প্রেমে পরা বারণ পর্ব-০৩

0
49

#প্রেমে_পরা_বারণ
পর্ব -৩
#Nosrat_Monisha
জহুরা মঞ্জিলের বধূবরণের অনুষ্ঠান চলছে কিন্তু নববধূর পাশে বর তো নেই-ই । বরং সে নিজের বউকে বাড়ির ভেতরেই প্রবেশ করতে দিচ্ছে না ।
অর্ক জেদ ধরে দরজা আগলে দাঁড়িয়ে বলে,
–এই পেত্নীটা আমাদের বাড়িতে ঢুকবে না। (আরশি আর ডা. প্রীতি সথে যখন একা থাকে তখন অর্ক স্বাভাবিকভাবে কথা বলে, এছাড়া সবার সামনে সে বাচ্চাদের মতো কথা বলে)
জাফর সিদ্দিকী অনেক চেষ্টা-চরিত করেও অর্ককে রাজি করাতে পারছেন না। তিনি নির্জনার চোখে চোখ মেলাতে পারছেন না। একে-তো মেয়েটাকে কাজের লোক দিয়ে বরণ করা হচ্ছে তার উপর সেটাতেও অর্ক বাধা দিচ্ছে। আত্মীয়-স্বজনদের অবশ্যই তিনিই আসতে বলেন নি। এর দুটো কারণ প্রথমত, অর্ক বিয়ে করেছে এ নিয়ে ভালো কথা বলার বদলে সবাই নেতিবাচক মন্তব্য করবে। দ্বিতীয়ত, আত্মীয়-স্বজনরা যদি এটা জানতে পারে যে নির্জনা তাদের ড্রাইভার এর মেয়ে তাহলে নাকসিটকাবে আর সম্ভাবনা আছে তার সাথে খারাপ ব্যবহার করার।
এমনিতেই আরশি এই বিয়েটার সম্পূর্ণ বিপক্ষে। যা নিয়ে জাফর সিদ্দিকী ভয়ে আছে, না জানি কখন তার মেয়ে নিজের ভাইয়ের বউয়ের সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলে। ।
এই যে অর্ক এত জেদ করছে, তাও আরশি তাকে একবার বোঝানোর চেষ্টা করছে না। অবশেষে জাফর সিদ্দিকী উপায় না পেয়ে ফোন বের করে একজনকে এসএমএস করে।
এদিক নির্জনা এতসবে শ্রান্ত ক্লান্ত আর বিষন্ন হয়েই সদর দরজায় ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে।
মিনিট সাতেক পর একটা ভারী গলার আওয়াজে ভেসে আসে,
–কি হয়েছে? নতুন বউ বাইরে দাঁড়িয়ে কেন?
গলার আওয়াজ শুনে জাফর সিদ্দিকীর মুখে হাসি ফুটে ওঠে অন্যদিকে আরশি আর অর্ক হতাশায় ডুবে যায়। কেননা ভারী কন্ঠের অধিকারী লোকটির কাছে তারা বড্ড অসহায়। কারণ তিনি আর কেউ নয় জাফর সিদ্দিকীর যোগ্য উত্তরসূরী অর্ক ও আরশির বড় ভাই বর্তমান প্রজন্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় যুবনেতা ইফতেখার অর্ণব সিদ্দিকী। অর্ক থেকে মাত্র দুই বছরের বড় হলেও বড়ভাইকে অর্ক এবং আরশি দুজনেই জমের মতো ভয় পায়। আরশি ভয় পায় কারণ অর্ণব ছোট থেকেই অত্যাধিক গম্ভীর। আর অর্ক ভয় পায় কারণ সে জানে তার বড়ভাই অনেক বিচক্ষণ এবং জ্ঞানী তাই তার অভিনয় ধরে ফেলার সম্ভাবনা অনেক বেশি। সেইজন্য অর্ক যথাসম্ভব বড়ভাইকে এড়িয়ে চলে আর বিনাবাক্য ব্যয়ে তার সব কথা মেনে নেয়।

