গল্প- তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি
পর্ব- ২১
লেখিকা- রিয়া খান
অনেক্ষণ সময় ধরে খুঁজাখুঁজি করেও মিলছে না জিনিসটা।প্রয়োজনীয় জিনিস প্রয়োজনের সময় না পেলে মেজাজ অত্যন্ত হাই হয়ে যায়। এমনিতেই তীব্রর হার্টে সমস্যা,রাতের পর রাত জেগে জেগে সমস্যাটা বেড়ে যাচ্ছে,তারওপর এরকম করে যদি চাপ নিতে থাকে তাহলে ভবিষ্যতে বড় রকমের মাশুল দিতে হবে।
টেনশন আর নিতে না পেরে স্লিপিং পিল খেয়ে শুয়ে পড়ে । বুঝতে পারছিলো এখন চাপ নিলে সকালের সূর্য্য টা নাও দেখতে পারে।
মেমোরি টাতে তীব্র কিছু ডকুমেন্ট রেখেছে।যেটা অফিস থেকে রাতে বাড়িতে ফিরতে পারেনি বলে একটা প্লাস্টিক র্যাপ দিয়ে পেঁচিয়ে মিশানের কাছে রেখেছিলো,যেনো পরে দেখা হলে দিয়ে দেয়।
পরদিন সকালে মিশান বাজার করে ফেরার সময় তীব্রকে দেখতে পেয়ে মেমোরিটা একটা শসার ভেতর ভরে তীব্রকে কৌশলে দেয়।
পরবর্তীতে সুযোগ বুঝে রিফাতের চোখের আড়ালে তীব্র মেমোরিটা বের করে ওয়ালেটে রাখে, যতদূর মনে পড়ে বাড়ি ফিরে তীব্র মেমোরিটা একটা বক্সে রেখে দেয়।
কিন্তু আজ কাজের সময় জিনিসটা পাচ্ছে না।
তীব্রর রহস্য জানার জন্য ওর সব আমানত ই মিশান খিয়ানত করে।
মেমোরিতে কি আছে সেটা একবারও না দেখে সবটা কপি করে একটা পেনড্রাইভে রেখে দেয়,পরে সময় করে জিনিসটা দেখবে বলে।
প্রতিটা জিনিসের কপি মিশানের কাছে থাকলেও ওগুলোতে কি আছে সেটা মিশানের অজানা।
কারণ এসব ঘেঁটে মাথা অযথা আউলিয়ে লাভ নেই, বরং নিজের কাজ শেষ হলেই তখন ফ্রি মাইন্ডে তীব্রর রহস্য ভাঙা যাবে বলে মনে করে।
এখনো কয়েকজন বাকি আছে মিশানের শিকারি। যাদের খুঁজতে গেলেও অনেক পরিশ্রম। তাদের কোনো পরিচয় জানা নেই, কারা তাঁরা সেটাও জানা নেই, মিশানের পাশে তীব্র না থাকলে এদের একজনকেও বের করা সম্ভব হতো না।
তাই তীব্রর সাথে এই মুহুর্তে তাতলামো না করে যদি ওর দশটা কাজ করে নিজের একটা কাজ সিদ্ধি হয় সেটাই লাভ।
দ্বীপের ভাষ্যমতে আরো তিনজন বাকি আছে, কিন্তু সমস্যা হচ্ছে যত দিন যাচ্ছে দ্বীপ তাদের চেহারা আকৃতি ভুলে যাচ্ছে।
এতোগুলো ছেলেকে অই অবস্থায় তাও আবার রাত করে দেখেছে সেই দৃশ্য কি এতোদিন মনে থাকে? তখন শুধু মাথায় ঘুরছিলো নিশানকে নিয়ে কি করে পালাবে, ছেলেগুলোর চেহারা নোট করার সময় বা পরিস্থিতি কোনোটাই ছিলো না।
ভোর বেলা তীব্র তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বের হবে তখন ওর বাবা ওকে ডাক দিলো পেছন থেকে,
-তীব্র!
তীব্র পিছু ফিরে তাকালো,
-এই মেমোরি কার্ড টা কি তোমার?
তীব্র অপ্রত্যাশিত দৃষ্টিতে বাবার দিকে তাকালো, উনি মেমোরিটা নিয়ে তীব্রর দিকে এগিয়ে এলো। তীব্র মেমোরিটা হাতে নিয়ে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখলো এটাই সেই মেমোরি যেটা রাতে থেকে খুঁজছে।
-তুমি এটা কোথায় পেলে?
-কাল সন্ধ্যায় মাশুক, মম নানাভাইরা খেলা করছিলো, তখন দেখলাম ওদের খেলনার সাথে এই মেমোরিটাও, ভেবেছি তৃপ্তির বাচ্চারা মোবাইল থেকে বের করে খেলছে হয়তো,কিন্তু তৃপ্তি বললো এটা ওর না,পরে মনে হলো হতে পারে তোমার, ভুলে ঘরের কোথাও পড়েছিলো।
-মাশুক-মম কখন এসেছিলো?
– কাল দুপুরে এসেছে,থাকবে কিছুদিন।
তোমার সাথে দেখা করার জন্য ওরা অনেক রাত অব্ধি জেগে ছিলো,তোমার তো কোনো খবর ই ছিলো না।
তীব্র মাথা ঘুরিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে মেমোরিটা নিয়ে উল্টো ঘুরে ঘরের দিকে যেতে নিলো।
তীব্র বাবা তীব্রকে পিছু ডাক না দিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো হাঁটাহাটি করার জন্য।
তীব্রর মা একটু অবাক হলো আজ এতো সকাল সকাল উঠেছে তীব্র, প্রতিদিন মিনিমাম দশটাই ঘুম থেকে উঠে, আর আজ ভোর বেলা!
তীব্র হয়তো মেমোরিটার খুঁজতেই বের হচ্ছিলো বাড়ি থেকে।
সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠার সময় তীব্রর মা বলে উঠলো,
-তীব্র, চা কফি কিছু পাঠাবো?
-দুটোই পাঠাও।
ঘরে ঢুকে কার্ড রিডারে মেমোরিটা ভরে ল্যাপটপে কানেক্ট করলো।
ভেতরের যেসব ডকুমেন্ট গুলো রাখাছিলো সেগুলো আছে কিনা দেখার জন্য।মেমোরিটাতে তেমন কিছু ছিলো না, কয়েকটা ভয়েস রেকর্ড । তীব্র কানে হেডফোন লাগিয়ে মন দিয়ে শুনছে সবটা।
এদিকে তীব্রর মা চা কফি দুটোই নিজের হাতে করে তীব্রর ঘরের দিকে আনতে নিলে তীব্রর বোন তৃপ্তি মায়ের হাত থেকে ট্রে নিয়ে ভাইয়ের ঘরের দিকে যায়।
তীব্রর ঘরতো রহস্যময় ঘর যেখানে তীব্র ছাড়া আর কেউ প্রবেশ করতে পারে না, এইঘরে ঢুকতে গেলে হয় তীব্রর ফিঙ্গার প্রিন্ট লাগবে নয়তো সিকিউরিটি কোড।
বাইরে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে অনবরত নক করে যাচ্ছে, একটা ভাইব্রেট করা বেল আছে, রুমের বাইরে থেকে সুইচ চাপলে তীব্রর রুমে ভাইব্রেশন শব্দ হয় একটা।
যেহেতু তীব্র কানে হেইফোন লাগিয়ে ফুল ভলিউমে রেকর্ডিং শুনছে সেহেতু বাইরের কোনো শব্দ ওর কানে পৌঁছাচ্ছে না।
প্রায় আধা ঘন্টা সময় ধরে তৃপ্তি দরজার সামনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে তীব্রর জন্য,মনে মনে জেদ চেপেছে এই ঠান্ডা চা কফিই ওকে খাইয়ে এখান থেকে যাবে।
এদিকে ত্রিশ মিনিট পেরিয়ে যাওয়ার পর তীব্র চা কফির শুন্যতা অনুভব করলো, মনে পড়লো মাকে চা কফি দিয়ে যেতে বলেছিলো, এখনো চা কফি আসে নি।
নিজের কফি নিজে বানানোর জন্য সব কিছু রেখে ঘর থেকে বের হতেই দেখে তৃপ্তি গাল ফুলিয়ে হাতে ট্রে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, ট্রে তে চা কফি দুটোই সাথে বিস্কুট।তীব্র তৃপ্তির হাতের দিকে না তাকিয়ে মুখের দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কেমন আছো তুমি?
