এলো প্রেমের মৌসুম পর্ব-১৬+১৭

0
149

#এলো_প্রেমের_মৌসুম
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১৬

বিকেল হয়ে এসেছে, প্রোগ্রামের প্রথম অংশ শেষ হয়েছে। দ্বিতীয় অংশ অর্থাৎ ভার্সিটি থেকে কনসার্টের আয়োজন করা হয়েছে সেটা সন্ধ্যায় শুরু হবেসেটা সন্ধ্যায় শুরু হবে। জয় আজ অফিস থেকে আগে ছুটি নিয়ে বেরিয়েছে, সুহানা কিছুক্ষণ আগে ওর সঙ্গে দেখা করতে চল গেছে। এখন তিশাও চলে যেতে চাইছে, তখন মেঘ বললো…

‘ এখনি চলে যাবি? কনসার্ট আছে তো সন্ধ্যায় ‘

‘ না রে, সন্ধ্যায় বাড়ির বাইরে থাকলে আব্বু হাজারবার ফোন করবে। আমি বাসায় চলে যাই ‘

‘ বেশ, তোর সমস্যা হলে আর জোর করবো না ‘

‘ হুমম! আচ্ছা আরিশ, মেঘনার হাসবেন্ড হওয়ার সুবাদে কি এখন তোমাকে ভাইয়া বলে ডাকতে হবে?’

‘ কি শুরু করলি তুই তিশা? কোনো ভাইয়া টাইয়া ডাকতে হবে না। যেভাবে নাম ধরে ডাকিস সেভাবেই ডাকবি’

‘ তোমার এত সমস্যা কেনো? আমি ভাইয়া ডাক শুনতে চাই। তিশা, তুমি মাঝে মাঝে ভাইয়া ডেকো আমায় ‘

ভ্রু কুঁচকে তাকালো মেঘ, এই প্রথম কোনো ছেলেকে ভাইয়া ডাক শোনার জন্যে এতো উতলা হতে দেখছে। তিশাও যেনো সুযোগ পেয়ে বসলো…

‘ ঠিক আছে ডাকবো, তবে ভাইয়া ডাকলে শ্যালিকা হিসেবে কিন্তু আমাকে ট্রিট দিতে হবে। ক্লাসমেট বলে পার পাবেনা আগেই বলে দিলাম ‘

মেঘ কুনুই দিয়ে আরিশের পেটে গুঁতো দিয়ে বললো..

‘কি শুরু করলে তুমি?’

‘এটা আমাদের দুলাভাই – শ্যালিকার মধ্যকার ব্যাপার, তুমি নাক কেনো গলাচ্ছো?’

মেঘ বিড়বিড় করে আরিশকে কতগুলো কথা বললো কিন্তু ওর একটা কথাও যেনো পাত্তা দিলো না ছেলেটা, তিশা এদিক ওদিক তাকিয়ে অয়নকে না দেখে জিজ্ঞাসা করলো…

‘ আচ্ছা, অয়ন কোথায়? ওর সঙ্গে একটু দরকার ছিলো’

‘ অয়ন মেইন গেটের বাইরেই আছে হয়তো, ফোনে টাকা ফ্লেক্সিলোড করতে গেছে ‘

‘ যাক! তাহলে আমারই সুবিধা হলো। আচ্ছা আমি আসছি, তোরা ইনজয় কর। টাটা!’

দৌড়ে চলে গেলো তিশা, হুট করে মেয়েটা অয়নের কথা জিজ্ঞাসা করছে দেখে মেঘের কেমন সন্দেহ হলো কারণ এর আগে কখনো তিশাকে অয়ন সম্পর্কিত কোনো কথা বলতে শোনেনি। তিশা ছুটে এসে দেখলো অয়ন মেইন গেটের সামনে বাইকে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে ফোনে কিছু করছে। তিশা এসে সামনে দাঁড়াতেই অয়ন প্রশ্ন করলো…

‘ কি হয়েছে?’

‘ বাইকে ওঠো ‘

‘ হোয়াট?’

‘ বললাম তো, বাইকে ওঠো। জলদি ‘

অয়ন কিছু না বুঝেই বাইকে বসলো, সঙ্গে সঙ্গে তিশাও ওর পেছনে উঠে বসলো। অয়ন অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো…

‘ তুমি আমার বাইকে বসছো কেনো?’

