ম্যারি মি পর্ব-০৬ এবং শেষ পর্ব

0
2

#ম্যারি_মি
#পর্ব- শেষ পর্ব
#তাহিনা_নিভৃত_প্রাণ

বাইকে বসে বৃষ্টিতে ভিজতে থাকা ছেলেটিকে ডাকলো নিনীকা। আচমকা ডাক শুনে ধ্রুব তাকালো। নিনীকাকে দেখে হাসলো৷ বাইক ঘুরিয়ে চলে এলো সামনে।

‘ আরে আপনারা? ‘

মিথিলা উৎফুল্ল হয়ে বললেন,

‘ আমরা লং ড্রাইভে বের হয়েছিলাম। ‘

মিথিলা মুগ্ধ চোখে ধ্রুবকে দেখছেন। বৃষ্টির পানিতে চুল ভেজা, ভেজা শরীরের কাপড় ও।

‘ তুমি কি বৃষ্টিতে ভিজছিলে? ‘

‘ হ্যাঁ আন্টি, হুট করে ভিজতে ইচ্ছে করলো। ‘

‘ নেমে আসো বাইক থেকে, আমাদের সাথে জয়েন করো। ‘

ধ্রুব নামলো। হেলমেট খুলে এসে দাড়ালো নিনীকার পাশে। রমজান শেখ এতোক্ষণ ধ্রুবকে দেখছিলেন। ভালো লেগেছে তার। কোনোভাবে যদি মেয়ে এই ছেলেকে পছন্দ করে তবে তার কোনো আপত্তি থাকবে না। ধ্রুব সালাম দিলো তার উদ্দেশ্যে।

‘ কেমন আছেন আঙ্কেল? ‘

রমজান শেখ উত্তর দিলেন। জিজ্ঞেস করলেন,

‘ তোমার বাড়ি কোথায় বাবা? ‘

ধ্রুব বাড়ির ঠিকানা দিলো। মিথিলা সবার অলক্ষ্যে ফিসফিস করে স্বামীর কানে বললেন,

‘ নিনীর সাথে মানাবে বলো? ‘

নিনীকা ফুচকা খেতে খেতে কথা বলছে। ধ্রুব এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। দৃষ্টি সংযত করার চেষ্টা করলো না৷ নিনীকা অফার করলো,

‘ আপনি কি খাবেন? ‘

ধ্রুব আচমকা বলল,

‘ আমি আমার সব গার্লফ্রেণ্ডদের সাথে ব্রেকাপ করে ফেলেছি নিনীকা, পুরনো সিম ভেঙে ফেলেছি। ‘

‘ কেন? আমি কি জানতে পারি? ‘

ধ্রুব ভেজা চুলে হাত ডুবিয়ে হাসলো৷

‘ কারণটা তুমি নিনীকা। ‘

নিনীকা চোখে চোখ রাখলে। ধ্রুব ঠোঁট চেপে হাসছে৷ নিনীকা চোখ নামিয়ে নিলো।

মিথিলা মুগ্ধ চোখে মেয়েকে দেখছেন। স্বামীর কানে ফিসফিস করে বললেন,

‘ দেখেছো কত সুন্দর বন্ডিং? ‘

রমজান শেখ হাসলেন,

‘ ছেলে মেয়ে রাজি থাকলে আমাদের কোনো আপত্তি নেই। ‘

ফুচকা খাওয়ার পর নিনীকা বিদায় নিলো। মিথিলা যাওয়ার আগে বললেন,

‘ বাসায় এসো বাবা। ‘

ধ্রুব নিনীকার ফোন নাম্বার নিতে ভুললো না। বৃষ্টিস্নাত রাতে তাদের মধ্যে কিছু একটা হয়ে গেলো। মুখে কোনো কথা স্বীকার করলেও দুজনের মন এক স্রোতেই বইতে লাগলো। ধ্রুব আজ বাড়ি ফিরলো। বৃষ্টিতে ভিজে বাড়ি ফেরার কারণে ধারা ছেলেকে ধমকালেন।

