বুঝে নাও ভালোবাসি পর্ব-১৪

0
24

#বুঝে_নাও_ভালোবাসি।
#ফাহমিদা_তানিশা

পর্ব ১৪

আর‌ওয়া একটু থেমে জিজ্ঞেস করলো:মিতা আপু কি করেছে?
_তোমাকে মারতে চেয়েছে।
_উনি কেনো আমাকে মারতে চাইবে শুধু শুধু?
_সেটা মিতাই ভালো বলতে পারবে। আমি ওকে ধরে আনবো আর তুমি দুইটা থাপ্পড় দিয়ে জিজ্ঞেস করে নিবে কেনো সে তোমাকে মারতে চায়।
_উনি আমার সিনিয়র।সিনিয়রকে শুধু শুধু চড় মারতে যাবো কেনো?
_ওরে আমার ভদ্র-নম্র ব‌উটা।শোনো ও একটা কথা,ভদ্র মানুষের সাথে সুন্দরভাবে শালীনতা বজায় রেখে কথা বলবে কিন্তু অভদ্র মানুষের সাথে অভদ্রভাবে অশালীনতা বজায় রেখে কথা বলবে।মিতা তোমার সাথে অন্যায় করেছে।তাকে কেনো সম্মান করতে যাবে শুধু শুধু?
_তাহলে আপনার সাথেও অভদ্র ভাষায় কথা বলবো?

নির্ঝর আর‌ওয়ার দিকে চোখ দুটো বড় বড় করে তাকালো।আর‌ওয়া শান্ত চোখে অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। নির্ঝর বুঝতে পারছে না আর‌ওয়াকে ঠিক কি বললে তার মন শান্তি হবে। সে কি অভদ্র?তার সাথে কেনো অভদ্রভাবে কথা বলবে? উত্তর পায় না নির্ঝর। একটু থেমে বললো: আমার সাথে যদি তোমার অভদ্র ভাষায় কথা বলতে মন চায় তাহলে অভদ্র ভাষায় কথা বলবে।ব্যাস।এতে জিজ্ঞেস করার কিছু নেই।

আর‌ওয়া কিছু বললো না।চুপ করে র‌ইলো সে। হঠাৎ নির্ঝরের মনে পড়লো আর‌ওয়া তাকে আপনি করে বলেছে। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো: তুমি আমাকে আপনি করে বললে কেনো?
_এমনে।
_আগে তো তুমি করে বলতে। এখন পাল্টালে কেনো?
_আপনি তো সেই আমার তুমিটা নন।তাই পাল্টিয়েছি।
_তো আমি কার তুমি? আমি তো সেইম মানুষটা আছি‌।
_আপনি এখন কার তুমি তা তো আমি জানি না। শুধু জানি আপনি আমার কেউ নন। বলা যায়, তুমি করে বলার অধিকারটা আমি হারিয়ে ফেলেছি।

কথাটা বলতেই আর‌ওয়ার চোখ ছলছল করছে। থেমে গেলো সে। নির্জন অপলক দৃষ্টিতে আর‌ওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।তার মুখে অসহায়ত্বের ছাপ। কিন্তু আর‌ওয়া তা বুঝতেই পারছে না যেন। নির্ঝর বুঝতে পারছে না কি বললে আর‌ওয়া তাকে ক্ষমা করে আগের মতো ভালোবাসবে। হঠাৎ তার ফোনটা বেজে উঠলো। ফোন হাতে নিয়ে স্ক্রিনে চোখ পড়তেই আর‌ওয়ার মায়ের নামটা ভেসে উঠলো। নির্ঝর দ্রুত ফোনটা রিসিভ করলো।
_নির্ঝর, তুমি নাকি মিতার এগেইনস্টে মামলা করেছো?
_জি ফুফি।
_কেনো বাবা?এসব করতে গেলে কেনো?
_যেটা ঠিক মনে হয়েছে সেটাই করেছি ফুফি। ভুল তো কিছু করিনি।
_বাদ দাও এসব। শুধু শুধু বাইরের লোকেরা আমাদের ফ্যামিলি নিয়ে ঠাট্টা করবে। তোমার আম্মু আর তোমার খালামনির মধ্যে সম্পর্কটা নষ্ট হয়ে যাবে।তাই আমার মনে হয় তুমি এসব মামলায় না জড়ালে ভালো হয়। বড়রা যা সিদ্ধান্ত নিবে তাই মেনে নাও।
_সরি ফুফি।আমার পক্ষে এটা মেনে নেওয়া সম্ভব নয়।আমার চোখে অপরাধী অপরাধীই হয়।আমি তাদের আত্মীয় ভাবি না। তাছাড়া অপরাধী আত্নীয় হলেও তাকে ক্ষমা করা যাবে না।আমি ফোন রাখছি।

