মন রাঙানোর পালা পর্ব-২১+২২

0
2

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_21
#ইয়াসমিন_খন্দকার

আনিসা ঘরের ভেতরে প্রবেশ করতে গিয়ে হঠাৎ করে হোঁচট খেয়ে পড়ে যেতে নেয় এমন সময় অভিক তাকে ধরে ফেলে। এই দৃশ্যটা দেখে সুনীতির একদম ভালো লাগে না। অভিক শক্ত করে আনিসার হাত ধরে বলে,”সাবধানে চলবি তো নাকি?এখনো নিজের দায়িত্ব নিতে শিখলি না?”

আনিসা ব্যথিত স্বরে বলে,”দায়িত্ব নেয়ার মতো, সঙ্গ দেয়ার মতো কেউ ছিল না যে৷ তাই নিজে যতটা পেরেছি যত্ন নিয়েছি। বেঁচে যে আছি এটাই অনেক।”

আনিসার এমন হেয়ালিপূর্ণ করার মানে বুঝল না অভিক। সুনীতি হালকা কেশে বলল,”আপনি ভেতরে আসুন আপু। আমি আপনার জন্য গেস্টরুমটা পরিস্কার করে দিচ্ছি। কিছুটা সময় দিন।”

অভিক সুনীতিকে লক্ষ্য করে আনিসার থেকে দূরে সরে আসে৷ আনিসা হালকা হেসে বলে,”আমাকে নিয়ে তোমার এত ব্যতিব্যস্ত হতে হবে না নীতি। তোমাকে নীতিই বলি, কেমন? আমার থেকে তুমি বয়সে ছোটই হবে।”

“ঠিক আছে,অসুবিধা নেই। আপনি একটু সোফায় বসে বিশ্রাম নিন। আমি গেস্টরুমটা গুছিয়ে আসছি। আর হ্যাঁ, অভিক আমি সকালে স্যুপ তৈরি করেছিলাম৷ তুমি একটু কষ্ট করে নিয়ে খেয়ে নিও আর ওনাকেও দিও।”

বলেই সুনীতি গেস্টরুমের দিকে পা বাড়ায়। আনিসা সোফায় বসে পড়ে। অভিক রান্নাঘর থেকে গিয়ে স্যুপ নিয়ে এসে আনিসার দিকে একটা স্যুপের বাটি বাড়িয়ে দিয়ে বলে,”এটা খেয়ে নে।”

আনিসা স্যুপটা নিয়ে খেতে থাকে৷ অভিক নিজেও খেতে থাকে অন্য একটা বাটিতে। আনিসা স্যুপ খেতে খেতে বলে,”ভারী লক্ষীমন্ত বউ পেয়েছিস….মেয়েটাকে বেশ ভালো লেগেছে আমার। তোর জন্য এমন কারো প্রয়োজন ছিল।”

অভিকের বুকে কেমন জানি চিনচিনে ব্যথা অনুভব হলো। সে সামান্য হেসে বললো,”তোর খবর বল, এখনো কি একা আছিস? নাকি বিয়েশাদিও হয়েছে?”

অভিকের প্রশ্ন শুনে আনিসা থমকে যায়। খাওয়া থামিয়ে একদৃষ্টে তাকিয়ে থাকে নিচের দিকে। তার চোখ-মুখ হঠাৎ করে দুঃখে ভারাক্রান্ত হয়ে যায়। অভিম আনিসার এমন মুখভঙ্গি দেখে হচকচিয়ে যায়। আনিসার কাছাকাছি এসে তার হাত ধরে বলে,”তুই ঠিক আছিস তো?”