‘ জ্বর চলে এলে কি করবে? ‘

ধ্রুব মায়ের বকাতে হাসলো। ভেজা শরীরেই জড়িয়ে ধরে বলল,

‘ আমি তোমার ভালো ছেলে হবো মা। ‘

ধারা আচমকা ছেলের পরিবর্তনে চমকালেন। সাথে খুশিও হলেন। কপালে চুমু দিয়ে বললেন,

‘ তুই সবসময়ই আমার ভালো ছেলে ছিলি। ‘

ধ্রুব রাতে বিছানায় গিয়ে নিনীকাকে ফোন করলো নতুন সিমের নাম্বার দিয়ে। রিসিভ হতেই বলল,

‘ আমাকে তোমার কেমন লাগে নিনীকা? ‘

নিনীকা কিছু মুহুর্ত থমকালো। তারপর বলল,

‘ আমাকে আপনার বৃষ্টির মতো ভালো লাগে ধ্রুব। ‘

ধ্রুবর প্রশ্ন,

‘ বৃষ্টির মতো বলতে? ‘

‘ বৃষ্টি কখনো ঝড় নিয়ে আসে, কখনো ঝিরঝির করে নামে। আপনি ঝড়ের মতো এলেন, আচমকা মনে আসন করে নিলেন। প্রথম ভালো লাগে নি, অথচ এখন! ‘

‘ এখন ভালো লাগে? ‘

‘ হয়তো। বৃষ্টি আমার কখনোই ভালো লাগতো না, আপনার সাথে সন্ধি হবার পর থেকে তাকেও ভালো লাগছে। ‘

‘ তবে কি আমি ধরে নিবো পজিটিভ কিছু? ‘

নিনীকা ঠোঁট কামড়ালো,

‘ ধরে নিতে পারেন। ‘

ধ্রুব সম্পূর্ণ পরিবর্তন হয়ে গেলো। নিনীকার সাথে সম্পর্ক ধীরে ধীরে গভীর হলো। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি অবাক হলো সমুদ্র। এক অন্য ধ্রুবকে দেখে তার চোখ বড়বড় হয়ে গেছিলো। ধ্রুব এখন পড়াশোনাতে ফোকাস করেছে। বাজে আড্ডাতে তাকে দেখা যায় না। পড়াশোনার বাহিরে তাকে নিনীকার সাথে প্রায়ই দেখা যায়। দুজনের মধ্যে কি চলছে সেটা বুঝতে পেরে সমুদ্র আরও অবাক হয়েছিলো। তাকে বিস্মিত করলো আরও একটি ঘটনা, ধ্রুবর নিনীকা ব্যতীত আর কারো সাথে সম্পর্ক নেই! যে ছেলে টিস্যুর মতো গার্লফ্রেন্ড চেঞ্জ করে সে ছেলে সিরিয়াস প্রেমে পড়ে গেলো। সমুদ্র খুশি হলেও তার এটা বিশ্বাস করতে অনেক দিন সময় লেগেছিল।

ধ্রুব আর্মি ট্রেনিংয়ে গেলো। ফাহিম মাহবুব ও ধারার খুশি দেখে কে। ধারা সবসময়ই এমন ছেলে চেয়েছিলেন। ধ্রুব ছোট থেকেই বাধ্য ছেলে ছিলো, মাঝে একটৃ বকে গেছিলো। তবে এখন আবারও বাধ্য হয়েছে। এবং সেটা কিসের জন্য ও কার জন্য তারা ইতিমধ্যে জেনে গেছেন। ধ্রুব নিজেই মাকে নিনীকার কথা বলে গেছে। ট্রেনিং থেকে ফিরে সে বিয়ে করবে। ধারা পুলকিত হলেন। একজন মেয়ে তার ছেলেকে বদলে দিলো। সেই মেয়েকে তিনি দেখতে গেলেন পরিবার নিয়ে। শেখ বাড়ির শেখ কন্যাকে তার মনে ধরলো। আংটি পড়িয়ে এলেন।

ধ্রুব ট্রেনিং থেকে ফিরলো আর্মি অফিসার হয়ে। মায়ের থেকে যখন শুনলো আংটি পড়ানোর কথা তখন মন খারাপ হলো তার। নিজের জমানো টাকা দিয়ে আংটি কিনে নিজ হাতে নিনীকার হাতে পড়িয়ে দিয়ে তবেই মন শান্ত করলো। নিনীকা ধ্রুবর পাগলামি তে হাসে। ধ্রুব আংটি পড়ানোর আগে সেই প্রথম দিনের মতোই হাঁটু গেঁড়ে বসেছিলো। প্রস্তাব রেখেছিলো।

