ম্যারি মি পর্ব-০৫

0
4

#ম্যারি_মি- ০৫
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

চারিদিকে তুমুল বর্ষণ। বারান্দায় টপটপ করে বৃষ্টি পড়ার শব্দ ছন্দ তুলে কানে বাজছে। নিনীকার পড়োনের স্কার্ট ভিজে লেপ্টে রয়েছে। সাদা শার্ট ভেজার কারণে ভেতরের কালো ছোট কাপড় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। কোনোদিকে খেয়াল নেই নিনীকার। হুট করে বৃষ্টিকে অনেক আপন মনে হচ্ছে। ভিজতে ইচ্ছে করছে। নিনীকার রুমে মিথিলা এসেছিলেন রাতের খাবারের জন্য টেবিল আসেনি কেন সেটা দেখতে। মেয়েকে রুমে না পেয়ে বারান্দায় উঁকি দিলেন। বৃষ্টিস্নাত রূপসী কন্যাকে দেখে তার চোখ জুড়িয়ে গেলো। মুখ দিয়ে বের হলো ‘মাশাআল্লাহ৷ ‘

নিনীকার কানে শব্দ টা যেতেই সে ঘুরে তাকালো। মিথিলাকে দেখে উচ্ছ্বাস নিয়ে ডাকলো, ‘মা!’

মিথিলা গাল ভরে হাসলেন৷

‘ অসময়ে বৃষ্টিতে ভিজছিস কেন নিনী?’

‘ তুমিই তো বলতে যখন যা মন চায় করে ফেলতে, ছোট্ট জীবনে আফসোস রাখতে নেই। ‘

মিথিলার ভালো লাগলো কথাটি। বৃষ্টির তেজ বেড়ে চলেছে৷ মেয়েকে সাবধান করলেন।

‘ বেশি সময় ভিজবে না, জ্বর চলে আসবে নয়তো। ‘

নিনীকা বাধ্য মেয়ের মত মাথা নাড়ালো। মিথিলা চলে যাওয়ার আগে বলে গেলেন।

‘ ফ্রেশ নিচে এসো কিছুক্ষণের মধ্যে তবে। তোমার বাবা অপেক্ষা করছেন টেবিলে। ‘

নিনীকা আরও দশ মিনিট ভিজলো। ফ্রেশ হয়ে মোটা কাপড়ে নিজেকে জড়ালো৷ আধুনিক যন্ত্র দিয়ে চুল শুকিয়ে নিচে নামলো। রমজান শেখ মোবাইলে কিছু একটা করছিলেন। মেয়েকে দেখে স্নেহময় গলায় বললেন,

‘ আমার মা নাকি বৃষ্টি উপভোগ করতে বিজি ছিলো আজ। কেমন লাগছে এখন?’

‘ বৃষ্টিতে ভিজে মন ভালো হয়ে গেছে বাবা। ‘

‘ মন খারাপ কি নিয়ে?’

‘ জানি না বাবা, আমার হুটহাট মুড সুইং হয়৷ ইচ্ছে করে সবকিছু ছেড়ে কোথাও চলে যাই। ‘

রমজান শেখ গুরুতর ভাবে কিছু ভাবলেন৷

‘ মন ভালো করতে তবে তো কিছু করা উচিত৷ ঘুরতে যাবে? ‘

‘ এই রাতের বেলা? ‘

রমজান শেখ স্ত্রীকে দেখিয়ে বললেন,

‘ তোমার মাকে নিয়ে তো মাঝে মধ্যে গাড়ি নিয়ে রাতে ঘুরাঘুরি করি, আজ না-হয় মা মেয়েকে নিয়ে ঘুরলাম। চলবে? ‘

নিনীকা খুশি হলো, ‘চলবে। ‘

রাতের খাবার খাওয়ার পর শেখ বাড়ির গেইট দিয়ে বের হলো একটি কালো গাড়ি। ড্রাইভিং-এ নিনীকা। সামনে রমজান শেখ বসেছেন। পেছনে বসে মিথিলা মাঝে মধ্যে বাপ মেয়েকে দেখছেন, তো কখনো বৃষ্টি উপভোগ করছেন।