‘ লিফট নিচ্ছি, আজকে বাসে যাওয়ার মতো শক্তি নেই আমার আর রিকশায়ও দেরি হবে। তুমি তোমার বাইকে করে দ্রুত আমাকে ড্রপ করে দাও ‘

‘ মানেটা কি! বলা নেই কওয়া নেই, হুট করে আমার বাইকে বসে আমাকেই আদেশ করছো?’

‘ ফ্রেন্ড হিসেবে এইটুকু সাহায্য করতে পারবে না?’

ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো অয়ন…

‘ আমরা বন্ধু ছিলাম কবে?’

‘ ছিলাম না, তবে তুমি যদি আমায় সাহায্য করো তবে আজ থেকে আমরা বন্ধু হতেই পারি ‘

‘ রিয়েলি?’

হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়লো তিশা, ইতিমধ্যেই অয়ন ওকে একটু একটু পছন্দ করতে শুরু করেছে তাই বাড়ি ফেরার বাহানায় একসঙ্গে কিছুটা সময় কাটানোর সুযোগ ও তিশার দেওয়া প্রস্তাব কোনোটাই প্রত্যাখ্যান করার ইচ্ছে হলো না ওর। আর কথা না বাড়িয়ে বাইক স্টার্ট দিলো, ওদিকে মেঘ আর আরিশ ক্যাম্পাসে হাঁটছে..

‘ তিশার আচরণ আজ একটু অদ্ভুত লাগলো না তোমার? নিজেই অয়নের কথা জিজ্ঞাসা করলো আবার ওভাবে ছুটে চলে গেলো ‘

‘ এতো অবাক হওয়ার কি আছে? মে বি ওরও অয়নকে ভালো লাগছে। ওদের মধ্যে কিছু একটা হলে ভালোই হবে, দুজনকে বেশ মানাবে ‘

কিছুটা অবাক হলো মেঘ…

‘ কিহ! অয়ন তিশাকে পছন্দ করে?’

‘ কয়েকদিন ধরে দেখছি তোমার বান্ধবীর সঙ্গে কথা বলছে, আজ বললো ওকে ভালোই লাগে। আই থিঙ্ক হি লাইকস হার ‘

‘ ওহ!’

হুট করেই মেঘের আনিশার কথা মনে পড়লো, মেয়েটা অয়নকে পছন্দ করে। যদিও মেঘ জানে সেটা এক তরফা। মেঘ অন্যমনস্ক হয়ে বলে বসলো…

‘ অয়ন আর তিশা যদি একে অপরকে পছন্দ করতে শুরু করে তাহলে একজনের মন ভাঙবে মনে হচ্ছে ‘

‘ কার কথা বলছো?’

‘ হ্যা? না..কিছুনা! আচ্ছা আমরা কি করবো এখন? ভার্সিটি তো এখন প্রায় ফাঁকা। সবাই হয়তো বাইরে গেছে, কনসার্টের সময় আসবে। আমি কি বাসায় চলে যাবো? আমার না কনসার্ট দেখার তেমন ইচ্ছে নেই। তুমি তো থাকবে তাইনা?’

‘ হুমম, তবে তোমার যদি ভালো না লাগে আমি জোর করবো না থাকতে ‘

‘ তাহলে আমি বাড়ি চলে যাই?’

‘ না, তুমি আমার সঙ্গে চলো ‘

‘ কোথায় যাবো?’

‘ আমার পছন্দের জায়গায় ‘

আরিশ মেঘকে বাইকে বসতে বললো, নিজের মা ও বোন ব্যতীত নিজের বাইকে কাউকে কখনো উঠতে দেয়নি, এমনকি নিজের বান্ধবী সুহানাকেও না। মা ও বোনের পর ওর বাইকে ওঠা তৃতীয় নারীটি হলো মেঘ। এতোদিন বাবার ভয়ে মেঘকে বাইকে করে ভার্সিটি নিয়ে এলেও আজ প্রথমবারের মতো স্বেচ্ছায় ওকে বসতে বললো। মেঘ জানেনা আরিশ কোথায় নিয়ে যাবে, ও জানতেও চায়নি। ওর সঙ্গে অজানা গন্তব্যে পাড়ি জমাতেও আপত্তি নেই মেঘের, মেঘ শুধু আরিশের এক কাঁধে হাত রেখেছে বলে আরিশ বলে উঠলো..

‘ ভালোভাবে ধরে বসো ‘

‘ ধরেছি তো ‘

‘ আমি বললাম ভালোভাবে ধরে বসো ‘

‘ এখন জড়িয়ে ধরবো নাকি?’

