গল্প- তেজস্ক্রিয় রক্তধ্বনি
পর্ব- ২৮
লেখিকা- রিয়া খান
একটা বাড়ির থেকে একটু দূরে দাঁড়িয়ে তীব্র আর মিশান দূরবীক্ষণ দিয়ে পর্যবেক্ষণ করছে একটা ফ্ল্যাটে ।
-ছেলেটা কি একাই থাকে ফ্ল্যাটে?
-তাই ই তো জানতে পারলাম।
-সিকিউরিটি খুব একটা নেই বাড়িতে,বাইরে একজন ওয়াচ ম্যান। গেটের বাইরে তো কোনো সিসিক্যামেরা দেখতে পাচ্ছি না, ভেতরে থাকলে থাকতে পারে।
-তাতে কি স্যার, আমি ভেতর দিয়ে ঢুকবো না, দেখুন বারান্দাতে কোনো গ্রিল নেই,শুধু রেলিং দেয়া। আমি সহজেই পাইপ বেয়ে ওখানে পৌঁছাতে পারবো। আমাকে শুধু অই তারকাটার দেয়ালটা পেরুতে হবে।
-ঠিক আছে দেখছি। এইটুকুই মেইন, তবে যা অবস্থা দেখছি মই ছাড়া এই তারকাটার দেয়ালটা পেরুনো যাবে না।ওয়াচম্যান যদি জেগে থাকে তাহলে বাঁশ।
-স্যার!
-বলো।
-আমি যদি পারফিউমের সাথে , ক্লোরোফরম মিক্সড করে বাইরের গেটের নিচে ঢেলে দেই।হঠাৎ গেটের বাইরেথেকে এমন স্মেইল আসার কারণে ওয়াচম্যান কৌতুহল বশত বেরিয়ে স্মেইল টা ভালোমতো নেবে, আর সেন্সলেস হয়ে যাবে।কেমন হবে এটা?
-একদম বাজে।
-কেনো?
-পারফিউম বা ক্লোরোফরম দুটোই ব্যাপনশীল বস্তু,এটা শুধু অই গেটের থেকে ওয়াচম্যান অব্ধি সীমাবদ্ধ থাকবে না। ওখানে যদি একটু ঢালতে যাও তবে ওয়াচম্যান অব্ধি পৌঁছাবে না, বেশি ঢাললেই সমস্যা হয়ে যাবে।
-হুম বুঝলাম, প্রমাণ থেকে যাবে,একজনের সাথে বিটলামী করলে কেউ তাঁর কথা বিশ্বাস করবে না। কিন্তু আরো দু চারজন যোগ হলে তো ওরা সাক্ষী হয়ে থাকবে।কি করা যায়?
রাস্তাতেই অপেক্ষা করবো?
-নাহ, এখন রাস্তাঘাটে কিছু করা যাবে না, ফোর্স এখন সজাগ হয়ে আছে তোমাকে ধরার জন্য।কোথায় কে দাঁড়িয়ে আছে, আমরা জানি না।
-তাহলে করবো টা কি?
-ওয়েট ভাবতে দাও!