-কেমন আছি সেটা পরে জানলেও হবে,তোমার অই রহস্য গুহাতে কি আছে আমি আজ দেখবো! পাক্কা পঁয়ত্রিশ মিনিট ধরে এখানে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছি তোমার চা -কফি নিয়ে।
জিনিসটা লক করা বুঝলাম , কিন্তু এতোক্ষণ ধরে যে নক করছি কানে পৌঁছায় না?
-এতোক্ষণ ধরে দাঁড়িয়েছিলে কেনো তুমি?মোবাইলে কল দিতে তাহলে।ঘরে কাজে ব্যস্ত থাকতেই পারে একটা মানুষ।
তৃপ্তির হাত থেকে ঠান্ডা চা কফি চুমুক দিয়ে খেয়ে বিস্কুট হাতে নিয়ে কচ্ছপের মতো আবার ঘরের ভেতর ঢুকে লক করে দিলো।
তৃপ্তিকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই মুখের উপর গেট লক করে দিলো।
তৃপ্তি ঘুরে গিয়ে মায়ের সামনে গিয়ে রাগী মেজাজে বলে উঠলো,
-তোমার ছেলে এটা এমন কেনো?
কতদিন পর এসেছি, কয় মাস পর দেখা হলো ওর সাথে, কোথায় একটু হাসি মুখে ভালোমতো কথা বলবে, শুধু জিজ্ঞেস করলো কেমন আছো? উত্তর টা দেয়ার
সময় ই দিলো না,তার আগেই সে ভেতরে ঢুকে গেলো!
তীব্র ভাইয়া এমন কেনো মা?
নাকি আমি আসাতে ও একটুও খুশি হয় নি?
-কি বলছিস মা! তীব্র হয়তো ব্যস্ত। আর জানিস ই তো ও একটু অন্যরকম স্বভাবের কথা কম বলাই ওর ধর্ম। মাঝে মাঝেই তোর কথা জিজ্ঞেস করে তৃপ্তি কবে আসবে, ওকে দেখতে ইচ্ছে করছে।
-সাত সকালে মিথ্যে একটা বললে মা! আর যাই হোক তীব্রর কখনো আমার কথা মনে পড়ে না । আমার আশেপাশের মানুষদের দেখি ভাইয়েরা বোনদের কত আদর করে।এই তো আমার পাশের ফ্ল্যাটের ভাবীর ভাইটা প্রায় প্রতিমাসে তাকে দেখতে আসে, সব সময় ফোন দিয়ে খোঁজখবর নেয়।
আমার ভাইটাকে দেখো, অনিচ্ছা করেও কখনো আমাকে দেখতে যায় না, এমনকি ভুল করেও একটা মিসডকল আমার বা আমার জামাইয়ের ফোনে যায় না।আমাদের কথা বাদ ই দিলাম আমার ছেলে মেয়ের কথা তো একটু মনে করবে ? হ্যাঁ এটা ঠিক যে ওর ড্রাইভার দিয়ে মাঝে মধ্যে ভাগ্নেভাগ্নির জন্য খেলনা চকলেট কিনে পাঠায়, কিন্তু একটাবার ফোন দিয়ে জিজ্ঞেস তো করবে জিনিসগুলো ঠিকমতো পৌঁছেছে কিনা।
-অনেক অভিযোগ দেখছি ভাইকে নিয়ে
এগুলো ভাইয়ের সামনেই বলিস,আমার সামনে বলে কোনো লাভ নেই।
-বলার মত সুযোগ তো দিতে হবে তাই না?একটা বাক্য উচ্চারণ করতে নির্দিষ্ট পরিমাণে সময় লাগে,তোমার ছেলে সেটা দেয় না।
মেয়ের রাগ দেখে তীবর মা মৃদু হেসে কথা ঘুরালেন। যদি এই কথাগুলো তীব্র শুনে, বলা যায় না আবার রাগ করে উঠতে পারে।
দশটার দিকে রেডি হয়ে অফিসে যাওয়ার জন্য ঘর থেকে বের হয়, বাড়ির বাইরে আব্দুর রহমান ও তীব্রর নতুন বডি গার্ড জুয়েল তালুকদার দাঁড়িয়ে আছে।
-তীব্র খেয়ে যাও বাবা।
মায়ের ডাক শুনে তীব্র দাঁড়িয়ে পড়লো,ভাবলো খেয়ে যাবে কি না।
ঘড়ির দিকে সময় দেখলো খাওয়ার সময় আছে কিনা আবার ওষুধও খাওয়া হয় নি,রাতে বুক ব্যাথা করছিলো।
ডাইনিং রুমে ঢুকে দেখে দুই ভাগ্নেভাগ্নি ব্রেকফাস্ট করছে,তৃপ্তি ওদের খাইয়ে দিচ্ছে।মাশুক আর মম তীব্রকে দেখে জোরে বলে উঠলো,
-মামাহ!
তীব্র ফরমাল হাসি দিয়ে ওদের পাশে চেয়ার টেনে বসতে বসতে মাশুকের গাল টেনে বললো,
-মামা!
মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
-ওষুধের বক্সটা দাও তো।
তীব্রর মা ওষুধের বক্স এনে ওষুধ বের করে তীব্রকে দিলো,
যেসব ওষুধ খাওয়ার আগে খেতে বলেছিলো সেগুলো খেয়ে নিলো,মা সামনে খাবার প্লেট দিলো।
-মামা খাওয়া হলে তুমি আমাদের সাথে খেলবে?
খাবার খেতে খেতে তীব্র উত্তর দিলো,
– মামার কাজ আছে বাইরে, এসে খেলবো।
তৃপ্তি অভিমান রাগ দুটোই মিশিয়ে তীব্রকে ইংগিত করে বললো,
-আমার কথা বাদ ই দিলাম,মানুষ ভাগ্নেভাগ্নিকে দেখলে কত আদর করে কত খুশি হয়, আর আমার ছেলে মেয়ে গুলোর ভাগ্য দেখো!কতোদিন পর এসেছি কোনো কদর নেই।
-তো কি করা উচিৎ? মাথায় নিয়ে নাচবো?
মাশুক-মমর দিকে তাকিয়ে বললো,
-এই মামা তোদের মাথায় নিয়ে নাচবো?
ওরা একসাথে উত্তর দিলো।
-না না মাথায় নিয়ে নাচলে পড়ে যাবো!
তৃপ্তি তীব্রকে ঝাড়ি মেরে বললো
-হ্যাঁ এসব ই শেখাবে, ভালো করে ধরলে পড়ে কিভাবে?
-তৃপ্তি তুমি কবে চলে যাবে?
-………………!