‘ আমাকে নিজে থেকে যখন কি’স করতে পেরেছো, সেখানে জড়িয়ে ধরে বসা তো ক্যাজুয়াল একটা ব্যাপার’

কথাটা জোরেই বলেছিলো আরিশ, মেঘ এদিক ওদিক তাকিয়ে বললো…

‘ আরিশ, আস্তে বলো না। কেউ শুনে ফেললে কি ভাববে?’

কে কি শুনলো তাতে একটুও পাত্তা নেই আরিশের, এই মুহূর্তে ও শুধু নিজের ও মেঘের কথাই ভাবছে!
______________________________________

প্রথমবারের মতো মেঘকে নিজেদের ক্লাব হাউজ দেখাতে নিয়ে এলো আরিশ, শহরের মধ্যে এতো শুনশান একটা জায়গা দেখে মেঘ অবাক হলো বটে। মেঘ প্রথমে ভেবেছিলো হয়তো কারো বাড়িতে বেড়াতে নিয়ে এসেছে, কিন্তু বাড়ির ভেতরে ঢুকতেই দেখলো ভেতরে কেউ নেই। আরিশ বলে উঠলো…

‘ ওয়েলকাম টু আওয়ার ক্লাব হাউজ ‘

‘ ক্লাব হাউজ?’

‘ হ্যাঁ, আমরা এই বাড়ির নাম দিয়েছি ক্লাব হাউজ কারণ এটা আমাদের তিন বন্ধুর আড্ডা দেওয়ার জায়গা ‘

আড্ডা দেওয়ার জন্যে আলাদা একটা বাড়ি রাখার ব্যাপারটা ইন্টারেস্টিং লাগলো মেঘের, ভেতরে ঘুরে দেখলো ও। মোটামুটি প্রয়োজনীয় সবকিছুই এখানে আছে, যে কেউ চাইলে আরামসে কয়েকটা দিন এখানে কাটিয়ে দিতে পারবে। আরিশ মেঘকে ঘুরিয়ে দেখাতে শুরু করলো..

‘ জায়গাটা সুন্দর তো ‘

‘ ইয়াহ, ইট ইজ! বছর চারেক আগে আমরা ঠিক করেছিলাম শুধু আমাদের আড্ডা দেওয়ার জন্যে আলাদা একটা প্লেস দরকার। অনেক খোঁজাখুঁজির পর এই জায়গাটা পছন্দ হয়েছিলো। জানো, প্রয়োজনের আমরা এখানে গ্রুপ স্টাডিও করি ‘

‘ জায়গাটা মূলত কে পছন্দ করেছিলো?’

‘ অয়নের ‘

‘ বাহ, ছেলের পছন্দ আছে বলতে হবে। এমন শুনশান পরিবেশে আড্ডা দেওয়ার মজাই আলাদা, বিশেষ করে রাতে। বেছে উপযুক্ত জায়গাই পছন্দ করেছে ‘

দাঁড়িয়ে পড়লো আরিশ! ঘুরে তাকালো মেঘ…

‘ কি হলো?’

‘ তুমি আমার সামনে দাঁড়িয়ে আরেকটা ছেলের প্রশংসা করছো?’

‘ তো? হি ইজ ইওর ফ্রেন্ড ‘

‘ হ্যাঁ ও আমার বন্ধু, কিন্তু ও তো একটা ছেলে। আমি তোমায় আমার সামনে অন্য ছেলের প্রশংসা করতে অ্যালাও করিনা ‘

‘ তুমি কি চাও? আমি শুধু তোমার প্রশংসা করি?’

‘ অফ কোর্স! তাছাড়া আমার পছন্দ সম্পর্কে কি জানো তুমি হুমম? আমার পছন্দ সম্পর্কে যখন জানবে তখন বুঝবে অয়নের থেকেও আমার চয়েজ অনেক বেটার ‘

আরিশের ছেলেমানুষী কথা শুনে হাসি পেলো মেঘের, মুখ চেপে হাসলো মেয়েটা। আরিশ মুখ গোমড়া করে প্রশ্ন করলো…

‘ হাসছো কেনো?’

‘ এমনি, ইচ্ছে হলো। আসলে তোমার নয়া রূপ দেখে আমি কয়েক দফা শক খেয়েছি, জানিনা সামনে আরো কতো শক খাবো ‘

‘ কেনো?’

