ম্যারি মি পর্ব-০২

0
3

#ম্যারি_মি-০২
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

বউ কথা কও এর ডাইনিং এ বসে নাস্তা করছে ধ্রুব। পাশে কাজিন ও বন্ধু সমুদ্র। ধারা দুজনের খাওয়া দেখছেন নিশ্চুপে বসে। ফারিন স্কুল ড্রেস পড়ে বিজ্ঞদের মতো খাচ্ছে। মুখটা কার বয়সের তুলনায় বেশিই গম্ভীর। ধ্রুবর সাইলেন্স মুঠোফোন বার-বার জ্বলে উঠছে৷ ধারা বিরক্তিকর দৃষ্টিতে সেটা দেখছেন। ছন্নছাড়া রাগী এই ছেলেটাকে নিয়ে চিন্তার শেষ নেই তার। ক্যাডেটে পড়েও অন্য ভার্সিটিতে গিয়ে নিজেকে ও সাঙ্গপাঙ্গদের নিয়ে মাতিয়ে বেড়ায়। পড়া শেষের পথে। ক্যাডেট অফিসার হওয়ার বেশি দেরি নেই। যদি চরিত্রের কোনো সার্টিফিকেট কেউ পায় তবে ওর কপালে যে কি লেখা আছে সেটা ধারা নিজেও চিন্তা করতে পারেন না। ধ্রুবর বাবা ফাহিম মাহবুব বর্তমানে রাজশাহীতে ডিউটতে আছেন। তার ইচ্ছে ছেলেকে নিজের মতোই অফিসার বানাবেন। কিন্তু নির্লজ্জ, রাগী, ঘাড়ত্যাড়া ছেলেটা বাবার ইচ্ছে তে ক্যাডেটে পড়লেও নিজের স্বভাব ছাড়েনি। সারাক্ষণই ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে থাকে। দুনিয়া ভেসে গেলেও সে মুড পাল্টাবে কি না বলা মুশকিল।

ধারা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললেন,

‘ বয়স তো কম হলো না, তুমি বাচ্চা নও। এসব লাফাঙ্গামি ছাড়ো ধ্রুব। তুমি কয়েকদিন পর একজন অফিসার হবে। তোমাকে কি এসব মানায়? ‘

ধ্রুব নিশ্চুপে খাচ্ছে। সমুদ্র আড়চোখে তাকিয়ে খাওয়ায় মনোযোগ দিলো। ধারা আবারও হতাশ হলেন। ফারিনের খাওয়া শেষ হতেই দুজনকে বললেন,

‘ তোমরা খেয়ে নিজেদের ভার্সিটিতে যাবে৷ আমি ফারিন কে স্কুলে দিয়ে আসছি। ‘

সমুদ্র মাথা নাড়ালো। ধারা চলে যেতেই ফিসফিস করে বলল,

‘ আজ তোমার আমার ভার্সিটিতে যাওয়ার দরকার নেই। গতকাল যা ঘটিয়েছো। তুমি বরং তোমার ক্যাডেটে যাও গুরু। ‘

ধ্রুব পানি খেয়ে বলল,

‘ ক্যাডেটে অবশ্যই যাবো, আজ জরুরি ক্লাস ও আছে। আচ্ছা তুই যা আমি রেডি হয়ে বের হবো। বিকালে দেখা হবে৷ ‘

সমুদ্র ছুটলো ভার্সিটি। ধ্রুব ক্যাডেট স্টুডেন্টের পোশাকে নিজেকে জড়ালো। বাইক নিয়ে বেরিয়ে গেলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে।

সমুদ্র সবে ভার্সিটিতে ঢুকেছে, তার পথ আটকে দাড়িয়েছে দুজন বলিষ্ঠ দেহী পুরুষ। পেছন থেকে নিনীকা এগিয়ে এলো। ঠোঁট বাকিয়ে বলল,