-বেশি দিন থেকো না, বাপের বাড়ি বেশি থাকলে কদর কমে যায়।
তৃপ্তি বিষদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-মা তোমার ছেলেকে একটা বিয়ে করিয়ে দাও, কথার খুব খই ফুটেছে।
-তোমার মত দজ্জাল ননদ যেখানে আছে সেখানে আমার বউ টিকবে না।
-বউ টিকবে তুমি টিকবে না ভাইয়া। তোমার বউয়ের কানে তোমার নামে বিষ ঢালতে ঢালতে এমন পর্যায় নিয়ে যাবো যে তুমি এবাড়িতে টিকতে পারবে না।
-আচ্ছা তৃপ্তি সুমন তোমার জ্বালায় টিকতে পারে না বলেই বাপের বাড়িতে পাঠিয়ে দেয় তোমাকে তাই না?
-কি বললে তুমি?
-ভেবে দেখো বিয়ের আগে কখনো তোমাকে আমরা কি বলেছি জামাই বাড়ি চলে যাও,বা ঘুরে আসো?এইযে বছরের পর বছর আমাদের বাড়িতে থেকেছো আমরা একটাবারও যেতে বলেছি?
-তো?
-তাহলে বিয়ের পর কেনো তোমাকে জামাই বাড়ি থেকে বাপের বাড়ি আসতে হয়?
-আশ্চর্য এটা আমার বাপের বাড়ি আমি আসবো না?
-সেটাই তো মাথায় রাখতে হবে,ওটা তোমার জামাই বাড়ি , তুমি সেখানে থেকে গেলেই তো পারো আসো কেনো?
তীব্রর কথাটাতে তৃপ্তি এবার সত্যি সত্যি রাগ করে উঠলো, কষ্টও পেলো ভাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে, চোখ ভরা পানি টইটুম্বুর করছে, এখানে বসে থাকলে কেঁদেই দেবে।
তাই রাগ চেপে হাত ধুয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে
চলে যাবে তার আগেই তীব্র তৃপ্তির হাত ধরে টান দিয়ে কাছে এনে নিজের কোলে বসালো।
-ছাড়ো,ভালোমতো কথা বলতে পারো না তুমি, শুধু অপমান করো। আর আসবো না তোমাদের বাড়িতে, চলে যাবো এখন।
-এতো দেমাগ হয়েছে কেনো তোমার?
-আমি আবার কি করলাম?
-একই শহরে থেকেও আসো বছরে একবার দুবার, এতোগুলো দিন ঝগড়া না করতে করতে ভেতর জমা হয়ে থাকে,তুমি এতোদিন পর এসেছো শান্তিমতো একবেলা ঝগড়াও করতে দেবে না? তার আগেই তুমি হার মেনে চলে যাবে?
-……………
-বাবারে বাবা কি দেমাগ হয়েছে, ইগোতে লাগে সব কিছু।সুমন সহ্য করে কিভাবে?ওর সাথেও কি এরকম করো?
-সবাই তোমার মতো নাকি?ছেলেদের জন্মই মেয়েদের অত্যাচার সহ্য করার জন্য।
-আমার বউ যদি এমন হয়, মেরে ওখানেই ফেলে রাখবো। সব সহ্য করবো তেজ দেখানো চলবে না। যখন ঝগড়া করবো তখন ঝগড়াই করতে হবে, উল্টো তেজ দেখালে সহ্য করবো না তো!
-তোমার দ্বারা সব ই সম্ভব, তুমি একটা খাটাশ।অপমান করো শুধু।
-অপমান কোথায় করলাম?জাস্ট একটু ঝগড়া করার হাল্কা চেষ্টা করেছি।
তৃপ্তি চোখের পানি মুছতে মুছতে বললো,
-ওটা ঝগড়া না অপমান ই। ছাড়ো আমাকে,চলে যাবো আমি।
তীব্র তৃপ্তির মুখের সামনে খাবার তুলে ধরলো,
-খাবো না।
-আমার দেরি হয়ে যাচ্ছে।
নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করে বললো,
-ছাড়ো আমাকে,
তীব্র ছেড়ে দিয়ে বললো,
-যাও, ওঠো।
তৃপ্তি উঠে না গিয়ে তীব্র কান ধরে টান দিলো।
তীব্রর হাত থেকে খাবার টা মুখে নিয়ে উঠে গেলো।
তৃপ্তির সাথে তীব্রর সম্পর্ক আগে থেকেই এমন, তীব্র হাসি মুখে কথা বলার থেকে ঝগড়া করে আনন্দ পায়, তৃপ্তিকে এমন এমন কথা বলে যেনো তৃপ্তিও রেগে গিয়ে ওর সাথে ঝগড়াই শামিল হয়।
তীব্রর সাথে ঝগড়া হওয়াটা তেমন কোনো অস্বাভাবিক ব্যাপার না, এটা একদম স্বাভাবিক ও প্রাকৃতিক।দিন শেষে এরা দুজন দুজনকে অনেক ভালোবাসে, তীব্র প্রকাশ না করলেও তৃপ্তি বুঝে যায়।
এতোক্ষণ তীব্রর মা পাশে দাঁড়িয়ে ওদের ঝগড়া দেখে মিটিমিটি হাসছিলো,কারণ জানা কথায় ঝগড়া যতোই হোক শেষে এসে মিল হবেই।
তীব্র খাওয়া শেষ করে ওষুধ খেয়েই বাইরে দৌড়।তৃপ্তির সাথে ঝগড়া করতে গিয়েই সময় নষ্ট হলো।
এদিকে মিশান সকাল বেলা উঠে মামার সাথে বেরিয়ে সকালের ব্যায়াম শেষ করে বাড়ি ফিরে ব্রেকফাস্ট করে নিজের ঘরে।আজকে তাপসিনের বাজার করার ডেট ছিলো , তাপসিনের সামনে পরীক্ষা বলে এখন আর বাজারে যেতে হয় না, ওর বদলে কেয়ার টেকার দিয়ে বাজার করায়।
ব্রেকফাস্ট শেষে দ্বীপ আর ওর বাবা এক সময়েই বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়,
যার যার গন্তব্যপথে।
মিশান নিজের ঘরেই চুপচাপ মাথা ঠান্ডা করে ভাবছে বাকি ক্রিমিনাল গুলোকে কিভাবে খুঁজে বের করা যায় , নিশানের রেকর্ড করা প্রতিটা ভিডিও বার বার রিভিউ করে দেখছে, প্লাস এতোদিনে যা যা এভিডেন্স পেয়েছিলো সব কিছু ঘেঁটে দেখছে।
এমন সময় মিশানের ঘরে খালার আগমন,
-মিশান ।
মিশান ল্যাপটপ অফ করে সমস্ত ডকুমেন্ট এক করে সরিয়ে পেছনে ঘুরে তাকিয়ে দেখে দ্বীপের খালা দাঁড়িয়ে আছে,
-হ্যাঁ খালামণি?
-দেখো তো এটা কিসের বোতল, ছাদে পড়ে ছিলো।
খালা একটা বোতল মিশানের দিকে বাড়িয়ে দিলো , মিশান বোতলটার দিকে তাকাতেই হতভম্ব হয়ে গেলো,
-এই লেঙরীটা আবার ছাদে কখন গেলো!(মনে মনে)
বোতলটা হাতে নিয়ে মিশান কনফিডেন্টের সাথে বললো,
-খালামণি এটা মনে হয় দ্বীপের কোম্পানির কোনো ওষুধের বোতল হবে।
মুখ কুঁচকে খালা উত্তর দিলো,
-ওষুধের বোতল?কিন্তু এটার ভেতর থেকে কেমন যেনো গন্ধ্য আসছে মনে হচ্ছে পঁচা দই বা ফলের রসের, কেমন বিশ্রী গন্ধ্য!
