা বিপদে পরতে পারবেন না। এমনকি তার লাশ নিয়ে বাড়ি ফিরবো সেই এম্বুলেন্সের ভাড়াটাও আমার ধার করতে হয়েছে।

পাপিয়ার এই এক কথায় রৌশনাআরা থোতা মুখ ভোঁতা হয়ে গেলো তিনি কোন প্রতিত্তোর না করে ধুপধাপ পা ফেলে ঘর থেকে বের হয়ে যায়।


অস্ট্রেলিয়া, মেলবোর্ন।।
নির্জনার অসংখ্য ছবি দিয়ে একটা ঘর সাজানো। সেগুলোকে সাতাশ/আটাশ বছরের একজন যুবক নেশালো নয়নে মুগ্ধ হয়ে দেখছে আর বলছে,
–তেমার মায়া ভরা মুখটা দেখি না কতদিন সুইটহার্ট । কবে যে বাবা বাংলাদেশে সব ঠিক করবে আর আমি তোমার কাছে যেতে পারবো।


রৌশনারা বের হতেই পাপিয়া আক্তার দরজার ছিটকিনি তুলে দিয়ে নির্জনার পাশে বসে গলায় একটা চেইন আর হাতে দুটো চিকন চুড়ি পরিয়ে দিতে দিতে বললেন,
–এগুলো তোমার মায়ের। এতো বছর আমার কাছে ছিলো। শত কষ্টেও হাতছাড়া করিনি ।
নির্জনা তখনও চুপ।
পাপিয়া আক্তার একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মেয়ের মাথায় হাত রেখে বলেন,
–এখনো সময় আছে তুমি চাইলে এখনও বিয়েটা আটকাতে পারো। আমি আগেও বলেছি, প্রয়োজনে তোমাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দেবো। তোমার ফুপি কথায় যুক্তি আছে, একটা পাগলকে বিয়ে করে জীবনটা নষ্ট করার কোন মানে হয় না। তাছাড়া যে ছেলের স্মৃতি এগারো বছর বয়সে আটকে আছে তাকে বিয়ে করে তুমি ভালবাসা পাবে না।

মায়ের কথায় চমকে আতঙ্কিত হয়ে উঠে নির্জনা।
–না আম্মু ভুলেও ভালোবাসার কথা উচ্চারণ করবে না। এই সর্বনাশা ভালোবাসার কারণে রক্ত আর লাশের বন্যা বয়ে গেছে। আমি সব হারিয়েছি। চাই না আমার ভালবাসা। তাছাড়া যেখানেই পালিয়ে যাইনা কেন শকুনের দৃষ্টির বাইরে তো যেতে পারবো না। একবার না বারবার চেষ্টা করেছি ফলাফল নতুন আরেকটা লাশ। এরচেয়ে বিয়েটা হয়ে যাক জাফর স্যার যখন কথা দিয়েছেন তিনি যেকোনো মূল্যে আমাদের রক্ষা করবেন।
বলেই সে কাঁদতে থাকে।
–নির্জনা!!
বলে পাপিয়া ক্রন্দনরত মেয়েকে বুকে মিশিয়ে নেয়। এইটুকু বয়সে মেয়েটা এতকিছু সহ্য করছে। পাপিয়া আক্তারের আজ মনে হচ্ছে তার চেয়ে দুর্ভাগা মা পৃথিবীতে নেই। কারণ তিনি চাইলেও মেয়ের দুঃখ দূর করতে পারছে না। বরং বাধ্য হয়ে তাকে তুলে দিতে হচ্ছে এক অনিশ্চিত ভবিষ্যতের হাতে ।