আনিসা জোরে জোরে শ্বাস নিতে নিতে বলে,”হ্যাঁ, আমি একদম ঠিক আছি৷ তোর কাছে একটাই অনুরোধ..দয়া করে আমি নিজে থেকে কিছু না বলার আগে আমার থেকে কিছু জানতে চাস না।”

অভিক একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”বেশ, তুই যা চাস তাই হবে৷ তুই নিজে থেকে না বললে আমি আর তোর কাছে কিছু জানতে চাইব না। তুই প্লিজ হাইপার হয়ে যাস না।”

সুনীতি ঘরদোর গুছিয়ে এসে অভিক এবং আনিসাকে এতটা কাছাকাছি দেখে ভড়কে যায়। তার বুকের মাঝে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভূত হয়। কেন জানি এই আগন্তুক রমনীর আগমন তাকে শান্তি দিচ্ছে না। সুনীতি নিজের কষ্ট লুকিয়ে মুখে মেকি হাসি নিয়ে সামনে এগিয়ে এসে বলে,”আপনার জন্য গেস্টরুমটা আমি গুছিয়ে দিয়েছি আপু। আপনি এখন চাইলে ওখানে গিয়ে থাকতে পারেন।”

সুনীতির গলার স্বর শুনে অভিক উঠে দাঁড়ায়। সুনীতির দিকে তাকিয়ে বলে,”আনিসা একটু দূর্বল। তুমি কাইন্ডলি ওকে একটু ধরে ধরে নিয়ে যাও।”

“ঠিক আছে।”

বলেই সুনীতি এগিয়ে আসে। আনিসা হালকা হেসে বলে,”এইটুকুনি একটা মেয়ে কিভাবে আমায় সামলাবে, বলতো অভি? তোর না আজও কোন বোধবুদ্ধি হলো না৷ সারাটা রাস্তা তো তুই”ই আমাকে ধরে নিয়ে এলি। গেস্টরুম পর্যন্তও নাহয় তুই’ই নিয়ে চল। কি বলো নীতি? অভি আমাকে গেস্টরুম পর্যন্ত ধরে নিয়ে গেলে তোমার কোন আপত্তি নেই তো?”

আনিসার এহেন কথা একদম ভালো লাগে না সুনীতির। তবুও সে ভদ্রতার খাতিরে বলে,”না, আপু। আপত্তি থাকবে কেন? তবে আমিও কিন্তু আপনাকে নিয়ে যেতে পারি। এতটুকু শক্তি আমার শরীরে আছেই।”

অভিক বলে ওঠে,”না, থাক। আনিসা ঠিকই বলছে। তুমি ওকে সামলাতে পারবে না। তার থেকে বরং আমিই ওকে নিয়ে যাই।”

বলেই সে আনিসাকে ধরে সোফা থেকে টেনে তোলে এবং আস্তে আস্তে তাকে ধরে গেস্টরুমের দিকে নিয়ে যেতে থাকে। সুনীতির ধৈর্যের সীমা পেরিয়ে যেতে থাকে। সে হনহন করে নিজের রুমের দিকে এগোয়।

আনিসা ধরে ধরে গেস্টরুমে নিয়ে এসে তাকে আলতো করে শুইয়ে দেয় অভিক। অতঃপর বলে,”তুই এখন এখানে শান্তিতে বিশ্রাম নে। একদম ভয় পাবি না। এখানে তুই একদম নিরাপদ।”

বলেই অভিক চলে যেতে নেয়। এমন সময় আনিসা অভিকের হাতটা টেনে ধরে বলে,”প্লিজ আমার পাশে একটু বসে থাক না অভি। তুই চলে গেলে আমার ভীষণ একাকীত্ব বোধ হবে।”

অভিক আলতো করে নিজের হাত সরিয়ে নিয়ে বলে,”তোর বিশ্রামের প্রয়োজন আনিসা। তুই একটু ঘুমানোর চেষ্টা কর।”

আনিসা কাতর স্বরে বলে,”আমার চোখে ঘুম আসবে না রে, অভি! জানিস, কতগুলো দিন আমি ঠিকমতো ঘুমাই নি। এখন পরিস্থিতি এমন যে আমি ঘুমাতেই ভুলে গেছি।”

“তোর শরীর খুব একটা ভালো না। ঘুমানোর চেষ্টা কর।”

“আচ্ছা, চেষ্টা করছি। কিন্তু তুই আমায় ছেড়ে কোথাও যাস না, প্লিজ। অন্তত আমি না ঘুমানো পর্যন্ত আমার পাশে বসে থাক।”

অভিক আনিসার এই অনুরোধটা আর ফেলতে পারে না। একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”ঠিক আছে।”