–কি হলো? কথা কারো কানে যায় না?
অর্ণবের প্রশ্নের জবাবের রেহানা নামের মধ্যবয়সী মেইড যে নির্জনাকে বরণ করছিলো সে বলে,
– অর্ক স্যার নতুন ম্যাডামকে ভিতরে আসতে দিচ্ছে না।
গম্ভীর কন্ঠে অর্ণব প্রশ্ন করে,
–তাই নাকি অর্ক? (অর্ক মাথা নাড়িয়ে সায় দেয়) কিন্তু কেন?
মাথার নিচু করে অর্ক জবাব দেয়,
–কারণ ও একটা পেত্নী, ডাইনি আমাদের বাড়িতে ঢুকে আমাদের সবার রক্ত খেয়ে ফেলবে।
–এদিকে আমার সামনে এসে দাঁড়াও। (অর্ক ধীর পায়ে এসে অর্ণবের সামনে দাঁড়ায়) এসব কথা তোমাকে কে বলেছে?
অর্ণব মুখ ভার করে বলে,
–কেউ না।
–তাহলে তুমি জানলে কি করে?
এবার অর্ক ফেঁসে যায়। তার ভাই যে এই সময়ে এভাবে এসে তাকে জেরা করবে সেটা তার ভাবনার বাইরে ছিল। তাই মনে মনে ভাইয়ের করা প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে থাকে। অন্যদিকে আরশি মনে মনে ভয় পায় অর্ক না আবার তাকে ফাঁসিয়ে দেয়। কারণ ইতিপূর্বে যতবার অর্ক এসব অদ্ভুত কাজ করে সে তার বড় ভাইয়ের জেরার মুখে পরেছে, ততবারই বলেছে এসব কিছু করার বুদ্ধি তাকে আরশি দিয়েছে।

অর্কের নীরবতা দেখে অর্ণব গলার স্বর তীব্র করে বলে,
–কি হল বলো, তুমি কি করে জানলে (নির্জনার দিকে ইশারা করে) ও একটা পেত্নী।
অর্ক একইভাবে মাথা নিচু করে বলে,
–আমি টিভিতে দেখেছি ডাইনি, পেত্নীরা অনেক বেশি সুন্দরী হয়। আর এই মেয়েটা অনেক বেশি সুন্দর তাই সেও একটা পেত্নী।

অর্ণব একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে অর্কের মাথায় হাত দিয়ে বলে,
–টিভিতে ভুল দেখিয়েছে। ওসব বিশ্বাস করতে নেই। এই মেয়েটা খুব ভালো। আর একটা কথা মনে রাখবে সে তোমার ওয়াইফ। আজ থেকে আমাদের বাড়িতে এবং তোমার ঘরে থাকবে। বুঝতে পেরেছো?
অর্ক মাথা নাড়িয়ে জানায় সে বুঝতে পেরেছে।
–ভেরি গুড। (রেহানাকে উদ্দেশ্য করে) নতুন বউকে বরণ করে তাকে অর্ক স্যারের রুমে দিয়ে আসবেন।

এরপর বরণ হয়ে যায়। রেহানা নির্জনাকে নিয়ে অর্কের ঘরের দিকে যায়। জাফর সিদ্দিকীও নিশ্চিত হয়ে নিজের ঘরে চলে যায়।
আরশি আর ডা. প্রীতি ঘরে যাবে ঠিক তখনই অর্ণব তাদের ডেকে ওঠে এবং সব মেইডদের ইশারা করে সেখান থেকে চলে যেতে। সাথে সাথে সবাই হলরুম ত্যাগ করে ।
হলরুমে শুধু অর্ণব, অর্ক, আরশি আর ডা.প্রীতি রয়ে যায়।
অর্ক ডা.প্রীতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে নিজের গুরুগম্ভীর কন্ঠ বলে,
–ডা. প্রীতি আপনাকে বেতন দেওয়া হয় আমার ভাইয়ের টেক-কেয়ার করার জন্য। তাহলে আপনার উপস্থিতিতে তার মাথায় এমন অদ্ভুত একটা ধারণা তার মাথায় কিভাবে এলো?
প্রীতি একটা শুকনো ঢুক গিলে বলে,
–আসলে মি. সিদ্দিকী আমি বুঝতে পারিনি।
–আপনার বোঝা উচিত ছিল এটাই আপনার কাজ। নিজের কাজ যদি ঠিকঠাক পাবেন না করতে পারেন তাহলে আমাদের বাড়িতে থাকার আপনার কোন প্রয়োজন নেই। আমি অর্কের জন্য নতুন ডাক্তার দেখব। আর এই যে তুমি, (আরশিকে উদ্দেশ্য করে) আজ থেকে তোমার টিভিতে অদ্ভুত সিরিয়াল দেখা বন্ধ। এসব দেখে অর্ক অনেক বাজে জিনিস শিখছে।
এরপর আরশি কিংবা প্রীতি কাউকে কোন কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে অর্ণব হন হন করে নিজের ঘরে চলে যায় ।