আর‌ওয়ার মাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে নির্ঝর ফোন কেটে দিলো।আর‌ওয়া ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে তার দিকে।সে হয়তো বোঝার চেষ্টা করছে দুজনের কথাগুলো। শান্ত কন্ঠে বললো: আমাকে একটু খুলে বলবেন মিতা আপুর সাথে কি করছেন?
_আগে তুমি করে বলো তারপর বলছি।
_বলবো না।
_আমিও বলবো না।
_প্লিজ বলেন।
_প্লিজ তুমি করে বলো একবার।
_বললাম তো বলবো না। একদম বলবো না।
_আমিও বলবো না।
আর‌ওয়া নির্ঝরের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো তারপর মুখ ফিরিয়ে নিলো। নির্ঝর তার দিকে তাকিয়ে হেসে দিলো। তারপর নিজ থেকে বললো: মিতার বিরুদ্ধে মামলা করেছি।সবাই বলছে মামলাটা উইথড্র করতে কিন্তু আমি করবো না।
_কেনো করবেন না?
_আমার ব‌উকে মারতে চায় সে।তাকে কি আমি এতো সহজে ছেড়ে দিবো?তাই মানছি না।
_আসছে!শুনেন মামলাটা উইথড্র করেন প্লিজ।
_সম্ভব নয়।আমি একটু বাইরে যাবো। তুমি রেস্ট করো।

নির্ঝর বিছানা থেকে উঠে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।নিচে নামতেই দেখলো তার মা বসে বসে কাঁদছে আর তার বাবা মায়ের পাশে চুপচাপ বসে আছে। আশরাফ চৌধুরী নির্ঝরকে দেখতেই বললেন: নির্ঝর সবার মতামত তোমার মেনে নেওয়া উচিত। এভাবে নিজে নিজে সিদ্ধান্ত নিতে পারো না।
_আপনি নিশ্চয় আমার অবস্থাটা বুঝতে পারছেন। আমার মনে হয় আপনি অন্তত আমার সাথে এসব বিষয়ে কথা বলবেন না।
আশরাফ চৌধুরী ছেলের কথায় থেমে গেলেন। স্ত্রীর দিকে তাকিয়ে আবারো ছেলেকে বললেন: তোমার আম্মুর কথাটা শুনো। আরেকবার বিষয়টা ভেবে দেখো।
_আমি ভাবতে চাই না। আমি আমার সিদ্ধান্তে অনড় থাকবো।প্লিজ এসব নিয়ে আর কথা বলতে আসবেন না।

মিসেস রুমানা ছেলের দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছেন।তিনি বুঝতে পারছেন না তার ছেলেটা কিসের তৈরি। এতো কঠোর হয় কি করে? বুঝতে পারছেন না তিনি। ইচ্ছা করছে নির্ঝরের গলাটা টিপে দিতে। হয়তো নিজের ছেলে না হলে এমনটা করতেন তিনি। শুধু নিজের ছেলে বলে রেহাই পাচ্ছে নির্ঝর।

নির্ঝর বাসা থেকে বেরিয়ে থানার উদ্দেশ্যে গেলো। এএসপি মনির মেসেজ দিয়ে বলেছে মিতাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।তাই সে মিতার অবস্থা দেখতে থানায় যাচ্ছে।গাড়ি চালিয়ে থানার উদ্দেশ্যে গেলো।

নির্ঝর গাড়ি থামালো থানার সামনে। ধীর পায়ে বের হয়ে সে মনিরের রুমে গেলো। তারপর মনির সহ আবার মিতার ওখানে গেলো।নির্ঝরকে দেখতেই মিতা রেগে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো: তুমি এখানে এসেছো কেনো?
_তোকে দেখতে।
_কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা দিতে এসেছো বুঝি?
_হ্যাঁ এই অভ্যাসটা আমার একটু বেশি। তুই হয়তো জানিস না।আজ জানলি যখন এখন থেকে সচেতন থাকবি।
_তোমাকে আমি খুন করবো।
_বাহ্! তোর সাহস তো প্রশংসাযোগ্য। কিন্তু অতিরিক্ত কোনো কিছু ভালো নয়।এই যে তোর অতিরিক্ত সাহস। এটাই তোকে থানা-জেল পর্যন্ত এনেছে।তাই ভুলেও অতিরিক্ত সাহস দেখাতে আসবি না।
_তোমার আমাকে জ্ঞান দিতে হবে না। আমি যথেষ্ট জ্ঞানী।
_ভেবেছিলাম তোর সাথে কথা বলে,তোকে তোর দোষটা বুঝিয়ে তারপর মামলাটা উইথড্র করে নিবো। কিন্তু তোর তো একটুও অপরাধবোধ নেই। তোকে কি করে ক্ষমা করি? আসলেই তোর মতো মেয়েদের ক্ষমা করার কোনো প্রশ্ন আসে না। যত্তোসব বেয়াদব।
_তুমি কে আমাকে ক্ষমা করবে?আমি আমার বাবার টাকার জোরে বের হবো তারপর তোমাকে দেখিয়ে ছাড়বো।
_আমি তো একদম অসহায় একটা মানুষ। আপনি আপনার বাবার টাকার জোরে বের হবেন আর আমি বসে বসে দেখবো?এটা কখনো হয়? অপেক্ষা কর তুইও সব দেখবি।

