মন রাঙানোর পালা পর্ব-১১

0
242

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_11(মহাধামাকা পর্ব)
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সাজিদ হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে থাকে ইভা ও সাগরের দিকে। সালমা খন্দকারের অবস্থাও একইরকম। এদিকে বাকি সবাই বিস্ময় নিয়ে তাকিয়ে পরিস্থিতি বোঝার চেষ্টা করছে। ইভা এগিয়ে এসে সাজিদকে ঠাস করে একটা থাপ্পড় মা*রে। ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,”তুমি কেন আমার সাথে এমন করলে সাজিদ? আমি তোমাকে ভালোবেসে নিজের পরিবারকে ছেড়ে দিয়েছি আর তুমি..”

সাজিদ ইভার দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। এদিকে সুনীতি বুঝতে পারে না এই বিদেশি মেয়েটার এমন আচরণের কারণ। সামিউল খন্দকার এগিয়ে এসে বলেন,”এসব হচ্ছে টা কি?”

সাগর বলে,”আমি আপনাকে সব বলছি মামা।”

বলেই সে ঘৃণাভরা দৃষ্টিতে নিজের মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,”তোমার থেকে অন্তত আমার এমনটা আশা ছিল না, আম্মু। তুমি শুধুমাত্র নিজের স্বার্থের জন্য নিজের ভাইকে এভাবে ঠকালে। নিজের একমাত্র ভাইঝির জীবন নষ্ট করতে দুবার ভাবলে না।”

সামিউল খন্দকার উদগ্রীব হয়ে বলেন,”কি হয়েছে সবটা আমায় স্পষ্ট করে বলো।”

সাগর নিজের মামার দিকে চোখ ফিরিয়ে বলে,”সবটা তোমায় বলছি মামা।”

অতঃপর ইভার দিকে ইশারা করে বলে,”ইনি হলেন ইভা, একজন আমেরিকান তরুনী। এনার আরো একটা পরিচয় আছে। উনি হলেন আমার শ্রদ্ধেয় বড় ভাই সাজিদের বিয়ে করা বউ এবং তার হবু সন্তানের পিতা।”

সাগরের কথা শুনে সকলে যেন আকাশ থেকে পড়ে। সুনীতির চোখ বেয়ে নোনাজল পড়তে থাকে। সাজিদ ইভার দিকে তাকাতেই সে চোখ ফিরিয়ে নেয়। সাজিদ বিড়বিড় করে বলে ওঠে,”সাগর কি সত্যি বলছে ইভা?”

ইভা কোন উত্তর দেয়না। এদিকে সালমা খন্দকার তবুও হার মানার পাত্রী নন। তিনি সবার উদ্দ্যেশ্যে বলতে থাকেন,”এসব মিথ্যা। সাগর, তুই নিজের ভাইকে সহ্য করতে পারিস না সেজন্য এমন নাটক করবি।”

সাগর তীব্র ক্রোধ নিয়ে বলে,”আম্মু! এতকিছুর পরেও তুমি কিভাবে এমন মিথ্যাচার করছ।”

সালমা খন্দকার দমে না গিয়ে সাজিদকে বলেন,”তুই বল না, দেখ সাগর কেমন নাটক করছে।”

সাজিদ ইভার দিকে তাকায়। ইভা তার দিকে ফিরেও তাকাচ্ছে না। ইভার গর্ভে তার সন্তান বেড়ে উঠছে। এসব ভেবে সে আর চুপ থাকতে পারল না। নিজের মায়ের উপর চেচিয়ে বলল,”ব্যস, মা ব্যস। ইতিমধ্যেই তুমি আমাকে দিয়ে যথেষ্ট অন্যায় করিয়েছ। এবার এসব নাটক বন্ধ করো। সাগর যা বলছে তা একদম সত্যি। ইভা আমার স্ত্রী।”

“সাজিদ!”

“আমার আর তোমার ৩০ লাখ টাকার দরকার নেই। আমাকে শুধু আমার স্ত্রীকে নিয়ে সুখে থাকতে দাও।”

সালমা খন্দকার এবার সামিউল খন্দকারের দিকে তাকান। তিনি চোখ নামিয়ে আছেন। সালমা খন্দকার তার কাছে গিয়ে বলে,”ভাই..ভাই তুই..”

