মন রাঙানোর পালা পর্ব-৩৪+৩৫

0
4

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_34
#ইয়াসমিন_খন্দকার

অভিক সুনীতিকে নিয়ে বাসায় ফেরে। অতঃপর দুজনে কিছু সময় একসাথে পার করে। দুজনের মধ্যে ভাব হয়েছে এটা দেখে আহসান চৌধুরী এবং রাহেলা খাতুনও স্বস্তি পান।

অভিক সুনীতির সাথে কথাই বলছিল এমন সময় তার ফোন একটি কল আসে। অভিক ফোনটা রিসিভ করে কিছুক্ষণ কথা বলে৷ কথা বলা শেষ হতেই অভিক সুনীতিকে বলে,”তোমার মা-বাবার খু*নির শাস্তি পাওয়া এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা মাত্র নীতি। আমি ওর সম্ভাব্য লোকেশন জানতে পেরেছি৷ এবার আর ও আমার থেকে পালিয়ে বেড়াতে পারবে না।”

সুনীতি ভীষণ ভাবে উত্তেজিত হয়ে বলে,”ঐ জানোয়ারটাকে একদম উচিৎ শিক্ষা দেবেন। নাহলে যে, আমার মা-বাবার অতৃপ্ত আত্মা কিছুতেই শান্তি পাবে না।”

“তুমি চিন্তা করো না। আমি ওকে সেই শাস্তি দেব যেটা ও ডিজার্ভ করে। আইনের ভরসায় শুধুমাত্র বসে থাকব না। নিজের হাতে ওকে শাস্তি দেব তাও তোমার সম্মুখে। তুমি সেটা দেখে আত্মতৃপ্তি উপলব্ধি করিও।”

“আমি অপেক্ষায় থাকব এই আত্মতৃপ্তি উপলব্ধি করার জন্য। আমার মা-বাবাকে ঐ মন্টু কত কষ্ট দিয়েই না মে*রেছে। তার সবটা যেন ও ফিরে পায়। ওর এমন অবস্থা করবে যা দেখে ওর নিজের আত্মাও ভয় পাবে! মৃত্যু তো অনেক স্বাভাবিক শাস্তি। ওর যেন মৃত্যুর থেকেও বড় কোন শাস্তি হয়।”

“এমনটাই হবে। তুমি চিন্তা করিও না।”

~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
মন্টু ঢাকার অদূরে একটা বস্তি এলাকায় লুকিয়ে আছে নকল পরিচয়ে। এখানে থেকে মূলত সে সবসময় টোকাইয়ের ছদ্মবেশে ঘুরছে তাই তাকে কেউ চিনতেও পারছে না। তবে মন্টু এতটা কাচা খেলোয়াড় নয়। বেশ ক’দিন থেকেই সে লক্ষ্য করছে এই বস্তির আশেপাশে কিছু সন্দেহজনক ব্যক্তির আনাগোনা। যারা বস্তির বিভিন্ন মানুষকে জিজ্ঞাসাবাদ করছে। ধূর্ত মন্টু সহজেই বুঝতে পারে তাকে খোঁজার জন্যই এত আয়োজন। কিন্তু মন্টু তো এত সহজে ধরা দিবে না। মন্টু একটা শয়তানি হাসি দিয়ে মনে মনে বলে,”আমার কাছে সম্পূর্ণরূপে পৌঁছানোর আগেই আমি তোমাদের কাছে পৌঁছে যাব তোমাদের ত্রাস হয়ে। শুধু আমার পরবর্তী চাল দেখার জন্য অপেক্ষা করো।”

