তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি পর্ব-২৩+২৪

0
107

গল্প- তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি
পর্ব- ২৩
লেখিকা- রিয়া খান

রেগে গেলেই এখন লস, মিশানের কাছে টাকাও নেই , তাই রাগটাকে আশ্রয় না দিয়ে বোতল হাতে তুলে নেয়াই বেটার।
তীব্রর সাথে আর কোনো তাতলামোতে না জড়িয়ে চুপচাপ বোতলটাই তুলে নিলো হাতে।
এখন তাতলামো করলে,বোতলও যাবে মানসম্মানও যাবে।

-মাঝে মাঝে খারাপ থেকেও ভালোকিছু হয় তাই না স্যার?
-কি খারাপ থেকে কি ভালো হলো শুনি?
-এই যে আপনি আমাকে বিয়ে করেছেন এটা খারাপ, কিন্তু বিয়ে হওয়ার সুবাদে আমি বেকার হওয়া সত্ত্বেও আমার পেট খালি থাকে না। আপনার ঘুষের টাকার ভাগ বসিয়ে দিব্যি ভালো দিনকাল যাচ্ছে।
-তুমি কি কখনো আমায় ঘুষ নিতে দেখেছো?
– পুলিশ মানেই ঘুষখোর বিশেষ করে আপনার মতো উপর কর্মকর্তা রা।
বড় বড় ক্রাইম চাপা দিয়ে রাখে মোটা অংকের টাকার প্রলেপে।
-তুমি কি জানো, কোনো কিছু নিজের চোখে না দেখে শুধু মাত্র ধারণা করে বলাটা অপরাধ।
-জানি কিন্তু আজ অব্ধি এর কোনো নীতিপ্রয়োগ হয় নি।
যেদিন হবে সেদিন অফ যাবো, প্রমিস!
-সেটাই সমস্যা, আমাদের দেশে সব কিছুর ই নীতিমালা আছে কিন্তু নীতিপ্রয়োগ নেই।
-স্যার!
-হুম।
মিশান আগ্রহ নিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-আপনি সত্যিই ঘুষ খান না?
-সেটা তুমি জেনে কি করবে?
-আপনার কথা শুনে মনে হয়, ঘুষ খান না।কিন্তু আপনার ব্যবহার ও চালচলন দেখে মনে হয়, যারা ঘুষ দেয় তাঁরাও আপনাকে মনে মনে গালী দিয়ে যায়,এতোটা কষাই আপনি।

তীব্র মিশানের কথা শুনে তুচ্ছার্থক হাসি দেয়।
-হাসলেন স্যার!
-তোমার মুরগীটার খবর কি?ওটা জবাই দিচ্ছো কবে?
-দেবো ঝোপ বুঝে,কয়টাদিন দানাপানি খেয়ে চিল করার সময় দিয়েছি।
-কত দয়া মায়া তোমার!
-এবার ভাবছি কি স্যার জানেন,বাকি গুলোকে হরর স্টাইলে মারবো।
-যেভাবে মেরে খুশি।তবে কয়টাদিন লেটেই মারা ভালো। এসবিতে খোঁজ নিয়েছিলাম, ওরা এখনো খুঁজেই চলছে তোমাকে। একটু শান্ত হোক ওরা তখন আবার নতুন করে তাণ্ডব শুরু করে দেবে।
-আপনি মুখ না খুললে একটা পিঁপড়াও আমার খোঁজ জানবে না। সমস্যা যতো আপনাকে নিয়ে,কখন কোন ট্র‍্যাপে ফেলে দেন আমায়!
তীব্র বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
-তোমার সব কুকীর্তির সাক্ষী আমি!
-আপনি না, আপনার মোবাইল!
-একই হলো।
মিশান মুখ ভেঙিয়ে অন্য দিকে ঘুরে রইলো, এক বোতল প্রায় শেষ। দেড় বোতল মিশান ভালোভাবে সয়ে নিতে পারে। দু বোতল খেলে স্বাভাবিক অবস্থায় থাকে না, ৮০% নেশারঝোঁকে মাতাল হয়ে যায়।
আর এর বেশি খেলেই বমি শুরু করে দেয়।
অবশ্য তীব্র আজ দু বোতল ই এনেছে। আর মিশান সামনে যতগুলো পায় সব গুলোই খেয়ে ফেলে, এখন যদি মিশানের মাথায় বন্দুক ধরেও বলা হয় আর খাওয়া যাবে না, মিশান শুনবে না।

এক বোতল শেষ দিয়ে দুই নাম্বারটা হাতে নিয়ে খাওয়া শুরু করে দিয়েছে।হাল্কা একটু মাতাল মাতাল ভাব এসেছে কন্ঠস্বরে,
-স্যার!
-বলো
-আপনার রহস্যটা আমার অজানাই রয়ে গেলো স্যার। কেবল আপনার নাম আর পেশা ছাড়া আর কিছু জানতে পারলাম না।
আপনার পরিবার, পাস্ট, প্রেজেন্ট ফিউচার কিচ্ছু জানা নেই আমার। আমার প্রশ্ন হলো,বিয়ে যখন করেছেন ই তাহলে আপনার বাড়িতে কেনো একবারও আমাকে নিয়ে যান নি?এটাও বাদ দিলাম,আপনার বাবা-মা, ভাই-বোন যারা আছে তাদের সামনেও কখনো নেন নি।
এসবের পেছনে কি কারণ?আর আমাকে বিয়ে করার পেছনে কি কারণ?
-কোন উত্তর আগে চাও?
-সব গুলোই।
-আমার ফ্যামিলির সামনে যাওয়ার যদি ইচ্ছে থাকে তোমার, তবে সে ইচ্ছে মেরে ফেলো, এটা কখনোই পূরণ হবে না।
আর আমার বাড়িতে তো কখনোই না।
আর লাস্ট প্রশ্নের উত্তর হলো , তোমাকে বিয়ে করার এক্সাক্ট কারণটা কখনোই বলবো না, তুমি ধরে নাও তোমাকে নিজের কাজে ব্যবহার করার জন্যই বিয়েটা করেছি।

মিশান আর কোনো কথা না বলে চুপচাপ রইলো, একটু একটু করে নেশা ধরছে, দ্বিতীয় বোতলও খালি হওয়ার পথে।

মাঝে মাঝে দু একটা উল্টা পাল্টা কথা বলছে আবার একাই থেমে যাচ্ছে।
মিশানের অবস্থা দেখে বুঝা গেলো ওর আজ আর বাড়ি ফেরা হবে না।
মিশানকে নিয়ে সেই বাড়িটাতে গেলো যেটা মিশানের সিক্রেট বাড়ি, অই বাড়িটাতে তীব্রই থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছে।

জনশুন্য এলাকাতে এমন ভূতুড়ে বাড়িতে কেউ হরর ফিল্মও করতে আসবে না।
তবে বাইরে থেকে দেখে কেউ আন্দাজ করতে পারবে না এই দোতলার ফ্ল্যাট টার ভেতরে এমন ফিটফাট চাকচিক্য ।
দ্বীপের ফোনে তীব্র একটা ম্যাসেজ দিয়ে রাখলো, মিশান আজ ফিরতে পারবে না।না হলে দ্বীপ আবার এই রাতেই মিশানকে খুঁজতে বেরিয়ে পড়বে।