পায়চারী করতে করতে তীব্র ভাবতে থাকে কিভাবে ওয়াচম্যানকে হ্যান্ডেল করা যায়।
মিশান দূরবীন দিয়ে দেখে যাচ্ছে ছেলেটা ভেতরে কি করছে ।তবে বুঝতে পারছে না সে একা নাকি আরো কেউ আছে সাথে।
দেড়টার দিকে , মিশান তীব্র দুজনেই রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছে। তীব্র ওর জুতার মধ্যে কিছু একটা আটকাচ্ছে,যেটা পড়ে হাঁটলে বিকট শব্দ হয়, রাস্তার উপর টিন দিয়ে আঘাত করলে যেমন শব্দ হয় সেরকম ই শব্দ।
প্রথমে জুতা খুলে গেটের লক বরাবর একটা প্লাস্টিকের ফুলে পারফিউম আর ক্লোরোফরম স্প্রে করে স্কস্টিপ দিয়ে আটকে দিলো আলতো হাতে।
এরপর ওখান থেকে সরে গিয়ে জুতো দুটো পড়ে, রাস্তার ডান দিক থেকে বাম দিকে অনেক জোরে দৌড় দিলো তীব্র।
মাঝরাতে এমন বিকট আওয়াজ কানে লাগার মতোই। ওয়াচম্যান বসে বসে ঘুমের প্রহর গুনছিলো, হঠাৎ করে এমন বিকট আওয়াজ শুনতে পেয়ে উঠে দাঁড়িয়ে এদিক ওদিক তাকাতাকি করে,এরপর কৌতুহল বশত গেট খুলে রাস্তার বাম ডানে উঁকিঝুঁকি মারে, কাউকে দেখতে পায় না, তীব্র এতোক্ষণে অন্য একটা গলিতে লুকিয়ে পড়েছে ।
গেট যখন আটকে দেবে তখন দেখতে পায় লকের কাছে একটা ফুল লাগানো, ওয়াচম্যান হাতের টর্চ লাইট টা জালিয়ে, কাছে থেকে পর্যবেক্ষণ করতে যায়, তখনি ফুল থেকে পারফিউম মিশ্রিত ক্লোরোফরম ব্যাপন প্রক্রিয়ায় তাঁর নিশ্বাসের সাথে ভেতরে প্রবেশ করে, যার ফলে তৎক্ষণাৎ সেন্সলেস হয়ে যায়।ওয়াচম্যান পড়ে যাওয়ার আগেই মিশান ওয়াচম্যানকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে রাখে এমন ভাবে,যেনো যে কেউ দেখে বুঝতে পারে লোকটা পাহারা দিচ্ছে।
এরপর গেট চাপিয়ে দিয়ে মিশান আস্তে আস্তে পাইপ বেয়ে উপরের দিকে উঠে,
বারান্দায় নেমে ভেতরে ঢুকতে যাবে দেখে বারান্দার ও রুমের মাঝে যে গ্লাসটা, সেটা ভেতর থেকে লক করা।
মিশান পকেট থেকে মোটা সুঁচের মতো কি যেনো বের করলো। সেটা দিয়ে সহজে লকটা খুলে নেয়।
ভেতরে ঢুকতেই দেখে ছেলেটা নাকে তেল দিয়ে ঘুমোচ্ছে।
-বাহ!কি প্রশান্তি! তুই কি জানিস আজ রাতটাই তোর জীবনে শেষ রাত?চল তোর এই রাতটাকে আজ সেলিব্রেট করি।
থ্রী-টু-ওয়ান!
তপন নামের ছেলেটা গভীর ঘুমে তলিয়ে আছে, এরমধ্যে মিশান ঘরের ভেতর কাঁচের কোনো বস্তু ফেলে দেয়, যার শব্দ পেয়ে তপন ছিটকে উঠে, বালিশ ছেড়ে উঠে বসে এদিক ওদিকে তাকাতাকি করে,মিশান পর্দার আড়ালে লুকিয়ে পড়ে। ছেলেটা বিছানা ছেড়ে দেখতে যাবে কি পড়লো,তখনি উপর থেকে ওর মাথায় পানি জাতীয় কিছু পড়লো,উপরের দিকে তাকানোর আগেই কপালের মধ্যে আবার একফোঁটা পানির মতো কিছু পড়লো,হাত দিয়ে কপাল থেকে মুছতে মুছতে পাশে থেকে ফোন নিয়ে লাইট জ্বালিয়ে দেখে লাল রঙের কিছু,এবার লাইট উপরের দিকে তাকাতেই তপন ছিটকে গেলো, ভয়ে বুক ধরপাকড় শুরু হয়ে গেছে, ফ্যানের পাখার সাথে একটা পুতুল ঝুলছে, যার চোখ দিয়ে রক্ত ঝরছে। আর ফোঁটায় ফোঁটায় তপনের কপালে পড়ছে। এ দৃশ্য দেখে গা ঝাঁকি দিয়ে উঠে তপনের।হাত থেকে মোবাইল উল্টে পড়ে যায়, ঘর অন্ধকার হয়ে যায় আবার।
ঘর অন্ধকার হতেই মিশান পর্দার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে, ঘরের এটা সেটা ফ্লোরে ফেলে দিতে শুরু করে।
তপন খাটের মাঝে জড়ো হয়ে বসে কাঁপতে কাঁপতে বললো
-কে কে কে ক্কেহ!