-মানুষের নাক না কুকুরের নাক!সারাজীবন জানতাম কুকুরের নাক অনেক প্রখর কার্যগুণসম্পন্ন,এখানে তো দেখছি কুকুরের বদলে এর নাকও ব্যবহার করা যাবে!(মনে মনে)
মিশান বোতল নাকের কাছে নিয়ে শুঁকে দেখলো,
-বিশ্রী গন্ধ্য কোথায়?সব ঠিকঠাক ই তো আছে। কুকুরের পেটে কি আর ঘি হজম হবে!(মনে মনে)
-খালামণি এটা ওষুধের ই ফ্লেভার,হয়তো অনেক দিন ধরে ছাদে পড়ে ছিলো , ভেতরে ময়লা পোকামাকড় গিয়ে হয়তো এটার ফ্লেভারের বিকৃতি ঘটিয়েছে।
-তাহলে তো এটার উপর ময়লা পড়ার কথা!
-খালামণি ভুলে গেলেন, এটা শীত কাল।রাতে কুয়াশা পড়ে ভিজে গেছে সকালে রোদ উঠে শুকিয়ে গেছে, সেই জন্য পরিষ্কার লাগছে।সিম্পল!
– সেটা না হয় মানলাম,কিন্তু এটা দেখতে কেমন মদের বোতলের মত লাগছে।
-আপনি কি কখনো মদ খেয়েছেন?
-না তো!
-বাস্তবে দেখেছেন?
-নাহ, তবে টিভিতে দেখেছি।
-মদের বোতল আরো বড় হয়, আমি বাস্তবে দেখেছি। আর টিভিতে ওগুলো অর্ডার দিয়ে ডিজাইন করে বানায় সিনেমার শ্যুট করার জন্য এমনকি ওগুলো কাঁচের বোতলও না, চিনির বোতল, চিনি দিয়ে বানায় ওসব বোতল।
খালামণি বিষ্ময় দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-তাই নাকি?
-হুম।
-তাহলে তাই ই হবে, দাও বোতলটা ময়লার ঝুড়িতে ফেলে আসি।
-দরকার নেই খালামণি, আপনি এতো কষ্ট করে ছাদে গিয়েছিলেন, আপনি বরং রেস্ট নিন। আমি এটা ফেলে দিয়ে আসি।
-ঠিক আছে ফেলে আসো তাহলে, আমি যাই তাহলে।
খালামণি ঘর থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মিশান মনে মনে একশো একটা বকা দিলো তাকে।
অফিসের কাছাকাছি যেতেই দ্বীপ হঠাৎ গাড়ি থামিয়ে দিলো, পকেট থেকে মোবাইল বের করে কৌশলে চার কদম দূরে থেমে থাকা একটা বাইকের নাম্বারের ছবি তুললো, আরেকটু এগিয়ে গিয়ে বাইক চালকের ছবি তুললো।
ওটা চলে যেতেই দ্বীপ মিশানকে কল দিলো।
-মিশান
-বল
-ম্যাসেঞ্জারে দুটো ছবি দিয়েছি দেখ, একটা বাইকের চালকের আরেকটা বাইকের নাম্বারের।
-তুই কোথায়?
-আমি অফিসের কাছাকাছি সৈয়দ টাওয়ারের এখানে, ওকে এখানেই পেয়েছি।
তুই দেখ এড্রেস আজকের মধ্যে বের করতে পারিস কিনা,
-সমস্যা নেই মেইন জিনিস ই পেয়ে গেছি বাকিটা দেখছি।তুই চিন্তা করিস না।
-ওকে রাখছি।আমি অফিস যাচ্ছি, প্রয়োজন হলে কল করিস।
-বাই
মিশান ফোনের ছবি দুটো দেখতে দেখতে বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো।
(চলবে)
গল্প- তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি
পর্ব- ২২
লেখিকা- রিয়া খান
মিশান বাইকের নাম্বার প্লেটের নাম্বারটা নিয়ে BRTA অফিস থেকে এড্রেস কালেক্ট করে নেয়।পরিচিত লোক থাকায় কোনো কাঠখড় পোড়াতে হয় না এখানে,শুধু একটু সময়ের জন্য বসে অপেক্ষা করতে হয় ।
ঘুরে ফিরে সব নিজেদের ই লোক সেট করা থাকে সব জায়গাতে।
জায়গায় জায়গায় এতো সুবিধা এগুলো সব তীব্রর খাতিরেই, মিশান চাইলে মামার নামও ব্যবহার করতে পারবে অনেক ক্ষেত্রে, কিন্তু ও চায় না এমন কিছু করুক যার জন্য কোনো ভাবে মামার মুখাপেক্ষী হতে হয়। কারণ মামা যথেষ্ট করেছে, তাঁর খাতিরে অনেক কিছু পেয়েছে। বিশেষ করে লেখাপড়া আর চাকরির ক্ষেত্রে মামার নাম অনেক ব্যবহার করা হয়েছে।
-স্যার দেখা করতে পারবেন?
-ব্যস্ত আছি, পরে।
-আমি তো এখন দেখা করতে বলি নি।
একটা জিনিস পেয়েছি আজকে। বলেন তো কি?
-কি আর হবে যত্তসব ফাউ জিনিস,তোমাদের এলাকায় শীত কালে তরমুজের বাম্পার ফলন।
-ঠিক ধরেছেন স্যার।
-কোথায়?
– স্যার বিদ্যুৎ অফিস।
-আইভির অ্যাপয়েন্টমেন্ট টা দিয়েছো?
-হ্যাঁ স্যার,
-ওকে। ফ্রি হলে দেখা করবো, না হলে নাই।
-আচ্ছা,স্যার আরেকটা কথা।
-কি?
– পেন ক্যামেরাটা কি আমার কাছেই রাখবো?নাকি কারো কাছে পাঠিয়ে দেবো আপনার কাছে?
-রাখো,দরকার হলে নিয়ে নেবো।
-ওকে স্যার, আসসালামু আলাইকুম।
-ওয়ালাইকুম আসসালাম।
সাংকেতিক কিছু কথার মাধ্যমে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করে নিলো, কি দিয়ে কি বুঝালো ওরাই ভালো বুঝেছে।
কোনো ভাবেই যেনো কোনো কিছু ফাঁস না হয় সেদিকে অনেক সতর্ক।
এমনকি সেদিন মিশানের সাথে শপিংমলে যাওয়ার পর তীব্র লোক দিয়ে সেরাতের সব কটা সিসিক্যামেরার ফুটেজ থেকে আগে পরে মিলিয়ে তিনঘণ্টার ফুটেজ ডিলেট করিয়ে নেয়।
যেনো কোথাও ওদের একসাথে দেখা গেলেও সন্দেহজনক ভাবে দেখা না যায়।
আর মিশানও বাইরে বের হলে মাথাই স্পোর্টস ক্যাপ আর চোখে সানগ্লাস থাকেই।
মাঝে মাঝে ওয়ান টাইম মাস্ক পড়েও থাকে, তাই মাঠেঘাটে কোথাও মিশানের পুরো চেহারা দেখাটা এতো সহজ কথা না।
আপাততো দিনের বেলা মিশানের কোনো কাজ নেই,এ বেলা ঘুরে ফিরে কাটালেও মন্দ হয় না।
মিশানের সময় কাটানোর সঙ্গী একমাত্র অই ফুটপাতের ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে গুলো।
পকেটে যখন টাকা থাকে তখনি ওদের সামনে যায়, না হলে একা একাই ঘুরে।
শুন্যপকেটে ওদের সামনে গেলে যখন ওরা কোনো কিছুর আবদার করে বসে তখন সেটা দিতে না পারলে ভেতরে ভেতরে কষ্ট হয়, সেজন্যই ওদের কাছে খালি পকেটে যায় না।
কিছু না করেও মিশানের খেয়ে দেয়ে দিব্যি ভালো দিন কাটে, কিন্তু ওদের কোনোমতে একবেলা পেটের আহারের জন্য সারাদিন কত যুদ্ধ পরিশ্রম ই করতে হয়।
মিশানের সাথে কথা শেষ করে, তীব্র কয়েকটা জায়গায় কিছু সাংকেতিক ওয়ার্ড লিখে এসএমএস পাঠায়,
এরমধ্যে মিশান আব্দুর রহমানের কাছে অই ছেলের এড্রেস বায়োডাটা পাঠিয়ে দিয়েছে।
আব্দুর রহমান তীব্রর অফিসের ভেতরে এসেই একটা খাম হাতে দিলো।
-স্যার!