‘ আপনার আরেকজন কোথায়? ‘

সমুদ্র ঢুক গিলে বলল, নিজের কাজে গেছে। ‘

নিনীকা দুজনকে ইশারা দিতেই তারা সমুদ্রকে তুলে নিয়ে চলে গেলো। ব্যাপার টা এতো দ্রুত ঘটেছে যে সমুদ্র কিছু বোঝার ও সময় পায়নি। নিনীকা দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ আজ বেঁচে গেলেন ধ্রুব মাহবুব, সঙ্গীর অবস্থা দেখে আপনার মনে ভয় ঢুকানো সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। কার সাথে লাগতে এসেছিলেন সেটা হারে হারে টের পাবেন৷ ‘

সমুদ্রকে এক ঘন্টা পর বউ কথা কও এর সামনে রেখে গাড়িটা চলে গেলো। রক্তাক্ত সমুদ্র পকেট থেকে মোবাইল বের করে কাঁপা-কাঁপা হাতে ডায়াল করলো ধ্রুবর নাম্বারে। রিসিভ হতেই বলল,

‘ গুরু তুমি জলদি বাড়িতে আসো, ওরা আমাকে..’

সমুদ্র আর কিছু বলতে পারলো না। ঝাপসা চোখে দেখলো দারোয়ান ও ধারা দৌড়ে আসছেন তার দিকে। তারপর যখন সমুদ্র চোখ মেললো তখন সে হসপিটালে শুয়ে আছে। হাতে পায়ে মুখে ব্যান্ডেজ। কোনো ক্ষতি হওয়ার মতো মারেনি, তবে জখম করেছে অনেক। শরীরের ব্যথায় চোখে জল জমলো। ধ্রুব মুখের উপর ঝুঁকে বলল,

‘ কে করেছে এই অবস্থা তোর? ‘

সমুদ্র কাঁপা কন্ঠে বলল,

‘ ওই মাইয়া..’

‘ কোন মেয়ে? ‘

‘ গুরু যার সাথে গতকাল লেগেছিলে। ‘

ধ্রুব চিৎকার করে উঠলো।

‘ ওই মেয়ে তোকে এভাবে মেরেছে? একটা মেয়ের হাতে মার খেয়েছিস তুই! ‘

সমুদ্র না না করে বলল,

‘ ওই মাইয়া গুন্ডা দিয়ে আমাকে তুলে নিয়ে গেছিলো। ওরাই এ অবস্থা করছে গুরু। ‘

সমুদ্র কেঁদে ফেললো। ধ্রুব হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে। নিনীকা শেখ কে সে ভালো করে চিনে না, কে এই মেয়ে যে গুন্ডা ভাড়া করে তার বন্ধুকে পিটালো! কিসের এতো পাওয়ার তার!

ধ্রুব ফোন হাতে বের হয়ে গেলো।পরিচিত একজরকে বললো নিনীকার ব্যাপারে খুঁজ নিতে৷ আবারও বেডে এসে দেখলো সমুদ্র তার দিকেই তাকিয়ে আছে। ধ্রুব আশ্বাস দিলো,

‘ চিন্তা করিস না, আমি দেখছি। কতবড় সাহস ওই মেয়ের! ‘

ধারা তখনই রুমে ঢুকলেন। খাবার এনেছেন বাসা থেকে। সমুদ্রকে ধরে খাইয়ে দিলেন৷ হাত ধুয়ে দাড়ালেন ধ্রুবর মুখোমুখি৷

‘ আমি যতোটুকু জানি ও যা করে তোমার সাথে থেকেই করে। যদি ওর এই অবস্থার জন্যে কোনোভাবে তুমি দায়ী হও ধ্রুব, তবে মনে রেখো আমি তোমার বাবার কাছে বিচার দিবো৷ দিন দিন খারাপ হচ্ছো তুমি, সাথে এটাকেও বানাচ্ছো। আমার সন্তান হয়ে তুমি এমন সেটা ভাবতেই আমার লজ্জা হয়। নিজেকে ঠিক করতে না পারলে আমার সামনে আসবে না৷ ‘

ধারা চলে গেলেন। ধ্রুবর চোখমুখ শক্ত হয়ে গেছে রাগে। সমুদ্র নিচু কন্ঠে বলল,

‘ ফুপি রেগে আছে সেজন্য এমন বলেছে, তুমি রাগ করো না গুরু। মায়েরা এমন বলেই থাকেন৷ ‘