বলেই মন্টু গায়ে একটি শাল জড়িয়ে বেরিয়ে পড়ে। বস্তি থেকে বেরোনোর সময় আজ দূর থেকে অভিকের মুখোমুখি হয়৷ অভিক মন্টুকে দেখতে পাওয়ার আগেই সে লুকিয়ে পড়ে। ফলে অভিকের দৃষ্টিগোচর হয় না মন্টু। অভিক খোঁজ করতে করতে বস্তির ভিতরে ঢুকে পড়ে। মন্টু লুকিয়ে থেকে অভিকের যাওয়ার পানে তাকিয়ে মুচকি হেসে বলে,”টাইমিং এর একটু গণ্ডগোল করে ফেললে মেজর। তোমার জন্য বড্ড আফসোস হচ্ছে। তোমাকে আমি এতটা কাচা খেলোয়াড় খাবিনি। তোমার চাল তো বিফলে গেল। এবার আমার চাল দেখার জন্য অপেক্ষা করো। কিভাবে এক চালেই চেকমেট করে দেই। আমি জানি, খুব বেশিদিন হয়তো আর এভাবে পালিয়ে বেরাতে পারব না। তবে ধরা খাওয়ার আগে যার জন্য আমার আজ এই দশা মানে ঐ সুনীতির একটা ব্যবস্থা তো আমি করবোই। আমি জেলের ঘানি টানব আর ঐ সুনীতি সুখে সংসার করবে এমনটা তো হতে পারে না।”

এটা বলেই মন্টু বেরিয়ে পড়ে বস্তির বাইরে। একটা রিক্সায় উঠে পড়ে রওনা দেয় কোথাও একটা।

সুনীতি বাসাতেই নিজের রুমে বসেছিল। কয়েক ঘন্টা আগে অভিকের ফোনে একটা কল আসায় সে হঠাৎ বেরিয়ে যায়। সুনীতির বেশ উদ্বিগ্ন লাগছিল অভিকের জন্য। অভিককে সুনীতি ফোন করে চলেছে অনেকক্ষণ থেকে কিন্তু অভিক ফোনটাও রিসিভ করছে না। সব মিলিয়ে তার চিন্তা বাড়ছে অভিকের জন্য।

সুনীতি অস্থির হয়ে ঘরে পায়চারি করছিল। এরমধ্যে অভিকের ফোনও সুইচ স্টপ বলছে। সুনীতি আর এভাবে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকতে পারে না। এবার সে ভাবে অভিকের খোঁজে বেরিয়ে পড়বে। যেই না সুনীতি বের হতে যাবে এমন সময় তার ফোনে একটি ফোনকল আসে। সুনীতি ফোনটা রিসিভ করে বলে,”হ্যালো, কে বলছেন?”

বিপরীত দিক থেকে একটা পুরুষালি কন্ঠ ভেসে আসে,”আপনি কি মেজর অভিকের বাড়ির লোক বলছেন?”

“হ্যাঁ, আমি মেজর অভিকের স্ত্রী বলছি। আপনি কে?”

সুনীতির মন হঠাৎ কু ডেকে ওঠে। এমনিই অভিককে ফোনে পাওয়া যাচ্ছে না। এমন সময় হঠাৎ কেউ ফোন দিয়ে অভিকের খোঁজ নিচ্ছে!

“আসলে মেজর অভিক তো একটা সিরিয়াস এক্সিডেন্ট করেছেন। আমরা কয়েক জন মিলে ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে এসেছি। ওনার ফোনটাও কাজ করছে না। জ্ঞান হারানোর আগে অনেক কষ্টে এই নাম্বারটা দিল। তাই আমি কল করলাম।। আপনি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব সিটি হাসপাতালে চলে আসুন।”

এহেন কথা শুনে সুনীতি যেন আকাশ থেকে পড়ে। তার পুরো পৃথিবী এলোমেলো হয়ে যায়। অভিকের চেহারাটা মুখের সামনে ভেসে ওঠে। এখন যে তার আপন বলতে শুধু অভিকই আসে। এদিকে আহসান চৌধুরী এবং রাহেলা খাতুনও আজ বাসায় নেই। আহসান চৌধুরীর এক বন্ধুর বাসায় দাওয়াত খেতে গেছেন। সুনীতি ভীষণ অসহায় বোধ করে। সে আর এক মুহুর্ত সময় নষ্ট না করে সিটি হাসপাতালের উদ্দ্যেশ্যে বেরিয়ে পড়ে।

এদিকে মন্টু তার ভাড়া করা একটা গুণ্ডার কাধে হাত রেখে বলে,”সাব্বাস, কি সুন্দর অভিনয় করলি। প্ল্যান তাহলে সাকসেসফুল।”