‘ যে আমাকে একটুও পছন্দ করতে না, সেই তুমিই আমাকে তোমাদের সিক্রেট প্লেসে নিয়ে এসেছো। আমার কেয়ার করছো, আমি আসলে এখনও বিশ্বাস করতে পারছি না। আই থিঙ্ক এটা কোনো ড্রিম তাইনা?’

আরিশ স্থির নয়নে তাকিয়ে দেখছে মেঘকে, মেয়েটা বুঝি এই সম্পর্ক নিয়ে সব আশা ছেড়েই দিয়েছিলো তাই হয়তো আরিশের এই পরিবর্তন এখনও অস্বাভাবিক লাগছে ওর কাছে। আরিশ মুচকি হেসে মেঘের গাল টেনে দিয়ে বললো..

‘ লেটস হ্যাভ সাম আইসক্রিম। খেতে খেতে স্বপ্ন আর বাস্তবতাকে পার্থক্য করার জন্যে অনেক সময় পাবে’

‘ আছে?’

‘ অবশ্যই! আমাদের মধ্যে কেউ না কেউ রোজ এখানে আসে, ফ্রিজে সবই আছে। তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি ‘

এই গরমে আইসক্রিম খেতে কার না ভালো লাগে? মেঘ আর আপত্তি করলো না। একটু পরে আরিশ একটা কাপ আইস ক্রিম এনে মেঘের হাতে দিলো…

‘ তুমি খাবে না?’

‘ আই ডোন্ট লাইক আইসক্রিম ‘

‘ ওহ! সরি ‘

‘ ইটস ওকে, আমি কখনো আমার পছন্দ অপছন্দ সম্পর্কে তোমাকে বলিনি। তুমি জানোও না ‘

আরিশের দিকে এক নজর দেখে আইসক্রিম খাওয়ায় মনোযোগ দিলো মেঘ, কিন্তু ও বেশ উপলব্ধি করতে পারছে যে আরিশ ওর দিকে তাকিয়ে আছে। আরিশের উপস্থিতিতে এখন অস্বস্তি বা জড়তা কাজ না করলেও কেমন একটা লজ্জা কাজ করতে শুরু করেছে মেঘের মধ্যে! মেঘ দ্রুত খাওয়ার দিকে মনোযোগ দিচ্ছিলো হুট করে আরিশ ওর কাছে এসে বসলো, চোখ তুলে তাকাতেই আরিশ মেঘের ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা আইসক্রিম আঙ্গুল দিয়ে মুছে দিলো। আরিশ লক্ষ্য করলো মেঘের ঠোঁটজোড়া হালকা কাঁপছে, মেয়েটা কি এ মুহূর্তে নার্ভাস? আরিশ ইচ্ছে করেই মেঘের ঠোঁটে একবার স্লাইড করলো, তাতে ওর ঠোঁটের কাঁপুনি যেনো আরো বেড়ে গেলো। হঠাৎ আরিশের ঠোঁটের দিকে চোখ পড়লো মেঘের, সঙ্গে সঙ্গে দুপুরের ঘটনাটা চোখের সামনে ভেসে উঠতেই নার্ভাস হয়ে কিছুটা পিছিয়ে বসলো মেঘ। আরিশ সোজাসাপ্টা প্রশ্ন করে বসলো..

‘ শুড আই কিস ইউ অ্যাগেইন?’

চলবে…

#এলো_প্রেমের_মৌসুম
#লেখনীতে – #Kazi_Meherin_Nesa
#পর্ব – ১৭

সুন্দর মুহূর্তগুলো বেশিক্ষণ স্থায়ী হয় না, তাতে কোনো না কোনোভাবে একটা না একটা বাধা চলে আসবেই। এখানেও ঠিক তেমনি কিছু ঘটলো। এরকম একটা গুরুতর মুহূর্তে ফোন বেজে উঠলো আরিশের, অয়ন ফোন করছে করছে কারণ কনসার্টের সময় হয়ে গেছে। এমন একটা মুহূর্তে ফোন আসায় মেজাজ বিগড়ে গেলো আরিশের, এ মুহূর্তে অয়ন বেচারা সামনে থাকলে হয়তো আরিশের কাছে দু ঘা খেতো। মেঘ দ্রুত সোফা থেকে উঠে দাঁড়ালো…

‘ তুমি তো কনসার্টে যাবে তাইনা? যাও! আমি বাসায় চলে যাচ্ছি ‘

‘ ওকে! একা যেতে পারবে?’