ফ্ল্যাটটার নিচতলাতে কেউ থাকে না, দরজাগুলো তালা মারা , দোতলাতেই থাকে ওরা।

বাড়ির সামনে গাড়ি থামিয়ে মিশানকে ধরে নিয়ে উপরে গেলো, কোলে তুলে নিতে চাইলে মিশান উঠে না।

ভেতরে ঢুকেই বিছানায় গা ছেড়ে দিলো।
শীতটাও প্রচন্ড রকম পড়েছে।
দুই ঘরে মাত্র দুটো কম্বল ই আছে, তীব্র দুটোই এক করে মিশানকে গায়ে দিয়ে দিলো।
মিশান কম্বল জড়িয়ে আয়েসের ঘুম দিলো।
মিশানকে রেখে চলে যাওয়ার জন্য বের হতে নিয়েও কি মনে করে যেনো বের হলো।
এরকম পরিস্থিতিতে প্রতিবারই মিশানকে এই বাড়িতে রেখে তীব্র চলে যায়, কিন্তু আজ যেতে মন টানছে না।
পকেট থেকে মোবাইল বের করে তীব্র ওর মাকে কল দিলো।ওর মায়ের বাজে স্বভাব, তীব্র বাড়ি না ফেরা অব্ধি না ঘুমিয়ে অপেক্ষা করে।
তীব্র ফোন দিতেই ওর মা রিসিভ করলো,
-হ্যালো বাবু কখন ফিরবি?
-আমি আজকে ফিরবো না, তুমি অপেক্ষা করো না।
-কেনো বাবু কোথায় তুই?
তীব্র বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলো,
-ওপস মা, আবার বাবু বাবু করছো কেনো?বড় হয়ে গেছি আমি কতবার মনে করিয়ে দেবো?অভ্যেস তো চেঞ্জ হচ্ছিলো ভালোই আবার কেনো শুরু করলে?
-আচ্ছা বাবা ভুল হয়ে গেছে, এতো কি খেয়াল থাকে?আমি বলেছিতো অভ্যেস বদলাতে সময় লাগবে।
তীব্র নরম স্বরে বললো,
-আমি আমার এক বন্ধুর বাড়িতে এসেছি। এখানেই থেকে যাবো আজকে।
-কোন বন্ধু বাবা?ঢাকার বাইরে কি?আমার জানা মতে তোর সব বন্ধুই তো প্রায় ঢাকার বাইরেই ।
-মা আমার কোনো বন্ধুই না, আমি একটা বিয়ে করেছি তো, সেই বৌয়ের সাথে আছি।
তীব্রর মা মৃদু হেসে বললো,
-তাহলে ঠিক আছে, বউমা থাকলে কোনো চিন্তা নেই।তা বাবা শ্বশুর বাড়িটা কোথায় তোর?আর বউ দেখতে কেমন?
-মা আমার ইয়ার্কি একদম আসছে।ফোনটা রেখে ঘুমিয়ে পড়ো, আমার ঘুম পাচ্ছে ঘুমাবো।

ফোন টা কানে থেকে সরিয়ে কল কেটে দিলো ।এবার মিশান যে ঘরে শুয়ে আছে সেখানে গেলো।
মিশানের সামনে দাঁড়িয়ে এর মুখের দিকে তাকিয়ে, দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
-বহুদিন পর আজ খুব ঘুম পাচ্ছে। তবে অবাক করা বিষয় হলো, বিনা ওষুধে আমার ঘুম পাচ্ছে। এতোটা ঘুম পাচ্ছে যে দাঁড়িয়ে থাকার শক্তি পাচ্ছি না।এমনিতেও রাত শেষের দিকেই, এখানে থেকে গেলেও মন্দ হয় না।
সরি রে সেন্টি! তোর পাশেই এখন ঘুমাতে হবে, প্রচুর শীত পড়েছে, এই শীতে কম্বল ছাড়া ঘুমানো যাবে না, বাধ্য হয়ে তোর পাশেই এখন জায়গা নিতে হবে।তবে ভয় লাগছে,আজ অব্ধি কোনো মেয়ের পাশে শুয়ে রাত কাটাইনি। যদি কোনো এক্সিডেন্ট হয়ে যায়, তার জন্য আমি আগে থেকেই ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।
শুভ রাত্রি!

কথাগুলো বলেই গায়ে থেকে ব্লেজার শার্ট সব খুলে, ধুরুম করে বিছানায় শুয়ে পড়লো।
শীত বা গরম যেটাই থাকুক জামা গায়ে দিয়ে তীব্রর ঘুম আসে না।ওর মতে, খালি গায়ে লেপ কম্বল গায়ে দিয়ে ঘুমালেও মজা।

কম্বলের ভেতর ঢুকে মিশানের গা ঘেঁষে শুয়ে রইলো।
তীব্রর হাত দুটো প্রচন্ড ঠান্ডা হয়ে আছে, তাই কিছুটা সুযোগের সৎ ব্যবহার করলো,
প্রথমে ঠান্ডা হাত দুটো মিশানের পেটের উপর রাখতে চাইলো, কিন্তু পরে ভাবলো এটা বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে। এরপর
আস্তে করে মিশানকে জড়িয়ে ধরার চেষ্টা করলো,মিশান তো ঘুমে বিভোর।
তাই কোনো সমস্যার সম্মুখীন হতে হলো না।কোনো রকম ঝামেলা ছাড়াই মিশানকে জড়িয়ে ধরতে সক্ষম হলো।
কথায় আছে বসতে দিলে মানুষ শুতে চায়,তীব্রর হয়েছে সেই অবস্থা।
একেতে মিশানকে এমন ভাবে জড়িয়ে ধরেছে যেনো মিশান একটা কোল বালিশ, তারমাঝে মিশানকে জড়িয়ে ধরার সুবাদে কৃতজ্ঞ স্বরূপ কপালে একটা চুমু খেয়ে দিলো।
-আগে যদি জানতাম বউকে জড়িয়ে ঘুমাতে এতো মজা,বিয়েটা আরো দশবছর আগেই করতাম!বউ তো নয় পুরো শরীর গরমের হিটার!

গা গরম হতেই চোখ বন্ধ করতেই ঘুমে বিহ্বল।

ভোর বেলা ঘুম ভাঙতেই বিছানা ছেড়ে দ্বীপ দৌড়ে ছাদে যায়, মিশান যে দড়ি বেঁধে রেখেছে রেলিংয়ে সেটা সরাতে।
মিশান যেহেতু ফিরতে পারে নি সেহেতু দ্বীপের ই দায়িত্ব সব কিছু আগের মতো ঘুছিয়ে সেট করে রাখা।
৭ টার দিকে দ্বীপের বাবা উঠে চা খেতে খেতে যখন ওদের এক্সারসাইজ করতে যাওয়ার জন্য ডেকে পাঠায়, তখন দ্বীপ তাপসিন বেরিয়ে আসে।
মিশানকে মিসিং দেখে দ্বীপের বাবা জিজ্ঞেস করে।
-মিশান কোথায়?
দ্বীপ কনফিডেন্সের সাথে উত্তর দেয়,
-বাবা মিশান ঘুম থেকে উঠেছে সেই ভোর ছয়টাই, আমাকে বললো ওর মাথা খুব যন্ত্রণা করছে,বাইরে দিয়ে হাঁটলে হয়তো ভালো লাগবে, সেজন্য ও আগেই বেরিয়ে গেছে, এতোক্ষণে হয়তো ও রমনা ছাড়িয়ে গেছে হাঁটতে হাঁটতে?
-মাথা কি খুব যন্ত্রণা করছিলো? পেইন কিলার খাইয়ে দিবে না!এভাবে অই অবস্থায় একা ছাড়া ঠিক হয়েছে?
-বাবা ও পেইন কিলার খেয়ে নিয়েছে, তারপরেও বললো ‘ভালো লাগছে না বাইরে দিয়ে হেঁটে আসবো’ আমি ভাবলাম সকাল বেলার পরিবেশ এখন হাঁটলেও মন দিল হাল্কা লাগবে তাই বাঁধা দিলাম না।
– তুমিও যেতে ওর সাথে।
-ও কি কাউকে সাথে নেয়ার।
-ঠিক আছে চলো তাহলে।
দ্বীপের উত্তরে সন্দেহজনক কিছু না পেয়ে ব্যাপার টা স্বাভাবিক ভাবে নিয়ে নেয়।