তিনি আরো কিছু বলতে যাবেন তার আগেই নয়না খন্দকার এগিয়ে এসে ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেন সালমা খন্দকারের গালে। উপস্থিত সকলে হতবিহ্বল। সালমা খন্দকার মোটেও এটা আশা করেন নি। যেই নয়না তাকে সবসময় নিজের বড় বোনের মতো সম্মান দিয়েছে সে কিনা আজ সবার সামনে তাকে এভাবে থাপ্পড় দিলো। তিনি থতমত খেয়ে বললেন,”তুই আমায় মারলি নয়না?”

“হ্যাঁ, মেরেছি। বেশ করেছি। আপনার ভাই তো আপনাকে সম্মান করে তাই নিজের কলিজা ছিড়ে গেলেও আপনার উপর একটু উঁচু গলায় কথা বলতে পারবে তাই তার হয়ে আমাকেই থাপ্পড়টা মারতে হলো৷ কিন্তু আপনি যা করেছেন তার জন্য এই থাপ্পড়টা যথেষ্ট নয়। আমার তো ইচ্ছা করছে জুতা খুলে আপনাকে মারতে!”

“নয়না!”

“চুপ একদম চুপ। এখনই আমার বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। বেয়াদব মহিলা, আপনার সাহস কি করে হলো আমার আদরের মেয়ের সাথে এমন করার। আপনাকে আমি পুলিশে দেবো। সুনীতির বাবা তুমি এখনই পুলিশ ডাকো। এদের পুরো পরিবারকে আমি জেলের ভাত খাওয়াবো..এদের সাহস কি করে হয় আমার মেয়ের সাথে এমন করার!”

সামিউল খন্দকার এগিয়ে এসে নিজের স্ত্রীকে সামলাতে সামলাতে বলেন,”তুমি শান্ত হও নয়না, শান্ত হও।”

“কি করে আমি শান্ত হবো সুনীতির বাবা? আমি ছোটবেলা থেকে বুকে আগলে আমার মেয়েকে মানুষ করেছি। কোনদিন ওকে বিন্দুমাত্র কষ্ট পেতে দেইনি আর আজ দেখুন আমার মেয়ের চোখ দিয়ে কিভাবে নদীর স্রোতের মতো পানি পড়ছে। এটা যে আমি সহ্য করতে পারছি না সুনীতির বাবা। আপনি এদের সবাইকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে বের করে দিন। নাহলে এদের সবাইকে আজ আমি মেরেই ফেলব..”

বলেই তিনি রান্নাঘরের দিকে এগিয়ে গেলেন। রান্নাঘর থেকে বটি এনে ছুটে যেতে লাগলেন সালমা খন্দকারের দিকে। সুনীতি এটা দেখে এগিয়ে এসে নিজের মাকে জড়িয়ে ধরে বলল,”কি করছ কি তুমি, মা? আমি ঠিক আছি৷ তুমি দয়া করে শান্ত হও।”

“কি করে শান্ত হবো মামনী? এই মহিলার এত বড় সাহস যে আমার মেয়ের সাথে এমন জঘন্য কাজ করতে চায়। নিজের বিবাহিত ছেলের সাথে আমার মেয়ের বিয়ে দিতে চায় সত্যটা লুকিয়ে…একে তো আমি..”

সালমা খন্দকার সামিউল খন্দকারের কাছে গিয়ে বলে,”দেখেছিস তোর বউয়ের কত বড় স্পর্ধা! আমাকে বটি নিয়ে মারতে এসেছে।”

সামিউল খন্দকার একটা তীব্র গর্জন দিয়ে বলেন,”ব্যস, অনেক সহ্য করেছি আর না। আপনি আপনার ছেলেকে নিয়ে ভালোয় ভালোয় এখান থেকে বের হন নাহলে আমি সিকিউরিটি গার্ড ডেকে ঘাড়ধাক্কা দিয়ে আপনাকে বের করে দিব।”

সালমা খন্দকার সামিউলের এই রূপ দেখে হতবাক হয়ে যায়। যেই ভাই কোনদিন তার সাথে উঁচু গলায় কথা বলে নি আজ সে এভাবে বলছে! সালমা খন্দকার বুঝলেন এখানে থাকা মানে বিপদ বাড়ানো। তাই তিনি দ্রুত বেরিয়ে গেলেন। তিনি বেরোনোর পর সাজিদ সুনীতির সামনে গিয়ে বলল,”আমি দুঃখিত কিন্তু..”