বলেই মন্টু হাসতে থাকে। মন্টু জানত, ঐ বস্তি এলাকায় প্রবেশ করলে ফোনের নেটওয়ার্কের সমস্যা হবে। তাই সুনীতি নিশ্চয়ই অভিককে কল দিলে তাকে ফোনে পাবে না। আর এই জিনিসটার সদ্ব্যবহার করেই এমন একটা ফন্দি এঁটে ফেলল সে। এসব ভেবেই একটা তীক্ষ্ণ হাসি দিয়ে বলে,”তুমি আমার থেকে অনেক পালিয়ে বেরিয়েছ সুনীতি। কিন্তু এবার আর পালানোর কোন পথ খুঁজে পাবে না। এবার তোমাকে আমার কাছে ধরা দিতেই হবে। ধরা না দিয়ে যাবে কোথায়?!”

~~~~~~~~~~~~~~~~~
সুনীতি হাফাতে হাফাতে সিটি হাসপাতালের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। সিটি হাসপাতাল মোটামুটি নিরবিলি একটা স্থানে অবস্থিত। হাসপাতাল ছাড়া আশেপাশে তেমন কোন বাড়িঘর বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নেই। শহরের অদূরে অবস্থিত এই স্থানটা তাই বেশিরভাগ সময় জনশূন্যই থাকে। শুধুমাত্র হাসপাতালের সামনে রোগী এবং স্বজনদের ভীড় থাকে।

সুনীতি হাসপাতালের সামনে গিয়ে সিএনজি থেকে নেমে ভাড়া পরিশোধ করে দেয়। আজকাল ভীষণ লোডশেডিং হচ্ছে তাই সন্ধ্যাবেলাতেই রাস্তা মোটামুটি অন্ধকার হয়ে গেছে। সুনীতি ফোনের টর্চ জ্বালিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে থাকে।

এমন সময় হঠাৎ বুঝতে পারে, কে বা কারা যেন তাকে ফলো করছে। সুনীতি ভয়ে ভয়ে পিছনে ফিরতেই আতকে ওঠে। কয়েকটা ছায়ামূর্তিকে নিজের দিকে এগিয়ে আসতে দেখে সামনের দিকে দ্রুত পা চালায়। সামনে এগোতে এগোতে হঠাৎ হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়। এমন সময় কেউ পেছন থেকে তার মাথায় শক্ত একটা জিনিস দিয়ে আঘাত করে যার ফলে সুনীতি জ্ঞান হারিয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে।

মন্টু রড কাঁধে রেখে একটা বিশ্রী হাসি দিয়ে বলে,”শেষপর্যন্ত তোমায় আবার বাগে পেলাম সুনীতি। এবার তোমার শেষ দেখে ছাড়ব। তোমার জন্য আমায় অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। আগেরবার তো ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছিলে। যদিও তোমার মা-বাবা মারা গেছল কিন্তু তোমাকে জীবিত দেখে আমার পরিতৃপ্তি আসেনি। এবার এই শুভ কাজটাও সেরে নেই!”

এদিকে,
অভিক গোটা বস্তিতে খুঁজেও মন্টুর দেখা পেল না। কয়েক ঘন্টা ধরে পুরো বস্তি তন্নতন্ন করে খুঁজেও কোন লাভ হয়নি। অভিক বস্তির বাইরে এসেই মুখ দিয়ে বিরক্তিতে ‘চ’ জাতীয় শব্দ করে বলল,”শেষ অব্দি কি তাহলে তীরে এসে তরী ডুবল?”