‘ পারবো, তুমি কনসার্ট ইনজয় করো ‘

মেঘ দ্রুত চলে এলো ওখান থেকে, আর কিছুক্ষন থাকলে হয়তো আরিশের কথা শোনার পর নিজেকে সামলাতে পারতো না। লজ্জা পেয়েছিলো বটে, তবে আজ প্রথমবারের মতো আরিশের সঙ্গে এতো ভালো সময় কাটানোর পর মেঘের মন প্রফুল্লিত হয়ে গেছে। পরেরদিন…সন্ধ্যার নাস্তা শেষ করেই এসে বিছানায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ে মেঘ। হঠাৎই ওর চোখের সামনে ভেসে উঠলো গতকাল ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো, অন্যান্য দিনের তুলনায় গত দিনটা একদমই অন্যরকম ছিলো। আরিশ ও মেঘনার মধ্যে এখন সবকিছু অনেকটাই স্বাভাবিক চলছে। যদিও ও মুখে কিছু বলেনি তবে ওর আচরণ, কথাবার্তা এসব দেখেই মেঘ বুঝেছে যে আরিশ আর পাঁচটা স্বাভাবিক সম্পর্কের মতো সবটা স্বাভাবিক করতে চাইছে। এরই মধ্যে আরিশ রুমে এসে মেঘের পাশে বিছানায় হেলান দিয়ে বসলো, মেঘকে একা হাসতে দেখে বলে উঠলো…

‘ একা একা কার কথা ভেবে হাসছো?’

‘ হাসির জন্য আবার আলাদা কারণ লাগে নাকি? ইচ্ছে হলো তাই হাসছি, তাছাড়া হাসলে মন শরীর দুটোই ভালো থাকে ‘

‘ আই নো, কিন্তু তুমি আমার সামনে সহজে হাসো না আর একলা ঘরে হেসে নিজের প্রিশিয়াস স্মাইল ওয়েস্ট করছো? আমার সামনে হাসবে, আমি দেখবো ‘

কথায় কথায় আরিশের এই ফ্লার্টগুলো ভালোই লাগে মেঘের, ও হেসে বললো…

‘ সবকিছুতেই ফ্লার্ট শুরু করার একটা বদভ্যাস হয়ে গেছে তোমার আরিশ ‘

‘ আই অ্যাম নট ফ্লার্টিং! ইউর স্মাইল ইজ ভেরি প্রিশিয়াস ‘

চোখ ঘুরিয়ে তাকালো মেঘ, আরিশের বলা প্রতিটা কথাই যেনো ওর মন ছুঁয়ে যাচ্ছে। ভীষন খোশমেজাজে ছিলো মেঘ, কিন্তু মুহূর্তের মধ্যেই আরিশ ওর মুড বিগড়ে দিয়ে বললো…

‘ অনেক রো’মা’ন্স হয়েছে, এবার পড়তে বসবে ওঠো ‘

ভ্রু কুঁচকে নিলো মেঘ…

‘ হ্যাঁ! এখন পড়তে বসবো?’

‘ হ্যাঁ বসবে ‘

‘ আমার সন্ধ্যায় পড়ার অভ্যাস নেই ‘

‘ পড়লেই অভ্যাস হয়ে যাবে ‘

‘ হ্যাঁ কিন্তু আজকে আমার পড়ার একটুও ইচ্ছে নেই, কাল পড়বো ‘

‘ আমি এখন পড়তে বসবো, তুমিও ওঠো। কিছু বুঝতে সমস্যা হলে আমাকে বলবে, আমি হেল্প করবো ‘

উঠে বসলো মেঘ, নিশ্চিত হওয়ার জন্য পুনরায় প্রশ্ন করলো…

‘ সত্যিই তুমি আমাকে পড়ায় হেল্প করবে?’

‘ কেনো? করতে পারিনা?’