নিনীকা এটা ওটা বলছে। কন্ঠে তার দারুণ উচ্ছসিত ভাব। রমজান শেখ মেয়ের হাসি মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললেন,

‘ নিনীকা, আমার মা তুমি সবসময়ই হাসবে। বাবা তোমার হাসি মুখ দেখতে অনেক ভালোবাসি। ‘

নিনীকা গাড়ি থামালো। আচমকা জড়িয়ে ধরলো বাবাকে।

‘ তুমি আমার জীবনের ম্যাজিশিয়ান বাবা। আমি তোমাকে অনেক ভালোাবাসি। ‘

‘ ঘটক এসেছিল? ‘

নিনীকা হেসে ফেললো।

‘ হু এসেছিলো, অনেক কান্ড ঘটে গেছে। তুমি জানো..’

‘শুনেছি, দারোয়ান ছেলেটা সব বলেছে আমায়। যে ছেলেটাকে নিয়ে ঢুকেছিল তাকে কি তুমি চিনো? ‘

‘ আমি একা নয় মা ও চিনে, আজ তো পরিচয় করিয়ে দিয়েছি মায়ের সাথে। ‘

‘ রিয়েলি? ‘

রমজান শেখ স্ত্রীর দিকে তাকালেন। মিথিলা হেসে বললেন,

‘ ছেলেটা অনেক ভালো, তোমার মেয়ের জামাই বানাতে পারো কিন্তু৷ ‘

‘ উফ মা, সে আমার শত্রু ছিলো। আজ আমাকে হেল্প করেছে সেজন্য বাসায় কফির অফার করেছিলাম। এর বেশি কিছু না। তবে তোমার বদৌলতে বন্ধু নামক সম্পর্ক হয়ে গেলো। বাবা জানো মা তার বই ও দিয়ে দিয়েছে। ‘

‘ তাই নাকি? ‘

মিথিলার চোখে মুগ্ধতা,

‘ তুমি ছেলেটাতে দেখলেই বুঝতে পারবে। আমার বইয়ে পড়া ধ্রুব চরিত্রের থেকে ভিন্ন, তবে নামের মতোই মুগ্ধতা আছে চেহারায়৷ ‘

‘ ওহ হ ছেলেটার নাম তবে ধ্রুব! সেজন্যেই তোমার এতো ভালো লেগেছে? ‘

মিথিলা ভ্রু কুঁচকে তাকালেন,

‘ তুমি কি জেলাস শেখ বাবু? ‘

নিনীকা মুখে হাত দিয়ে হাসলো। রমজান শেখ কেশে বললেন,

‘ অবশ্যই না, হাঁটুর বয়সী ছেলেকে নিয়ে কেন জেলাস হবো? তবে তুমি কাল্পনিক চরিত্রে যেভাবে ডুবে থাকো কবে যেনো আমাকে আর আমার মেয়েকে ভুলে যাও। ‘

‘ এরকম মনে হয় কেন তোমার? ‘

‘ তুমি সারাক্ষণ কল্পনায় থাকো। এইযে এখন বৃষ্টি উপভোগ করছো আমাদের না ভেবে তুমি কাল্পনিক কোনো চরিত্রকে নিয়ে ভাবছো। এসব কি ঠিক মিথি? কাল্পনিক চরিত্র তার জায়গায়, আমরা তোমার বাস্তবের মানুষ। আমাদের কেন বঞ্চিত করছো? ‘

‘ বঞ্চিত করছি? ‘

‘ তা নয়তো কি? তোমার উচিত এখন আমাদের ভাবা, তা না আছো কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে। ‘

‘ লিসেন শেখ বাবু, তুমি সাহিত্য বুঝো না সুতরাং কথা বলো না। আমি একদমই কাল্পনিক চরিত্র নিয়ে ভাবছিলাম না। বরং নিজেকে বৃষ্টির সাথে মিশিয়ে নিচ্ছিলাম কল্পনায়। তুমি তো আমাকে ভিজতে দিবে না আর! ‘