সকাল বেলা যখন স্বাভাবিক নিয়মে ঘুম ভেঙে যায়, নিজের সাথে ভারী কোনো বস্তুর লেগে থাকা অনুভব করলো।
মনে হচ্ছে একটা পাথরের খাম্বার সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে, নিজের ইচ্ছে মতো নড়া
চড়া করতে পারছে না।
মিটমিট করে মিশান চোখ খুলে তাকালো।
ভালোমতো ঘুম সরে যাওয়ার পর বুঝতে পারলো ওকে কেউ ঝাপটে জড়িয়ে ধরে নিজের সাথে চাপা দিয়ে রেখেছে।
হাত কোনো মতে কম্বলের ভেতর থেকে বের করে।
মুখের উপর থেকে কম্বল সরাতেই তীব্রর মুখও বেরিয়ে এলো। নিজের সাথে এভাবে তীব্রকে জড়িয়ে থাকতে দেখে মিশান কত এংগেলে ফাটবে বুঝতে পারছে না।
নিজের গায়ের সবটুকু শক্তি দিয়ে তীব্রকে ধাক্কা মারলো।

মিশানের ধাক্কা খেয়ে তীব্রর ঘুম ভেঙে যায়, মিশানের মুখের দিকে তাকিয়ে দেখে মিশানের চেহারা থেকে রাগে আগুনের তাপ বেরিয়ে আসছে। শুকনো মরিচের মতো লাল হয়ে আছে ওর চেহারা।
তীব্রকে কিছু বলবে তার আগেই খেয়াল করলো, তীব্রর গায়ে জামা নেই, শুধু প্যান্ট টা পড়া,মিশান নিজের গায়ের দিকে তাকালো।নিজের জামাকাপড় ঠিক দেখতে পাচ্ছে আবার!
পরিস্থিতি দেখে মিশান ঘাবড়ে গেলো।
মিশান উচ্চস্বরে বলে উঠোলো,
-এই সত্যি করে বলেন কি করেছেন আমার সাথে?
-আমি তো কিছু করিনি।
-তাহলে আপনার গায়ের জামা কোথায়?আর আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরে শুয়ে ছিলেন কেনো?

সোজা উত্তর না দিয়ে তীব্র, পেঁচিয়ে উত্তর দিলো, মিশানকে উত্তেজিত করার লক্ষ্যে।
-তুমিই তো খুলে দিলে রাতে,আমি তো ইচ্ছে করে খুলি নি।
-আমি খুলে দিয়েছি?ফাজলামো পেয়েছেন? আমার কাজ নেই খেয়েদেয়ে? সত্যি করে বলেন বলছি, না হলে গলা টিপে মেরে ফেলবো।
-আমার কিছু মনে নেই তো, রাতে আমিও মদ খেয়েছিলাম তোমার সাথে।আমি ইচ্ছে করে খাই নি তুমিই জোর করে খাইয়েছো। তারপর কি হয়েছে জানি না তো।
-আমি যে কিছু করিনি এটা শিউর,
-আপনাকে দিয়ে বিশ্বাস নেই। পিল খেতে হবে আমার। অসভ্য লোক।আপনি আমার।সাথে এখানে থেকে গেছেন কেনো?আপনি ইচ্ছে করে এখানে ছিলেন তাই না?আপনার বদ উদ্দেশ্য যে আগে থেকেই ছিলো আমি বুঝতে পারছি।
এতো বড় সর্বনাশ করে দিলেন! মানুষ এতো নিমক হারাম, ক্রিমিনাল হতে পারে জানা ছিলো না।

কথাগুলো বলতে বলতে মিশান কেঁদে দিলো।
-আরে কাঁদছিস কেনো তুই?কিছু হয়নি আমাদের মধ্যে।অনেক শীত লাগছিলো তাই জড়িয়ে ধরে শুয়েছিলাম এর বেশি কিছু হয় নি, আমার স্পষ্ট মনে আছে।
-তাহলে আপনার গায়ের জামা কাপড় কই?
-আরে আমি জামা গায়ে দিয়ে ঘুমাতে পারি না।
মিশান কান্নার বেগ বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
-না আমি বিশ্বাস করি না। আপনি কেনো এমন করলেন স্যার? বিয়ে করেছেন বলে আমায় কিনে নিয়েছেন?আমিই বা কি করে সব মেনে নিলাম! কাল মদের বোতলে কি মিশিয়েছিলেন বলেন, যার জন্য আমি কিচ্ছু টের পাই নি!

তীব্র উঠে বসে ধমক দিয়ে বললো।
-এই মিশান কান্না থামা বলছি। কান্না থামা!
মিশান কান্না থামালো।

তীব্র নরম স্বরে বললো,
-তোমার শরীর কি ব্যাথা করছে?
মিশান চোখ মুছতে মুছতে বললো,
-শরীর?
-হুম, বিছানা থেকে উঠে একটু হাঁটো, দেখো শরীর ব্যাথা করছে কিনা।

মিশান বিছানা ছেড়ে উঠে নড়েচড়ে বললো,
-না তো!
-মোবাইলের ফ্রন্ট ক্যামেরা দিয়ে দেখো মুখে বা গায়ে কোনো লাল, কালো, খয়েড়ী, দাগ আছে কিনা।

তীব্রর কথা মতো মোবাইল নিয়ে দেখলো,
-কোথাও কোনো দাগ নেই।
-এবার আমার কাছে এসে দেখো, আমার গায়ে কোনো আঁচড়-খামচির দাগ আছে কিনা।
মিশান তীব্রর পুরো শরীর ভালো মতো দেখে বললো,
-না তো।
-তাহলে এন্সার ক্লিয়ার। তোমার আমার মাঝে কিচ্ছু হয় নি।তারপরেও যদি বিশ্বাস না হয় তাহলে দেখো,তোমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আমার প্যান্ট ভিজে গেছে আর কোনো প্রমাণ চাই? কিছু হলে অবশ্যই এরকম কিছু হতো না, এইটুকু জ্ঞান আছে নিশ্চয়?
-তাহলে আপনি আমার সাথে এক বিছানায় আমাকে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়েছিলেন কেনো?
-আমার সাথে ঘুমানোটা তোমার সমস্যা, আমার সমস্যা না।আমার ইচ্ছে হয়েছে, শীত করছিলো তাই শুয়েছি ওভাবে।

মিশান চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে নজর সরিয়ে নিলো।
একটা বক্স থেকে জামা বের করে বাথরুমে ঢুকে গেলো, সোজা কথা গা জ্বলছে মিশানের।

গোসল দিয়ে মাথার চুল মুছতে মুছতে বের হয়। তীব্র মিশানের দিকে তাকিয়ে ডেভিল স্মাইল দিয়ে বলে,
-সেন্টি!
মিশান গম্ভীর সরে উত্তর দিলো,
-বলেন।
– মনে কখনো প্রশ্ন জাগে না, অন্য দেশ থেকে বাংলাদেশে কি করে এলে?