অতঃপর কিছু সময় অঅতিবাহিত হয়। আনিসা ছটফট করতে করতে একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। অভিক উঠে বসে আনিসার গায়ে চাদর জড়িয়ে দিয়ে রুমের বাইরে এসে দরজাটা বাইরে থেকে লক করে দিয়ে নিজের রুমের দিকে অগ্রসর হয়।

নিজের রুমে প্রবেশ করেই অভিক দেখতে পায় সুনীতি ওপাশ ফিরে শুয়ে আছে। সুনীতির দিকে তাকিয়ে হালকা হাসে অভিক। অতঃপর ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নিয়ে কাপড়-চোপড় বদলে সুনীতির পাশে শুয়ে পড়ে। সুনীতি তখনো অন্যদিকে ফিরে ছিল। অভিক সুনীতির পাশে শুয়েই শক্ত করে তাকে জড়িয়ে ধরে সুনীতিকে নিজের কাছে টেনে নেয়। তার মুখটা নিজের দিকে ফিরিয়ে দেখে সুনীতি তখনো চোখ বন্ধ করে ছিল। অভিক সুনীতির কপালে আলতো করে চুমু খেয়ে বলে,”আমার উপর রাগ করে আছ নীতি?”

সুনীতি কোন জবাব দেয়না। অভিক সুনীতির এমন মৌনতা দেখে বলে,”আনিসা আমার স্কুল এবং কলেজ লাইফের অনেক ভালো বন্ধু ছিল। ওর এই অসহায় অবস্থা দেখেই আমি ওকে এখানে নিয়ে এসেছি। আমি ভেবেছি তুমি ব্যাপারটা বুঝবে। আচ্ছা, ওর উপস্থিতি কি তোমায় কষ্ট দিচ্ছি, নীতি? যদি এমন হয় তো বলো। আমি ওকে এখান থেকে অন্য কোথাও নিয়ে গিয়ে রাখব।”

সুনীতি এবার চোখ মেলে তাকিয়ে বলে,”আমি তো তোমাকে একবারও বলিনি যে, ওনার উপস্থিতিতে আমার সমস্যা হচ্ছে। তুমি নিজে নিজেই সবটা ভেবে নিচ্ছ।”

“তাহলে তুমি আমার উপর অভিমান করে আছ কেন?”

“কেন? আমার কি অধিকার নেই তোমার উপর অভিমান করার? এই যে তুমি হুটহাট করে মিশনে চলে যাও..জানো আমার কতটা চিন্তা হয় তোমার জন্য।”

“এটাই তো আমার কাজ নীতি..”

“জানি তো..এজন্যই তো রাগ করে থাকতে পারি না। আমি বুঝতে পারি তোমার ব্যাপারটা। কিন্তু তুমি আমাকে বোঝার চেষ্টা করো না।”

“হঠাৎ এমনটা কেন মনে হলো?”

“দেখো, আনিসা আপুর এখানে থাকা নিয়ে আমার কোন সমস্যা নেই। কিন্তু তোমার কি আমাকে এতটা দূর্বল মনে হয়, যে আমি ওনাকে ওনার রুমে পৌঁছে দিতে পারতাম না?”

“উফ..তুমি আবার এই ব্যাপারটা নিয়ে পড়লে কেন?”

“কেন পড়লাম..সেটা তুমি বুঝবে না অভিক। আমার জায়গায় থাকলে বুঝতে। আসলে তোমরা সব ছেলেরাই এমন। আমার এ নিয়ে আর কিছু বলার নেই।”

অভিক সুনীতিকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে তার ঘাড়ে চুমু দিয়ে বলে,”এসব বাদ দাও..আজকের আবহাওয়াটা বেশ সুন্দর তো চলো..”

অভিকের এমন কথায় সুনীতি লজ্জায় তার বুকে মুখ লুকায়। অভিক সুনীতির মুখ তুলে তার দিকে মোহিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,”আমার উপর ভরসা রাখতে পারো। তুমি ছাড়া আর কাউকে আমি এই নজরে দেখবো না।”

অভিকের কথায় শীতল স্রোত বয়ে যায় সুনীতির শরীর দিয়ে।

To be continue…….