এদিকে অর্ণবের কাছে বিনা দোষে বকা খেয়ে দুজনেই অর্কর দিকে রাগী চোখে তাকায়।
অর্ক তাদের দিকে তাকিয়ে অসহায় ভঙ্গিতে হাসি দিয়ে বলে,
–সরি, এরপর ফুলপ্রুফ প্ল্যান করবো।
যা শুনে ডা. প্রীতি রেগে গিয়ে অর্ককে বলে,
–তুমি যেমন খুশি তেমন প্ল্যান করো কিন্তু এবার যদি তোমার ভাই আমাকে ডিসমিস করার হুমকি দেয় তাহলে আমিও কিন্তু চাকরি ছেড়ে চলে যাব। এরপর নতুন ডাক্তারের কাছে করো নিজের চিকিৎসা ।
আরশিও অর্ককে হুমকির স্বরে বলে,
– আমারও একটা কথা কান খুলে শুনে রাখো অর্ক, ভবিষ্যতে যাই হয়ে যাক, তুমি আমার আর আমার সিরিয়ালের মধ্যে একদম আসবে না। সবসময় সবকিছুর দোষ তুমি হয় আমাকে না-হয় আমার সিরিয়ালকে দাও। দেখা গেলো একদিন সত্যি সত্যি ভাইয়া আমার সিরিয়াল দেখা বন্ধ করে দিল।
অর্ক তাদের দুজনকে সান্ত্বনা দিয়ে বলে,
–আহা! তোমরা খামোখা টেনশন করছে এমন কিছুই হবে না । আমি এমন প্ল্যান করেছি না দেখবে মেয়েটা আজ রাতেই ভয়ে পালাবে।
আরশি আর প্রীতি একসাথে আতঙ্কিত হয়ে বলে,
–আবার কি প্ল্যান করেছো?
–বলছি তবে এখানে না। আরশি তোমার রুমে চলো। তোমাদের হেল্পেরও দরকার হবে।
বলে তিনজনই আরশি রুমের দিকে রওনা হল।


মেলবোর্নে রুহান অস্থির হয়ে উঠেছে। সে বাড়ির সমস্ত জিনিসপত্র ভাঙচুর করছে। তার কপালে-গালে কাঁচের ছোট ছোট টুকরা বিধে সেখানে বিন্দু বিন্দু রক্ত বের হচ্ছে । বাঁ হাতের কব্জিতে বড় এক টুকরো কাঁচ ঢুকেছে। হাতের ফুলানো নীল শিরাগুলো রক্তে লাল হয়ে আছে। তবুও সে থামছে না।
ঘরের এক কোণে তার বাবার তমিজউদদীন খন্দকার আর মা মাইমুনা খন্দকার ভিডিও কলে বার বার ছেলেকে শান্ত হতে হাত জোর করে অনুরোধ করছে ।
তমিজউদদীন খন্দকার বলছেন,
–বাবা আমার কথা শুনো, আমি জানতাম না মেয়েটার বিয়ে হয়ে যাবে।
বাবার কথা শুনে আহত বাঘের মতো গর্জন করে উঠে রুহান,
–তুমি সব জানতে। তুমি ইচ্ছে করে আমার ভালবাসাকে, আমার কাছ থেকে কেড়ে নিয়েছো। সব ধ্বংস করে দেবো আমি, তোমার টাকা-পয়সা সম্পত্তি সবকিছু।

–বাবারে এগুলো তো আমার না, সবই তোমার। তাই তুমি যা খুশি করো কিন্তু আগে মাথা ঠান্ডা করো। তোমার মায়ের মুখের দিকে একবার তাকাও, দেখো কেঁদে কেঁদে কি অবস্থা করেছে। তোমার পাগলামি দেখে প্রেসার হাই হয়ে যাচ্ছে এখন যদি কিছু হয়ে যায় তাহলে তুমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবে?

