মন রাঙানোর পালা পর্ব-০৯

0
6

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_9
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সুনীতি আয়নার দাঁড়িয়ে নিজেকে দেখছে। হলুদ লেহেঙ্গার সাথে, হলুদ মাখা গায়ে তার সৌন্দর্য যেন কয়েকগুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। সুনীতির একটু লজ্জা লাগলো। এমন সময় সালমা খন্দকার এসে তার পিঠে হাত রেখে বলে,”তোকে আজ কত সুন্দরই না লাগছে। আমার সাজিদ যখন তোকে বউয়ের সাজে দেখবে তখন তো চোখ ফেরাতে পারবে না।”

সুনীতির লজ্জার পরিমাণ আরো বাড়ল। সালমা খন্দকার নিজের কিছু গহনা সুনীতিকে দিয়ে বলেন,”এসব পড়ে তুই তৈরি হয়ে নিবি৷”

“এসবের কি দরকার ছিল ফুফু?”

“এগুলো আমাদের পরিবারের ঐতিহ্যবাহী সব গহনা। আমার শাশুড়ী আমাকে দিয়েছিল আর আজ আমি তোকে দিলাম।”

সুনীতি আর কিছু বলল না। সালমা খন্দকার সুনীতির রুম থেকে বাইরে এসে সাজিদের ফোনটা বের করে একবার তাকিয়ে বলেন,”আর কোন ঝামেলা না হলেই হয়৷ ভালোয় ভালোয় বিয়েটা হলেই বাঁচি।”

এসব ভেবেই তিনি সামনের দিকে রওনা দেন।

এদিকে, সাজিদ গায়ে হলুদ সেরেমনির পর থেকে ইভার সাথে কথা বলার জন্য উদগ্রীব হয়ে গেছে। সালমা খন্দকার তার ফোন কেড়ে নেয়ার দুই দিন হয়ে গেলো। এই দুইদিন সাজিদ ইভার সাথে কোন ভাবেই যোগাযোগ করতে পারে নি। না জানি ইভা কতবার তাকে ফোন করেছে। নিশ্চয়ই সাজিদকে ফোনে না পেয়ে অনেক দুশ্চিন্তা করছে। সাজিদের এসব ভাবনার মাঝেই সাজিদের সামনে এসে দাঁড়ায় সাগর। সাগরকে দেখে সাজিদ বলে,”তুই আমার রুমে কি করছিস?”

সাগর সামান্য হেসে বলে,”কেন আমি কি তোর রুমে আসতে পারি না?”

“সেটা আমি কখন বললাম।”

“যাইহোক, বাদ দে। আয় একটা সেলফি তুলি।”

” এসবের কোন দরকার নেই।”

“কেন দরকার নেই? আজ তোর বিয়ে৷ বিয়ের দিন মানুষ কত সেলফি তোলে কত ফটোশুট করে আর তুই কেমন বেরস হয়ে বসে আছিস। আচ্ছা তোর ফোনটা কোথায়?”

“ফো..ফোন আছে কোথাও একটা। আমি খেয়াল করিনি।”

“পরশু থেকে তোর হাতে ফোন দেখছি না। এমনি তো সবসময় কার না কার কল আসতেই থাকে।”

“তুই আমাকে জেরা করা বন্ধ কর।”

সাগর কিছু একটা ভেবে বলে,”আচ্ছা, করলাম না জেরা। আয় আমার ফোনে একটা সেলফি তুলি।”

বলেই সাজিদের সাথে একটা ছবি তুলল। তারপর সাজিদের দিকে একটা পাঞ্জাবি, কূর্তা বাড়িয়ে দিন বলল,”এসব পড়ে তৈরি হয়ে থাকিস। আম্মু তোকে দিতে তোকে পড়তে বলেছে।”

“আম্মু কোথায় রে? আম্মুর সাথে একটু আর্জেন্ট কথা ছিল।”

“আম্মু তো সুনীতি আপুদের বাসায়।”

“ওহ। আচ্ছা, তুই যা। আমার একটু রেস্টের প্রয়োজন।”

“ঠিক আছে, তুই রেস্ট নে। আমি যাচ্ছি। আর হ্যাঁ, তোর ফোনটা কোথায় আছে একটু খুঁজিস৷ বিয়ের বাড়িতে এত লোক ঘোরাফেরা করছে..তোর এত দামি আইফোনটা না আবার চুরি হয়ে যায়।”

“সেসব তোকে ভাবতে হবে না। চুরি হয়ে গেলে আরেকটা কিনে নেওয়ার সামর্থ্য আমার আছে।”

“এজ ইউ উইশ!”