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_22
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সুনীতির ঘুম ভাঙলে সে নিজেকে অভিকের বুকের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে থাকা অবস্থায় আবিষ্কার করে। গতকাল রাতের কথা ভেবে লজ্জা এবং সুখের অপূর্ব অনুভূতি অনুভব হয়। সে মোহিত নয়নে অভিকের দিকে তাকায়। এই লোকটা শুধুই তার। ভাবতেই মনে আনন্দ অনুভূত হয়। সুনীতি অভিকের মুখে হাত বোলাতে থাকে। হঠাৎ করেই এমন মুহুর্তে তার কানে বেশ খানিকটা শব্দ আসতে থাকে। সুনীতি উঠে বসে৷ ওড়নাটা গায়ে জড়িয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,”কোথা থেকে শব্দ আসছে?”

বলেই সে উঠে দাঁড়ায়। অভিকেরও ঘুম ভেঙে যায়। সে ঘুম থেকে উঠেই সুনীতিকে বলে,”কি হয়েছে?”

“কোথা থেকে যেন একটা দরজা ধাক্কানোর শব্দ আসছে।”

সুনীতির কথা শুনে অভিকের হুশ ফেরে৷ তার মনে পড়ে যায় গতকাল রাতে সে আনিসার ঘরের দরজা বাইরে থেকে বন্ধ করে দিয়েছিল। সে দ্রুত উঠে বসে শার্টের বোতাম লাগাতে থাকে। অতঃপর ছুট লাগায় গেস্ট রুমের দিকে। সুনীতিও যায় তার পেছন পেছন। অভিক গেস্টরুমের সামনে এসে বুঝতে পারে এই রুম থেকেই দরজা ধাক্কানোর শব্দ আসছিল। সে আর দেরি না করে দ্রুত দরজার ছিটকিনি খুলে দেয়। সাথে সাথেই আনিসা তার বুকে ঝাপিয়ে পড়ে। আনিসার এই অবস্থা দেখে অভিক ঘাবড়ে যায়। তাকে একদম উদ্ভ্রান্তের মতো লাগছিল। সুনীতি দূর থেকে এই দৃশ্য দেখে আবারো কষ্ট পায়। কাছে আসার সাহস না দেখিয়ে সে সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকে। অভিক আনিসার উদ্দ্যেশ্যে বলে,”কি হয়েছে তোর আনিসা? এমন করছিস কেন? তুই শান্ত হ, প্লিজ।”

আনিসা কাঁদতে কাঁদতে বলতে থাকে,”ওরা…ওরা আমায় মেরে ফেলবে অভি..তুই দয়া করে ওদের হাত থেকে আমাকে বাঁচা..”

“কারা মারবে তোকে?”

“ওরা..ওরা খুব ভয়ানক….প্লিজ আমাকে ওদের হাত থেকে বাঁচা।”

অভিক বুঝতে পারে না আনিসা ঠিক কাদের কথা বলছে। সে অসহায় চোখে তাকিয়ে থাকে। হঠাৎ করেই আনিসা জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। অভিক ভয়ে তাকে ডাকতে থাকে,”এই আনিসা..কি হয়েছে তোর? চোখ খোল। দেখ আমি আছি এখানে। তোর কোন ক্ষতি হতে দেব না আমি।”

সুনীতির হৃদয়ে এই দৃশ্য যেন তীরের মতো বিঁধছিল। তার চোখে ছলছল করছিল জল। সে আর এক মুহুর্ত সেখানে না দাঁড়িয়ে নিজের ঘরের দিকে রওনা দেয়। ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে থাকে। নিজের মা-বাবার ছবি হাতে নিয়ে বলে,”তোমরা তো আমার কাছে নেই মা-বাবা। এখন তো আমার শুধু ঐ একজনই আছে। তাকেও কি ভাগ্য আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইছে? এমন হলে যে আমি আর বাঁচবোনা। একদম নিঃশেষ হয়ে যাব।”

এসব ভেবেই তার কান্নার গতি বাড়ে। ঘরপোড়া গরু হয়ে যেন সে সিঁদূরে মেঘ দেখছে। অভিকের সাথে তার সুখের সংসারে কি তবে কারো দৃষ্টি লাগলো?