মিশান তীব্রর কথা শুনে রড হয়ে গেলো।
তীব্রর মুখের দিকে তাকিয়ে রইলো, মিশানের চোখ দুটো লাল টকটকে হয়ে আছে,
তীব্র একনজর মিশানের দিকে তাকিয়ে ভ্রুঁ নাচালো।
-কে আপনি?
-…………
-কি করে জানেন এত্তসব? আমার সম্পর্কিত কোন খবরটা আপনার অজানা আছে? কতোদিন পিছু লেগেছিলেন আমার,এসব কিছু জানতে?
-সত্য কখনো চাপা থাকে না মিশান, কোনো না কোনো ভাবে বেরিয়েই আসে।
-এই সত্যিটা আমার মামা মিমি ছাড়া আর কেউ জানে না,সবাই জানে আমাকে আর নিশানকে তাঁরা নিজেদের মেয়ের মতো লালন পালন করেন, সবাই এটাই জানে আমরা মামার বোনের মেয়ে ।
– তোমার সব কিছুই মনে থাকে, খামোখা মনে না রাখার ভান করো, আমার ধারণা ও জানা মতে তোমার জ্ঞান হয়েছে পর থেকে তোমার জীবন সংক্রান্ত সমস্তকিছু তোমার মনে আছে।
-ভুল স্যার, আপনার ধারণা ভুল। আমি চাইলে একটা জিনিস স্পষ্ট মনে রাখতে পারি, কিন্তু সব কিছু না।
যতো বেশি কন্টেন্ট আমি মাথায় বহন করবো আমার চাপ ততোই বেড়ে যায়, সেজন্য আমি সব ভুলে যাই।আমার কিছুই মনে নেই।
-আমি নির্বোধ না।যাই হোক তোমাকে দেখে কি মনে হয় জানো?
-কি?
-তোর চেহারাতে পাকিস্তানি পাকিস্তানি একটা ছাপ আছে।
-আমি এতো সুন্দর?
-আমি কখন বললাম তুই সুন্দর?
বলেছি, তোকে দেখতে পাকিস্তানিদের মতো, একটাবারও কি বলেছি তুই সুন্দর?
বেড়ালের মতো নীল চোখ,দেখতে খুবই জঘন্য লাগে। পুরো চেহারাটা নষ্ট করে দিয়েছে তোর বেড়াল চোখ দুটো।
-আর আপনার চোখ বাদুড়ের মতো জানেন?খুব সুন্দর লাগে, শুধু বাদুড়ের মতো ঝুলে থাকেন না বলেই আপনাকে পুরোটা বাদুড় লাগে না।

কথাগুলো বলেই মিশান তীব্রর সামনে থেকে চলে গেলো।
তীব্র আরো কিছু বলতে চেয়েছিলো মিশানকে, কিন্তু মিশান কোনো স্পেস না দিয়েই চলে যায়।

তীব্র সামনে থেকে চলে যাওয়ার কারণ মিশানের রাগ না,এক টুকরো অতীত মিশানকে মনে করিয়ে দেয়ার দ্বায়ে সরে গেলো।কান্না পাচ্ছে না, বুক খুব কাঁপছে অতীতটা মনে করে। যন্ত্রণা চেপে, মনে মনে বলতে লাগলো,
-আপনি ঠিকি বলেছেন স্যার।আমি সত্যিই কিছু ভুলতে পারি না,কিছু কিছু জিনিস আমি হাজার চাইলেও ভুলতে পারি না।
আমার অতীত পুরোটা মনে আছে। আমার পাঁচ বছর, আট মাস, সতেরো দিন বয়সী জীবন হঠাৎ বদলে যাওয়ার পুরো চ্যাপ্টারটাই মনে আছে।তবে আমি আমার অতীত বুঝতে পারি না, সব মনে থাকলেও আমার অতীত বুঝতে পারি না। যদি কেউ আমাকে আমার অতীতের সারমর্মটা বুঝিয়ে দিতো তাও হয়তো কিছুটা শান্ত হতো আমার জীবন!সেই সুত্রে আমার সত্যিই কিছু মনে নেই।

একটা অন্ধকার গভীর রাত, রাস্তায় শুধু কুকুরের ডাক শোনা যাচ্ছে, একজন যুবতি নারী কোলে একটা ছোট্ট বাচ্চা আর আরেক হাতে একটা পাঁচ ছয় বছর বয়সী মেয়েকে নিয়ে খুব জোরে দৌড়াচ্ছে।
অনেক্ষণ দৌড়ানোর পর একটা জায়গায় থেমে যুবতী নারীটি তাঁর ছোট্ট মেয়েকে বললো,
-মিশান বেটি মাম্মাকা বাতকি ধ্যান রাখনা, কিছি তরিকাছে ওয়াদা তোর না যায়ে।আজ সোভা মে মেইনে কিয়া কাহাতা তোমকো ইয়াদ হ্যে না বেটা?
-হা মাম্মাম মুঝে সব কুছ ইয়াদ হ্যে। মুঝে নিশানকো বহুত ছাড়া পেয়ার দেনা হ্যে, নিশানকো কাভি বি তোমহারা কম মেহেছুছ নেহি হোনে দেঙ্গে। যাব তাক তুম লট না আও তাব তাক নিশানকো আপনা সাথ সাম্বালকে রাখনা হ্যে, উসকো কাভি দুঃখ্ নেহি পৌঁচানা দৌঙ্গি।
-বেটা আপনা আখ বান্ধ কারলো জারা।আপনা বেহেনকো সাম্বালকে রাখনা। যাব তাক মেইনে নেহি আতিহু তাবতাগ কিছিকো নেহি বাতানা তোমহারা ঘার কাহাপার।
-লেকিন মাম্মা তুম কাহা যাওগি?কাব লট আওগি?
-কাহি নে জানা মুঝে বেটা, মেইনে কাহা তুম আপনা আখ বন্ধ কার লো।আখ খুলকে যাব দেখোগী মেইনে তুম দুনোকি সাথ নেহি, তাব ঘাবড়া মাত যাও, ঠিক হ্যে বেটা?
-ঠিকহ্যে মাম্মাম, লেক ইন মুঝে বাহুত ডর লাগ রাহাহ্যে, তুম কিয়া সামাঝনা চাহো মুঝে কুছ নেহি সামাঝ আ রাহা।ইয়ে তো বাতাও হাম আভিতাক কাহাহু? হাম ইতনা ছুট ছুটকে ইহা কিউ আইয়ি?
-মিশান ! মাম্মা কা পাছ যাদা ওয়াক্ত নেহি হ্যে। তুম জলছে জলদ আপনা আখ বন্ধ কারলো।যাব সোভা হগি তাব তোমকো সাবকুছ আপনে আপ সামাঝ আ যায়েগী।
-আগার মুঝে নিদ নেহি আয়ে তো মেইনে কেউ আখ বান্ধ কারকে রাখো মাম্মাম?
মিশানকে নিয়ে একটা জায়গায় বসিয়ে নিশানকে ওর কোলে দিয়ে ব্যাগ থেকে একটা স্প্রে আর রুমাল বের করে, রুমালে
স্প্রে করে চোখ ভরা পানি নিয়ে বলে,
-ইয়া খোদা মেরি দোনো বেটিকো রাখশা কারনা। আপনা হেফাজাত ম্যে রাখনা মেরি দো বেটিকো।
কাঁদতে কাঁদতে রুমালটা মিশানের নাকে চেপে ধরে আর মিশান জ্ঞান হারা হয়ে যায়।