‘ আমি কি সত্যিই অনেক খারাপ সমুদ্র? ‘

‘ না গুরু তুমি খারাপ হবে কেন? তোমার মধ্যে তো কোনো দোষ নেই। হ্যাঁ মানছি গার্লফ্রেন্ড অনেক কিন্তু সেটা বড়ো কোনো সমস্যা না। আর একটু আধটু মারপিট সকলেই তো করে। ‘

ধ্রুব দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বলল,

‘ তোর ফুপি কি কি বলে গেলেন দেখলি না? আমার জন্য নাকি তার লজ্জা হয়। তাকে বলিস আমি আর বাড়িতে ঢুকবো না৷ তাকে যেনো লজ্জায় মুখ লুকিয়ে রাখতে না হয় সেজন্য বাড়ি ত্যাগ করবো আমি। ‘

সমুদ্র ঠোঁট উল্টে বলল,

‘ তুমি সত্যিই এমন করবে গুরু? ‘

‘ অবশ্যই, আমার আত্নসম্মান নেই নাকি? তোর ফুপি আমাকে এসব বলবেন আর আমি ধেইধেই করে নেচে বেড়াবো সেটা তো হবে না। বাড়িতে আমি সত্যিই যাবো না। হোস্টেলে উঠে যাবো। তার আগে এই নিনীকার একটা ব্যবস্থা করতে হবে। ‘

‘ বাদ দাও গুরু, মেয়েটা নিজের অপমানের বদলা তোমার উপর নিতে চাইছিলো। তোমাকে না পেয়ে আমাকেই তুলে নিয়ে যেতে বলেছে। তুমি বরং মন দিয়ে পড়াশোনা করো। আর তো কয়েকটা মাস তারপরি ট্রেনিংয়ে চলে যাবে। কোনোরকম ঝামেলায় জড়িও না৷ বড়ো আর্মি অফিসার হলে ফুপি তোমাকে ঠিকই মেনে নিবেন। ওগুলো রাগের মাথায় বলেছেন৷ আমার থেকে তুমি ভালো করে জানো তুমি সবার চেয়ে তোমাকে বেশি ভালোবাসেন৷ ‘

‘ থাম তো, ফুপির হয়ে সাফাই গাইবি না। ওই নিনীকা শেখের একটা ব্যবস্থা না করে আমি থামছি না৷ কতবড় সাহস তোকে তুলে নিতে লোক ভাড়া করে। মেয়ে মানুষ হয়ে এতো তেজ কোথায় পায় আমি দেখবো৷ ‘

‘ তুমি কি করতে চাইছো গুরু? ‘

ধ্রুব ঠোঁট বাকিয়ে হেসে বলল,

‘ কি করবো দেখতেই পারবি। আপাতত তুই রিলাক্স কর। সুস্থ হয়ে যা তাড়াতাড়ি তোকে এভাবে দেখতে ভালো লাগে না। ‘

সমুদ্র হাত টেনে ধরলো আস্তে করে।

‘ মেয়ে মানুষ, না লাগাই ভালো হবে। যদি উল্টাপাল্টা কোনো মামলা দিয়ে দেয়? ‘

ধ্রুব হাত ছাড়িয়ে নিলো,

‘ এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? আর যাই হোক মেয়ে মানুষের ইজ্জতে হাত দিবো না ভাই। তবে এই মেয়েটাকে শিক্ষা তো দিতেই হবে। ‘

‘ না বাদ দাও, তুমি কিছু না করলেও মামলা খেলে কিন্তু রেহাই পাবো না৷ মনে রেখো ছেলেরা ইভটিজিং করলে সেটা ইভটিজিং বাট মেয়ে রা করলে সেটা ইভটিজিং না। কারণ এরকম কোনো আইন নেই। তৈরি হয়নি। ‘

ধ্রুব দাঁতে দাঁত চেপে বলল,

‘ চুপ কর হাঁদারাম৷ ‘

(চলবে)