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
“ও এখন কেমন আছে ডাক্তার?”

অভিকের এহেন প্রশ্নের উত্তরে ডাক্তার বলে,”চিন্তার কিছু নেই। উনি ভালো আছেন। আমার যতদূর মনে হলো উনি কোন মেন্টাল ট্রমা থেকেই বারবার এমন করছেন। আপনার উচিৎ ওনাকে কোন ভালো সাইক্রিয়াটিস্টের কাছে নিয়ে যাওয়া।”

বলেই তিনি বের হয়ে যান। আরাফাত অভিকের কাধে হাত রাখে। অভিক অসহায় কন্ঠে বলে,”আমি বুঝতে পারছি না কি করা উচিৎ। আনিসার এই অবস্থা দেখে আমি শান্তি পাচ্ছি না।”

আরাফাত দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আমি খুব ভালো একজন সাইক্রিয়াটিস্টকে চিনি। ওনার চেম্বার যদিওবা ঢাকায় তবে উনি সপ্তাহে একদিন সিলেটে আসেন। আমি ওনার সাথে এপয়েনমেন্টের ব্যবস্থা করার চেষ্টা করব।”

“অনেক বড় চিন্তা থেকে রক্ষা করলি রে!”

আরাফাত এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,”আচ্ছা, সুনীতি ভাবি কোথায় রে? এখানে এসেছি থেকে তো ওনাকে দেখছি না।”

এতক্ষণে অভিকের হুশ ফেরে। সে এদিক ওদিক তাকিয়ে বলে,”তাই তো। নীতি কোথায়?”

আরাফাত অভিককে বলে,”তুই এখানে থাক। আমি দেখছি ভাবি কোথায়।”

বলেই আরাফাত বেরিয়ে পড়ে। সারা বাড়ি খুঁজে সুনীতিকে না পেয়ে সে চিন্তায় পড়ে। অনেক খোঁজার পর অবশেষে ছাদে উঠে সুনীতিকে দেখতে পায়। তাকে দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলে,”ভাবি, আপনি এখানে কি করছেন?”

হঠাৎ করে আরাফাতের কন্ঠ শুনে সুনীতি হচকচিয়ে যায়। পিছন ফিরে আরাফাতকে দেখে নিজের চোখের জল মুছে বললে,”এমনি ভালো লাগছিল না, তাই ছাদে চলে এসেছিলাম।”

আরাফাত সুনীতির চোখের জল লক্ষ্য করে বলে,”আপনি কি কাঁদছিলেন ভাবি?”

“না, মনে হয় চোখে কিছু পড়েছে।”

“আপনি নিজের দুঃখ লুকানোর বৃথা চেষ্টা করবেন না। আমি আপনার কষ্টটা বুঝতে পারছি। এজন্য আমি আরাফাতকে বলেছিলাম আনিসাকে এখানে না আনার জন্য।”

সুনীতি অনুনয় করে বলে,”আপনি প্লিজ আপনার বন্ধুকে এ নিয়ে কিছু বলবেন না। এমনিই ও অনেক চিন্তার মধ্যে আছে। আমি চাই না এসব নিয়ে ভেবে ও আরো চিন্তা করুক।”

“অভিক ঠিকই বলেছিল। আপনি সত্যি অনেক বুঝদার।”

সুনীতি হালকা হাসে। আরাফাত বলে,”আপনার দুশ্চিন্তা করবেন না। অভিককে আমি যতোটা চিনি, এটা হলফ করে বলতে পারি যে, অন্তত ও আপনাকে ঠকাবে না।”

সুনীতির হঠাৎ কি মনে হলো সে জানে না। সে আরাফাতকে বলে উঠল,”আচ্ছা, ভাইয়া। আপনি আমাকে নিজের বোন মনে করে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর দেবেন প্লিজ?”