(চলবে)

গল্প- তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি
পর্ব- ২৪
লেখিকা- রিয়া খান

জ্ঞান যখন ফিরে আসে মিশানের, নিজেকে তখন একটা ছোট্ট বদ্ধ জায়গায় দেখতে পায়। ভেতরটাতে পুরো অন্ধকার।
কোথায় আছে কিচ্ছু বুঝতে পারছে না।
মনে হচ্ছে একটা ছোট্ট বাক্সের ভেতর বন্দী আছে, এমন সময় মিশানের গায়ের সাথে লাগানো বেবি ক্যারিয়ার থেকে চিৎকার শুরু করে নিশান, ছোট্ট কয়েক মাসের বাচ্চা, এভাবে অন্ধকার দেখলে কাঁদবে এটাই স্বাভাবিক।

এইটুকু ছোট্ট মিশান আরেকটা ছোট্ট বাচ্চাকে কিভাবে কন্ট্রোল করবে!বুঝতে পারছে না কি হচ্ছে নিজের সাথে।
মা ই বা কোথায় গেলো?
নিশানের কান্না থামাতে গিয়ে মিশান মহা বিপাকে পড়ে গেছে।
নিজের কান্না থামাবে নাকি কোলে থাকা ছোটো বোনের।

বাড়িতে থাকা কালীন নিশান কেঁদে উঠলে মাকে দেখতো নিশানের মুখে ফিটার ধরলে, দুধ খেতে খেতে কান্না থেমে ঘুমিয়ে যেতো।
মিশানও বেশ কয়েকবার শখ করে নিশানকে খাইয়ে দিয়েছে।
কিন্তু এখন ফিটার পাবে কোথায়!
হতভম্ব হয়ে নড়াচড়া করতে গিয়ে পিঠের সাথে একটা ব্যাগ দেখতে পেলো, মিশান অন্ধকারেই ব্যাগটা খোলার চেষ্টা করলো,একটা চেইন হাতে পড়তেই চেইন টান দেয়, আর ব্যাগ খুলে যেতেই কিছু জিনিস গড়িয়ে পড়লো। তারমধ্যে একটা গোল সবুজ রঙের বল ছিলো,বলটা মিশানের।এটা একটা বিশেষ বল,যা অন্ধকারে আলো বিচ্ছুরণ করে।
আর এখন বলটা অন্ধকারে বেরিয়ে আসায় আলো বিচ্ছুরিত করছে, অন্ধকার জায়গাটুকু সবুজ আলো দিয়ে ভরে গেলো।
এবার মিশান সব টুকু জায়গা ভালো মতো দেখতে পায় আধোআধো আলোতে।
ব্যাগের মধ্যে মা আগেই নিশানের জন্য ফিটারে দুধ রেখে দিয়েছিলো, মিশান সেটা দেখতে পেয়ে নিশানের মুখে ফিটার দেয়।
খিদের কারণেই নিশান এতো কান্না করছিলো। ফিটার খেতে খেতে আবার ঘুমিয়ে যায় নিশান।

নিশান ঘুমিয়ে পড়ার পর মিশান থ হয়ে বসে
থাকে, বুঝতে পারছে না কোথায় আছে, হঠাৎ এমন পরিস্থিতিতে মিশান পুরোটাই আতংকিত। মায়ের কথার ভাবে মনে হচ্ছিলো, ওর মা ওদের রেখে কোথাও যাবে, কিন্তু এখন তার উল্টো দেখতে পাচ্ছে।
এতোটা ভয় আর আতংক মিশানকে চেপে ধরেছে যে কান্না করতে ভুলে গেছে।
মিশানের মা তখন ক্লোরোফরম ইউজ করে মিশানকে অজ্ঞান করেছিলো,যার রেশ এখনো কিছুটা আছে,মায়ের কথা ভাবতে ভাবতে ব্যাগের সাথে হেলান দিয়ে মিশান ঘুমে তলিয়ে পড়ে।

সকাল নয়টার দিকে সাদেক খান কোথাও থেকে ঢাকায় ফিরেন, ওনার পরিধানে সেনাবাহিনী ইউনিফর্ম । তখন তিনি কর্নেল ছিলেন না, মেজর ছিলেন। উনি কর্নেল হয়েছেন বর্তমান থেকে এগারো বছর আগে।

বাড়ি ফিরে ড্রাইভারকে বলে গাড়ির ডিকি থেকে ব্যাগপত্র বের করতে।
গাড়ি থেকে বেরিয়ে বাড়ির ভেতর ঢুকবে তখন পেছন থেকে উনার ড্রাইভার ডাক দিয়ে উঠে,
-স্যার!
সাদেক খান পেছনে ঘুরে তাকান।
গাড়ির ডিকি খুলে দাঁড়িয়ে ভীতস্বরে ড্রাইভার উনাকে বললেন,
-স্যার এইদিকে আসুন একটু!
সাদেক খান গাড়ির ডিকির সামনে গেলো।
ড্রাইভার ডিকির ভেতরের দিকে আঙুল দিয়ে ইশারা করে দেখা।লো,
-স্যার দেখুন।
সাদেক খান ডিকির ভেতর তাকিয়ে দেখে পরীর মতো সুন্দর ফুটফুটে দুটো বাচ্চা । মনে হচ্ছে মানুষ না এরা। কোনো রূপকথার গল্পের সেই স্নো হোয়াইট এঞ্জেল।
সাদেক খান অপলক হয়ে বাচ্চা দুটোর দিকে তাকিয়ে আছে।
দৃষ্টিটা এতো বেশি কেড়ে নিয়েছে যে বাচ্চাদুটোর মোহে পড়ে গেলো।
-তোমাদের ম্যাডামকে ডেকে আনো এখানে, যাও তো।

ড্রাইভার গিয়ে বনিতা বেগমকে ডেকে আনলো।
বনিতা বেগম বাড়ি থেকে বেরিয়ে সাদেক খানের কাছে এসে বাচ্চা দুটোকে দেখতে পায়।
উনিতো নিমেষেই এই বাচ্চাদুটোর মায়ায় পড়ে গেলো। পরীর বর্ণনাময় এতো সুন্দর বাচ্চা দুটো দেখে যেনো লোভে পড়ে গেলো এদের।

ঘুমের মাঝে হঠাৎ গালে কারো শীতল স্পর্শ অনুভব করতে পেরে, মিশান ভাবলো মা ফিরে এসেছে হয়তো,চোখ খুলে তাকিয়ে দেখে সামনে তিনজন মানুষ, একজন মহিলা দু জন পুরুষ।
মিশান এদের দেখে অনেকটা ঘাবড়ে গেলো।
বনিতা বেগম মিশানের গাল ছুঁয়ে মিষ্টি ভাষায় জিজ্ঞেস করলো,
-মা তোমার নাম কি?