বলেই সাগর চলে যায়৷ সাজিদ সাগরের যাওয়ার পরেই দরজা লাগিয়ে বিছানায় শুয়ে পড়ে।

~~~~~~~~~~
“Ho Solah Baras Ke Do Kadam
Chaukhat Ke Baahar Kya Gaye
Teri Kudmayi Ke Din Aa Gaye”

সুনীতির বিয়ের অনুষ্ঠান উপলক্ষে এই গানটা বাজছে আর সবাই সেই গানের তালে তালে নাচছে। সুনীতির বেস্ট ফ্রেন্ড অহনাও আজ এসেছে সুনীতির বিয়ে উপলক্ষে। সে এসেছে থেকেই নাচে গানে আনন্দে মেতে আছে। এদিকে সুনীতি অহনার উপর রেগে আছে এত লেট করে আসার জন্য। সুনীতি অহনাকে বলেছিল আরো আগে আসতে। কিন্তু অহনা একটু কাজে ব্যস্ত ছিল। তাই আসতে পারেনি৷ এজন্য অবশ্য সে বারবার সুনীতিকে সরিও বলেছে। সুনীতি তাতে একটু নরম হয়েছে।

অহনা সুনীতির রুমে এসে দেখে পার্লার থেকে লোকেরা তাকে সাজাতে ব্যস্ত। সুনীতিকে তারা বিভিন্ন গহনা পড়িয়ে দিচ্ছে তাতে চড়া মেকাপ। এসব দেখে অহনা বলে,”এত ভাড়ী গহনা কি আজকাল কেউ পড়ে? আর একটু নর্মাল মেকআপ করলেই তো হতো। সাদা ধবধবে ভূত লাগছে !

অহনার কথা শুনে পার্লারের লোক হা করে তাকিয়ে থাকে। সুনীতি বলে,”ফুফু এসব গহনা দিয়ে গেছেন। এসব নাকি বংশের গহনা।”

“যাইহোক, এত চড়া মেকাপের দরকার নেই। এই মেকআপ তুলে একটা হালকা মেকাপ করিয়ে দেন।”

পার্লারের লোকটা খানিক আক্রোশ নিয়ে বলে,”আপনার যখন পোষাচ্ছে না তখন আপনি নিজেই মেকআপ করিয়ে দেন।”

অহনা খানিক হেসে বলে,”গুড আইডিয়া।”

বলে নিজেই মেকাপ করাতে শুরু করল। আর খুব সুন্দর ভাবেই করাচ্ছিল। নর্মাল ব্রাইড মেকাপে যে কাউকে এত সুন্দর লাগে তা সুনীতিকে না দেখে বোঝাই যেত না। সুনীতি অহনার কাণ্ডে হেসে বলে,”তোর খুতখুতে স্বভাব আর গেল না।”

এদিকে পার্লারের লোকটার থোতা মুখ ভোতা হয়ে গেল। সে কিছু বলার মতো খুঁজে পাচ্ছে না। অহনা তার দিকে তাকিয়ে চোখ টিপে। এরমধ্যে নয়না খন্দকার এসে তাড়া দিয়ে বলেন,”সাজগোজ কি হলো? সাজিদরা এক্ষুনি রওনা দিবে।”

অহনা উত্তর দেয়,”জি আন্টি,প্রায় শেষ। আপনি শুধু আর একটু অপেক্ষা করুন।”

~~~~~~~~~~~~~~~~
সাজিদ বিয়ের সাজে প্রস্তুত। সালমা খন্দকার তাকে যাওয়ার জন্য তাড়া দিচ্ছে৷ কিন্তু সাজিদ কিছুতেই যেতে রাজি না। সে উলটো জেদ ধরে বসে আছে ইভার সাথে তাকে কথা বলার সুযোগ করিয়ে না দিলে সে কোথাও যাবে না। সাজিদের এই জেদের কাছে পরাস্ত হতে চাইছিলেন না সালমা খন্দকার। তিনি সাজিদকে প্রথমে বেশ রাগারাগি করছিলেন তারপর একসময় ইমোশনাল ব্ল্যাকমেইল শুরু করলেন। কিন্তু তাতেও কোন কাজ হলো না বিধায় বাধ্য হয়ে সাজিদের হাতে তার ফোনটা দিয়ে বলেন,”এই নে তোর ফোন। কিন্তু বেশিক্ষণ কথা বলা যাবে না। মাত্র ১ মিনিট।”