এরমধ্যে হঠাৎ করেই সুনীতির জন্য অভিকের চিন্তা হয়। তাই সুনীতির ফোনে কল লাগায়। কিন্তু ফোনটা রিং হলেও সুনীতি রিসিভ করে না। বস্তির ভেতরে নেটওয়ার্ক ছিল না জন্য এতক্ষণ অভিক সুনীতির খোঁজ নিতে পারেনি। এরইমধ্যে অভিকের ফোনে একটা ম্যাসেজ আছে যা দেখে সে ঘাবড়ে গিয়ে৷ তুমুল ক্রোধে বলে,”মন্টুর বাচ্চা! এটা তুই ঠিক করলি না। আমার নীতির গায়ে একটা আঁচড় পড়লে আমি তোকে ছিঁড়ে খাব।”

To be continue…….

#মন_রাঙানোর_পালা
#Part_35
#ইয়াসমিন_খন্দকার

সুনীতির জ্ঞান ফিরলে সে দেখতে পায় তাকে একটা চেয়ারের সাথে বেঁধে রাখা হয়েছে। তার মুখও বাঁধা। তাই চিৎকারও করতে পারছে না। এমতাবস্থায় সুনীতির চোখে জল চলে আসে। অনেক কষ্টে সে নিজের চোখের জল আটকে রাখে। তবে বেশি সময় পর্যন্ত আটকে রাখা দুষ্কর। সুনীতি কিছু সময় অব্দি চুপ থাকে। নিজেকে আর শক্ত রাখতে পারে না। এরইমধ্যে দেখতে পায় মন্টু তার সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। তার হাতে একটা ছু’রি। সুনীতি ভীষণ ভয় পেয়ে যায় মন্টুকে এভাবে দেখে। মন্টু সুনীতির গলার কাছে ছু’রিটা ধরে বলে,”শুধুমাত্র তোর জন্য আমার সাজানো গোছানো জীবনটা আজ এভাবে এলোমেলো হয়ে গেছে। তোর জন্য আমাকে আজ এভাবে ফেরারির আসামি হয়ে ঘুরতে হচ্ছে। সব হয়েছে শুধুমাত্র তোর জন্য! এবার তোকে এসবের জন্য শাস্তি পেতে হবেই! আমাকে তো আজ বা কাল পুলিশ ধরেই ফেলবে,,তাই আমি নিজেকে নিয়ে ভয় করি না আর। তবে জেলে যাওয়ার আগে তোকে না মেরে গেলে খুব আফসোস হবে। আমি এই আফসোসটা করতে চাইছি না। তাই আজ তোকে একেবারে মে*রে ফেলে তারপর নিজে থেকে গিয়ে পুলিশের কাছে ধরা দেব। এরপর যদি আমার ফাঁসিও হয়ে যায় তাও কোন আফসোস থাকবে না।”

সুনীতি উম..উম করতে থাকে। কাতর স্বরে কিছু বলতে চায় কিন্তু তার মুখ বাঁধা। মন্টু সুনীতির মুখের বাঁধন খুলে দিয়ে বলে,”কি বলবি তাড়াতাড়ি বল,,তোর হাতে আর বেশি সময় নেই।”

সুনীতি ক্রন্দনরত সুরে বলে,”আমার মা-বাবাকে তো তুই আমার থেকে কেড়েই নিয়েছিস,,অন্তত আমাকে আমার স্বামীর সাথে বাকি জীবনটা সুখে থাকতে দে। এতটা নির্দয় হোস না। আল্লাহ তোকে কোনদিনও ক্ষমা করবে না।”

মন্টুর উপর যেন এসব কথার কোন প্রভাবই পড়ে না। সে অট্টহাসি দিয়ে বলে,”এসব বলে কোন লাভ হবে না সুনীতি। আমি আজ প্রতিজ্ঞা করেই এসেছি যে তোকে শেষ করে দেব। আমার প্রতিজ্ঞা আমি পূরণ করবোই।”