জাফর সিদ্দিকীর কোলে ক্লান্ত হয়ে মাথা রেখে তার ছোট ছেলে অর্ক শুয়ে আছে। বড্ড নিষ্পাপ দেখাচ্ছে তাকে।
বিয়ে বাড়িতে মানুষ দেখে উত্তেজিত হয়ে পড়েছিল। অনেক চেষ্টার পর ছেলেটাকে শান্ত করতে পেরেছেন তিনি।
স্ত্রীর মৃত্যুর পর এই ছেলেকে বুকে আগলে রেখেছেন তিনি। কিন্তু রাজনীতি করার ফলে তার শত্রুর অভাব নেই। তাই সবসময় এই ভয়ে থাকেন তার কিছু হয়ে গেলে অর্ককে কে দেখবে? যদিও তার অপর দুই সন্তান বড় ছেলে অর্ণব আর মেয়ে আরশি অনেক ভালো। কিন্তু তাদেরও তো একদিন সংসার হবে তাই তারা তো চাইলেও সারা জীবন পাগল ভাইয়ের দায়িত্ব নিতে পারবে না। এইসব চিন্তায় তার ঘুম আসতো না।
জাফর সিদ্দিকী দিনরাত উপর ওয়ালার কাছে দোয়া করতেন ছেলেটার একটা গতি হয় । আল্লাহ তার দোয়া কবুল করে নির্জনাকে পাঠিয়েছেন।
মেয়ে হিসেবে নির্জনা বাবা নওশাদ রহমানের মতোই বিশ্বস্তত আর দ্বায়িত্বশীল। একবার বিয়েটা হয়ে গেলে নিজের স্বামীর প্রতি সে সব কর্তব্য পালন করবে।

তার ভাবনার মাঝখানে ছেদ পরে রৌশনারা বেগমের চিৎকারে। তিনি চেঁচিয়ে জাফর সিদ্দিকীকে হুঁশিয়ার করছে,
–এখানে বইয়্যা কোন লাভ নাই মন্ত্রী সাব। আমার ভাইজীরে বিয়া দিমু না। তাই নিজের পাগলা ছেলেরে নিয়া আমার ভাইয়ের বাড়ি থেকে বাইর অইয়্যা যান।
তিনি সমর্থনের জন্য নিজের চাচা-মামাদের দিকে তাকিয়ে দেখে তারা নিশ্চুপ। বিয়ে ভাঙার বদলে নির্জনার ছোট চাচা বলে,
–আপা ঝামেলা করিস না। এই মাইয়্যার কেচ্ছা-কেলেঙ্কারির লাইগা আমার ভাই মরছে। তাও ভালো বিদায় হইতাছে এইটাই অনেক।
নির্জনার একমাত্র মামা বলে,
–একদম। আমার বোন মইরা যাওয়াতে নওশাদ মিয়া তারে মানুষ করতে পারে নাই। আপনে চিন্তা কইরেন না বড়লোক ঘরে বিয়া হইতাসে সে সুখই থাকবো।
রৌশনারা বেগমে তাদের মুখে এমন কথা শুনে আরও খেপে যায়। তিনি তাদের উদ্দেশ্য বলে,
–তোমরা মামা-চাচা নামের কলংক। কই বিয়া আটকাইবা তা-না কইরা মাইয়াডারে গাল-মন্দ করতাছো।
তিনি তাদের আরও কিছু অশ্রাব্য গালিগালাজ করে। এরপর তিনি অর্ককে নিয়ে কথা বলা শুরু করে। সেটার প্রেক্ষিতে জাফর সিদ্দিকীর মেয়ে আরশি তার দিকে তেড়ে আসতে নিলে জফর সিদ্দীকি মেয়েকে হাতের ইশারায় থামিয়ে মুচকি হেসে বলে,
–নওশাদ আমার বিশস্ত কর্মচারি ছিলো তার বড় বোন সেই জন্য সম্মান দিচ্ছি। নাহলে জাফর সিদ্দিকীর সাথে উঁচু গলায় কথা বলা মানুষের পরিণাম খুব একটা ভালো হয় না। আর আপনি তো গালিগালাজ করছেন। একটা কথা বলি আপনি বিয়ে বাড়ির অতিথি মাত্র। মেয়ের গার্জেন না। বাবা-ভাইয়ের অবর্তমানে বিয়ে হবে কি হবে না সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার অধিকার শুধু মাত্র মেয়ে আর মেয়ের মায়ের আছে।
পিছন থেকে পাপিয়া বলে,
– আমিও আপাকে তাই বলছিলাম স্যার। আপনি কাজিকে বলুন বিয়ে শুরু করতে। নির্জনা তৈরি।
জাফর সিদ্দিকী কিছু বলবে তার আগে রৌশনারা চিৎকার করে উঠে, ,
–কিয়ের তৈরি? আমি বাইচ্যা থাকতে এ বিয়া কিছুতেই অইতে দিমু না।
তখন জাফর সিদ্দিকী রক্তিম চোখে তার দিকে তাকিয়ে কড়া গলায় বলে,
–প্রয়োজনে আপনার লাশের উপর বিয়ে পড়ানো হবে। তবুও আজ এ বিয়ে কেউ আটকাতে পারবে না।
এবার রৌশনারা বেগম চুপসে যায়।
জাফর সিদ্দিকী পাপিয়া আক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–আপনি গিয়ে নির্জনা মায়ের পাশে বসুন।