মিশান শব্দ করা বন্ধ করে স্থির হয়ে দাঁড়ালো। একটা ম্যাচের কাঠিতে আগুন জ্বালিয়ে সেই আগুন মোমের মধ্যে স্থানান্তর করলো।
মোমের আলোতে মিশানের চেহারা দেখা যাচ্ছে একটু একটু,প্রতিবার নরমাল নাক মুখ ঢাকার মাস্ক পড়লেও
আজকে প্ল্যান করেই মিশান ভূতুড়ে মাস্ক পড়ে এসেছিলো, যেটাতে মিশানের পুরো চেহারা কাভার।
মোমের আধো আধো আলোছায়াতে খুবই বিকট লাগছে দেখতে।
তপন ভয়ে কাঁদতে কাঁদতে কাঁপা হাতে মোবাইল খুঁজতে লাগলো, কিন্তু পাচ্ছে না। এতোটা উত্তেজিত হয়েছে ভয়ে যে, কিছুই বুঝতে পারছে না কি করবে। গলা দিয়ে কোনো স্বর বেরুচ্ছে না
মিশান ঠান্ডা স্বরে বললো,
-কি ভয় লাগছে?আর একটু ধৈর্য্য ধরো। কয়েক মিনিটে সব ভয় ফুরিয়ে যাবে।
টেনশন করো না,আমি আছি তো। তোমাকে নিয়ে টেনশন করবো আমি, এই ধরো আমি এখন টেনশন করছি, তোমার ভয়টা কিভাবে কাটাবো।
কিন্তু মাথায় আসছেই না কি করা যায়।
আস্তে আস্তে মিশান তপনের পাশে বসলো, তপনের গা বরফের মতো জমে আছে ভয়ে, খাটের পাশে একটা টি টেবিলের এক কোণে পাউডারের মতো কিছু পড়ে আছে , মিশান ওদিকে তাকিয়েই বুঝলো ওগুলো ড্রাগস।
-বি কুল ব্রো।ইজি হও। ভয় পাচ্ছো কেনো? আমার সাথে কি কোনো অস্র আছে? ভয় পাচ্ছো যে!ইজি হও, আমরা আমরাই তো।
তপন মিশানের দিকে তাকিয়ে বড় করে ঢোক গিললো,
-তুমি কোন ব্র্যান্ডের মদ খাও?
-মা মা মানে!
-তোমার ফ্রিজে মদের সমাহার আছে,যাও দু তিন বোতল নিয়ে আসো। দুজনে খেতে খেতে ডিসকাশন করি কিভাবে ভয়টা কমানো যায়।
-……………!
-যাও নিয়ে আসো।
তপন কাঁপতে কাঁপতে বিছানা ছেড়ে উঠে ঘর থেকে বেরিয়ে ডাইনিংয়ে গেলো, ফ্রিজের দিকে যাওয়ার আগে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে মিশান আছে কিনা । আশে পাশে কাউকে দেখতে না পেয়ে মেইন গেটের দিকে দৌড় দেয়,গেটের কাছে যাওয়ার আগেই দেখে গেটের সাথে হেলান দিয়ে মিশান দাঁড়িয়ে আছে।
-বাসা থেকে বেরুতে চাচ্ছিলে? পালাবে?
ঠিক আছে যাও!
-……………!
তপন এক পা দু পা করে পেছাতে লাগলো।
-তুমিই ডিসিশন নাও,আমার সাথে মদ খাবে নাকি বাড়ি থেকে পালাবে। তুমি যেটা করবে সেটাই,আমি কি করবো জানি নাহ!
