অনুরাগে সখি নিভৃতে যতনে পর্ব-০৪

0
2

#অনুরাগে_সখি_নিভৃতে_যতনে
#মৌপ্রিয়া_ইসলাম_মিহি
#পর্ব_০৪
___________________________
তারিনির বলা কথাগুলো শুনে রুমে উপস্থিত সকলের মাঝে নিরবতা বিরাজ করছে।তবে আহমেদ সাহেব আর অহিদা বেগম বেশ খুশিই হয়েছেন তারিনি বাড়ি থেকে যাবে না শুনে!নিরা বেগম দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললেন,

-“তারিনি যখন চাচ্ছে না তাহলে থাক!আমি চাই না এই সময়ে মেয়েটাকে কোনো রকম কষ্ট দিতে!”

নিরা বেগমের সাথে তাহের সাহেব সম্মতি জানি বললেন,

-“ঠিকই বলেছো।ও যা চায় তাই হোক না হয়।”

তাহের সাহেব আর নিরা বেগম বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।অহিদা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,

-“যাক মেয়েটা তাহলে আমাদের সাথেই থাকছে।”
.
.
.
আশহির বাড়িতে এসে তারিনিকে নিচে না পেয়ে সোজা রুমে গেল।সেখানে গিয়ে দেখলো তারিনি বেলকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।আশহির গিয়ে তাকে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো,

-“তারিনি তুমি ঠিক হয়ে যাবে।আমি আজকে একজন ডক্টরের সাথে কথা বলেছি উনি বলেছেন উনি তোমার চিকিৎসা করবেন।যেখানে ওই দুইজন ডাক্তার কোনো রিস্ক নিতে চাচ্ছিলেন না সেখানে উনি রাজি হয়েছেন!আমি আজকে অনেক খুশি!”

তারিনি ধাক্কা দিয়ে আশহিরকে নিজের থেকে সরিয়ে ফেলল।সে চোখ রাঙিয়ে আশহিরের দিকে তাকিয়ে আছে।আশহির নিজের উপর বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,

-“সরি!সরি তারিনি!আমি আসলে এক্সাইটেড হয়ে এমনভাবে জড়িয়ে ধরেছি।প্লিজ উত্তেজিত হয়ো না!”

তারিনি নিজের রাগ কন্ট্রোল করে বললো,

-“এমনটা যেন আর না হয়।আর আমি তোমাকে কালকেই যা বলার বলে দিয়েছি।আমি কোনো প্রকার চিকিৎসা করাতে চাই না।”

তারিনি কথাগুলো বলে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেল।আশহির পিছন থেকে কয়েকবার ডাকলেও সে কোনো জবাব দেয়নি।আশহির দিশেহারা হয়ে বললো,

-“কি শুরু করেছে তারিনি!আমার ভুলের জন্য নিজেকে কেনো শাস্তি দিবে!না আম্মুর সাথে কথা বলতে হবে।আম্মু পারবে ও-কে রাজি করাতে।”

আশহির রুম থেকে তাড়াহুড়ো করে রুম থেকে বের হতে গেলে মৌরিনের সাথে ধাক্কা খেল।মৌরিন পড়ে যেতে গেলে আশহির তাকে ধরে ফেলল।তাকে দাঁড়া করিয়ে বললো,

-“দেখে চলতে পারেন না আপনি?”

-“দোষটা আপনার মিস্টার আশহির মির্জা।আপনিই দ্রুত গতিতে রুম থেকে বের হয়েছেন।”

-“তা আপনার চোখ কোথায় ছিল?”

-“আপনি হঠাৎ চলে আসায় আমি বুঝতে পারিনি।নিজের দোষ দেখতে শিখুন।”

আশহিরকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে মৌরিন তার রুমের দিকে চলে গেল।আশহির চোয়াল শক্ত করে বললো,

-“আমার কথা শেষ হওয়ার আগেই সবাই চলে যায়।কি যে একটা অবস্থা!”