মিশান ভয়ার্ত দৃষ্টিতে উনাদের দিকে তাকিয়ে রইলো।বনিতা বেগমের ভাষা বুঝতে পারছে না মিশান।
উনাদের দিকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।
মিশানের কোলে ছোট্ট নিশানকে দেখতে পেয়ে বনিতা বেগম মিশানের বেবি ক্যারিয়ারের থেকে নিশানকে বের নিতে চাইলে মিশান নিশানকে আঁকড়ে ধরে।

শুকনো মুখে তাদের দিকে তাকিয়ে কাঁপা গলায় চিকন স্বরে বললো,
-মেরা বেহেন কো মাত লো।
আপ লোগ কন হো?
ম্যে কাহাপে হো?অর মেরি মাম্মা পাপা কাহাপে?কিয়া আপলোগ জানতি হ্যে মেরি মাম্মা কাহা গায়্যি?
মিশানের ভাষা শুনে বনিতা বেগম সাদেক খান উভয় ই অবাক হলো, এই বাচ্চা বাংলাদেশি না, কিন্তু এরা উনার গাড়ির ডিকিতে এলো কিভাবে? সেটা দুজনের একজনের মাথাতেও আসছে না।
উনারা ভাবলো হয়তো হিন্দুস্তানের হবে মিশান, তাই সাদেক খান মিশানকে আদর করে হিন্দিতে জিজ্ঞেস করলো
-বেটা ডরাও মাত।
তোমহারা নাম কিয়া হ্যে?
-মেরা নাম মিশান খান,অর ইয়ে মেরি বেহেন, নিশান খান।
-তোমহারা ঘার কাহা বেটা?
মিশান বলতে যাবে তার আগেই মনে পড়লো,মা বলে দিয়েছিলো পরিস্থিতি যেমন ই হোক তার অনুপস্থিতিতে যেনো মিশান ওর বাড়ি কোথায় সেটা না বলে কাউকে।
কাঁদোকাঁদো কন্ঠে মিশান উত্তর দিলো,
-মুঝে ইয়াদ নেহি হ্যে!কিয়া আপলোগ জানতি হ্যে মেরি মাম্মা পাপা কাহাপে?মুঝে মাম্মা কি পাস যানা হ্যে।
-বেটা রো মাত।মেইনে তোমকো লে যাওংগি তোমহারা মাম্মাকি পাস।
তাব তাক তোম হামারী সাথ রেহনা। তোমহারা মাম্মানে কাহা কি তুমকো মেরি পাছ রাখনে।
-কিয়া মাম্মা নে সাচমোচ আপকো বোলা, আপলোগও কি সাথ রেহনে কে লিয়ে?
-হা বেটা?
-কিয়া আপ মেরি মাম্মাছে মুঝে বাত করা সাঁকতি হ্যে?
-বেটা তোমহারা মাম্মা এক কামপে গায়া।উসকি আনে মে থোরা ওয়াক্ত লাগেগী।তাব তাক তোম হামারা সাথ রেহ্ যাও বেটা।

মিশান চুপ করে রইলো।
বনিতা বেগম নিশানকে কোলে তুলে নিলো,আর সাদেক খান মিশানকে কোলে তুলে নিলো।
দ্বীপ সেই সময় ঘুমে, বাবা নেই বলে সেই সুযোগে ঘুমাচ্ছে,বাবা থাকলেই ভোরে উঠতে হয়।
দ্বীপ মিশানের থেকে দু মাসের বড় হবে।আর তাপসিন তখন পেটেও আসে নি।
সাদেক খানের ব্যাগের সাথে মিশানের সাথে একটা বড় স্কুল ব্যাগ ছিলো। ব্যাগের চেইন খোলা দেখে ব্যাগের বাইরে যা যা পড়েছিলো তা ব্যাগে ভরে ড্রাইভার চেইন লাগিয়ে সব গুলো ব্যাগ ভেতরে নিয়ে গেলো।

একটা ব্যাগ বেশি দেখার পর সাদেক খান জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে ড্রাইভারের দিকে তাকিয়ে প্রশ্ন করলো,
-এই ব্যাগ কার?
-আপনার না স্যার এটা?
-না তো?
-ডিকিতেই তো ছিলো আপনার ব্যাগের সাথে।

সাদেক খান মিশানকে জিজ্ঞেস করলো,
-বেটা কিয়া ইয়ে ব্যাগ তোমহারা?
মিশান ব্যাগটার দিকে তাকিয়ে দেখে বললো,
-নেহি, ইয়ে মেরি মাম্মা কা।
সাদেক খান বুঝতে পারলো ব্যাগটা ওর সাথেই পাঠানো হয়েছে।
আগ্রহ নিয়ে ব্যাগ খুলে ভেতরে দেখে, অনেক গুলো টাকার বান্ডিল, যেগুলো বাংলাদেশি না, পাকিস্তানি। আর অনেক গুলো সোনার গহনা। ওগুলোর সাথে একটা চিঠি দেখতে পেলো।
চিঠিতে ইংরেজীতে লিখা
“প্রিয় সহৃদয়বান ভাই/বোন,আসসালামু আলাইকুম।
জানি না আপনি কে,কোথায় থাকেন, কি করেন । চিঠিটা যেহেতু আপনার হাতে সেহেতু আশা করছি
আমার দুই মেয়ে হয়তো এখন আপনার কাছে।
ব্যাগটা আমার দু মেয়ের সাথেই দিয়ে দিয়েছি। আপনার কাছে আমার বিনীত অনুরোধ, আমার মেয়ে দুটোকে দেখে শুনে রাখবেন দয়া করে।
ব্যাগের মধ্যে পর্যাপ্ত পরিমাণ টাকা ও গহনা আছে, যা দিয়ে বেশ কয়েক বছর আমার দু মেয়ের ভরণ পোষণ অনেক ভালো মতো চলে যাবে।এবং আপনিও এখান থেকে নিজের প্রয়োজনে ব্যবহার করতে পারবেন।শুধু আমার মেয়ে দুটোকে আমানত রাখুন।আল্লাহ যদি বাঁচিয়ে রাখে আমি ফিরে এসে আমার দুই মেয়েকে নিয়ে যাবো, এবং আপনার কাছে আমার কৃতজ্ঞতার ঋণ পরিশোধ করে যাবো।
আর যদি আমার ফেরা না হয়, তবে কষ্ট করে আমার মেয়ে দুটোকে এমন ভাবে লালন পালন করবেন যেনো ওরা বড় হয়ে আপনার ঋণ শোধ করতে পারে।
আমার ছোটো মেয়ে বড় হয়ে কেমন হবে জানি না,তবে বড় মেয়ে মিশান খুব ভালো ও শান্ত। ও একটু আবেগী তবে কাদার মতো, যেভাবে গড়ে তুলবেন যা বলবেন তাই ই করবে, আমার মেয়েটা ভীষণ লক্ষ্মী।
আপনার কাছে আমার অনুরোধ আমার মেয়ে দুটোকে পথে ফেলে দেবেন না, ওদের সুশিক্ষা দিয়ে বড় করবেন যেনো ভবিষ্যতে আপনার লাঠি হয়ে দাঁড়াতে পারে।
আমার মেয়ে দুটোকে বাঁচানোর জন্য আজকে এভাবে আমার কলিজার টুকরা মেয়ে দুটোকে এভাবে অচেনাতে ঠেলে দিতে হলো, জানি না ওদের আবার কিভাবে খুঁজে পাবো। মেয়ে দুটোর ভীষণ বিপদ, মায়ের মন তো, তাই নিজের চোখে নিজের মেয়েদের মৃত্যু দেখতে পারবো না,এতো ধন সম্পদ দিয়ে কি করবো যদি আমার উত্তরাধিকারীই না থাকে।
সেজন্য আমার এ পথ বেছে নেয়া ।