সে নিজের কথা সম্পুর্ণ করার আগেই সুনীতি ঠাস ঠাস করে চার-পাঁচটা থাপ্পড় দিয়ে বলল,”দূর হন আমার সামনে থেকে।”

সাজিদ রেগে গিয়ে বলে,”এত তেজ দেখাচ্ছ কেন? আমি তো ক্ষমা চাইতে এসেছিলাম। আর তুমি যে কত ভালো মেয়ে সেটাও আমার জানা আছে। সেদিন তো ভার্সিটিতে একটা ছেলের সাথে..”

সাজিদ নিজের কথা শেষ করতে পারল না তার আগেই অভিক এগিয়ে এসে সাজিদকে কিল-ঘুষি মারতে লাগল।

রাহেলা খাতুন এতক্ষণ ধরে এসব দেখে মজা নিচ্ছিলেন আর ভাবছিলেন বেশ হয়েছে ওনারা তার ছেলেকে প্রত্যাখ্যান করে দেওয়ার উচিত শিক্ষা পেয়েছে। কিন্তু অভিক হঠাৎ এভাবে এসবের মধ্যে জড়িয়ে যাওয়ার কারণে তিনি বলেন,”অভিক তুমি ওকে মারছ কেন? তোমাকে এসবের মধ্যে জড়াতে হবে না। তুমি চলে আসো।”

কিন্তু কে শোনে কার কথা। অভিক সাজিদকে মারতে মারতে বলে,”মেয়েদের কিভাবে সম্মান করতে হয় জানো না? একেই তো অন্যায় করছ তার উপর এভাবে বলছ।”

সাগর এগিয়ে এসে নিজের ভাইকে ছাড়িয়ে নিয়ে বলে,”দয়া করে আমার ভাইয়াকে আর মারবেন না। ওরও কিছু বাধ্যবাধকতা ছিল।”

সুনীতি এসব দেখে কেঁদে চলেছে। অভিক ভীষণ রেগে গিয়ে বলে,”এই মেয়ে এমন কাঁদছ কেন? একদম কাঁদবে না। ইউ হ্যাব টু বি স্ট্রং। এর মতো ডাফারের জন্য কেন কাঁদবে তুমি?”

সুনীতি নিজের চোখের জল মোছে। সাগর সামিউল খন্দকার ও নয়না খন্দকারের দিকে এগিয়ে যায়। করজোড় করে বলে,”আমার ভাইয়া ও মায়ের কাজের জন্য আমি লজ্জিত। পারলে ক্ষমা করে দিয়েন।”

সামিউল খন্দকার বলেন,”তুমি কেন ক্ষমা চাইছ? আজ তোমার জন্য আমার মেয়ে এত বড় বিপদ থেকে রক্ষা পেলো।”

নয়না খন্দকার বলেন,”কিন্তু তোমার মা ও ভাইকে বলে দিও তাদের সাথে আমরা আর কোন সম্পর্ক রাখতে চাই না। তারা যেন আর কখনো আমাদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা না করে। তবে তোমার জন্য আমাদের দরজা সবসময় খোলা থাকবে।”

সাগর নতমুখে বেরিয়ে যায়। ইভাও বেরিয়ে যেতে নেয় এমন সময় সাজিদ তার হাত ধরে অনুনয় করে বলে,”আমাকে ক্ষমা করে দেও ইভা!”

ইভা সটান বলে দেয়,”নো ওয়ে, আই কান্ট লিভ উইদ ইউ এনিমোর। আই ওয়ান্ট ডিভোর্স।”

সাগর নতজানু হয়ে বসে পড়ে কিন্তু ইভা তবুও তাকে ইগ্নোর করে চলে যায়। সাগর জানে ইভা কতটা জেদি। তার পরিবার সাজিদকে মেনে নেয়নি জন্য একবাক্যে এতদিনের সম্পর্ক ত্যাগ করে চলে এসেছিল সেখানে তাকে ছেড়ে যাওয়াও অস্বাভাবিক না। সাজিদের সব রাগ জমা হলো নিজের মায়ের জন্য তার জন্যই আজ এতকিছু ঘটে গেলো!

To be continue…….