“হ্যাঁ, ভাবি। বলুন।”

“অভিকের সাথে কি আনিসা আপুর শুধুই বন্ধুত্বের সম্পর্ক ছিল? নাকি আরো বেশি কিছু..দয়া করে সত্যটাই বলবেন। আমার থেকে কিছু লুকানোর প্রয়োজন নেই।”

আরাফাত একটা দীর্ঘ শ্বাস ফেলে বলে,”আসলে সত্যিটা হচ্ছে..আমি, অভিক ও আনিসা আমরা তিনজন স্কুলজীবন থেকে একে অপরকে চিনি। আমরা ঢাকার একটা ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে একসাথে একই ক্লাসে ভর্তি হই। সেখান থেকেই আমাদের বন্ধুত্বের সূচনা। এরমধ্যে আনিসার বাবা ছিল একজন পুলিশ অফিসার। আমরা নিজেদের বন্ধুত্বের জন্য গোটা স্কুলে পরিচিত ছিলাম। সকলে আমাদের ত্রিপল A গ্যাং বলে জানত। সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল কিন্তু যখন আমরা 9 গ্রেড এ ছিলাম তখন সবকিছু চেইঞ্জ হয়ে যায়। আমি খেয়াল করি, অভিক আনিসার একটু বেশিই কেয়ার করছে। তখনই আমি বুঝতে পারি অভিকের মনে আনিসার জন্য ফিলিংস তৈরি হচ্ছে। আমার সন্দেহটাই ঠিক ছিল। একদিন অভিক নিজে থেকেই আমাকে এটা বলে। কিন্তু ও আনিসাকে এটা বলার সাহস করে উঠে পারেনি। ওর মনে ভয় ছিল যে,সত্যটা জানার পর হয়তো আনিসা যদি ওকে রিজেক্ট করে তাহলে আমাদের বন্ধুত্বটা ভেঙে যাবে। এভাবে আমাদের স্কুলজীবন শেষ হয়। এরপর আমরা তিনজনে একই কলেজে ভর্তি হই। কলেজ লাইফে অন্য একটা ছেলে আনিসাকে ভীষণ বিরক্ত করতো। একটা বললে ভুল হবে, আনিসা ছিল অপূর্ব সুন্দরী তাই বেশ অনেক ছেলেই নিত্যদিন তাকে প্রপোজ করত। কিন্তু তার মধ্যে একটা ছেলে ছিল নাছোড়বান্দা। সে আবার আমাদের সিনিয়র ছিল। ঢাকা ভার্সিটিতে পড়ত, এক প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার ছেলে ছিল। আমরা ধীরে ধীরে লক্ষ্য করি আনিসার ঐ ছেলেটার প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। ছেলেটার নাম ছিল শিহাব। অভিক এটা মেনে নিতে পারেনি যে আনিসা অন্য কারো প্রতি দূর্বল হয়ে যাচ্ছে। তাই সে একদিন হুট করে আনিসাকে প্রপোজ করে বসে। কিন্তু আনিসা ভেবেছিল অভিক মজা করছে। তাই ব্যাপারটাকে সিরিয়াসলি নেয়নি। এরপর এমন কিছু হলো যা..”

“কি হয়েছিল এরপর?”

কৌতুহল নিয়ে জানতে চায় সুনীতি। আরাফাত বলে,”এরপর অভিক যে আনিসাকে ভালোবাসে এটা বোঝানোর জন্য সুইসাইট এটেম্প করার জন্য নদীতে ঝাপ দিতে গিয়েছিল। আমি তখন অনেক কষ্টে ওকে আটকাই। সেদিন আমরা এমন এক দৃশ্য দেখি যা..”

“কি দৃশ্য..”

“নদীর পারে আনিসা আর ঐ শিহাব ছেলেটা ঘনিষ্ঠ অবস্থায়…”

সুনীতি নিশ্চুপ হয়ে যায়। আরাফাত বলে,”এটা দেখে অভিক আরো ভেঙে পড়ে। আমি অনেক কষ্টে ওকে সামলাই। ও ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফেরে। কিন্তু আর কোন মেয়ের দিকে তাকায় নি। আর সেই দিনের পর থেকে আনিসাও হুট করে উধাও হয়ে যায়। এতগুলো বছর আমরা ওর কোন খোঁজ পাইনি। গতকাল প্রায় ৮/৯ বছর পর আমরা ওর দেখা পাই।”

“তাহলে এতদিন উনি কোথায় ছিলেন?”

“সেটাই তো সবথেকে বড় প্রশ্ন।”

To be continue…….