বলেই ছুরিটা হাতে নিয়ে ঘোরাতে থাকে। সুনীতির ভীষণ ভয় হতে থাকে। সে ভয়ে চোখ বন্ধ করে নেয়। মন্টু পাগলের মতো হাসতে হাসতে বলে,”তোর মা-বাবার কথা তোর খুব মনে পড়ে তাই না? চিন্তা করিস না,,এবার তোকেও তোর মা-বাবার কাছে চিরতরে পাঠিয়ে দেবার ব্যবস্থা করব। তোর শেষ সময় ঘনিয়ে এসেছে।”

কথাটা বলেই ছু’রিটা ঢুকিয়ে দেয় সুনীতির পেটে। ঘটনার আকস্মিকতায় সুনীতি ঘাবড়ে যায়। তার চোখ বড় বড় হয়ে যায়। কিছু সময়ের মধ্যে অনুভব করে তার পেটে ভীষণ ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। নিজের পেটের দিকে তাকাতেই দেখতে পায় গলগল করে রক্তের স্রোত প্রবাহিত হচ্ছে। এই দৃশ্য সুনীতিকে আরো অসহায় করে তোলে৷ সে ব্যথায় আর্তনাদ শুরু করে দেয়।

সুনীতির আর্তনাদে যেন পৈশাচিক আনন্দ পাচ্ছিল মন্টু। পেট থেকে ছু’রিটা বের করে দ্বিতীয় বার ঢোকাতে যাবে তার আগেই সেখানে উপস্থিত হয় অভিক। অভিকের হাতে ছিল বন্দুক। অভিক সেই বন্দুক দিয়ে মন্টুর হাতে গু*লি করে যার ফলে মন্টু দূরে ছিটকে যায়। এই সুযোগে অভিক দ্রুত গিয়ে সুনীতিকে সামলায়।

আরাফাতও এসেছিল অভিকের সাথে। আরাফাত গিয়ে মন্টুর কাছে গিয়ে তাকে মা*রতে থাকে। তারা দুজনে সুনীতির মোবাইলের লাস্ট লোকেশন ট্রেস করেছিল এই এলাকার আশেপাশে। অতঃপর চলে আসে। গোটা এলাকাটা তন্ন তন্ন করে খোঁজার পর এই পুরাতন পরিত্যক্ত বাড়িটা দেখতে পেয়ে দ্রুত এখানে চলে আসে। আর এসেই এই বিভৎস দৃশ্যের সম্মুখীন হয়।

সুনীতি ব্যথায় আর্তনাদ করে চলেছিল। সে নিজের দুই চোখ খোলা রাখতে পারছিল না। অভিক সুনীতির মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো স্বরে বলে,”চোখ খোলা রাখার চেষ্টা করো নীতি,,আমি তোমার কিছু হতে দেব না।”

সুনীতি আধো আধো স্বরে কিছু বলার চেষ্টা করে কিন্তু ব্যর্থ হয়। আরাফাত অভিককে বলে,”এখান থেকে সিটি হাসপাতাল খুব কাছেই। দ্রুত ভাবিকে সেখানে নিয়ে যেতে হবে। তুই ভাবিকে নিয়ে ওখানে যা। আমি ততক্ষণ এটাকে সামলাচ্ছি।”

অভিক দ্রুত সুনীতিকে নিয়ে উঠে দাঁড়িয়ে বলে,”আমি এখনই সুনীতিকে নিয়ে হাসপাতালে যাচ্ছি। তুই ততক্ষণ এটাকে উচিৎ শিক্ষা দে। কি করে ওর সাহস হলো আমার কলিজায় হাত দেয়ার। আজ আমি ওর এমন ব্যবস্থা করবো যা ও চিরকাল মনে রাখবে।”

বলেই অভিক দ্রুত সুনীতিকে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা দেয়। আর আরাফাত মন্টুকে বেঁধে রেখে রড দিয়ে তার শরীরে মা*রতে থাকে। এতেই ক্ষান্ত হয় না। মন্টুর শরীরে ক্ষত তৈরি হলে তার উপর লবণ ছিটিয়ে দেয়।