‘ না, আমার হঠাৎ মনে পড়লো তুমি বলেছিলে যে আমাকে কোনদিন পড়ায় সাহায্য করবেনা ‘

‘ তখনকার সময় আর এখনকার সময়ে পার্থক্য আছে, তাছাড়া আমি তোমাকে হেল্প না করলে তো তুমি আবার আরেকজনের কাছে হেল্প চাইতে যাবে। এর থেকে ভালো আমিই সাহায্য করি ‘

আরিশের কথার মানে বুঝে হাসলো মেঘ, বিছানা থেকে নেমে বই বের করতে করতে বললো…

‘ বুঝলাম! তুমি জেলাস ‘

‘ আই অ্যাম নট জেলাস ‘

‘ ইয়েস ইউ আর ‘

এই নিয়ে মেঘ আরিশকে টি’জ করতে শুরু করলো, কিছুক্ষন চললো এই খুনসুঁটি। এতক্ষণ মেঘ মজা লুটেছে ঠিকই, কিন্তু পড়তে বসার পর বুঝলো আরিশের কাছে পড়তে বসাটা মোটেও ঠিক হয়নি কারণ পড়ার ক্ষেত্রে আরিশ বেশ কড়া! আনিশাকে পড়ানো শেষে আরিশের সঙ্গে গল্প করতে বসেছিলো অয়ন, আরিশ কৌতুহল বশত তখন প্রশ্ন করে…

‘ সত্যি করে বলতো অয়ন, তিশার সঙ্গে তোর কিছু চলছে তাইনা?’

‘ তেমন কিছুনা ‘

‘ দেখ, আমার থেকে কিছু লুকানোর চেষ্টা করিস না। তিশা তোকে খুঁজছিলো, এরপর দেখলাম তুইও গায়েব হয়ে গেছিস। ওকে নিয়ে কোথাও ঘুরতে গেছিলি নাকি?’

‘ ধুর! কোথায় যাবো! আরে ওই মেয়ে জোর করে আমার বাইকে উঠে পড়েছিলো। বাধ্য হয়ে লিফট দিয়েছি আমি। এছাড়া কিছুই না ‘

‘ বাহ! ভালোই তো এগোচ্ছে সবকিছু। আমার মনে হয় তিশাও তোকে পছন্দ করতে শুরু করেছে, অবশ্য তোর পার্সোনালিটিই এমন যে কোনো মেয়েই পছন্দ করবে ‘

‘ মজা করিস না তো ‘

‘ আই অ্যাম সিরিয়াস ব্রো, এবার একটা প্রেম কর। অনেক বছর তো বিরহে কাটিয়ে দিলি, তাতে লাভ কি হয়েছে? তাছাড়া তোর তো ওকে ভালোই লাগে বললি’

তখনই আনিশার আগরম ঘটলো, বেশ খোশমেজাজে আছে আজ মেয়েটা। অবশ্য অয়ন বাসায় এলেই ওর মন আপনাআপনি ভালো হয়ে যায়…

‘ কী নিয়ে আলাপ হচ্ছে?’

‘ বড়দের আলাপের মাঝে তোর কি দরকার?’

‘ ওরকম মুরুব্বী হওয়ার ভং ধরিস না তো ভাইয়া, তোরা এমনকিছু আলোচনা করছিস না যেটা আমি শুনতে পারবো না তাছাড়া আমি এতোটাও ছোটো নেই এখন ‘

‘ সি ইজ রাইট! আমরা গুরুতর কিছু নিয়ে আলাপ করছিনা, আনিশা তুমি বসতে পারো ‘

‘ থ্যাংক ইউ অয়ন ভাইয়া, দেখেছিস ভাইয়া? তোর বন্ধুকে দেখে কিছু শেখ। সবসময় আমার সঙ্গে কিটকিট করিস ‘

দুই ভাইবোনের এই খুনসুটি দেখে অভ্যস্ত অয়ন! আরিশ যদিও আনিশার সঙ্গে এমন করে তবে ছোটো বোনকে অনেক ভালোও বাসে। একটু পরে মেঘনা তখন নাস্তা নিয়ে এলো, টি টেবিলে ট্রে রেখে বললো…

‘ এই নাও, কফি আর স্ন্যাকস। এগুলো খেতে শুরু করো তোমরা, আমি আরো কিছু নিয়ে আসছি ‘

‘ আর কিছু লাগবেনা মেঘনা, এগুলোই যথেষ্ট। তুমিও বসো আমাদের সঙ্গে ‘

মেঘ আরিশের পাশে বসলো, আনিশা মূলত একটা উদ্দেশ্য নিয়ে এখানে এসেছে। ও ঠিক করেছে আজ কায়দা করে জানবে অয়ন কাউকে পছন্দ করে কিনা। যদি পছন্দের কেউ না থাকে তবে ও নিজে অয়নকে নিজের মনের কথা বলবে। যেই ভাবা সেই কাজ, আনিশা প্রথমে ওর ভাইকে প্রশ্ন করলো…

‘ আচ্ছা ভাইয়া, তুই কাওকে পছন্দ করিস?’

