#আমায়_রেখো_প্রিয়_শহরে
#লেখনীতে_নূরজাহান_আক্তার_আলো
#এগারোতম_পর্ব
এই প্রথম বাবাকে এভাবে কাঁদতে দেখে রিদওয়ানও থমকে গেছে। বাকরুদ্ধভাবে সে বাবার দিকেই তাকিয়ে আছে। কে বলে পুরুষ মানুষ ভালোবাসতে পারে না? আগলে রাখতে জানে? পুরুষ ভালোবাসতেও পারে।ভালোবেসে আগতে রাখতেও জানে। কারণ তারা বুক পাঁজরে এক আকাশ সমান পরিণাম ভালোবাসা পুষে রাখে। তাও আবার তার শখের নারীটির জন্য। তবে তারা যেটা পারে না তা হলে, ভালোবাসার প্রকাশ ঘটাতে। এই অনিন্দ্য ধরাধামে স্বল্প সংখ্যক পুরুষ আছে যারা অকপটে ভালোবাসার প্রকাশ করতে পারে। বাকিরা না পারার দলে। আর এই না পারাটাই তাদের ভোগায়। এর জলজ্যান্ত প্রমাণ কলেজের প্রিন্সিপাল আতিকুর রহমান।
রিদওয়ান আর দাঁড়াল না। কুহুর হাতটা ধরে নিঃশব্দে জায়গা থেকে সরে এলো সে। কিছু কিছু মুহূর্ত একা থাকলে ভাবনাগুলো নিগূঢ়ভাবে ভাবা যায়। সমস্যার সমাধান খুঁজে পাওয়া যায়। উনি নাহয় নিজের মতো করে কিছুক্ষণ থাকুক। সময় নিয়ে ভাবুক। অন্তত এইটুকু উপলব্ধি করুক, চেনা মানুষের অচেনা রুপ সহ্য করা বড়ই কষ্টদায়ক।
তারা বাসা থেকে বেরিয়ে হাঁটতে হাঁটতে রাস্তায় এলো। কুহু নিশ্চুপ, নির্বিকারভাবে একটু দুরত্ব রেখে হাঁটছে। তার হাত থেকে হাতটাও ছাড়িয়ে নিয়েছে। এমনটাও না যে অন্যকিছু ভেবে হাতটা ধরেছিল সে। বলা যায় বেখেয়ালে ধরেছিল। রিদওয়ান আড়চোখে একবার দেখে নিলো তাকে। মুখটা দেখলে মনেই হয় না এত দুষ্টু বুদ্ধির অধিকারী সে। রিকশার দেখা নেই। রোদ চড়ে গেছে। ঘাম ঝরছে। কুহুর গাল দুটো রোদে লাল হয়ে গেছে। যেন পাকা টমেটো। নাকে জমেছে বিন্দু বিন্দু ঘাম। রোদে
আর না হেঁটে সে কুহুকে নিয়ে একটা ছাওনিতে এসে দাঁড়াল। পাশেই দোকান। সে দোকানে গিয়ে দুটো কোণ আইসক্রিম, একটা ঠান্ডা পানীয় এনে কুহুকে দিলো।
কুহু ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে সেগুলো নিয়ে বলল,
-‘ধরতে দিলেন নাকি খেতে দিলেন?’
রিদওয়ান ডানে বামে তাকিয়ে রিকশা খুঁজছিল। কাজের সময় একটাও রিকশা পাওয়া যায় না। অসময়ে রিকশার ভিড়ে হাঁটা যায় না। কুহুর কথা কানে পৌঁছাতে সে ছোট্ট করে জবাব দিলো, ‘খাও।’
-‘ধন্যবাদ। তবে কোন চরিত্রে থেকে দিলেন জানতে পারি?’