মাইমুনা খন্দকার কেঁদে কঁদে বলে,
–আব্বা আমি ওয়াদা করছি তুমি যা বলবা তাই হবে। তবুও তুমি শান্ত হও।

মায়ের কথা শুনে ক্ষান্ত-শ্রান্ত হয়ে ঘরের মাঝে রাখা বিন বক্সের উপর বসে পরে রুহান। ভিডিও কলে ছেলের এমন অবস্থা দেখে বুক ফেটে কান্না আসে তমিজউদদীন খন্দকারের।
বিয়ের প্রায় আঠারো বছর পর সন্তানসুখ পেয়েছিলো খন্দকার দম্পতি। একটা সময় তো তমিজউদদীন খন্দকার আশাই ছেড়ে দিয়েছিলেন। তিনি তো ধরেই নিয়েছিলেন, আল্লাহ বোধয় তাকে আর বাবা ডাক শোনাবেন না। মাইমুনা অনেকবার তাকে দ্বিতীয় বিবাহের কথা বলেছিল। কিন্তু স্ত্রীর প্রতি তার ভালোবাসা এতটাই প্রবল ছিল যে, তিনি সেই কথা ভুলেও চিন্তা করতে পারেন নি । তবে একটা আফসোস তো ছিলই যে, তার মৃত্যুর পর তিন পুরুষের রেখে যাওয়া এত সম্পদ কে ভোগ করবে? স্বামী-স্ত্রী সব সময় আল্লাহর দরবারে সন্তানের জন্য প্রার্থনা করতেন পরিশেষে তাদের ফরিয়াদ কবুল হয়। তাদের কোলজুরে রুহান আসে । কিন্তু তমিজউদদীন খন্দকার এটা বুঝতে পারেননি আল্লাহ তার পরীক্ষা নেওয়া কেবল শুরু করেছেন । শেষে বয়সের একমাত্র সন্তান হওয়ায় রুহান মাত্রারিক্ত আদরে বিগড়ে যায়। সে অসম্ভব রাগী আর জেদী তৈরি হয়। ছোট বেলায় এসবকে বাচ্চমো বলে এড়িয়ে গেলেও দিন দিন এইগুলোই আরো ভয়ংকর হতে থাকে। স্কুলে এক সহপাঠীকে সিঁড়ি থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে গুরুতর আহত করার পর তমিজউদদীন খন্দকারের কিছুটা হুঁশ হয়। তিনি মাইমুনার কথায় পাত্তা না দিয়ে বিদেশে ছেলের মানসিক চিকিৎসা করান। এরপর সেখানেই পড়ার ব্যবস্থা করেন। নতুন পরিবেশ আর চিকিৎসা পেয়ে রুহান অনেকটা স্বাভাবিক হয়ে যায়। গ্রাজুয়েশন শেষে দেশে ফিরে সে ধীরে ধীরে বাবার ব্যবসার হাল ধরা শুরু করে আর সফলও হয়। লায়ন গ্রুপের সাফল্যও দ্বিগুণ হয়ে যায়। রুহান নিয়মিত বিভিন্ন জায়গায় অধিক ডোনেশনও দেওয়া শুরু করে। সে সুলভ মূল্যে সাধারণ মানুষের নাগালে ওষুধের দাম রাখতে আর.কে নামে একটা ওষুধ কোম্পানিও খুলে। এসব ভালো কাজের জন্য বারংবার নিউজ চ্যানেলের শিরোনামে রুহান খন্দকার নামটি উঠে আসে। লম্বা-চওড়া, সুদর্শন আর সর্বোপরি স্টাইলিশ হওয়ার দরুন বিদেশে থাকাকালীন সময় থেকেই সোস্যাল মিডিয়ায় রুহানের ফলোয়ার মিলিয়নের উপরে। সব মিলিয়ে অল্প সময়েই রুহান খন্দকার বাংলাদেশের ইউথ আইকনে পরিণত হয় । চারিদিকে ছেলে প্রশংসা শুনে খন্দকার দম্পতির গর্বে বুকটা ফুলে যেতো।
কিন্তু খন্দকার দম্পতির সুখে বিষকাঁটা হয়ে ফুটে নির্জনা। তাদের নিঁখুত ছেলে হয়ে যায় সাইকোপ্যাথ। তমিজউদদীন খন্দকার তো এটাই ভেবে পান না, তার যে ছেলের জন্য প্রতিদিন প্রায় ডজনখানেক মেয়ের বাবাকে তিনি না বলেন সেই ছেলে একটা ড্রাইভারের মেয়ের মধ্যে এমন কি দেখলো? আর মেয়েটাই বা কেমন? যে রুহান খন্দকারের জন্য দেশে-বিদেশে মেয়েরা দিওয়ানা তাকে কোন পাত্তাই দেয় না।
মাইমুনা তো ছেলের পাগলামি দেখে তো একবার বলেই ফেলেছিলেন নির্জনাকে তুলে নিয়ে আসতে। কিন্তু তার ছেলে এতেও রাজি হয়নি, বলে কি-না আমার সুইট হার্টের উপর কেউ কোন জোরজবরদস্তি করবে না। তমিজউদদীন খন্দকার ভেবেছিলেন সময়ের সাথে সাথে হয় তার ছেলে কোন না কোন উপায়ে নির্জনাকে বিয়ের জন্য রাজি করাবে। কিন্তু না নির্জনার জেদ তার ছেলের চেয়েও একটা কাঠি উপরে। তার সোনার টুকরা ছেলেটাকে বারবার প্রত্যাখ্যান করেছে। ফলাফল বাংলাদেশের ইউথ আইকন রুহান খন্দকার আজ সাইকোপ্যাথ আর তিন মার্ডার কেসের আসামি ।