‘ হ্যাঁ আমি ভিজতে দেই আর তুমি জ্বর বাঁধিয়ে বসে থাকো৷ ‘

নিনীকা গালে হাত দিয়ে দুজনের ঝগড়া দেখছে৷ মা বাবার ঝগড়া গুলো সম্পর্কের মতোই মিষ্টি। নিনীকার এই মিষ্টি ঝগড়া উপভোগ করতে ভালো লাগে। এইযে মা এখন বাবার উপর অভিমান করে গাল ফুলাবে। বাবা পরদিন সাহিত্যের কিছু বই সাথে ফুল নিয়ে বাড়ি ফিরবেন। মায়ের অভিমান তখন জানলা দিয়ে পালাবে।

মিথিলা সত্যি সত্যি গাল ফুলালেন। তাকে দেখতে কম বয়সী তরুণী মনে হচ্ছে। রমজান শেখ মেয়েকে নিচু কন্ঠে বললেন,

‘ দেখেছো তোমার মায়ের কান্ড? ‘

নিনীকা মিটিমিটি করে হাসলো।

‘ বাবা, মা কিন্তু ভীষণ রেগে যাচ্ছে৷ ‘

‘ কি করা যায় বলো তো? ‘

‘ সবসময় যা করো তাই করবে। ‘

রমজান শেখ আড়চোখে স্ত্রীকে দেখে নিলেন। এই অভিমানী রমনীকে তিনি কিশোর বয়স থেকে অসম্ভব ভালোবাসেন। ভালোবাসা থেকে বিয়ে, তারপর সংসার। এখনো গাল ফুলালে কতো আদুরে লাগে দেখতে। নিনীকা আড়চোখে মা বাবাকে দেখে ড্রাইভিং এ মন দিলো। নিচু কন্ঠে বললো,

‘ বাবা আমার মনে হয় তোমার এখন পেছনে চলে যাওয়া উচিত৷ তাহলে মায়ের একটু হলেও ভালো লাগবে৷ ‘

নিনীকা গাড়ি থামালো। রমজান শেখ পেছনে গিয়ে বসলেন। মিথিলা এক পাশে চেপে গেলেন। মুখ ঘুরিয়ে রইলেন। এমন বদমাশ লোকের সাথে তিনি কথা বলবেন না আর। মেয়ে টা ও বাপের মতোই হয়েছে। বাপ মেয়ে মিলে কি পরিকল্পনা করেছে তিনি বুঝত৷ পেরে গেছেন। যতো যাই করুক তিনি কথা বলবেন না।

গাড়ির কাচ বৃষ্টির পানিতে ভেসে যাচ্ছে৷ ড্রাইভিং করার ফাঁকে নিনীকা বৃষ্টি দেখছে। গাড়ি চলছে ধীরে ধীরে। কোনো তাড়াহুড়ো নেই। রাস্তার পাশের ফাস্টফুডের দোকানের সামনে সে গাড়ি থামালো। রমজান শেখ মেয়ের বুদ্ধিতে খুশি হলেন। স্ত্রী ও মেয়েকে অফার করলেন,

‘ আজ যতো খুশি বাহিরের খাবার খাবে দুজন আমি কিছু বলবো না। ‘

মিথিলার চোখমুখে উজ্জ্বলতা দেখা দিলো। নিনীকা মায়ের হাত ধরে এগিয়ে গেলো দোকানের দিকে। ফুচকা খেতে লাগলো মা মেয়ে। রমজান শেখ এক কোণায় বসে আছেন। তার হাতে মিথিলার চোখের চশমা। এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে দেখছেন প্রিয় দুই নারীকে। এই দু’জনেই মধ্যেই তিনি সুখ খুঁজে পান।

খেতে খেতে নিনীকা চারিদিকে তাকাচ্ছিলো। আচমকা বৃষ্টি ভেজা পথের মধ্যে দেখতে পেলো একটি বাইক।হেলমেট পরিহিত মানুষটাকে চিনতে ভুল হলো না। মিথিলাকে ফিসফিস করে বলল,

‘ মা দেখো তোমার পছন্দের ধ্রুব বৃষ্টিতে বাইকে বসে ভিজছে৷ ‘

(চলবে)