-‘যা মন চায় ধরে নাও।’
-‘এখন যেহেতু আমরা কলেজে নেই তাই ভাইয়ার বন্ধু হিসেবে ধরে নিলাম। তবে আমার একটা অবজেকশন আছে।’
-‘ বলুন শুনি, কি সেই অবজেকশন?’
-‘আপনি বলেছিলেন কলেজের বাইরে আপনাকে ‘কেউ না’ ভাবতে। পথে ঘাটে একসঙ্গে যখন বেরই হয়েছি বার বার ‘কেউ না! কেউ না’ করে তো ডাকা যায় না, তাই না? তাহলে কি বলে ডাকব?’
-‘আমি গরু না৷ আমি মানুষ। আর প্রতিটা মানুষের একটা করে নাম থাকে। আমারও আছে।’
-‘কি আশ্চর্য! রেগে যাচ্ছেন কেন? আমি বলতে চাচ্ছি যে,..।’
-‘আইসক্রিম গলে যাচ্ছে বকবক না করে খাও।’
-‘তাতো খাবোই। কিন্তু এটারও তো একটা সমাধান করা উচিত। বাসাতে স্যার! স্যার! করতেও ভালো লাগে না। মনে হয়, রাতদিন কলেজেই থাকছি। আপনার যে নাম আছে সেটাও জানি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, আপনি আমার কলেজের স্যার।
একে স্যার হোন তারপর উপরে আবার ভাইয়ের বন্ধু। কোনো সম্পর্কের ধার ঘেষে নাম ধরে ডাকা যায় না৷ তাই যতটুকু সময় বাইরে আছি ‘রিদ ভাইয়া ‘বলে ডাকি?
-‘না!’
-‘কেন?’
-‘তবে কি বলে ডাকব?’
-‘জানি না।’
-‘এক কাজ করি মামা ডাকি?’
-‘মামা কেন ডাকবে? একেবারে ‘বাবা’ ডেকে আমার জীবন ধন্য করে দাও। বেয়াবদ কোথাকার!’
এ কথা বলে রিদওয়ান হনহন করে হাঁটা ধরল। রাগে গা পিত্তি জ্বলে যাচ্ছে তার।
বেয়াদব মেয়ে বলে কি না মামা ডাকবে! এটা কোনো কথা। তাকে রাগতে দেখে কুহু দু’ঠোঁট টিপে হাসল। এই মানুষটাকে রাগাতে আজকাল ভীষণ ভালো লাগে।
নাকে যখন গনগন করে মনে হয় গালদুটো টেনে দেই। কুহু মনে মনে দম ফাটানো হাসি হেসে রিদওয়ানের পিছু পিছু গেল। পাশাপাশি দাঁড়াল। রিদওয়ান আরেকটু সামনে এগিয়ে ফোন করল হসপিটালে থাকা ইসমত আরাকে। ইঙ্গিতে ওখানকার খবর জানতে চাইল। ইসমত আরা জানালেন রুপককে কেবল কেবিনে দিয়েছে। কোনো সমস্যা হয় নি সব ঠিক আছে। তাছাড়া এটা মেজর অপারেশন নয় চাইলে আজকেই নাকি বাসায় যেতে পারবে। রুপকও হসপিটালে থাকে চাচ্ছেনা। উনারা
সন্ধ্যা নাগাদ দেখে তারপর বাসায় ফিরে আসবে। একথা শুনে রিদওয়ান সেখানে যেতে চাইলে ইসমত আরা বারণ করলেন। বললেন কুহুকে ফোনটা দিতে। রিদের থেকে একটুদূরে কুহু দাঁড়িয়ে আইসক্রিম খাচ্ছে। সে এগিয়ে ফোন বাড়িয়ে দিয়ে কথা বলতে ইশারা করল। কুহু ফোন কানে চেপে হ্যালো বলতেই মায়ের কন্ঠ শুনে
পেল। তখন ইসমত আরা বেগম বললেন,
-‘আম্মা শোনো! তোমার রেনুকা আন্টির শরীর খারাপ তাই দেখতে এসেছি।
তুমি রিদকে নিয়ে বাসায় যাও। আজকের রান্না তুমি কোরো। আমার হাঁটুর ব্যথা বেড়েছে। একদমই হাঁটতে পারছি না৷ তাই রুপককে ধরে বেঁধে সঙ্গে এনেছি। সেই আমাকে ধরে ধরে এখানে এনেছে। আমরা সন্ধ্যা নাগাদ ফিরে যাবো। তুমি ততক্ষণ ভদ্র মেয়ে হয়ে থাকবে। রিদওয়ানকে একদম জ্বালাবে না।’
-‘আচ্ছা। আসার সময় কিছুমিছু আনবে আমার জন্য।’
-‘কি কিছুমিছু?’