-বলো,
-বাইরে দীপ্তি ম্যাডামকে দেখলাম, আপনি না উনাকে কল দিচ্ছিলেন, উনি রিসিভ করছিলো না।তাহলে এখন কথা বলে নিতে পারেন।
-ওর সাথে কি ওর ভাই আছে?
-হ্যাঁ আদিব স্যারকেও দেখলাম।
-তুমি বললে তো দীপ্তি আসবে না,আমি গেলেও আমায় এড়িয়ে যাবে, কি করা যায়?
-বুঝতে পারছি না স্যার।
তীব্র মোবাইল বের করে দীপ্তির ভাই আদিবকে কল দিলো।
-হ্যাঁ তীব্র বলো।
-আদিব তোমার সাথে যদি দীপ্তি কখনো দেখা করতে আসে, তাহলে ওকে আমার অফিসে আসতে বলো, একটু দরকার আছে।
-ও তাই নাকি,দীপ্তি তো আমার এখানেই, দাঁড়াও আমি এখনি পাঠাচ্ছি।
ফোন রেখেই আদিব দীপ্তিকে বলে,
-দীপ্তি চল তোকে তীব্রর অফিসে দিয়ে আসি।
-কেনো?
– তোর সাথে নাকি কি দরকার আছে, বললো।
-আমার এখন কাজ আছে সময় নেই, যেতে পারবো না।
-আরে বেশি সময় লাগবে না,তুই ওর সাথে দেখা করতে যা,ও কি বলে সেটা শুনেই চলে যাবি। আমার সাথে তো কাজ শেষ,আমার কাছে আসতে হবে না।ওর সাথে দেখা করেই চলে যা।
-………………
দীপ্তি কিছু না বলে চুপচাপ রইলো,ওর মন চাইছে না তীব্রর সামনে দাঁড়াতে।
তবুও যেতে হচ্ছে,জোর দিয়ে বলতেও পারছে না কিছু, আদিব যদি আবার সন্দেহ করে।
দীপ্তিকে তীব্রর অফিসে কক্ষের সামনে দিয়ে আদিব চলে গেলো,
-আসবো?
দীপ্তিকে দেখে হাতের কলম টেবিলে রেখে তীব্র উঠে দাঁড়িয়ে বললো,
-দীপ্তি আসো।
দীপ্তি ভেতরে আসলো,তীব্রর সামনে দাঁড়াতে ভেতরে অনেক গিল্টি ফিল হচ্ছে, একরকম বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে গেছে।
-বসো।
-বসবো না, কি বলবে বলো। আমার কাজ আছে।
-চা, কফি?
-কোনোটাই না।
তীব্র নরম স্বরে বললো,
-একটু বসো না প্লিজ!
দীপ্তি একটু বিরক্তি প্রকাশ করে অন্যদিকে তাকিয়ে চেয়ার টেনে বসলো।
-এতোবার কল দেয়ার পরেও রিসিভ কেনো করছিলে না?
-এমনিই, ইচ্ছে করছিলো না।
তীব্র দীপ্তির মুখের দিকে তাকিয়ে খেয়াল করলো, এতো সুন্দর মেয়েটাকে আজ কেমন ফ্যাকাসে দেখাচ্ছে, চোখ দুটো দেখেই বুঝা যাচ্ছে রাতে এক ফোঁটাও ঘুমাই নি,হয়তো সারা রাত ই কেঁদেছে অনেক।
আনমনে হাতের দিকে তাকিয়ে হাত কচলাচ্ছে, ঠোঁটের অঙ্গভঙ্গি দেখে মনে হচ্ছে দীপ্তি এখন কথা বলতে গেলেই কেঁদে দেবে। শ্বাস প্রশ্বাস আটকে আসছে, মনে হচ্ছে লম্বা নিশ্বাস নিতে পারলে, যন্ত্রণা একটু নিরাময় হতো।
মেয়েটার হাসির রেখা এমন ভাবে ছিন্ন হয়েছে যে কখনো আর ফিরে আসবে না,এভাবেই চলবে জীবন।
চোখে দেখে সবটা বুঝতে পারলেও তীব্রর কিছু করার নেই।দীপ্তির হাসি ফিরিয়ে দেয়ার জন্য ওর সাথে প্রতারণা করতে চায় না।
-দীপ্তি আমি দুঃখিত! তোমাকে আমার নিজে থেকে আগেই সব বলা উচিৎ ছিলো,এভাবে অপেক্ষা না করিয়ে।
আসলে আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম যে এরকম কোনো প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলাম।
জানোই তো কত কাজের প্রেশারে থাকি, আমার উপর দিয়ে অতীতে কি গিয়েছে।
সব মিলিয়ে আমার মাথা আমার নেই দীপ্তি।
সব ঠিক থাকতো যদি অতীতটা ঠিক থাকতো। তোমার, আমার সবার জীবন ই সুন্দর হতো।
আমি জানিনা এখন কি করবো, কি করা উচিৎ, রাতে ঘুমাতে পারি না এটা ভেবে আজ সারাদিন যা যা করেছি তা ঠিক করেছি কিনা, কাল সারাদিন কি কি করবো।
জানিনা তোমার অগোছালো জীবনটা আমি কি করে গোছিয়ে দেবো, আই উইশ তোমার জীবনের সব কিছু কেউ এসে গুছিয়ে দিক।তোমার চোখে ঠোঁটে কোনো ভাবেই দুঃখ বিলাপ মানায় না। সব সময় হাসি, লজ্জা লেগে থাকবে তোমার চেহারাতে এটাই মানানসই।
তোমার কাছে ক্ষমা চেয়ে”ক্ষমা”শব্দটাকে লজ্জিত করতে চাই না।
আমার এই কাজের কোনো ক্ষমাই নেই, কারো জীবন নষ্ট করার অধিকার কারো হাতে নেই, সেখানে আমি তোমার জীবনের এতোগুলো সময় নষ্ট করে দিয়েছি।
-ইট’স ওকে!