একটা মেইড রুহানের ড্রেসিং করছে। কিছুক্ষণ পর তেজী গলায় রুহান বলে উঠে,
–আমি বাংলাদেশে ফিরবো।

তমিজউদদীন খন্দকার ছেলেকে বুঝানোর চেষ্টা করেন,
–বিশ্বাস করো বাবা, আমি প্রাণপণ চেষ্টা করছি কিন্তু

বাবাকে কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়ে গর্জে উঠে রুহান,
–কোন কিন্তু শুনতে চাই না। তুমি যদি না পারো তবে আমি এখানে কাউকে মার্ডার করে দিবো। তাহলে ইন্টারন্যাশনাল পুলিশ এমনি আমাকে দেশে পাঠিয়ে দিবে। তোমার আর আমার পাসপোর্ট-ভিসা লুকিয়ে রেখে কোন লাভ হবে না । (সাইকোপ্যাথের মতো শব্দহীন হাসি দিয়ে) কিন্তু খুন কাকে করি?
বলে চোখ ঘুরিয়ে ড্রেসিং করতে থাকা মেইডের দিকে গলা চেপে ধরে।
মাইমুনা খন্দকার কাঁদতে কাঁদতে নিজের স্বামীকে বলে,
– কিছু একটা করো আমার ছেলেটা আবার মার্ডার কেসে ফেঁসে যাবে।
তমিজউদদীন খন্দকার অসহায়ের মতো ছেলের কাছে আত্মসমর্পণ করে বলে,
–তোমার সব কথা মেনে নিলাম। কিন্তু সব ব্যবস্থা করার জন্য আমাকে অন্তত এক সপ্তাহ সময় দাও।
বাবার কথা শুনে রুহান মেইডটাকে ছেড়ে ট্যাবের দিকে তাকিয়ে বাঁকা হেসে বলে,
– আটদিনের মাথায় যদি তুমি আমাকে বাংলাদেশের ফেরত নেওয়ার ব্যবস্থা না করো তবে আমি নিজেই যাওয়ার ব্যবস্থা করবো। আর বাবা তুমি ভালো করেই জানো, আমি যা বলি তাই করি।
এরপর সে খট করে কেটে দেয়।
তমিজউদদীন খন্দকার একটা দীর্ঘ শ্বাস ছাড়েন।
মাইমুনা খন্দকার কাঁদতে কাঁদতে বলে,
–সব হয়েছে ওই রাক্ষসীটার জন্য আমার সোনার টুকরা ছেলেটাকে শেষ করে দিলো। ডাইনিটা জীবনে কোনদিন সুখী হবেনা, এক অসহায় মায়ের হায় লাগবে।
তমিজউদদীন খন্দকার স্ত্রীর কথার পরিপ্রেক্ষিতে নির্লিপ্ত গলায় বলে,
–বেচারি মেয়েটাকে আর অভিশাপ দিও না। আল্লাহ সহ্য করবেন না। আমাদের ছেলের জন্য মেয়েটা নিজের ভালোবাসার মানুষকে হারিয়ে ফেলেছে একটা পাগলকে বিয়ে করেছে। এর চেয়ে অসুখী আর কিভাবে হবে?