-‘ঝাল ঝাল, মিষ্টি মিষ্টি, টক টক এমন কিছু।’
-‘ঠিক আছে নিয়ে আসব। সাবধানে থেকো।’
-‘হুম।’
তারপর ইসমত আরা বেগম কল কেটে দিলেন। কুহু রিদওয়ান ফোন ব্যাক দিয়ে সবজি বাজারের দিকে হাঁটা ধরল। তাকে বিপরীত পথে যেতে দেখে রিদওয়ানও তার পেছনে হাঁটতে লাগল। অতঃপর কুহু সবজি বাজারে ঢুকে আগে বাজারের একটা বড়সড় ব্যাগ কিনে ঘুরে ঘুরে সবজি কিনতে লাগল। রিদওয়ান সঙ্গে সঙ্গে ঘুরছে। দাম দিচ্ছে। কুহুর দাম কষাকষি দেখে সে শ্বাসকষ্টের পেশেন্টের মতো দম আঁটকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখছে। দোকানী যেই দাম বলছে কুহুর সেই জিনিসের
আরো কম বলছে। দোকানীও ছাড়বে না কুহুও নিবে না। পরে দুজনেই আর একটু কম বেশি করে তারপর জিনিস নিচ্ছে। কখনো বা তার মনে হচ্ছে এমন ভুলভাল দাম বলায় দোকানীরা না তাকে মারতে আসে। কিন্তু না মারা তো দূর এরা দিয়েও দিচ্ছে। বাজার করতে করতে কুহু একটা কচি লাউ দেখে দোকানদারকে বলল,
-‘মামা আপনার লাউ কত?’
-‘এডি আমার লাউ না গাছের লাউ মামা। ৮০ ট্যাহা দেন।’
-‘এত দাম! ৪০ টাকা দিবো দিলে দেন।’
-‘জিনিসপাতির যা দাম। ৪০ ট্যাহায় লাউ হয়? আফনে বাজার ঘুইরাও এমন কচি পাইবেন না। আচ্ছা ৭০ ট্যাহা দেন।’
-‘৪০ টাকার এক টাকাও বেশি না।’
-‘কি ভাইজান ভাবিকে কিছু কন না ক্যা? এমন করলে হইব? আচ্ছা ভাবি ৬০ ট্যাহা দেন। আর কমায়েন না। যান আফনে লিগা ডিসকাউন্ট দিলাম।’
-‘৪০ মানে ৪০ই।’
-‘আচ্ছা দেন।’
কুহু লাউ নিয়ে টাকা দিয়ে চলে যাওয়ার জন্য পা বাড়িয়ে আবার ঘুরে তাকাল। তারপর দোকানদারের ভুল ভাঙাতে একগাল হেসে বলল,