বাট আই এম সরি তীব্র।
আমিই তোমায় নিয়ে ভ্রান্ত ধারণা পোষে এতোগুলো বছর কাটিয়ে দিয়েছি।
তুমি কখনো বলোনি আমায় ভালোবাসো, তবুও আমি মনে করে বসে থাকতাম তুমি আমায় ভালোবাসো।
দু একবার আমার দিকে তাকিয়ে মিটমিট করে হাসতে দেখে চোখে চোখ পড়লে তুমি যখন নজর ফিরিয়ে নিতে, আমি মনে করতাম তুমি আমায় ভালোবাসো। অকারণে কখনো রাগ দেখালে আমি মনে করতাম তুমি ভালোবাসো।
সবাই মিলে শপিংয়ে বা বাইরে কোথাও ঘুরতে গেলে কোনো ছেলে আমার দিকে তাকালে, ইভটিজিং করলে আমার ভাই সহ তোমরা মিলে তাকে পিটিয়ে আসতে।তখন আমি মনে করতাম তুমি আমায় ভালোবাসো।কখনো একটু কেয়ার করলে মনে করতাম ভালোবাসো তাই।আমার মন খারাপ দেখলে, জোকস বলে বলে হাসানোর চেষ্টা করলে ভাবতাম ভালোবাসো তাই আমার মন খারাপ সহ্য হচ্ছে না।পরীক্ষাতে আশানুরূপ রেজাল্ট না আসলে তুমি প্রতিনিয়ত আমাকে এতো সুন্দর করে মোটিভেট করতে,যা আমার বাবা মাও পারতো না। আমি বোকাটা স্বাভাবিক ব্যাপারটাকে ধরে নিয়েছিলাম তোমার মোটিভেশনাল কথার মাঝে ভালোবাসা আছে বলেই আমার উপর এতো ভালো প্রভাব পড়ছে।
ভুলে গেছিলাম আমাদের সম্পর্কটা বন্ধুত্বের।বন্ধুত্বে এরকম খুনসুটি, কেয়ারিং, রাগ,অভিমান, হাসি, সাপোর্ট এসব কিছু থাকাটাই স্বাভাবিক। আমিই পাগল সব নিজের মতো বানিয়ে নিয়েছিলাম।
কিন্তু শেষ যেদিন তোমার সাথে আমার দেখা হয় তখন যে নিজে থেকে বলেছিলে “আমার জন্য অপেক্ষা করো, তাড়াহুড়ো করে এমন কাউকে বিয়ে করো না যার সাথে থাকতে পারবে না।
আমার ফেরা অব্ধি অপেক্ষা করো।
ভালো ছেলে দেখে বিয়ে দেবো আর যদি ভালো ছেলে না পাই তাহলে নিজেই করে নেবো।”
তোমার এইটুকু উক্তিই আমার ভেতরে আশা জাগিয়েছিলো, আমার সব অপেক্ষার ক্লান্তি বিনাশ হচ্ছিলো, সেদিন থেকে অপেক্ষা করতে আর কষ্ট হতো না, সময়টা দীর্ঘ লাগতো কিন্তু কষ্ট হতো না।
কথাগুলো বলতে বলতে দীপ্তি চোখের পানি আটকে রাখতে পারলো না, তীব্র টিস্যু এগিয়ে দিলো। দীপ্তি চোখের পানি মুছতে মুছতে আবার বললো,
-কাল রাতে তোমার জীবনের অই কঠিন সত্যিটা জানার পর আমি মেনে নিতে পারছিলাম না কিছু,বার বার মনে হচ্ছিলো আর যাই হোক আমার তীব্র অন্য কাউকে ভালোবাসতে পারে না।
তারপর সারা রাত ধরে নিজেকে বুঝালাম, তুমি সেই তীব্র না যাকে আমি ভালোবাসি। বর্তমানের তুমি সেই তীব্র যে অন্য কাউকে ভালোবাসে।
ধরে নিয়েছি দুজন আলাদা মানুষ। তাছাড়া নিজেকে আর কোনো ভাবে বুঝাতে পারছিলাম না।
তুমি চিন্তা করো না তীব্র, আমি তোমার জীবনে কোনো সমস্যা সৃষ্টি করবো না।
আমি আমার সেই অতীতের বাল্যকালের, কৈশরকালের তীব্রকে ভালোবাসি, বর্তমানের না।নিজেকে বুঝিয়েছি, তুমি সেই তীব্র না যাকে আমি চিনি।
তুমি তোমার শুভাকাঙ্ক্ষীকে নিয়ে ভালো থাকো এই দোয়াই করি।
দীপ্তি কথাগুলো শেষ করেই বের হয়ে গেলো, কারণ কান্নার বেগ আটকাতে তো পারছেই না উল্টো বেড়েই চলছে।
তীব্র দীপ্তিকে না থামিয়ে ওর যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো।
-তুমি ঠিকি বলেছো দীপ্তি আমি সেই তীব্র না যাকে তুমি চেনো। আমি অন্য একটা তীব্র।অতীতের তীব্র ছিলো ইনোসেন্ট আর বর্তমানের তীব্র একটা পাপী। এই পাপী জীবনে তোমাকে ভাসিয়ে তোমার অই সাদা মেঘের মতো জীবনকে কালো করে দিতে চাই না, চাই না তোমার জীবনে বজ্রধ্বনির সাথে বৃষ্টি বর্ষণ হোক। অতীতের পুরো স্টোরিটা তুমি জানো না দীপ্তি। যদি জানো তবে পৃথিবীর সব টুকু ঘৃণা জড়ো করে, তুমি সেই ঘৃণা আমায় করবে।
আমি অনেক বড় অপরাধী দীপ্তি,এতোবড় অপরাধের বোঝা ঘাড়ে পেতে আমি তোমার কাছে গিয়ে নিজের অপরাধ বাড়াতে চাই না।
আমি মানুষটা অনেক খারাপ, অনেক!
কথাগুলো মনে মনে বলে মাথা চেপে বসে অতীতের ডায়েরীতে ডুবে গেলো।
কি এমন হয়েছিলো ওর সাথে যার জন্য তীব্র এতো অনুতপ্ত, নিজের উপর বিরক্ত সেটা তীব্রই ভালো জানে।
মিশান ফুটপাতে গালে দিয়ে চুপচাপ বসে আছে,নিশানের কথা খুব বেশি মনে পড়ছে।
এই রাস্তা দিয়ে দুই বোন কত আঁকাবাঁকা হেঁটেছে। হাঁটতে হাঁটতে দুষ্টুমি করে একজন আরেকজনের গায়ে ঢলে পড়েছে।
নিশান এটা সেটা দেখে বাচ্চাদের মতো বাইনা করেছে।
কোনো ফুচকা ঝালমুড়ির দোকান দেখলে সেদিকে দৌড়ে চলে গেছে।
নিশানের জন্য কাঁদতে কাঁদতে এখন আর কান্না পায় না।কষ্ট হয়,বুক ফেটে আসে কিন্তু চোখ দিয়ে পানি বের হয় না ।
কাঁদতে পারলেও হয়তো মন কিছুটা হাল্কা লাগতো।
কোনো কারণে হাসলেও মন থেকে হাসতে পারে না।শুধু তাল মেলানোর জন্য হাসি হাসে।
মিশানের একাকীত্বের মাঝে সঙ্গ দিতে হঠাৎ করে অবতরণ হলো তমালের,
-মিশান!
ঘাড় ঘুরিয়ে তমালকে দেখে চুপ করে রইলো।
-…………
তমাল পাশে বসতে বসতে প্রশ্ন করলো,
-মন খারাপ?
-নাহ।
-কেনো জানি মনে হচ্ছে মনবিষন্ন তোমার।
-কিছু হয় নি।
-তোমার মাথার ক্যাপটা খুব ভালো লাগে আমার, এটা দিয়ে দাও আমাকে।
-এটা দেয়া যাবে না, আমার টাকা হলে এরকম একটা কিনে দিতে পারবো।
– তোমার কাছে টাকা নেই?
-নাহ।
-আমার কাছে আছে, নিবে?