আমার কলিজা দুটোকে আমানত রাখার জন্য আমি আজীবন আপনার কাছে ঋণী ও কৃতজ্ঞ থাকবো।দোয়া করি আল্লাহ আপনার ও আপনার পরিবারের মঙ্গল করুক।”

চিঠিটা পড়ে সাদেক খান সাহেবের বুঝার বাকি রইলো না কিছু।
মিশানের মা জানেও না মিশান এখন কোথায়, বিপদে পড়েই এভাবে মেয়ে দুটোকে অচেনাতে ঠেলে দিয়েছে।কিন্তু সবার মনে প্রশ্ন একটাই জাগছে বাংলাদেশে কি করে এলো।
আর মিশান কোন শহরের সেটাও ওর মা চিঠিতে উল্লেখ করে নি।

বনিতা বেগম মিশান নিশানকে সাদরে নিজের কাছে বরণ করে নিলেন।
সাদেক সাহেব তখন মিশানকে এটা বলে শান্তনা দিলো উনি মিশানের মায়ের ভাই, মানে মিশানের মামা।আলাদা দেশে থাকার কারণে আগে কখনো দেখা হয় নি, সেই সময়ের জন্য মিশান সবটা বিশ্বাস করে নেয়।
বনিতা বেগম সাদেক সাহেবকে শপিংয়ে পাঠায় মিশান নিশানের জন্য প্রয়োজনীয় জিনিস কেনা কাটা করে আনার জন্য।
দ্বীপ যখন ঘুম থেকে উঠে মিশান নিশানকে দেখে এটা ভেবে খুশি হয়, ও খেলার সাথী পেয়েছে।

বনিতা বেগম মনে মনে মিশানের মায়ের কাছে কৃতজ্ঞ হলো, আর আল্লাহর কাছে প্রশংসা আদায় করল, এতো সুন্দর ফুটফুটে দুটো মেয়ে উপহার দেয়ার জন্য।
দুজনকেই উনি কোলে পিঠে নিজের মেয়ের মতো আদর যত্ন করে।
মিশান সব সময় মন খারাপ করে থাকতো, ওর চেহারা দেখেই বুঝা যেতো ও কারো জন্য অপেক্ষা করছে।
সব সময় বাড়ির ছাদে গিয়ে, বারান্দায় গিয়ে উঁকিঝুঁকি মেরে দেখতো মা বাবা আসছে কিনা।

মিশানের দিন যাচ্ছিলো এভাবেই, মায়ের জন্য অপেক্ষা করে।
বাড়ির প্রত্যেকে সব সময় চেষ্টা করতো মিশানকে খুশি রাখার।মামা যখন এটা সেটা এনে দিতো মিশান শুধু বলতো ওকে এতো কিছু দেয়ার দরকার নেই,শুধু নিশানকে দিলেই হবে।
যদি মিশানকে জিজ্ঞেস করতো ওর কিছু চায় কিনা, মিশান উল্টো প্রশ্ন ছুড়তো ওর মা বাবা কবে আসবে।

আস্তে আস্তে মিশানের বাংলা শেখাও শুরু হয়, সবাই মিলে একটু একটু করে মিশানকে বাংলা শেখায়,একজন টিচারও রেখে দেয় মিশানকে বাংলা শেখানোর জন্য।
কয়েক মাসেই মিশান বেশ ভালোমতো বাংলা ধরতে পারে।
বয়স ছয় হতেই দ্বীপ মিশানকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দেয়।

দিন যত যাচ্ছিলো মা বাবার জন্য অপেক্ষা করা ততোই ক্লান্তিকর হচ্ছিলো, আস্তে আস্তে বড় হয় মিশান বাস্তবটা বুঝতে পারে,একটা সময় অপেক্ষা ছেড়ে দেয়, বুঝতে পারে মা বাবা আসবে না, ওদের সাথে দেখা করতে।

নিশানকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে হবে। মামা মামী যখন যা বলতো মিশান তাই ই করতো, ক্লাসে কখনো ফার্স্ট থেকে সেকেন্ড হতো না।
কিন্তু এসবের মধ্যেও মিশান কখনো বাবা মায়ের জন্য কাঁদে নি,ও অনেক বেশি শান্ত ছিলো,সব কষ্ট ভেতরে জমা রাখতে রাখতে মস্তিষ্কে এক প্রকার হ্যালুসিনেশন ক্রিয়েট হয়। যা মিশানকে রাতে ঘুমাতে দিতো না শান্তি মতো। ছোটো বেলতে এটা তেমন প্রখর ছিলো না। কিন্তু নিশান মারা যাওয়ার বছর খানেক আগে থেকে এটা বাড়তে থাকে, আর নিশান মারা যাওয়ার পর এটা প্রকট আকার ধারণ করে।

সব থেকেও যেনো শুন্য মিশানের জীবন। যদিও মামী এতোটা আদর দিয়েছে সেটা মায়ের থেকে কোথাও কম না, দুধের শিশু নিশানকে যেভাবে আগলে বড় করেছে সেটা বনিতা বেগমের জায়গায় অন্য কেউ হলে হয়তো সম্ভব ছিলো না।
পরিচয় বিহীন দুটো মেয়েকে এভাবে আগলে যত্ন করে লালন পালন করা চাট্টি খানি কথা না।

তাদের এই বিনয়ী দেখে মিশান কখনো তাদের কথার অবাধ্য হতো না, কষ্ট পাবে এমন কিছু করতো না।
শেষ সময়ে এতো ঝড় নিতে না পেরে মিশান এভাবে মদের দিকে হেলে পড়েছে।যদি নিশান সুস্থ ভাবে বেঁচে থাকতো তাহলে হয়তো কখনোই মিশান এ পথে হাঁটতো না।
মা বাবাকে ভুলে থাকতে পারলেও নিশানকে ভুলে থাকতে পারে না।বাবা মায়ের থেকে বেশি সময় নিশানের সাথেই কাটানো হয়েছে বলে হয়তো।

অতীতের কিছু অংশ মনে করিয়ে দেয়ায় মিশানের খুব কষ্ট হচ্ছে , বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে নিবে তখন আবার ঘুরে এলো।তীব্রর সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
-স্যার!
-বলো,
-পিস্তলের বুলেট শেষ।
তীব্র চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে বললো,
-ফুল লোড করে পিস্তলটা দিয়েছিলাম,
তুমি কি পিস্তল ফুল লোড অবস্থায় পাও নি?
-জি স্যার,আমি সে রাতেই চেক দিয়ে দেখেছিলাম ফুল লোড ই ছিলো।আপনি ওটা রেখে যাওয়ার পর কেউ হাত লাগাই নি আমিই নিয়েছিলাম।
-এতো গুলো বুলেট কি গিলে খেয়েছো?
-বুঝতে পারছি না, কিভাবে কিভাবে যেনো শেষ হয়ে গেলো।
– আরেকটা পিস্তল?
-ওটা তো আপনার কাছে, সেদিন রাতে ধরা খাওয়ার পর আপনিই নিয়ে নিয়েছিলেন।
-ওহ,মনে নেই।ওটা এসবিতে আছে। এক এএসপির কাছে।
-এখন কি করবো তাহলে স্যার?বুলেট শেষ তো।
– ফালতু খরচের টাকা নেই আমার, টাকা হলে পেয়ে যাবে।