-‘মামা, এটা আপনার ভাইজান না। মানে আমার হাজবেন্ড না। আমার বর এমন গোমরামুখো না। আরো লম্বা। আরো সুন্দর দেখতে। চমৎকার হাসি তার। গায়ের রংটাও আরো উজ্জ্বল। আর ইনি আমার স্যার। স্যার নতুন বিয়ে করেছে তো তাই বাজার করা শিখাচ্ছে। দায়িত্ববান ছাত্রীরা স্যারকে নিয়েও বাজারে আসে। এরপর থেকে পাশে যেই থাকুক গিট্টু লাগালাগি সম্পর্ক ধরে ভাই কিংবা ভাবি ডাকবেন না, কেমন? এতে গণপিটুনি খাওয়ার সম্ভবণা ১০০%। আজ আসি মামা, ভালো থাকবেন।’
হতভম্ব দোকানীকে রেখে কুহু মিষ্টি করে হেসে সামনে হাঁটা ধরল। রিদওয়ান ভ্রুঁ কুঁচকে তাকিয়ে আছে। কিছু বলার ভাষা খুঁজে পেল না সে। অগত্যা কহুর পিছনে ঘুরতে লাগল। তারপর তারা বাসায় যাওয়ার জন্য রিকশায় উঠে বসল।পাশাপাশি
বসে আছে দু’জন। কারো মুখে কথা নেই। হঠাৎ কুহু পাশ ফিরে তাকিয়ে বলল,
-‘স্যার, আম্মু তো সন্ধ্যার আগে ফিরবে না। আমাদেরকেই রান্না করতে হবে। আমি আবার ভালোই রান্না পারি। কিন্তু সেটা কেউ খেতে পারে না। এখন না খেতে না পারাটা কি আমার দোষ? অবশ্যই না। তা আপনি কি রান্না টান্না কিছু পারেন?
-‘হুম।’
-‘তাহলে আজকের রান্নাটা নাহয় আপনিই করুন। আপনি শেফ আর আমি হবো আপনার সহকারী। ওকে?’
-‘ হুম।’
রিদওয়ানের সম্মতি পেয়ে কুহু মিষ্টি করে হাসল। অবশেষে রান্না দায়িত্বটা স্যারের ঘাড়ে চাপিয়ে দিয়ে শান্তি লাগছে। তার আবার রান্না বান্না ভালো লাগে না। খেতে ভালো লাগে। রিদওয়ান বাড়তি কোনো কথা বলল না। তবে আড়চোখে তাকিয়ে কুহুকে দেখে নিলো। প্রিন্সিপালের বাসা থেকে বের হতেই এই মেয়ে তার উপরেই
চোট পাট দেখিয়েছে। কথা শুনিয়েছে। কত বড় স্পৃহা! আবার তার দিকে আঙুল তুলে স্পষ্টভাবে বুঝিয়েছে, সে একজন কলেজের টিচার। শিক্ষা দেয়। তার মতো স্টুডেন্টরা তার কাছে শিক্ষা নেয়। অসংখ্য স্টুডেন্টের ভবিষ্যত গড়ায় সে। অথচ যে শিক্ষা দেয় সে কীভাবে পারে পারে তার বাবার সঙ্গে এমন রুড বিহেভ করতে? কিভাবে পারে, বাবা সামনে বসে থাকাকালীন চেয়ারে লাথি মেরে চলে আসতে?