‘ এটা আবার কেমন প্রশ্ন?’

‘ সহজ একটা প্রশ্ন করলাম ‘

‘ একটা বিবাহিত পুরুষকে এটা কেমন প্রশ্ন করছিস তুই? আমার সংসার ভাঙার চেষ্টা করছিস নাকি?’

‘ যাহ বাবা, এতো হাইপার হচ্ছিস কেনো? সোজাসাপ্টা বললেই তো হয় তুই ভাবীকে পছন্দ করিস ‘

আরিশ কিছু না বলে মেঘের দিকে তাকালো, মেঘ খেতে খেতে ওর দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো…

‘ ভাবী, তুমিও তাহলে ভাইয়াকে পছন্দ করো তাইনা?’

মেঘ ইচ্ছে করে আরিশকে টি’জ করার জন্যে বললো…

‘ আই অ্যাম নট শিওর!’

চোখ গরম করে তাকালো আরিশ…

‘ কি শিওর না?’

‘ আনিশা পছন্দের কথা বলেছে, আর আমাদের মধ্যে তো আর শুধু পছন্দের সম্পর্ক নেই তাইনা?’

প্রথমে আরিশ অন্যকিছু ভেবে বসেছিলো, কিন্তু মেঘের কথা শুনে যেনো স্বস্তি পেলো। অয়ন ওদের দুজনকে দেখে অসহায় কণ্ঠে বললো…

‘ আরে নাহ! তোদের এই প্রেম আমি আর দেখতে পারছি না। আমি ভাই সিঙ্গেল একটা মানুষ এখানে বসে আছি। অন্তত আমার ওপর একটু দয়া কর!’

সঙ্গে সঙ্গে আনিশা খুশি হয়ে জিজ্ঞাসা করে বসলো..

‘ কেনো? অয়ন ভাইয়া, আপনার কি পছন্দের কেউ নেই?’

‘ উম্ম, আই গেস আছে!’

অয়নের কথা শোনামাত্রই আনিশার মুখের হাসি উবে গেলো, মেয়েটা অনেক আশা নিয়ে বসেছিলো কিন্তু অয়ন কাউকে পছন্দ করে শুনে ছোটো মেয়েটার মন ভেঙে গেলো। আরিশ বলে উঠলো…

‘ যাক? স্বীকার করলি তাহলে, আমি তো ভেবেছিলাম অস্বীকার করবি’

‘ আমি স্বীকার করলাম বলে তুই খুব খুশি মনে হচ্ছে ‘

‘ অফ কোর্স আই অ্যাম হ্যাপি, আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের সবাই মিঙ্গেল। তুই একা সিঙ্গেল থাকলে আমার খারাপ লাগতো ভাই ‘

অয়নকে এই সম্পর্কটা ধরে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে উৎসাহ দিচ্ছে আরিশ, মেঘ আনিশার দিকে তাকালো। মেয়েটার মুখ একদম ফ্যাকাশে হয়ে গেছে, বেচারীকে দেখে মেঘের অনেক খারাপ লাগলো! কিছু শুরুর আগেই মেয়েটার সব আশা যেনো শেষ হয়ে গেলো
___________________________________

কয়েকদিন পর…টিভি দেখছিলো মেঘ, তখনই তাড়াহুড়ো করে ঘরে এসেই আরিশ বলে উঠলো…

‘মেঘনা, এক কাজ করো তো। উঠে পড়ো, দু – একদিনের জন্যে আমরা বাড়ির বাইরে থাকতে যাচ্ছি, সে হিসেবে তোমার ইচ্ছেমতো ব্যাগ প্যাক করে নাও। আমরা একটু পরেই বেরোবো ‘

‘ হ্যাঁ? এখন কোথায় যাবো?’

‘ সব জানতে পারবে, তুমি আগে দ্রুত প্যাকিং সেরে নাও আমাদের হাতে বেশি সময় নেই ‘

আরিশের ফোনে টুংটাং করে একের পর এক মেসেজ আসছেই, কী হচ্ছে বা হবে মেঘের ধারণা নেই। ওর কথামত মেঘ ছোটো একটা ব্যাগ প্যাক করে নিলো, আরিশ আর মেঘ এসে বাড়ির বাইরে দাঁড়ালো যেনো কেউ ওদের পিক করতে আসবে। মেঘ আবারো প্রশ্ন করলো…

‘ আরিশ, রহস্য তৈরি করছো কেনো এভাবে? বলো না কোথায় যাচ্ছি?’