সাজিদ ফোনটা দ্রুত হাতে নিয়ে প্রথমে ফোনটা অন করল। তারপর ইভাকে কল দিলো৷ বেশ কয়েকবার রিং হলো কিন্তু ইভা রিসিভ করল না। সাজিদ উদগ্রীব হয়ে ফোন দিয়েই যাচ্ছে আর সালমা খন্দকার বিরক্ত হচ্ছেন। একসময় তিনি সাজিদের হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিয়ে বলেন,”থাক, আর কল দিতে হবে না। বিয়েটা আগে করে নে। তারপর ইভার সাথে মন খুলে কথা বলিস।”

“এমনটা হয় না, আম্মু। আমি ইভাকে অনেক ভালোবাসি। ওকে বিয়ে করেছি আমি। ও এক মুহুর্ত আমার সাথে কথা বলতে না পারলে ছটফট করে আর ৪৮ ঘন্টা থেকে ওর সাথে আমার কোন যোগাযোগ নেই। ও নিশ্চয়ই দুশ্চিন্তায় পাগল হয়ে গেছে।”

“ইভা পাগল হয়ে গেছে কিনা জানিনা কিন্তু আমি এটা বলতে পারি তুই একটা বদ্ধ পাগল হয়ে গেছিস। বিয়ে করতে কত সময় লাগবে?বিয়ের ২ দিন পর তো আমেরিকা যাচ্ছিসই, তারপর যত ইচ্ছা হয় কথা বলে নিস।”

সাজিদ তবু মানতে চায়না। শেষপর্যন্ত সালমা খন্দকার বলেন,”পাগলামি বন্ধ করে জলদি আমার সাথে চল। তোর সব প্রয়োজনীয় কাগজপত্র কিন্তু আমার জিম্মায়৷ যদি আজ তুই বিয়েটা না করিস তাহলে কিন্তু সেসব তুই পাবি না। এমনকি তোর ফোনটাও না৷ তারপর দেখি তুই কিভাবে আমেরিকায় যাস আর কিভাবে ইভার সাথে যোগাযোগ করিস।”

“আম্মু! তুমি আমায় হুমকি দিচ্ছ।”

“হুমকি না সতর্কবার্তা। এখন ভেবে দেখ তুই কি করবি।”

সাজিদ নিশ্চুপ। সালমা খন্দকার চলে যান। এরপরই দরজার আড়াল থেকে বেরিয়ে আসে সাগর। সাজিদকে উদ্দ্যেশ্য করে বলে,”আমি কি শুনলাম এসব!”

সাজিদ ঘাবড়ে গিয়ে বলে,”সাগর, ভাই আমার পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা কর। আমি..”

“আমি কিছুতেই তোকে আর আম্মুকে সুনীতি আপুকে ঠকাতে দেব না৷ আমি সবাইকে সবটা বলে দেব।”

“তুই এমন কিছু করবি না।”

“করব। আমি কখনো এমন জঘন্য অন্যায় মানব না। তোর লজ্জা করে না তুই বিবাহিত হয়ে আবার বিয়ে করতে চাস। দুটো মেয়ের জীবন নষ্ট করতে চাস। আমি এক্ষুনি সবাইকে ফোন করে সব বলে দেব।”

সাগর কাউকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই সাজিদ তার ফোন কেড়ে নিয়ে ঘরের বাইরে এসে দরজায় তালা মেড়ে দেয়। যার ফলে সাগর সেই রুমে বন্দি হয়ে যায়। সাগর দরজা ধাক্কাতে থাকে কিন্তু কোন লাভ হয়না। সাজিদ তাকে এই অবস্থায় রেখেই সুনীতিদের বাড়ির উদ্দ্যেশ্যে বরের সাজে রওনা হয়।

To be continue…….