‘ উইল ইউ ম্যারি মি নিনীকা? ‘

নিনীকা আনন্দে কথা বলতে পারছিল না। ধ্রুব আংটি পড়িয়ে ঠোঁটে প্রথমবারের মতো গভীর চুম্বন এঁকে ছিলো। বলেছিলো,

‘ ধ্রুব মাহবুবের মিসেস হতে প্রস্তুত হও তবে। ‘

ধ্রুব কথা রেখেছে। বিয়ে করেছে নিনীকাকে। আজ তাদের বাসর রাত৷ নিনীকা অন্যদের মতো ঘোমটা টেনে বাসর ঘরে বসে নেই। সে গোল গাউন পড়ে দাড়িয়ে আছে। বাহিরে আজকেও বৃষ্টি হচ্ছে। রাত এগারোটার কাছাকাছি সময়। ধ্রুব ঢুকলো দরজা দিয়ে৷ দরজা বন্ধ করে এগিয়ে এলো নিনীকার কাছে। কোমড় টেনে নিজের সাথে জড়িয়ে ধরলো। নিয়ে গেলো বারান্দায়। অন্ধকার বারান্দায় দাড়িয়ে বৃষ্টিতে ভেজা হলো। নিনীকার পাতলা গাউন শরীরের সাথে মিশে গেলো। ধ্রুব কাঁপতে থাকা নিনীকাকে নিয়ে রুমে ঢুকলো। শুইয়ে দিলো বিছানায়। নিজের পড়োনের শার্ট ছুঁড়ে ফেললো এক কোণে। নিনীকার আবেদনময়ী শরীরে নিজের ভর ছেড়ে দিলো।

‘ বিছানা ভিজে যাচ্ছে তো। ‘

নিনীকা বহু কষ্টে এটা বললো। ধ্রুব কানের কাছে মুখ নিলো।

‘ ভিজবে না৷ ‘

নিনীকার পড়োনের ভেজা কাপড়ের স্থান হলো মেঝেতে। ধ্রুব উন্মাদনায় মত্ত। তার অস্পষ্ট গলা শুনা যাচ্ছে।

‘ আই লাভ ইউ মিসেস। আমি তোমাকে অনেক অনেক ভালোবাসি। ‘

( ধ্রুব নিনীকার এখানেই সমাপ্তি। আমি ভীষণ ভীষণ মন কেমনে ভুগছি। সবকিছুতে অমনোযোগী ভাব। একটা জুটি লিখতে লিখতে টক্সিক ভাব চলে এসেছে। সেজন্য এটা শেষ করে দিতে হলো। সময় নিয়ে নতুন কোনো জুটি নিয়ে আসবো। ততোদিন আমাকে মনে রাখবেন। দোয়া করবেন যেনো ফিরতে পারি।

ধ্রুব নিনীকাকে আপনারা অনেক পছন্দ করেন জানি। তাদের নিয়ে কখনে ছোট্ট গল্প আসতে পারে। মন ভালো থাকলে আমি তাদের হুট করে লিখবো। মন খারাপে তাদের আমি লিখতে পারি না। তার উপর অসুস্থ। আমার এটা লিখতে গিয়েই মনে হচ্ছে শেষ হচ্ছে না কেন? মাথা ব্যথা করছে, সবকিছু কেমন যেন লাগছে।

ধ্রুব নিনীকা আমার সফলতার মাধ্যম। এদের আমি যেমন ভুলতে পারবো না তেমন আপনারাও। আপনাদের অনেক ভালোবাসা পেয়েছি এটাতে আমি। আশা করি নতুন কোনো জুটি ও আপনাদের মনে জায়গা করে নিবে। আপনাদের অনেক ভালোবাসা।

কখনো এদের লিখে চমকে দিবো না-হয়। পারলে আমাকে ক্ষমা করবেন এতো দ্রুত শেষ করার জন্য৷ আমি নিরুপায়! সবশেষে আপনাদের অনেক কৃতজ্ঞতা। আপনারা এতো ভালোবাসা দিয়েছেন বলেই আমি আছি!)

(সমাপ্তি)