-নাহ,ধন্যবাদ।
-তোমাকে এভাবে মন খারাপ করে থাকতে দেখলে আমার ভালো লাগে না।
-…………
-ভালোবাসার মানুষের মন খারাপ, কান্না
এসব চোখে দেখে সহ্য করা যায় না।
-তো আমি কি করবো?
-মিশান,তোমার কাছে ভালোবাসা মানে কি?
-নিজের সবটুকু দিয়ে আঁকড়ে ধরে বাঁচার জন্য আপ্রাণ চেষ্টার পরেও নিজের অজান্তে তাকে হারিয়ে যাওয়া।এমন ভাবে হারিয়ে যাওয়া যে কখনো ফিরে পাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।
-তুমি কি কখনো কাউকে হারিয়েছো?
-কাকে হারাইনি বলো।
-তোমার বাবা মা কোথায় থাকে?
-জানি নাহ!
-মানে?
-ছোটো বেলায় একটা লম্বা ঘুম দিয়েছিলাম,যতদূর মনে পড়ে ঘুমের মাঝে কিছু বিকট আওয়াজ শুনছিলাম নাকি স্বপ্ন দেখছিলাম জানি নাহ।
ঘুম থেকে উঠে দেখি আমি অন্য একটা নাম না জানা পৃথিবীতে, সাথে শুধু নিশান । না দেশটাকে চিনতে পারছি, নাতো আশেপাশের মানুষগুলোকে।
বাবা মাকে সেরাতের পর আর দেখতে পাইনি। সময়ের সাথে ভুলে গেছি তাঁরা দেখতে কেমন ছিলো । যখন তাদের চেহারা মনেছিলো তখন তাদের খুঁজতে পারিনি, এখন খুঁজতে পারবো কিন্তু চেহারা মনে নেই।
বেঁচে আছে কি নেই, সেটুকু অব্ধি জানা নেই।
তমাল মন খারাপ করে উত্তর দিলো,
-তুমি কতটুকু ছিলে?
-জানি নাহ।মামা মিমি বলে আমার বয়স ৫ বছর ছিলো।
-তোমার মামা মিমি জানে না, তোমার বাবা মা কোথায়?
-কি করে জানবে, আমার বাবা মা কে সেটাই তো জানে না। উনি আমার আপন মামা না ।
-আমার কোনো স্পেশাল পাওয়ার থাকলে আমি তোমার সব হারিয়ে যাওয়াকে ফিরিয়ে দিতাম মিশান ।
মিশান তমালের দিকে তাকিয়ে মলিন হেসে বললো,
-ধন্যবাদ।
-তুমি অনেক ভালো মিশান!
-রাত হলে মানুষ মারতে মেতে উঠি, তুমি বলছো আমি ভালো?
-তুমি তো আর ভালো মানুষকে মারো না।
-আমি এমন সব মানুষদের মারি, আমি নিজেও জানি না সে ভালো নাকি খারাপ।
-তাহলে মারো কেনো?
-আমার বাঁচার জন্য মদ দরকার, আর তোমার বাঁচার জন্য একজন মানুষ সরানো দরকার। তাহলে কি হবে?
-আমি তোমাকে মদ দেবো, তুমি আমার রাস্তা ক্লিয়ার করবে।
মিশান হেসে দিয়ে তমালের পিঠে চাপড় মেরে বললো,
-ব্রিলিয়ান্ট বয়!সহজে বুঝে গেছো।
-তুমি সহজে বুঝিয়েছো।
মাঝ রাতে সবাই ঘুমিয়ে পড়ার পর,সবার আড়ালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ার মিশনে নামতে হলো মিশানের।
দ্বীপের খালার জন্য বেরুনো টা একটু মুশকিল কারণ উনার ঘরের দরজাটা খোলা রেখে ঘুমান, আর ঘুমের ঘোরেই উঠে হাঁটাচলা করেন,এর জন্য সামনের গেট দিয়ে বের হওয়া সম্ভব না।
সব দিক দিয়ে ভেজাল এই মহিলাটা।
পা টিপে টিপে ঘর থেকে বেরিয়ে প্রথমে বাড়ির ছাদে গেলো।
রেলিংয়ের উপর দিয়ে এমন ভাবে ডিজাইন করা যেখানে সহজেই দড়ি বাঁধা যায়, মিশান চিলেকোঠার ঘরটা আস্তে করে খুলে সেখান থেকে একটা মোটা দড়ি বের করলো,দরজা আটকে দিয়ে রেলিংয়ের সাথে দড়ি বেঁধে নিলো। দড়িটা এক ফিট দুরত্ব পর পর একটা করে গিট দেয়া, যাতে উঠতে নামতে সুবিধা হয়।
এবার দড়ি বেয়ে মিশান নিচে নেমে আসে। এরপর বাড়ির বাইরের ওয়াল ডিঙানোর পালা।
ওয়ালের থেকে দু ফিট দুরত্বে একটা মেহেগুনি গাছ।গাছ বেয়ে কিছুটা উপরে উঠে বাদুড়ের মতো ঝুলে পকেট থেকে প্লাস আর একটা কি যেনো বের করলো, এগুলো দিয়ে ওয়ালের উপরের তারকাটা গুলো খুলে সরিয়ে নিয়ে সেখানে পা রেখে লাফ দিয়ে নেমে গেলো। ফেরার সময় আবার সব কিছু আগের মতো সেট করে দড়ি বেয়ে উপরে উঠে নিজের ঘরে চলে যাবে।
আসল মিশনে ভালোমতো সাকসেসফুল হওয়ার পর এবার মিশান সোজা হাঁটতে শুরু করলো।
বেশ কিছুদূর হেঁটে যেতেই একটা কালোরঙের গাড়ি দেখতে পেলো, যেটার ভেতরে তীব্র মিশানের জন্য অপেক্ষা করছে, এটা তীব্রর অফিসিয়াল কার না ।
অন্য একটা প্রাইভেট কার।
মিশান এসে সোজা গাড়িতে উঠে বসলো।
-জীবনে একটা দুঃখ কখনোই নিরাময় হবে না।আজ অব্ধি টাইমলি এন্ট্রি দেখলাম নাহ!
-স্যার আপনার মতো যখন তখন হনহন করে বাড়ি থেকে বের হতে পারি না, আমার লুকিয়ে বের হতে হয়।
আপনার মতো সুযোগ সুবিধা হলে আমি আপনার আগেই জায়গামতো উপস্থিত হোতাম।
-সোয়া মণ ঘি ও জুটবে না, রাধাও আর নাচবে না।
মিশান নজর বাঁকিয়ে তীব্রর দিকে তাকিয়ে মনে মনে গালী দিলো।
হাই স্পীডে গাড়ি চালিয়ে গাড়িটা একটা এলাকার ভেতর প্রবেশ করালো।এলাকাটা সম্পূর্ণ আবাসিক এলাকা।
কনস্ট্রাকশনের কাজ চলছে এরকম একটা অ্যাপার্টমেন্টের সামনে গাড়ি থামিয়ে, দুজনে উপরে উঠলো,দূরবীক্ষণ যন্ত্র দিয়ে দুজনেই একটা বাড়ি পর্যবেক্ষণ করছে।
-স্যার বাড়িটা দেখেছেন কিরকম হাই ফাই!
পুরো রাজ প্রাসাদ! এই বাড়িতে এক কাপ চা খাওয়ার জন্যে হলেও যেতে হবে স্যার, কি বলেন?
-আমরা গরীব মানুষ, অই বাড়ির ত্রিসীমানায় যেতে পারবোনা আর তো চা।
-ওটা কার বাড়ি স্যার?