আশহির নিচে যেতে গেলে দেখলো তারিনি সেখানে দাঁড়িয়ে আছে।আশহির বিড়বিড় করে বললো,

-“হয়ে গেল।নিশ্চয়ই এতোক্ষণ যা ঘটেছে সব দেখেছে!এমনিই রে*গে আছে এখন রা*গ আরো দশ গুণ বেড়ে যাবে।”

আশহির কিছু বলতে যাবে তার আগে তারিনি বললো,

-“আমাকে কোনো ব্যাখ্যা শুনাতে আসবে না আশহির।আমার তোমাদের কথোপকথন জানার কোনো ইচ্ছা নেই।”

কথাগুলো বলে চলে যেতে গিয়ে থামলো তারিনি।আশহিরের সামনে এসে দাঁড়িয়ে বললো,

-“এভাবেই সবসময় মৌরিনের খেয়াল রেখো।নাহলে পড়ে গিয়ে ব্যথা পেতে পারে।”

তারিনি আশহিরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সিঁড়ি দিয়ে নিচে চলে গেল।আশহির মুখ গোমড়া করে বললো,

-“নিজেকে কেমন যেন জড় বস্তু মনে হচ্ছে!সবাই সবার ইচ্ছা মতো মনের ভাব প্রকাশ করে চলে যাচ্ছে তবে আমার মনের ভাব প্রকাশ করার কোনো সুযোগ নেই।”

আশহির তারপরে অহিদা বেগমের রুমে গেল।গিয়ে দেখলো তিনি বিছানায় বসে বই পড়ছেন।আশহির গিয়ে উনার পাশে বসলো।আশহিরকে দেখে অহিদা বেগম বললেন,

-“তুমি এখানে কি করছো?”

-“আম্মু আমি একটা গুড নিউজ নিয়ে এসেছি!”

-“দুদিন আগেই যা ভালো খবর দিলে আর কোনো ভালো খবর শোনার ইচ্ছা নেই আমার!”

আশহির কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“আম্মু প্লিজ ওইসব বাদ দেও এখন।আম্মু তারিনি সুস্থ হয়ে যাবে আমি এক ডাক্তারের সাথে কথা বলেছি।কিন্তু তারিনি চিকিৎসা করতে নারাজ তুমি প্লিজ ও-কে রাজি করাও!”

আশহিরের কথা শুনে অহিদা বেগমের মুখে হাসি ফুটলো।উনি তড়িঘড়ি করে বললেন,

-“কি?এটা সত্যি?তারিনি মা ঠিক হয়ে যাবে?”

-“হ্যাঁ আম্মু।কিন্তু ও চিকিৎসা করাতে চাচ্ছে না তুমি বললে শুনবে।তুমি একটু রাজি করাও!”

-“চিকিৎসা করতে রাজি না হওয়াটাই স্বাভাবিক।তুমি যা করেছো!তবে আমি ও-কে রাজি করাবো।কারণ আমি ও-কে হারাতে চাই না।”

অহিদা বেগম কথাগুলো বলে তারিনির সাথে কথা বলার উদ্দেশ্যে রুম থেকে বের হয়ে গেলেন।আশহিরের মুখে হাসি ফুটলো।

-“আমার কথা না শুনলেও আম্মুর কথা ঠিকই শুনবে।”



অহিদা বেগম নিচে গিয়ে দেখলেন তারিনি আর অথৈ ড্রয়িংরুমে বসে গল্প করছে।অহিদা বেগম গিয়ে তারিনির পাশে বসে বললেন,

-“মা তোর সাথে আমার কিছু কথা আছে!”

তারিনি ভ্রু কুঁচকে বললো,

-“তোমাকে আশহির পাঠিয়েছে তাই না মা?”

অহিদা বেগম কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন,

-“দেখ মা ওর জন্য তুই নিজেকে কেনো শাস্তি দিবি!এতোদিন তো কোনো ডাক্তার রিস্ক নিতে চাচ্ছিলেন না তবে এই ডাক্তার যখন রাজি হয়েছে একবার দেখিয়ে আয়।ভালো কিছু তো হতে পারে।তোকে আমরা হারাতে চাই না মা।আশহিরের কথা না হয় বাদ দে।আমাদের জন্য অন্তত রাজি হয়ে যা!”

তারিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“আচ্ছা ঠিক আছে আমি ডাক্তার দেখাবো।তবে তুমি বা অথৈ আমার সাথে যাবে।আমি আশহিরের সাথে কোথাও যাবো না!”

অহিদা বেগম হাসি দিয়ে বললেন,

-“ওর সাথে যেতে হবে না আমি আর অথৈ তোকে নিয়ে যাবো।”

অথৈ পাশে থেকে বললো,

-“হ্যাঁ ভাবি…ভাইয়ার সাথে যেতে হবে না আমরাই নিয়ে যাবো তোমাকে।”

আশহির নিচে এসে সবার মুখে হাসি দেখে বললো,

-“যাক ম্যাডামকে তাহলে রাজি করাতে পারলে!”