কিভারে পারে বাবার সঙ্গে তর্ক করতে। এটা কি বেয়াদবী নয়? বাবা ভুল করেছে বলে এত কথা শুনাল। তাহলে সেও তো কম কাহিনি করল না, তার বেলা? এখন তাকে কে শাস্তি দিবে? অন্য কেউ অপরাধ করলে, মেরে হাতের অবস্থা দফারফা করে দেয়। রাগলে বাবাকেও তো ছাড়ে না।৷ অথচ সে অপরাধ করলে তার শাস্তি কে দিবে? নাকি সে মহারাজা তার জন্য শাস্তি বরাদ্দ নেই। রিদওয়ান যখন হনহন করে বেরিয়ে যাচ্ছিল জবাব না দিয়ে। কুহুও তখন রেগে রিদওয়ানের বাহু খামচে ধরে দাঁড়ায় করায়। পুনরায় উক্ত প্রশ্নগুলো করে। জবাব চায়। রিদওয়ান টুপ করে ছিল। তখন কুহুও গোঁ ধরে দাঁড়িয়ে থাকে জবাব না দিলে এক ধাপও নড়বে না। অগত্যা রিদওয়ান তাকে পরিকল্পনার কথা বলে। পুরো কথা শুনে কুহর মুখে হাসি ফোটে। রাগ গলে জল হয়ে যায়। শান্ত হয়ে ব্যাপারটা বোঝারও চেষ্টা করে। এবং ঘন্টাখানিক বাসার আশেপাশে ঘুরে চুপিচুপি আতিকুর রহমানকে দেখতে যায়।
তারপর দেখে তাদের কাঙ্ক্ষিত সেই দৃশ্যখানা। রিদওয়ান ভিডিও কলে তার মা
নিলুফা ইয়াসমিনকেও দেখায়। পাশ থেকে দেখে একমাত্র ছোটো বোন রিমিও।
অচিন পুরীতে থেকে তার মা ঠোঁটে হাসি চোখে জল নিয়ে দৃশ্যখানা দেখে। একটা সময় উনিও নিঃশব্দে কেঁদে দেয়। স্বামীর চোখে পানি দেখে নিমিষেই সব ভুলেও যান। অভিমানের পাহাড় চূর্ন বিচূর্ন করে ফেলে। সঙ্গে জীবনের সবচেয়ে কষ্টের
সময়টাকে তালাবদ্ধ করে ফেলে। দগদগে ব্যথার অসহ্য কষ্টটাকে হাসিমুখে মেনে নেন। তিক্ত স্মৃতি মাটিচাপা দেন। ভুলে যাওয়ার প্রতিজ্ঞা করেন,ভালোবেসে বিয়ে করার অপরাধে সারাজীবনই শাশুড়ীর চোখের বিষ ছিলেন। পদে পদে উনাকে হেনোস্তা হতে হয়েছে। স্বামী চাকরিজীবী হয়েও খাওয়া পরার কষ্টও সহ্য করতে হয়েছে। সব মেনেও নিয়েছিলেন। দিন যেতে লাগল। বছর পেরুতে লাগল। হঠা’ই উনি খেয়াল করলেন,যার হাত ধরে বাবার রাজ্য ছেড়ে শশুড়বাড়ি পা রেখেছিল সে মানুষটা বদলে যেতে লাগল। রিদওয়ানের আগে উনার ফুটফুটে একটা মেয়ে হয়েছিল। কিন্তু বাচ্চাটা তিনদিনের দিন মারা যায়। একে তো মেয়ে তার উপরে বাচ্চাটা মারা যাওয়াতে উনাকে অনেক কথায় শুনতে হয়। শাশুড়ী এবং দাদী শাশুড়ীর কথায় কথা অপয়া বলতে শুরু করে। এরপরের বছর রিদওয়ানের জন্ম হয়। রিদওয়ানের জন্য উনার কপালে সুখ ফিরে আসে। ভালোই থাকতে শুরু করে স্বামী সন্তান নিয়ে। তারপর রিমির জন্ম হয়। সংসারে সুখ শান্তি ফুলে ফেঁপে ওঠে। দুই বাচ্চাকে নিয়ে উনার ব্যস্ত সময় কাটে। হঠাৎ একদিন শাশুড়ি গোঁ ধরে উনার বোনের বিধবা মেয়েকে আতিকুর রহমান বিয়ে না করলে উনি গলায় ফাঁস দিবে। নিলুফা নাকি আতিকুলের যত্ন করে না। সারাক্ষণ বাচ্চা নিয়েই পড়ে থাকে।