~~~~~~~~~
অভিক সুনীতিকে নিয়ে সিটি হাসপাতালে পৌঁছে যায়। ডাক্তার সুনীতির অবস্থা বেগতিক দেখে দ্রুত তাকে অটিতে যেতে বলে। সেখানেই সুনীতির চিকিৎসা চলছে। অভিক ক্রমান্বয়ে কেঁদে চলেছে অটির বাইরে বসে। তাকে এভাবে কাঁদতে দেখে আশেপাশের অনেকে তাকিয়ে আছে অবাক চোখে। একজন ছেলেকে খুব কমই এভাবে কাঁদতে দেখা যায়। অভিকের এই চোখের জল সুনীতির প্রতি তার খাঁটি ভালোবাসাকেই ঈঙ্গিত করে।

কয়েক ঘন্টা পর ডাক্তার অটি থেকে বেরিয়ে আসেন। ডাক্তার বের হতেই অভিক তার সামনে গিয়ে বলে,”ডাক্তার আমার স্ত্রীর অবস্থা এখন কেমন?”

“আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করুন, উনি এখন আউট অফ ডেঞ্জার। প্রচুর ব্লিডিং হয়ে গেছিল আমরা তো ভয় পেয়ে গেছিলাম। ভাগ্যিস, ওনার রক্তের গ্রুপ O+, ব্লাড ব্যাংকে যোগাযোগ করে আমরা খুব সহজেই রক্ত পেয়ে যাই। আর দ্রুত রক্ত দেয়ায় ওনাকে ঝুঁকিমুক্ত করা গেছে। তবে ওনার আরো কিছুদিন হাসপাতালেই থাকতে হবে পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার জন্য।”

অভিক খুশিতে ডাক্তারকে জড়িয়ে ধরে বলে,”আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ ডাক্তার। আপনি জানেন না,আমাকে কতটা চিন্তামুক্ত করলেন।”

ডাক্তারও অভিককে এভাবে খুশি দেখে আনন্দিত হন। একজন রোগীর জীবন বাঁচানো যে একজন ডাক্তারের কাছে অনেক বড় পাওয়া। সারাদিনের এত ক্লান্তির পর যখন তারা রোগীর স্বজনের এমন আনন্দ দেখেন তখন এক নিমেষেই সব ক্লান্তি দূর হয়ে যায়।

~~~~~~~~~~
সুনীতির সুস্থতা নিশ্চিত হবার পরেই অভিক তার মা-বাবাকে হাসপাতালে বসিয়ে রেখে আবার চলে এসেছে সেই স্থানে যেখানে মন্টুকে আরাফাত টর্চার করছে। অভিক সেখানে এসেই আরাফাতকে বলে,”শু*রের বাচ্চাটা কি এখনো বেঁচে আছে?”

“তোর জন্য এখনো ওর জানটা বেঁচে রেখেছি।”

অভিক মন্টুর সামনে এসে দেখতে পায় তার পুরো শরীর ক্ষতবিক্ষত। রক্তের স্রোত বইছে তার শরীর থেকে। কোনরকমে জানটা আছে। এমতাবস্থাতেই সে অভিককে দেখে অনুনয় করে বলতে থাকে,”আমাকে ক্ষমা করে দেন। আমি অনেক ভুল করেছি। আমি মরতে চাই না। আমাকে পুলিশের হাতে তুলে দিন,,দয়া করে আমায় মারবেন না।”

অভিক হিংস্রতার সাথে বলে,”তুই যা করেছিস তারপর আর তোর বেঁচে থাকার কোন অধিকার নেই। তাছাড়া এই দেশের আইনের প্রতি আমার কোন বিশ্বাস নেই,,তুই যা করেছিস তার উপযুক্ত শাস্তি তো মরার পর জাহান্নামে এমনিই পাবি তবে তোর আরো কিছু শাস্তি প্রাপ্য!”

এই বলেই অভিক একটা চাকু হাতে তুলে দেয়৷ সেই চাকু দিয়ে একে একে মন্টুর হাত ও পায়ের সব কয়টা আঙুল কেটে দেয়। মন্টু যন্ত্রণায় ছটফট করে কাঁদতে থাকে। অভিক শুধু এতেই ক্ষান্ত হয় না। সবশেষে মন্টুর হাত, পা মাথা সব একটা বড় অস্ত্র দিয়ে কে”টে আলাদা করে দেয়। তার শরীরের ৫০-৬০ টা টুকরো করে। অতঃপর আরাফাতকে বলে,”এর লাশটা পাশের খাদে ফেলে আয়। ওখানকার কুমিরদের পেটে চালান হোক শয়তানটা। এভাবেই এর অস্তিত্ব পৃথিবী থেকে চিরতরে মুছে যাবে। আর এই কাজেরও কোন প্রমাণ থাকবে না।”

আরাফাত অভিকের কথামতো তাই করে। আর অভিক বলে,”তোমাকে দেয়া কথা আমি রেখেছি নীতি। তোমার মা-বাবার খু*নিদের সবথেকে জঘন্য শাস্তি দিয়েছি।”

To be continue…….