নির্ঝর কথাগুলো বলে হনহন করে বেরিয়ে গেলো। মনির বাইরে থেকে সবটা শুনছিল। নির্ঝর বের হতেই তাকে বললো:এই মেয়ে তো যথেষ্ট বেয়াদব।একে ছাড়ার জন্য মামলা উইথড্র করতে চাচ্ছিস?
_আসলে বাবা-মায়ের আদরের মেয়ে তো তাই একটু বেশি জেদী।
_এই জেদ মনের মধ্যে রেখে যদি জেল থেকে বের হয়ে আর‌ওয়ার আবার ক্ষতি করে?তখন কি করবি?
_আমি তো সেটাই ভাবছি। বুঝতে পারছি না কি করবো। আম্মু বারবার রিকোয়েস্ট করছেন মিতাকে ছেড়ে দাও বলে বলে।আরু,ফুফি, আব্বু সবাই বলছে এক‌ই কথা। এখন আমি একজন কি করবো?
_তুই একজন হলেও সবকিছু তোর হাতে।ভেবে দেখ সবটা। তারপর সিদ্ধান্ত নে। আমার মনে হয় না এই মেয়েকে ক্ষমা করা উচিত।একে শাস্তি দিলে তারপর সব শুধরে নিবে। অন্যথায় এক‌ই ভুল বারবার করবে। তুই আমার কথা মিলিয়ে নিস।
_আমিও বুঝতে পারছি বিষয়টা।তাই এতটুকু আসলাম। আমিও জানতাম মিতা শুধরাবে না কখনো।
_ভেবে দেখ আরেকবার। তারপর সিদ্ধান্ত নিয়ে আমাকে ফোন দিস। আমি তোর কথামতো ব্যবস্থা করে নিবো।
_আচ্ছা ঠিক আছে। আমি এবার আসি।

নির্ঝর থানা থেকে বেরিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো। মনে মনে তার‌ও খারাপ লাগছে।মিতা এমন একটা কাজ করলো কেনো?তার নিজের‌ও কষ্ট লাগছে মিতার জন্য। কিন্তু মিতা এখনো নিজেকে পরিবর্তন করতে চাইছে না। নির্ঝর ভেবেছিল থানায় এসে মিতার পরিস্থিতি দেখবে, তার সাথে একটু কথা বলবে।মিতাকে বোঝাবে সে ভুল করেছে।এমনটা যেন আর কখনো না করে সেটাও বোঝাবে। কিন্তু কিছুই তো হলো না। উল্টা মিতা তার সাথে মিসবিহেভ করছে। এখন কোন সিদ্ধান্ত নিলে মিতা তার ভুল বুঝতে পারবে আর আর‌ওয়াও নিরাপদে থাকবে তা নির্ঝর বুঝতে পারছে না। অসহায় মুখ করে গাড়িতে বসে আছে সে। একটু পর ভাবলো এখানে একা একা বসে থেকে লাভ কি?তার চেয়ে বরং সে বাসায় গিয়ে আর‌ওয়ার সাথে বসে থাকুক।তার‌ও সময়টা ভালো কাটবে আর আর‌ওয়াও একজন সঙ্গী পাবে।ভাবনা মাথায় আসতেই গাড়িটা স্টার্ট দিলো সে।

বাসার সামনে এসে নির্ঝর গাড়ি থামালো। ধীর পায়ে বাসার উদ্দেশ্যে গেলো সে। বাসায় ঢুকতেই দেখলো আর‌ওয়ার বাবা-মা,মার‌ওয়া এসেছে। নির্ঝর শান্ত কন্ঠে আর‌ওয়ার বাবাকে সালাম দিলো।তার সাথে একটু কথা বলে সে রুমের উদ্দেশ্যে গেলো।

চলবে…