মিশান চোখ রাঙিয়ে বললো,
-হাড়কিপ্টে ফকির কোথাকার!পুলিশের চাকরি ছেড়ে টিএসসি তে ঝালমুড়ি বেচেন গিয়ে,অনেক ভালো ইনকাম হবে।
-তোর কাছে শুনে শুনে কাজ করতে হবে?এ মাসে কত খরচ হয়েছে তোর পেছনে আইডিয়া আছে? তোর বাবা না সাইন্টিস্ট যা বাপের কাছে যাহ।

মিশান সন্দেহদৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-আমার বাবা সাইন্টিস্ট আপনি কি করে জানলেন?
তীব্র জিজ্ঞসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-তোর বাবা সাইন্টিস্ট?
মিশান উত্তর না দিয়ে চুপ হয়ে গেলো,বুঝার বাকি রইলো না তীব্র আন্দাজি ঢিল ছুড়েছে। তীব্রর এরকম ফাঁদে আগেও পড়েছে। তর্কাতর্কি না করে চলে গেলো।

আজকে মিশানের বাজার করার ডেট,সেজন্য এখান থেকে সোজা বাজারে গেলো।
তীব্র বিছানা ছেড়ে উঠে শার্ট আর জ্যাকেট পড়ে নিলো ।
ওয়ালেট মোবাইল গাড়ির চাবি একসাথে থাকার কারণে সব একসাথে জ্যাকেটের পকেটে ভরতে ভরতে বেরিয়ে গেলো।
চুল গুলো এলোমেলো হয়ে আছে, দাড়ি গুলোও বড় হয়েছে , তীব্র নিজের প্রতি এতোটা অগোছালো যে ও কবে আয়নার সামনে গিয়েছিলো নিজেরও খেয়াল নেই।নিজেকে ওর একদম পছন্দ না, কিন্তু জীবনকে ভালোবাসতে চায়।
নিজের ঘরে কোনো আয়না নেই, কখনো কোনো আয়নার সামনে দাঁড়ায় না।
নিজের প্রতি এতোটা বিরক্ত ভুল করেও যদি কোনো আয়নাতে নিজেকে দেখে সে আয়না আর আস্ত থাকে না।যেমনটা বেশ কিছুদিন আগে হয়েছিলো মিশানের ফোনের সাথে।

তীব্র বাড়ি যাওয়ার পর তৃপ্তি তীব্রর মুখের দিকে কেমন দৃষ্টিতে যেনো তাকিয়ে আছে।
-এভাবে তাকিয়ে আছো কেনো?চিড়িয়াখানা থেকে এসেছি?
-ভাইয়া! তুমি কোথা থেকে এলে সেটা জানা নেই কিন্তু!
-কি কিন্তু?
-তোমাকে দেখে মনে হচ্ছে কেউ তোমাকে ইচ্ছে মতো পিটিয়েছে, সত্যি সত্যি মার খেয়ে আসো নি তো?কোনো ভাবে পাবলিকের হাতে?
দেখি তো দেখি গায়ে কেমন চোট লেগেছে?
-আরে যাও তো, ঘুম থেকে উঠে এসেছি ওমনিই, হাত মুখও ধুই নি।
-ওমহু,শুধু হাত মুখ না ধোয়ার জন্য এমন চেহার হয় না কারো, কাহিনী একটা আছেই,শরীর দেখাও।
-ওয়েট দেখাচ্ছি।কিন্তু শর্ত আছে,
-কি শর্ত?
-গায়ে যদি কোনো মারের দাগ না থাকে আমার শার্ট আর জ্যাকেট টা তুমি ধুয়ে দেবে। এটা তোমার শাস্তি হবে, আমাকে মিথ্যে অপবাদ দেয়ার জন্য।
-ওকে ডান।

তীব্র গায়ে থেকে শার্ট আর জ্যাকেট খুলে ফেললো তৃপ্তি পরোখ করে তীব্রর চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে।গায়ে কোনো দাগ নেই।মায়ের কাছে শুনেছে তীব্র প্রায় ই রাতে বাড়ি ফিরে না, কোনো ডিউটি না থাকা সত্ত্বেও। তাই তৃপ্তির মনে সন্দেহ জাগে ভাইয়ের ক্যারেকটারে কোনো সমস্যা দিলো কিনা, হতে পারে রাতে মেয়েদের নেশায় মগ্ন থাকে ।
তৃপ্তির ধারণা ছিলো তীব্র যদি রাতে মেয়েদের সাথে থাকে তবে প্রমাণ স্বরূপ গায়ে দাগ থাকবে ।
কিন্তু সন্দেহ ভুল প্রমাণিত হলো।
তৃপ্তি হাত বাড়িয়ে বললো,
-দাও জামা দুটো দাও এখনি ধুয়ে দিচ্ছি।
তীব্র বাঁকা হাসি দিয়ে বললো,
-দাদার কথা বাসী হলে ফলে তাই না?
-দাদারাও যে মহাপুরুষ সেরকমটা না, সব সময় যা বলবে তাই ই ঠিক, তা তো হবে না। আগের দাদা আর বর্তমানের দাদাদের মাঝে আকাশ পাতাল তফাৎ, এখনকার দাদাদের মধ্যে ফরমালিনে ভরা।
-প্যাক প্যাক না করে ভালোমতো জামা দুটো ধুয়ে আয়রন করে রেখো।নিজের হাতে ধুবে, ভুলেও কাজের লোক ইউজ করবে না।
-ওকে ওকে।
তৃপ্তি জামা দুটো নিয়ে যেতে লাগলো। তীব্র নিজের ঘরে যাওয়ার জন্য সিঁড়ি দিয়ে উপরে উঠছে।

তৃপ্তি জ্যাকেটের এক সাইড একটু ভারী ভারী ফিল করলো, পকেটে হাত দিয়ে দেখে তীব্রর ওয়ালেট মোবাইল, বের করতে করতে তীব্রকে পেছন থেকে বললো,
-বাহ ভাইয়া নতুন ফোন নিলে কবে?বেশ সুন্দর তো! দাম কত পড়লো?

তীব্র একটু প্রশ্নবিদ্ধ হলো,
-নতুন ফোন কোথা থেকে এলো আবার?(মনে মনে)
পেছনে ঘুরতে ঘুরতেই তৃপ্তি মোবাইলের সাইড বাটনে ক্লিক করতেই লক স্ক্রিনে একটা মেয়ের ছবি ভেসে উঠে,তীব্রর শেষ রক্ষা হলো না!তীব্র তৃপ্তির হাতে মিশানের ফোন দেখতে পেলো।
-এটা কার ছবি লক স্ক্রিনে ওয়ালপেপার দিয়েছো ভাইয়া?বেশ সুন্দর তো,আমার জানা মতে এরকম তো কোনো নায়িকা নেই।কিন্তু তুমি তো কোনো মেয়ের ছবি ওয়ালে তো দূর গ্যালারীতের রাখার কথা না।কে এটা ভাইয়া?

দাঁতে দাঁত চেপে তীব্র মনে মনে বললো,
-মিশান! সেন্টিখোর, মাতাল!ফোন এক্সচেঞ্জ করলো কখন!আমিই বা কেমন এটা খেয়াল করি নি!এখন কি উত্তর দেবো!তৃপ্তি আবার মাকে ডেকে বলে দেবে নাতো!

(চলবে)