-আমার এক্স গার্লফ্রেন্ডের।
-এক্স কি ব্রহ্মাণ্ডে আছে নাকি গেছে?
দূরবীক্ষণে চোখ রেখেই বিরক্তি নিয়ে তীব্র উত্তর দিলো,
-মুখটা একটু অফ রাখতো মিশান।
মিশান চুপ করলো।
এবার চোখ থেকে দূরবীন সরিয়ে বললো,
-অইখানকার সিকিউরিটি কেমন দেখবি?
-দেখান।
তীব্র হাতে হ্যান্ড গ্লাভস পড়ে পকেট থেকে একটা প্লাস্টিকের প্যাকেট বের করলো, যেটার ভেতর ছোট্ট তীরের মতো আর একটা বন্দুকের মতো বস্তু।
বন্দুকের মতো বস্তুটার মুখে ছোট্ট তীর লাগিয়ে, অই বাড়ির দিকে টার্গেট করে শ্যুট করলো,
তীরটা দ্রুতবেগে বাড়িটার দিকে যায়, বাড়ির সীমানার মধ্যে যেতে না যেতেই অনেক জুড়ালো আওয়াজের সাইরেন বেজে উঠে, মিশান তীব্র এতো দূরে থাকার পরেও এই আওয়াজ শুনতে পারছে এমন ভাবে যে কানে বিঁধছে।
-এবার ভাগো, না হলে মারা পড়বো!
কথাটা শেষ করতে না করতেই মিশানের হাত ধরে দুজনে দ্রুতগতিতে নিচের দিকে নেমে গাড়িতে উঠে হাই স্পীডে চালিয়ে এলাকা ছাড়লো!
অনেকটা দূর যাওয়ার পর তীব্র গাড়ী থামালো। মিশান বড় বড় নিশ্বাস নিতে নিতে বললো,
-স্যার অমন কেনো হলো?
-অই বাড়িটাতে এক বিন্দু হাওয়া প্রবেশ করলেও সেটা ওখানকার মানুষ জানে, এতোটা সিকিউরিটি দেয়া!
এতো কঠিন সিকিউরিটি!
-হুম!ভাবো একবার অই বাড়ির মালিক বের হয় কতোটা সিকিউরিটি নিয়ে।
-স্যার ভাবতে পারছি না।
-ভাবতে হবে মিশান, সময় নিয়ে হলেও ভাবতে হবে, আমিও ভাবছি তুমিও ভাবো।ভাবতে ভাবতে আজকে আমি এই এক্সপেরিমেন্টটা করলাম।
-এতো কিছু কেনো করছি স্যার?
-ওকে মারতে।
-স্যার এটাতে আমার লাইফ রিস্ক আছে স্যার পারবো না এটা।
-এটা তুমি মারবে না, আমি মারবো। তুমি জাস্ট আমার সঙ্গ দেবে, মেন্টালি সাপোর্ট দেয়ার জন্য তোমার সাথে থাকতে হবে।
মিশান মুখ বাঁকিয়ে বললো,
-আমাল বয়েই গেতে।
তীব্র চোখ গরম করে মিশানের গলা চেপে ধরতে আসে, তার আগেই মিশান তীব্রর হাতে কামড় দিয়ে দেয়।
-আয়ায়ায়া!এভাবে কামড় দেয় কেউ?বেয়াদব!
-এতো বড় একটা মেয়ের গায়ে হাত তুলে কেউ?
ভদ্রলোক!
রাগ দেখিয়ে মিশান অন্যদিকে ঘুরে বসে রইলো।
তীব্র নিজের হাত মালিশ করছে।
মিশান একনজরে বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে।
বাইরের দিকে কিছু একটা দেখে বিষ্ময়কর দৃষ্টিতে তাকিয়ে মিশান ফিসফিস করে বললো,
-স্যার!
তীব্র ধমকের স্বরে উত্তর দিলো
-কি হয়েছে?
-এতো রাতে মাঝ রাস্তায় একটা গাড়ি থেমে আছে, আবার কেমন কেমন যেনো নড়াচড়াও করছে! স্যার কারো আত্মা না তো? আচ্ছা এই রোডে কি কোনো মার্ডার করেছি?
-কোথায় গাড়ি?
মিশান আঙুল দিয়ে বাইরের দিকে দেখালো, তীব্র মিশানকে ডিঙিয়ে বাইরের দিকে তাকালো অনেকটা দূরে একটা গাড়ি। গাড়ির সিচুয়েশন দেখে বুঝতে পারলো পরিস্থিতি।
-আত্মা না কারো,মানুষ ই আছে।
-কিন্তু ওভাবে নড়ছে কেনো?গিয়ে দেখে আসবো?
-ওখানে গিয়ে দেখে আসতে হবে কেনো এখান থেকেই দেখো।
মিশান তীব্রর মুখের দিকে তাকালো,
-ও হ্যাঁ আমাদের তো দূরবীন আছে!দূরবীনটা দিন স্যার।
-অন্যের কাজে আড়ি পাতবে অবশেষে?
-আড়ি পাতবো মানে কি?হতে পারে কেউ আমাদের এট্যাক করার জন্য ওখানে গাড়ি থামিয়ে ফাঁদ পাতছে।
-আমাদের এট্যাক করবে না।ওরা নিজেরা নিজেদের এট্যাক করছে।
মিশান ভ্রুঁ কুঁচকে বললো,
-কি বলছেন আপনার একটা কথাও মাথায় ঢুকছে না।
তীব্র সিগারেট ধরাতে ধরাতে উত্তর দিলো।
-তোমার জামাকাপড় খুলো তারপর সরাসরি সম্প্রচারের মাধ্যমে দেখাচ্ছি।দেখবে, বুঝবে, ফিল করবে।
বাঁকা করে হলেও মিশানের মাথায় তীব্রর কথাটা ঢুকে গেলো, কয়েক সেকেন্ডের ফ্ল্যাশব্যাক মনে পড়লো,এটা পিকে সিনেমার ড্যান্সিং কারের রিয়েল ভার্সন চলছে এখানে।
ব্যাপারটাতে মিশান লজ্জা না পেয়ে রেগে গেলো তীব্রর লাস্ট কথা শুনে, দাঁত কিড়িমিড়ি করে নাক ফুলিয়ে বললো,
-BNCD!
তীব্র চোখ রাঙিয়ে বললো,
-কি বললি রে তুই?
মিশান তুচ্ছ হাসি দিয়ে বললো,
-বাংলা ন্যাশনাল ক্যাডেটময় দেশ!
-আমাকে কি তোর মতো ই ছাড়া *** মনে হয়?
-তাহলে তো স্যার ঘটনা অন্যরকম,আপনি না হলেও আপনার মা তো তাই না?
তীব্র হাতের সিগারেট ফেলে দিয়ে আগুনদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-তুই গাড়ি থেকে বের হয়ে যা।
-স্যার কি বলেন, আপনার মেন্টাল সাপোর্ট দিবো কিভাবে তাহলে?
-তোর মেন্টাল সাপোর্টের গোষ্ঠী দু*!
যাহ।
মিশান চোখ গরম করে, সীট বেল্ট খুলে গাড়ি থেকে বেরিয়ে যাবে যাবে এমন সময় তীব্র গাড়ি স্টার্ট দিয়ে স্পীড বাড়ালো,মিশান কিছু বলার আগেই তীব্র বললো,
-রাগ করিস না। মেন্টালি সাপোর্ট দে, পেছনের সীটে দেখ মদের বোতল আছে, খা আর মেন্টালি সাপোর্ট দে।
-ব্যাটা ঘুষখোর!
-আবার শুরু করলি?
(চলবে)