বিয়ে পড়ানো শুরু হয়।
প্রথমে কাজি নির্জনার কাছে অনুমতি নিতে যায়।
কবুল বলার আগ মুহূর্তে ভারী স্বর্ণালংকারের মাঝখানে গলায় থাকা একটা সরু পাতলা চেইনে ঝুলানো লকেটকে মুষ্টিবদ্ধ করে চোখ বন্ধ করে নির্জনা মনে মনে বলে,
–আমাকে মাফ করে দিও, পরিস্থিতির কাছে আমাদের ভালবাসা হেরে গেছে। তবে কথা দিচ্ছি সারাজীবন তোমাকে ভালবেসে যাবো।
এরপর একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে কবুল বলে দেয়।
অন্যদিকে অর্ক জেদ ধরেছে সে কবুল বলবে না। জাফর সিদ্দিকী তাকে বুঝাচ্ছে,
–বাবা আমার কবুল বলে দাও।

অর্ক ( বাচ্চাদের গলায়) বলে,
–না না! আমি কবুল তবুল বলবো না। আমি জানি কবুল বললে বিয়ে হয়ে যায়। আমি কি বড় হয়েছি নাকি যে বিয়ে করবো?
–অর্ক সোনা বিয়ে করা ভালো। বিয়ে করলে সুন্দরী বউ পাওয়া যায়।
–না না বউ সুন্দরী না। বউ ডাইনি, পেত্নী।

অবশেষে জাফর সিদ্দিকী তাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে,
– বেশ তুমি যদি বিয়ে না করো আমি আর তোমার সাথে কথা বলবো না। আর কোনদিন বাড়িও যাবো না।
এভাবে আরও অনেক কথা বলেন তিনি। এতে অর্ক ভয় পেয়ে যায় । আর কবুল বলে দেয়।

বিয়ে শেষে পাপিয়া আক্তার নির্জনাকে নিয়ে অর্কের পাশে দাঁড় করায়। এরপর তার হাতে নির্জনার হাত দিয়ে বলে,
–তেমাকে বললে তুমি বুঝবে কি-না জানি না তবুও বলছি, নির্জনা তোমার স্ত্রী। স্বামী হিসেবে আজ থেকে তার সকল দায়িত্ব তোমার । মেয়েটা আমার জনম দুঃখী। তাকে দেখে রেখো।
অর্ক অদ্ভুতভাবে এখানে কোন প্রতিক্রিয়া করে না।

এরপর জাফর সিদ্দিকী নির্জনা আর অর্কের হাত ধরে বলে,
–হয়তো তোমার সাথে আমি অন্যায় করেছি কিন্তু বাবা হিসেবে আমি নিরুপায়। আজ থেকে আমার ছেলের সব দায়িত্ব তোমার প্লিজ কখনো ছেড়ে যেও না।

বিদায়বেলা অর্ক নির্জনার হাতে কামড়ে দিয়ে জেদ ধরে বলে,
–এটা তো একটা পেত্নী আমাকে খেয়ে ফেলবে । ওর সাথে আমি বাড়ি যাবে না।
এরপর ভীষণভাবে চিৎকার চেঁচামেচিও শুরু করে। ফলে বাধ্য হয়ে জাফর সিদ্দিকী অর্ককে আরশি আর তার ডাক্তার প্রীতির সাথে গাড়িতে উঠিয়ে দেয় ।
আর তিনি নির্জনাকে নিয়ে অন্য গাড়িতে উঠেন। গাড়িতে উঠার সময় জাফর সিদ্দিকী পাপিয়া আক্তারকে উদ্দেশ্য করে বলে,
–আপনিও চলুন না ভাবি।
পাপিয়া মাথা নাড়িয়ে না করে বলে,
–না স্যার! আমি তো আগেই বলেছি এখানে আমার স্বামী ছেলের কবর আছে। তাদের ছেড়ে আমি কোথাও যেতে পারবো না।
–তবুও আপা আপনি সাথে গেলে ভালো হতো। ওরা অনেক ভয়ঙ্কর,আপনার ক্ষতি করতে পারে।
স্মিত হাসির দিয়ে পাপিয়া আক্তার বলে,
–করলে করবে আমি আর ভয় পাই না। এতদিন মেয়েটাকে নিয়ে বিপদে ছিলাম আজ থেকে আমি সে চিন্তামুক্ত।
কিন্তু এতসবের মাঝখানে একেবারেই প্রাণহীন থাকে নির্জনা। সে ভালোমন্দ কিছুই বলে না।