‘ আমি সঙ্গে আছি, তারপরও এতোবার জিজ্ঞাসা করছো যে? ভয় পাচ্ছো নাকি আমার সঙ্গে যেতে?’

‘ ইয়ার্কি করো না তো! রাতের বেলা এভাবে হুট করে বেরোচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি সেটা জানতে ইচ্ছে হবেনা?’

‘ আমরা অ্যাডভেঞ্চার করতে যাচ্ছি ‘

‘ মানে!’

‘ জয় আর সুহানা পালিয়ে বিয়ে করবে, আর তাতে আমরা সাহায্য করবো। বিয়ের সাক্ষী হিসেবে আমরাই থাকবো ‘

চমকে উঠলো মেঘ!

‘ কি বলছো! পালিয়ে বিয়ে করবে? এটা তো ঠিক না, ফ্যামিলিকে না জানিয়ে এভাবে…’

‘ সকল ধরনের চেষ্টা করা হয়েছে, এখন আর হাতে উপায় না পেয়ে এই পন্থা অবলম্বন করতে হচ্ছে আর এই আইডিয়া আমিই ওকে দিয়েছি ‘

‘ কিন্তু এভাবে মা বাবাকে না জানিয়ে বিয়ে করাটা কি ঠিক হবে ওদের?’

‘ আঙ্কেলকে অনেকভাবে বোঝানো হয়েছে কিন্তু উনি ওদের সম্পর্ক মানতে নারাজ, এভাবে না করলে ওরা হয়তো একে অপরকে পাবে না। আমি চাইনা ওদের এতো বছরের ভালোবাসা এতো সহজে শেষ হয়ে যাক ‘

মেঘ জানে সুহানার সম্পর্কটা অনেকদিনের আর এতদিন একটা মানুষের সঙ্গে সম্পর্কে থেকে, তাকে ভালোবেসে শেষে পরিবারের চাপে অন্য কাউকে বিয়ে করাটা ব্যর্থতা ছাড়া কিছুই না। শুরুতে মেঘ আপত্তি করলেও পরে নিজে ভেবে দেখলো, কাজটা খুব একটা ভুল হচ্ছেনা। একটু পরে একটা মাইক্রো এসে থামলো, ড্রাইভিং সিটে অয়ন! আরিশ ও মেঘ দুজনের উঠে পড়লো, কিন্তু অয়নের পাশের সিটে তিশাকে দেখে থতমত খেয়ে উঠলো মেঘ…

‘ তিশা! তুই এখানে কি করছিস?’

‘ আসলে, শুনলাম সুহানা নাকি পালাবে। তাই অয়ন আমাকে সঙ্গে আসার জন্যে অফার করেছিলো। তুইও যাবি শুনে আমিও চলে এলাম ‘

‘ তোকে আসতে দিলো?’

‘ তোর কথা বলে এসেছি, বলেছি তোর বাড়িতে থাকতে যাচ্ছি। নাহলে আব্বু আসতে দিতো নাকি? অসম্ভব!’

‘যাক ভালোই হয়েছে, আমরা দুজনে মিলে তাহলে সুহানাকে বিয়ের জন্যে তৈরী হতে সাহায্য করতে পারবো’

‘ ঠিক বলেছো মেঘনা। তাছাড়া আমরা এখন চারজন আছি, বিয়ের সাক্ষী নিয়ে তো আর বোধহয় ঝামেলা রইলো না। কি বলিস আরিশ?’

‘ ইয়াহ! আর সমস্যা হলেও পরে দেখা যাবে। এখন চল, ওদের পিক করতে হবে। ওরা একসঙ্গে অপেক্ষা করছে’

গাড়ি স্টার্ট দিলো অয়ন, কিছুক্ষণের মধ্যে হাইওয়েতে পৌঁছে গেলো। সুহানা আর জয় আগেই ওখানে দাঁড়িয়ে ছিলো। ওরা ঠিক করেছে বিয়ের পর কিছুদিন বাইরেই থাকবে কারণ এখানে থাকলে ঝামেলা হতে পারে। বিয়ের পর থাকার জন্যে একটা বাসাও ঠিক করে নিয়েছে। এবার শুধু বিয়েটা হয়ে গেলেই শান্তি!

চলবে…

[ভুলত্রুটি ক্ষমা সুলভ দৃষ্টিতে দেখবেন…!!]