-ম ম মদ খাবো।
-চলো তাহলে,ডাইনিং টেবিলেই বসি। বোতল গুলো টেবিলে রাখো।
তপন বোতল টেবিলে রাখলো , মিশান টেবিলের কাছে গিয়ে চেয়ার টেনে বসে বোতল খুলে মদ খেতে লাগলো,তপন দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে মিশানের খাওয়া দেখছে,আর ভাবছে এখান থেকে পালাবে কি করে।
এক বোতল পুরোটা শেষ করে তপনকে বললো, চেয়ারে বসতে , নয়ন বসছে না।মিশান আরেক বোতল খুলে খেতে শুরু করলো, খেতে খেতে আবার বললো বসতে,নয়ন তাও বসলো না, এভাবে পর পর তিনবার বলার পর ও যখন বসলো না পেট বরাবর লাত্থি মেরে তপনকে ফেলে দিলো। তপন ফ্লোরে পড়ে গেলো, এবার মিশান উঠে দাঁড়িয়ে তপনের পেটে পা রাখলো।
মাতালকন্ঠে মিশান বললো,
-তোকে বেশি কষ্ট দিয়ে মারবো না, তুই আমার বোনের হাত ধরেছিলিস।কঠিন মৃত্যু হবে তো বাকি দুজনের যারা আমার বোনকে গুলি করেছে।তুই কার কি ক্ষতি করেছিস আমি জানি না, তুই আমার ক্ষতি করেছিস সেটার হিসাব ই আমি চুকাতে এসেছি। জানিস তোদের খুঁজতে খুঁজতে আমি ক্লান্ত হয়ে গেছি। তোরা কে, কোথায় থাকিস কিচ্ছু জানা ছিলো না। কত কষ্ট করে পেয়েছি। মাসের পর মাস যাচ্ছিলো আমি পাচ্ছি না কাউকে। আর দুজন কোথায় তাও জানি না।চাইলে তোকে ব্যবহার করে ওদের খুঁজতে পারবো, কিন্তু আমি তা করবো না। আসলে নিজে খুঁজে খুঁজে বের করে মারার মজাই আলাদা,ভেতরে একটা স্পীড আসে ওকে আমার কঠিন মৃত্যুর সাথে সাক্ষাৎ করাতে হবে ।
তাই তোকে এতোটাও সহজ মৃত্যু দেবো না, যতোটা তুই প্রাপ্য। তোকে খুঁজতে যে আমার পরিশ্রম সময় গিয়েছে সেগুলোর জন্যই আসলে তোকে আমি কষ্ট দেবো।
-আমাকে ছেড়ে দিন, আমায় ক্ষমা করে দিন। আমি আপনার যা ক্ষতি করেছি তার সব ক্ষতিপূরণ আমি দেবো, আমায় ছেড়ে দিন।
-পারবি আমার বোনকে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনতে? পারবি?যদি পারিস তাহলে ছেড়ে দেবো বস্।
-আমাকে ছেড়ে দিন।প্লিজ!
ছেলেটা মিশানের পায়ের নিচ থেকে গড়িয়ে উঠে দাঁড়িয়ে ছুটতে যাবে তার আগেই মিশান ওর পেছন থেকে ছুড়ি গেঁথে দেয়, ছুড়ি টান দিয়ে বের করে সামনের দিকে ঘুরে আরো কয়েকবার আঘাত করে।
রক্তাক্ত হয়ে ছেলেটা লুটিয়ে পড়ে, মিশান অপেক্ষা করে ওর নিশ্বাস হার্টবিট বন্ধ না হয়ে যাওয়া অব্ধি।
এমন ভাবে আঘাত করে যেনো বেঁচে উঠার কোনো চান্স ই না থাকে।
ছেলেটার আত্মা বেরুনো অব্ধি মিশান ওকে আঘাত করতেই থাকে।
কাজ শেষে উঠে দাঁড়িয়ে সিলিং ফ্যানের উপর থেকে সেই পুতুলটা নিয়ে বারান্দা দিয়ে পাইপ বেয়ে নিচে নেমে আসে।
বাইরের গেটে লেগে থাকা, ফুলটাও মিশান খুলে নিয়ে গেট চাপিয়ে দিয়ে চলে যায়।
নিজের সমস্ত জিনিস নিয়ে আসার সাথে সাথে একটা মদের বোতলও সাথে করে নিয়ে আসে।
অনেকটা দূরে তীব্র গাড়ি নিয়ে ছোট্ট একটা নাট্যকর্মের মাধ্যমে মিশানকে গাড়িতে উঠায়।
মিশান গাড়িতে বসে হ্যান্ড গ্লাভস, মাস্ক, গায়ের সমস্ত অদ্ভুতুড়ে সাজ খুলে একটা ব্যাগে প্যাকেট করে রাখে। এবার সাধারণ পাব্লিকের মতো বসে বসে অবশিষ্ট বোতলের মদ খেতে লাগলো।
মিশান মুখের সাথে বোতল লাগিয়েই রাখছে, পুরো বোতল শেষ হতেই পিনিক ধরে গেছে। মাথায় হাত দিয়ে বসে বসে গুণ গুণ করে গান গায়ছে।
-সেন্টিখোর।
-ইয়েস স্যার!
-ভালো লাগছে?
-আরেক বোতল হলে বিন্দাস হতো স্যার।
তীব্র তুচ্ছার্থক হাসি দিলো।
-হুমহ!