নির্জনার বিয়ে শেষ হতেই মেলবোর্নে সেই যুবকটির ফোনে একটা কল আসে, অপর পাশ থেকে কিছু বলতেই রাগে ফোন ছুড়ে ফেলে বলে,
–কাজটা তুমি একদম ঠিক করো নি নির্জনা। আর বাবা তুমি অনেক বড় ভুল করেছো। কি ভেবেছো তুমি, নির্জনা বিয়ে করছে বলে আমি তাকে ভুলে যাবো? তাহলে সরি বাবা তোমার চেয়ে বোকা পৃথিবীতে আর কেউ নেই। নির্জনা আমি কালও আমার ছিলো আজও আমার আছো আর ভবিষ্যতেও আমারই থাকবে। পৃথিবীর কোন শক্তি তোকে আমাকে আলাদা করতে পারবে না কারণ নির্জনা আমার ধ্যান, জ্ঞান, ভালবাসা, নেশা সব। বাবা আমাকে ঠকানোর কৈফিয়ত তোমাকে দিতেই হবে। (দেয়ালে টানানে নির্জনার সবচেয়ে বড় ছবিটার দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে) সরি সুইটহার্ট তোমার পাগল হাসবেন্ডকে তো আমাদের মধ্য থেকে সরে যেতেই হবে।(বলেই সাইকোপ্যাথের মতো হাসতে থাকে) হা হা হা। এবার যেকোন উপায়ে তোমাকে নিজের করে ছাড়বো, কেউ আমাকে আটকাতে পারবে না।আমি আসছি নির্জনা।


বরের গাড়ি
আরশি গাড়ি চালাচ্ছে। তার পাশে আরশি আর পিছনে অর্ক।
ডা.প্রীতি আর আরশি লুকিং গ্লাস অর্ককে দেখছে আর হাসছে।
–ভাবা যায় ছেলের বাবা তার পুত্রবধূকে বলছে, ছেলেটাকে দেখে রেখো। আহারে অসহায় বাচ্চা ভাইটা আমার।
আরশির কথা শুনে ডা.প্রীতি উচ্চস্বরে হেসে উঠে বলে,
–একদম তোমার বাবা পারলে ছেলেকে শ্বশুর বাড়ি রেখে আসে। বেচারা পুত্রদায়গ্রস্থ অসহায় পিতা।
বলেই দুজন আবার হি হি করে হেসে দেয়।

হঠাৎই অর্ক স্বাভাবিক গলায় দুজনকে ধমকে উঠে,
–জাস্ট শাট আপ বোথ অফ ইউ, হাসি বন্ধ করো । এই সবকিছু তোমাদের জন্য হয়েছে।
আরশি গাড়িতে ব্রেক করে পিছনে মাথা ঘুরিয়ে রাগ দেখিয়ে বলে,
– একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবেনা বলে দিচ্ছি অর্ক। এখানে আমাদের দোষ কোথায়? আমরা বলেছি কি তোমাকে বলেছি গত পনের বছর ধরে পাগলের অভিনয় করতে?

হতাশায় একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে অর্ক। তারপর দাঁত কটমট করে বলে,
–সব কিছু জন্য ঐ মেয়েটা দায়ী, বাবাকে কি পট্টি পরিয়েছে কে জানে? আমার কথার কোন দামই দিলো না উল্টো আমাকে ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল করে বিয়ে করতে বাধ্য করেছে।(প্রীতি আর আরশির দিকে তাকিয়ে) তোমরা দেখে নিও খুব শিগগিরই মেয়েটাকে যদি আমি নিজের জীবন থেকে ছুঁড়ে ফেলে দিবো। যদি না পারি তবে আমার নাম ইশতিয়াক অর্ক সিদ্দিকী না।

–চলবে?