তারিনি চোয়াল শক্ত করে বললো,

-“ডাক্তার দেখাতে আমি তোমার সাথে যাবো না।মা আর অথৈয়ের সাথে যাবো।”

-“আমার সাথে না গেলে কি হয়েছে!তুমি যে যেতে রাজি হয়েছো এটাই বড় কথা।”

তারিনি আর কিছু না বলে চুপ করে রইলো।
.
.
.
রাতের বেলা মৌরিনের ঘুম না আসায় সে বেলকনিতে বসে রাতের আকাশ দেখছে।সে দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,

-“তোমরা কেনো আমাকে রেখে চলে গেলে আম্মু-আব্বু।আমার জীবনটা একদম ছন্নছাড়া হয়ে গেল।যেই কাকা-কাকির হাতে ভরসা করে রেখে গিয়েছিলে তারাও আমাকে ওমন একটা নিকৃষ্ট লোকের সাথে জোর করে বিয়ে দিতে চেয়েছিল শুধুমাত্র টাকার লোভে!মিস্টার আশহির যতই বলুক প্রতিশোধ নিতে বিয়ে করেছেন তবে এটা তো সত্যি না।উনি বিয়েটা ভাঙতে চেয়েছিলেন তখন তো কাকা-কাকিই উনাকে বলেছেন বিয়ে যদি ভাঙতেই চায় তাহলে উনার আমাকে বিয়ে করতে হবে।ওরাই তো জোর করে উনাকে বিয়েটা করতে বাধ্য করেছেন।কত নোংরা কথা বললেন আমাকে আর উনাকে জড়িয়ে!এরা কি আদোও আমার আপনজন?”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে মৌরিন বললো,

-“জানি এই প্রশ্নের জবাব আমি পাবো না।তবে আমার ভাগ্যটা এমন না হলেও পারতো।আমি কখনো চাইনি একটা সংসার আমার জন্য ধ্বংস হোক।আর সেটাই হলো!তবে যাই হোক এই আশহির মির্জাকে আমি শাস্তি দিয়েই ছাড়বো।উনি যেই পাপ করেছেন তার কোনো ক্ষমা হয় না!”



আশহির তার রুমে বসে বই পড়ছে।তারিনি সারা রুম পায়চারি করতে করতে হঠাৎ ওয়াশরুমে দৌড়ে গেল।আশহির কিছুক্ষণ পরে ব*মি করার শব্দ পেল।সে ওয়াশরুমের দরজার সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে বললো,

-“কি হয়েছে তারিনি তোমার?আর ইউ ওকে?”

তারিনি কোনো উত্তর দিল না।কিছুক্ষণ পরে ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে তারিনি বললো,

-“আমি ঠিক আছি আশহির।তোমার আমাকে নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।”

-“কিন্তু আমি যে……”

আশহির এটুকু বলতে তারিনি তাকে থামিয়ে বললো,

-“কিছুই হয়নি।এমনিই একটু বমি বমি ভাব হচ্ছিল।”

তারিনি গিয়ে বিছানায় শুয়ে বললো,

-“আশহির প্লিজ তুমি আমার পাশে ঘুমাবে না।কালকে বলার পরেও তুমি সেই কাজই করেছো!”

আশহির সোফায় শুয়ে বললো,

-“আচ্ছা ঠিক আছে আজকে আর ডিস্টার্ব করছি না।”

তারিনি চোখ বন্ধ করে ফেলল।আশহির কিছুক্ষণ তারিনির দিকে তাকিয়ে থেকে চোখ বন্ধ করলো।

_____________
সকালে ঘুম ভাঙতে তারিনি দেখলো আশহির ফ্লোরে শুয়ে ঘুমিয়ে আছে।তারিনি গিয়ে তাকে ডেকে তুলে বললো,

-“তুমি ফ্লোরে ঘুমিয়ে আছো কেনো?”

-“তো কি করবো?এতো বড় শরীর নিয়ে ওই সোফায় ঘুমানো যায়?আর তুমি বারণ করলে তোমার পাশে না ঘুমাতে তাই এখানে ঘুমিয়েছি।”

তারিনি কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললো,

-“আচ্ছা আমি উঠে পড়েছি তুমি এখন গিয়ে বিছানায় ঘুমাও।”

#চলবে…………..

[ভূল-ভ্রান্তি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।]