গান গাইতে গাইতে মিশান আবার থেমে তীব্রকে বললো,
-একটা জিনিস ভাবলাম স্যার,
-কি?
-আপনি আর মদ একদম আপন চাচাতো ভাই, বা আপন ভাই।
-কিভাবে?
-দুজনের জাতীয় সঙ্গীত এটা হবে” মউত ছে মিলাকে তুঝে জিন্দা হি ছোড় দেঙ্গী।”
-ওহ!
-আপনি আর মদ এর দুটোর একটাও আমার উপকারে আসছে না, মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছি আপনাদের দ্বারা, কিন্তু মরছি না, আবার আপনাদের ছাড়তেও পারছি না।
ব্যাপারটা অদ্ভুত না স্যার?
-অবশ্যই খুবই অদ্ভুত!শুধু অদ্ভুত না ব্যাপারটা ভূতুড়েও।
মিশান ফিক করে হেসে দিলো, তপনকে মারার দৃশ্য মনে পড়ে গেলো।
-স্যার আজকের ভূতুড়ে প্ল্যান টা বেশ জমছিলো,আপনি থাকলে এনজয় করতে পারতেন, বেচারা! আর সিলিং ফ্যানের উপর পুতুল রাখা পুতুলের ভেতরে রেড ফুড কালার এড করে চোখ ছিদ্র করে দেয়ার প্ল্যান জবরদস্ত ছিলো,যা রিয়্যাকশন ছিলো,দেখার মতো হি হি হি!
একটা গানের লাইন তখন খুব মনে পড়ছিলো,”কিছিকো রোলানেমে কিতনা মাজা আতিহ্যে তুম কিয়া জানোগী,”এই রকম একটা লিরিক্স ছিলো।
-ইদানীং মনে হয় কথার থেকে গানের লিরিক্সের চর্চা বেশি করা হয় তাই না?
-কি আর করবো আর কোনো কাজ নেই তোহ স্যার!
-হুম কোন দিকে নেবো গাড়ি?
-মানে?
-কোন বাড়িতে যাবে?
মিশান হেসে দিয়ে বললো
-আমার শ্বশুর বাড়ি!
-শ্বশুর বাড়ি তোমার জন্য অফ, এই স্বপ্ন কখনো দেখো না।
-তাহলে শ্বাশুড়ি?
-কোনোটাই না।
-আপনার?
-আমার বাড়িতে তো যাও ই।
-কোনটা অই ভাংগাচোরা পুরাতন ফ্ল্যাট টা?
-পুরাতন না, ওটার ডিজাইন ই অমন। ভেতরে কি কোথাও ভাঙা বা পুরাতন পেয়েছো কখনো?
-অই একই হলো,যাহা রটে তাহাই বটে।
-আমি যতোই ভাবি তোমার সাথে ভালোমতো কথা বলবো, কিন্তু তোমার কথার উল্টাপাল্টা লাইনের কারণে সেটা আমার দ্বারা হয়ে উঠে না। মাঝে ইচ্ছে করে!
-কি স্যার?না থেমে, বলে ফেলুন।
-কিছু না বাদ দাও। যা অবস্থা দেখছি সোজা হয়ে দাঁড়াতে তো পারবে না ঠিক মতো, বাড়িতে ঢুকতে গেলে মামা মামীর সামনে ধরা খাবে।
মিশান চোখ বন্ধ করে ক্লান্ত স্বরে তীব্রকে ডাক দিলো
-স্যার!
-বলো।
-বলুন না কেনো বিয়ে করেছেন আমাকে?
তীব্র লম্বা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে অন্যদিকে ঘুরে বললো,
-ধরে নাও ভালোবাসি তোমাকে।হতে পারে তোমাকে ছাড়া আমার পাশে অন্য কাউকে মানায় না। এমনকি এটাও হতে পারে তোমার সাথে ঝগড়া করে আমি মজা পাই, তাই।
তুমি ছাড়া অন্য কোনো নারী আমায় টানে না। তোমাকে দেখলে মনে হয় তুমি আমার শত্রু হলেও আপন কেউ।
ধরে নাও এরকম কিছু একটা।
-আমাকে ভালোবাসবেন না স্যার, আমাকে ভালোবাসা মানে নিজের মৃত্যুকে ডেকে আনা।
(চলবে)