আতিকুর রহমান সব দিক থেকে সামর্থ্যবান। দুটো বউ পালার ক্ষমতা তার আছে।
এমন যুক্তি দিয়ে নিলুফারকে মারাত্মক মানসিক চাপ দিতে থাকে তার শাশুড়ি।
একপর্যায়ে নিলুফা অধৈর্য্য হয়ে আতিকুরকে জানান, উনি দ্বিতীয় বিয়ের করার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আগে বাচ্চাদের বিষ খাইয়ে তারপর নিজে খাবেন। পৃথিবী ঢসে যাক। তবুও তিনি উনার দ্বিতীয় বিয়ের পারমিশন কখনোই দিবেন না। আর যদি উনাকে অমান্য করে করেও তাহলে হাশরের ময়দানেও তাকে এর জবাব দিতে। সঙ্গে বউ বাচ্চাদের মরার জন্য দায়িও থাকে।’
একদিকে মা অন্যদিকে বউয়ের রোজকার অশান্তিতে আতিকুর রহমানও ধৈর্য্য হারিয়ে ফেলেছিলেন। একদিন বউ শাশুড়ীর তুমুল ঝগড়া লেগে যায়। কেউ থামে না তখন আতিকুর রহমান রেগে নিলুফার মেরে বাসা থেকে বের করে দেয়। আর নিলুফা একরাশ ঘৃণা নিয়ে বাচ্চাদের নিয়ে দেশের বাইরে চলে যান। উনি শিক্ষিত মেয়ে। বাবার সহায়তায় চাকরি পেয়ে দেশের বাইরে থাকতে শুরু করে। বাচ্চাদের একা হাতে মানুষও করেন। আর আতিকুর রহমানের সঙ্গে সমস্ত যোগাযোগ বন্ধ করে দেন। এভাবেই দিন কাটতে থাকে। বছর ঘুরতেই মারা যান নিলুফার শশুর। এর তিনমাসের মাথায় মারা যান তার দাদী শাশুড়ী। বাসা শূর্ন্য হতে থাকে। বাসার পরিবেশেও গুমোট ধরে থাকে। যেন সুনশান করবস্থান। এরপর আতিকুরের মাও শ্বাসকষ্টে ধুঁকে ধুঁকে মারা যান। বুড়ি মারা আগ পর্যন্ত ছেলেকে বিয়ে দেওয়ার খুব চেষ্টা করে, কিন্তু পারে না। মায়ের মৃত্যুর পর আতিকুর রহমান একা হয়ে পড়ে। কতবার নিলুফার সঙ্গে যোগাযোগ করারও চেষ্টা করেছে কিন্তু পারে নি। নিলুফা তাকে সুযোগই দেয় নি। রুপকের মাধ্যমেই রিদওয়ান তার বাবার খোঁজ নিতো।
এবং জানতে পারে বাবার দ্বিতীয় বিয়ে করেন নি এবং বাসায় একা একা থাকে।
অথচ নিলুফা জানতো আতিকুর বিয়ে করে বউ বাচ্চা নিয়ে সংসার করছে। পরে বাবা মায়ের দুরত্ব কমাতে রিদওয়ানই এগিয়ে আসে। পরিকল্পনা মাফিক পরীক্ষা দেখে কার টান কেমন। পরে দু’জনেই প্রমাণ করে উনারা এখনো দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসে। তারপরের ঘটনা তো জানা….
রিকশা যখন বাসায় সামনে এসে দাঁড়াল তখন রিদওয়ান ভাবনার জগৎ থেকে বেরিয়ে এলো। ভাড়া মিটিয়ে ব্যাগ ট্যাগ নিয়ে বাসায় ঢুকে গেল। কুহুও গেল। কিন্তু তারা ক্ষুণাক্ষুরেও টের পেলো না পাড়ার মোড়ের চায়ের দোকানে বসা ছেলেগুলো আলোচনার কেন্দবিন্দু তারা। তাদের নিয়ে হচ্ছে বড়সড় এক পরিকল্পনা। দু’জনে হতে চলেছে কারো পাঁসা উল্টানো দানের গুঁটি।
To be continue……….!!