–তো? এসব কিছুতেও ঐ মেয়েটারই দোষ। আমার ছেলের মধ্যে কি কোন কিছুর কমতি আছে ? ওর প্রেমিক তো ছিল একটা সামান্য প্রাইভেট কোম্পানির বেতনভুক্ত কর্মচারী , আর আমার ছেলে এত বড় বিজনেস ম্যাগনেট। তাও মেয়েটা আমার ছেলেকে রিজেক্ট করেছে। কেন তার ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা কি আমার ছেলের রাখে না ?
স্ত্রীর কথা শুনে তমিজউদদীন খন্দকার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলেন,
–ভালোবাসা জিনিসটা যে বড় অদ্ভুত রুহানের মা। ভালবাসার কাছে যোগ্যতা, টাকা-পয়সা কোন কিছুই ম্যাটার করে না। আর ঐ মেয়েটা আমাদের ছেলেকে ভালোবাসে না, এটাই সত্য । জোর জবরদস্তি করে আর যাই হোক ভালোবাসা হয় না। আল্লাহর কাছে দোয়া করো, তোমার ছেলের যত তাড়াতাড়ি এই সহজ সহ্য সত্যটা বুঝতে পারবে ততই তার জন্য মঙ্গল। নাহলে যে পথে সে এগিয়ে যাচ্ছে ধ্বংস নিশ্চিত।


স্বামী পাগল হওয়াতে বাসর রাতের কোন টেনশন নেই নির্জনার। তবে ঘরে আসার সময় সবচেয়ে বয়স্ক মেইড রেহানা আন্টি যে কিনা তাকে বরণ করেছে, তিনি একটা শাড়ি পরতে বলেছে। মায়ের মত ভদ্রমহিলার কথা ফেলতে ইচ্ছা হলো না নির্জনার। তাই সে একরাশ ক্লান্তির সাথে সুটকেস থেকে হালকা রঙের একটা সুতি শাড়ির বের করে ওয়াশরুমে চলে যায় ।

বাঁ হাতে কিছু একটা নিজের পিছনে লুকিয়ে রুমে প্রবেশ করলো অর্ক। আর রুমে আসতেই তার চোখ যায় শাড়ি পরিহিত নির্জনার দিকে । দেখেই বুঝা যাচ্ছে সে কেবল গোসল সেরে বের হয়েছে। তার চুল থেকে এখনো টুপটুপ করে পানি পড়ছে। চুল থেকে পানি চুয়িয়ে পরছে তাতে শাড়ির কিছু কিছু জায়গা ভিজে যাচ্ছে। বিন্দু বিন্দু জলকণা তার পুরো শরীরে ছড়িয়ে আছে। গলায় পাতলা চেন আর নাকে ছোট একটা হীরের নাকফুল ছাড়া আর কোন গয়না নেই।
নির্জনা শাড়ির নিজের কুচিগুলো ঠিক করার জন্য আঁচলটা ভাঁজ করে যাতে তার হলুদ ফর্সা কোমড়ের বাঁপাশের বাদামি তিলটা অর্কের চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়। অর্ক শত চেষ্টা করছে তাও তার অবাধ্য চোখটা সেই জায়গা থেকে সরাতে পারে না। সে গোপনে একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে মনে মনে বলে,
–ওই তিলটা সম্পূর্ণ ইলিগ্যাল। এর বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। মানে এটা কোন কথা একটা সামান্য তিলের জন্য আমার সব গুলিয়ে যাচ্ছে। মেয়েটার কোমর থেকে তিলটা উচ্ছেদের জন্য লিগ্যাল নোটিশ জারি করতে হবে। কিন্তু এখন কি করা? চোখ খুললে যদি আবার ওই তিলের দিকে চোখ যায়? তাহলে তো আবার আমার সবকিছু গুলিয়ে যাবে। আইডিয়া কোমর না দেখে মেয়েটার চেহারা দেখি। এর মতো নারীর লোভী চেহারা দেখলে এমনিতেই সব ভালো লাগা মুগ্ধতা কেটে যাবে ।
এটা ভেবে সে চোখ মেলে দেখে নির্জনা ঠিক তার সামনে দাঁড়িয়ে তার দিকেই তাকিয়ে আছে। অর্ক নির্জনার চেহারা দেখে আবার হারিয়ে যায়।
সে মনে মনে বলে,
–হুমায়ূন আহমেদ স্যার বলে গেছেন, মেয়েদের হাসলে সুন্দর লাগে আর হাসির চেপে রাখলে তার চেয়ে দশ গুন সুন্দর লাগে। কিন্তু তিনি এটা বলতে ভুলে গেছেন যে , মেয়দের বিষন্ন থাকলে ভয়ঙ্কর সুন্দর লাগে। যাকে এড়িয়ে যাওয়ার সাধ্য কোন পুরুষ মানুষের নেই।

–চলবে?